প্রশ্নঃ জীবিত ব্যক্তিদের সদ্কা-খয়রাত, তিলাওয়াত, নফল নামায-রোযা, যিকির-আয্কার, দোয়া-মুনাজাত, মিলাদ- ইত্যাদি নেক আমল কবরবাসীর রূহে পৌছে কিনা?

উত্তরঃ  হাঁ, জীবিত লোকদের সদ্কা-খয়রাত,  কোরআন তিলাওয়াত,   নফল  নামায-রোযা, যিকির-আয্কার, দোয়া-মুনাজাত,  তাস্বিহ্-তাহ্লীল, মিলাদ - ইত্যাদি নেক আমল মৃতব্যক্তির রূহে পৌঁছে এবং উপকারে আসে। এটাকে ইছালে ছাওয়াব, নযর নিয়ায, র্উছ, ফাতেহা, ছাওয়াব রেছানী- ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়। এটা উম্মতে মোহাম্মদীর একক বৈশিষ্ট্য। প্রমাণ দেখুনঃ

(১) নবীজীর  পূর্ব যামানায় একজনের নেক আমল অন্যকে দান করা  যেতোনা এবং একজনের বদ আমলও অন্যের কাঁধে তুলে দেওয়া হতো না। হযরত ইবরাহীম (আঃ) -এর সহিফায় এবং হযরত মুছা (আঃ) -এর তৌরিত কিতাবে অনুরূপ বিধান ছিল। যেমন-

আল্লাহ্পাক ছুরা আন্ নাজম ৩৬-৪১ আয়াত সমূহে এরশাদ করেছেন-
أَمْ لَمْ يُنَبَّأْ بِمَا فِي صُحُفِ مُوسَى - وَإِبْرَاهِيمَ الَّذِي وَفَّى - أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى - وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعَى - وَأَنَّ سَعْيَهُ سَوْفَ يُرَى - ثُمَّ يُجْزَاهُ الْجَزَاء الْأَوْفَى
অর্থ- “তাদেরকে (পূর্ববর্তীদেরকে) কি একথা জানানো হয়নি- যা মুছার সহিফাসমূহে ছিল এবং দায়িত্ব্শীল ইবরাহীমের সহিফায়ও   লিখা ছিল যে “একজন অন্যজনের গুনাহের বোঝা বহন করবে না এবং  একজনের নেক আমলের সে-ই মালিক হবে, নিজের নেক আমলের প্রচেষ্টার ফল তাকে দেখানো হবে এবং তাকে তার পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে”। (ছুরা  নাজম ৩৬-৪১ আয়াত)।

ব্যাখ্যাঃ পূর্ব প্রথা রহিত করে আখেরী যামানার উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য নেক আমলের  ক্ষেত্রে  অন্যের নেকআমল একজন অন্যজনকে দান করার প্রথা চালু করা হয়। গুনাহের ক্ষেত্রে সর্বযুগে একই বিধান চালু রাখা হয়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) ছুরা নাজম ৩৮ নং আয়াতের বিধানকে  অর্থাৎ “নেক আমল অন্য জনকে দান না করার বিধানটিকে” মানছুখ বা রহিত বলে মত প্রকাশ করেছেন এবং  তার নাছেখ  বা রহিতকারী আয়াত হিসাবে ছুরা তুর ২১ নম্বর আয়াত উল্লেখ করেছেন -যাতে বিধান দেয়া হয়েছে যে-
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ  ذُرِّيَّتُهُم  بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ
অর্থাৎঃ “যারা ঈমানদার এবং তাদের  সন্তানগণও ঈমানে তাদের অনুগামী, আমি তাদের সন্তানদেরকে জান্নাতে তাদের সাথে মিলিত করে দেবো”। (তুর- ২১ আয়াত)

ব্যাখ্যাঃ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে মাযহারীতে কাযী ছানাউল্লাহ্  পানিপথী বলেছেন- হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)   - এর মতে সন্তানগণ ঈমানদার পিতামাতা হতে জন্মসূত্রে ঈমানপ্রাপ্ত হয়ে ভূমিষ্ট হয়। পিতা-মাতার ঈমান যদি সন্তানগণের  মধ্যে আসতে পারে  এবং তাদের উপকার করতে পারে- তাহলে একজনের নেক আমলও অন্যজনকে উপকৃত করতে পারবে। নবী করিম (ﷺ) বলেছেন- ”আল্লাহ্পাক সৎকর্মশীল মুমিনদের সন্তান সন্ততিকে তাদের বুযর্গ পূর্বপুরুষদের নেক আমলের বরকতে  বুযর্গ পিতৃ পুরুষগণের মর্তবায় পৌছিয়ে দিবেন- যদিও সন্তানেরা সৎকর্মের ক্ষেত্রে সেই রকম মর্তবার যোগ্য নাও হয়ে থাকে -যাতে পূর্বপুরুষদের চক্ষু শীতল হয়”। (মাযহারী)।

