ঊনচল্লিশতম অধ্যায়ঃ দোযখ ও তার শাস্তি প্রশ্নঃ  জাহান্নাম কেমন-  এবং তার স্বরূপ কী? জাহান্নামের  শাস্তির স্বরূপ কী? বিস্তারিত আলোচনা করুন। উত্তরঃ জাহান্নাম ৭টি।   আল্লাহ্ তায়ালা কাফির, মুশরিক, মুরতাদ ও মোনাফিকদের জন্য স্থায়ীভাবে এবং গুনাহ্গারদের   জন্য সাময়িকভাবে শাস্তির উদ্দেশ্যে এগুলো তৈরী করে রেখেছেন। ইহা কাফের, মুশরিক, মুরতাদ এবং মোনাফিকদের জন্য চিরস্থায়ী বসবাসের জায়গা, আর গুনাহ্গারদের জন্য সাময়িক শাস্তির ব্যবস্থা। নির্দ্দিষ্ট শাস্তি ভোগ করার পর- অথবা নবী, ওলী, শহীদ, গাউস, কুতুব- প্রমূখ নেককারগণের সুপারিশে কিছু শাস্তি ভোগের পর গুনাহ্গাররা মুক্তি পেয়ে জান্নাতে যাবে। জাহান্নামের পরিধি  ও প্রকৃতি এবং তার আয়তন ও গভীরতাঃ (১) জাহান্নাম ওয়াল বেষ্টিত আগুনের গৃহঃ এ প্রসঙ্গে হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) রেওয়ায়াত করেন, عن ابی   سعید الخدری ص عن النبی   ﷺ لسرادق النار اربعۃ جدر۔ کثف کل جدار مسیرۃ اربعین سنۃ۔ (الترمذی) অর্থঃ “হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, জাহান্নাম চারদিকে  দেওয়াল দ্বারা বেষ্টিত জায়গা। প্রত্যেক দেওয়ালের পুরুত্ব হবে  এত মোটা যে, তা অতিক্রম করতেই চল্লিশ বৎসর লাগবে”। (তিরমিযি শরীফ)। দেওয়াল এত মোট হওয়ার  কারণ হলো- তা যেন আগুনের উত্তাপে ফেটে না যায়। দেওয়াল যদি এত মোটা হয়, তাহলে ভিতরের জায়গা যে কত বড় হতে পারে- তা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলই  ভাল জানেন। কেননা, রাসুলে করিম  (ﷺ) নিজ চোখে তা দেখে এসেছেন। সুতরাং তাঁর বর্ণনা চাক্ষুস বর্ণনা। (২) জাহান্নামের আগুনের ভয়াবহতা, عن ابی ھریرۃ عن النبی ﷺ اوقد علی النار الف سنۃ۔ حتی احمرت۔ ثم اوقد علیھا الف سنۃ۔ حتی ابیضت۔ ثم اوقد علیھا الف سنۃ۔ حتی اسودت فھو سودأ مظلمۃ۔ رواہ الترمذی (مشکوۃ صفۃ النار) অর্থঃ “হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  থেকে বর্ণনা করেছেন- “জাহান্নামের আগুনকে তিনবার উত্তপ্ত করা হয়েছে। প্রথমে একহাজার বছর উত্তপ্ত করার পর তার রং হয়েছে লাল বর্ণের। তারপর আরো একহাজার বছর উত্তপ্ত করার পর তার রং হয়েছে সাদা বর্ণের। তারপর পুনরায় আরো একহাজার বছর উত্তপ্ত করার পর তার রং হয়েছে একদম কলো ও অন্ধকারময়”। (তিরমিযি সূত্রে মিশকাত)। ব্যাখ্যাঃ اوقد علی النار শব্দটি মাযি মজ্হুলের সীগা। এর দ্বারা অতীতকাল বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ-   অতীতকাল থেকেই জাহান্নাম বিদ্যমান আছে। ইহাই আহ্লে সুন্নাতের আক্বিদা। কিন্তু মো’তাযিলাসহ অন্যান্য আহ্লে বিদ্আত ফের্কাসমূহ  জাহান্নামের  বর্তমান অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। তারা ভ্রান্ত ও বাতিল। (সূত্র: মিরক্বাত শরহে মিশকাত) (৩) দুনিয়ার আগুন জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের এক ভাগ عن ابی ھریرۃ ان رسول اللّٰہ ﷺ قال: نارکم جزاء من سبعین جزأ من نار جھنم۔ قیل: یا رسول اللّٰہ ان کانت الکافیۃ ؟ قال: فضلت علیھن بتسعۃ وستین جزأ۔ کلھن مثل حرھا۔ متفق علیہ۔ অর্থঃ “হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি   ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “তোমাদের দুনিয়ার এই আগুন জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের ১ ভাগ মাত্র। আরয করা হলো- ইহাই কি যথেষ্ঠ? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকিদের সাথে জোর দিয়ে এরশাদ করলেন- দুনিয়ার সর্ব প্রকার আগুনের সমষ্টির উপরে জাহান্নামের আগুন ৬৯ গুন বেশী উত্তপ্ত ও প্রাধান্য বিস্তারকারী। দোযখের আগুনের ৭০টি উত্তাপের মধ্যে প্রত্যেকটির উত্তাপের পরিমান হবে  দুনিয়ার সর্বপ্রকার আগুনের সমান”। (বুখারী ও মুসলিম এর শব্দাবলীর ঐক্য)। ব্যাখ্যাঃ দুনিয়ার আগুনের উত্তাপ  কত ডিগ্রী পর্য্যন্ত বাড়ানো সম্ভব- তা বিজ্ঞানীরাই ভাল বলতে পারবে। এ রকম শত প্রকারের আগুন রয়েছে। সবগুলোর উত্তাপ একসাথ করলে জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের ১ ভাগ হবে। এ কথার দ্বারা অনেকের মতে নবী করীম (ﷺ) জাহান্নামের আগুনের উত্তাপের আধিক্য বুঝিয়েছেন। হুবহু পরিমান উদ্দেশ্য নয়। যখন হুযুর  (ﷺ) কে পুনরায় প্রশ্ন করা হলো-  ইহাই কি   শেষ  কথা?  হুযুর (ﷺ) বল্লেন- দুনিয়ার   যাবতীয় আগুনের  সম্মিলিত উত্তাপ হলো জাহান্নামের ৭০ ভাগের  এক ভাগের সমান। জাহান্নামের আগুনের পরিমান ৭০ী৭০ = ৪৯০ গুণ বেশী  হলে তার সম্মিলিত উত্তাপ কী পরিমান হতে পারে- তা সহজেই অনুমেয়। (৪)  দুনিয়ার আগুনকে সত্তরবার সাগরের পানিতে ভিজিয়ে ঠান্ডা করা হয়েছে وسئل ابن عباس عن نار الدنیا مم خلقت؟ قال: من نار جھنم۔ غیر انھا اطفئت بالمأ سبعین مرۃ ۔ ولولا ذلک۔ ما قربت لانھامن نار جھنم۔ التذکرۃ صف ۴۳۰ অর্থঃ “হযরত ইবনে   আব্বাস (রাঃ) কে দুনিয়ার আগুনের  সৃষ্টি ও  তার উত্তাপ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি  বল্লেন- জাহান্নামের আগুন থেকেই দুনিয়ার আগুন সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে তা পানি দিয়ে ৭০ বার ধুয়ে ঠান্ডা করা হয়েছে। তা না হলে দুনিয়ার আগুনের কাছে কেহই যেতে পারতো না। কেননা, ইহা জাহান্নাম থেকে সৃষ্ট”।  (আল্লামা কুরতুবী কৃত আত্ তাযকিরাহ ৪৩০ পৃষ্ঠা)। ব্যাখ্যাঃ বিভিন্ন রেওয়ায়াতে  সাগরের পানি দিয়ে দুনিয়ার আগুনকে ২ বার, ৭ বার, ১০ বার, ৭০ বার ঠান্ডা করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত আবু হোরায়রার বর্ণনায়  ২বার, ইবনে আব্বাসের এক বর্ণনায় ৭ বার, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের বর্ণনায় ১০ বার এবং ইবনে আব্বাসের  অন্য বর্ণনায় ৭০ বার ঠান্ডা করার কথা বলা হয়েছে।  (আত্ তাযকিরাহ্ গ্রন্থের ৪৩০ পৃষ্ঠা)। এরূপ বলার কারণ হলো- নবী করীম (ﷺ) যখন যে রকম  ওহী পেয়েছেন- সে রকমই বলেছেন। এর উদ্দেশ্য হলো জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের ১  ভাগ নিয়ে। এটাকে ২বার, ৭বার, ১০ বার এবং সর্বশেষ ৭০ বার পানি দিয়ে ঠান্ডা করে এর উত্তাপ কমানো হয়েছে। এখন চিন্তা করে দেখুন-  জাহান্নামের আগুনের মূল উত্তাপ কত ডিগ্রী হতে পারে? মানুষের হিসাব শেষ হয়ে যাবে-  কিন্তু উত্তাপের ডিগ্রী কেউ মেপে শেষ করতে পারবে না। হাদীসের  মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো- “এত উত্তপ্ত জাহান্নামে যাবার জন্য তোমরা চেষ্টা করো না”। (৫) জাহান্নামের গভীরতা, عن ابی ھریرۃ  ص  قال: کنا  مع رسول اللّٰہ ﷺ  اذ سمع وجبۃ فقال رسول اللّٰہ ﷺ: اتدرون ما ھذا؟  قلنا: اللہ ورسولہ اعلم۔ قال: ھذا حجر رمی بہ فی النار سبعین خریفا۔ فھو یھوی فی النار الی الاٰن۔ حتی انتھی الی قعرھا۔ اخرجہ مسلم (والوجبۃ الساقط الثقیل) অর্থঃ “হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা সাহাবীগণ হুযুরের সাথে ছিলাম। এমন সময় তিনি একটি ভারী বস্তু পতনের বিকট শব্দ শুনতে পেলেন। অতঃপর হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লাম  এরশাদ করলেন- তোমরা কি বুঝতে পেরেছো- এই শব্দটি কিসের? আমরা আরয করলাম- “আল্লাহ্ এবং  তাঁর প্রিয় রাসুল-ই সবচেয়ে বেশী জানেন”। এবার তিনি ঘটনা খুলে বল্লেন- ইহা একটি পাথর। ইহা জাহান্নামের উপরের  মুখ থেকে নীচের দিকে সত্তর বছর আগে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। উক্ত পাথর নীচের দিকে যেতে যেতে এখন  জাহান্নামের তলদেশের নাগাল পেয়েছে”। (মুসলিম শরীফ সুত্রে আত্ তাযকিরাহ্ ৪৩২ পৃষ্ঠা)। ব্যাখ্যা (ক): এই হাদীসখানা ৭ম হিজরী  হতে ১১ হিজরীর মধ্যে নবী করীম (ﷺ) বর্ণনা করেছেন। কেননা, এই হাদীস বর্ণনাকারী রাবী হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) ৭ম হিজরীতে মুসলমান হয়ে ৪ বৎসর হুযুর (ﷺ)-এর একান্ত সান্নিধ্যে থেকে  সব হাদীস  মুখস্ত করেছেন এবং অন্যান্য সাহাবীদের নিকট থেকে শুনে শুনেও অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর স্মরণশক্তি পূর্বে মোটেই ছিল না। নবী করীম (ﷺ) তাঁর চাদরের মধ্যে মুঠি মুঠি করে স্মরণশক্তি ঢেলে  দিয়েছিলেন। (দেখুন- বুখারী শরীফ প্রথম খন্ড প্রথম পারা ২২ পৃষ্ঠা, অধ্যায়- বাবু হিফ্যুল ইলম)। নবীপ্রদত্ত স্মরণ শক্তির গুনে তিনি সবচেয়ে  বেশী হাদীস বর্ণনা করেছেন। এজন্য তাঁকে “মিনাল মুক্সিরীন” সাহাবী বলা হয়।  