জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি সাহিত্যিকরা যুগ যুগব্যাপী তাদের মনের মাধুরী মিশিয়ে অনুপম শৈল্পিক সুষমায় প্রিয়তম আঁকার ﷺ মাহাত্ম্যের যত ভাষাচিত্রই আঁকুন না কেন, তাতেও তাঁর ﷺ গৌরবদীপ্ত মহিমা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। তাঁর অনিন্দ্যসুন্দর মুবারক দেহের সৌন্দর্যচ্ছটা, পবিত্র দেহের মনোমুগ্ধকর সুঘ্রাণ, আখলাকে হাসানা আর সর্বোপরি তাঁর ﷺ মুবারক সুহবতের কল্যাণে সাহাবা আযমাঈনের হৃদয় সাগরে যে প্রেমতরঙ্গের উচ্ছ্বাস জাগতো, তা প্রকাশের ভাষা কোথায়?

নাবীয়ে কারীম ﷺ-এর পূত পূণ্যময় তাওয়াজ্জোহ (কারও প্রতি প্রেমময় মনঃসংযোগ) ও অনন্য সাহচর্যের সুবাদেই সাহাবা আযমাঈনের এত আকাশছোঁয়া মর্যাদা। আল্লহর ﷻ পরম প্রেমাষ্পদ রসূলে কারীম ﷺ-এর অনুপম তাওয়াজ্জোহ/সুহবতের কি যে অনবদ্য মহিমা তারই প্রতিচ্ছবি নিম্নের আলেখ্যটি।

মক্কা বিজয়ের বছরে একদিন নাবী কারীম ﷺ বাইতুল্লহ শারীফ তাওয়াফ করছিলেন। এমন সময় হযরত ফোযালা ইবনে উমাইর (রাঃ) নামীয় জনৈক ক্বুরাইশ (তখনও সে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়নি) নাবী কারীম ﷺ-কে শহীদ করার বদ নিয়তে সেও তাওয়াফ করতে লাগলো। এক পর্যায়ে সে রসূলে পাক ﷺ-এর নিকটে এসে পড়লো। নাবী কারীম ﷺ তাকে প্রথমে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি ফোযালা? সে জবাব দিল, হ্যাঁ। নাবী কারীম ﷺ তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি মনে মনে কি ভাবছো?

সে বললো, কিছু না, আল্লহর যিকর করছি। এ কথা শুনে নাবী আকরাম ﷺ মৃদু হাসলেন এবং বললেন, 'আল্লহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর'। এ কথা বলেই রসূলে মকবুল ﷺ ফোযালার বুকে তাঁর পবিত্র হাত রাখলেন। এতে ফোযালার অন্তর থেকে নিমিষেই সমস্ত বদ চিন্তা বিদূরিত হয়ে গেলো।
وَاللٰهِ مَا رَفَعَ يَدَهُ عَنْ صَدْرِي حَتَّي مَا مِنْ خَلْقِ اللّٰهِ شَيْءٌ اَحَبَّ اِلَيَّ مِنْهُ.
ফোযালা আল্লহর শপথ করে বলতে লাগলো, তখনও রসূলে কারীম ﷺ তাঁর ﷺ হাত মুবারক আমার বক্ষ থেকে তোলেননি, আমার অন্তরের অবস্থা এমন হয়ে গেলো যে, আল্লহর সৃষ্টি জগতের মধ্যে আমার নিকট নাবী কারীম ﷺ-এর চেয়ে প্রিয়ভাজন আর কেউ নেই। (সুবহানাল্লহ)। [ইবনে হিশাম (রহঃ), সিরাতে ইবনে হিশাম, ২/৪১৭ পৃ., ইবনে কাসির (রহঃ), বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪/৩০৮ পৃ., আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ]।

এ কোন সীমাহীন বিস্ময় যে, কুফরির আঁধারে আচ্ছন্ন যে হৃদয়, তা মুহূর্তেই আলোকিত হলো হেদায়েতের জ্যোতর্ময় প্রভায়। যে মানুষটি ছিল গোমরাহির দুর্গন্ধময় পংকে নিমজ্জিত, সে আজ আলোর পথের যাত্রী। যে পাপিষ্ঠ নিষ্ঠুর জিঘাংসায় প্রিয় আঁকা ﷺ-কে শহীদ করার উন্মত্ত নেশায় বদ্ধপরিকর, সেই মানুষটির অন্তরে আজি বিরাজে সত্যের চির বসন্তের স্নিগ্ধতা।

এ কোন অসীম বিস্ময়! আমাদের ইন্দ্রিয়জ জ্ঞান এই অন্তহীন রহস্যলীলা অনুধাবনে অক্ষম। বিস্ময়াবিষ্ট কন্ঠে শুধু এটুকুই বলতে পারি যে, কত অনন্য, মাধুর্যমন্ডিত ছিল প্রিয় আঁকা ﷺ -এর অনন্যসুন্দর সুহবত, কত মাধুরীময় ছিল তার পবিত্র হাতের প্রেমময় পরশ। আর তাই তো সাহাবা আযমাঈনের হৃদয় সিন্ধুতে ইশকে রসূলের ﷺ উত্তাল তরঙ্গ উচ্ছ্বলিত হয়ে উঠত।

রসূল ﷺ প্রণয়ে তারা হয়ে যেত বেকারার, পাগলপারা, আবেগে উদ্বেলিত। হে মাবুদ! তোমার বারগাহে আমাদের অশ্রুভেজা আকুতি, আমাদের হৃদয় সরোবরেও প্রস্ফুটিত করে দাও রসূল ﷺ প্রেমের পারিজাত।

~খন্দকার সিদ্দিকুর রহমান
 
Top