ইছালে ছাওয়াব, ফাতেহা, ছাওয়াব রেছানী- ইত্যাদির কোরআন ভিত্তিক ইহাই মৌলিক নীতি। হাদীস শরীফে ফাতেহা ও ইছালে ছাওয়াব- ইত্যাদি-নেক আমল মৃত ব্যক্তির কল্যাণ সাধন করার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। যেমন-

(২) মিশকাত শরীফে উল্লেখ আছে -
اذا مات الانسان انقطع  عنہ عملہ الامن ثلٰثۃ الامن صدقۃ جاریۃ او علم ینتفع بہ الناس او ولد  صالح یدعو لہ ۔
অর্থঃ ”মানুষ মরে গেলে তার নিজের আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন  প্রকারের আমলের ফলাফল তাকে উপকৃত করে- (১)  মানব কল্যাণমূলক সদকায়ে জারিয়াহ্ (২) তার এলেমের দ্বারা যদি মানুষ উপকৃত হয় (৩) নেক সন্তান- যারা তার জন্য দোয়া করে”।

ব্যাখ্যাঃ  অত্র হাদীসে যে তিনটি পথ খোলা থাকে- তাহলো (১) নিজে  অথবা অন্যে মৃত ব্যক্তির জন্য সদকায়ে জারিয়াহ্ করা- যেমনঃ রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তব- ইত্যাদি নির্মাণ করে তার মাগফিরাতের জন্য দান করা, অথবা (২) নিজে এলেম শিক্ষা করে অন্যকেও শিক্ষা দেয়া, অথবা (৩) নিজ সন্তানদেরকে সুশিক্ষা দিয়ে নেকসন্তান হিসাবে রেখে যাওয়া। এগুলোর  ছাওয়াব সে কবরে ও পরকালে পেতে থাকবে। এগুলো হলো তার নিজের কৃতকর্মের ফলাফল। এটা বন্ধ হবেনা।

(৩) মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ্ শরীফে আছে-
عن معقل بن یسار ان النبی ﷺ قال اقرووا علی موتاکم سورۃ یٰٓس۔
অর্থঃ  “হযরত মা’ক্কাল ইবনে ইয়াছার (রাঃ) হতে বর্ণিত- নবী করিম (ﷺ)  এরশাদ করেছেন- তোমরা মূমূর্ষ অথবা মৃত ব্যক্তির কাছে সুরা ইয়াছিন তিলাওয়াত করো”।

ব্যাখ্যাঃ  হাদীস বিশারদ উলামাগণ অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন-   হাদীসখানা অতি ব্যাপক। ইনতিকালের সময়ে, ঘরে ও  বাইরে, মৃত ব্যক্তির কবরের কাছে ছুরা ইয়াছিন তিলাওয়াত করা উত্তম। কেননা, “ মৃত ব্যক্তির কাছে” শব্দ দ্বারা ”মৃত্যুর সময়ে এবং মৃত্যুর পরে কবরে”- সর্বত্রই  তিলাওয়াত করা বুঝায়। যারা শুধু মৃত্যুর পূর্বে  ছুরা ইয়াছিন পড়ার ব্যাখ্যা করে- তারা আংশিক ব্যাখ্যা করে। মৃত্যুর সময় ছুরা ইয়াছিন পড়লে জান কব্জ সহজ হয়। মৃত্যুর পর পড়লে সাওয়াব পায়। উভয়টিই শুদ্ধ  এবং বৈধ। (তাযকিরাহ্)।

(৪) “তাবরানী ও ইমাম বায়হাকীর শুয়াবুল ঈমান”  গ্রন্থে উল্লেখ আছে-
عن عبد اللّٰہ بن عمر ص رفوعا اذا مات احدکم فلا تحبسوہ واسرعوا بہ الی قبرہ ولیقرأ عند رأسہ بفاتحۃ البقرۃ وعند رجلیہ بخاتمۃ البقرۃ ۔ ذکرہ الامام جلال الدین السیوطی فی جمع الجوامع ۔
অর্থঃ “হযরত আবদুল্লাহ্  ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা মারফু’ হাদীসের মাধ্যমে   রাসুল করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন- ”যখন তোমাদের কেউ ইন্তিকাল করে- তখন তাকে দীর্ঘক্ষন ফেলে রেখোনা- বরং যথাশীঘ্র সম্ভব কবরস্থ করো। অতঃপর তার কবরের মাথার  দিকে ছুরা বাক্বারার প্রথম পাঁচ আয়াত এবং পায়ের দিকে ছুরা বাক্কারার শেষ তিন আয়াত তিলাওয়াত করো”।

