প্রশ্নঃ হাশরের ময়দানে বিচার হবে, হিসাব  নিকাশ হবে, মিযানে নেকী-বদী ওজন  করা হবে। এগুলো বিশ্বাস করা কি ফরয? বিচারের দিন বা কিয়ামতের দিনে অনেক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে। সে হিসাবে কিয়ামত বা হাশরের ভিন্ন ভিন্ন নাম কোরআন মজিদে পাওয়া যায়। অনুগ্রহ করে ঐ নামগুলো উল্লেখ করে হাশ্রের একটি পূর্ণচিত্র তুলে ধরবেন কি?

জওয়াবঃ হ্যাঁ, পরকালে পুনরুত্থান ও বিচারে বিশ্বাস করা ফরয। কিয়ামতের দিনে এমন সব ঘটনা ঘটবে- যার প্রেক্ষিতে ঐদিনের ভিন্ন ভিন্ন নাম  কোরআন হাদীসে পাওয়া যায়। এই নামের দ্বারাই বুঝা যাবে- কত ভয়াবহ হবে সেই দিনটি। ছুরা ইন্ফিতার,  ছুরা তাক্ভীর ও ছুরা ইন্শিকাক- এই ৩ ছুরায় কিয়ামতের প্রাথমিক প্রলয়ঙ্কর অবস্থার প্রেক্ষিতে কতিপয় নাম ২৯ অধ্যায়ে উল্লেখ করা  হয়েছে। এছাড়াও ইমাম আবু আবদুল্লাহ্ কুরতুবী (রহঃ) তাঁর তাযকিরাহ্  গ্রন্থে বিশুদ্ধভাবে কারণসহ কিয়ামতের ৬৪টি নাম উল্লেখ করেছেন। যথাঃ

(১) الساعۃ (আছ্-ছাআতু):

আভিধানিক অর্থ- “সময় বা মূহুর্ত”। পরিভাষায় বলা হয় ১ ঘন্টা। কিয়ামত দিবসকে “ছাআত” বলার কারণ হলো- একই মুহুর্তে বিভিন্ন রকমের ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হবে সেদিন। “ছাআত” শব্দের আরেক অর্থ মুহুর্ত। কেননা, বিনা নোটীশে মূহুর্তের মধ্যে কিয়ামত সংঘটিত হবে। তখন মানুষ কিংকর্তব্য  বিমূঢ় হয়ে পড়বে। কোরআন  মজিদের অনেক স্থানে “ছাআত” শব্দটি উচ্চারিত  হয়েছে  এবং ঐসময় বিভিন্ন অবস্থা বা পরিস্থিতির সৃষ্টি  হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কয়েকটি উদাহরণঃ যেমন, ছূরা আ’রাফ ১৮৭ আয়াতে আল্লাহ্পাক এরশাদ করেছেন-
يَسْأَلُونَكَ عَنِ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ رَبِّي لاَ يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَا إِلاَّ هُوَ
অর্থাৎ “হে প্রিয় রাসুল! লোকেরা আপনাকে “ছাআত” (কিয়ামত মহুর্ত) সম্পর্কে প্রশ্ন   করবে- কখন তা সংঘটিত হবে? বলে দিন- এর  এলেম তো আমার রবের  নিকটেই রয়েছে। ঐ মূহুর্ত সম্পর্কে একমাত্র তিনিই অনাবৃত করে দেখাবেন নির্ধারিত সময়ে”।

ছূরা রোম ৫৫ আয়াতে আল্লাহ্পাক “ছাআত” সম্পর্কে এরশাদ করেছেন-
وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ يُقْسِمُ الْمُجْرِمُونَ مَا لَبِثُوا  غَيْرَ سَاعَةٍ
অর্থাৎ “যেদিন ছাআত” বা  কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে- তখন অপরাধীরা (কাফির) কসম খেয়ে বলবে যে, এর পূর্বে তারা দুনিয়াতে অথবা কবরে এক মুহুর্তের বেশী অবস্থান করেনি”। (কারণ, কিয়ামতের ভয়াবহতার  তুলনায়  দুনিয়া ও কবর ছিল তাদের কাছে এক মুহুর্তের মত)।

ছূরা রোম ১২ আয়াতে “ছাআত” বা কিয়ামত শব্দটি এভাবে উল্লেখিত হয়েছে-
وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ يُبْلِسُ الْمُجْرِمُونَ
অর্থাৎ “যেদিন কিয়ামাত মূহুর্ত অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন অপরাধীরা হতাশ হয়ে পড়বে”।

উক্ত ছূরার ১৪ নং আয়াতে ছাআত বা কিয়ামতের  ভয়াবহতা সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে-
وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ يَوْمَئِذٍ يَتَفَرَّقُونَ
অর্থাৎ “যেদিন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে- সেদিন মানুষ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে”।

ছুরা মোমিন ৪৬ আয়াতে এরশাদ হয়েছে-
وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ أَدْخِلُوا آلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ
অর্থাৎ-  “যেদিন কিয়ামত  অনুষ্ঠিত হবে- তখন ফিরিস্তাদেরকে বলা হবে- ফেরাউনের অনুসারীদেরকে কঠিন আযাবে প্রবেশ করাও”।

মোদ্দা কথায়- কিয়ামতের ময়দানে একই মূহুর্তে  বিভিন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, বিভিন্ন ঘটনা  ঘটবে। এজন্যই ঐ অবস্থাকে মূহুর্ত বা ছাআত বলা হয়েছে।

(২) یوم  الخروج (ইয়াওমুল খুরুজ) অর্থঃ “বহির্গত হওয়ার দিবস”।

ঐদিন সমস্ত মানুষ কবর থেকে বের হয়ে হাশরে যাবে এবং আল্লাহর দরবারে দণ্ডায়মান হবে।  ফিরিস্তারা তাদেরকে বেষ্টন করে কাতারে কাতারে দাঁড়াবে। ছূরা মাআরিজ ৪৫ আয়তে এরশাদ হয়েছে-
يَوْمَ يَخْرُجُونَ مِنَ الْأَجْدَاثِ سِرَاعًا كَأَنَّهُمْ إِلَى نُصُبٍ يُوفِضُونَ
অর্র্থাৎ- “তারা ঐদিন কবর থেকে দ্রুতবেগে বের হয়ে দৌঁড়াতে থাকবে- মনে হবে- যেন তারা কোন একটি লক্ষ্য বস্তুর দিকে ছুটে যাচ্ছে”।

(৩) یوم القیامۃ   (ইয়াওমুল কিয়ামাহ্): অর্থ- “আল্লাহর দরবারে দণ্ডয়মান হওয়ার দিবস”।

মুসলিম শরীফে ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে এভাবে,
روی مسلم عن ابن عمرؓ عن النبی ﷺ یوم یقوم الناس لرب العالمین  ۔ قال یوم یقوم احدکم فی رشحہ الی نصف اذنیہ ۔ قال  ابن عمرؓ یقومون  ماتہ سنۃ ویروی عن کعب یقومون ثلاثماءۃ سنۃ
অর্থাৎ- ইমাম মুসলিম হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে নবী  করিম (ﷺ) -এর পবিত্র বানী এভাবে বর্ণনা করেছেন “ঐদিন লোকেরা আল্লাহর দরবারে দণ্ডায়মান হবে। তিনি আরো ইরশাদ করেন- “তোমরা ঐদিন তোমাদের অর্ধ কান পর্য্যন্ত ঘামে ডুবন্ত অবস্থায় উত্থিত হবে”।

“হযরত ইবনে ওমরের বর্ণনায় ঐ দণ্ডায়মানকাল হবে একশত বৎসর এবং কা’ব আহ্বারের  বর্ণনা মতে তিনশত বৎসর”।

ফিরিস্তাদের  দণ্ডায়মান হওয়ার বর্ণনা কোরআনে এসেছে এভাবে-
يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلَائِكَةُ صَفًّا
অর্থাৎ- “ঐদিন রুহুল আমীন জিবরাঈল ও অন্যান্য ফিরিস্তাগণ সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান হবে ”। (ছুরা নাবা ৩৮ আয়াত)।

(৪) یوم ینفخۃ (ইয়াওমুন নাফ্খাহ্): অর্থ- “ফুঁৎকার দিবস”।

ঐ ফুঁৎকার হবে হাশরে গমনের জন্য। ৪০ বৎসর হবে এর মেয়াদ। এই ফুঁৎকারের শুরু হবে শুধু আওয়াজ দিয়ে- আর শেষের দিকে হবে  প্রত্যেক শরীরে রুহু প্রদান ও  জীবনদান।  ছুরা নাবা ১৮ আয়াতে আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
يَوْمَ يُنفَخُ فِي الصُّورِ فَتَأْتُونَ أَفْوَاجًا
অর্থাৎ- “সেদিন সিঙ্গায় ফুঁক  দেয়া হবে, অত:পর তোমরা দলে দলে  উত্থিত  হয়ে হাশরে আগমন করবে”।  (হাদীসে মুয়ায- এ বিস্তারিত বর্ণনা হয়ে গেছে)।

(৫)   یوم الراجفۃ  (ইয়াওমুর রাজিফাহ): অর্থ-“ভূমিকম্প ও প্রকম্পন দিবস”।

আল্লাহ্পাক বলেন-
يَوْمَ تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ
“সেদিন  প্রকম্পনকারী  প্রকম্পন সৃষ্টি করবে” (নাযিআত-৬)।

(৬) یوم الناقور  (ইয়াওমুন-নাক্কুর): অর্থ-“সিঙ্গায় ফুঁকদান দিবস”।

আল্লাহ্পাক বলেন- فَإِذَا نُقِرَ فِي النَّاقُورِ অর্থাৎ- ”ঐদিন যখন সিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে”। ( শেষফুঁক বা পুনরুত্থান ফুঁক) (ছুরা মুদ্দাচ্ছির ৮ আয়াত)

(৭) الْقَارِعَةُ  (আল্-  কারিআতু):   অর্থ- “করাঘাতকারী”।

সেদিন করাঘাতের মত এমন তীব্র আঘাত করা হবে যে, অন্তরসমূহ থরথর করে কাঁপতে থাকবে এবং  পাহাড়সমূহ তুলার মত উড়তে থাকবে। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
الْقَارِعَةُ (1) مَا الْقَارِعَةُ (2) وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْقَارِعَةُ (3) يَوْمَ يَكُونُ النَّاسُ كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوثِ (4) وَتَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوشِ
অর্থাৎ- “করাঘাতকারী!  করাঘাতকারী কি জিনিস? করাঘাতকারী দিবস  সম্পর্কে আপনি কি জানেন? সেদিন  মানুষ হবে  বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত। আর পর্বতসমূহ হবে ধূনা তুলার মত”। (ছুরা কারিয়াহ্ ১-৫ আয়াত)।

