প্রশ্নঃ দুনিয়া কি ধবংস হবে? আসমান কি ভেঙ্গে  পড়বে? চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র কি পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে? পাহাড়-পর্বত কি  তুলার মত উড়ে যাবে? অন্যজগতে কি আমাদের যেতে হবে? কিভাবে সব মানব-দানব একত্রিত  হবে? কিয়ামত কিভাবে শুরু হবে?  সিঙ্গায় কয়বার ফুঁৎকার দেওয়া হবে? প্রথম ফুঁৎকার ও শেষ ফুঁৎকারের মধ্যবর্তী সময় কত দীর্ঘ হবে? কিভাবে লোকেরা হাশরে যাবে? কিভাবে বিচার শুরু হবে? কেউ কি তখন সুপারিশকারী  হবেন? বিচারের পর কোথায় লোকেরা থাকবে?

কিয়ামত সম্পর্কে জানতে মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। কোরআন-সুন্নাহ্র আলোকে বর্ণনা করলে মানব সমাজ উপকৃত হবে।

জওয়াবঃ সৃষ্টির শুরু আছে এবং শেষও আছে; কিন্ত স্রষ্টার শুরুও নেই- শেষও নেই। তিনি অনাদি-অনন্ত। সৃষ্টি ও লয় তাঁর অসীম কুদরতি রহস্য। এই ভেদ তিনি ও তাঁর  আপনজন ছাড়া অন্য  কেউ জানেনা। আপনজনের জানাও সীমিত। এই সীমিত জ্ঞানই ইল্মে গায়েবের এক বিশাল ভান্ডার। এই জ্ঞান ভান্ডারের একমাত্র মালিক বানানো হয়েছে আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে। তিনি এসব জানা সত্ত্বেও আল্লাহর নির্দেশে ঐ রহস্যজগত সম্পর্কীয় কিছু বিষয়াদি গোপন রেখেছেন।   কিয়ামতের সন ঐ নিষেধের অন্তর্ভুক্ত।

কিয়ামত সংঘটনের বিষয়টি কোরআন মজিদে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা, এটি ঈমানের মূল অঙ্গ। ইসলামের  প্রথম ১৩ বৎসরে তৌহিদ, রিসালাত ও আখিরাত সম্পর্কেই অধিকাংশ আয়াত নাযিল হয়েছে এবং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। জড়জগতের মানুষ জড় বিষয়াদিরই জ্ঞান রাখে। মানুষকে এবিষয়ে খুব কম জ্ঞানই দান করা হয়েছে। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন- “ওয়ামা ঊতিতুম্ মিনাল ইল্মে ইল্লা ক্বালীলান”। (ছূরা বনী  ইসরাইল, আয়াত নং-৮৫)। আল্লাহ্পাক তাঁর কোরআনের ইঙ্গিতপূর্ণ আয়াত সমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ নবীজীকে গোপনে জানিয়ে দিয়েছেন। তাই কিয়ামত, হাশর-নশর,  জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কে নবীজীর ইলমে গায়েবের ওপরই সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও বুযুর্গানেদ্বীন নির্ভর করতেন এবং আমরাও করি।  এখন বিষয় ভিত্তিক ধারাবাহিক আলোচনা করবো- ইন্শাআল্লাহ্।

সিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া প্রসঙ্গেঃ
========
যখন আল্লাহ্পাক মানব-দানব, আসমান জমিন, চন্দ্র সূর্য, পাহাড়-পর্বত, নদীনালা সবকিছু ধবংস করে দিতে ইচ্ছা  করবেন- তখন ইসরাফিল ফিরিস্তাকে আদেশ করবেন সিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার জন্য। ইসরাফিল দু’বার- মতান্তরে তিনবার সিঙ্গায় ফুঁক দিবেন। প্রথম ফুঁৎকার চল্লিশ বৎসর পর্যন্ত চলবে। এই ফুঁৎকারের প্রথম দিকে সমগ্র প্রাণী ভয়ে ছুটাছুটি করতে থাকবে   এবং দ্বিতীয়াংশে সব মরে যাবে। এই ফুঁৎকারকে কোরআন মজিদের ভাষায়-
نفخة الفزع ونفخة الصعق
অর্থাৎ ”ভয়ভীতি ও মৃত্যুর ফুঁৎকার” বলা হয়েছে। এই ফুঁৎকারের ভয়ে জীবিতরা সব মরে যাবে- কিন্তু কবরে যারা জীবিত থাকবেন-  তাঁদের পুনঃমৃত্যু হবে না। তাঁরা শুধু ঐ সময় বেহুঁশ অবস্থায় থাকবেন। আর কিছু ফিরিস্তাও ঐ সময়ে জীবিত থাকবেন। শেষবার ফুঁক দেওয়ার সাথে সাথে সবাই পুনরায় জীবিত হবে এবং বেহুঁশী থেকে  হুঁশে এসে হাশরের ময়দানের দিকে দলে দলে যেতে থাকবেন।

সর্বপ্রথম হুঁশপ্রাপ্ত   হবেন  আমাদের প্রিয়নবী (ﷺ)। হুযুর (ﷺ) কে নেওয়ার জন্য বোরাক নিয়ে  সত্তর হাজার ফিরিস্তা রওযা মোবারকে উপস্থিত হবে এবং ইছা আলাইহিস সালাম, হযরত আবু বকর ও হযরত ওমরকে সাথে নিয়ে হুযুর (ﷺ) হাশরের ময়দানে যাবেন। গিয়ে দেখবেন- হযরত মুছা (আঃ) আরশের পায়া ধরে   দাঁড়িয়ে  আছেন। রাসুলেপাক (ﷺ) এরশাদ করেন- “আমার বুঝে আসেনা- হযরত মূছা (আঃ) কি আমার পূর্বে হুঁশপ্রাপ্ত হয়েছেন- নাকি বেহুঁশ হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছেন। কেননা, তিনি তুর পর্বতে একবার বেহুঁশ হয়েছিলেন- তাই হয়তো আল্লাহ্ তাআলা তাঁকে দ্বিতীয়বার বেহুঁশী থেকে রক্ষা করে  সরাসরি হাশরে নিয়ে গেছেন। (তাযকিরাহ্ ও কিতাবুর রুহ্)।

এ প্রসঙ্গে তিনটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। প্রথমটি হলো- কিয়ামতের পূর্বে দাজজাল এসে বিভিন্ন কারিশ্মা ও ভেল্কিবাজী প্রদর্শন করে খোদায়ী দাবী করবে- আর তাকে মাবুদ মানার জন্য লোকদেরকে জবরদস্তি  করবে, পিতামাতাকে জীবিত করে দেখাবে, বেহেস্ত দোযখ দেখাবে। যে তাকে মানবে, তাকে তার জান্নাতে দিবে- মূলতঃ উহা দোযখ। আর যে মানবেনা- তাকে তার দোযখে নিক্ষেপ করবে- মূলতঃ উহাই জান্নাত। ঐসময় ইমাম মাহ্দীরও রাজত্ব চলবে। দাজজালের এই তান্ডব ৪০ দিন- মতান্তরে ৪০ মাস পর্যন্ত চলতে থাকবে। (হযরত ইবনে আমরের  বর্ণনা-মিশকাত শাবারুন নাছ অধ্যায়)।

এমন  ঘোর বিপদের দিনে হযরত ইছা আলাইহিস সালাম আকাশ থেকে দামেস্কে অবতরন করবেন।  তিনি দাজজালকে হত্যা করবেন, বিবাহ শাদী করবেন, হযরত ইমাম মাহ্দীকে সহযোগিতা করবেন এবং  স্বাভাবিক  মৃত্যুবরন  করে  রাসুলেপাক  (ﷺ)- এর বামপার্শে দাফনকৃত  হবেন। হাশরের দিনে রাসুলেপাকের সাথে হযরত আবু বকর  ও হযরত ওমরসহ হাশরের ময়দানে গমন করবেন।

ইমাম মাহ্দীর আগমন, দাজজালের আবির্ভাব এবং হযরত ইছা (আঃ) -এর অবতরন একই সময়ের ঘটনা। দাজজাল ও হযরত ইছা (আঃ) -এর  আগমন ছাড়া কেউ নিজেকে মাহ্দী বলে দাবী করলে সে ভন্ড বলে গণ্য হবে।

(১) হযরত ইছা (আঃ) -এর অবতরন, জীবন যাপন, ইন্তিকাল ও পুনরুত্থান সম্পর্কে হাদীস-
عن عبد  اللّٰہ  بن عمرو قال : قال رسول  اللّٰہ ﷺ  ینزل عیسی بن مریم الی الارض فیتن ویولد لہ ویمکث خمسا واربعین سنۃ ثم یموت فیدفن معی فی قبری ۔ فاقوم انا وعیسٰی بن مریم فی قبر واحد بین ابی بکر وعمرر ۔ رواہ ابن الجوزی فی کتاب الوفاء ۔

