আমলনামা কিভাবে ডানহাতে  বা বামহাতে আস্বে? প্রথম কোন্ ব্যক্তির ডানহাতে আমলনামা আসবে? জওয়াবঃ  হাশরের ময়দানে  প্রত্যেকের হাতে আমলনামা উড়ে  আসবে। নেক্কারদের আমলনামা ডানহাতে  উড়ে আসবে। গুনাহ্গারদের আমলনামা বামহাতে উড়ে আসবে এবং বামহাত থাকবে পিছনের দিকে। প্রথম আমলনামা আসবে হযরত ওমর (রাঃ) -এর ডানহাতে। (১) আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন, فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ - فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا - وَيَنقَلِبُ إِلَى أَهْلِهِ مَسْرُورًا - وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ وَرَاء ظَهْرِهِ - فَسَوْفَ يَدْعُو ثُبُورًا অর্থাৎঃ “যার আমলনামা ডানহাতে দেয়া হবে, তাঁর হিসাব- নিকাশ সহজে হয়ে যাবে। আর সে পরিবার পরিজনের  কাছে হৃষ্টচিত্তে ফিরে যাবে। আর যার আমলনামা তার পিঠের পেছন দিক দিয়ে দেয়া হবে, সে মৃত্যুকে আহবান করবে”। (ছুরা ইনশিক্বাক্ব ৭-১১ আয়াত)। (২)  তিন রকমের মানুষ আল্লাহর কাছে পেশ করা হবে, خرج  الترمذی عن حسن عن ابی ھریرۃؓ قال : قال رسول اللّٰہ  ﷺ تعرض الناس یوم القیامۃ ثلاث عرضات فاما عرضتان تجدال و معاذیر فعند ذلک قطیر الصحف فی الابدی فاخذ بیمینہ واخذ بشمالہ ۔ خرج البزار عن ابی موسی الاشعری عن النبی ﷺ قال : یعرض الناس یوم القیامۃ ثلاث عرضات فاما عرضتان فجدال واما الثالثۃ فتطاکیر الکتب یمینا وشمالا ۔ অর্থাৎঃ “ইমাম তিরমিযি হযরত হাসান সূত্রে হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন - আল্লাহর প্রিয়রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “হাশরের দিনে  তিন ধরণের মানুষকে আল্লাহর কাছে পেশ করা হবে। (১) প্রথম পেশ করা হবে যারা আল্লাহর সাথে ঝগড়া-বিবাদ করবে। (২) নবীগণের পক্ষে আপত্তি পেশ  করার  উদ্দেশ্যে নবীগণকে হাযির করা হবে। (৩) আর ঐ সময়ই তৃতীয় প্রকারের উপস্থিতি হবে। তাদের আমলনামা ডানহাতে বা বামহাতে উড়ে আসবে”। বাজ্জার আবু মুছা আশ্আরী (রাঃ) হতে সামান্য একটু ব্যতিক্রম বর্ণনা করেছেন। তা  হচ্ছে- “রাসুল করিম (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “মানুষকে হাশরের দিনে তিনপ্রকারে আল্লাহর দরবারে পেশ করা হবে। তন্মধ্যে প্রথম পেশ করা  হবে আল্লাহর সাথে বিতর্ক করার উদ্দেশ্যে। দ্বিতীয়   পেশ করা হবে নবীগণের পক্ষে ওজর- আপত্তি পেশ করার লক্ষ্যে। আর তৃতীয় দলকে পেশ করা হবে এ  অবস্থায় যে, তাদের আমলনামা উড়ে এসে ডান হাতে অথবা বাম হাতে পড়বে”। (তিরমিযি)। ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ এক প্রকার লোক হবে নিরেট কাফের। তারা আল্লাহর সাথে ঝগড়া ও প্রতারণা করে পার হয়ে যেতে  চাইবে। দ্বিতীয় প্রকার লোক হবে- যারা  নবীগণের আগমনকে অস্বীকার  করবে-  কিন্তু আল্লাহপাক নবীগণের পক্ষে সাক্ষী প্রমাণ পেশ করে কাফেরদের পরাস্ত করবেন। আর তৃতীয় প্রকার লোক হবে গুনাহগার ও নেককার। এদেরই হিসাব নিকাশ হবে। প্রথম  দু দল বিনা হিসাবে জাহান্নামে যাবে। নেক্কার ও বদকারের আমলনামা দেখে হিসাব নিকাশ করা হবে। (৩) হাকীম তিরমিযি তাঁর “নাওয়াদিরুল উছুল” গ্রন্থের ছিয়াশি নম্বর উছুলে এই  ঘটনা এভাবে  বর্ণনা করেছেন- فروی لنا عن رسول اللّٰہ ﷺ ان الناس یعرضون ثلاث عرضات یوم القیامۃ فاما عرضتان فجدال ومعاذ یر واما العرض الثالثۃ فتطایرا الصحف ۔ فالجدال لاھل الھواء یجادل لانھم لا یعرفون ۔ ربھم فیظنون انھم اذا جادلوہ نجوا وقامت حجتھم ۔ والمعاذیر للّٰہ تعالی یعتذر الکریم الی آدم والی انبیاۂ ویقیم  حجتہ عندھم علی الاعداء ۔ ثم یبعثھم اللّہ الی النار فانہ یجب ان یکون عذرہ عن انبیاۂ واولیاء ہ ظاھرا حتی لا تأخذھم الحیرۃ ۔ ولذلک قیل عن رسول اللّٰہ ﷺ لا احد احب الیہ المدح من اللّٰہ ولا احد احب الیہ العذر من اللّٰہ ۔  والعرضۃ الثالثۃ للمؤمنین وھو العرض الاکبر بخلوبھم فیعاتبھم فی تلک الخلوات  من یرید ان یعاتبھم حتی یذوق وبال الحیاء یرفض عرۃ بین یدیہ یفیض العرق منھم علی اقدامھم من شدۃ الحیاء ثم یغفر لھم ویرضی عنھم অর্থাৎঃ “হাকীম তিরিমিযি তাঁর ৮৬ নং উছুলে বলেন- আমাদের  কাছে এ   মর্মে রাসুলে  করিম (ﷺ) -এর  বাণী পৌঁছেছে  যে, মানুষকে হাশরের দিনে তিন প্রকারে আল্লাহর সম্মূখীন করা হবে। প্রথম সম্মূখীন করা হবে ঐসব কাফেরকে- যারা আল্লাহর সাথে ঝগড়া করে পার হয়ে  যেতে চাইবে। দ্বিতীয় প্রকারের লোকেরা নবীগণের আগমন অস্বীকার করবে- কিন্তু আল্লাহ্পাক  নবীগণের পক্ষে সাফাই পেশ করবেন। তৃতীয়বারে মোমেনদের হিসাব নিকাশ হবে। তাদের আমল নামা উড়ে এসে কারো ডানহাতে পড়বে- কারো  পিঠের  পিছন দিয়ে বামহাতে”। নবী করিম (ﷺ) বলেন-  আল্লাহর সাথে    ঝগড়াকারীরা হবে আহ্লে হাওয়া বা প্রবৃত্তিপূজারী। তারা আল্লাহর  হাকীকত না বুঝেই ঝগড়া বা বিতর্ক করবে এবং মনে করবে যে, এভাবে আল্লাহর সাথে ঝগড়া ও বিতর্ক করে নাজাত পেয়ে যাবে- বিতর্কে জিতে যাবে। আর ওজরের বিষয়টি হলো-  আম্বিয়াদের ক্ষেত্রে। দয়াময় আল্লাহ্ ঐদিন আদম আলাইহিস সালাম সহ আম্বিয়ায়ে কেরামের পক্ষে তাঁদের সম্মূখেই কাফিরদের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক পেশ করে  তাদেরকে পরাজিত করবেন। অতঃপর প্রথম দল ও দ্বিতীয় দলকে বিনা হিসাবে জাহান্নামে প্রেরণ করবেন। কেননা, আল্লাহর প্রকাশ্য সাফাই সাক্ষ্য জয়ী হওয়াটাই অবশ্যম্ভাবী। আম্বিয়ায়ে কেরাম ও আউলিয়ায়ে কেরামগণকে ঐদিন কোন পেরেশানী পোহাতে  হবেনা।  এজন্যই রাসুলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, “কোন ব্যক্তির কাছে আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁর প্রশংসার চেয়ে অধিক প্রিয় কোন বস্তু নেই এবং কোন ব্যক্তির   কাছে  আল্লাহর পক্ষ হতে তার জন্য পক্ষপাতিত্বের চেয়েও অধিক প্রিয় কোন বস্তু নেই”। আর তৃতীয় উপস্থিতি হবে আল্লাহর কাছে মোমেনদের উপস্থিতি- সেদিন আল্লাহ্পাক একান্তে মোমেনদেরকে নিজের সামনে উপস্থিত করে যাকে ইচ্ছা  সামান্য ভর্ৎসনা করবেন। সে ব্যক্তি ঐদিন লজ্জার স্বাদ গ্রহণ করবে এবং আল্লাহর সামনে লজ্জায় ঘর্মাক্ত হয়ে যাবে। তার ঘাম শরীর থেকে প্রবাহিত হয়ে পা