(৮) یوم النشوز (ইয়াওমুন নুশুয): অর্থ- “পূনর্জীবন দিবস বা হাঁড় মাংস জুড়ে দেয়ার দিবস”। আল্লাহ্পাক হযরত ওযাইর আলাইহিস সালামকে একশত বৎসর মৃত অবস্থায়  রেখে পুনরায় জীবিত করে জিজ্ঞেস করলেন-  কতদিন এ অবস্থায় ছিলে? তিনি বল্লেন- একদিন বা এর চেয়েও কম সময়। আল্লাহ্ বল্লেন- না, বরং একশ’ বৎসর। “তার প্রমান দেখ- তোমার গাধাটি মরে পঁচে গলে গেছে। অত:পর এখন আমি হাঁড়গুলো জোড়া লাগাচ্ছি এবং তার  উপর চামড়ার আস্তরন লাগিয়ে দিচ্ছি”। ছুরা বাক্বারাহ্ ২৫৯ আয়াত। وَانظُرْ إِلَى العِظَامِ كَيْفَ نُنشِزُهَا ثُمَّ نَكْسُوهَا لَحْمًا

(৯) یوم البعث (ইয়াওমূল বা’ছ): অর্থ- “পুনরুত্থান দিবস”।

বা’ছ বলা হয় কোন গোপন বস্তুকে প্রকাশ করা এবং অচল অবস্থা থেকে সচল করা। হাশরের  দিনে মৃত মানুষকে পুনর্জীবন দান করে পুনরায় হাশরে উত্থিত করা হবে। অচেতন অবস্থা থেকে তাদেরকে সচেতন অবস্থায় ফিরিয়ে আনা  হবে। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেছেনঃ
یوم يَبْعَثُ مَن فِي الْقُبُورِ
অর্থাৎ- “যারা এতদিন অচেতন  কবরবাসী ছিল, তাঁদেরকে পুনরায় সচেতন হাশরবাসী করা হবে”।

(১০) یوم الحشر (ইয়াওমূল হাশর): অর্থ- “একত্রিত হওয়ার দিন”।

ঐদিন সবাই  একই ময়দানে একত্রিত  হবে। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন,
یوم یحشر الناس جمیعا
অর্থাৎ “ঐদিন সব মানুষ একত্রিত হবে”।

(১১) یوم العرض (ইয়াওমূল আরয): অর্থ- “উপস্থিতি বা পেশ হওয়ার দিন”।

আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُونَ لَا تَخْفَى مِنكُمْ خَافِيَةٌ
অর্থাৎ- ”ঐদিন তোমাদেরকে  হাশরের ময়দানে উপস্থিত ও পেশ করা হবে। তোমাদের কোন কিছুই গোপন থাকবেনা। ” (ছুরা হাক্কাহ্  ১৮ আয়াত)। আল্লাহ্পাক অন্য আয়াতে এরশাদ করেন-
وَعُرِضُوا عَلَى رَبِّكَ صَفًّا
অর্থাৎ- “হে প্রিয় রাসূল! তাদেরকে (কাফের) আপনার রবের কাছে পেশ করা হবে সারিবদ্ধভাবে”।  (সূরা কাহাফ আয়াত ৪৮)। (আল্লাহর দরবারে মানুষকে পেশ করা হবে, আমলনামা পেশ করা হবে- ইত্যাদি)।

(১২) یوم الجمع (ইয়াওমূল জাম্য়ী): অর্থ-“ একত্রিত করার দিবস”।

ঐদিন প্রথমে একত্রিত করা হবে। পরে পৃথক  করা হবে। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
لَيَجْمَعَنَّكُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لاَ رَيْبَ فِيهِ
অর্থাৎ- “অবশ্যই আল্লাহ্ তোমাদেরকে একত্রিত ও সমবেত করবেন কিয়ামতের  দিনে- এতে কোন সন্দেহের  অবকাশ  নেই”।  (ছুরা নিছা ৮৭ আয়াতাংশ)।

(১৩) یوم  التفرقون (ইয়াওমূত  তাফাররুক): অর্থ-“পৃথক ও বিভক্ত হওয়ার দিবস”।

ঐদিন মানুষ দুই দলে বিভক্ত হবে- নেক্কার ও বদকার। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ يَوْمَئِذٍ يَتَفَرَّقُونَ - فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَهُمْ فِي رَوْضَةٍ يُحْبَرُونَ -  وَأَمَّا الَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَلِقَاء الْآخِرَةِ  فَأُوْلَئِكَ فِي الْعَذَابِ مُحْضَرُونَ
অর্থাৎ- “যেদিন কিয়ামত মুহুর্ত সংঘটিত হবে- সেদিন মানুষ দু’দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। একদল- যারা ঈমান এনেছিল এবং সৎকাজ করেছিল- তাঁরা  জান্নাতে সমাদৃত  হবে। দ্বিতীয় দল- যারা অবিশ্বাস করেছিল এবং আমার নিদর্শণসমূহ ও পরকালের সাক্ষাৎকারকে মিথ্যা  বলেছিল- তাদেরকে আযাবে উপস্থিত করা হবে”। (ছুরা আর-রুম ১৪-১৬ আয়াত)

(১৪)  یوم البعثرۃ (ইয়াওমুল  বা’ছারাহ): অর্থ- “মিশ্রিত বস্তু থেকে ভাল-মন্দ পৃথক করার দিবস”।

ঐদিন প্রথমে মাটি হতে শরীরকে পৃথক করা হবে। তারপর  পৃথক করা হবে কাফেরদেরকে। তারপর পৃথক  করা হবে মুনাফিকরদেরকে। সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে-
ان اللّٰہ تعالی یجمع الاولین والآخرین فی صعید واحد (مسلم)
অর্থাৎ- “ঐদিন পূর্ববর্তী ও  পরবর্তী সকলকে একই বিস্তৃত যমীনে প্রথমে একত্রিত  করা হবে। এরপর বাছাই করে পৃথক করা হবে”। (মুসলিম শরীফ)

(১৫) یوم الصدع (ইয়াওমুছ ছাদ্য়ী): অর্থ- “শিরঃপীড়া হওয়ার দিন”।

আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
هُمْ يَوْمَئِذٍ يَصَّدَّعُونَ
অর্থাৎ-  “কাফিরেরা ঐদিন শিরঃপীড়াগ্রস্থ অবস্থায় উঠবে”।

(১৬) (ইয়াওমুছ ছাদ্রী): অর্থ-“প্রকাশ পাওয়ার দিন”।

আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
يَوْمَئِذٍ يَصْدُرُ النَّاسُ أَشْتَاتًا
অর্থাৎ- “মানুষ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে প্রকাশ পাবে”। (ছুরা যিলযাল)

(১৭) يوم الفزع (ইয়াওমুল ফাযা’): অর্থ- “ভীত সন্ত্রস্ত হওয়ার দিন”।

আল্লাহ্পাক বলেন-
وَيَوْمَ  يُنفَخُ فِي الصُّورِ فَفَزِعَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ
অর্থাৎ- “ঐদিনটি এমনই ভয়ঙ্কর হবে  যে, যখন (প্রথমবার) সিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে- তখন আসমান যমীনের সমস্ত বাসিন্দা আতঙ্কে  ভীত- সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে”।

(১৮)  یوم  التناد (ইয়াওমুত তানাদ): অর্থ- “প্রচন্ডভাবে হাঁকডাকের দিন”।

ঐদিন প্রচন্ডভাবে কাফেরদেরকে হাঁকডাক দেওয়া হবে। তারা সেদিন পেছনে  ফিরে পলায়ন করবে। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
وَيَا قَوْمِ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ  يَوْمَ التَّنَادِ - يَوْمَ تُوَلُّونَ مُدْبِرِينَ مَا لَكُم مِّنَ اللَّهِ مِنْ عَاصِمٍ
অর্থাৎ- (“হযরত মূছার  অনুসারী এক মুমিন ব্যক্তি ফেরাউনের  অনুসারীদেরকে ডেকে বললো)- “হে আমার কওম, আমি তোমাদের  জন্যে এক প্রচন্ড হাঁকডাকের দিনের আশংকা করছি- যেদিন তোমরা পেছন ফিরে পলায়ন  করবে। কিন্ত আল্লাহ্ থেকে তোমাদের রক্ষাকারী অন্য কেউ হবেনা”। (ছুরা মুমিন ৩২, ৩৩ আয়াত)।

(১৯) یوم النداء (ইয়াওমূন নিদা): অর্থ- “পরস্পর ডাকাডাকি করার দিবস”।

হাশরের দিনে জান্নাতবাসীরা জাহান্নাম বাসীদেরকে ডেকে তাদের অবাধ্যতার পরিনাম স্মরণ করিয়ে দিবে। জাহান্নামবাসীরা জান্নাতবাসীদের কাছে ডেকে সাহায্য প্রার্থনা করবে। আল্লাহর পক্ষ হতে প্রত্যেক মানুষকে তার  নেতার নামে ডাকা  হবে। নবীগণের নামে উম্মতদেরকে ডাকা হবে। মাযহাব পন্থীদেরকে তাদের মাযহাবের ইমামের পরিচয়ে ডাকা  হবে। তরিকত পন্থীদেরকে তরিকতের  ইমামের নামে ডাকা হবে। কাফেরদেরকে ফেরাউন, আবু জেহেলের নামে ডাকা হবে। কৃপনদেরকে  কারুণের সাথে ডাকা হবে। যালেমদেরকে শাদ্দাদের সাথে ডাকা হবে- ইত্যাদি।