অর্থঃ “হযরত  আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর (রাঃ) বর্ণনা করেন- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন-“ হযরত ইছা আলাইহিস সালাম দুনিয়াতে  অবতীর্ন হয়ে বিবাহ-শাদী করে সন্তানের পিতা হবেন। তিনি ৪৫ বৎসর জীবিত থেকে ইন্তিকাল করবেন এবং আমার সাথেই আমার রওযা  পাকে দাফনকৃত হবেন। কিয়ামতের দিন আমি এবং হযরত ইছা (আঃ) একই রওযা থেকে উঠবো এবং আমাদের দুই পাশে থাকবে আবু বকর ও ওমর”। (ইবনে জাওযী তাঁর কিতাবুল ওয়াফায় এই হাদীস বর্ণনা করেছেন, মিশকাত- নযুলে ইছা অধ্যায়)।

(২) হযরত ইছা (আঃ) ইমাম মাহ্দীর পিছনে ইক্তিদা করে নামায পড়বেন,
وعن جابر قال : قال رسول اللّٰہ ﷺ لا تزال طائفۃ من امتی یقاتلون علی الحق ظاھرین الی یوم القیامۃ قال: فینزل عیسٰی بن مریم فیقول امیرھم تعالی صل لنا ۔ فیقول لا ۔ ان بعضکم علی بعض امراء تکرمۃ اللّٰہ لھذہ الامۃ رواہ مسلم ۔

অর্থঃ “হযরত জাবের (রাঃ) বর্ণনা করেন- রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “ আমার উম্মতের মধ্যে একদল লোক সর্বদা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে কিয়ামত পর্য্যন্ত  জিহাদ করে বিজয়ী হবে। অতঃপর হযরত ইছা ইবনে মরিয়ম  (আঃ) অবতীর্ন হবেন। তখন মুসলমানদের  শাসক (ইমাম মাহ্দী) বলবেন- আসুন,  আমাদেরকে নিয়ে নামায  পড়–ন।  হযরত ইছা (আঃ) বলবেন- না, তোমাদের মধ্য হতেই একজন আমির বা শাসক হয়ে ইমামতিসহ সব কাজ সমাধা করবেন। ইহাই আল্লাহর বিধান- ইহা উম্মতের সম্মানের  জন্য”। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত- নুযুলে ইছা অধ্যায়)।

ব্যাখ্যাঃ নবী হয়ে উম্মতের পিছনে নামায আদায় করা প্রসঙ্গে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। আল্লামা তাফ্তাযানী (রহঃ) র্শহে আকায়েদে নসফীতে লিখেছেন “ বিশুদ্ধ মত হলো- হযরত ইছা (আঃ)-ই ইমামতি করবেন এবং ইমাম মাহ্দী তাঁর মোক্তাদী হবেন”।

কিন্তু হযরত জাবের বর্ণিত অত্র হাদিসে দেখা যাচ্ছে- ইমাম মাহ্দীকেই তিনি ইমামতি করতে বলবেন। উভয় হাদীসের মধ্যে সমন্ব^য় এভাবে করা হয়েছে- “হযরত ইছা (আঃ) যেহেতু ইমাম মাহ্দী হতে উত্তম- কাজেই ইমামতি তাঁরই প্রাপ্য। এজন্যই ইমাম মাহ্দী তাঁকে ইমামতি করার  জন্য অনুরোধ করবেন। কিন্তু ইছা আলাইহিস সালাম স্বেচ্ছায় ইমাম মাহ্দীকে ইমামতি করতে বলবেন। এটার উদাহরণ হলো-ওস্তাদ অনেক সময় শাগরিদের পিছনে নামায পড়েন। এতে ওস্তাদের শান কমেনা- বরং শাগরিদকে সম্মানিত করার জন্যই ওস্তাদ এরূপ করে থাকেন। তদ্রুপ- হযরত ইছা  আলাইহিস সালামও ইমাম মাহ্দীর মর্যাদা লোকচক্ষে বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইমামতির দায়িত্ব তাঁকে দিবেন। (হাশিয়া নং -২ মিশকাত অত্র হাদীস)।

(৩) হযরত ইছা আলইহিস সালামের অন্যান্য কাজ,
عن   ابی ھریرۃ قال : قال رسول   اللّٰہ ﷺ واللّٰہ ینزل ابن مریم حکما عادلا ۔ فلیکسون  الصلیب ولیقتلن الخنزیر ولیضعن الجزیۃ ۔
অর্থঃ  হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রাসুলপাক (ﷺ) এরশাদ করেছেন-“ আল্লাহর শপথ- হযরত ইছা (আঃ) অবশ্যই অবতীর্ন হবেন এবং  ইনসাফের সাথে  শাসন চালাবেন (সহযোগী হয়ে)। তিনি অবশ্যই খ্রিষ্টানদের হলিক্রস ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলবেন, খ্রিষ্টানদের প্রধান খাদ্য শুকর নিধন করবেন এবং জিযিয়া কর মউকুফ করে দিবেন”। (তাযকিরাহ্)

ইসরাফিলের সিঙ্গায় প্রথম ফুঁক
=======
১। প্রধান চার  ফিরিস্তার মধ্যে হযরত ইসরাফিল আলাইহিস সালাম  -এর উপর কিয়ামত ঘটানোর দায়িত্ব অর্পন-
ذکر علی بن معبد عن ابی ھریرۃؓ قال : حدثنا رسول اللّٰہ ﷺ ونحن فی طائفۃ من اصحابہ فقال ان اللّٰہ  تعالی لما فرغ من خلق الصور واعطاہ اسرائیل فھو واضع الصور علی م فیہ شاخص ببصرہ الی العرش ینتظر متی یؤمر۔ فقال ابو ھریرہ قلت : یا رسول اللّٰہ وما الصور ؟ قال قرن ۔ فقلت : وکیف ھو؟ قال ھو عظیم والذی نفسی بیدہ ان عظم دارۃ فیہ للعرض الس والارض ۔ فینفخ فیہ ثلاث نفخات۔ الاولی نفخۃ الفزع والثانیۃ نفخۃ الصعق والثالثۃ نفخۃ القیام لرب العالمین ۔ یأمر الیہ اسرافیل بالنفخۃ الاولی ۔  فیقول النفخ نفخۃ الفزع فیغزع اھل السماء والارض الا من شاء اللّٰہ۔  ۔ و یأمرہ  فیمدھا ویطولھا ۔ یقول اللّٰہ تعالی ۔ وما ینظرا ھولاء۔ الاضحیۃ واحدۃ۔ مالھا من فواق ۔ ان ھذہ  النفخۃ ممتدۃ لا تقطیع فیھا ویکون ذلک الیوم الجمعۃ فی النصف من شھر رمضان ۔ فیسیر اللّٰہ الجیال فتمر مر السحاب ۔ ثم تکون سرابا ۔ ثم ترتج الارض باھلھا رجا۔ وھی  التی یقول اللّٰہ عزوجل۔ یوم ترجف الراجفۃ تتبعھا الرادفۃ قلوب یومئذ واجفۃ ۔ فتکون الارض کالسفینۃ فی البحر تضر بھا الامواج۔ فیمید الناس علی ظھرھا وتذھل المراضع وتضع  الحوامل مافی بطنھا ۔ وتشبب الولدان ۔ وتتطایر الشیاطین ھاربۃ ۔ حتی تأتی الاقصار فتتلقاھا الملائکۃ ھاربۃ فتضرب بھا وجوبھا ویولی الناس مدبرین ۔ ینادی بعضھم بعضا ۔ وھی التی یقول اللّٰہ عزوجل ۔ یوم التناد یوم تولون مدبرین مالکم من اللّٰہ من عاصم امن یضلل اللّٰہ فما لہ من ھاد ۔ فبینھم علی ذلک ۔ اذ تصعدت الارض من قطر الی قطر وراؤا ومرا عظیما لم یرؤا مثلہ ۔ فیأخذھم من ذلک من الکرب والھول ماللّہ بہ علیم ۔ ثم ینظرون  الی السماء فاذا ھی کالمھل ۔ ثم انشقت وانخسقت شمسھا وقمرھا ۔ وانتثرت ۔ بخومھا۔ ثم کشطت السماء عنھم ۔ ثم قال رسول اللّٰہ ﷺ والمولی لا یعلمون شیئا من ذلک ۔ فقالوا یا رسول اللّٰہ فمن  استثنی اللّٰہ تعالی حین یقول فقزع من فی السموت والارض الامن شاء اللّٰہ ؟ قال اولئک ھم الشھداء عند ربھم یرزقون ۔ وانما یصل الفزع الی الاحیاء ۔ یقیھم اللّٰہ شر ذلک الیوم ویومنھم منہ ۔ وھو عذاب یلقیہ اللّٰہ علی شرار خلفہ ۔ وھو الذی یقول اللّٰہ تعالی۔ یا ایھا الناس اتقوا ربکم ان زلزلۃالساعۃ شئی عظیم ۔ ای شدید فتکثون فی ذلک ما شاء اللّٰہ الا انہ یطول علیھم کاطیل یوم ۔ ثم یامر اللّٰہ اسرافیل فینفخ نفخۃ الوعق۔ الحدیث بطولہ ھذا آخر الحدیث (ذکر الطبری والثعلبی وصححہ بن عربی سراج المریدین)