পর্য্যন্ত গড়িয়ে পড়বে। এরপর তাদেরকে ভর্ৎসনা করে তিনি ক্ষমা করে দিবেন এবং তাদের প্রতি রাযী হয়ে  যাবেন” (নাওয়াদিরুল উছুল ৮৬ নং উছুল- হাদীস তিরমিযি)। হাসীসের খোলাসা ব্যাখ্যাঃ আল্লাহর দরবারে মানুষের উপস্থিতি তিন ধরণের হবে। প্রথম উপস্থিতির অবস্থা হবে ভয়াবহ। তখন সবাই ভয়ে আতংকগ্রস্থ ও শঙ্কিত থাকবে। আল্লাহ্পাক   ঐ অবস্থা এভাবে বর্ণনা করেছেন- وَخَشَعَتِ الأَصْوَاتُ لِلرَّحْمَنِ فَلا تَسْمَعُ إِلا هَمْسًا অর্থাৎ : “ঐদিন দয়াময় আল্লাহর ভয়ে সমস্ত আওয়াজ ক্ষীন হয়ে পড়বে। হে হাবীব! আপনি সেদিন মৃদুগুঞ্জন ছাড়া আর কিছুই শুনবেন না”।  (ছুরা মরিয়ম ১০৮ আয়াত)।  এই অবস্থাটি হবে  সবচেয়ে ভয়াবহ। কাফেররা এই অবস্থায় পলায়ন করার কামনা করবে- যদিও তা জাহান্নামের দিকেই হোক না কেন। আর দ্বিতীয়টির অবস্থা হবে- আল্লাহপাক নবীদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিবেন আমাদের  প্রিয়নবীর মাধ্যমে। বোখারীতে আছে- নূহ নবীর পক্ষে এবং সকল নবীর পক্ষে আমাদের নবীজী সাফাই সাক্ষ্য দিবেন। ইহাই আল্লাহর সাফাই সাক্ষ্য। তখন কাফিররা পরাভূত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে- আর নবীগণ হবেন প্রশংসিত। প্রথম অবস্থা হবে আল্লাহর জাব্বারী  ও কাহ্হারী শান। তৃতীয় অবস্থা হবে-  হাতে উড়ন্ত আমলনামা আসা, নেকীবদী ওজনের পাল্লা  স্থাপন এবং পুলসিরাত অতিক্রম করা। পরজগতের এই  গোপন ব্যবস্থার অগ্রিম   খবর দিয়েছেন আমাদের  প্রিয়নবী (ﷺ)।  কাযী আয়ায,  ইমাম কাসতুলানী, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী প্রমূখ মনিষীগণ এই জ্ঞানকে বলেছেন  নবীজীর ইলমে  গায়েব আতায়ী”। নবীজীর এই বিশাল ও ব্যাপক  ইলমে গায়েবকে অস্বীকার করার মানেই নবীজীকে অবমাননা করা এবং তাঁর প্রকৃত শানকে  ছোট করা ও গোপন করা। এটা  ইহুদীদের স্বভাব। আল্লাহ্ সরলপ্রাণ মুসলমান ভাইদেরকে বাতিলপন্থীদের  খপ্পর থেকে বাঁচার মত দৃঢ় ঈমানীশক্তি দান করুন। ৪। উড়ন্ত আমলনামার স্বরূপঃ عن انس  بن مالک رضی اللّٰہ عنہ عن  النبی ﷺ قال : الکتب کلھا تحت العرش فاذا کان یوم الموقف بعث اللّٰہ ریحا فتطیرھا بالایمان والشمال اول خط فیھا : اقراء کتابک کفی بنفسک الیوم علیک حسیبا ۔ অর্থাৎ : “হযরত আনাছ ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী  করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন- সমস্ত আমলনামা আরশের নীচে সংরক্ষিত আছে। যখন হাশরের ময়দানে সবার অবস্থান গ্রহণের দিন আসবে- তখন আল্লাহ্পাক এক প্রকার তীব্র বায়ূ প্রবাহিত করবেন। ঐ বায়ু আমলনামাকে উড়িয়ে নিয়ে তাদের ডানহাতে ও বামহাতে দিবে। ঐ আমলনামায় ঈমান, আক্বিদা  ও আমল সব লিখা থাকবে। তাতে প্রথমেই থাকবে- “পাঠ কর তুমি তোমার কিতাব বা আমলনামা।  