বুঝাগেল- “অদৃশ্য স্মরণশক্তি   নবী  করীম (ﷺ) -এর মুঠোর মধ্যে। তিনি এলেম, স্মরণ শক্তিসহ আল্লাহর রহমত বন্টনকারী” (বুখারী শরীফ)। ব্যাখ্যা (খ): وجبۃ এটি আরবী শব্দ। এর অর্থ হলো ভারী বস্তু পতনের বিকট শব্দ। তিনি নবীজীর সাথে থাকার কারণে আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন। নবী ও অলীগনের সান্নিধ্যে থাকলে এভাবেই অনেক গায়েবী শব্দ শুনা যায় এবং গায়েবী বস্তুও দেখা যায়। ব্যাখ্যা (গ): রাসুল মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিকট  আওয়াজের মূল কারণ জানতেন। সাহাবীগণ শুধু বিকট আওয়াজই শুনেছিলেন- কিন্তু তার উৎসমূল সম্পর্কে ছিলেন অজ্ঞাত। একারণেই  হুযুর (ﷺ) -এর প্রশ্নের জবাবে- ‘না’ বলে সাহাবীগণ আল্লাহ্ রাসুলের জ্ঞানের উপর বিষয়টি ন্যাস্ত করেছিলেন। ব্যাখ্যা (ঘ): সাহাবায়েকেরাম গায়েবী বিষয়ে নিজেদের অজ্ঞতা স্বীকার করে গায়েবী ইলম্ আল্লাহ্-রাসুলের ইখতিয়ারভুক্ত বলে স্বীকার করে  নিয়েছেন এবং বলেছেন “সর্ব বিষয়ের পরিপূর্ণ গায়েবী জ্ঞান ও ইলম্ একমাত্র আল্লাহ্ ও রাসুলের উপর ন্যাস্ত”। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) সহ  উপস্থিত সাহাবীগণ একবাক্যে বলেছিলেন- اللہ و رسولہ اعلم অর্থাৎ- “আল্লাহ্ ও তাঁর প্রিয় রাসুলই সর্বজ্ঞ”।  এই সর্বজ্ঞ বা اعلم শব্দটি ইস্মে তাফযীল একবচন। এখানে কর্তা দুইজন- কিন্তু ক্রিয়া একটি। এক ক্রিয়ায় দুজন শরীক। বিষয়টি গবেষনাধর্মী  এবং ইল্মে গায়েব সম্পর্কিত  দলীল। সাহাবায়ে কেরাম নবীজীর ইল্মে গায়েব স্বীকার করলেও এদেশীয়  বাতিলপন্থীরা তা স্বীকার করে না। তাই এরা আহ্লে সুন্নাত থেকে খারিজ এবং আহ্লে বিদ্আত -এর অন্তর্ভূক্ত। এরা জাহান্নামী দল বলে নবীজী হাদীসে ঘোষনা দিয়েছেন। (বুখারী ও তিরমিযি- ৭২ ফের্কা অধ্যায়)। ব্যাখ্যা (ঙ): জাহান্নামের কিনারা হতে নিক্ষিপ্ত পাথরটি ৭০ (সত্তর) বৎসর পূর্বে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। সে সময় নবীজী কোথায় ছিলেন?  কিভাবে জানলেন? বুঝা গেল-  নবীজী নিজ জম্মের পূর্বে ঘটিত সব বিষয় সম্পর্কে আল্লাহর দানে অবগত ও অবহিত ছিলেন। এটা স্বীকার করার নামই ঈমান এবং অস্বীকার করার নামই বেঈমানী ও কুফর। ৭০ বৎসর পূর্বে যে পাথরটি নিক্ষিপ্ত হয়েছিল- তা নিম্নগতিতে ৭০ বৎসরে কতটুকু নীচে গিয়ে জাহান্নামের তলদেশে পতিত হয়েছিল- তা থেকেই জাহান্নামের গভীরতা আন্দাজ করা  যায়। মি’রাজ রজনীতে নবী করীম (ﷺ) এক মূহুর্তে জাহান্নামের তলদেশ পর্য্যন্ত পরিদর্শন করে জাহান্নামের বিভিন্ন জায়গা, স্তর ও বিভাগসহ সবকিছু দেখে এসে বর্ণনা করেছেন। এখন  বুঝুন- নবীজীর ইল্মের গভীরতা কত? এখানে আর একটি বিষয় জানা দরকার- বিকট আওয়াজটি নবীজী  ও সাহাবীগণ শুনেছিলেন- কিন্তু কি কারণে ঐ শব্দ হয়েছিল- তা কিন্তু সাহাবীগণ  বুঝতে  পারেননি। নবী করীম  (ﷺ) মদিনা শরীফে অবস্থান করে কি করে বল্লেন- এখন এইমাত্র পাথরটি  জাহান্নামের তলদেশে গিয়ে ঠেকেছে? তাহলে কি একথা বুঝা যায় না যে, নবীজীর দৃষ্টিতে জাহান্নামের ভিতরের সব দৃশ্য ভাসমান? এর জবাব দেওয়ার জন্য কোন বাতিলপন্থী মৌলভীদের প্রয়োজন হবে না- বরং সাধারন একজন আকলমান্দই যথেষ্ঠ। ব্যাখ্যা (চ): এ মর্মে তাবেয়ী  হযরত হাসান বসরী (রাঃ), সাহাবী মুয়ায  ইবনে জাবল (রাঃ) এবং আবু উমামা বাহেলী (রাঃ)- প্রমূখ রাবীগণ  হাদীস বর্ণনা করে বিষয়টি আরো পরিষ্কার করেছেন। চারটি বর্ণনার মধ্যে خریف ও عام শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। خریف অর্থ হলো- হেমন্তকাল- যা বৎসরে একবার হয়। আর عام অর্থ- বৎসর। তাহলে سبعین عام এবং سبعین خریف শব্দ দুটির  মর্ম এক- অর্থাৎ- সত্তর হেমন্ত মৌসুম বা সত্তর বৎসর। (৬) জাহান্নামের লাগাম বা রশি হবে ৭০টি, প্রত্যেক রশি টানার জন্য ৭০ হাজার ফিরিস্তা عن ابن مسعود ص  قال: قال   رسول  اللّٰہ ﷺ: یؤتی بجھنم یومئذ۔ لھا سبعون زمام۔ مع کل زمام سبعون الف ملک یجرونھا رواہ مسلم۔ অর্থঃ হযরত  আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন- রাসুলে খোদা  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “হাশরের দিনে জাহান্নামকে টেনে আনা হবে। তার রশি বা লাগামের সংখ্যা হবে ৭০টি। প্রত্যেক লাগাম ধরে টানবেন ৭০ হাজার  ফিরিস্তা” (মুসলিম)। ব্যাখ্যাঃ زمام অর্থ উটের লাগাম- যা ধরে উটের চালক উটকে টেনে নেয়। হাশরের দিনে ৭০টি  লাগাম লাগিয়ে ৪৯ লক্ষ  ফিরিস্তা  জাহান্নাম টেনে এনে জাহান্নামীদের টেনে টেনে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। এ বর্ণনা কোরআন মজিদে এসেছে এভাবে, وَسِيقَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِلَىٰ جَهَنَّمَ زُمَرًا অর্থাৎঃ  কাফেরদেরকে দলেদলে রশি বেঁধে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে” (২৪ পারা সুরা যুমার)। একটি  রশি টেনে নিবে ৭০ হাজার ফিরিস্তা। তাহলে ঐ রশিতে কতজনকে বাঁধা হবে- তা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলই ভাল  জানেন। একাজে প্রত্যেক রশিতে নিয়োজিত ফিরিস্তার  সংখ্যা হবে ৭০,০০০ x ৭০ = ৪৯,০০০০০ (উনপঞ্চাশ লক্ষ)  ফিরিস্তা। সুব্হানাল্লাহ্! জাহান্নামের ভিতরে বিভিন্ন স্তর ও  বিভিন্ন শাস্তির উপকরণ সমূহঃ (৭) জাহান্নামের ভিতরে ওয়ায়েল নামক গর্ত, عن  عبد اللّٰہ بن   مسعود ص عن  النبی ﷺ قال: ’’ویل‘‘ واد فی جھنم۔ یھوی فیہ الکافر اربعین خریفا قبل ان یبلغ قعرہ۔ ( عبد اللّٰہ بن المبارک) অর্থঃ “হযরত  আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,  নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “জাহান্নামের ভিতরে একটি গভীর গর্তের নাম “ওয়ায়েল”। উক্ত  ওয়ায়েল  গর্তের গভীরে কাফেরগনের পৌঁছাতে সময় লাগবে ৪০ হেমন্তকাল বা ৪০ বৎসর”। (সাধারণ মানুষ বলে- ওয়ায়েল দোযখ- মূলতঃ উহা একটি গর্তের নাম)। (৮) জাহান্নামের ভিতরে সাউদ নামক পাহাড়, وخرج الترمذی عن ابی سعید الخدری ص عن رسول اللّٰہ  ﷺ قال: الصعود جبل من نار یصعد فیہ الکافر سبعین خریفا ۔ ویھوی فیہ کذلک ابدا۔ অর্থাৎ- ইমাম তিরমিযি  হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন হাদীসে মারফু হিসাবে। তিনি বলেন- “নবী করীম  (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “সাউদ ( ) হলো দোযখের একটি পাহাড়। ঐ পাহাড়ে কাফের ব্যক্তি সর্বদা ৭০ বৎসরে আরোহন করবে এবং ৭০ বৎসরে  নীচে অবতরন করবে”। (তিরমিযি)। (৯) জাহান্নামের আর একটি পাহাড়ের নাম ইয়াহ্মূম, وقال ابن زید فی قولہ تعالی (وظل  من یحموم) ’’الیحموم‘‘جبل فی جھنم یستغیث الی ظلہ اھل النار۔ (لابارد) بل حار۔لانہ من دخان شفیر جھنم ۔ (ولاکریم) ای لاعذب অর্থঃ ২৭ পারা সূরা “ওয়াকেয়াহ” এর ৪৩ ও ৪৪ নম্বর আয়াতে বর্ণিত ‘ইয়াহ্মূম’, ‘বারিদ’, এবং ‘কারিম’- এই তিনটি শব্দের  ব্যাখ্যায় ইবনে যায়েদ বলেছেন - “ইয়াহ্মুম”  জাহান্নামের একটি পাহাড়ের  নাম। জাহান্নামীরা এর ছায়ায় আশ্রয় নিবে। “লা বারিদ” অর্থ খুব গরম- কেননা, উহা জাহান্নামের মুখ দিয়ে নির্গত ধুঁয়া হতে বের  হয়ে আসবে। আর “কারীম” হলো “সুস্বাদু নয়”- বরং বিস্বাদ খাদ্য। (১০) গুনাহ্গার সুন্নী মুমিন   ও বাতিলপন্থীদের মধ্যখানে  দোযখের একটি গর্তের নাম মাওবিকা (موبقا) ইমাম নূফ  বাক্বালী সূরা কাহাফ -এর وَجَعَلْنَا بَيْنَهُم مَّوْبِقًا (৫২ নং আয়াতের) ব্যাখ্যায় বলেছেন- “তাদের মধ্যখানে আমি স্থাপন করে রেখেছি “মাওবিক্বা” নামক গর্ত। ” ইমাম  বাক্বালী বলেন- মাওবিক্বা গর্তটি দুই দলের মধ্যখানে থাকবে। একদল হবে আহ্লে হক্ব বা সুন্নী  মোমেন গুনাহ্গার এবং অন্যদল হবে “আহ্লে দ্বালাল” বা ভ্রান্ত ও বাতিল দল”। (আত্ তাযকিরাহ্)। ব্যাখ্যাঃ আহ্লে সুন্নাতের গুনাহ্গার যদিও দোযখে যাবে- কিন্তু বাতিলপন্থী ৭২ ফের্কা থেকে আলাদা থাকবে। উভয় দলের মধ্যে পার্থক্য থাকবে দোযখেও। অথচ দুনিয়াতে আমরা তাদেরকে পৃথক করছিনা এবং  রাখছিনা। বড়ই আফসোস্! নবীজী বলেছেন- اياكم واياهم “তাদের থেকে পৃথক থাকো এবং তাদেরকে পৃথক করে রাখো”। (১১) দোযখের একটি নালার নাম গাই, (غنئی) عن  عائشۃ  رضی اللّٰہ عنھا  زوج النبی  ﷺ: انھا سئلت عن قول اللّٰہ عزوجل : (فسوف یلقون غیا) قالت : نھرفی جھنم۔ অর্থঃ “হযরত  আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ)- যিনি ছিলেন রাসুলেপাকের পবিত্রা স্ত্রী- তাঁকে কোরআন মজিদের সূরা মরিয়ম ৫৯ নম্বর আয়াতের ‘গাই’ শব্দের ব্যাখ্যা সম্পর্কে  জিজ্ঞাসা করা হয়। আয়াতটির অর্থ- “যারা নামায নষ্ট করে বা পড়েনা এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে- তারা অচিরেই প্রত্যক্ষ করবে “গাই”।  (সুরা মরিয়ম ৫৯ আয়াত)। উক্ত আয়াতের মধ্যে “গাই”  শব্দের ব্যাখ্যায় হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন- “গাই” হলো জাহান্নামের একটি নালার নাম”। বেনামাযী ও প্রবৃত্তি পুজারীরা ঐ নালার মল-মূত্রযুক্ত পঁচা পানি পান করবে। (১২) জাহান্নামের একটি কয়েদখানা বা গারদের নাম হবে ফালাক,( فلق) واختلفوا فی الفلق۔ فی قولہ تعالی ( قل  اعوذ برب الفلق) فروی ابن عباس انہ  سجن فی جھنم۔ فقال کعب: بیت فی جھنم۔ اذا فتح صاح جمیع اھل النار من شدۃ حرہ ۔ ذکرہ ابو نعیم۔ অর্থঃ “সূরা ফালাক্ব -এ বর্ণিত “ফালাক্ব” শব্দটির ব্যাখ্যা সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) -এর মতে “ফালাক্ব” হলো জাহান্নামের ভিতরে একটি গারদ বা  কয়েদখানা। কা’ব (রাঃ) বলেন- “ফালাক্ব” হলো জাহান্নামের একটি ভীষন গরম ঘর- যখন   তার দরজা খোলা হবে- তখন সমস্ত দোযখবাসী তার ভীষন গরম অনুভব করে চিৎকার করে উঠবে”। (তাযকিরাহ্ ৪৩৯ পৃষ্ঠা)। গারদ এবং গরম ঘর মূলতঃ একই জিনিস। (১৩) জাহান্নামের একটি বাসস্থানের নাম হবে হাওয়া (ھوأ), عن شقی الاصبحی قال:  ان فی جھنم قصرا۔ یدعی ھوأ۔ یرمی الکافر من  اعلاہ۔ فیھوی اربعین خریفا۔ قبل ان یبلغ اصلہ قال اللّٰہ تعالی (ومن یحلل علیہ غضبی۔ فقد ھوی) অর্থঃ শাকী আস্বাহী  (রহঃ) বলেছেন- জাহান্নামের একটি বাসস্থানের নাম হবে “হাওয়া”। কাফিরগণকে ঐ বিল্ডিংয়ের উপর হতে নীচের দিকে নিক্ষেপ করা হবে। সে ঐ বিল্ডিংয়ের  নীচে পৌঁছার পূর্বেই ৪০ বৎসর অতিক্রান্ত হয়ে যাবে। তিনি এর প্রমাণস্বরূপ কোরআন মজিদের  সূরা ত্বোয়াহা-৮১ আয়াত তিলাওয়াত  করলেন। আয়াতের  অর্থ হচ্ছে- “যার উপর আমার ক্রোধ নেমে আসবে, সে ধ্বংস হয়ে  যাবে”। -অত্র আয়াতে “হাওয়া” শব্দটির ব্যাখ্যা  হলো  বিশেষ আবাসস্থলের প্রতি ইঙ্গিত। (১৪) জাহান্নামের একটি গর্তের নাম “লমলম” এবং ঐ গর্তের কুপের নাম হবে “হাবহাব” , وذکرابو نعیم عن محمد بن واسع قال : دخلت یوما علی بلال بن ابی بردۃ۔ فقلت: یا بلال ان اباک حدثنی عن جدک عن رسول اللّٰہ ﷺ قال : ان فی جھنم وادیا یقال لہ لملم۔ ولذلک الواد بئر۔ یقال لہ ھبھب۔ حق علی اللّٰہ تعالی ان یسکنھا کل جبار۔ فایاک ان تکون منھم۔ অর্থঃ “মোহাদ্দেস আবু নোয়াঈম হাদীস বর্ণনা করেছেন মোহাম্মদ ইবনে ওয়াছে’ থেকে। তিনি বলেন- আমি একদিন বেলাল ইবনে আবু বুরদাহ্র ঘরে প্রবেশ করে বললাম- হে বেলাল, তোমার পিতা  আবু বোরদাহ্ তোমার দাদার  সূত্রে আমাকে একটি  হাদীস শুনিয়েছেন। নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “জাহান্নামের  একটি গারদের নাম হবে লমলম”। ঐ  লমলমের ভিতরে একটি কুপের নাম “হাবহাব”। আল্লাহ্পাকের দায়িত্ব হলো- ঐ লমলম  গারদের হাবহাব কুপে সমস্ত যুলুমবাজদের বাসস্থান ঠিক করা। তুমি তাদের অন্তর্ভূক্ত হয়োনা”। “হযরত আবু হোরায়রা বর্ণিত হাদীসে এরূপ এসেছে- “লমলম” গারদটি এতো উত্তপ্ত হবে যে, জাহান্নামের অন্যান্য গারদসমূহ এর উত্তাপ থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ্ চাইবে”। (১৫)  জাহান্নামের একটি কুপের নাম  “মান্ছা” (منسا), عن الحسین بن علی عن ابیہ  علی عن رسول اللّٰہ ﷺ انہ کل مسکر خمر۔ وثلاثۃ۔ غضب اللّٰہ علیھم۔ ولاینظر الیھم۔ ولا یکلمھم۔ وھم فی المنسا۔ بئر فی جھنم للمکذب بالقدر، والمبتدع فی دین اللّٰہ۔ ومدمن الخمر۔ ذکرہ الخطیب ابوبکر۔ অর্থঃ “হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) তাঁর পিতা হযরত আলী মোরতাদা (রাঃ) হতে, তিনি   রাসুলপাক (ﷺ) হতে  একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।  উক্ত  হাদীসে  নবী  করীম  (ﷺ) এরশাদ করেছেনঃ “প্রত্যেক নেশাজাতীয় দ্রব্য শরাবের ন্যায় হারাম। তিন ব্যক্তির উপর আল্লাহ্ রাগান্বিত হবেন, তাদের প্রতি রহতের দৃষ্টিতে দেখবেন না এবং তাদের সাথে কথাও বলবেন না। ঐ তিনব্যক্তি জাহান্নামের “মান্ছা” নামক একটি কুপে আযাব ভোগ করবে। ঐ তিনব্যক্তি  হলো (ক) তাক্বদীরে অবিশ্বাসী,  (খ) আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে কোরআন সুন্নাহ পরিপন্থী নতুন জিনিস সংযোজনকারী (গ) নিত্য  শরাবখোর”। (খতীব আবু  বকর এই হাদীসখানা ইমাম মালেক ইবনে আনাছ (রহঃ) হতে বর্ণনা করেছেন)। ১৬। নেশাখোর ও অহঙ্কারী ব্যক্তিদেরকে “বাওলিছ” নামক কয়েদখানায় জাহান্নামীদের গলিত পদার্থ পান করানো হবে عن  النبی ﷺ قال  : یحشر المتکبرون  یوم القیامۃ امثال الذر فی صورۃ الناس۔ یغشاھم الذل من کل مکان، یساقون الی سجن فی جھنم یسمی بولس ۔ تعلوھم نار الانیار، یسقون من عصارۃ اھل النار طینۃ الخبال ۔ اخرجہ الترمذی۔ وقال حدیث حسن۔ وفی البخاری ذلک لمن شرب المسکر۔ অর্থঃ (আমর ইবনে শোয়াইব তাঁর পিতা ও  দাদার মাধ্যমে) নবী করীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন- হুযুর   (ﷺ) এরশাদ করেছেন, “অহঙ্কারী ব্যক্তিদেরকে হাশরে উঠানো হবে ক্ষুদ্রাকারে  মানুষের সূরতে। অপমান তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ধরবে। তাদেরকে জাহান্নামের “বাওলিছ” নামক একটি কয়েদখানায় টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হবে। কঠিন আগুন তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। তাদেরকে  “ত্বীনাতুল খাবাল”- নামক জাহান্নামীদের রক্ত-পুঁজ মিশ্রিত শরবত পান করানো হবে”। (তিরমিযি) “বুখারী শরীফে নেশাখোরদের জন্য এই শাস্তির কথা উল্লেখ আছে”। উল্লেখ্যঃ জাহান্নামীদের শরীর থেকে যেসব রস বের হবে- তাকে “ত্বীনাতুল খাবাল” বলা হয়। (আত্ তাযকিরাহ্ পৃষ্ঠা ৪৪০)। (১৭) রিয়াকার ক্বারী ও অন্যান্য রিয়াকারদের জন্য জাহান্নামের “জুববুল হোযন” গর্ত নির্ধারিত, عن علی بن   ابی طالب  ص۔  عن النبی ﷺ قال : تعوذوا باللّہ من جب الحزن۔ فقیل: یا رسول اللّٰہ وما جب الحزن؟ قال: واد فی  جھنم۔ تتعوذ منہ جھنم فی کل یوم سبعین مرۃ۔ اعدہ اللّٰہ للقرأ المرائین۔  وفی روایۃ۔ اعدہ اللّٰہ للذین یرأون الناس باعمالھم۔ رواہ الترمذی ۔ অর্থঃ হযরত আলী ইবনে আবু তালেব  (রাঃ) থেকে রাসুলপাকের  হাদীস  বর্ণিত। নবী  করীম (ﷺ)  এরশাদ করেছেন- “তোমরা আল্লাহর কাছে ‘জুব্বুল হোযন’ থেকে পানাহ্ চাও।  আরয   করা হলো- “জুব্বুল হোযন” কী? হুযুর (ﷺ) এরশাদ  করলেন-  ইহা জাহান্নামের মধ্যে একটি প্রশস্ত বিরান ময়দানের নাম। জাহান্নাম প্রতিদিন  “জুব্বুল হোযন” থেকে আল্লাহর কাছে ৭০  বার পানাহ্ চায়”। (অন্য বর্ণনায় ৪০০ বারের  উল্লেখ আছে)।  জুব্বুল হোযন রিয়াকার ক্বারীদের জন্য তৈরী করা   হয়েছে”। অন্য এক রেওয়ায়াতে আছে- “লোক দেখানো আমলকারীদের জন্যও জুব্বুল হোযন তৈরী করা হয়েছে”। (তিরমিযি শরীফ)। তাই ক্বিরাত ও ইবাদত শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া চাই। (১৮) মন্দ ওলামাদের জন্য জাহান্নামের মধ্যে “আরহা” নামক স্থান নির্ধারিত, وقال ابو ھریرۃ ص ان فی جھنم ارحأ تدور بعلمأالسوء ۔ فیشرف علیھم بعض من کان یعرفھم فی الدنیا۔ فیقول: صیرکم الی ھذأ؟ وانما کنا نتعلم منکم ؟ قالوا: اناکنا نأمرکم بالامر ونخالفکم الی غیرہ۔ قال القرطبی: ھذا مرفوع معناہ فی صحیح مسلم من  حدیث اسامۃ بن زید ؓ ۔ অর্থঃ “হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ)   বলেছেন- জাহান্নামে “র্আহা” নামক একটি নিকৃষ্ট স্থান আছে- মন্দ আলেমদেরকে উহা ঘেরাও করে রাখবে। দুনিয়াতে তাদের পরিচিত লোকেরা তাদের দিকে উঁকি মেরে দেখবে এবং জিজ্ঞেস  করবে- কোন্   আমল আপনাদেরকে এ অবস্থায় নিয়ে এসেছে? আমরা তো আপনাদের নিকট থেকে অনেক কিছু শিখ্তাম? মন্দ ওলামাগণ জওয়াব  দিবে- আমরা তোমাদেরকে আদেশ করতাম এক কাজের- কিন্তু করতাম তোমাদের বিপরীত কাজ”। আল্লামা কুরতুবী (রহঃ) বলেন- হযরত আবু হোরায়রা বর্ণিত  এই মউকুফ হাদীসখানাই সরাসরি নবীজীর মারফু’ হাদীস হিসাবে মুসলিম শরীফে বর্ণনা করেছেন হযরত উছামা ইবনে যায়েদ (রাঃ)। (১৯) গুনাহের পরিমানে দোযখ শরীরের বিভিন্ন অংশ পোড়াবে, عن سمرۃ بن جندب ص۔ ان النبی ﷺ قال: منھم من تأخذہ النار الی رکبتیہ۔ ومنھم من تأخذہ النار الی کعبیہ۔ ومنھم من تأخذہ النار الی حجزتہ۔ ومنھم من تأخذہ النار الی ترقوتہ ۔ رواہ مسلم (مشکوۃ) অর্থঃ “হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত- রাসুলপাক (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “দোযখ কারো পায়ের টাখ্নু বা গিরা পর্য্যন্ত আগুনে জ্বালাবে। কারো হাঁটু পর্য্যন্ত, কারো কোমর বা লুঙ্গি পরার স্থান পর্য্যন্ত এবং  কারো গলা পর্য্যন্ত আগুনে জ্বালাবে”। (মুসলিম সূত্রে মিশকাত)। (২০) জাহান্নামী কাফিরদের শরীর হবে বিশালাকার, عن  ابی ھریرۃ  ص۔ قال : قال  رسو ل اللّٰہ ﷺ: ما بین منکبی الکافر  فی النار مسیرۃ ثلاثۃ ایام للراکب المسرع وفی روایۃ۔ ضرس  الکافر مثل احد۔ وغلظ جلدۃ مسیرۃ ثلاث۔ رواہ مسلم (مشکوۃ) অর্থঃ “হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন-  রাসুল  (ﷺ) এরশাদ করেছেন, “দোযখবাসী কাফেরদের দু‘কাধের মধ্যবর্তী পরিধি হবে দ্রুতগামী অশ্বারোহী ব্যক্তির তিনদিনের রাস্তার সমান”। অন্য বর্ণনায় এসেছে- “কাফেরদের পাটির দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের ন্যায় এবং শরীরের চামড়ার  পূরুত্ব হবে তিনদিনের  রাস্তার সমান”। (মুসলিম শরীফ থেকে মিশকাত)। (২১) কাফিরদের শরীরের বিভিন্ন অংশের সাইজ হবে অদ্ভুত ধরণের এবং বিভিন্ন রকমের, عن  ابی  ھریرۃ ص۔  قال: قال رسول اللّٰہ ﷺ: ضرس الکافر یوم القیامۃ مثل احد۔ وفخذہ مثل البیضأ ومقعدہ من النار مسیرۃ ثلث مثل الزبدۃ ۔ رواہ الترمذی (مشکوۃ) অর্থঃ “হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেনঃ “কিয়ামতের দিন কাফিরদের পাটির দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের মত বড়, উরু হবে ‘বাইদা’ নামক পাহাড় বা স্থানের ন্যায়, বসার জায়গা হবে “রাব্যা” নামক পল্লীর দূরত্বের সমান”। (তিরমিযি হতে মিশকাত)। ব্যাখ্যাঃ মদিনা মোনাওয়ারা  হতে তিন দিনের (৫৭ মাইল) রাস্তার মাথায় “রাব্যা”  পল্লী অবস্থিত। এই নিভূত  পল্লীতে হযরত আবু যর গিফারী (রাঃ) কে নির্বাসিত করেছিলেন হযরত ওসমান (রাঃ)। তিনি ছিলেন দুনিয়া বিমুখী এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত সমস্ত সম্পদ দান করে  দেয়ার প্রবক্তা। এতে করে যাকাত প্রথা বন্ধ হয়ে যাবে এবং ব্যক্তিগত সঞ্চয়ও  নিষিদ্ধ হয়ে যাবে-  যা ছিল ইসলামের অর্থনীতির বিপরীত মতবাদ।  এ কারণেই ফিৎনার আশংকায় হযরত ওসমান  (রাঃ) তাঁর খেলাফতকালে তাঁকে লোকালয় থেকে দূরে “রাব্যা” নামক নিভূত পল্লীতে সসম্মানে নির্বাসিত করেন- যাতে মানুষের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি না হয় এবং  ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর বিরূপ প্রভাব না  পড়ে। ইহা বিদ্বেষ প্রসূত ছিলনা। বি: দ্র: চীন ও রাশিয়াপন্থী সাম্যবাদী দল হযরত আবু যর গিফারীর  ফকিরী মতবাদকে তাদের সাম্যবাদী নীতির পক্ষে ব্যবহার করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যারা ইসলামই মানে না, তারা হযরত আবু যরের দোহাই দেয়(?)। মাওলানা ভাসানীর  ন্যাপ  ও মুজাফফর ন্যাপ সামাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রবর্তনে আবু যর সাহাবীর ফকিরী নীতি বা যুহ্দ নীতিকে তাদের জন্য ফরয করে নিয়েছে- যা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ন অমুলক নীতি। এতে ব্যক্তিগত সম্পদ ও সঞ্চয়নীতির ইসলামী বিধানকে অস্বীকার করা হয়েছে। তাই এটা পরিত্যাজ্য।  খোলাফায়ে রাশেদার  নীতি হলো গ্রহণযোগ্য। অতএব হযরত ওসমান (রাঃ) ইসলামী সমাজকে রক্ষা করার জন্য হযরত আবু যর গিফারী (রাঃ) কে একাকী ও সমাজচ্যুত অবস্থায় থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। উহা বিদ্বেষ প্রসূত ছিল না।   কিন্তু সমাজতন্ত্রী কথিত মুসলমানেরা হযরত ওসমান (রাঃ) এর বিরুদ্ধে এটাকে অজুহাত হিসাবে দাঁড় করে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। সমাজতন্ত্রী হয়ে ইসলামের নামে অগ্রহনযোগ্য মতবাদ নিয়ে মুসলমানদেরকে  ধোকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে ন্যাপ প্রবক্তারা। এটা তাদের প্রতারণা। খোলাফায়ে রাশেদার নীতি তারা মানছেনা কেন? (২২) কোন কোন কাফেরের শরীর হবে বিশালাকার, عن ابی ھریرۃ ص۔ قال:   قال  رسول اللّٰہ ﷺ: ان  غلظ جلد الکافر اثنان واربعون ذراعا  ۔ وان ضرسہ مثل احد وان مجلسہ من جھنم ما بین  مکۃ  والمدینۃ۔رواہ الترمذی (مشکوۃ) অর্থঃ “হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন- নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “কোন কোন কাফেরের শরীরের  চামড়ার পুরুত্ব হবে ৪২ গজ, তাদের দাঁতের পাটি হবে উহুদ পাহাড়ের ন্যায়, তাদের উরু হবে মক্কা  মদিনার দূরত্বের সমান”। (তিরমিযি হতে মিশকাত)। (২৩) কাফিরদের জিহ্বা হবে দুই ‘ফারছক’ লম্বা, عن  ابن   عمر ص۔ قال: قال رسول  اللّٰہ ﷺ: لیسحب  لسانہ الفرسخ۔  والفرسخین۔ یتوطاہ الناس ۔ رواہ احمد والترمذی۔ অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে নবী করীম  (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “দোযখী কাফিরের জিহ্বা হবে এক ফারছাখ মতান্তরে- দুই ফারছাখ লম্বা। এর উপর দিয়ে লোকেরা চলাচল করবে”। (ইমাম আহমদ ও তিরমিযি)। ব্যাখ্যাঃ ফরছাখ বলা হয় তিন মাইল  সমান রাস্তা। এরূপ এক ফারছাখে হয় তিন মাইল, দুই ফারছাখে হয় ৬ মাইল সমান রাস্তা। এই ব্যবধান  হবে ব্যক্তি বিশেষের। কাফিরদের অপমানের এই চিত্রটি হলো হাদীসের মূল উদ্দেশ্য। আল্লাহ্ আমাদেরকে কুফরী থেকে আশ্রয় দান করুন। (২৪) দোযখবাসীর মাথায় গরম পানি ঢালা হবে, عن ابی ھریرۃ ص۔ عن النبی ﷺ قال: ان الحمیم لیصب علی رؤسھم۔ فینفذ الحمیم۔ حتی یخلص الی جوفہ۔فیسلت ما فی جوفہ حتی یمرق من قدمیہ ۔وھوالصھر ۔ثم یعاد کما کان۔ رواہ الترمذی۔ অর্থঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে আল্লাহর প্রিয় রাসুল (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “দোযখীদের মাথায় গরম ও উত্তপ্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে। ঐ পানি তার পেটে গিয়ে পৌঁছবে এবং আঁতুড়ি সহ দুই পায়ের মধ্যখান দিয়ে বের হয়ে আসবে। এই  পানি জুলাফের ন্যায় কাজ করবে। আবার পূর্বের ন্যায় মাথায় ঢালা হবে”। (তিরমিযি সূত্রে মিশকাত)। (২৫) উলঙ্গ ও বে-পর্দা নারীদের শাস্তি, روی مالک عن مسلم عن ابی صالح عن ابی ھریرۃ ص۔ انہ قال: نساء کاسیات عاریات۔ مائلات ممیلات۔ لایدخلن  الجنۃ ولا یجدن ریحھا۔ وان ریحھا یوجد من مسیرۃ خمسمأۃ سنۃ۔ অর্থঃ হযরত মালেক মুসলিম হতে, তিনি আবু সালেহ্ থেকে, তিনি হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন- “এমন ধরণের কিছু  মুসলিম মহিলা রয়েছে- যারা পোষাক পরিধান করা সত্বেও উলঙ্গ। পরপুরুষের দিকে তারা ঝুঁকে পড়ে এবং পরপুরুষকেও নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করে। তারা (প্রাথমিকভাবে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং জান্নাতের সুগন্ধও পাবেনা। জান্নাতের সুগন্ধ পাওয়া যাবে পাঁচশত বৎসর   দুরের রাস্তা থেকে”। (তাযকিরাহ্ ৫৩০ পৃষ্ঠা)। (২৬) জাহান্নামে সাপ ও বিচ্চু দংশন করবে, عن عبد اللّٰہ بن الحارث بن جزء قال: قال رسول اللّٰہ ﷺ ان فی النارحیات کامثال البخت ۔تلسع احدا ھن اللسعۃ۔ فیجد حموتھا  اربعین خریفا  ۔وان فی النار عقارب کامثال  البغل المؤتفکۃ۔ تلسع احدٰا ھن اللسعۃ  ۔فیجد حموتھا اربعین خریفا۔ رواہ احمد (مشکوۃ) অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে হারেছ ইবনে জায্ইন থেকে বর্নিত- তিনি   বলেনঃ   নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “দোযখের মধ্যে খোরাসানী উটের ন্যায় বিশাল বিশাল উঁচু সাপ রয়েছে। উক্ত একটি সাপ এমন জোরে দংশন করবে যে,  দোযখবাসী তার তীব্র ব্যথা ৪০ বৎসর পর্য্যন্ত অনুভব করবে। দোযখে আরো  থাকবে লাগামযুক্ত খচ্চরের  ন্যায় বিরাট বিরাট বিচ্চু। উক্ত বিচ্চুর এক একটি  এমন জোরে দংশন করবে যে, দোযখবাসী উহার তীব্র ব্যথা ৪০ বৎসর পর্য্যন্ত অনুভব করবে”। (ইমাম আহমদের মুসনাদ সূত্রে- মিশকাত)। (২৭) কাফেরদের পোশাক হবে আগুনের এবং পানীয় হবে ফুটন্ত পানি - আল্লাহ্পাক কোরআন মজিদের সূরা হজ্বের ১৯-২২ নম্বর আয়াতাংশে এরশাদ করেন- فَالَّذِينَ كَفَرُوا قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِّن نَّارٍ يُصَبُّ مِن  فَوْقِ رُءُوسِهِمُ الْحَمِيمُ - يُصْهَرُ بِهِ مَا فِي بُطُونِهِمْ وَالْجُلُودُ - وَلَهُم مَّقَامِعُ مِنْ حَدِيدٍ - كُلَّمَا أَرَادُوا أَن يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا فِيهَا وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ অর্থঃ “আল্লাহ্ বলেন- অতএব যারা কাফের- তাদের শরীরের মাপে আগুনের পোষাক  তৈরী করা হবে। তাদের মাথার উপর ফুটন্ত তপ্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে। ফলে তাদের পেটে যা আছে- তা এবং চর্ম গলে বের হয়ে যাবে। তাদের জন্য আছে লোহার হাঁতুড়ী। তারা যখনই যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে- তখনই তাদেরকে হাতুড়ী মেরে তথায় ফিরিয়ে দেয়া হবে। আর বলা হবে- “দহনশাস্তি ভোগ করো”। (সূরা হজ্ব ১৯-২২ আয়াত)। (২৮) কাফেরদের পায়জামা হবে আলকাত্রার, আল্লাহ্ পাক বলেন- سَرَابِيلُهُم مِّن قَطِرَانٍ وَتَغْشَى وُجُوهَهُمْ النَّارُ “তাদের পায়জামা হবে আলকাত্রার এবং  আগুন তাদের মুখমন্ডল জ্বালিয়ে দিবে”। (সূরা ইবরাহীম ৫০ আয়াত)। (২৯) কাফেরদের খাদ্য হবে কাঁটাদার যাক্কুম বৃক্ষ - আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন, إِنَّ شَجَرَتَ الزَّقُّومِ - طَعَامُ الْأَثِيمِ - كَالْمُهْلِ يَغْلِي فِي الْبُطُونِ অর্থঃ “নিশ্চয়ই যাক্কুম বৃক্ষ পাপীদের খাদ্য হবে। গলিত তামার মত পেটে তা ফুটতে থাকবে”। (সুরা দোখান ৪২, ৪৩, ৪৪)। ব্যাখ্যাঃ আল্লামা কুরতুবী বলেন-  এই শাস্তি হবে কাফেরদের।  জাহান্নামে প্রবেশের পূর্বে তাদেরকে কাঁটাদার যাক্কুম বৃক্ষ খাওয়ানো হবে। তারপর টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হবে। (৩০) কাফির ও বাতিলপন্থী সীমা লংঘনকারীদের জন্য থাকবে গরম পানীয় এবং পুঁজ আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন, إِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا - لِّلطَّاغِينَ مَآبًا - لَّابِثِينَ فِيهَا أَحْقَابًا - لَّا يَذُوقُونَ فِيهَا بَرْدًا وَلَا شَرَابًا - إِلَّا  حَمِيمًا وَغَسَّاقًا - جَزَاءً وِفَاقًا অর্থঃ “নিশ্চয়ই জাহান্নাম প্রতীক্ষায় থাকবে  সীমা লংঘনকারীদের আবাসস্থল  রূপে। তারা সেখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী অবস্থান করবে। সেখানে তারা না পাবে শীতল পানীয় এবং না পান করবে পানীয়- বরং পাবে তথায়  ফুটন্ত পানি এবং পুঁজপরিপূর্ন পানীয়- পরিনাম হিসাবে”। (সুরা নাবা ২১-২৬ আয়াত)। ব্যাখ্যাঃ طَّاغِينَ অর্থ সীমা লংঘনকারী। এরা দুই শ্রেণীর (১) কাফির (২) বাতিল ও ভ্রান্তদল- যেমন খারেজী, রাফেযী, শিয়া, মো’তাযেলা, ওহাবী, মওদূদী- ইত্যাদি বাতিল ফের্কা (তাফসীরে মাযহারী)। (৩১) কাফেরদেরকে পুঁজমিশ্রিত পানি পান করানো হবে - আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন- إِنَّا أَعْتَدْنَا  لِلظَّالِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ  سُرَادِقُهَا وَإِن يَسْتَغِيثُوا يُغَاثُوا بِمَاء كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوهَ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَاءتْ مُرْتَفَقًا অর্থঃ “নিশ্চয়ই আমি যালেম তথা- কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি এমন আগুন-  যার চতুর্দিকের দেওয়াল বা বেষ্টনী তাঁদেরকে বেষ্টন করে রাখবে। যদি তারা পানীয় প্রার্থনা করে- তাহলে পুঁজমিশ্রিত পানীয় পরিবেশন করা হবে- যা তাদের মুখমন্ডলকে দগ্ধ করে দেবে। ঐ  পানীয় কতই না নিকৃষ্ট  এবং তাদের আশ্রয়স্থল কতই না  মন্দ”। (সূরা  কাহ্ফ ২৯ আয়াতাংশ)। (৩২) ঈমানশুন্য আমলকারী এবং কাফেরদের খাদ্য হবে কাঁটাদার গুল্ম এবং  পানীয় হবে ফুটন্ত নহরের পানি - আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন, عَامِلَةٌ نَّاصِبَةٌ - تَصْلَىٰ نَارًا حَامِيَةً - تُسْقَىٰ مِنْ عَيْنٍ آنِيَةٍ - لَّيْسَ لَهُمْ طَعَامٌ إِلَّا مِن  ضَرِيعٍ - لَّا يُسْمِنُ وَلَا يُغْنِي مِن جُوعٍ অর্থঃ “সেদিন ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত  অনেক আমলকারীরা জ্বলন্ত আগুনে পতিত হবে। তাদেরকে ফুটন্ত নহর  থেকে পানি পান করানো হবে। কন্টকপুর্ণ লতা-গুল্ম ছাড়া তাদের জন্যে অন্য কোন খাদ্য থাকবে না। এ খাদ্য তাদেরকে পুষ্টও করবে না এবং তাদের ক্ষুধাও নিবারন করবে না”। (সূরা গাশিয়াহ্ ৩-৭ আয়াত)। ব্যাখ্যাঃ আল্লামা কুরতুবী তাঁর “জামেউল আহ্কাম” তাফসীর  গ্রন্থে বলেছেন- “আমিলাতুন নাছিবাতুন” বলতে দুই ধরণের লোককে বুঝানো হয়েছে। যথা- (১) ঐসব কাফের- যারা দুনিয়াতে কুফরী ও শিরিকী অবস্থায় অনেক ইবাদত বন্দেগী  করতো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ  করার উদ্দেশ্যে এবং এতে অসাধারণ পরিশ্রম করতো। কিন্তু এতসব পরিশ্রম পরকালে পণ্ড হয়ে যাবে। এসব ইবাদত- বন্দেগী পুরস্কার লাভের যোগ্য হবে না। (২) মুসলমানদের মধ্যে যাদের আক্বিদা  ও বিশ্বাস বাতিল এবং কুফরী সীমায়  পৌঁছেছে- তারাও উক্ত আয়াতের অন্তর্ভূক্ত।  খারেজীরা ইবাদত বন্দেগীতে সুন্নত পন্থীদের ছাড়িয়ে যায়।  তাদের  কোরআন তিলাওয়াত, নামায ও রোযা  দেখলে সাহাবীরাও লজ্জিত হয়। কিন্তু তারা ঈমানশুন্য হবে বদ আক্বিদার কারণে।  তাদের থেকে ঈমান এমনভাবে বের হয়ে যাবে- যেভাবে তীর বের হয়ে যায়  শিকারকে ভেদ করে। (বুখারী- হযরত আলী  সূত্রে বর্ণিত হাদীস)। এসব নামধারী বাতিল পন্থীরাও অত্র আয়াতের অন্তর্ভূক্ত (কুরতুবী)। বিঃ দ্রঃ হযরত ইব্রাহীম (আঃ)- এর উপর নাযিলকৃত ছহিফায় লিখিত ছিল-“সফল জীবন হলো ঐ জীবন- যার দৈনন্দিন কাজের মধ্যে একভাগ যিকিরে, একভাগ ফিকিরে এবং একভাগ জীবিকা অর্জনে কাটে”। হযরত আবু যর গিফারী (রাঃ) বর্ণিত  হাদীসে রাসুলেপাক (ﷺ) একথা  বলেছেন। সুতরাং এভাবেই ইবাদত করতে হবে। (৩৩) অবিশ্বাসীদের সুহৃদ কেউ হবে না এবং কোন সুখাদ্যও তারা পাবে না - আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন- فَلَيْسَ لَهُ الْيَوْمَ هَاهُنَا حَمِيمٌ - وَلَا طَعَامٌ إِلَّا مِنْ غِسْلِينٍ অর্থঃ “সেদিন অবিশ্বাসীদের জন্য হবে না কোন সুহৃদ বন্ধু, আর পাবে না তারা গিসলীন ব্যতিত অন্য খাদ্য”। (সূরা হাক্কাহ্ ৩৫-৩৬ আয়াত)। ব্যাখ্যাঃ  غِسْلِينٍ বলা হয় ঐ নোংড়া পানিকে-যদ্বারা জাহান্নামীদের  ক্ষতের পুঁজ ধৌত করা হবে। অর্থাৎ কাফিরদের খাদ্য ও পানীয় হবে পুঁজ-বিধৌত পানি। حَمِيمٌ অর্থ সুহৃদ বন্ধু। জাহান্নাম থেকে রক্ষা করার মত ঐদিন কোন সুহৃদ বন্ধু  থাকবে না এবং পুঁজবাহিত পানীয় ছাড়া অন্য কোন সুপেয় পানিও পাওয়া যাবে না তথায়। আল্লামা কুরতুবী বলেন- উপরে বর্ণিত ২৭ হতে ৩৩ নম্বর পর্য্যন্ত আয়াত সমূহে কাফির ও বদ্ আক্বিদা পোষনকারীদের  শাস্তির  কথা বলা  হয়েছে। গুনাহ্গারদের শাস্তি হবে অন্য রকম- কিছুটা হাল্কা। (তাযকিরাহ্)। (৩৪) জাহান্নামীদের ৫টি  প্রার্থনার জওয়াব দিয়ে আল্লাহ্পাক তাদের সাথে কথা বন্ধ করে দেবেন। ইমাম বায়হাকী  মুহাম্মদ ইবনে কা’ব কুরযীর সূত্রে বর্ণনা করেছেনঃ জাহান্নামীরা ৫টি প্রার্থনা  করবে। তন্মধ্যে ৫ টির জওয়াব আল্লাহ্পাক দিবেন। এরপর তাদের সাথে আর কোনদিন কথা বলবেন না। যথাঃ (ক) কাফেরগণ প্রার্থনা করবে, رَبَّنَا أَمَتَّنَا اثْنَتَيْنِ وَأَحْيَيْتَنَا اثْنَتَيْنِ فَاعْتَرَفْنَا بِذُنُوبِنَا فَهَلْ إِلَىٰ خُرُوجٍ مِّن سَبِيلٍ অর্থঃ “তারা প্রার্থনা করবে- হে আমাদের  রব! তুমি আমাদের দু’বার মৃত্যু দিয়েছো এবং  দু’বার জীবন দিয়েছো। এখন আমরা আমাদের অপরাধ  স্বীকার করছি। অতঃপর এখনও নিস্কৃতির কোন উপায় আছে কী”? আল্লাহ্পাক জওয়াবে বলবেন, ذَٰلِكُم بِأَنَّهُ إِذَا دُعِيَ  اللَّهُ وَحْدَهُ كَفَرْتُمْ ۖ وَإِن يُشْرَكْ بِهِ تُؤْمِنُوا ۚ فَالْحُكْمُ لِلَّهِ الْعَلِيِّ الْكَبِيرِ অর্থঃ “তোমাদের এই বিপদ এ কারণে যে, যখন এক আল্লাহর দিকে ডাকা হতো- তখন তোমরা অস্বীকার করতে। আর যখন আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করা হতো- তখন  তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করতে। এখন একমাত্র আদেশ আল্লাহর- যিনি সর্বোচ্চ ও সুমহান”। (সুরা মুমিন যথাক্রমে ১১ ও ১২ আয়াতে)। (খ) এরপর কাফেরগণ আবার প্রার্থণা করবে, رَبَّنَا أَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا إِنَّا مُوقِنُونَ অর্থঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা এখন দেখেছি এবং শুনেছি বর্তমান অবস্থা  সম্পর্কে। আমাদেরকে পুনরায় দুনিয়ায় ফেরত পাঠিয়ে দিন- যাতে আমরা সৎ আমল করতে পারি এবং দৃঢ়বিশ্বাসী  হতে পারি”। (সিজদা ১২ আয়াত) জবাবে