অর্থঃ আলী ইবনে মা’বাদ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন- আল্লাহর প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে একটি দীর্ঘ হাদীস শুনিয়েছেন- যার শেষাংশ হচ্ছে-

“আল্লাহ্  তায়ালা যখন আসমান-যমীন সৃষ্টি সমাপ্ত করলেন- তখন তিনি  সিঙ্গা তৈরী করলেন  এবং ইসরাফীলের হাতে দিলেন। ( ঐ সিঙ্গা বা  বাঁশীতে সমস্ত প্রাণীর জন্য একটি করে ছিদ্র আছে)। ইসরাফীল (আঃ) ঐ সিঙ্গা ধারন করে আরশে মোয়াল্লার দিকে চোখ  তুলে তাকিয়ে আছে- কখন আল্লাহ্ নির্দেশ দিবেন। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) সবার  পক্ষে আরয করলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ্! ”ছুর” কি জিনিস? হুযুর (ﷺ) এরশাদ করলেন- ”উহা একটি সিঙ্গা বা বাঁশী স্বরূপ”। আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন- আমি পুণরায়  আরয করলাম- ওটা দেখতে কেমন?  হুযুর (ﷺ) বল্লেন- ”ওটা বিশাল। এমন বিশাল যে, উহার আয়তন সাত আসমান সাত যমীনের প্রস্থের সমান। ঐ সিঙ্গায় তিনবার ফুঁক দেয়া  হবে। এক ফুঁকে ভয়ভীতি, দৌড়াদৌড়ী ও গড়াগড়ি শুরু হবে। দ্বিতীয় ফুঁৎকারে মৃত্যুমুখে পতিত হবে। তৃতীয় ফুঁৎকারে রাব্বুল আলামীনের দরবারে হাযির হবে”। (প্রথম ও দ্বিতীয় সিঙ্গায় ফুঁক হবে মূলত: একটি)।

আল্লাহ্পাক ইসরাফীলকে  প্রথম ফুঁৎকারের জন্য নির্দেশ দিবেন এবং বলবেন-ভয়ভীতি ও বেহুঁশীর জন্য ফুঁৎকার মারো। ইসরাফীল এক ফুঁৎকার  দিবেন। তাতে আসমান-যমীনের বাসিন্দারা ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে- কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় কিছু লোক এর থেকে নিরাপদ থাকবে। আল্লাহ্পাক ইসরাফীলকে ফুঁৎকার দেয়ার নির্দেশ দিবেন- আর ইসরাফীল দীর্ঘ ও উচ্চ মার্গের ফুঁৎকার দিতে থাকবেন (চল্লিশ বৎসর পর্যন্ত)। এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ্পাক ছুরা  ছোয়াদ ১৫ আয়াতে এরশাদ করেছেন-“তারা কেবল একটি মহা ফুঁৎকারের অপেক্ষা করছে- যাতে  একটি দম ফেলবার মত অবকাশ থাকবেনা”।

এই ফুঁৎকারটি হবে খুবই দীর্ঘায়িত ও উচ্চস্বরের- যার মধ্যে কোন বিরতি থাকবেনা। ঐ দিনটি হবে রমযান মাসের মধ্য শুক্রবার। (অন্য ছাহাবীর বর্ণনায় আছে, وفیہ تقوم الساعۃ মহররমের ১০ তারিখ শুক্রবার- এটাই সর্বাধিক শুদ্ধ )।

আল্লাহর নির্দেশে পর্বতসমূহ স্থানচ্যুত হয়ে মেঘমালার ন্যায় উড়ে চলতে থাকবে।  এরপর হয়ে  যাবে মরিচিকার মত ধাঁধাঁপূর্ণ। এরপর যমিনে শুরু  হবে ভূমিকম্প। যমীন তার অধিবাসীদের নিয়ে প্রকম্পিত হতে থাকবে। এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ্তায়ালা ছুরা নাযিআত ৬-৮ আয়াতে এরশাদ  করেছেনঃ   “সেদিন প্রকম্পনকারী কিয়ামত প্রকম্পিত করবে, এর পশ্চাতে আসবে পশ্চাতগামী  ভূমিকম্প। সেদিন হৃদয়সমূহ ভীত-বিহ্বল হয়ে পড়বে”। ঐ সময়ে যমীনের অবস্থা হবে সমুদ্রে ভাসমান একটি নৌকার  মত- সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ  যাকে আঘাত করতে থাকবে। আর  আরোহীরা ঝাঁপ দেওয়ার জন্য জাহাজের ছাঁদে চড়বে। দুগ্ধবতী মায়েরা ঐ সময় আপন শিশুকে ভুলে যাবে। ঐ দিনে গর্ভবতী মহিলারা অসময়ে সন্তান  ভূমিষ্ট করে ফেলবে। ঐদিনে কিশোর সন্তানেরাও ভয়ে বৃদ্ধ হয়ে যাবে। ঐসময় শয়তানেরা উড়াল দিয়ে  পলায়নরত হবে। তারা পৃথিবীর প্রান্তসীমায় এসে জমায়েত হবে। ফিরিস্তারা তাদেরকে পলায়নরত অবস্থায় ধরে  ধরে মুখে কপালে আঘাত করতে থাকবে। ঐ সময় মানুষ পিছনে ফিরে  পালানোর চেষ্টা করবে। ঐ সময়  সম্পর্কেই আল্লাহ্পাক ছুরা মোমেন-এর ৩৩ আয়াতে এরশাদ করেছেনঃ “হে  অবাধ্য কাফেরগণ! ঐ দিন হবে পলায়ন দিবস।  ঐদিন তোমরা পিছন ফিরে পালাতে থাকবে-  কিন্তু আল্লাহ্ থেকে তোমাদেরকে রক্ষাকারী কেউ থাকবে না। আল্লাহ্ যাকে  পথভ্রষ্ট করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই”।

“চলমান উড়ন্ত  পাহাড়, ডুবন্তপ্রায় যমীন ও যমিনের বাসিন্দাদের ছুটাছুটির এক  পর্যায়ে যমিন এদিক সেদিক টুকরা টুকরা হয়ে যাবে। তারা দেখতে পাবে কঠিন অবস্থা- যা তারা কোনদিন দেখেনি। সে সময় তাদেরকে পেয়ে বসবে বালা আর মুসিবত এবং ভয় ও ভীতি- যা সম্পর্কে আল্লাহ্-ই ভাল জানেন। অতঃপর লোকেরা ঐসময় আকাশের দিকে নযর করে তাকে দেখতে পাবে গলিত তামার ন্যায়। তারপর আসমান খন্ড খন্ড হয়ে ভেঙ্গে পড়বে।  চন্দ্র-সূর্য ঢাকা পড়ে যাবে। তারকারাজি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়বে। এরপর আসমানের আবরণ তাদের  দৃষ্টি থেকে  অপসারিত হয়ে যাবে”।

উপরোক্ত তথ্য দেয়ার পর  রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন-”মৃত ব্যক্তিরা এর কিছুই টের পাবেনা। সাহাবায়ে কেরাম  আরয করলেন-  ইয়া রাসুলাল্লাহ্! একটু আগে যে বল্লেন, আল্লাহ্ পাক বলেছেন, “কিয়ামতের ভীতি ও সিঙ্গার ফুঁৎকারে  মৃত্যুবরণ থেকে আমি যাকে ইচ্ছা রক্ষা করবো”, (ছুরা নমল-৮৭)-  উনারা কে  ? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ  করলেন, “তাঁরা হচ্ছে শহীদান, তাঁরা ঐ সময়েও আল্লাহর কাছে জান্নাতী রিযিক পেতে থাকবে, ভয়ভীতি ও মৃত্যু হবে শুধু জীবিতদের বেলায়”। শহীদগণকে আল্লাহ্পাক ঐ সময়ের ভয়াবহতা ও ক্ষতিকর বিষয় থেকে নিরাপদে রাখবেন। ঐসমস্ত আযাব ও ভয়াবহতা শুধু আল্লাহর নিকৃষ্ট বান্দাদের বেলায়ই প্রযোজ্য হবে। কিয়ামতের ধবংশলীলা সম্পর্কেই আল্লাহ্পাক ছুরা হজ্ব-১ আয়াতে এরশাদ করেছেনঃ “হে মানবজাতি! আল্লাহ্কে এখন থেকেই ভয় করো, নিশ্চয়ই কিয়ামতের ভূমিকম্প খুবই কঠিন হবে”।  হুযুর (ﷺ) বললেন, “তোমরা  ঐ সময় আল্লাহর ইচ্ছায় নির্ভয়ে থাকবে, তোমাদের জন্য ঐ দীর্ঘ সময়কে একদিনের মত মনে হবে। তারপর আল্লাহ্পাক ইসরাফীলকে মৃত্যুর সিঙ্গায় দ্বিতীয়বার  ফুঁক দিতে নির্দেশ করবেন”।  (দীর্ঘ হাদীসের শেষাংশ)।