ফিরিস্তারা নেক্কারদেরকে ডেকে বলবে- তোমরা আর কখনও বদ্বখ্ত হবে না। বদকারদেরকে ডেকে বলবে- তোমরা চির হতভাগা- তোমরা আর কখনও নেক্কার হওয়ার সুযোগ পাবে না। তখন জান্নাতবাসী ও দোযখ বাসীদেরকে ডেকে বলা হবে- “হে জান্নাতবাসী, হে দোযখবাসী,  তোমরা চিরদিন জান্নাতে ও দোযখে অবস্থান করো। মউত তোমাদেরকে আর স্পর্শ করবে না”। দোযখবাসীরা চিৎকার  করে  বলবে- হায় আফসোস! হায়  দুঃখ! যারা  আল্লাহ্  সম্পর্কে অন্যদেরকে মিথ্যা ধারণা দিত- তাদেরকে ডেকে বলা হবে-   “যালেমদের উপর আল্লাহর  লা’নত। বেহেস্তবাসীকে আল্লাহ্  ডেকে বলবেন- তোমরা কি এখন সন্তষ্ট হয়েছো? বেহেস্তবাসীরা জবাবে বলবে- হে প্রভূ! কেন সšুÍষ্ট হবো না? তুমি তো আমাদেরকে এমন পুরষ্কার দিয়েছো- যা অন্য কাউকে দাওনি।  আল্লাহ্ প্রত্যুত্তরে বলবেন- সর্বোপরি তোমাদেরকে দান করলাম আমার রেযামন্দি। এভাবে নয়টি নিদা  বা আহ্Ÿান উচ্চারিত হবে সেদিন। এ জন্য সেদিনের নাম ইওয়ামূন নিদা। মোহাদ্দেস আবু বকর মহিউদ্দীন এরূপ বর্ণনা করেছেন। (আত্-তাযকিরাহ্  ২৩৯ পৃষ্ঠা)।

(২০) یوم الواقعۃ (ইয়াওমূল  ওয়াকিয়াহ্): অর্থ- “সংঘটিত হওয়ার দিবস”।

আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
إِذَا وَقَعَتِ الْوَاقِعَةُ - لَيْسَ لِوَقْعَتِهَا كَاذِبَةٌ - خَافِضَةٌ رَّافِعَةٌ
অর্থাৎ- “যখন সংঘটিতব্য দিনটি সংঘটিত হবে- যার সংঘটন মিথ্যা নয়, তখন কাউকে করা হবে নীচু, আর কাউকে করা  হবে উঁচু। (ছুরা  ওয়াকিয়াহ্ ১-৩ আয়াত)।

(২১) یوم الخافضۃ  الرافعۃ (ইয়াওমূল খাফিদাতুর রাফিয়াহ্):

অর্থ-  “নীচু উঁচু করার  দিবস”। ঐদিন কাউকে জান্নাতের উচ্চ সম্মান  দেওয়া হবে এবং কাউকে দেওয়া  হবে জাহান্নামের নীচু ও নিকৃষ্ট অপমান। আল্লাহ্পাক বলেন- خافض  رافعۃ অর্থাৎ- “কাউকে দেওয়া হবে সর্ব উচ্চস্তরের সম্মান- আর কাউকে দেয়া হবে নিম্নস্তরের অপমান”। সর্বোচ্চ  সম্মান ‘মাকামে মাহমুদ’ দেওয়া হবে  প্রিয় নবীজিকে।  আর সর্ব নিম্নস্তরের অপমান দেওয়া হবে আব্দুল্লাহ্ বিন উবাই মুনাফিককে।

(২২) یوم الحساب (ইয়াওমূল হিছাব): অর্থ- “হিসাব নিকাশের দিন”।

কিয়ামত দিবসে নেকী-বদী ও ঈমান-কুফরের হিসাব নিকাশ হবে। আল্লাহ্পাক বলেন-
فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ - فَسَوْفَ يُحَاسَبُ  حِسَابًا يَسِيرًا
অর্থাৎ-  “সেদিন যার ডানহাতে আমলনামা দেওয়া হবে- তাঁর হিসাব হবে  খুব সহজ। (শুধু আমলনামা প্রদর্শন ও হাজিরা দান- যোগজিজ্ঞাসা হবেনা)। (ছুরা ইন্শিকাক্ ৭-৮ আয়াত)।

(২৩) یوم السوال (ইয়াওমুছ ছাওয়াল): অর্থ- “প্রশ্ন করার দিবস”।

(ক) আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِيْنَ - عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ
অর্থাৎ- “হে প্রিয় রাসুল! আপনার রবের কসম করে বলছি- আমি কাফিরদের প্রত্যেককে তার কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবো”। (ছুরা হিজর ৯২-৯৩ আয়াত)।

(খ) হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেছেন-
الا کلکم راع وکلکم مسؤل عنھم ۔ فالامیر الذی علی الناس راع ومسؤل عن رعیتہ ۔ والرجل راع علی اھل بیتہ وھو مسؤل عنھم ۔ والمراءۃ راعیۃ علی بیت زوجھا وھی مسؤلۃ عنہ والعبد راع علی مال سیدہ وھو مسؤل عنہ ۔ الافلکم راع وکلکم مسؤل عن رعیتہ ۔

অর্থাৎ- “সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের  প্রত্যেককেই তার  দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। শাসক তার অধীনস্থ লোকদের ব্যাপারে  দায়িত্বশীল এবং  তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।  গৃহকর্তা তার পরিবারস্থ লোকদের ব্যাপারে  দায়িত্বশীল। অতএব দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে  প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। স্ত্রী তার স্বামীগৃহ ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে দায়িত্বশীল- অতএব স্বামীর ঘর সম্পর্কে তাকেও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। গোলাম তার   মালিকের  মালসম্পদ সম্পর্কে দায়িত্বশীল- অতএব মনিবের মাল সম্পদের হেফাযত সম্পর্কে তাকে প্রশ্ন করা হবে।  সুতরাং, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং আপন আপন দায়িত্ব  সম্পর্কে সকলকেই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে”। (ইবনে ওমর রাঃ)।

এভাবে প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব স্পর্কে সেদিন জবাবদিহি করতে হবে। কিয়ামত দিবসকে একারণেই দায়িত্ব সম্পর্কে “প্রশ্ন করার দিবস” বলা হয়েছে।

(২৪) یوم الشھادۃ (ইয়াওমুশ শাহাদাহ):  অর্থ- “সাক্ষ্যদিবস”।

কিয়ামত দিবসে চার প্রকার সাক্ষী খাড়া করা হবে। (ক) হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) এবং তাঁর উম্মতগণ পূর্ববর্তী নবীগণের পক্ষে সাক্ষী হবেন  (খ) মাটি এবং দিবারাত্রি  সাক্ষী  হবে অপরাধীদের অপরাধ সম্পর্কে- কোন্ দিন কোন্ সময় কোথায় সে অপরাধ করেছিল,  (গ) হাত-পা  ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সাক্ষী  হবে- অপরাধী ব্যক্তি তাদেরকে কোন্ কোন্ অপরাধে ব্যবহার করেছিল। (ঘ) মুখে সীল মেরে অন্যান্য অঙ্গকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। হাত, পা, চক্ষু ও  লজ্জাস্থান তাদের দ্বারা সংঘটিত সব অপরাধের কথা বলে দিবে  সেদিন। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَى أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
অর্থাৎ- “ঐদিন আমি অপরাধীদের মুখে সীল মেরে দেবো- যখন তারা  মুখে অস্বীকার করবে। তখন তাদের হাত আমাকে সব খবর বলে দেবে এবং পা সাক্ষ্য দিবে- তার দ্বারা সে কি কি অপরাধ করেছিল”। (ছুরা ইয়াছীন ৬৫ আয়াত)

(২৫) یوم الجدال  (ইয়াওমুল  জিদাল): অর্থ- “আত্মপক্ষসমর্থন ও   পরস্পর দোষারোপ করার দিবস”। ঐদিন প্রত্যেকেই আত্মপক্ষ সমর্থন  করে পরস্পরকে  দোষারোপ করতে  করতে হাশরের ময়দানে আসবে। প্রত্যেকেই নাফ্সী নাফ্সী করবে এবং নিজের মুক্তির চিন্তা  করবে। একমাত্র প্রিয়নবী (ﷺ) সেদিন  উম্মতের পক্ষে কথা বলবেন। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
يَوْمَ تَأْتِي كُلُّ نَفْسٍ تُجَادِلُ عَن نَّفْسِهَا وَتُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَ
অর্থাৎ- “সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি আত্মপক্ষ  সমর্থনের জন্য সওয়াল-জওয়াব করতে আসবে এবং প্রত্যেকেই আপন  আপন কর্মফল পূর্ণভাবে পাবে এবং কারো উপরই তখন যুলুম করা হবে না”। (ছুরা নহল ১১১ আয়াত)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন- “ঐদিন শরীরের এক অঙ্গ অন্য অঙ্গের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর দোষারোপ করে নিজেকে বাঁচাতে চাইবে। এমনকি- রূহ্ বলবেঃ হে রব! আমি তোমার সৃষ্টি। হাত, পা, চক্ষু, কর্ন তৈরী করার পর  তুমি আমাকে শরীরে প্রবেশ করিয়েছো। সুতরাং হাত পায়ের দোষের কারণে আমি দোষী নই। অতএব শাস্তি দিলে তাদেরকেই দাও- আমাকে  নয়। তখন শরীর বলবে- “হে রব! তোমার কুদরতে আমি (শরীর) পয়দা হয়েছি। তখন আমার কোন শক্তি ছিলনা। হঠাৎ করে এই রূহ্ সূর্যের আলোর ন্যায় আমার মধ্যে প্রবেশ করে আমার হাত-পা ও মুখ দিয়ে কাজ করিয়েছে। সুতরাং দোষ হলে রূহের হবে- আমার নয়। তাকে তুমি শাস্তিÍ বৃদ্ধি করে দাও এবং আমাকে মুক্তি দাও”।

তাদের এই  বিতর্ক শুনে আল্লাহ্পাক একটি উপমা দিবেন। “এক অন্ধ  ও এক লেংড়া একটি ফলের বাগানে ঢুক্লো। অন্ধ ফল দেখেনা; আর লেংড়া দেখা সত্বেও ফলের কাছে যেতে পারেনা। লেংড়া বললো- হে অন্ধ!  তুমি আমাকে ফলের বাগানে নিয়ে চলো- তাহলে   ফল পেড়ে আমি খাবো, তোমাকেও খাওয়াবো। অত:পর একজন আরেকজনের সাহায্যে বাগানে গেলো  এবং উভয়ে ফল খেলো। আল্লাহ্ বলবেন- এখন বল- শাস্তি কার হবে? শরীর ও  রূহ্ জওয়াব দিবে- উভয়েরই  শাস্তি হবে। আল্লাহ্ তখন বলবেন- আজকের আযাবও  তোমাদের উভয়ের উপরই হবে” (তাযকিরাহ্ ২৪৫ পৃষ্ঠা)।