আজ তোমার হিসাবের জন্য তুমিই যথেষ্ঠ। (ছুরা বনী ইসরাঈল আয়াত ১৪) ব্যাখ্যা : আবু ছোয়ার আদাবী ছুরা বনী ইসরাঈলের ১৩ ও  ১৪ নম্বর আয়াত উদ্ধৃত করে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আয়াত দু’টি হলো, وَكُلَّ إِنسَانٍ أَلْزَمْنَاهُ طَائِرَهُ فِي عُنُقِهِ  ۖ وَنُخْرِجُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتَابًا يَلْقَاهُ مَنشُورًا - اقْرَأْ كِتَابَكَ كَفَىٰ بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا (অর্থাৎঃ “আল্লাহ্পাক এরশাদ করেছেন “আমি প্রত্যেক মানুষের উড়ন্ত আমলনামা তার গ্রীবালগ্ন করে রেখেছি। কেয়ামতের দিন আমি একটি কিতাব বা আমলনামা বের করে  তাকে দেখাবো- যা সে খোলা অবস্থায় দেখতে  পাবে। আমি তাকে বলবো- “পড় তোমার আমলনামা, আজ তোমার হিসাব নিকাশের জন্য তুমিই যথেষ্ঠ”। ) তিনি বলেন- এ বাণীর ব্যাখ্যা হলো- “উক্ত আমলনামা দু’বার খোলা থাকবে এবং একবার বন্ধ থাকবে। হে বনী আদম! তোমার জীবিতকালে  উক্ত আমলনামা খোলা থাকবে। তোমার যা মনে চায়- তা তুমি লিখাতে পারো। যখন তোমার  মৃত্যু হবে- তখন আমলনামা গুটিয়ে ফেলা হবে। আবার যখন হাশরে দাঁড়াবে- তখন পুনরায় খোলা হবে। ঐ খোলা আমলনামা  দেখিয়ে আল্লাহ্পাক বিচার করবেন। ঐ আমলনামা নেক্কারদের ডানহাতে উড়ে এসে পড়বে- তখন তার হিসাব-নিকাশ হবে অতি সহজ। আল্লাহ্পাক বলেন, فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ - فَسَوْفَ يُحَاسَبُ  حِسَابًا يَسِيرًا অর্থাৎ -“যার ডানহাতে আমলনামা দেয়া হবে- তার হিসাব নিকাশ হবে অতি সহজ”। এতে বুঝা যায়- আমলনামা হাতে আসার পরেই হিসাব শুরু হবে- এর আগে নয়। কারণ, মানুষ যখন হাশরের ময়দানে উঠবে, তখন নিজেদের আমলের কথা মনে থাকবেনা- সব ভুলে যাবে। এদিকে ইঙ্গিত  করেই আল্লাহ্পাক এরশাদ করেছেনঃ يَوْمَ يَبْعَثُهُمُ اللَّهُ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُهُم بِمَا عَمِلُوا أَحْصَاهُ اللَّهُ وَنَسُوهُ অর্থাৎ : “সেদিন আল্লাহ্পাক সমস্ত মানুষকে হাশরে একত্রিত করে তাদের কৃত আমল সম্পর্কে তাদেরকে জ্ঞাত করাবেন। আল্লাহ্পাক আমলকে সংরক্ষণ করে রেখেছেন- অথচ তারা  তা ভুলে যাবে”।  (সুরা মুজাদালা আয়াত ৬)। (ব্যাখ্যা সমাপ্ত। ) (৫) নেক্কারদেরকে আল্লাহর সামনে পেশ করা হবে সত্য- কিন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না, عن عائشۃ رضی اللّٰہ عنھا قالت : قال رسول للّٰہ  ﷺ من حوسب یوم القیامۃ عذب ۔ قالت فقلت یا رسول اللّٰہ الیس قد قال اللّٰہ تعالی فاما اوتی کتابہ بیمینہ فسوف یحاسب حسابا یسیرا؟ فقال لیس ذلک الحساب انما ذلک العرض من نوقش یوم القیامۃ عذب اخرجہ مسلم والترمذی۔ অর্থাৎ : হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসুলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “কেয়ামত দিবসে  যাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে- তার শাস্তি অবধারিত”। একথা শুনে হযরত আয়েশা (রাঃ) আরয করেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আল্লাহ্পাক কি একথা বলেননি-  “যার ডানহাতে আমলনামা দেয়া হবে- তার হিসাব নেয়া হবে অতি সহজে?” (তাহলে আপনি যে বললেন- হিসাব হলেই শাস্তি অবধারিত- একথার অর্থ কি?)  হুযুর (ﷺ) বললেন- “উহা হিসাব নয়- বরং শুধু আল্লাহর দরবারে উপস্থিতি।  