(ইমাম জালাল উদ্দীন  সুয়ুতি (রহঃ) তাবরানী ও শুয়াবুল ঈমান সূত্রে অত্র হাদীসখানা  তাঁর জামউল জাওয়ামে’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)।

(৫) দারু কুতনী গ্রন্থে একখানা হাদীস উল্লেখ  করা হয়েছে -
ان رجلا قال یا رسول اللّٰہ انہ کان لی الوان ابرھما فی حال حیاتھما فکیف لی ببرھما بعد موتھا؟ فقال ﷺ ان من البر ان تصلی لھما مع صلاتک و ان تصوم لھما  مع صیامک (  رواہ الدارقطنی)
অর্থঃ “জনৈক সাহাবী রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের  খেদমতে  আরয করলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আমার পিতামাতা জীবদ্দশায় থাকতে  তাঁদের খেদমত করতাম। তাঁদের মৃত্যুর পর কিভাবে তাঁদের খেদমত করবো?   তদুত্তরে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ  করলেন- ”তোমার নামায ও রোযার সাথে তাদের জন্য কিছু নফল নামায ও নফল রোযা রাখো”। (দারু কুতনী)।

(৬) আবু আবদুল্লাহ্ কুরতুবী (৬৭১ হিজরী)  তাঁর তাযকিরাহ্ গ্রন্থে  একটি অধ্যায় রচনা করে বলেন- “কবরের পাশে তিলাওয়াত করা সুন্নাত”।
باب ماجاء فی قراۃ القراٰن عند القبر حالۃ الدفن وبعدہ وان یصل الی المیت ثواب ما یقرأ   ویدعی ویستغفرلہ ویتصدق علیہ۔
অর্থঃ কুরতুবী বলেন- “দাফনকালে ও দাফনের পরে কবরের পার্শ্বে কোরআন  তিলাওয়াত করা প্রসঙ্গে বর্ণনাঃ “তিলাওয়াত, দোয়া, ইস্তিগফার  ও সদ্কা খয়রাতের সাওয়াব কবরবাসীর কাছে পৌঁছে”।

(৭) ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) বলেন-
اذا دخلتم المقابر فاقرؤا بفاتحۃ الکتاب والمعوذتین وقل ھو اللّٰہ احد واجعلوا ذلک  لاھل المقابر فانہ یصل الیھم۔
অর্থঃ ”যখন তোমরা কোন কবরস্থানে যাবে- তখন ছুরা ফাতেহা, ছুরা নাছ, ছুরা ফালাক এবং ছুরা ইখলাছ পাঠ করে তার সাওয়াব  কবরবাসীকে দান করে দিবে। কেননা,  এগুলোর ছাওয়াব তাদের কাছে পৌঁছে”। (তাযকিরাহ্ পৃষ্ঠা-৮২)

ব্যাখ্যাঃ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল প্রথম দিকে  এ বিষয়ে সঠিক হাদীস না  পাওয়ার কারণে ইছালে ছাওয়াবকে বিদ্আত বলতেন।  যখন তাঁর সাথী মুহাম্মদ ইবনে কুদামা জাওহারী তাঁকে হযরত ইবনে ওমরের  (রাঃ) “ইছালে ছাওয়াব সংক্রান্ত ওছিয়ত” স্মরণ করিয়ে দিলেন- তখন তিনি পূর্বমত পরিবর্তন করে ইছালে ছাওয়াব ও ফাতেহাখানীর ফতোয়া প্রদান করেন। (তাযকিরাহ্)।

(৮) বুখারী  ও মুসলিম শরীফে উল্লেখ আছে- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুটি কবরের পাশ দিয়ে গমনকালে দেখতে পেলেন- তাদের কবর আযাব হচ্ছে। একজন চোগলখুরী করতেন, অন্যজন প্রস্রাব হতে ভালমত পাকপবিত্র হতেন না। এমতাবস্থায় হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি  তাজা খেজুরের ডাল নিয়ে দুভাগ করে দু’কবরে গেড়ে দিয়ে বললেন-
لعلہ ان یخفف عنھما مالم ییبسا ۔
অর্থাৎ- “যতক্ষণ না ডালা দুটি শুকিয়ে যাবে- ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের কবরের আযাব হালকা থাকবে”। (বুখারী ও মুসলিম)।

ব্যাখ্যা- এই হাদীস দ্বারাই হাদীস বিশারদগণ প্রমাণ করেছেন যে, কবরের উপর বা পার্শে গাছ লাগানো হলে যদি কবরের  আযাব হালকা হয়-  তাহলে কোরআন তিলাওয়াতের দ্বারা যে আরো বেশী উপকার হবে- এতে সন্দেহের কিছুই নেই। তাজাগাছ লাগানো উত্তম। ফুল ছড়ানো উত্তম। (আলমগীরী)।