(এই হাদীসখানা তাবারী ও ছা’লাবী বর্ণনা করেছেন এবং আবু বকর ইবনে আরবী তাঁর “ছিরাজুল মুরিদীন” গ্রন্থে সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন। )

(৪০ বৎসরের এই দীর্ঘ সিঙ্গার ফুঁককে দুইবার বলা হয়েছে, মূলতঃ উহা একবার। এই ফুঁৎকারের প্রথম দিকে ভীতি,  ছুটাছুটি, তছনছ হবে, শেষের দিকে সবাই মৃত্যুবরণ করবে। আর পূবের্র মৃতরা আল্লাহর হেফাযতে থাকবে এবং শহীদেরা বিশেষ মর্যাদায় ঐ সময়ও জীবিত থাকবেন, (তাযকিরাহ্ )।

(২) আসমান যমীন ধবংস  ও প্রলয়ঙ্করী অবস্থার কোরআনী বর্ণনা

ছুরা তাক্ভীর -এর বর্ণনাঃ
=====
বিসমিল্লাহির  রাহমানির রাহীম। (১)  যখন সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে (২) যখন নক্ষত্ররাজী মলিন হয়ে যাবে (৩) যখন পর্বতমালা স্থানচ্যুত হয়ে  যাবে (৪) যখন দশ মাসের গর্ভবতী উষ্ট্রিসমূহ বেকার হয়ে যাবে (৫) যখন বন্য পশুরা একত্রিত হয়ে জড়ো হবে (৬) যখন সমুদ্র উথাল-পাথাল  হয়ে উঠবে (৭) যখন আত্মাসমূহকে একত্রিত করা হবে (৮) যখন  জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে (৯) কি কারনে তাকে জীবন্ত হত্যা করা হলো ? (১০) যখন আমলনামা খোলা হবে (১১) যখন আকাশের আবরণ অপসারিত করা হবে (১২) যখন জাহান্নামকে প্রজ্জলিত করা হবে (১৩) যখন জান্নাতকে সন্নিকটবর্তী করা হবে- তখন সবাই দেখে নিবে, সে কি (আমল) উপস্থিত করেছে” (ছুরা তাক্ভীর)।

ছুরা ইন্ফিতারের বর্ণনাঃ

(১) যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে (২)  যখন নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে (৩) যখন সমুদ্রকে উথাল পাথাল করে তোলা হবে (৪) যখন কবরসমূহ উন্মোচিত হবে (৫) তখন সবাই জেনে নিবে- সে কি আমল অগ্রে প্রেরণ করেছে এবং পশ্চাতে কি ছেড়ে এসেছে। (৬) হে মানব সন্তান, কে  তোমাকে তোমার রব সম্পর্কে ধোকায় ফেলে রেখেছিল ? (ছুরা ইনফিত্বার)।

ছুরা ইন্শিকাক থেকে বর্ণনাঃ
=======
(১) যখন আকাশ ফেটে বিদীর্ণ হয়ে যাবে (২) সে তার রবের আদেশ  পালন করবে এবং আকাশ বিদীর্ণ হওয়ারই উপযুক্ত (৩) পৃথিবীকে যখন সম্প্রসারিত করা হবে (৪) পৃথিবী তার গর্ভস্থিত সবকিছু বাইরে নিক্ষেপ করে ফেলে দিবে এবং শূন্যগর্ভ হয়ে  যাবে (৫) হে মানুষ, তোমাকে তোমার রবের কাছে পৌঁছতে কষ্ট স্বীকার করতে হবে, অতঃপর তার  সাথে মূলাকাত করতে পারবে”।

কিয়ামত বা ধবংসলীলার কয়েকটি  নামঃ (ক)  ইয়াওমূল ইন্শিকাক (খ) ইয়াওমূল  ইন্ফিতার (গ) ইয়াওমুত তাক্ভীর (ঘ) ইয়াওমূল  ইন্কিদার (ঙ) ইয়াওমূল ইন্তিছার  (চ)  ইয়াওমুত তাছ্য়ীর (ছ) ইয়াওমুত তা’ত্বীল (জ) ইয়াওমুত তাছ্জীর  (ঝ) ইয়াওমুত তাফ্জীর (ঞ) ইয়াওমূল কুশ্তি (ট) ইয়াওমুত তায়্যী (ঠ) ইয়াওমূল মাদ্দি (ড) ইয়াওমুন নাক্বুর (ঢ) ইয়াওমুছ ছাইহাতা- ইত্যাদি। (পরে আরও  নাম বিস্তারিত আলোচিত হবে)।

প্রথম ও দ্বিতীয়বার সিঙ্গায় ফুঁৎকার প্রসঙ্গেঃ
=========
প্রথমবারঃ

প্রথমবার সিঙ্গায় ফুঁৎকার দেওয়ার সময়টি খুবই দীর্ঘ হবে  বলে  হাদীসে উল্লেখ আছে। কোন কোন রেওয়ায়াতে  চল্লিশ বৎসরকাল বলা হয়েছে। এ সময়ের প্রথম দিকে ভয়-ভীতি ও বিহ্বলতা দেখা দিবে। এ সময়ের ফুঁৎকারকে বলা হয়েছে نفخة الفزع ونفخة الصعق বা ভয়-ভীতিমূলক ও মৃত্যুর ফুঁৎকার। শেষের দিকে এসে এর সাথে নাকুর বা মেঘের গর্জনের মত কানফাটা আওয়াজ যোগ হবে। তখন এর প্রলয়ঙ্করী ক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এদিকে ইঙ্গিত করেই  আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন,
فَإِذَا نُقِرَ فِي النَّاقُورِ - فَذَلِكَ يَوْمَئِذٍ يَوْمٌ عَسِيرٌ
অর্থাৎ  “সিঙ্গায় ফুঁৎকারের সাথে যখন নাকুর বা নাক্কারার আওয়াজ হবে, সে সময়টি হবে বড়ই কঠিন” (ছুরা মুদ্দাচ্ছির ৮ আয়াত)।  এই ভয়ঙ্কর আওয়াজে সমস্ত মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ধবংস হয়ে যাবে। আকাশের জোতিষ্কমণ্ডলী খসে পড়বে, পাহাড় পর্বত তুলার মত উড়বে, পৃথিবীতে প্রচন্ড ভূমিকম্প হবে এবং জীবজন্তু সব মারা যাবে।

প্রথম সিঙ্গার পর বিরতি থাকবে ৪০ বৎসর। তারপর পুনরুত্থানের জন্য দ্বিতীয় ফুঁৎকার শুরু হবে। এসময়ে মৃতরা পূণঃজীবিত হয়ে হাশরের  ময়দানের দিকে ধাবিত হবে। এই অবস্থার বর্ণনা এসেছে ছুরা ইয়াছিন ৫১ নম্বর আয়াতে। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন -
وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَإِذَا هُم مِّنَ الْأَجْدَاثِ إِلَى رَبِّهِمْ يَنسِلُونَ
অর্থাৎ “আবার সিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, অতঃপর তারা কবর থেকে তাদের রবের দিকে দৌঁড়ে যাবে”। এবার যে সিঙ্গায়  ফুঁক দেয়া হবে, সেটা হবে নূরের সিঙ্গা। তার মধ্যে থাকবে সমস্ত রূহ! এ রূহ্গুলো সিঙ্গার ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে যার যার শরীরে গিয়ে সংযুক্ত হবে। বর্ণিত আছে, যত রূহ্-  তত ছিদ্র থাকবে সিঙ্গায়। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, উহা বিদ্যুতের  মত হবে। আল্লামা কুরতুবী (রহঃ) বলেন,
الصور قرن من نور ۔ یجعل فیہ الارواح : یقال ان فیہ من الثقب علی عدد ارواح الخلائق ۔
অর্থাৎ, “ছুর অর্থ নূরের সিঙ্গা, এতে রাখা হবে সমস্ত রূহ্। বর্ণিত আছে- ঐ সিঙ্গার  ছিদ্র হবে সৃষ্টজীবের সমসংখ্যক”।