এই দিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ্পাক ছূরা নহলের এই ১১১ নম্বর  আয়াত নাযিল করেছেন এবং  ঐদিন সওয়াল  জওয়াবের মাধ্যমে প্রত্যেকেই আত্মপক্ষ সমর্থন করবে বলে ইঙ্গিত করেছেন। এজন্য ঐদিনের একটি নাম রাখা হয়েছে یوم الجدال অর্থাৎ- “ঝগড়া বিবাদ ও পরস্পর দোষারোপের দিন”।

উম্মতে মোহাম্মদী (ﷺ) কিয়ামতের দিনে পূর্ববর্তী অবাধ্য উম্মতদের বিরূদ্ধে অভিযোগ  করবে। তখন তারা তর্ক করবে- এরা তো আমাদের কার্যকলাপ দেখেনি। এখন কিভাবে তাঁরা আমাদের বিরূদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছে? তখন  আল্লাহর প্রিয়হাবীব (ﷺ)  অগ্রসর   হয়ে তাদের কার্যকলাপের বিরূদ্ধে এবং আপন উম্মত ও নবীগণের পক্ষে সাক্ষ্য দিবেন” (ছুরা বাক্বারা ১৪৩ আয়াত ২য় পারা)।

হুযুরের এই সাক্ষ্য হবে  চোখে দেখা সাক্ষ্য। তিনি চাক্ষুস সাক্ষী বা শাহেদ। তাই তারা চুপ মেরে যাবে- কোন প্রশ্ন করবে না।

(২৬) يوم القصاص (ইয়াওমুল ক্বিসাস): অর্থ- “বদলা বা প্রতিশোধ নেওয়ার  দিবস”।  হাদীস শরীফে এসেছে- “ঐদিন অন্যায়, অত্যাচার, যুলুম- ইত্যাদি হক্কুল ইবাদের বদলা নেয়া হবে নেক আমলের দ্বারা। বদলা দিতে দিতে যখন যালেমের নেক আমল শেষ হয়ে যাবে- তখন মযলুমের গুনাহ্ যালেমের কাঁধে  চাপিয়ে দিয়ে তাকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে। নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “এ ধরণের লোকই সেদিন সর্বহারা হয়ে ফকির ও ফতুর হয়ে যাবে”।

সুতরাং- আল্লাহর ইবাদত ও নেক আমল রক্ষা করতে হলে আমাদেরকে মানুষের প্রতি যুলুম ও অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। যে আমল দ্বারা জরিমানা দিতে হয়- সে আমলের কি মূল্য? আমল যতটুকু পারেন করুন- কিন্তু জরিমানা যাতে দেয়া না লাগে- সে  ফিকির সময় থাকতেই করুন।

(২৭) یوم الحاقۃ (ইয়াওমুল হাক্কাহ্): অর্থ- “অবধারিত মহাপ্রলয় দিবস” যা সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই (ইবনে জারীর তাবারী ও অন্যান্য)। আদ ও সামুদ জাতি মহাপ্রলয় দিবসকে অস্বীকার করতো। ছুরা হাক্কাহ্  তাদের  ধ্বংস কাহিনীতে ভরপুর। আল্লাহ্পাক বলেন-
الْحَاقَّةُ - مَا الْحَاقَّةُ
অর্থ- “সুনিশ্চিত দিবস ও বিষয়।  সুনিশ্চিত বিষয় ও দিবস কী”? (ছুরা হাক্কাহ্ ১-২ আয়াত)।

(২৮) يوم الطامة (ইয়াওমুত ত্বাম্মা): অর্থ- “মহাসঙ্কট দিবস”।

আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
فَإِذَا جَاءتِ الطَّامَّةُ الْكُبْرَى - يَوْمَ يَتَذَكَّرُ الْإِنسَانُ مَا  سَعَى
অর্থাৎ “যেদিন মহাসঙ্কটকাল উপস্থিত হবে, ঐদিন  মানুষ আপন কৃত কর্মফল  স্মরণ করবে” (নাযিআত ৩৪-৩৫)। হযরত হাসান  বসরী (রহঃ) বলেন-  কাফেরদেরকে দোযখের দিকে টেনে  হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার দিনকে ত্বাম্মা বলা হয়েছে।

(২৯) یوم الصاخۃ (ইয়াওমুছ ছাখ্যাহ্): অর্থ- “বধির হওয়ার দিবস”।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) -এর মুখপাত্র ইকরামার  মতে یوم الصاخۃ বা বধির হওয়ার  দিবস হলো সিঙ্গায় প্রথম ফুঁক দেয়ার সময়। ঐদিন সিঙ্গার ফুঁকে সবাই বধির হয়ে যাবে। আর يوم الطامة বা মহাসঙ্কটের দিন হলো পুনরুত্থানের জন্য সিঙ্গায় ফুঁৎকার দিবস। ঐ  দিবসে মানুষ কর্মফল অনুযায়ী  মহাসঙ্কটে  পড়ে যাবে।

(৩০) یوم الوعید (ইয়াওমুল ওয়ায়ীদ): অর্থ-“শাস্তি বিধানের প্রতিশ্র“ত দিবস”। আল্লাহ্পাক কিছু আদেশ করেছেন- কিছু নিষেধ করেছেন। আদেশ  পালনের পুরস্কার প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন এবং নিষেধ  লংঘনের  শাস্তিÍর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। শাস্তির প্রতিশ্রুতিকে ওয়ায়ীদ বলা হয়। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
وَنُفِخَ فِي الصُّورِ ۚ ذَٰلِكَ يَوْمُ الْوَعِيدِ
অর্থাৎ “ঐদিন সিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে- এটা হবে ভয় প্রদর্শন ও শাস্তিÍবিধানের দিবস”। (ছুরা ক্বাফ ২০ আয়াত)। আরবী ভাষায়  وعد হলো ভাল কাজের পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি, আর یوم الوعید হলো মন্দ কাজের আযাবের প্রতিশ্রুতি। یوم الوعید এবং یوم الوعد উভয়টিই কোরআনে বর্ণিত হয়েছে।

শান্তি ও শাস্তিকে যথাক্রমে وعید ও  وعد বলা হয়। وعد এর কোন পরিবর্তন হয়না- কিন্ত وعید বা শাস্তির প্রতিশ্রুতির পরিবর্তন হতে পারে। এই  পরিবর্তনের ফলে বান্দার উপকার হবে। যেমন- রাষ্ট্রপ্রধান শাস্তির বিধান ঘোষণা করে  পরে  আবার ক্ষমাও করতে পারেন- এটা ইনসাফের পরিপন্থী নয়- বরং এটাকে দয়া ও ক্ষমা প্রদর্শন বলা হয়।

(দেওবন্দীরা এই বিষয়টি অবলম্বন করে বলে- “আল্লাহ্ শাস্তির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে পারেন”। প্রথমে সত্য বলেছিলেন- প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তিনি  মিথ্যাবাদী সাব্যস্থ হয়েছেন। এ ধরণের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা বা মিথ্যা বলা  আল্লাহর পক্ষে সম্ভব” (নাউযুবিল্লাহ্)। ইহাকে দেওবন্দীরা ইম্কানে কিয্ব্ বলে।  (দেখুন- ফতোয়া রশিদিয়া)

তাদের এই উক্তি দ্বারা শানে উলুহিয়াতকে অপমান ও হেয়  করা হয়েছে। (তাদের ফতোয়ায়ে রশিদিয়া ও আকায়েদে দেওবন্দ- গ্রন্থদ্বয় দেখুন)।

এজন্যই হারামাঈন শরীফাঈন -এর ৩৩ জন মুফতী ১৩২৩ হিজরীতে দেওবন্দের  ৫ জন আকাবেরকে তাদের বিভিন্ন  কুফরীর  কারণে কাফের ঘোষণা করেছেন। (দেখুন  হোসসামুল হারামাঈন বাংলা অনুবাদ)। ইমাম আবু আবদুল্লাহ্ কুরতুবী এ ধরণের বিশ্বাসীদেরকে المبتدعۃ বা বিদ্আতী ফির্কা  বলে আত্-তাযকিরাহ্ গ্রন্থের ২৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। দেওবন্দী আলেমরাই মূলতঃ বিদ্আতী ফির্কা।

(৩১) یوم الجزاء (ইয়াওমুল জাযা): অর্থ- “ভালমন্দের প্রতিদান বা বিনিময় দিবস”। ঐ দিনে ভাল কাজের প্রতিদান বা বিনিময় দেয়া হবে পুরস্কার  এবং মন্দ কাজের  বিনিময় দেয়া হবে তিরস্কার। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
ألْیَوْمَ تُجْزَی کُلُّ نَفْسٍ بِمَا کَسَبَتْ
অর্থাৎ “সেদিন  প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজ নিজ কর্মের বিনিময় দেয়া হবে”। (ছুরা মুমিন ১৭ আয়াত)। আরো এরশাদ হচ্ছে-
فَلْيَضْحَكُواْ قَلِيلاً وَلْيَبْكُواْ كَثِيرًا  جَزَاء بِمَا  كَانُواْ يَكْسِبُونَ
অর্থাৎ “তারা দুনিয়াতে যেমন কর্ম করেছে- তেমনই ফল দেয়া হবে। ” (ছুরা তাওবাহ্ ৮২ আয়াত)।

(৩২) یوم الدین  (ইয়াওমুদ্বীন): অর্থাৎ- “বিনিময় দিবস”।

বান্দা দুনিয়াতে যেরকম কর্ম করেছে- সেরকম ফলই পাবে পরকালে। যেমন কর্ম- তেমন ফল। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
مَـالِكِ يَوْمِ الدِّينِ
অর্থাৎ- তিনি বিনিময় দিনের বা বিচার  দিনের  মালিক।

আরবী কবি বলেন-
واعلم یقیناًان ملکک زائل - واعلم بانک کما تدین تدان ۔
অর্থাৎ “জেনে রেখো, তোমার দুনিয়ার কর্তৃত্ত শেষ হয়ে যাবে। আরো জেনে রেখো, তুমি যেমন কর্ম করবে- তেমনই ফল পাবে”।