আর  যাকে  জিজ্ঞাসাবাদ করা  হবে- তার শাস্তি অবধারিত”। (মুসলিম ও তিরমিযি) (৬) মৃত্যুর পূর্বেই নিজের হিসাব নিকাশ করে নাও, روی عن عمر بن الخطاب رضی اللّٰہ عنہ قال : حاسبوا انفسکم قبل ان تحاسبوا ۔ وتزینوا للعرض الاکبر۔ وانما یخفف الحساب علی من حاسب نفسہ فی الدنیا ۔ رواہ الترمذی ۔ অর্থাৎ : “হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেনঃ নিজের হিসাব-নিকাশ  নিজেই করে নাও- হাশরে হিসাব নিকাশ নেয়ার পূর্বে এবং মহান দরবারে উপস্থিতির জন্য নিজেকে  সাজিয়ে নাও। কেননা, যেব্যক্তি দুনিয়ায়   থাকতেই  নিজের হিসাব-নিকাশ করে  নেয়- তার জন্য পরকালের হিসাব-নিকাশ সহজ হয়ে যাবে”। (তিরমিযি শরীফ)। ব্যাখ্যাঃ হযরত ওমর (রাঃ) -এর এই হাদীসটি খুবই তত্বপূর্ণ। নিজের  হিসাব নিজে নেওয়ার অর্থ হলো- গুনাহ্ হতে বেঁচে থাকা এবং সাবধানে চলা। প্রত্যেক কাজের মুহাছাবা বা চুলচেরা পর্য্যালোচনা করার মর্তবা অর্জন করার মধ্যে রয়েছে আল্লাহর প্রতি ভয়ভীতি ও পরকালের চিন্তা- ফিকির। সুতরাং এমন সতর্ক ব্যক্তির দ্বারা বড় ধরণের গুনাহ্ বা অন্যায় সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই পরকালে তার হিসাব নিকাশ হবে অতি হাল্কা। এটা মা’রেফাতের গভীর দর্শন। (৭) উম্মতের মধ্যে ডানহাতে আমলনামা প্রথমে  আসবে হযরত ওমরের হাতে- عن زید بن ثابت رضی اللّٰہ عنہ قال : قال رسو ل اللّٰہ ﷺ : اول من یعطی کتابہ بیمینہ من ھذہ  الامۃ عمر بن الخطاب ولہ شعاع کشعاع الشمس فقیل لہ : این یکون ابو بکر یا رسول اللّٰہ؟ قال ھیھات زفتہ الملائکۃ الی الجنان ۔ ذکرہ ابو بکر احمد بن ثابت الخطیب ۔ অর্থাৎ : হযরত যায়েদ ইবনে  সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন-রাছুলুল্লাহ্ (ﷺ) এরশাদ করেছেন -“রোয হাশরে এই উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম ডানহাতে আমলনামা দেয়া হবে যাকে- তিনি হযরত ওমর ইব্নুল খাত্তাব। সেদিন তাঁর জ্যোতি হবে সূর্যের  জ্যোতির  ন্যায়।  নবী  করীম  (ﷺ) কে প্রশ্ন  করা হলো- তাহলে হযরত আবু বকরের অবস্থা কী হবে? নবীজী এরশাদ করলেন- আরে! তাকে তো ফিরিস্তারা পূর্বেই জান্নাতে পৌঁছিয়ে দেবে”। (আবু বকর আহমদ ইবনে সাবেত আল খতীব কর্তৃক বর্ণিত)। বুঝা গেল- হযরত আবু বকর (রাঃ) -এর আমলনামা পেশের প্রয়োজনই হবেনা। এটা তাঁর বিশেষ মর্যাদা। (৮) কারো  কারো আমলনামায় অনেক নেকী লেখা থাকলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না, واسند سمرۃ بن عصیۃ قال: یؤتی بالرجل یوم الحساب وفی صحیفتہ امثال الجبال من الحسنات فیوقول رب العزۃ تبارک وتعالی صلیت یوم کذا  لیقال فلان صلی انا اللّٰہ لا الہ الا لنا لی الدین الخاصل ۔ صمت یوم کذا وکذا لیقال صام فلان ۔ انا اللّٰہ لا الہ الا ھو انا۔لی الدین الخالص۔ تصدقت یوم کذا اوکذا لیقال تصدق فلان ۔ انا اللّٰہ لا الہ الا انا لی الدین الخالص۔ فمازال یمحی شئی بعد شئی حتی تبقی ۔ صحیفتہ ۔ ما فیھا شئی : فیقول ملکاہ الغیر اللّٰہ کنت تعمل ۔ অর্থাৎ : ছামুরা ইবনে আতিয়া থেকে সনদসহ বর্ণিত হয়েছে যে, কিয়ামত দিবসে এমন এক ব্যক্তিকে হাযির করা হবে- যার আমলনামায় পাহাড়ের ন্যায় নেক্কাজ দেখা যাবে। আল্লাহ্  রাব্বুল ইজ্জাত তাবারাকা ওয়া তায়ালা তাকে বলবেন- “তুমি অমুক অমুক দিন নামায পড়েছো এই খেয়ালে যে, লোকেরা বলাবলি করবে- সে খুব নামাযী। শুন, আমি আল্লাহ্! আমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, আর খালেছ দ্বীন ও ইবাদত হতে হবে  একমাত্র আমার সন্তষ্টির জন্য। তুমি অমুক অমুক দিন রোযা রেখেছিলে এই উদ্দেশ্যে যে, লোকেরা বলবে- এই লোকটি খুব রোযাদার। শুন! আমি হচ্ছি আল্লাহ্! আমি ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই। আমার কাছে গৃহীত দ্বীন ও ইবাদত হতে হবে একমাত্র আমার জন্য”। তুমি অমুক অমুক দিন সদ্কা করেছিলে এই খেয়ালে যে, লোকেরা বলবে- লোকটি খুব সদ্কাকারী। শুন- আমি হচ্ছি আল্লাহ্! আমি ছাড়া কোন মাবুদ  নেই। আমার জন্য হতে হবে খালেছ দ্বীন ও ইবাদত। ” এভাবে একটি একটি করে ইবাদত বিনষ্ট হতে হতে শেষ পর্য্যন্ত তার আমলনামায় কিছুই বাকী থাকবেনা। অতঃপর আল্লাহর দুই  ফিরিস্তা বলবেন- “তুমি কি গাইরুল্লাহর জন্য  ইবাদত করতে?”  (আত্  তাযকিরাহ্)। ব্যাখ্যাঃ ইমাম  কুরতুবী বলেন- এই হাদীস এবং এ ধরণের  অন্যান্য  হাদীস যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে সাহাবীদের মন্তব্য বলে মনে হয়- কিন্ত মূলতঃ এগুলো রাসুলেপাকেরই সরাসরি বাণী বা  মারফু’ হাদীস। কেননা, পরকালীন বিষয়ের খবর একমাত্র  রাসুল জানেন- সাহাবীগণ নয়। সুতরাং- এ ধরণের হাদীস কারো আকলপ্রসূত হতে পারে না। এই হাদীসে লোক দেখানো আমল থেকে সাবধান করা হয়েছে। আমল হতে হবে খাস আল্লাহর জন্য- লোক দেখানোর  উদ্দেশ্যে  নয়। তাই বান্দাকে খালেছ ইবাদতের জন্য চেষ্টিত হতে হবে এবং ইবাদত করে যেতে হবে। বর্তমানকালে অনেকেই লোক দেখানো ইবাদত করে থাকে। (৯) লোক দেখানো ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, رواہ الدار قطنی فی سننہ من حدیث انس بن مالک رضی اللّٰہ  عنہ  قال   : قال رسول اللّٰہ ﷺ یجاء  یوم القیامۃ بصحف مخنومۃ۔ فتنصب بین یدی اللّٰہ عزوجل۔ فیقول اللّٰہ :القوا ھذا واقبلوا ھذا ۔ فیقول  الملائکۃ عزتک مارینا الاخیرا ۔ فیقول اللّٰہ عزوجل وھواعلم ۔ ان ھذا کان لغیر ولا  اقبل من العمل الا ما ابتغی بہ وجھی خرجہ مسلم فی صحیحہ عن ابی ھریرۃ رضی اللّٰہ عنہ بمعناہ ۔ অর্থাৎ : ইমাম দারু কুতনী তাঁর সুনানে হযরত আনাছ ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে উপরে উল্লেখিত মাওকুফ হাদীসের সমর্থনে অত্র মারফু’ হাদীস এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ রাসুলেখোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন - “কিয়ামত দিবসে একটি সীল-মোহরকৃত আমলনামা আল্লাহর দরবারে আনা হবে।  