(১) প্রথম ও দ্বিতীয়বার সিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার মধ্যবর্তী বিরতিকাল থাকবে চল্লিশ বৎসর। (তাযকিরাহ্ ১৮৭ পৃষ্ঠা)।
عن ابی ھریرۃ قال  قال  رسول   اللّٰہ  ﷺ ما بین النفختین اربعون ۔ قالوا یا ابا ھریرۃ اربعون یوما؟ قال ابیت ۔ قالوا اربعون شھراء قال ابیت ۔ قال اربعون سنۃ ؟ قال ابیت ۔ ثم ینزل اللّٰہ من السماء ماء ۔ فینبتون کما ینبت البقل ۔ قال ولیس من الانسان شئی لا یبل الا عظما واحدا۔ وھا عجب الذئب ومنہ یرکب الخلق یوم القیامۃ ۔ (متفق علیہ ) وفی روایۃ لمسلم قال کل ابن آدم یأکلہ التراب الاعجب الذئب منہ خلق وفیہ یرکب۔

অর্থঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন,  রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “সিঙ্গায় দুই ফুঁৎকারের মধ্যবর্তী বিরতির সময় হবে চল্লিশ। সাহাবীগণ হযরত আবু হোরায়রাকে জিজ্ঞাসা করলেন- আপনি যে বল্লেন ”চল্লিশ” -এর অর্থ কি চল্লিশ দিন? হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বললেন- আমাকে তা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। সাহাবীগণ পূনঃ  জিজ্ঞাসা করলেন- তাহলে কি চল্লিশ মাস? এবারও তিনি বললেন- আমাকে বলতে নিষেধ করা হয়েছে। সাহাবীগণ আবার জিজ্ঞাসা করলেন- তাহলে কি চল্লিশ বৎসর? হযরত আবু  হোরায়রা  (রাঃ) এবারও পূর্বের ন্যায় বললেন- আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। (তিনি নবীজীর কাছ থেকে সময় জেনেছিলেন সত্য- কিন্তু বলা নিষিদ্ধ ছিল)।

হযরত আবু হোয়ায়রা পুনরায় নবীজীর ফরমান বলতে শুরু  করলেন- “তারপর  আকাশ (উপর) থেকে আল্লাহ্পাক বৃষ্টি বর্ষন করবেন-  আর সমস্ত মৃতজীব এভাবে অঙ্কুরিত হতে থাকবে- যেভাবে অঙ্কুরিত হয় শাক্-সবজী। ” তিনি জীবিত হওয়ার প্রসেসটি নবী  করীম (ﷺ) -এর পক্ষ হতে এভাবে বর্ণনা করলেন-“মানুষের এমন কোন অঙ্গ নেই -যা নষ্ট হবেনা। সবই নষ্ট হবে- তবে একটি অঙ্গ নষ্ট হবে না- তাহলো পায়খানার গোড়ার ছোট্ট হাঁড়টি (শিড় দাড়ার সর্বনিম্ন অংশ)। ঐ মূল  অঙ্গ  থেকেই পুনরায় সৃষ্টজীবেরা পূনঃজীবিত হয়ে কিয়ামতে উঠবে” (ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম)।

অন্য সনদে ইমাম মুসলিম এভাবে বর্ণনা দিয়েছেন- “প্রত্যেক বনী আদমকেই মাটি  খেয়ে ফেলবে- শুধু পায়খানার রাস্তা সংলগ্ন মূল হাঁড়টি বাকী থাকবে। ঐ হাঁড় থেকেই পূনঃ মানুষ গজাবে”।

বুঝা  গেল- হযরত  আবু হোরায়রা চল্লিশের অর্থ জানতেন-  কিন্তু বলা নিষিদ্ধ ছিল। আবদুল্লাহ্ ইবনে মোবারক হযরত হামান  (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন- নবীকরীম (ﷺ)  তাঁকে বলেছেন- “দুই সিঙ্গার মাঝখানে চল্লিশ বৎসর বিরতি থাকবে। এ সময় জীবিতরা মরে  যাবে এবং মৃতরা জীবিত হবে।

(২) পুনরুত্থানের সময়ে আল্লাহর ঘোষনাঃ
وعن عبد اللّٰہ بن مسعود قال : جاء حبر من الیھود الی النبی ﷺ فقال محمد  ان اللّٰہ یمسک السموت یوم القیامۃ علی اصبع والارضین علی اصبع والجبال والشجر علی اصبع والماء والثری علی اصبع وسائر الخلق علی اصبع ثم یھزھن ۔ فیقول انا الملک انا للّٰہ ۔ فضحک النبی ﷺ تعجبا مما قال الحبر تصدیقا ۔ ثم قرء ۔ وما قد رواللّٰہ حق قدرہ ۔  والارض جمیعا قبضۃ یوم القیامۃ السموات مطوبات بیمینہ سبحانہ وتعالی عما یشرکون متفق علیہ ۔

অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ)  বর্ণনা করেছেন- ইহুদীদের  এক পণ্ডিত রাসুলেপাকের দরবারে এসে কথা প্রসঙ্গে  বললো- “হে মুহাম্মদ, নিশ্চয়ই আল্লাহ্তায়ালা কিয়ামতের দিন আকাশ  সমূহকে এক আঙ্গুলে এবং যমীন সমূহকে অন্য আঙ্গুলে ধরে রাখবেন। পর্বত ও বৃক্ষরাজীকে  অন্য আঙ্গুলে ধরবেন, পানি ও ঘোলা মাটি অন্য আঙ্গুলে  ধরে  রাখবেন এবং অন্যান্য সৃষ্টিকে অন্য এক আঙ্গুলে ধরে রাখবেন- তারপর এগুলোকে তাসের মত ঝাড়া দিবেন এবং বলবেন-“আমিই  মূল মালিক, আমিই সেই  আল্লাহ্”।

ইহুদী   পণ্ডিতের  কথা শুনে নবী  করীম (ﷺ) নিজের বাণীর  স্বপক্ষে তার সত্যায়ন দেখে আশ্চর্য হয়ে হেসে ফেললেন  এবং আল্লাহর কালাম শুনিয়ে বললেন- “তারা (ইহুদীরা)  আল্লাহর মর্যাদা যথাযথভাবে  মূল্যায়ন  করেনি” (মূল্যায়ন করলে অবশ্যই ইসলাম গ্রহণ করতো)।  তারপর আল্লাহর বাণী  উদ্ধৃত করে বললেন- “সমস্ত পৃথিবী আল্লাহর কব্জায় থাকবে কেয়ামতের দিনে- আর আকাশসমূহ থাকবে  তাঁর ডান হাতে মোড়ানো  অবস্থায়। আল্লাহ্ ক্রটি হতে অতি পবিত্র এবং তাদের শিরিক থেকে অনেক উর্দ্ধে” (বুখারী ও মুসলিম এবং মিশকাত নফ্খে ছুর)।

শিক্ষাঃ হাদীসখানার মূলভাষ্য হলো- ”কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ই হবেন অহঙ্কারের মালিক- অন্য কেউ নয়। দুনিয়ার শক্তিমান রাজাধিরাজরা সেদিন হবে আল্লাহর মুষ্ঠিতে মাছির মত। ইহুদী পণ্ডিত  হুযুরের দরবারে এসে  তাদের ধর্মগ্রন্থের (তৌরাত) সুন্দর উদ্ধৃতি শুনালো সত্য- কিন্তু নবীকে মানলোনা। কেননা  এই নবীর কথা তাদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতেও উল্লেখ আছে। তারা আল্লাহর শক্তিতে বিশ্বাসী-  কিন্তু  রাসুলের রিসালাতে  উদাসী।  তাই  নবী  করীম  (ﷺ) বড় করে হাসি দিয়েছিলেন।

আমাদের  মুসলমানদের মধ্যেও  একদল ইহুদী স্বভাবের লোক আছে- যারা আল্লাহর গুণগানে মত্ত- কিন্তু নবীর শানে অনভ্যস্থ। এরাই ইহুদীদের দোসর। উদ্ধৃত হাদীসটি বোধগম্যতার ক্ষেত্রে খুবই হৃদয়গ্রাহী। কেননা, অত্র হাদীসে আল্লাহর আঙ্গুলের কথা উল্লেখ আছে- যা বুঝার জন্য খুবই সহজ। কিন্তু হাত বা আঙ্গুল অর্থে এখানে শক্তিকে বুঝানো হয়েছে। কেননা, আল্লাহ্ তায়ালার কোন ছুরত নেই- আঙ্গুল   আসবে  কোত্থেকে?