(৩৩) یوم الحسرۃ (ইয়াওমূল হাছরাহ্): অর্থাৎ-  “আফসোস করার দিবস”।

সেদিন নেককার  বান্দা যখন দেখবে- তার ভাল কাজের কত পুরস্কার- তখন সে  আফসোস করবে- কেন আরো বেশী  ভাল কাজ করেনি। আর কাফের যখন দেখবে- তার কুফরী কাজের কুফল- তখন সেও আফসোস করবে- কেন কুফরী থেকে বিরত থাকেনি। কাফেরদের আফসোস সম্পর্কে আল্লাহ্পাক বলেন,
وَأَنذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ  إِذْ قُضِيَ الْأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ وَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
অর্থাৎ “হে প্রিয় রাসুল! আপনি কাফিরদেরকে সতর্ক করুন আফসোস দিবস সম্পর্কে- যখন সব বিষয়ের ফয়সালা করা হবে। এখন তারা অসতর্ক  অবস্থায় রয়েছে এবং ঈমান আনয়ন করছেনা”। (ছুরা মরিয়ম ৩৯ আয়াত)।

(৩৪)  یوم تبدل (ইয়াওমুত  তাব্দীল): অর্থাৎ- “আসমান যমিন পরিবর্তন দিবস”।

হাশরের দিনে এই যমীনের পরিবর্তে অন্য এক যমীন ও অন্য এক আকাশ হবে।  আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
يَوْمَ تُبَدَّلُ الأَرْضُ غَيْرَ الأَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ
অর্থ্যাৎ- “ঐদিন পরিবর্তিত করা হবে এই যমিনকে  অন্য যমিনে এবং এই আকাশসমূহকে অন্য আকাশে” (ছুরা ইবরাহীম ৪৮)।

এক তাফসীর মোতাবেক ঐদিন এই যমিনকে একটি সমতল ভূমিতে পরিণত  করা  হবে। এতে কোন গাছপালা থাকবেনা।  সব সমতল হয়ে যাবে এবং এটিই হবে হাশরের ময়দান। এটা   হবে গুণগত পরিবর্তন। অন্য তাফসীর মোতাবেক পরিবর্তনের আর এক অর্থ হলো- সত্ত্বাগত পরিবর্তন। ইমাম বায়হাকী রেওয়ায়াত করেন- সেদিন যমিন হবে অন্য এক নতুন যমিন, তার রং হবে রৌপ্যের মত সাদা। সমস্ত মানুষ ঐ যমীনে দাঁড়াবে। এটিই হবে হাশর ময়দান।

বোখারী ও মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে- যমিন সেদিন রুটির মত সাদা ও পরিস্কার হবে। অন্য কোন চিহ্ন থাকবেনা তাতে। হাকেম- এর বর্ণনায় এসেছে- চামড়া টান দিয়ে যেভাবে সোজা করা হয়- যমিনকেও তদ্রুপ টেনে সম্প্রসারিত করা হবে। যাতে আঁকাবাঁকা উচুনীচু কিছুই থাকবেনা- সমান হয়ে যাবে। ঐ ময়দানে প্রত্যেকে শুধু পা রাখার জায়গাটুকু পাবে।

হাশরের দিন ভিড়ের কারণে  লোকেরা গিজগিজ করবে। সূর্য এক মাইল বা এক হাত উপরে আসবে। নীচের যমিন কাফেরের জন্য গলিত তামার মত গরম হবে। শরীরের ঘাম ও মাথার মগজ বের হয়ে আসবে। ঘামও মগজের সাগর হয়ে  যাবে। অর্ধ কান পর্যন্ত গুনাহ্গারেরা ডুবে যাবে। এভাবে পঞ্চাশ হাজার বছর কেটে যাবে। অত:পর লোকেরা বেচইন  হয়ে  সুপারিশকারী তালাশ করতে বের হবে। সেদিন হযরত আদম (আঃ) থেকে হযরত ইছা (আঃ) পর্য্যন্ত  সমস্ত নবীগণ সুপারিশ  করার  অক্ষমতার কথা প্রকাশ করবেন।  হাশরবাসীরা নিরাশ হয়ে যখন আখেরী নবীজীর দরবারে দয়া ভিক্ষা করবে ও সুপারিশ করার প্রার্থনা জানাবে-   তখন দয়াল   নবীজী (ﷺ) অভয় দিয়ে বলবেন- ”আজকের এই ভয়াবহ  দিনে সুপারিশ করতে একমাত্র আমিই অনুমতিপ্রাপ্ত”। অত:পর  নবীজীর সুপারিশে আল্লাহ্ বিচার শুরু  করবেন। সেদিন দেখা যাবে-  শানে রিসালাত কাকে বলে? দুশমনে রাছুলগণ মনে করে- নবীজী একেবারেই অক্ষম। মূলতঃ কিয়ামত দিবসে নবীজীর শানমান  প্রদর্শনই হবে মুখ্য বিষয়। তাই কবির ভাষায় শুনুন-
فقط اتنامسبب ہے انعقاد بزم محشر کا
کہ انکی شان محبوبی دکھائی جانیوالی ہے
অর্থাৎঃ “মূলতঃ হাশরের বিচারানুষ্ঠানের একমাত্র  উদ্দেশ্য হবে শানে হাবীব প্রদর্শন করা”। (দিওয়ানে ছালেক)

(৩৫) یوم التلاق (ইয়াওমুত তালাক্ব): অর্থ- “পরস্পর সাক্ষাৎ ও সম্মিলিত হওয়ার দিবস”।  ঐদিন সবাই একত্রিত হবে আল্লাহর সাক্ষাতে। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
يُلْقِي الرُّوحَ مِنْ أَمْرِهِ عَلَى مَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ لِيُنذِرَ يَوْمَ التَّلَاقِ
অর্থাৎ- “আল্লাহ্পাক তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা করেন- তাঁর প্রতি তত্বপূর্ণ বিষয়াদি  নাযিল করেন- যাতে তিনি সাক্ষাত দিবস  সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করতে পারেন। ”। (ছুরা মুমিন ১৫ আয়াত)। এখানে ‘রূহ’ অর্থ নবুয়ত ও রিসালাত।

আল্লামা  কুরতুবী (রহ:) বলেন- لقاء বা تلاق অর্থ পরস্পর মিলিত হওয়া। হাশরের ময়দানে ৪ রকমের সাক্ষাতের উল্লেখ আছে। যথাঃ (ক) নূতন মৃত ব্যক্তিরা পুরাতন মৃতদের  সাথে কবরে মিলিত হবে। তখন পুরাতনরা নূতনদের কাছে দুনিয়াবাসী সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নিবে (আল হাদীস), (খ) মৃত  ব্যক্তিদের সাথে কবরে তাদের আমল সমূহ সাক্ষাৎ করবে। ভাল আমল হলে ভাল  সূরতে এবং খারাপ আমল হলে খারাপ সূরতে মৃত ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করবে। পূর্ববর্তী এক অধ্যায়ে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। (গ) হাশরের ময়দানে দুনিয়াবাসীদের সাথে আকাশবাসী ফিরিস্তারা সাক্ষাৎ করবে  এবং তাদের ঘেরাও  করে রাখবে। পালাবার  জো থাকবেনা। আল্লাহ্পাক  ছুরা আর-রাহমানে বলেন, “হে জ্বিন ও ইনসান জাতি, শক্তি থাকলে আসমান যমিনের সীমানা ভেদ করে এর বাইরে চলে যাও- দেখি! না,  তা  পারবেনা”। (ঘ) আল্লাহর সাথে জগতবাসীর সাক্ষাৎ হবে হাশরে ও জান্নাতে।

(৩৬) یوم الاٰزفۃ (ইয়াওমুল  আযিফাহ্):  অর্থ- “নিকটবর্তী দিবস”।

মূলতঃ ভবিষ্যতে আগমনকারী সব কিছুই ক্রমশঃ অতি নিকটবর্তী। অপরদিকে অতীত বস্তু ক্রমশঃ অতি দূরে চলে যায়। আল্লাহ্পাক বলেন-
ازفت الاٰزفۃ ۔ تتبعھا الرادفۃ
অর্থাৎ “নিকটবর্তী বস্তু (কিয়ামত) নিকটে এসে গেছে। পশ্চাৎগামী বস্তু তার পিছনে আসছে”।

(৩৭) یوم الماٰب (ইয়াওমুল মাআব): অর্থ- “আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন দিবস”। হাশরের  দিনে সবকিছুই আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করবে। মানুষের জ্ঞান, কর্ম, এখতিয়ার- সবকিছু যখন  ছিনিয়ে নেয়া হবে- তখন বান্দা আত্মসমর্úন  করতে বাধ্য হবে। কিন্ত এই আত্মসমর্পন কোন কাজে আসবেনা।  আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
واليه ماب
অর্থাৎ “আল্লাহর নিকটই সব  কিছুর  প্রত্যাবর্তন অবধারিত। ”

(৩৮)  يوم المصير (ইয়াওমুল মাছির): অর্থ- “শেষ প্রত্যাবর্তন দিবস”।

আল্লাহ্পাক কোরআনে ঘোষণা করেন-
وَلِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ
অর্থাৎ  “আসমান  যমীনের রাজত্ব আল্লাহর এবং আল্লাহর  দিকেই শেষ প্রত্যাবর্তন”। (ছুরা নূর ৪২ আয়াত)।

আরো এরশাদ হয়েছে-
قُلْ تَمَتَّعُواْ فَإِنَّ مَصِيرَكُمْ إِلَى النَّارِ
অর্থাৎ  “হে রাসুল, বলুন- তোমরা মজা ভোগ করে নাও- অবশেষে  আগুনের দিকেই  তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে”। (ছুরা  ইবরাহীম  ৩০ আয়াত)।

(৩৯) یوم القضاء و الفصل (ইয়াওমুল কাযা  ওয়াল ফাসলি):

অর্থ- “বিচার ও  ফায়সালার দিবস”। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
یَوْمَ الْقِیَامَۃِ یَفْصِلُ بَیْنَکُمْ
অর্থাৎ “কিয়ামত দিবসে তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করা হবে- কে জান্নাতী আর কে জাহান্নামী”।

বিচারের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম বিচার হবে হত্যাকান্ডের। তারপর যাকাত আনাদায়ী ব্যক্তির। প্রশ্নের ক্ষেত্রে প্রথম প্রশ্ন করা হবে ঈমান সম্পর্কে। ঈমান ঠিক আছে কিনা- তা পরীক্ষা করা হবে। এরপর প্রশ্ন করা হবে নামাযের। নামায কেন পড়েনি। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
الْمُلْكُ يَوْمَئِذٍ لِّلَّهِ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ
অর্থঃ “ঐদিন রাজত্ব হবে একমাত্র আল্লাহর। তিনিই তোমাদের  মধ্যে ফায়সালা করবেন”। (হজ্ব-৫৬ আয়াত)