আল্লাহ্পাক বলবেন, فَذُوقُوا بِمَا نَسِيتُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَٰذَا إِنَّا نَسِينَاكُمْ ۖ وَذُوقُوا عَذَابَ الْخُلْدِ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ অর্থঃ “অতএব এ দিবসকে ভুলে থাকার কারণে এখন তোমরা মজা আস্বাদন করো। আমিও তোমাদেরকে ভুলে গিয়েছি। তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের বিনিময়ে চিরস্থায়ী শাস্তি ভোগ করতে থাকো”। সূরা সিজদাহ্ ১৪ আয়াত)। (গ) এরপর কাফিরগণ পুনরায় প্রার্থনা করবে, فَيَقُولُ  الَّذِينَ ظَلَمُواْ رَبَّنَا أَخِّرْنَا إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ نُّجِبْ دَعْوَتَكَ وَنَتَّبِعِ الرُّسُلَ অর্থঃ “যালেমরা  বলবে- হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে আরেকবার সামান্য সুযোগ দাও- যাতে তোমার আহ্বানে সাড়া দিতে পারি  এবং নবীগণের অনুসরণ করতে পারি”। (ছুরা ইব্রাহীম ৪৪ আয়াত  প্রথমাংশ) জবাবে আল্লাহ্পাক বলবেন- أَوَلَمْ تَكُونُواْ أَقْسَمْتُم مِّن قَبْلُ مَا لَكُم مِّن زَوَالٍ অর্থঃ “তোমরা কি ইতিপূর্বে কসম করে বলতেনা যে, তোমাদেরকে এ দুনিয়া ছেড়ে যেতে হবে না”? (সুরা ইব্রাহীম ৪৪ আয়াত শেষাংশ)। (ঘ) এরপর কাফিরগন পুনরায় প্রার্থনা করবে, وَھُمْ. ﯾَﺻْطَرِﺧُونَ. ﻓِﯾﮭَﺎ. رَﺑﱠﻧَﺎ. أَﺧْرِﺟْﻧَﺎ. ﻧَﻌْﻣَلْ. ﺻَﺎﻟِﺣًﺎ. ﻏَﯾْرَ. اﻟﱠذِي. ﮐُﻧﱠﺎ. ﻧَﻌْﻣَلُ অর্থঃ “তারা জাহান্নামে আর্তচিৎকার করে বলবে- হে আমাদের রব! আমাদেরকে  বের করে দুনিয়াতে পাঠাও। সেখানে  গিয়ে আমরা পূর্বের কুকাজ ছেড়ে দিয়ে তার বিপরীতে সৎকাজ করবো”। (ফাত্বির ৩৭ আয়াত প্রথমাংশ)। জবাবে আল্লাহ্পাক বলবেন, أَوَلَمْ نُعَمِّرْكُم مَّا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَن تَذَكَّرَ وَجَاءكُمُ النَّذِيرُ فَذُوقُوا فَمَا لِلظَّالِمِينَ مِن نَّصِيرٍ অর্থঃ “আমি কি তোমাদেরকে এতটা বয়স দেইনি যে, যা চিন্তা করার বিষয়- তা চিন্তা করতে পারতে? উপরন্তু তোমাদের নিকট  সতর্ককারীও গিয়েছিলেন। এখন শাস্তির মজা ভোগ করো।  যালেমদের  কোনই সাহায্যকারী  নেই”। (সুরা ফাত্বির ৩৭ আয়াত  শেষাংশ)। (ঙ) তারপর কাফিরগণ পুনরায় প্রার্থনা করবে, رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَيْنَا شِقْوَتُنَا وَكُنَّا قَوْمًا ضَالِّينَ অর্থঃ “হে আমাদের পালনকর্তা!  আমরা দূর্ভাগ্যের হাতে পরাভূত ছিলাম এবং  আমরা ছিলাম বিভ্রান্ত জাতি”। (ছুরা মুমিনুন ১০৬ আয়াত)। জবাবে আল্লাহ্পাক বলবেন, قَالَ اخْسَؤُوا فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ অর্থঃ “তোমরা ধিকৃত অবস্থায় এখানেই পড়ে থাকো। আমার সাথে আর কোন কথা বলো না”। (সূরা মুমিনুন ১০৮ আয়াত)। উল্লেখ্যঃ  আল্লাহ্পাক কত ধৈর্যশীল!  কাফেরগন যতবারই প্রার্থনা করবে- ততবারই তিনি ধৈয্যের সাথে তাদের জবাব  দিবেন। ৫ম বারে শেষ কথা বলে দিবেন- “আমার সাথে আর কোন কথা হবে না”। (৩৫) জাহান্নামের ক্ষুধা, مسلم عن انس عن النبی ﷺ قال: تزال جھنم یلقی۔ وتقول: ھل من مزید ؟ حتی یضع رب العزۃ قدمہ فیھا۔  فینزوی بعضھا الی بعض وتقول: قط قط ۔ অর্থঃ হযরত আনাছ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “জাহান্নামে লোক নিক্ষেপ  করে ভর্তি  করা হতে থাকবে- আর জাহান্নাম বলতে থাকবে “আরো বেশী চাই”। অতঃপর  আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জত জাহান্নামে কুদ্রতি কদম (তৃপ্তিশক্তি) রাখবেন। এতে জাহান্নামের একাংশ অন্যঅংশের উপর লাফিয়ে  পড়বে- আর বলবে- যথেষ্ঠ, যথেষ্ঠ”। (মুসলিম)। ব্যাখ্যাঃ জাহান্নামে লোক নিক্ষেপ করা হবে পর্যায়ক্রমে এবং দলে দলে। এতে জাহান্নামের ক্ষুধার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে। সে ক্ষুধার জ্বালায় ‘আরো চাই’ বলতে থাকবে। যখন লোকে ভর্তি হয়ে যাবে, তখন সে তৃপ্ত হয়ে বলবে “যথেষ্ঠ হয়েছে”।  ইহাকেই খোদার “কুদরতি কদম স্থাপন” বলা হয়েছে। মুজাহিদ ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে-  “জাহান্নাম  প্রথমদিকে বলবে- আরোও আছে কি? পরিপূর্ণ হওয়ার পর  বলবে-“ক্বাতক্বাত”-অর্থাৎ “যথেষ্ঠ”।  ইহাই হাদীসের ব্যাখ্যা। এর প্রমাণ হলো কোরআন মজিদের আয়াত تکاد تمیز من الغیظ۔ অর্থাৎঃ “জাহান্নাম গোস্বায় পেঁচ খেতে থাকবে”। অতঃপর নির্ধারিত  সবলোকে ভর্তি হয়ে গেলে তার ক্ষুধা মিটে যাবে। এই ক্ষুধা মিটে যাওয়াকেই “আল্লাহর পা রাখা” বলা হয়েছে। আল্লাহর তো কোন হাত-পা নেই- তিনি নিরাকার। অতএব হাত  পায়ের উল্লেখ যেখানেই আছে- সেখানেই “শক্তি”, তৃপ্তি,  করুণা ইত্যাদি ব্যাখ্যা করতে হবে। যেমন- হাদীস শরীফে এসেছে- “আল্লাহ্পাক নবীজীর দু’কাঁধে “আপন হাত” রাখলেন- যার ফলে হুযুর (ﷺ) এর অন্তর শীতল হয়ে গেল”। এ কথার অর্থ হাত রাখা নয়- বরং “দানের হাত” রাখা বুঝায়। বাংলাতেও এ ধরণের রূপক কথার প্রচলন  আছে। যেমন- “দানের হাত বাড়িয়ে দিন”। এ কথার অর্থ হাত বাড়ানো নয়- বরং দানের পরিমান বৃদ্ধি করা বা সর্বান্তকরনে দান করা। (কুরতুবী ৪৬৫ পৃষ্ঠা)। যারা আল্লাহর হাত-পা বিশ্বাস করে- তারা কাফের। যেমন- ইবনে তাইমিয়া ও ইবনে কাইয়েম।  দেখুন- কিতাবুর রুহ্ শেষ অধ্যায়। সে খোদার হাত-পা স্বীকার করেছে। (৩৬) রাসুলকরিম (ﷺ) জানেন- কে সর্বশেষ জাহান্নাম থেকে বের হয়ে সর্বশেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে, مسلم عن عبد اللّٰہ بن مسعود قال: قال  رسول اللّٰہ ﷺ انی لاعلم آخر اھل النار خروجا منھا۔ واخر اھل النار دخولا الجنۃ۔ رجل یخرج من النار حبوا فیقول اللہ تعالی: اذھب۔ فادخل الجنۃ۔ فیأتیھا۔ فیخیل  الیہ انھا ملائی۔ فیرجع۔ فیقول: یارب وجدتھا ملائی۔ فیقول: اذھب فادخل الجنۃ۔ فان لک مثل الدنیا وعشرۃ امثالھا اوان لک عشرۃ امثال الدنیا ۔ قال: فیقول: اتسخر  بی؟ او اتضحک بی۔ وانت الملک؟  قال: لقد رأیت رسول اللّٰہﷺ ضحک۔ حتی بدت نواجذہ۔ قال : فکان یقال ذلک ادنی اھل الجنۃ منزلۃ۔ অর্থঃ মুসলিম শরীফে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে    বর্ণিত হাদীসে  নবী করীম (ﷺ) এরশাদ  করেছেন- “নিশ্চয়ই আমি ভাল করে জানি- কোন্ ব্যক্তি সর্বশেষ জাহান্নাম থেকে বের হয়ে সর্বশেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ঐ ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে হাতে ও  হাঁটুতে ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নাম থেকে বের হবে।  আল্লাহ্ তাকে বলবেন- যাও! তুমি বেহেস্তে প্রবেশ করো। সে জান্নাতের নিকটে এসে খেয়াল করবে- যেন জান্নাত লোকে ভর্তি হয়ে গেছে। সে বলবে, হে রব, আমি তো জান্নাতকে লোকে পরিপূর্ন দেখছি।  (কোনটি খালী দেখছিনা)। আল্লাহ্ বলবেন-  যাও, জান্নাতে প্রবেশ করো। সে ফিরে এসে পূর্বের ন্যায়ই বলবে- জান্নাত পূর্ন হয়ে গেছে। আল্লাহ্ আবার বলবেন- যাও, জান্নাতে প্রবেশ করো। সে জান্নাতের নিকটে গিয়ে  পুনরায় ফিরে এসে  বলবে- হে রব, জান্নাত তো পূর্ন হয়ে গেছে। এবার আল্লাহ্পাক বলবেন- যাও, জান্নাতে  প্রবেশ করো। আমি তোমার  জন্য দশটি দুনিয়ার সমান জায়গা জান্নাতে বরাদ্দ করে রেখেছি। ঐ লোকটি তখন আশ্চর্য হয়ে বলবেঃ হে আমার রব, তুমি কি  আমার সাথে ঠাট্টা করছো? তুমি কি আমার  সাথে হাসি তামাশা র্কছো? তুমি তো জান্নাতের মহান মালিক! হযরত ইবনে মাসউদ বলেন- আমি দেখতে পেলাম- নবী  করীম (ﷺ) এ পর্য্যন্ত বলেই হেসে  ফেললেন। এমন  কি- তাঁর দু পাটির দন্ত মোবারক প্রকাশ হয়ে পড়লো- অর্থাৎ তিনি খোলা মনে তৃপ্তির  হাসি হাসলেন। রাবী বলেন- ইহাই হবে  জান্নাতীদের জন্য সবচেয়ে  কম বরাদ্দকৃত জায়গা” (মুসলিম শরীফ  সূত্রে  আত্-তাযকিরাহ্ পৃষ্ঠা  ৪৬৬-৪৬৭)। ব্যাখ্যাঃ নবী করীম (ﷺ) জাহান্নামী ও জান্নাতীদের  সব খবর সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। যিনি গায়েবী জগতের সব খবর জানেন- ওহাবী ও বাতিল পন্থীরা কি করে বলে- “নবীজী একটি  দেয়ালের পিছনের খবরও জানেন না”। ইসমাঈল  দেহলভী লিখেছে- “জিস্কা নাম মুহাম্মদ ইয়া আলী হ্যায়, ওস্কো পছে দিওয়ার কি খবর ভী নেহী হ্যায়”- অর্থাৎ : “যার নাম মুহাম্মদ (ﷺ) অথবা আলী (রাঃ)- সে  দেওয়ালের অপর দিকের খবরও জানেনা”। নবীজীর খোদাপ্রদত্ত ইল্মে গায়েবের অস্বীকৃতি প্রসঙ্গে সে  এ মন্তব্য করেছে। সুতরাং সে কাফির। দেখুন- হোসসামূল হারামাঈন। অত্র হাদীসে আর একটি বিষয় লক্ষ্য করার যোগ্য।  