(৯) হযরত আনাছ ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত- রাসুল মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান-
اذا قرأ المؤمن ایۃ الکرسی وجعل ثوابھا لاھل القبور ادخل اللّٰہ تعالی فی کل قبر مؤمن المشرق الی المغرب اربعین نورا ۔ ووسع اللّٰہ عزوجل علیھم مضاجعھم واعطی اللّٰہ القاری ثواب ستین نبیا ، ورفع لہ بکل میت درجۃ وکتب لہ بکل میت عشر حسنات ۔
অর্থ- “কোন মোমেনব্যক্তি যদি আয়াতুল কুরছি পাঠ করে উহার সাওয়াব কবরবাসীদের জন্য দান করে, তাহলে প্রত্যেক মুমিনের কবরে আল্লাহ্পাক পূর্বপশ্চিমে চল্লিশটি নূরের বাতি প্রবেশ  করান। তার কবরকে প্রসারিত করেন, তিলাওয়াতকারীকে ৬০ জন নবীর সমান সওয়াব দান করেন, প্রত্যেক  মাইয়েতের বিপরীতে একটি করে পদমর্যাদা উঁচু করেন এবং  প্রত্যেক কবরবাসীর বিপরীতে দশটি করে নেকী দান করেন”। (তাযকিরাহ্)।

বিশ্লেষণঃ কবর  যিয়ারতের ফযিলত সম্পর্কে এই হাদীসখানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

(১০) রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন -
ماالمیت فی قبرہ الاکالغریق المسغوث ینتظر دعوۃ تلحقہ من ابیہ او اخیہ او  صدیق لہ فاذا لحقتہ کانت احب الیہ من الدنیا وما فیھا وان ھدایا الاحیاء للاموات الدعاء والاستغفار۔
অর্থঃ “কবরে মৃত ব্যক্তির অবস্থা ডুবন্ত সাহায্যপ্রার্থীর ন্যায়। সে আপন পিতা, আপন ভাই অথবা আপন বন্ধুর পক্ষ হতে দোয়ার প্রতিক্ষায় থাকে। যখন তাদের দোয়া তার নিকট পৌঁছে- তখন উহা তার কাছে সমগ্র পৃথিবী ও তার যাবতীয় বস্তু হতে বেশী প্রিয় হয়। ”মৃতদের জন্য জীবিতদের   হাদিয়া হলো- দোয়া করা ও মাগফিরাত কামনা করা।” (তাযকিরাহ্)।

সুতরাং বিপদগ্রস্থ কবরবাসীর জন্য সব সময় কিছু না কিছু দান করা উচিৎ।

(১১) হযরত আনাছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন- রাসুল মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন-
من  دخل المقابر فقرا سورۃ یٰٓس خفف اللّٰہ عنھم وکان لہ بعدد من فیھا حسنات۔
অর্থঃ “যে ব্যক্তি গোরস্তানে প্রবেশ করে ছুরা ইয়াছিন পাঠ করে তার  সওয়াব দান করবে- আল্লাহ্পাক কবরবাসীদের  আযাব হাল্কা  করে দেবেন এবং যিয়ারতকারী ঐ গোরস্তানের কবরবাসীদের সমসংখ্যক সওয়াব পাবে”। (তাযকিরাহ্)।

মৃত্যুর পরও ছুরা ইয়াছিন কবরে পাঠ  করা উত্তম। ওহাবীরা এসব মানে না এবং বলে- হাদীসগুলো নাকি মনগড়া। (নাউযুবিল্লাহ্)

(১২) হযরত ছাআদ ইবনে উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর মা  ইনতিকাল  করার পর  নবী করিম   (ﷺ) -এর খেদমতে এসে তিনি আরয করলেন-
وان امی توفیت افا تصدق عنھا ؟ قال نعم قال فای الصدقۃ قال سقی الماء وفی روایۃ البئر۔
অর্থঃ হযরত ছাআদ ইবনে ওবাদা (রাঃ) বলেন- ইয়া রাছুলাল্লাহ্! আমার মা ইন্তিকাল করেছেন। আমি কি তাঁর জন্য কিছু সদ্কা করবো?  হুযুর সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া  সাল্লাম বললেন- হাঁ। হযরত ছাআদ (রাঃ) পুনরায় আরয করলেন- কোন্ ধরণের সদ্কা উত্তম? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘পানি পান করানো’। অন্য রেওয়াতে আছে- “কুপ খনন করা”। (তাযকিরাহ্)। তখন মদিনা শরীফে  পানির অভাব ছিল- তাই এই ব্যবস্থা।