(৪০) یوم عقیم  (ইয়াওমুন  আকীমুন): অর্থ- “বংশশূন্য দিবস”।

ঐদিনই শেষ দিন। এরপর অন্য কোন দিবস নেই ও থাকবেনা। এজন্য ইহাকে বন্ধ্যা মহিলার সাথে তুলনা করা হয়েছে।

(৪১) یوم الوزن (ইয়াওমূল ওজন): অর্থ- “নেকীবদীর ওজন দিবস”।

হাশরের দিনে মিযানে নেকীবদী ওজন করা হবে বলে ঐরূপ নামকরণ  করা হয়েছে। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ فَمَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُوْلَـئِكَ  هُمُ الْمُفْلِحُونَ
অর্থাৎ “ঐ দিনের ওজন সত্য। অতঃপর যাদের নেকীর পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম”।  (ছুরা আ’রাফ, আয়াত -৮)।

(৪২) یوم عسیر (ইয়াওমুন আছীর): অর্থ- “কঠিন দিবস”।

কাফিরদের জন্য ঐদিনটি হবে খুবই কঠিন। তারা  সেদিন জাহান্নাম  থেকে বের হওয়ার কোন সুযোগ পাবেনা। গুনাহ্গার মুমিনগণ যখন শাস্তি ভোগ করার পর জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসবে-  তখন  কাফেরগণও বের হওয়ার জন্য ফরিয়াদ করবে। তখন তাদেরকে বলা হবে-
اخْسَؤُوا فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ
অর্থাৎ “তোমরা ধিকৃত অবস্থায় এখানেই পড়ে থাকো এবং আমার সাথে আর কোন কথা বলোনা”। (ছুুরা মুমিনুন, আয়াত -১০৮)

(৪৩)  یوم مشھود  (ইয়াওমুম মাশহুদ):  অর্থাৎ-“সকলের উপস্থিতি দিবস”।

ঐদিন সকলেই  হাশর  ময়দানে উপস্থিত হবে। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
وَذَلِكَ يَوْمٌ مَشْهُودٌ
অর্থাৎ “ঐদিন হবে সকলেরই উপস্থিতি দিবস”।

(৪৪) یوم التغاون  (উয়াওমুত তাগাবুন):  অর্থ- “হার-জিতের দিন”।

ঐদিন মুমিনগণ জিতে যাবেন এবং কাফিররা হেরে যাবে। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
يَوْمَ يَجْمَعُكُمْ لِيَوْمِ الْجَمْعِ ذَلِكَ يَوْمُ التَّغَابُنِ وَمَن يُؤْمِن بِاللَّهِ وَيَعْمَلْ صَالِحًا  يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهِ وَيُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا  ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
অর্থাৎঃ “ঐদিনে  আল্লাহ্  তোমাদেরকে সমবেত করবেন। অত:পর যারা মুমিন ও নেক আমলদার হবে- আল্লাহ্ তার পাপ মোচন করবেন এবং তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন- যার  তলদেশে  নহর প্রবাহিত। তারা তথায় চিরস্থায়ী হবে। ইহাই তো মহা সাফল্য”। (ছুরা তাগাবুন, আয়াত-৯)

(৪৫) یوم  عبوس قمطیر (ইয়াওমুন  আবুছুন ক্বামত্বারীরুন):  অর্থ- “ভীতিপ্রদ ও ভয়ঙ্কর দিবস”। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
إِنَّا نَخَافُ مِن رَّبِّنَا يَوْمًا عَبُوسًا قَمْطَرِيرًا
অর্থাৎ- “মোমেনরাই একথা বলে- আমরা আমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে এক  ভীতিপ্রদ ও ভয়ঙ্কর দিনের ভয় করি”। (দাহার-১০)

(৪৬) یوم تبلی السرائر (ইয়াওমা তুব্লাছ ছারাইরু):

অর্থ- “গোপনবিষয়ের পরীক্ষা দিবস”। ঐদিন গোপন বিষয় পরীক্ষিত হবে। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
يَوْمَ تُبْلَى السَّرَائِرُ - فَمَا لَهُ مِن قُوَّةٍ وَلَا نَاصِرٍ
অর্থাৎ- “ ঐদিন গোপন বিষয় পরীক্ষিত হবে। সেদিন তাদের কোন শক্তিও  থাকবেনা এবং তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবেনা”। (ছুরা  তারেক, আয়াত -৯-১০)

(৪৭) يَوْمَ لَا تَمْلِكُ نَفْسٌ  لِّنَفْسٍ  شَيْئًا (ইয়াওমা লা-তাম্লিকু নাফ্ছুন  লি নাফ্ছিন শাইআন): অর্থ: “ঐদিন কোন মোমেন কোন কাফেরকে উপকার করতে পারবে না”। (ছূরা ইন্ফিতারঃ ১৯ আয়াত)।

হাশরের দিনে কাফিরদের অবস্থা হবে ভয়ঙ্কর। তাদের সাহায্যকারী কেউ হবেনা। মোমেন  গুনাহ্গারবান্দা সেদিন শাফাআত প্রাপ্তির মাধ্যমে উপকৃত হবে।  এ মর্মে অনেক হাদীস এসেছে। ছুরা বাক্বারাহ, ৪৮ নং আয়াতে এসেছে-
وَاتَّقُواْ يَوْماً لاَّ تَجْزِي نَفْسٌ عَن نَّفْسٍ
অর্থাৎ: “ভয় কর সেদিনকে- যেদিন কোন ঈমানদার ব্যক্তি কোন কাফেরের উপকার করতে পারবে না”।

ছূরা দোখানের ৪১ আয়াতে এসেছে-
يَوْمَ لَا يُغْنِي مَوْلًى عَن مَّوْلًى شَيْئًا
অর্থাৎ: “ঐদিন মোমেন বন্ধু কাফের বন্ধুর উপকারে আসবে না। ”

(৪৮) یوم یدعون الی نار جھنم (ইয়াওমা ইউদাউনা ইলা নারি জাহান্নামা):

অর্থ- ঐদিন কাফেরদেরকে গলা ধাক্কা দিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে”।

(৪৯) یوم التقلب والتحول (ইয়াওমুত তাকাল্লুব ওয়াত তাহাব্বুল):

অর্থ- “উল্টে যাওয়ার দিন”। ঐদিন কাফেরদের চক্ষু ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে উল্টে যাবে। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
يَخَافُونَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيهِ الْقُلُوبُ وَالْأَبْصَارُ
অর্থাৎ  “মোমেনরা  ভয় করে ঐদিনের- যেদিন কাফিরদের  অন্তর ও চক্ষুগুলো ভয়ে উল্টে যাবে”। (ছূরা নূর ৩৭ আয়াত)

(৫০) یوم الشخوص (ইয়াওমুশ শুখুছ): অর্থঃ “চক্ষু ও মাথা বিষ্ময়ে উঁচু হয়ে যাওয়ার দিবস”। সেদিন আযাব দেখে চক্ষু বিস্ফারিত হয়ে যাবে।

আল্লাহ্পাক বলেন-
إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الأَبْصَارُ
অর্থাৎ “তিনি কাফেরদেরকে ঐদিন  পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে রেখেছেন- যেদিন  চক্ষুসমূহ বিষ্ফারিত হবে”। (ইবরাহিম ৪২ অয়াত)

বি. দ্রঃ شخوص অর্থ চক্ষু ওপরের দিকে উল্টে যাওয়া। এটা হয় -যখন ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হয়। اقناع অর্থ মাথা উপরের দিকে উঠে যাওয়া। হাশরের দিনে ভয়ে বিস্ময়ে মাথা ও চক্ষু উপরের দিকে উঠে যাবে। আর কেউ কারও দিকে নযর করার ফুরসৎ পাবে  না। নিজেকে নিয়েই লোকেরা ব্যস্ত হয়ে পড়বে। বিস্ময়ের আতিশয্যে লোকেরা সেদিন শুধু বিস্ফারিত নয়নে চেয়ে থাকবে। হযরত ইবনে আব্বাছ, মুজাহিদ, দাহ্হাক, হাসান বসরী (রা.) এরূপ ব্যাখ্যাই করেছেন। (আত্ তাযকিরাহ্)।

এখানে একটি প্রশ্ন হতে পারে- উল্লেখিত  আয়াত অনুযায়ী হাশরে সবাই মাথা উঁচু করে বেহুঁশের মত বিস্ফারিত নয়নে বিহ্বল হয়ে থাকবে বলে অত্র আয়াতে প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্ত ছুরা কামার ৭ আয়াত এবং ছুরা মাআরিজ ৪৪ আয়াতে দেখা যায়- “মানুষ ঐদিন মাথা ও চক্ষু নীচু করে থাকবে- লজ্জায় মাথা তুলতে পারবেনা সেদিন”।

যেমন ছুরা কামার ৭ম আয়াতে বলা হয়েছে-  خُشَّعاً اَبصَارُھُمْ অর্থাৎ “লোকেরা ঐদিন চোখ  নীচু করে রাখবে”।

ছুরা মাআরিজ ৪৪ আয়াত বলা হয়েছে  - خَاشِعَةً أَبْصَارُهُمْ অর্থাৎ  “ঐদিন লোকেরা দৃষ্টি অবনত করে রাখবে”।

সুতরাং  شخوص الابصار এবং اقناع الروء س অর্থাৎ- সেদিন  চক্ষু ও মাথা উপরের দিকে তুলে লোকেরা বিস্ময় বিমূড় হয়ে তাকিয়ে থাকবে এবং خشوع الابصار অর্থাৎ “অবনত দৃষ্টিতে নীচের দিকে চেয়ে থাকবে” - এই বিপরীত দুই বর্ণনার মধ্যে সামঞ্জস্য কিভাবে হতে পারে?