তাহলো- উক্ত দোযখী ব্যক্তি দোযখ থেকে বের হয়ে একবার জান্নাতের নিকট গমন করবে- আবার আল্লাহর কাছে ফিরে  এসে ‘জান্নাতে সিট খালী নেই’ বলবে- তখন রাসুল (ﷺ) কোথা থেকে এ কথাগুলো শুনবেন? হাদীসে তা পরিষ্কার উল্লেখ না থাকলেও বুঝতে কারো কষ্ট হবার কথা নয়। (৩৭) সর্বশেষ অন্য এক ব্যক্তি  কিভাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে, عن  عبد اللّٰہ بن مسعود  ص۔ ان رسول اللّٰہ  ﷺ قال: آخر من یدخل الجنۃ رجل۔ فھو یمشی مرۃ۔ ویکب مرۃ۔ وتسفعہ النار مرۃ۔ فاذا جاوزھا التفت الیھا۔ فقال:  تبارک الذی نجانی منک۔ لقد اعطانی اللّٰہ  شیئا ما اعطاء احدا من الاولین والاخرین ۔ فترفع لہ شجرۃ۔ فیقول: ای رب۔ ادننی من ھذہ الشجرۃ ۔ فلاستظل بظلھا۔ واشرب من ماءھا۔ فیقول اللّٰہ تعالی۔ یا ابن آدم:  لعلی ان اعطیتکھا سألتنی غیرھا۔  فیقول: لا یا رب۔ یعاھدہ ان لا یسألہ غیرھا۔ وربہ یعذرہ۔ لانہ یری ما  لا صبر لہ علیہ۔ فیدنیہ منھا۔ فیستظل بظلھا۔ ویشرب من  ماءھا۔ ثم ترفع لہ شجرۃ۔ ھی احسن من الاولی۔ فیقول: یارب ادننی  من ھذہ لأشرب من ماءھا۔ واستظل بظلھا۔ لا اسألک غیرھا۔ فیقول: یا ابن آدم لعلی ان ادنیک منھا۔ تسألنی غیرھا۔ فیعاھدہ  ان لا یسألہ غیرھا۔ وربہ یعذرہ  لانہ یری مالا صبر لہ علیھا۔ فیدنیہ منھا۔ فاذا ادناہ  منھا۔ سمع اصوات اھل الجنۃ۔ فیقول: ای رب  ادخلنیھا فیقول: یا ابن آدم ما یصرینی  منک؟ ایرضیک ان اعطیک الدنیا ومثلھا معھا۔ فیقول: ای رب۔ اتستھزی بی۔ وانت رب العالمین؟ فضحک ابن مسعود۔ فقال: الا تسألونی مم اضحک؟ فقالوا: مم تضحک؟ قال: ھکذا ضحک رسول اللّہ ﷺ :فقالوا مم تضحک یا رسول اللّٰہ؟ قال: من ضحک رب العالمین فیقول الرب: انی لا استھزی منک۔ ولکنی علی ما اشاء قادر‘‘۔ অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম  (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “সর্বশেষ অন্য এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। তার এমন অবস্থা হবে- একবার সামনে চলবে- আরেকবার আছাড় খেয়ে পড়বে। জাহান্নাম তার দিকে লেলীহান শিখা নিয়ে এগিয়ে আসবে। সে জাহান্নামের সীমানা পার হয়ে এসে তার দিকে তাকিয়ে  বলবে- “আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তায়ালা তোমা থেকে আমাকে নাজাত দিয়েছেন। আমাকে আল্লাহ্ এমন জিনিস দান করেছেন- যা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী - কাউকে দান  করেননি”। তারপর তার সামনে জান্নাতের একটি গাছ তুলে ধরা হবে। গাছ দেখে ঐ ব্যক্তির মনে লোভ আসবে। সে বলবে-  হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমাকে এই বৃক্ষের কাছে  নিয়ে যাও- আমি তার ছায়ায় বিশ্রাম নেবো এবং জান্নাতের পানি পান করবো (এতটুকুই আমার জন্য যথেষ্ঠ)। আল্লাহ্ বলবেন- হে আদম সন্তান! আমি তোমাকে এ সুযোগ দিলে তুমি আরো চাইবে। লোকটি শপথ করে বলবে- না আর কিছু চাইবো না। আল্লাহ্পাক তার অধৈর্যভাব ও ব্যাকুলতা দেখে তার অনুরোধ কবুল করে জান্নাতের বৃক্ষের কাছে তাকে নিয়ে যাবেন। গাছের  ছায়ায় সে বিশ্রাম নিবে এবং জান্নাতী পানি পান করবে। তারপর আরো একটি উত্তম বৃক্ষ তার সামনে তুলে ধরা হবে। সে পূর্বের কথা  ভুলে গিয়ে বলবে- হে রব! আমাকে এই বৃক্ষের কাছে নাও- আমি তার ছায়ায়  বিশ্রাম নেবো এবং জান্নাতের পানি পান করবো। আমি তৃতীয়বার আর কিছু চাইবো না। আল্লাহ্ বলবেন- হে বনী  আদম! এবারও যদি তা দেই- তাহলে তুমি পুনরায় অন্য আরো  কিছু চাইবে। যাক-  আল্লাহ্ আবারও  তার আপত্তি শুনবেন এবং দয়া করে তা দিবেন। কেননা, ঐব্যক্তির ধৈর্য খুবই কম। যখন তাকে উক্ত বৃক্ষের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন  সে এর চেয়েও উত্তম আর একটি   বৃক্ষ দেখতে পাবে- একেবারে জান্নাতের গেইটে। উক্ত ব্যক্তি এই বৃক্ষের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়ার জন্য পূর্বের মত প্রার্থনা করবে। আল্লাহ্পাক দয়াপরবশ হয়ে  তাকে এবারও সুযোগ দিবেন। সে  উক্ত বৃক্ষের কাছে গিয়ে  বেহেস্তী লোকদের কোলাহল শব্দ শুনতে পাবে। সে  বলবে- হে রব! আমাকে একটু জান্নাতের ভিতরে নিয়ে  যাও না! আল্লাহ্পাক বলবেন- কিভাবে আমি তোমার আব্দার থেকে খালাস পাবো? তুমি কি সন্তুষ্ট হবে- যদি আমি তোমাকে দুনিয়া ও তার সমপরিমান  জায়গা দিয়ে দিই? সে বলবে- হে আল্লাহ্! তুমি কি সত্যিই বলছো- নাকি আমার সাথে এমনিতেই ঠাট্টা করছো? তুমি তো রাব্বুল আলামীন! হাদীসের এ পর্য্যন্ত বর্ণনা করেই হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হেসে  ফেললেন। তিনি তাঁর শাগরিদদেরকে বল্লেন- তোমরা কি জানো- আমি এখন কেন হাস্লাম? সবাই বললো- কেন? তিনি বল্লেন- যেহেতু  রাসুল (ﷺ) একথা বলে হেসেছিলেন। তাই আমিও হাসলাম। ইবনে মাসউদ বলেন- হুযুরের হাসি দেখে সাহাবীগণ আরয করলেন- হাসলেন কেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ্? নবী করীম (ﷺ) বললেন- “যেহেতু একথা বলে আল্লাহ্ নিজে হেসেছেন- তাই আমিও হাসলাম”। তিনি বলেন- অতঃপর  আল্লাহ্পাক ঐ  বান্দাকে বলবেন- তোমার সাথে আমি ঠাট্টা করছি না। আমি যা ইচ্ছা- তাই করতে সক্ষম”।  (মুসলিম শরীফ সূত্রে আত্-তাযকিরাহ্ ৪৬৭ পৃষ্ঠা)। টীকাঃ সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী অন্য এক বান্দার প্রতি আল্লাহর মেহেরবানীর কথাই অত্র হাদীসে ফুটে উঠেছে। যারা  পূর্বে জান্নাতে গমন করেছে- তাঁদের প্রতি না জানি আল্লাহ্ আরো কত সদয়! তাঁদের জন্য জান্নাতের নির্ধারিত স্থান না  জানি আরো কত বেশী প্রশস্ত! তার প্রতিই ইঙ্গিত রয়েছে অত্র হাদীসে। আর বনী  আদমের সীমাহীন কামনা ও বাসনার প্রতিও ইঙ্গিত রয়েছে অত্র হাদীসে। একটি পেলে সে  আর একটি পেতে চায়। এক দুনিয়া পেলে আরেক দুনিয়া চায়- ইহাই সাধারণ মানুষের স্বভাব। কিন্তু হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রাঃ) চেয়েছিলেন আল্লাহর দীদার। রাবেয়া  বসরী (রহঃ) চেয়েছিলেন আল্লাহর সন্তুষ্টি। কেননা, আল্লাহর দীদার ও নবীজীর সান্নিধ্যের চেয়ে বড় নেয়ামত আর কিছু হতে পারে না। তাই  কেহ চায় মাল- আর কেহ চায় মালিক। এ  দুয়ের মধ্যে আসমান যমীন ব্যবধান। এখানেই শরিয়ত ও  মা’রেফাতের শেষ  গন্তব্য। শরিয়তের শেষ গন্তব্য হলো জান্নাত- আর মা’রেফাতের শেষ গন্তব্য হলো জান্নাতের মালিক। বিঃ দ্রঃ ইমাম  আবদুর রহমান সোহায়লী বলেন- সর্বশেষ দোযখ থেকে নিস্কৃতি লাভকারী এবং জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তি  হবে যোহায়না গোত্রের একজন লোক।  তার নাম হবে হান্নাদ। ইহা নবীজীর বাণী। জান্নাতীরা পরস্পর বলাবলি করবে- “যোহায়নার কাছ থেকে জাহান্নামের সর্বশেষ তথ্য জেনে নাও”। উল্লেখ্য- ইতিপূর্বেও এ ধরণের সর্বশেষ জান্নাতী অন্য এক ব্যক্তির কথা  উল্লেখ করা  হয়েছে। কাজেই “সর্বশেষ”  কথাটি আপেক্ষিক- অর্থাৎ শেষের দিকে জান্নাতে গমনকারীদের মধ্যে  একজন। এটাকে اخرویت اضافی বলা হয়। আলেমগণ এটা বুঝবেন। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, অত্র  হাদীসে আল্লাহ্ ও সর্বশেষ নাজাতপ্রাপ্ত  ব্যক্তির কথপোকথনে “ঠাট্টা তামাশা” ইত্যাদি শব্দ এসেছে। আল্লাহ্  কি ঠাট্টা ও তামাশা করতে পারেন? তাহলে ঐ লোকটি কি করে এই কথা বলবে এবং আল্লাহ্ও তার কথা শুনে হেসে ফেলবেন কেন ? উত্তর হলোঃ ঐলোকটি খুশীতে  আত্মহারা হয়েই আব্দারের সুরে এই কথাটুকু বলবে। আল্লাহ্ তার এই বোকাশুলভ কথা শুনেই তুষ্টির হাসি হেসে ফেলবেন। এরূপ উদাহরণ মুসলিম শরীফের হাদীসেও এসেছে। এক ব্যক্তি আল্লাহর দয়ায় উম্মত্ত হয়ে বলে ফেলেছিল- “আল্লাহুম্মা আন্তা আব্দী ওয়া আনা রাব্বুকা”- হে আল্লাহ্! তুমি আমার বান্দা এবং আমি তোমার রব”। তার ঐ গলদ কথায় আল্লাহ্ গোস্বা হননি- বরং  তার মনের নিয়তের দিকে দৃষ্টি করে উক্ত কথা আমলে নেননি। দয়াপ্রার্থীর কথায় কোন গলদ হয়ে গেলে তা ধর্তব্য নয়- এটা দুনিয়ারও নিয়ম। আল্লাহ্ মন দেখেন- সূরত দেখেন না”। “ভিতর দেখেন -বাহির দেখেন না”। (৩৮) মৃত্যুকে পুলসিরাতের উপর রেখে যবেহ্ করা হবে। এরপর বাকী থাকবে শুধু হায়াত- (ক) আল্লামা র্কুতুবী (রহঃ) তাযকিরাহ্ গ্রন্থে লিখেছেন- হাশরের দিনে যখন দোযখবাসী ও জান্নাত বাসীদের ঠিকানা স্থায়ী  হয়ে যাবে- তখন মউতকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তীস্থানে পুলসিরাতের উপর   সাদাকালো ডোরাকাটা ছাগলের আকারে যবেহ্ করা হবে। নবী করীম (ﷺ) -এর সামনে এবং নবীজীর আদেশে হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালাম  উক্ত ছাগলরূপী মউতকে যবেহ্ করবেন। (খালউন না’লাঈন গ্রন্থ)।  