কিন্তু ইবনে তাইমিয়া ও তার অনুসারী ইবনে কাইয়েম বলেন- “আল্লাহর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সবই আছে, তবে অন্য কোন বস্তুর মত নয়। তিনি তাঁর মতই। ইবনে কাইয়েম তার “রূহ” নামক গ্রন্থের শুরুতে সুন্নীদের ন্যায় ভাল ভাল আক্বিদার কথা বলে কিতাবের একেবারে শেষ অধ্যায়ে গিয়ে লিখেছে- “আল্লাহর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সবই আছে  -তবে মানুষের মত নয়। যারা  আল্লাহ্কে নিরাকার বলে- তারা বাতিল” (নাউযুবিল্লাহ্)।  সে আহলে সুন্নাতের  ইমাম আবুল মনসুর মাতুরিদী ও ইমাম আবুল হাসান আশআরীকে লক্ষ্য করেই উক্ত মন্তব্য করেছে। তার এই বাতিল অধ্যায়টি জনসমক্ষে তুলে ধরার লক্ষ্যেই সে “রূহ” গ্রন্থটি রচনা করেছে। এই সুক্ষ্ম বিষয়টি সবাই জানেনা। তাই সুন্নীদের অনেক আলেম তাকে  সুন্নী মনে করে “রহমতুল্লাহ্” বলে ফেলে। এটা মোটেই ঠিক নয়। আমি তার সঠিক কথার উদ্ধৃতি দিয়েছি  সত্য- কিন্তু তার  নামের পরে “রহমতুল্লাহ্” শব্দ ব্যবহার করিনি। সঠিক এক কথায় বা দুই কথায় কেউ সুন্নী হয় না।

(৩) দ্বিতীয়বার সিঙ্গার ফুঁৎকারের সময় কারা কারা বেহুঁশ হবেন এবং কারা কারা হবেন না?
=======
এ প্রসঙ্গে আল্লামা কুরতুবী (রাঃ) কোরআন মজিদের ছুরা জুমর -এর ৬৮ নম্বর আয়াত উদ্ধৃত করে বিভিন্ন মতামত পেশ করেছেন। যেমন- আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন,

(ক) وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَن شَاء اللَّهُ
অর্থঃ এবং সিঙ্গায় (দ্বিতীয়বার) ফুঁক দেয়া হবে- তখন আসমান যমিনের অধিবাসীরা মৃত্যু বরণ করবে- কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় ”কতিপয়” মরবে না” (ছুরা জুমর-৬৮ আয়াত)

উক্ত -“কতিপয়” বলতে  কাকে বুঝানো হয়েছে- তা নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কেউ বলেন- ফিরিস্তারা ঐ সময় মরবেনা। আবার  কেউ কেউ বলেছেন- শহীদানরা তখন বেহুঁশ হবেন না। আবার কোন কোন মুফাসসির বলেছেন- আম্বিয়ায়ে কেরাম কবরে বেহুঁশ হবেন না।  অন্যরা বলেছেন- আরশ বহনকারী  ফিরিস্তারা মরবেন না। অন্য  একদল মোফাসসির বলেেেছন- জিবরাঈল মরবেন না।  অন্য একদল বলেছেন- মিকাঈল  মরবেন  না। অন্য একদল বলেছেন- মালাকুল মউত মরবেন না। এভাবে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। আল্লামা কুরতুবী বলেন- যারা বেহুঁশ হবেন না- তাঁদের মধ্যে রয়েছেন হযরত মূছা (রাঃ) এবং শহীদগণ। (তাযকিরাহ্ পৃষ্ঠা-১৭৪-২২২)

(খ) وقال الشیخ ابو العباس احمد بن عمر فی کتاب (المفھم) لہ : ویجوز ان یراد بالناس من عداہ من الناس فلم یدخل تحت خطاب نفسہ ۔
অর্থঃ- শেখ আবুল আব্বাস আহমদ ইবনে ওমর তার “আল-মুফ্হিম” নামক গ্রন্থে বলেছেন- “হাশরের দিনে লোকেরা উলঙ্গ  ও খত্না বিহিন এবং বেহুঁশ অবস্থায় উঠবে”-  নবীজীর এই বাক্যের মধ্যে “লোক” অর্থ নবীজী ছাড়া-  অন্যরা। এই বক্তব্যের মধ্যে নবীজী নিজকে অন্তর্ভূক্ত করেন নি। (উক্ত গ্রন্থ ২২২ পৃষ্ঠা)

মোদ্দা কথা- নবীজী সে সময় বেহুঁশ হবেন না। (কিন্তু ২২৩  পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে- নবীজী বেহুঁশ হবেন)। (তাযকিরাহ্)।

(৪) দ্বিতীয় সিঙ্গার ফুঁকে কারা কারা মরবেন না?
عن ابی  ھریرۃ قال : قال رجل من الیھود بسوق المدینۃ : والذی اصطفی موسی علی البشر : فرفع رجل من الانصار فقال اللّٰہ عزوجل ( ونفخ فی الصور فصعق من فی السموت والارض الامن شاء اللّٰہ ثم نفخ فیہ اخری فاذا ھم قیام ینظرون) فاکون اول من رفع راسہ فاذا انا بموسی آخذ یقائمۃ من وقوائم العرش فلا ادری ارفع رأسہ قبلی او کان ممن استثنی اللّہ (رواہ ابن ماجۃ)

অর্থঃ হযরত আবু  হোরায়রা (রা) বর্ণনা করেছেন- জনৈক ইহুদী মদিনার বাজারে  ঘোষণা করলো- “আল্লাহর কসম- যিনি হযরত মুসা (আঃ) কে মানব  জাতির মধ্যে বিশেষভাবে নির্বাচিত বা  মনোনিত করেছেন”।

তার এ ঘোষনা শুনে জনৈক মদিনাবাসী আনসার হাত তুলে উক্ত ইহুদীকে এক ঘুষি মেরে দিলেন এবং  বললেন- “আমাদের প্রিয় রাসুল (ﷺ) আমাদের মধ্যে বর্তমান থাকা অবস্থায় তুমি এমন কথা বলতে পারলে”?

হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন- অতঃপর ঐ আনসারী সাহাবী হুযুর  (ﷺ)-এর দরবারে গিয়ে সব ঘটনা   খুলে বললো। হুযুর (ﷺ) বর্ণনা শুনে কোরআন মজিদের ছুরা জুমর  ৬৮ আয়াত উদ্ধৃত করলেন-যার  অর্থ হলো-“প্রথমবার  সিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে।  তখন আসমান যমীনের বাসিন্দারা মৃত্যুর কোলে  ঢলে পড়বে- কিন্তু কতিপয়  লোক এর ব্যতিক্রম থাকবে- যাদেরকে আল্লাহ্ ইচ্ছা করবেন- মারবেন না। এরপর পুনরায় দ্বিতীয়বার সিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। তখন তারা হাশরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকবে”।

হুযুর (ﷺ) উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করে  এর ব্যাখ্যা স্বরূপ বললেন-“হাশরে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের মধ্যে আমিই হব প্রথমজন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়- আমি দেখতে পাবো-  হযরত  মূছা (আঃ) আরশের পায়া সমূহের মধ্যে একটি পায়া বা খুটি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি বুঝতে পারছিনা- তিনি  কি আমারও পূর্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে  আছেন- না কি বেহুঁশ  হওয়া  থেকে রক্ষা পেয়েছেন- যাদেরকে আল্লাহ্পাক মৃত্যু অথবা বেহুঁশী থেকে ব্যতিক্রম করে রেখেছেন”? (ইবনে মাজাহ)

ব্যাখ্যাঃ দ্বিতীয়  সিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার সময় জীবিতরা সবাই মরে যাবে -কিন্তু নবীগণ ঐ সময় সাময়ীকভাবে বেহুঁশ  হয়ে পড়বেন। তারপর হুঁশপ্রাপ্ত হয়ে তাঁরা বোরাকে চড়ে  হাশরে যাবেন।   নবী করীম (ﷺ) হবেন হাশরে প্রথম গমনকারী। তিনি গিয়ে দেখবেন- মূছা (আঃ) তাঁর পূর্বেই হাশরের মাঠে আল্লাহর আরশের একটি পায়া ধরে  দাঁড়িয়ে আছেন। হুযুর (ﷺ) এ ব্যাপারে মন্তব্য করে বললেন- আমার বুঝে আসেনা যে, মুছা (আঃ) কি আমার পূর্বেই হুঁশপ্রাপ্ত হয়ে আমার আগে হাশরের মাঠে এসে আল্লাহর  আরশের পায়া  ধরে  দাঁড়িয়ে আছেন-নাকি মোটেই বেহুঁশ হননি?