(১৩) আল্লামা খারায়েতী তাঁর “কিতাবুল কুবুর” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন-
سنۃ فی الانصار اذا حملوا المیت ان یقؤا معہ سورۃ البقرۃ ۔
অর্থাৎ- মদিনার আনসার সাহাবীদের  মধ্যে এই সুন্নাতপ্রথা চালু ছিল যে, যখন তাঁরা কোন মৃতব্যক্তিকে বহন করে নিয়ে যেতেন- তখন রাস্তায় ছুরা বাক্কারা পাঠ করতেন”। (তাযকিরাহ্)

(১৪) হযরত মালেক ইবনে দীনার (রহঃ) একদিন জুমা নামায পড়ার জন্য মসজিদে গমনকালে এক কবরের পার্শে দাঁড়ালেন। দেখতে পেলেন- কবরবাসী সবাই খুশী- কিন্তু একজন যুবক বিষন্ন অবস্থায় রয়েছে। তিনি মৃত যুবককে বললেন- তোমার মুখ ভার কেন? যুবক উত্তর করলো- দুনিয়াতে আমার জন্য সদ্কা বা দোয়া করার কেউ নেই। আমার মা অন্যত্র বিবাহ করেছেন- কিন্তু স্বামীর ভয়ে আমার জন্য কিছু দান করতে পারেন না। হযরত মালেক ইবনে দীনার জিজ্ঞেস করলেন- তোমার মায়ের ঠিকানা কী?  যুবক বললো- সিন্ধু দেশের অমুক জায়গায়। হযরত মালেক তার মায়ের নিকট গমন করে যুবকের বৃত্তান্ত বর্ণনা করলে মা কেঁদে ফেললেন এবং গোপনে কিছু টাকা  দিয়ে ফকির মিসকিনকে দান করে দিতে বললেন। হযরত ইবনে দীনার মায়ের কথামত দান করে পুনরায় ঐ যুবকের কবরে  গিয়ে দাঁড়াতেই দেখেন- যুবক হাস্ছে আর বলছে- “আমার মা আমার জন্য হাদিয়া পাঠিয়েছেন”। (কিতাবুর রূহ্)।

(১৫)  মহিউদ্দীন ইবনে আরবী (রহঃ) কোন এক দাওয়াতে খানা খেতে বসে পাশে  এক যুবককে দেখলেন- সে  হাত গুঁটিয়ে  বসে কাঁদছে। কারণ জিজ্ঞেস করে ইবনে আরাবী (রহঃ) জানতে পারলেন- ঐ যুবক তার মৃতা মাকে  কবরে আযাবরত অবস্থায় দেখতে পাচ্ছে।  ইবনে আরাবী (রহঃ) মনে মনে ভাবলেন- আমি সত্তর হাজার খতমে তাহলীল পড়েছি। আমি ঐ খতম যুবকের মায়ের উদ্দেশ্যে মনে মনে দান করে দিলাম। তিনি  বলেন- সাথে সাথে দেখতে পেলাম- ঐ যুবক হাসছে। কারণ জিজ্ঞেস করলে যুবক বললো- এখন আমার মাকে আযাবমুক্ত ও খুশী মনে হাসতে দেখতে পাচ্ছি। মহিউদ্দীন ইবনে আরবী বলেন- এখন আমি বাস্তব প্রমাণ পেলাম- ”জীবিত ব্যক্তিদের সদ্কা-খয়রাত মৃত ব্যক্তির বিরাট  উপকারে আসে “যদিও তা যয়ীফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত”।

(১৬) কবরবাসী  আউলিয়াগণ জীবিত ব্যক্তিদের উপকার  করতে পারেন। যেমন, হযরত ইমাম মুছা আল  কাযেম (রাঃ), হযরত মা’রূফ কারাখী (রাঃ), গাউসুল আযম আবদুল কাদের জিলানী (রাঃ), ইমামে আযম আবু হানিফা (রাঃ), খাজা গরীব নওয়ায (রাঃ) হতে অনেক উপকার মানুষ পাচ্ছে।

ইমাম শাফেয়ী (রাঃ) বলেন- আমি ইমামে আযমের মাযারে গিয়ে দু রাকাত নফল  নামায পড়ে দোয়া করার সাথে সাথে আমার মনের  বাসনা পূরণ হয়ে যেতো (ফতোয়া  শামী)।  হযরত গাউসুল আযম আবদুল কাদের  জিলানী (রাঃ) বলেন- “যে ব্যক্তি বিপদে পড়ে আমার নাম  ধরে সাহায্য চাইবে, তার বিপদ দূর হয়ে যাবে”। (বাহ্জাতুল আস্রার)। আরো বহু প্রমান রয়েছে।

মন্তব্যঃ বাতিলপন্থী ওহাবীদের প্রচারনা উপেক্ষা করে সবাই মাযারে   গমন করে আল্লাহর  ওয়াস্তে বুযর্গানেদ্বীনের কাছে রূহানী সাহায্য চায়। এ ব্যাপারে আমার “প্রশ্নোত্তরে আকায়েদ ও মাসায়েল শিক্ষা” এবং “ইসলাহে বেহেস্তী জেওর”- এ বর্ণিত হাদীস  সহ বিস্তারিত দলীল দেখা যেতে পারে।

