ইমাম হাসান (عليه السلام) ও ইমাম হোসাইন (عليه السلام) কে ভালবাসার ফজিলত


❏ ১. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন “ইয়া আল্লাহ আঁমি হাসান-হুসাইনকে ভালোবাসি আঁপনিও তাঁদেরকে ভালোবাসুন এবং যে তাঁদেরকে ভালোবাসে আঁপনি তাঁদেরকেও ভালোবাসুন। ”

(ক.) সহিহ মুসলিম হা/নং ৬০৩৯ ই:ফা:

(খ.) তিরমিজি শরীফ, ষষ্ঠ খণ্ড, হা/নং ৩৭৬৯/২য় খন্ড, পৃঃ ২১৭, হাদিস নং ৩৭৬৯


❏ ২. হুযুর (ﷺ) এঁর বাণী-“যে এই দু’জনকেই ভালবাসলাে, মূলত সে আঁমাকেই ভালবাসলাে এবং যে এই দু’জনের সাথে শত্রুতা পােষণ করলাে, মূলত সে আঁমার সাথেই শত্রুতা পােষণ করলাে। ”

[ইবনে মাজাহ্, কিতাবুস সুন্নাহ্, বাবু ফি ফাযায়ীলে আসহাবে রাসূলুল্লাহ্, ১/৯৬, হাদীস-১৪৩]


❏ ৩. আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইমাম হাসান (رضي الله عنه) কে বলেছিলেন: হে আল্লাহ, আমি তাকে ভালবাসি, তুমিও তাকে ভালবাস এবং তাকে ভালোবাসো যে তাকে ভালবাসে (হাসান)।

[সহীহ মুসলিম, হা/নং ৫৯৫১-৫৯৫৩]


❏ ৪. ইয়ালা ইবনে মুরয়া (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: হুসাইন আঁমার আর আঁমি হুসাইনের। হুসাইন কে যে ভালবাসবে আল্লাহ্ তাঁকে ভালবাসবেন হুসাইন তো হল আঁমার সন্তান-সন্ততিদের একজন। [তিরমিজি শরীফ, ষষ্ঠ খন্ড, হা/নং ৩৭৭৫]


❏ ৫. নবীপাক (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, হুসাইন আঁমা হতে আর আঁমি হুসাইন হতে। যে হুসাইনকে ভালোবাসবে আল্লাহ তাকে ভালোবাসবে। হুসাইন (رضي الله عنه) আমার বংশসমূহ হতে একটি বংশ।

[তিরমিযি শরীফ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ২১৮, হাদিস: ৩৭৭৫]


❏ ৬.হাদিস শরীফে এভাবেও ইরশাদ হয়েছে,


حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَرَفَةَ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ بْنِ خُثَيْمٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ رَاشِدٍ، عَنْ يَعْلَى بْنِ مُرَّةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ حُسَيْنٌ مِنِّي وَأَنَا مِنْ حُسَيْنٍ أَحَبَّ اللَّهُ مَنْ أَحَبَّ حُسَيْنًا حُسَيْنٌ سِبْطٌ مِنَ الأَسْبَاطِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ وَإِنَّمَا نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ بْنِ خُثَيْمٍ وَقَدْ رَوَاهُ غَيْرُ وَاحِدٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ بْنِ خُثَيْمٍ ‏.‏


ইয়া‘লা ইবনু মুর্‌রাহ্‌ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিতঃ রাসুল (ﷺ) বলেছেনঃ হুসাইন আঁমার হতে এবং আঁমি হুসাইন হতে। যে লোক হুসাইনকে মহাব্বত করে, আল্লাহ্‌ তাকে মুহাব্বাত করেন। নাতিগণের মাঝে একজন হল হুসাইন।

[হাসান; ইবনু মাজাহ (১৪৪)]


আবু ‘ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উসমান ইবনু খুসাইমের সূত্রেই জেনেছি। একাধিক বর্ণনাকারী এটি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উসমান ইবনু খুসাইম হতে বর্ণনা করেছেন।


❏ ৭.“হুসাইন আঁমার থেকে এবং আঁমি হুসাইন থেকে। যে ব্যক্তি হুসাইন (رضي الله عنه) কে ভালোবাসে, আল্লাহ্ তা’য়ালা তাঁকে ভালোবাসেন। হুসাইন (رضي الله عنه) আমার বংশের একজন। ”

[সুনানে ইবনে মাজাহ, ১ম খন্ড, হা:নং ১৪৪]