অত্র  হাদীসের   মূল বক্তব্য  হলো-হুযুর (ﷺ)-এর রয়েছে সার্বিক ফযিলত- কিন্তু একটি বিষয় ছাড়া। হাশরে গমনের ক্ষেত্রে মূছা (আঃ)-এর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট রয়েছে-যা অস্বীকার করা  যায় না। অতএব ইহুদীর ঐ কথা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে, এক বিষয়ে ফযিলতের কারণে হযরত মূছা (আঃ) কে  মানবজাতির উপরে সার্বিক মর্যাদা দেয়ার ঘোষণা দেওয়াটা ইহুদীর ঠিক হয়নি।

কি চমৎকার ফয়সালা নবীজীর। একদিকে আনসারী সাহাবীর কথাও সমর্থন করলেন- অন্যদিকে ইহুদীর মানও রক্ষা করলেন। ইহুদীর কথা ছিলো- আংশিক সত্য- পূর্ণ নয়।

এর মধ্যে একটি বিষয় লক্ষ্যনীয়- তাহলো আনসারী সাহাবীর মহব্বৎ। তিনি ইহুদীকে ঘুষি  মেরেছিলেন নবীজীর  মহব্বতে। এজন্য তিনি তাকে তিরস্কার করেননি। এটার নামই প্রকৃত ঈমান। দেওবন্দী জনৈক ওহাবী  নেতা নবীজীকে ভাই বলে উল্লেখ করেছে- অথচ আমাদের কোন প্রতিক্রিয়া নেই।  কত দূর্বল ঈমান আমাদের।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, আম্বিয়ায়ে কেরাম যেহেতু তাঁদের কবরে জীবিত এবং শহীদগণ আকাশের উপরে আল্লাহর নিকট জীবিত ও রিযিক প্রাপ্ত-সেহেতু দ্বিতীয় সিঙ্গায় তাঁরা পুনরায় মরবেন কিনা- এটা এক বিরাট প্রশ্ন।

এ প্রসঙ্গে আল্লামা কুরতুবী (রহঃ) বলেন-
فاما صعق غیر الانبیاء فموت  واما صعق الانبیاء فالاظھر انہ غشیۃ فاذا نفخ فی الصور نفخۃ البعث فمن مات حیی ومن غشی علیہ افاق وکذلک قال رسول اللّٰہ ﷺ فی صحیح البخاری ومسلم ’’فاکونا اول من یفیق وھی روایۃ صحیحۃ وحسنۃ۔ فنبینا ﷺ اول من یخرج من قبرہ قبل الناس کلھم قبل الانبیاء وغیرھم الا موسی فانہ حصل لہ التردد ھل بعث فبلہ من غشیۃ او بقی علی الحالۃ التی کان علیھا قبل نفخۃ الصعق مفیقا لانہ حوسب بغشیۃ الطور

অর্থাৎ -দ্বিতীয় ফুঁৎকারের  সময় আম্বিয়ায়ে কেরাম ছাড়া অন্যদের বেলায় ছাআক -এর অর্থ মৃত্যু বরণ  করা এবং নবীগণের বেলায় “ছাআক”-এর মশহুর অর্থ- বেহুঁশ হওয়া। যখন দ্বিতীয়বার সিঙ্গায় ফুঁক দিবে, তখন মৃতরা জীবিত হবে এবং বেহুঁশপ্রাপ্ত নবীগণ হুঁশপ্রাপ্ত হবেন।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম আমাদের  প্রিয়নবীর বেলায় হাদীস   উদ্ধৃত করেছেন-  নবীপাক (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “আমি হবো হুঁশপ্রাপ্ত আম্বিয়াগণের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি”।  এই  হাদীসখানা সহীহ এবং হাসান। বুঝা গেল- আমাদের প্রিয় নবীই সমস্ত মানুষের পূর্বে-এমনকি, নবীগণেরও পূর্বে হুঁশপ্রাপ্ত হয়ে রওযা মোবারক থেকে বের হয়ে হাশরের ময়দানে তাশরীফ নিয়ে যাবেন। ২২১ পৃষ্ঠায় (৩ খ) তে শেখ আবুল আব্বাস বলেছেন-নবীজী বেহুঁশ হবেন না)।

কিন্তু মূছা (আঃ)-এর ব্যাপারটি অন্য রকম। হুযুরের পূর্বেই  তিনি  হাশরের মাঠে উপস্থিত হবেন এবং আল্লাহর আরশের পায়া ধরে দাঁড়িয়ে  থাকবেন। এজন্যই নবী করীম (ﷺ) উনার  ক্ষেত্রে বলেছেন- “আমি বুঝে উঠতে পারছিনা যে, তিনি কি আমার পূর্বে হুঁশপ্রাপ্ত হয়েছেন- নাকি তূর পর্বতে বেহুঁশ হওয়ার কারণে আল্লাহ্পাক তাঁকে দ্বিতীয়বার বেহুঁশী অবস্থা থেকে রক্ষা করেছেন। ” (তাযকিরাহ্)।

এখন বাকী রয়ে গেলো- শহীদগণের বিষয়টি- যেহেতু তাঁরাও এখন জীবিত, সুতরাং তাঁরা কি ঐ দিন বেহুঁশ হবেন- নাকি, হুঁশ অবস্থায় থাকবেন? জবাব হলো-  শহীদগণ ঐদিন  বেহুঁশ হবেন না। কেননা, আল্লাহ্ বলেছেন- “আসমান  যমীনের  বাসিন্দারা ঐদিন মৃত্যুবরণ করবে বা বেহুঁশ হবে। ” শহীদগণ তো এখন থেকেই জান্নাতে  বিচরনরত এবং আল্লাহর কাছে অবস্থানকারী। সুতরাং আকাশের উপরের বাসিন্দা বা প্রাণীর বেলায় এই মৃত্যু ও বেহুঁশীর আয়াত প্রযোজ্য নয়। শহীদগণ ঐসময় মৃত্যু তো দূরের কথা- বেহুঁশও হবেন না। উর্দ্ধে অবস্থানের কারণে তাঁরা ঐদিন বেহুঁশী অবস্থা থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন। সোবহানাল্লাহ্।

এই একটি মাত্র বৈশিষ্টের কারণে কেউ যেন তাঁদেরকে নবীগণের চেয়ে উত্তম মনে না করেন এবং মূছা (আঃ) কেও যেন কেউ  আমাদের প্রিয়নবীর চেয়ে আফযল মনে  না করেন।  ইহাই আল্লামা কুরতুবীর মন্তব্য (আত-তাযকিরাহ্ ১৭৭-১৭৮ পৃষ্ঠা)

আমাদের প্রিয়নবীর পুনরুত্থানের শান
======
আল্লামা কুরতুবী (রহঃ) তাঁর আত-তাযকিরাহ্ গ্রন্থের ১৯৯ পৃষ্ঠায় এবং মিশকাতের বাবুল কারামত অধ্যায়ে বর্ণিত-  নোবাইহাতা ইবনে  ওয়াহাব-এর বর্ণিত হাদীসখানা উদ্ধৃত করে আমাদের প্রিয়নবীর হাশরে গমনের চিত্রটি এভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন –

عن نبیھۃ بن وھب ان کعبا دخل علی عائشۃ رضی اللّٰہ عنھا فذکروا رسول اللّٰہ ﷺ ۔ فقال کعب : مامن فجر او یوم یطلع الا نزل  سعون الغامن  الملائکۃ حتی یحفوا بالقبر، یضربون باجنحھم ویصلون علی النبی ﷺ حتی امسوا عرجوا وھبط سبعون الف ملک یحفون بالقبر ویضربون  باجنحتھم یصلون علی النبی ﷺ یسمعون الفا باللیل وسبعون الفا بالنھار۔ حتی اذا انشقت عنہ الارض خرج فی سبعین الفامن الملائکۃ یؤقرونہ صلی اللّٰہ علیہ رواہ عبد اللّہ بن المبارک۔ وخرج الترمذی الحکیم فی نوادر الاصول عن  نافع عن ابن عمر قال : خرج النبی ﷺ ویمینہ علی ابی بکر وشمالہ علی عمر فقال : ھکذا نبعث یوم القیامۃ۔

অর্থঃ নোবাইহাতা ইবে ওয়াহাব বর্ণনা করেন- তাবেয়ী হযরত ক’াব আহ্বার একদিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ)-এর গৃহে গমন করে দেখেন- সাহাবায়ে কেরাম রাসুলেপাকের শানমান প্রসঙ্গে আলোচনা করছেন। হযরত কা’ব (রহঃ) এক পর্যায়ে বললেন- “এমন কোন দিন উদয় হয়না- যেদিন সত্তর হাজার খাস ফিরিস্তা  নাযিল  হয়ে  রওযা  মোবারককে বেষ্টন করে ﷺ ও সালাম পড়েনা। তারা তাদের নূরের পাখা রওযা মোবারকের উপর সামিয়ানার মত বিছিয়ে দিয়ে ﷺ পড়তে থাকে। এ অবস্থায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। অতঃপর তারা উর্দ্ধে গমন করেন এবং অন্য সত্তর হাজার ফিরিস্তা অবতীর্ন হয়ে রাতভর ঐভাবে পাখা বিছিয়ে রওযা মোবারক বেষ্টন করে ﷺ পড়তে থাকে। এভাবে দিনে সত্তর হাজার এবং রাত্রে সত্তর হাজার  নূতন নূতন ফিরিস্তা অবতীর্ন হয়ে সম্মানের সাথে রওযা মোবারক বেষ্টন করে ও নূরের পাখা বিছিয়ে ﷺ পড়তে থাকে। যেদিন  যমীন ফেটে যাবে,  তখন রাসুলেপাক (ﷺ) কে সত্তর হাজার ফিরিস্তা উচ্চ সম্মানের সাথে বেষ্টন করে হাশরে নিয়ে যাবে। (আবদুল্লাহ্ ইবনে মোবারক (রহঃ) সূত্রে অত্র হাদীস বর্ণিত)।