(১৭) ইমাম গাযালী রহমতুল্লাহ্ তাঁর “ইহ্য়াউল উলুম” গ্রন্থে লিখেছেন-
من یسمد بہ فی حیاتہ یستمد بہ بعد مماتہ ۔
অর্থঃ “দুনিয়াতে যার কাছে সাহায্য চাওয়া বৈধ, মৃতুর পরও তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া বৈধ”।

ব্যাখ্যাঃ এই অভিমতের দ্বারা  তিনি   মাযারস্থ আউলিয়ায়ে কেরামকে বুঝাতে চেয়েছেন। দুনিয়াতে মানুষ আপদে বিপদে পড়ে অলী-আল্লাহগণের দ্বারস্থ হয়। তদ্রুপ- তাঁদের  ইনতিকালের পরেও তাঁদের যিয়ারতে যাওয়া এবং আল্লাহর ওয়াস্তে তাঁদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা বা দোয়া চাওয়া জায়েয। কেননা, “অলী-আল্লাহগণের যেকোন প্রার্থনা আল্লাহ্ কবুল  করেন”- বলে আল্লাহ্ হাদীসে কুদ্সীতে বলেছেন”। (বুখারী ও মুসলিম)

(১৮) ‘ইহ্য়াউল উলুম’ গ্রন্থে ইমাম  গাযালী (রহঃ) আরো বলেন- “তিন মসজিদ ব্যতিত (মসজিদে হারাম, মসজিদে আক্সা ও মসজিদে নববী) অন্যান্য মসজিদে সফর করার  ক্ষেত্রে হাদীস শরীফে  নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মাযার যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফরের ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞামূলক  হাদীস নেই। কেননা, তিন মসজিদ ব্যতিত অন্যান্য মসজিদ ফযিলতের ক্ষেত্রে সমান- কিন্তু  মাযারসমূহের ফযিলত এক রকম বা সমান নয়। বিভিন্ন মাযারের বিভিন্ন বরকত ও ফযিলত রয়েছে  এবং আল্লাহর নিকট  তাঁদের নৈকট্যের বিষয়টিও ভিন্ন ভিন্ন। সুতরাং, তাঁদের মর্যাদা অনুযায়ী তাঁরা লোকদের উপকার করেন। (মিশকাত ও ইহ্য়া)। আমার রচিত আহ্কামূল মাযার দেখুন।

(১৯: ক) ইবাদতে মালী বা সদ্কা-খয়রাতের ছাওয়াব মৃতব্যক্তিদের  রূহে পৌঁছে।  এ ব্যাপারে হযরত আয়েশা, আবু হোরায়রা, ছাআদ ইবনে উবাদাহ্ (রাঃ) হতে নিম্নে বর্ণিত হাদীসসমূহ ইছালে ছাওয়াবের প্রকৃষ্ট প্রমাণ।

(১৯: খ) হযরত আয়েশা (রাঃ) -এর রেওয়ায়াত -
ان رجلا اتی النبی ﷺ فقال یا رسول اللّٰہ ان امی افتلتت نفسھا ولم توص  واظنھا لو تکلمت تصدقت افلھا اجر ان تصدقت عنھا ؟ قال نعم ۔
অর্থঃ “জনৈক সাহাবী নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লামার খেদমতে এসে বললেন-  ইয়া রাসুলাল্লাহ্। আমার মা হঠাৎ করে ইনতিকাল করেছেন এবং কোন অসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমি মনে করি- কথা বলার সুযোগ পেলে হয়তো তিনি আমাকে সদ্কা করার অসিয়ত করতেন। এখন আমি তাঁর জন্য সদ্কা করলে  তিনি উপকৃত হবেন  কিনা? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-হাঁ, উপকৃত হবেন। ” (বুখারী ও মুসলিম)।

(১৯: গ) হযরত ছাআদ  ইবনে উবাদাহ্ (রাঃ) -এর রেওয়ায়াত-
عن سعد بن عبادۃ انہ قال یا رسول اللّٰہ ان ام سعد قالت فای الصدقۃ افضل ؟ قال الماء فحفر بئرا وقال ھذہ لام سعد۔
অর্থঃ “ছাআদ ইবনে উবাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি আরয করলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ্! ছাআদের (নিজের) মা ইন্তিকাল করেছেন। তার জন্য কোন্ সদ্কা উত্তম হবে? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন-পানির ব্যবস্থা করো। অতঃপর তিনি একটি কুপ খনন করে বললেন- ”এটা ছাআদের মায়ের নামে উৎসর্গ করা হলো”। (সুনানে আরবাআ ও মুসনাদ)।