জবাব হলোঃ মাথা ও চোখ নীচু করার যে বর্ণনা ছুরা ক্বামার ও ছুরা মাআরিজে দেয়া হয়েছে- তা হচ্ছে কবর থেকে হাশরে  গমনের অবস্থার বর্ণনা  এবং ছুরা ইবরাহীমের ৪২ ও ৪৩ আয়াতে বর্ণিত মাথা ও চক্ষু উপরের  দিকে উঠে যাওয়ার অবস্থা হবে হাশরের ময়দানে। মূলতঃ মাথা উঁচু ও মাথা নীচু হওয়ার ঘটনা দুই  জায়গায় দু’রকম হবে। সুতরাং আল্লাহর বাণী পরস্পর বিরোধী নয়। স্থানকাল ও পাত্র ভেদে অবস্থার পরিবর্তন  হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। আল্লাহর কালাম  পরস্পর বিরোধী হতেই পারেনা।  আমরা পরিবেশ বুঝিনা বলেই আমাদের ধারণায় পরস্পর বিরোধী বলে মনে হয়। কোরআন বুঝা-না বুঝার উপরই নির্ভর করে সুপথগামী হওয়া অথবা বিপথগামী হওয়া। হযরত আবু বকর (রা:) কোরআন বুঝেছেন এক রকম এবং আবু জেহেল বুঝেছিল অন্য  রকম। বর্তমানে  সুন্নীরা কোরআন ও  হাদীস বুঝে এক রকম এবং বাতিল সম্প্রদায়ের  লোকেরা বুঝে অন্য  রকম। তাই ওহাবী-সুন্নীর এই দ্বন্ধ।

(৫১) هَذَا  يَوْمُ لَا يَنطِقُونَ - وَلَا يُؤْذَنُ لَهُمْ فَيَعْتَذِرُونَ অর্থ- “যেদিন কেউ কথা বলবেনা  এবং ওজর পেশ করে তাওবাহ্ করার সুযোগও  তাদেরকে  দেয়া হবেনা”। (ছুরা মুরছালাত ৩৫-৩৬ আয়াত)।

[কাফেরদের বেলায় এ দুখানা  আয়াত প্রযোজ্য। মুকায্যিবীন অর্থাৎ- যারা  পরকালকে মিথ্যা মনে করেছিল- তাদের হাশরের অবস্থা হবে এরূপ। তারা অপরাধীর ন্যায় মথা নীচু করে নিশ্চুপ থাকবে। তারা তাওবাহ্ করার অনুমতি চাইবে, কিন্ত তা দেয়া হবেনা। এই ভয়াবহ অবস্থা হবে হাশরের ময়দানে। একারণে ঐদিনের এক  নাম হবে ”নির্বাক” দিবস। সেদিন তাদেরকে আরো বলা হবে-
اخْسَؤُوا فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ
“তোমরা ধিকৃত অবস্থায় জাহান্নামেই পড়ে থাকো এবং আমার সাথে আর কোন কথা বলোনা”। (ছুরা মু’মিনুন ১০৮ আয়াত)।

(৫২) يَوْمَ لَا يَنفَعُ الظَّالِمِينَ مَعْذِرَتُهُمْ অর্থাৎ “সেদিন যালেমদের  ওজর-আপত্তি কোনই  উপকারে  আসবেনা”। (ছুরা মুমিন-৫২)

ঐদিন কাফিররা ওজর আপত্তি করবে এভাবে-
رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَا
অর্থঃ “হে আল্লাহ্,  আমরা তো দুনিয়াতে আমাদের নেতা ও  মুরুব্বীদের  কথামত চলতাম- তারাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে- আমাদের  কি দোষ? (ছুরা আহ্যাব-৬৭)।

তারা আরো ওজর আপত্তি জানিয়ে ফরিয়াদ করবে-
رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْهَا فَإِنْ عُدْنَا فَإِنَّا ظَالِمُونَ - قَالَ اخْسَؤُوا فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ
অর্থ- “হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে দুনিয়াতে পাঠাও। আমরা যদি পুনরায় এই অন্যায় (কুফরী) করি- তাহলে আমরা যালেম বলে সাব্যস্থ হবো। ” আল্লাহ্ বলবেন- “না, এখানেই ধিকৃত অবস্থায় পড়ে থাক এবং আমার কাছে আর কোন কথা বলোনা। ” (ছুরা মু’মিনুন ১০৭-১০৮ আয়াত)।

(৫৩) وَلاَ يَكْتُمُونَ اللّهَ حَدِيثًا অর্থ- (হাশরের  দিনে কাফিরগণ  যখন নবীদের কাছে হেরে যাবে- তখন তারা লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাবে)  “আর তারা গোপন রাখতে পারবেনা কোন বিষয় আল্লাহ্ থেকে “ (ছুরা- নিছা ৪২ আয়াত)।

(৫৪) یوم الفتنۃ (ইয়াওমুল ফিত্নাহ্): অর্থ-“আযাবের দিন”।

সেদিনের   আযাব হবে বড় ফিত্না। আল্লাহ্পাক সেদিনের চিত্র এভাবে তুলে ধরেছেন-
يَوْمَ هُمْ عَلَي النَّارِ يُفْتَنُونَ - ذُوقُوا فِتْنَتَكُمْ
অর্থাৎ “সেদিন তারা অগ্নিকুন্ডের শাস্তিতে নিক্ষিপ্ত হবে, আর তাদেরকে বলা হবে- তোমরা তোমাদের শাস্তি আস্বাদন করো”। (ছুরা যারিয়াত ১৩-১৪ আয়াত)

(৫৫) یوم لامردلہ من اللّٰہ অর্থ- “ঐদিনটি আল্লাহর নিকট হতে প্রত্যাহার যোগ্য নয়” (অর্থাৎ  কিয়ামত দিবস)।

(৫৬) یوم الْغَاشِيَةِ (ইয়াওমুল  গাশিয়াহ্): অর্থ- “আচ্ছন্নকারী দিবস”।

হাশরের দিনে সমস্ত লোকদেরকে ঢেকে ফেলা হবে। (ছুরা গাশিয়াহ্- ১ আয়াত) এই অবস্থাটি অন্য ছুরায় এভাবে বর্ণিত হয়েছে-
فَيَوْمَئِذٍ لَّا يُعَذِّبُ عَذَابَهُ أَحَدٌ - وَلَا يُوثِقُ وَثَاقَهُ أَحَدٌ
অর্থাৎ “সেদিন তাঁর শাস্তির  মত শাস্তি আর কেউ দিবেনা এবং তাঁর কঠিন বন্ধনের ন্যায় বন্ধনও কেউ দিবেনা”। (ছুরা ফজর ২৫-২৬)

(৫৭) یوم لا بیع ولا خلال অর্থাৎ “যেদিন বেচাকেনা ও বন্ধুত্ব চলবেনা”।

আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
قُل لِّعِبَادِيَ  الَّذِينَ آمَنُواْ يُقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَيُنفِقُواْ مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلانِيَةً مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ يَوْمٌ لاَّ بَيْعٌ فِيهِ وَلاَ خِلاَلٌ
অর্থ-   ”হে প্রিয় রাসুল! আপনি আমার মো’মেন বান্দাদেরকে বলে দিন- তারা যেন নামায কায়েম করে এবং আমার প্রদত্ত রিযিক থেকে  যেন প্রকাশ্যে ও গোপনে দান করে ঐদিন আসার পূর্বেই- যেদিন না চলবে বেচা-কেনা এবং না কাজে আসবে বন্ধুত্ব”। (ছুরা ইবরাহীম ৩১ আয়াত)।

(৫৮) یوم لا ریب فیہ অর্থাৎ- “যেদিনটি অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই” অর্থাৎ সংঘটন সুনিশ্চিত দিবস। কাফেরগণ কিয়ামত সম্পর্কে সন্দেহ করে। কিন্তু সেদিন অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহের কোনই অবকাশ নেই।

আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
وَأَنَّ السَّاعَةَ آتِيَةٌ لَّا  رَيْبَ فِيهَا وَأَنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ مَن فِي الْقُبُورِ
অর্থাৎ “কিয়ামত দিবস অবশ্যই আসবে- এতে কোনই সন্দেহ নেই এবং  আল্লাহ্পাক কবরবাসীদেরকে অবশ্যই উত্থিত করবেন”। (ছুরা হজ্জ ৭ আয়াত)।

(৫৯) يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ অর্থাৎ- “ঐদিন কোন কোন মুখ হবে সাদা উজ্জ্বল এবং কোন কোন মুখ হবে কালো”। (ছুরা আলে ইমরান ১০৬ আয়াত)।

উজ্জলমুখ অর্থ মো’মিন এবং কালোমুখ অর্থ কাফির ও মুনাফিক। উজ্জল মুখ অর্থ সুন্নী এবং কালো মুখ অর্থ বাতিল ফির্কা (হাদীস- ইবনে ওমর)।

(৬০) يوم الاذان (ইয়াওমুল আযান): অর্থ- “ঘোষনা দিবস”।

আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
فَأَذَّنَ مُؤَذِّنٌ بَيْنَهُمْ أَن لَّعْنَةُ اللّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ
অর্থাৎ “ঐদিন ফিরিস্তাদের মধ্যে ঘোষনাকারী ঘোষনা করে বলবে- যালেমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত বা লা’নত”। (ছুরা আ’রাফ ৪৪ আয়াত)।

(৬১) یوم الشفاعۃ (ইয়াওমুশ  শাফাআত): অর্থ- “সুপারিশ দিবস”।

ঐদিন শাফাআত বা সুপারিশ  গ্রহণ  করা হবে। আম্বিয়ায়ে কেরাম,  আউলিয়ায়ে কেরাম, উলামায়ে কেরাম, শোহাদায়ে কেরাম, হাফিযুল  কোরআন- এরকম আরো অনেকেই সুপারিশ করবেন হাশরের দিনে। উনারা  আল্লাহর অনুমতিপ্রাপ্ত এবং উনাদের সুপারিশ কবুল করা হবে বলে হাদীসে সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে। র্শহে আকায়েদে নসফীতে উল্লেখ আছে-
الشفاعۃ ثابتۃ بالکتاب والسنۃ ۔ ای الشفاعۃ المقبولۃ ۔
অর্থাৎ “কোরআন-সুন্নাহর আলোকে  শাফাআত  সুপ্রমাণিত এবং ঐ শাফাআত আল্লাহর কাছে অবশ্যই গৃহীত হবে”। কিন্ত মোতাজিলা সম্প্রদায় শাফাআতকে অস্বীকার করে।  বর্তমানে মউদূদীবাদী ও ওহাবীরা শাফাআত অস্বীকারকারী। দেখুন- দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মনগড়া তাফসীর। মাওলানা আবদুর রহীম তার ‘কলেমা  তাইয়েবা’ গ্রন্থে শাফাআতের ভুল ও মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে- “নবী ওলীদের সুপারিশ গৃহীত হওয়ার কোন নিশ্চয়তা নেই। ”(নাউযুবিল্লাহ্)