❏ ৮.ইয়ালা ইবনে মুররাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, একদা তাঁরা নবী (ﷺ) এর সঙ্গে এক ভোজ সভায় যোগদান করেন সেখানে তাঁদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। এ সময় হুসাইন (رضي الله عنه) রাস্তার ধারে খেলা ধুলায় মশগুল ছিলেন। রাবী বলেন: নবী (ﷺ) লোকদের সামনে এগিয়ে গেলেন এবং তাঁর দু’হাত বিস্তার করলেন। তখন ছেলেটি (হুসাইন) এদিক ওদিক পালাতে লাগলো এবং নবী (ﷺ) ও তাঁর সাথে কৌতুক করতে করতে তাঁকে ধরে ফেলেন। এরপর তিনি তাঁর এক হাত ছেলেটির চোয়ালের নিচে রাখলেন এবং অপর হাত তাঁর মাথায় রাখলেন এবং এবং চুমু খেলেন। আর বললেন: হুসাইন আমার থেকে এবং আমি হুসাইন থেকে। যে ব্যক্তি হুসাইন (رضي الله عنه) কে ভালোবাসে, আল্লাহ্ তা’য়ালা তাঁকে ভালোবাসেন। হুসাইন (رضي الله عنه) আমার বংশের একজন।

[সুনানে ইবনে মাজাহ, ১ম খণ্ড, হাদিস নং ১৪৪, ( ইসঃ ফাঃ)]


❏ ৯.ইয়ালী বিন মুররাহ্ বলেন, “একবার মহানবী (ﷺ) আমাদেরকে দাওয়াত করলেন এবং আমরা ঐ দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করার জন্য রওয়ানা হলাম। চলার পথে আমরা একটি ময়দানে এসে উপস্থিত হলাম। সেখানে শিশুরা খেলাধুলা করছিল আর তাদের মধ্যে ইমাম হোসাইনও ছিল। শিশুরা আমাদেরকে দেখা মাত্রই আমরা সেখান থেকে না যাওয়া পর্যন্ত খেলাধুলা বন্ধ করে দিল। মহানবী আমাদের সামনাসামনি হাঁটছিলেন। তিনি যখন হোসাইনকে ঐ শিশুদের মাঝে দেখতে পেলেন তখন তাকে দেখে চুমো না দিয়ে থাকতে পারলেন না। তাঁর সাথে লোকজন থাকা সত্ত্বেও সবাইকে দাঁড় করিয়ে রেখে হোসাইনের দিকে গেলেন এবং তাকে বুকে জড়িয়ে ধরার জন্য হাত বাড়ালেন। কিন্তু হোসাইন এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করতে লাগল। আর এতে মহানবী হাসলেন। অবশেষে তিনি হোসাইনকে ধরে এক হাত তাঁর চিবুকে ও অপর হাত তাঁর মাথায় রাখলেন। এরপর তিনি নিজের গাল হোসাইনের গালের সাথে মিশিয়ে বললেন,


حسین منی و انا من حسین، احبّ الله من احبّ حسینا. الحسین سبط من الاسباط


“হোসাইন আমা হতে আমিও হোসাইন হতে। যে হোসাইনকে ভালবাসবে আল্লাহ্ও তাকে ভালবাসবেন। হোসাইন সৎ কাজের ক্ষেত্রে যেন নিজেই একটি জাতি। ”

(ক.) শেখ সুলায়মান আল-হানাফী আল-কুন্দুযী প্রণীত ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ্, পৃঃ ২৬৪

(খ.) আল-খাওয়ারিয্মী প্রণীত মাকতালুল হোসাইন, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১৪৬

(গ.) ইবনে আসীর প্রণীত আন্-নিহায়াহ্ ফী গারীবিল হাদীস, ২য় খণ্ড, পৃঃ ২৩৪।


মহানবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত সিব্ত্ (سبط) শব্দের একাধিক অর্থ করা যেতে পারে:


১. হোসাইন সৎ কাজের ক্ষেত্রে যেন নিজেই একটি জাতি অর্থাৎ একটি গোত্র বা জাতির সমান।

[ইবনে আসীর প্রণীত আন্-নিহায়াহ্ ফী গারীবিল হাদীস, ২য় খণ্ড, পৃঃ ২৩৪]


২. সিব্ত্ শব্দের অপর অর্থ বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় পল্লবিত বৃক্ষ। আর হোসাইনকে সিব্ত্ বলার অর্থ হচ্ছে, মহানবীর বংশধরগণ হোসাইনের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করবে।


৩. এ হাদীসটির অর্থ এও হতে পারে, উচ্চ সম্মান ও মর্যাদার ক্ষেত্রে একটি জাতি যেমন সুউচ্চ আসনের অধিকারী এক্ষেত্রে হোসাইনেরও ঠিক এমনি আসন রয়েছে।


৪. এ হাদীসের অর্থ এমনও হতে পারে, একটি জাতি যেমন পুণ্য ও প্রতিদান পেয়ে থাকে ঠিক তেমনিভাবে ইমাম হোসাইনও মহান আল্লাহর কাছে পুণ্য ও প্রতিদান পাবেন।

[পারতাভী আয-আযামাতে হোসাইন, পৃঃ ৩৩]

 
Top