নোটঃ এ মর্মে ১২ নম্বরে সংক্ষেপে হাদীস বণর্না করা হয়েছে- ইতিপূর্বে।

(১৯: ঘ) হযরত আবু হোরায়রার রেওয়ায়াত-
وفی صحیح مسلم عن ابی ھریرۃ ص عنہ ان رجلا قال النبی ﷺ ان ابی ما توترک مالا ولم یوص فھل یکفی عنہ ان التصدقۃ عنہ ؟ قال نعم
অর্থঃ মুসলিম শরীফে হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত-  এক ব্যক্তি নবী করিম সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের   খেদমতে আরয করলো- ইয়া রাসুল্লাল্লাহ্! আমার পিতা ইন্তিকাল করেছেন। তিনি  সম্পদ রেখে গেছেন- কিন্তু অসিয়ত করে যাননি। আমি কিছু মাল সদ্কা করে  দিলে কি তাঁর  উপকারে আসবে? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি   ওয়া সাল্লাম বললেন- হাঁ, হবে”। (মুসলিম শরীফ)।

(১৯: ঙ) হযরত আনাছ (রাঃ) হতে বর্ণিত-
قال رسول اللّٰہ ﷺ انک  لتصدق لمیتک بصدقۃ فجیئی بھا ملک  من الملائکۃ فی اطباق من نور فیقوم علی راسہ فینادی یا صاحب القبر الغریب اھلک قد اھدوا الیک ھذہ الھدیۃ فاقبلھا تذکرۃ للقرطبی
অর্থঃ “নবী করিম (ﷺ)  এরশাদ করেছেন- তোমরা অবশ্যই তোমাদের পরিবারস্থ মৃত লোকদের জন্য কিছু সদ্কা  বা দান করবে। উক্ত সদ্কা বা দান একজন ফিরিস্তা নূরের পাত্রে নিয়ে মৃত ব্যক্তির মাথার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলবে- “হে কবরের প্রবাসী, তোমার পরিবারস্থ লোক তোমার জন্য এই হাদীয়া দান  করেছেন- তুমি তা কবুল  করো”। (তাযকিরাহ্)

(২০) রোযার ছাওয়াব দান করা যাবে কি না?

এ ব্যাপারে হযরত আয়েশা, হযরত ইবনে আব্বাস, ইবনে ওমর প্রমূখ-  সাহাবীগণের  রেওয়ায়াত প্রণিধানযোগ্য।

(২০:  ক) হযরত আয়েশা  সিদ্দীকা (রাঃ) -এর রেওয়ায়াতঃ একজনের রোযা অন্যজনে কাযা করা- (ব্যাখ্যা সাপেক্ষ)
عن عائشۃ رضی اللّہ  عنھا  ان  رسول اللّہ ﷺ قال من مات وعلیہ صیام صام عنہ ولیہ
অর্থঃ “রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- কেউ যদি ফরয রোযা আদায় না করে মারা যায়- তাহলে তার অলী ওয়ারিশ তার পক্ষে যেন উক্ত রোযা আদায় করে”। (বুখারী ও মুসলিম)

নোটঃ হানাফী মাযহাব মতে রোযা- নামায অন্যে কাযা করতে পারবে না।

(২০: খ) হযরত ইবনে আব্বাসের রেওয়ায়াতঃ
عن ابن عباس ص  قال جاء  رجل الی النبی ﷺ  فقال یا رسول اللّٰہ امی ماتت وعلیھا صوم شھر افاقضیہ عنھا؟ قال نعم فدین اللّٰہ احق ان یقضی ( صحیحین )
অর্থঃ   “একব্যক্তি  এসে   রাসুলকরিম (ﷺ) -এর খেদমতে আরয করলো- আমার মা ইনতিকাল  করেছেন। তাঁর উপর পূর্ণ একমাসের রোযা রয়ে  গেছে। আমি কি তার পক্ষে রোযা  কাযা  করতে পারবো?  নবী করিম (ﷺ) বললেন, হাঁ, পারবে। কেননা, মানুষের দেনা  পরিশোধের চেয়ে আল্লাহর দেনা পরিশোধ করা অগ্রগণ্য। ” (বুখারী ও মুসলিম)।

নোটঃ হানাফী  মাযহাব মতে অন্যে রোযার কাযা করতে পারবে না।

(২০: গ) হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) -এর রেওয়ায়াতঃ
ففی السنن عن ابن  عمر رضی اللّہ عنھما قال قال رسول اللّٰہ ﷺ من مات وعلیہ صیام شھر فلیطعم عنہ لک یوم مسکین ۔ رواہ الترمذی وابن ماجہ
অর্থঃ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন- রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- কেউ যদি রমযানের রোযা আদায় না করে  মারা যায়, তাহলে তার পক্ষে প্রতিদিন একজন মিছিকিনকে খাওয়াতে হবে”। (তিরমিযি ও ইবনে মাযাহ্)।