কোরআন মজিদের ৫টি আয়াত   হচ্ছে গৃহীত শাফাআতের দলীল। যথাঃ-

(ক) مَنۡ ذَا الَّذِیۡ یَشۡفَعُ عِنۡدَہٗۤ اِلَّا بِاِذۡنِہٖ “কে  আছে আল্লাহর কাছে  সুপারিশ করার- তাঁর অনুমোদন ব্যতিরেকে”? (আয়াতুল কুরছি)। (নবীজীই একমাত্র অনুমতিপ্রাপ্ত। )

(খ) وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَىٰ অর্থাৎ “আল্লাহর প্রিয়জন ছাড়া অন্য কেউ শাফাআত করতে পারবেনা। ” (ছুরা আম্বিয়া ২৮ আয়াত) (নবীজীই একমাত্র প্রিয়জন। )

(গ) لَا تَنفَعُ  الشَّفَاعَةُ عِندَهُ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ অর্থাৎ “আল্লাহর নিকট অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া  কারো সুপারিশ উপকারে আসবেনা”।  (ছুরা  সাবা ২৩ আয়াত)। (আমাদের নবী করিম (ﷺ) অনুমতিপ্রাপ্ত এবং উপকারী। )

(ঘ) فَمَا لَنَا مِن شَافِعِينَ অর্থাৎ ঐদিন কাফেরগণ বলবে- “আজ আমাদের জন্য কোন সুপারিশকারী নেই”। (ছুরা শুয়ারা ১০০ আয়াত)। (ওহাবীরা বলে- কারো জন্যই সুপারিশ নেই)।

(ঙ) لا تنفعھم شفاعۃ الشافعين  অর্থাৎ  “ঐদিন কাফেরদের বেলায় সুপারিশকারীদের কোন সুপারিশ উপকারে আসবেনা”। (মু’মিনদের বেলায় উপকারে আসবে)।

এতে পরিষ্কার  হয়ে গেল যে, সুপারিশ করার জন্য আল্লাহর মনোনীত ও অনুমতিপ্রাপ্ত কিছু প্রিয়  বান্দা অবশ্যই আছেন। সবচেয়ে বড় সুপারিশকারী ও প্রথম সুপারিশকারী  হবেন  আমাদের  প্রিয়নবী  (ﷺ)। তাঁর সুপারিশক্রমেই বিচার কাজ শুরু হবে- পঞ্চাশ হাজার  বছর পর। ইহাকে শাফাআতে  কুবরা বলা হয়। নবীজী পাঁচ প্রকার সুপারিশ করবেন। যথা- (ক) বিচার অনুষ্ঠানের জন্য সুপারিশ (খ)  ৪৯০ কোটি লোককে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্য সুপারিশ (গ) জান্নাতে উচ্চ মর্তবা দানের জন্য সুপারিশ (ঘ) জাহান্নামীদের তালিকা হতে কিছু লোককে মুক্তিদানের জন্য সুপারিশ (ঙ) জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশের জন্য সুপারিশ। (দেখুন, আল হাদিকাতুন নাদিয়া এবং অত্র গ্রন্থ ৩৪ অধ্যায়)।

(৬২) یوم العرق   (ইয়াওমুল আরক): অর্থ-  “ঘর্মদিবস”।

কিয়ামতের দিন কাফেরদের ঘাম ও মগজ বের হয়ে সাগরে পরিণত হবে এবং অর্ধ কান পর্য্যন্ত ডুবে যাবে। (আল হাদীস)।

(৬৩) یوم القلق والجولان  (ইয়াওমুল কলক ওয়াল জাওলান):

অর্থ- “পেরেশানী ও ছুটাছুটি দিবস”। ঐদিন কেউ স্থির থাকতে  পারবেনা। সবাই  পেরেশান হয়ে  সাহায্যকারীদের তালাশে এদিক ওদিক দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে থাকবে। অবশেষে আমাদের প্রিয়নবীর কাছে সাহায্য পাবে এবং স্থির হবে। (বুখারী)।

(৬৪) یوم الفرار (ইয়াওমুল ফিরার): অর্থ- “পলায়ন দিবস”।

ঐদিন প্রাথমিক অবস্থায় নবীজী ছাড়া সবাই নিজকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। একজন আরেকজন থেকে পলায়ন করবে। পিতা-পুত্র,  স্বামী-স্ত্রী,  ভাই-বন্ধু ইত্যাদি পরিচয়ে কেউ কারো সাহায্য করবেনা। নিজের মুক্তি নিশ্চিত হলে তারপর অপরের জন্য সুপারিশ করবে। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ أَخِيهِ - وَأُمِّهِ وَأَبِيهِ - وَصَاحِبَتِهِ وَبَنِيهِ - لِكُلِّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَأْنٌ يُغْنِيهِ
অর্থাৎ “ঐদিন মানুষ ভাই, মা, বাবা, স্ত্রী ও সন্তান হতে পলায়ন করবে। ঐদিন প্রত্যেকেই নিজের অবস্থা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে”। (ছুরা আবাছা ৩৪-৩৬ আয়াত)।

হযরত হাসান বসরী (রহ:)  বলেন- “ঐদিন প্রথমে পিতা (চাচা) হতে পলায়ন করবেন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস  সালাম। সন্তান হতে পলায়ন করবেন হযরত নূহ্  আলাইহিস সালাম। স্ত্রী হতে পলায়ন করবেন হযরত লূত আলাইহিস সালাম। কেবলমাত্র আদের প্রিয়নবী (ﷺ) সেদিন উম্মতি উম্মতি বলে কাঁদবেন   এবং নেক্কার গুনাহ্গার নির্বিশেষে সবাইকে  আশ্রয়  দিবেন”। [আল্লাহ্ আমাদেরকে নবীজীর আশ্রয় নসীব করুন। সাহাবায়ে কেরাম, শোহাদায়ে কেরাম, পীর মুর্শিদের আশ্রয় ও সঙ্গ নসীব করুন! আমীন। ]

কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা প্রমান  করার জন্য উপরোক্ত ৬৪টি ঘটনা ও  অবস্থা বর্ণনা করা হলো- (ইমাম কুরতুবীর  তাযকিরাহ্ গ্রন্থ ২২৯-২৫৩ পৃষ্ঠা পর্য্যন্ত)। ইমাম কুরতুবী এইসব তথ্য সংগ্রহ করেছেন কয়েকটি গ্রন্থ হতে। যথা (ক) ইবনে  নাজাহ্ কৃত ছাবিলুল খাইরাত (খ) আবু হামেদ  গাযালী কৃত ইহ্ইয়াউল উলুম (খ) কুতুবী কৃত  কিতাব উয়ুনিল আখ্বার (ঘ) কাযী  আবু বকর ইবনুল আরবী কৃত ছিরাজুল মুরিদীন- প্রভৃতি।

হাশর দিনের দৈর্ঘ
========
উপরোক্ত ঘটনা সংঘটিত  হবে  হাশরের দিনে। ঐদিনের দৈর্ঘ কত হবে- সে সস্পর্কে কোরআন শরীফে এরূপ এসেছে “ঐদিনের দৈর্ঘ্য হবে দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান একদিন। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
سَأَلَ سَائِلٌ بِعَذَابٍ وَاقِعٍ (1); 2 لِلْكَافِرِينَ لَيْسَ لَهُ دَافِعٌ (2); 3 مِنَ اللَّهِ ذِي الْمَعَارِجِ (3); 4 تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ (4)
অর্থাৎ- “জনৈক প্রশ্নকারী প্রশ্ন করলো- কাফেরদের নিশ্চিত শাস্তি আসার ব্যাপারে-  যার প্রতিরোধকারী কেউ নেই। ঐ শাস্তি আসবে মহান ও সুউচ্চ মর্যাদার আধিকারী আল্লাহর পক্ষ হতে। ফিরিস্তাগণ এবং রুহুল আমিন আল্লাহর দিকে উর্দ্ধগামী হবে এমন একদিনে- যার দৈর্ঘ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান”। (ছুরা মাআরিজ ১-৪ আয়াত)।

উক্ত আয়াতে উল্লেখিত “পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান একদিন” হবে কাফেরদের বেলায়। মোমনদের বেলায় হবে মাত্র চার রাকআত ফরয  নামাযের সমান। এ সম্পর্কে হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রা:) হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লামের কাছে ব্যাখ্যা চাইলে নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন-
والذی نفسی بیدہ انہ لیخفف علی المومن حتی  یکون اخفف علیہ من الصلوۃ المکتوتہ یصلیھا فی الدنیاء
অর্থাৎ- “যার কুদরতী হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ করে বল্ছি-ঐ দীর্ঘ সময়টিই মোমিনদের কাছে এক ওয়াক্ত ফরয নামাযের সময়ের চেয়েও কম মনে হবে”। (তাফসীরে মায্হারী- সুত্র আবু সায়ীদ খুদরী)।

হযরত আবু হোরায়রা সুত্রে বর্ণিত হাদীসে আরেকটু দৈর্ঘ্য সময়ের কথা   উল্লেখ আছে। নবীজী  (ﷺ) বলেন-
يكون علي المؤمنين كمقدار ما بين الظهر والعصر
অর্থাৎ “মোমেনদের কাছে ঐ দীর্ঘ দিনটি যোহর  ও আছর নামাযের মধ্যবর্তী সময়ের মত অনুভূত হবে”। যোহর ও আছরের মধ্যবর্তী সময় বলতে খুব কম সময় বুঝায়। মোদ্দাকথা হলো- কাফিরদের কাছে ঐদিনটি সর্বমোট পঞ্চাশ হাজার বৎসরের ন্যায় দীর্ঘ মনে হবে- কিন্ত মোমিনদের কাছে মনে হবে অল্প সময়। অন্য আয়াতে এসেছে- “ঐদিনটি হবে দুনিয়ার একহাজার বছরের  সমান”।  কাফেরদের অবস্থার তারতম্য হিসাবেই কারো কাছে এক হাজার বছর এবং কারো কাছে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান মনে হবে। সুতরাং উভয় আয়াতের বর্ণনা সঠিক  (মাযহারী)। কঠিন কাফেরদের কাছেই পঞ্চাশ হাজার বছরের মতো দীর্ঘ মনে হবে। ”

কঠিন  বিপদের রাত্রি খুবই দীর্ঘ মনে হয়।  আর আনন্দখুশীর রাত্রিকে  এক মুহুর্ত বলে মনে হয়। মোমেনগণ হাশরে এমন আনন্দে বিভোর থাকবে যে, পঞ্চাশ হাজার বছরের দিনটি কীভাবে শেষ হয়ে যাবে- তারা তা টের-ই করতে পারবেনা। (সুব্হানাল্লাহ। )


------

 
Top