হাকীম তিরমিজি তাঁর নাওয়াদিরুল উছুল গ্রন্থে নাফে’ এবং তাঁর উর্দ্ধতন আবদুল্লাহ্  ইবনে ওমর (রাঃ) রাবীদ্বয় থেকে অতিরিক্ত রেওয়ায়াত  এভাবে বর্ণনা করেছেন যে,  ”নবী করীম (ﷺ) একদিন এভাবে  বের হলেন যে, তাঁর ডানে ছিলেন আবু বকর ও  বামে  ছিলেন  ওমর।  হুযুর (ﷺ) বললেন-  এভাবেই আমরা হাশরে  উঠবো”।  (নাওয়াদিরুল উছুল-হাকীম তিরমিজি)

ব্যাখ্যাঃ অত্র বর্ণনা দ্বারা নিম্নবর্ণিত'তেরটি মাছআলা প্রমাণিত হয়েছে। যথাঃ

(১) হযরত কা’ব আহ্বার  যদিও তাবেয়ী- কিন্তু তাঁর মধ্যে ছিল পূর্ববর্তী কিতাব সমূহের এলেম। তিনি মা আয়েশা সিদ্দিকার ঘরে এলেম তলব ও হাদীস সম্পর্কে জানার জন্য যাতায়াত করতেন এবং মা আয়েশা (রাঃ) -এর ভাগিনা র্উওয়া -এর মাধ্যমে মাছ্আলা মাছায়েল জেনে নিতেন।

(২)  রাসুলে পাকের রওযা মোবারকে ফিরিস্তাদের আগমন ও নির্গমন  সংখ্যা, রওযা মোবারক বেষ্টন, ﷺ ও সালাম পাঠ, ইত্যাদি  তিনি কাশ্ফের মাধ্যমে  প্রত্যক্ষ করেছিলেন। সাহাবায়ে কেরাম ও  মা আয়েশা (রাঃ) কেউই তার  বর্ণনা প্রত্যাখ্যান করেননি। তাই ইহা সত্য। ইহা ছিল তাঁর কারামত। এজন্য কারামত অধ্যায়ে অত্র হাদীসে মাক্তু অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। (লুমুআত)। ]

(৩) মা আয়েশা (রাঃ) -এর ঘরের ঘটনা ছিল এটি। সুতরাং তিনিও একজন সাক্ষী।

(৪) দিনে সত্তর হাজার এবং রাত্রে  সত্তর হাজার ফিরিস্তার একমাত্র ডিউটি হলো ﷺও সালাম পাঠ করা।  তাও আবার দাঁড়িয়ে পাঠ করা। ইহার নামই মিলাদ ও কিয়াম। ফিরিস্তারা এই মিলাদ কিয়াম কিয়ামত পর্যন্ত করতে  থাকবে।  সুতরাং মানুষেরা  মিলাদ কিয়াম না করলেও  আল্লাহর ফিরিস্তাদের মিলাদ-কিয়াম কিয়ামত পর্য্যন্ত বন্ধ হবে না। কাজেই নবীজীর মিলাদ ও কিয়াম কোনদিন বন্ধ হবে  না। আমরা সুন্নী মুসলমানরা  ফিরিস্তাদের অনুকরণে মিলাদ কিয়াম করি।  ইহা ফিরিস্তাদের সুন্নাত। (আন্ওয়ারে আফ্তাবে সাদাকাত)

(৫) নবীজীর শান শওকতের জন্য প্রতিদিন নিত্যনতুন ৭০ হাজার ফিরিস্তা নাযিল হতে থাকবে। একবারের বেশী এই  খেদমত করার সুযোগ তাদের হবে না। ইমামে আহ্লে সুন্নাত আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা (রহঃ) তাঁর হাদায়েকে বখশীষ কাব্যগ্রন্থে ফিরিস্তাদের এই সালামী অনুষ্ঠানটি এভাবে বর্ণনা করেছেন-
مجھ سے خدمت کے قدسی کہیں ہاں رضا
مصطفے جان رحمت پہ لاکھوں سلام
“মিলাদ কিয়ামের খেদমতে নিয়োজিত  ফিরিস্তারা হাশরের দিনে আমাকে ডেকে বলবে-হে ইমাম রেযা, তুমি  তোমার সেই বিখ্যাত না’তিয়া কালাম পড়ে শুনাও-যার প্রথম লাইন হলো- ”মোস্তফা জানে রহমত পে লাখো সালাম”।

(৬) মিলাদুন্নবী উপলক্ষে জুলুছ বের করা ফিরিস্তাদের অনুকরণ। কেননা,  সত্তর হাজার ফিরিস্তা একসাথে নাযিল  হন দলবদ্ধভাবে। আবার উপরে উঠে যান দলবদ্ধভাবে। এটাকেই জুলুছ বা আনন্দ মিছিল বলা হয়।

(৭) ﷺ ও সালামের জন্য নিয়োজিত ফিরিস্তারা  ১২ ঘন্টা একটানা দাঁড়িয়ে থেকে শুধু ﷺও সালাম পাঠ করেন। অন্য কোন ইবাদত বা ডিউটি তাদের নেই। ﷺও সালাম একটি উত্তম ইবাদত- যা পড়ার পুরস্কার আছে এবং না পড়ারও শাস্তি আছে।

(৮) নবীজীকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য চোখের সামনে হাযির থাকা জরুরী নয়। যেমন ফিরিস্তারা  রওযা শরীফের  উপরিভাগে  হুযুরের  উদ্দেশ্যে  ﷺ পাঠ করছেন। আমাদের মিলাদ মাহফিলে হুযুরের বাহ্যিক উপস্থিতি জরুরী নয়- শুধু বেলাদাতের খুশীর সংবাদে দাঁড়িয়ে যাওয়া মোস্তাহাব ও উত্তম। (বরযিঞ্জি)। উপস্থিত থাকাও অবান্তর নয়- বরং সম্ভব এবং কোন কোন মাহফিলে তিনি উপস্থিত হয়ে থাকেন। (ফয়সালায়ে হাফ্ত মাসায়েল)

(৯) কিয়ামত পর্য্যন্ত মিলাদের  চর্চা হতে থাকবে। কেননা,  এটা ফিরিস্তাদের আমল এবং  আল্লাহর আয়োজন। আমরা ঈদে মিলাদুন্নবীর উৎসব করতেই থাকবো-আর ওহাবী ও নজদীরা চিরদিন নবীবিদ্বেষের আগুনে শয়তানের মত জ্বলতেই থাকবে। আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা তাঁর না’তিয়া কালামে লিখেছেন-
ذکر میلاد النبی کرتا رہونگا عمر بھر
جلتے رہو نجد یوا جلنا تمہارا کام ہے
“আমরা মিলাদুন্নবীর চর্চা জীবনভরই করতে থাকবো। হে নজদী গোষ্ঠী! তোমরা জ্বলতে থাকো-জ্বলে মরাই তোমাদের স্বভাব”।

(১০) সিঙ্গার প্রথম ফুঁৎকারের সময় রওযা মোবারক ধবংস হবেনা-বরং অক্ষত থাকবে।

(১১) দ্বিতীয়বার সিঙ্গার ফুঁক দেয়ার সময় রওযা  মোবারক থেকে   উঠে  রাসুলে মকবুল  (ﷺ) সর্বপ্রথম তিন সঙ্গী নিয়ে হাশর ময়দানে তাশরীফ নিয়ে যাবেন।

(১২) সত্তর হাজার ফিরিস্তা বোরাক নিয়ে এসে অতি সম্মানের সাথে মিছিল করে নবীজীকে হাশরে নিয়ে যাবে। সাথে থাকবেন হযরত ইছা (আঃ), হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর- যার বিবরণ ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

(১৩) মিশকাতের বর্ণনায় শব্দের উল্লেখ আছে- يزفونه যার অর্থ “বন্ধুর সাথে বন্ধুর মিলন ঘটানো”। (লুমুআত) আল্লাহ হবেন সেদিন নবীর আশেক- আর নবীজী হবেন মাশুক। মাশুক যা চাইবেন- আশেক তা দিবেন। (ছুরা ওয়াদ্ দোহা)।

উল্লেখ্য, নবীজীর বেলাদতের দিন সারা দুনিয়া আনন্দ ও খুশী উদযাপন করেছিল- কিন্তু ইবলিছ শয়তান হায় হায় করে মাথায় ধূলা নিক্ষেপ করে সেদিন সীমাহীন রোদন করেছিল (মাওয়াহিব)। শয়তান হচ্ছে মিলাদ কিয়াম বিরোধী প্রথম দুশমন। দ্বিতীয়  দুশমন হচ্ছে ওহাবী ও দেওবন্দীরা। আল্লাহ্ আমাদেরকে শানে  মোস্তফা উপলদ্ধি করার তৌফিক দান করুন।


------

 
Top