অপর বর্ণনায় এসেছে- হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম যবেহ্ করবেন”। (কিতাবুল আরূছ সুত্রে তাযকিরাহ্)। (খ) ইমাম বুখারী ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে এ প্রসঙ্গে রেওয়ায়াত করেন, عن ابن عمر قال: قال رسول اللّٰہ ﷺ اذا صار اھل الجنۃ الی الجنۃ واھل النار الی النار جیئی بالموت۔ حتی یجعل بین الجنۃ والنار۔ ثم یذبح ۔ ثم ینادی مناد یا اھل الجنۃ۔ لا موت۔ ویا اھل النار۔لا  موت فیزداد اھل الجنۃ فرحا الی فرحھم ویزداد اھل النار حزنا الی حزنھم۔  رواہ البخاری۔ অর্থঃ হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হতে  বর্ণিত। তিনি বলেন- নবী করীম (ﷺ)  এরশাদ করেছেন- “যখন জান্নাতীগন জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং দোযখীরা দোযখে থেকে যাবে- তখন মউতকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যখানে (পুলসিরাতের উপর) রেখে  যবেহ্ করা হবে এবং একজন আহ্বানকারী ঘোষনা করবে- “হে জান্নাতবাসীগন, তোমাদের আর মৃত্যু হবে না। হে নরক বাসীগন!  তোমাদেরও আর মৃত্যু হবে না। জান্নাতবাসীরা এ সংবাদে অত্যন্ত খুশী হবে এবং দোযখীরা এ সংবাদে অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়বে। ” (বুখারী সূত্রে- আত্-তাযকিরাহ  ৪৭৬ পৃষ্ঠা)। (গ) ইমাম ইবনে মাজাহ্ আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, عن ابی  ھریرۃص۔  قال: قال  رسول اللّٰہ ﷺ  یجأ بالموت یوم القیامۃ۔ فیوقف علی الصراط۔ فیقال یااھل الجنۃ۔ فیطلعون خائفین ان یخرجوا من مکانھم الذی ھم فیہ ۔ ثم یقال یااھل النار۔ فیطلعون ۔  مستبشرین فریحین ان یخرجوا من مکانھم الذی ھم فیہ۔ فیقال: ھل تعرفون ھذا؟ قالوا: نعم۔ ھذا الموت۔ قال: فیؤمر بہ  فیذبح علی الصراط۔ ثم یقال للفریقین کلیھما۔ خلود فیما تجدون۔ لا موت فیہ ابدا ۔ رواہ ابن ماجۃ ۔ অর্থঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-  রাসুলকরিম (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “কিয়ামতের  দিন মউতকে পুলসিরাতের উপর আনা হবে। অতঃপর এ বলে ডাক দেয়া হবে -“হে জান্নাতবাসীগণ”! জান্নাতবাসীগণ এই ভেবে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে উঁকি মেরে দেখবে যে, তাঁদেরকে জান্নাতী বাসস্থান থেকে বের করে দেয়ার জন্য ডাক দেয়া হলো কি-না? তারপর ডাকা হবে- “হে দোযখবাসীগন”!  দোযখবাসীরা এই ভেবে খুশী মনে উঁকি মেরে দেখবে যে, তাদেরকে হয়তো  তাদের বাসস্থান থেকে বের করে আনার জন্য ডাকা হলো কি-না? তারপর উভয় দলকে বলা  হবে- তোমরা এটাকে চিন? (ছাগলের সূরতে মউতকে)। তারা বলবে- হ্যাঁ, চিনি- এটা তো মউত। অতঃপর আল্লাহর নির্দেশে মউতকে (ডোরা কাটা ছাগলের আকৃতিতে) পুলসিরাতের উপর এনে যবেহ্ করা হবে। তারপর উভয় দলকে লক্ষ্য করে বলা হবে- ইহা  চিরস্থায়ী অবস্থান- যা তোমরা পেয়েছো। এখানে মৃত্যু কখনও তোমাদেরকে স্পর্শ করবে না”। (ইবনে মাজাহ্)। নোটঃ এমর্মে  অনেক বর্ণনা এসেছে। আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস মোতাবেক মউতকে হাযির করা হবে کبش املح বা সাদাকালো ডোরাকাটা ছাগলের আকৃতিতে। তাফসীরে কুরতুবী ও অন্যান্য তাফসীরে হায়াত মউতের আকৃতি আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হায়াত হলো মাদী  ঘোড়ার আকৃতি বিশিষ্ট এবং মউত হলো ছাগলের আকৃতি বিশিষ্ট। সাত দোযখের নাম ========= দোযখ সাতটি। একটি হতে আরেকটির দূরত্ব পাঁচশত বৎসরের রাস্তা। ১। জাহান্নামঃ جھنم জাহান্নাম অর্থ- যে দোযখ নারী পুরুষের মুখের উপর দাউদাউ করে জ্বলবে এবং গোস্ত খেয়ে ফেলবে। সাতটির মধ্যে এটির আযাবই সবচেয়ে হাল্কা হবে। ২।  লাযা (لظی): অর্থ -  লেলিহান অগ্নিশিখা। আল্লাহ্পাক বলেন- إِنَّهَا لَظَىٰ - نَزَّاعَةً لِّلشَّوَىٰ “নিশ্চয়ই এই দোযখ লেলিহান অগ্নিশিখা- যা চামড়া তুলে নিবে। নিশ্চয়ই এই দোযখ তৌহিদ ও রিসালাত অস্বীকার কারীদেরকে নিজের দিকে ডাকবে”। (সূরা মাআরিজ ১৫-১৬ আয়াত)। ৩। সাক্বার (سقر): অর্থ-  যা শুধু মাংস খাবে- হাড্ডি খাবেনা। ৪। হুত্বামাহ (حطمۃ): এই দোযখ দোযখীকে পিষ্ট করে ফেলবে এবং ইহা জ্বলন্ত অগ্নি। আল্লাহ্পাক বলেন- وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ - نَارُ اللَّهِ الْمُوقَدَةُ - الَّتِي تَطَّلِعُ عَلَى الْأَفْئِدَةِ অর্থাৎ- “আপনি কি জানেন- হুতামা কী? “উহা তো লেলিহান অগ্নিশিখা। উহা  আল্লাহর জ্বলন্ত অগ্নি- যা হৃদয় পর্য্যন্ত পৌঁছবে”। (সূরা হুমাযাহ্)। এই দোযখের বৈশিষ্ট হলো- ইহার জ্বলন্ত অগ্নিশিখা আকাশ সমান উঁচু হয়ে আবার নীচে নেমে এসে তার অধিবাসীর হাত, পা ও শরীর জ্বালিয়ে দিবে। শরীর থেকে রক্ত, পুঁজ, বমি -ইত্যাদি বের হয়ে সাগরের রূপ ধারণ করবে। এতে ইচ্ছা করলে জাহাজ চলাচল করতে পারবে। (৫) জাহীম  (جحیم): জাহীম অর্থ- বিরাট বিরাট পাথর। এই দোযখে পাথরের পাহাড় হবে। এক একটি পাথর পৃথিবীর সমান হবে। আল্লাহ্ পাক বলেন, وَ إِن‌َّ الفُجّارَ لَفِی‌ جَحِیم‌ٍ. (৬) ছায়ীর (سیعر): এই  দোযখে তিনশত প্রাসাদ থাকবে। প্রত্যেক প্রাসাদে তিনশত করে ঘর থাকবে। প্রত্যেক ঘরে তিনশত রকমের আযাব  হবে। এই দোযখেই থাকবে সাপ, বিচ্ছু, কয়েদখানা, শিকল ও কড়া।  এই দোযখেই “জুব্বুল হোযন” নামক গর্ত থাকবে। এর আযাব হবে সবচেয়ে কঠিনতম। জুব্বুল হোযনের দরজা খুললে  তার  দুর্গন্ধে দোযখীরা পেরেশান হয়ে পড়বে। (৭) হাভিয়াহ  (ھاویۃ): এই দোযখে যে একবার ঢুকবে- কোনদিন আর বের হবে  না। আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন- كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيرًا অর্থাৎ- “যখনই আগুন নিভে আসার উপক্রম করবে- তখন আমি তার বাসিন্দাদের জন্য অগ্নি আরো বাড়িয়ে দেবো”। (সূরা বনী  ইসরাঈল ৯৭ আয়াত)। অন্য বর্ণনায় এসেছে- হাভিয়াহ্ হলো আগুনের পাহাড়।  আল্লাহর শত্র“দেরকে হাত  পা কাঁধের সাথে বেঁধে উঁপুড় করে ঐ পাহাড়ে রাখা হবে। দোযখের ফিরিস্তারা তাদের মাথার উপরে দাঁড়িয়ে হাতুড়ী দিয়ে পিটাতে থাকবে। আল্লাহ্পাক  এই সাতটি দোযখের কথা কোরআন মজিদে এভাবে উল্লেখ করেছেন, لَھَا سَبْعَۃُ اَبْوَابِ لِکُلِّ بَابٍ مِنْھُمْ جُزْءٌ مَّقْسُوْمٌ অর্থাৎ : “দোযখের সাতটি দরজা (স্তর) আছে। প্রত্যেক দরজার জন্য পৃথক পৃথক দল আছে”। ইমাম কুরতুবী বলেন- প্রত্যেক দরজা বা স্তরের জন্য পৃথক পৃথক দল থাকবে। যেমন, কাফেরদের জন্য এক স্তর, মুনাফিকদের জন্য অন্য স্তর এবং শয়তানের পুজারীদের জন্য পৃথক স্তর থাকবে। (আত্-তাযকিরাহ্ ৪১৮ পৃষ্ঠা)। ব্যাখ্যাঃ হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, لھا سبعۃ ابواب۔ علی کل با ب سبعون الف جبل ۔ فی کل جبل سبعون  الف شعب من النار۔ فی کل شعب سبعون الف شق من النار۔ فی کل شق سبعون الف واد، فی کل واد سبعون الف قصر من  النار۔ فی کل قصر سبعون الف بیت من نار۔ فی کل بیت سبعون الف قلۃ من سم ۔ فاذا کان یوم القیامۃ ۔ کشف عنھا الغطأ۔ فیطیر منھا سرادق عن یمین  الناس۔ وآخر عن شمالھم ۔ وسرادق امامھم وسرادق فوقھم۔ وآخر من وراءھم۔ فاذا نظر  الثقلان الی ذلک جثوا  علی رکوبھم۔ وکل ینادی۔ رب سلم۔ رب سلم۔ (التذکرۃ صفح ۴۲۰) অর্থঃ “জাহান্নামের স্তর হবে ৭টি।  প্রত্যেকটি স্তরে থাকবে ৭০ হাজার পাহাড়। প্রত্যেক পাহাড়ের মধ্যে ৭০ হাজার আগুনের শাখা থাকবে। প্রত্যেক শাখায় থাকবে ৭০ হাজার আগুনের টুক্রা। প্রত্যেক টুকরায় থাকবে ৭০ হাজার বিশাল খোলা ময়দান। প্রত্যেক খোলা ময়দানে থাকবে ৭০ হাজার আগুনের প্রাসাদ। প্রত্যেক প্রাসাদে থাকবে ৭০ হাজার আগুনের ঘর। প্রত্যেক ঘরে থাকবে ৭০ হাজার বিষের চুড়া। যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে, তখন উহা থেকে পর্দা সরিয়ে নেয়া হবে। অতঃপর লোকদের ডানদিক থেকে একটি ওয়াল উড়ে আসবে। বামদিক থেকে আরেকটি। সামনের দিক  থেকে আরো একটি। উপর থেকে আরেকটি। পেছনদিক থেকে  আরেকটি। এভাবে দেয়ালগুলো এসে  তাদেরকে ঘিরে ফেলবে। জ্বীন ইনসান যখন দেয়ালগুলো দেখবে- তখন হাঁটুর উপর উঁপুড় হয়ে বলতে থাকবে-  “রাব্বি সাল্লিম, রাব্বি সাল্লিম- অর্থাৎ-  হে আল্লাহ্!  বাঁচাও, হে আল্লাহ্! বাঁচাও! মা’বুদ মাওলা সাঁই দোযখের আযাব হতে পানাহ্ আমি চাই! ও- লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু! ------ 
 
Top