ব্যাখ্যাঃ পূর্বের ক ও খ- এ দু হাদীসে রোযার বদলে রোযা রাখার  কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অত্র হাদীসে রোযার  পরিবর্তে  কাফফারা বা প্রতিদিন এক মিছকিনকে খানা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া  হয়েছে। হানাফী মাযহাবে এই মতের উপরেই আমল করা হয়। ফরয রোযা বা নামায অন্যে আদায় করলে আদায় হবে না।

২১। বদলী হজ্বের ছাওয়াব দান করা প্রসঙ্গেঃ
(ক) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) -এর রেওয়ায়াতঃ
عن ابن عباس ص ان امراۃ  من جھینۃ جائت الی النبی ﷺ فقالت ان امی نذرت ان تحج فلم تحج حتی ماتت افاحج  عنھا ؟ قال حجی عنھا ارأیت لوکان علی امک دین اکنت  قاضیتہ ؟ اقضوا اللّٰہ فااللّٰہ احق بالقضاء ۔ رواہ البخاری
অর্থঃ  হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন- জোহায়না গোত্রের এক মহিলা রাসুলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লামের খেদমতে  এসে আরয করলেন- আমার মা হজ্বের মানত করেছিলেন- কিন্তু হজ্ব করতে পারেননি। আমি কি তাঁর বদলী হজ্ব আদায় করতে পারবো? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন- অবশ্যই পারবে। তুমি তোমার  মায়ের পক্ষে বদলী হজ্ব করো। তোমার মায়ের উপর দেনা থাকলে  তা আদায় করার ব্যাপারে তুমি কী ধারণা করো? আল্লাহর দেনা পরিশোধ করো। কেননা, আল্লাহর দেনা আদায় করাই  তো অধিক অগ্রগণ্য বিষয়”। (বুখারী শরীফ)

ব্যাখ্যাঃ হযরত বুরাইদা এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)  থেকে এ মর্মে আরো অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইবাদাত দুই  প্রকার- ইবাদতে বদনী ও ইবাদতে মালী। নামায রোযা হলো ইবাদতে বদনী। কিন্তু হজ্ব হচ্ছে ইবাদতে  মালী ও বদনী- উভয়টি। সুতরাং ইবাদতে  বদনী (রোযা) ও ইবাদাতে মালী (হজ্জ) -এর ছাওয়াব মূর্দাকে দান করা ২০: ক ও খ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো। (এটা শাফী মাযহাব)। কিন্তু হানাফী মযহাব মতে হজ্বের  মূল কাজটি হলো ইবাদতে মালী, তাই অন্যে বদলী হজ্ব আদায় করতে পারবে। কিন্তু ইবাদতে বদনী (নামায ও রোযা) অন্যে আদায় করতে পারবেনা-  বরং প্রতিদিন একজন মিছকিনকে দুবেলা খানা বা সমপরিমান টাকা দিয়ে রোযা ও  নামাযের কাফফারা দিতে হবে (২০: গ দেখুন)। নামাযের কাফফারা প্রতি ওয়াক্তের জন্য এক ফিতরা পরিমান আদায় করতে হবে।

এর প্রমান হলো ইবনে আব্বাস ও ইবনে  ওমরের নিন্মের দুখানা হাদীস।

(২২) ইবনে আব্বাসের হাদীস হলো,
قال النبی ﷺ لا یصلی احد عن احد ولایصوم احد عن احد ولکن یطعم عنہ مکان کل یوم مدا من حنطۃ
অর্থাৎ- “একের নামায অন্যে এবং একের রোযা অন্যে আদায় করতে পারবে না- বরং প্রতিদিনের জন্য এক মুদ্দ গম দিতে হবে। ” (তাযকিরাহ্)।

(২৩) হযরত ইবনে ওমরের বর্ণনা হলোঃ
قال الرسول ﷺ من مات وعلیہ صوم رمضان یطعم عنہ
অর্থাৎ- “কেউ রোযা আদায় না করে মারা গেলে তার পক্ষে মিছকিনকে খানা দিতে হবে”।

নোটঃ শাফেয়ী মাযহাব  মতে নীতিমালা  হলো- ইবাদাতে বদনী ও ইবাদতে মালী উভয় প্রকারের কাযা অন্যে আদায় করতে পারবে। তার দলীল হলো- ২০ নম্বর ক ও খ হাদীস।

কিন্তু হানাফী মাযহাবের মূলনীতি হলো- ইবাদতে বদনী অন্যে কাযা করলে আদায় হবে না- বরং কাফফারা দিতে হবে। দলীল হলো- ২০ (গ) হাদীস এবং ২২ও ২৩ হাদীসদ্বয়।

-----

 
Top