অতঃপর আল্লাহর সামনে তা খোলা হবে। আল্লাহ্ তায়ালা বলবেন- এই আমলটি ফেলে দাও, ঐ আমলটি গ্রহণ করো। ফিরিস্তারা  আরয করবে - তোমার ইজ্জতের কসম! আমরা তো এতে ভাল ছাড়া মন্দ কিছু দেখছিনা। আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জত বলবেন- (তিনিই সর্বজ্ঞ)। এই ইবাদতটি ছিল আমাকে ছাড়া অন্যের জন্য (লোক দেখানোর জন্য)। আমি আমার সন্তষ্টির উদ্দেশ্য ছাড়া  অন্য কোন আমলই কবুল করিনা”। (ইমাম মুসলিম হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে এ ধরণের অর্থবহ হাদীস তাঁর সহীহ মুসলিমে সংকলিত করেছেন-ইমাম কুরতুবী) (১০)  নেককারের মাথায় লুলু পাথর খচিত মুকুট পরানো হবে এবং তার শরীরের উচ্চতা হবে ষাইট গজ লম্বা, خرج الترمذی عن ابی ھریرۃ رضی اللّٰہ عن النبی صلی اللّٰہ علیہ وسلم ۔ فی قولہ تعالی یوم ندعوا کل اناس بامالھم قال: یدعی  احدھم فیعطی کتابہ بیمینہ وبمدلہ فی جسمہ ستون ذراعا ۔ ویبیض وجھہ ولیجعل علی  راسہ تاج من لؤلؤ یتلأ لأ ۔ فینطلق الی اصحابہ فیرونہ من بعد ۔ فیقولون اللھم اٰتنا بھذا وبارک لنا فی ھذا حتی یأتیھم ویقول ابشروا لکل مسلم مثل ھذا ۔ واما الکافر فیسود  وجھہ ویمد فی جسمہ ستون ذراعا علی صورۃ آدم ویلبس تاجا من نار فیراہ صحابہ فیقولون نعوذ من شر ھذا اللّٰھم لا تأتنا بھذا ۔ قال : فیأتیھم فیقولون اللّٰھم اخزہ ۔ فیقول ابعدکم اللّٰہ  فان لکل رجل منکم مثل ھذا ۔ অর্থাৎ : “ইমাম তিরমিযি হযরত আবু হোরায়রা সুত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ্পাকের কালামের সূরা বনী ইসরাঈলের ৭১ নম্বর  আয়াতে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেছেন- “প্রত্যেক মানুষকে আমি তার ইমাম বা নেতার সাথে আহ্বান করবো”। এ আয়াতের ব্যাখ্যাস্বরূপ হুযুর (ﷺ) বলেছেন- একজন নেক্কার লোককে তার নেতার সাথে ডাকা হবে এবং তার আমলনামা ডানহাতে দেয়া হবে। তার শরীর হবে হযরত আদমের ন্যায় ষাইটগজ লম্বা। তার চেহারা হবে উজ্জ্বল এবং তার মাথায় লুলু পাথর খচিত মুকুট পরিধান করানো হবে। ঐ মুকুট ঝলমল করতে থাকবে। সে ঐ মুকুট পরিধান করে তার বন্ধু বান্ধবদের কাছে যাবে। তারা তাকে দেখে বলবে- হে আল্লাহ্! আমাদেরকেও অনুরূপ দান করো এবং এতে আমাদের জন্য আরো বৃদ্ধি করে দাও। নেক্কার ব্যক্তি তাদের কাছে গিয়ে সুসংবাদ জানিয়ে বলবে- “প্রত্যেক মুসলমানকেই অনুরূপ দেয়া হবে”। আর কাফেরের চেহারা হবে কালো। শরীরের দৈর্ঘ হবে ষাইট গজ লম্বা- যেমন হযরত আদমের দৈঘ্য ছিল  এবং মুকুট পরানো হবে আগুনের। তার কাফের বন্ধুরা তাকে দেখে বলবে- এই অনিষ্ট হতে আমরা পানাহ্ চাই। হে আল্লাহ্! আমাদেরকে এরূপ মুকুট দিওনা- নবী করীম (ﷺ)  এরশাদ করেন- কাফের ব্যক্তি তাদের কাছে যাওয়ার পর তার বন্ধুরা বলবে- হে আল্লাহ্! তাকে অপদস্ত করো। কাফের ব্যক্তি বলবে- তোমাদেরকেও আল্লাহ্  রহমত থেকে দূরে রাখুক। কেননা, তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই অনুরূপ শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে”। (তিরমিযি)। (১১)  হাশরের ময়দানের তিন সময় নবীজী ব্যতিত কেউ কারো কথা স্মরণ করবে না, নিজকে নিয়েই ব্যস্ত থাকবে, عن عائشۃ رضی اللّٰہ عنہ قالت ذکرت النار فبکیت فقال رسول اللّہ ﷺ م یبکیک۔ فقلت ذکرت النار ۔ فبکیت فھل تذکرون ۔ اھلیکم یوم القیامۃ؟ فقال اما فی ثلالثۃ مواطن فلا یذکرون احدا احدا ۔ عند المیزان حتی یعلم یخفف میزانہ ام یثقل ، وعند تطایر الصحب حتی یعلم این یقع کتابہ  فی یمینہ ام فی شمالہ ام من رواہ ظھرہ وعند الصراط اذا وضع بین ظھری جھنم حتی یجوز ۔ رواہ ابوداؤد ۔ অর্থাৎ : হযরত আয়েশা  (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, জাহান্নামের কথা স্মরণ করে আমি কাঁদলাম। এ অবস্থা দেখে রাসুলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন-  কোন্ জিনিস তোমাকে কাঁদালো? আমি আরয করলাম- জাহান্নামের কথা মনে পড়লো- তাই  কাঁদ্ছি। আপনারা  (পুরুষরা) কি কিয়ামতের দিনে আপনাদের পরিবারবর্গের কথা স্মরণ করবেন? হুযুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- তিনটি জায়গায় (আমি ছাড়া) কেউ কারো কথা স্মরণ করবে না- নিজেকে নিয়েই তারা ব্যস্ত  থাকবে। প্রথমস্থান হলো মিযান- যে পর্য্যন্ত না জানবে যে,  তার পাল্লা হালকা হয়েছে- না কি ভারী হয়েছে। দ্বিতীয়স্থান হলো- যখন আমলনামা উড়ে এসে পড়বে- যতক্ষণ না সে  জানবে যে, তার ডানহাতে আমলনামা পড়েছে- নাকি বামহাতে অথবা তার পিঠের পিছনে। তৃতীয়স্থান হলো- পুলসিরাত যখন জাহান্নামের পিঠের  উপর স্থাপন করা হবে- যে পর্য্যন্ত না সে তা অতিক্রম করে যাবে” (আবু দাউদ)। (এই  হাদীস উম্মতের বেলায়- নবীদের বেলায় নয়)। ব্যাখ্যাঃ তিন সময় হলো ভয়ঙ্কর। (ক) নেকীবদী ওজন করার সময়। (খ) আমলনামা উড়ে এসে হাতে পড়ার সময়। (৩) পুলসিরাত অতিক্রমের সময়।  এই তিন সময়ে নবী ব্যতিত কেউ কারো খোঁজ রাখবে না। এই অবস্থা  হবে অন্যদের বেলায়।  নবী করীম  (ﷺ)   এই তিন বিপদের সময় মুমিনদেরকে সাহায্য করবেন বলে অন্য হাদীসে  স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অত্র হাদীসের ভাষায়ও বুঝা যায় যে, অন্যদের বেলায় এই হাদীস প্রযোজ্য। কেননা, নেকীবদী ওজন হবে উম্মতের। আর ডান বা বামহাতে আমলনামা আসা- এটাও উম্মতের বৈশিষ্ট। পুলসিরাত অতিক্রম করার অনিশ্চয়তা- এটাও উম্মতের বেলায় প্রযোজ্য। প্রিয়নবীজী তো হবেন সেই দিন এই তিন জায়গায় সাহায্যকারী। সুতরাং এ ধরণের আম হাদিসে নবীজী অন্তর্ভুক্ত নন। এটা জরুরী বিষয়। যারা অত্র হাদীসে নবীজীকে অন্তর্ভূক্ত করে, তারা ভ্রান্ত। তদুপরি- احد - احدا-এই দুইটি শব্দ নাকারা (نكره)। সুতরাং অছুলে তাফসীরের সুত্র অনুযায়ী এক সাথে দুটি নাকারা আসলে দু প্রকৃতির লোক বুঝানো হয়- এক প্রকারের নয়। অত্র হাদীসে প্রথম احد শব্দ দ্বারা মুমিনে কামেলকে বুঝানো হয়েছে এবং দ্বিতীয় احدا শব্দ দ্বারা কাফের বা গুনাহ্গারকে বুঝানো হয়েছে। বুঝা গেল-মুমিনে কামিলগণ অন্য গুনাহ্গারকে সাহায্য করবেন- তবে তিন জায়গায় নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত না হওয়া পর্য্যন্ত তাঁরাও কারো কথা ভাববেন  না। নিজের  মুক্তির ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পরই তাঁরা সাহায্যার্থে এগিয়ে আসবেন। কেউ নিজের কবিলার লোকদের জন্য  সুপারিশ  করবেন। কেউ কেউ দশজনের জন্য সুপারিশ করবেন- আবার কেউ মাত্র একজনের জন্য  সুপারিশ করবেন। ইহাই অত্র  হাদীসের মর্মকথা। যারা বলে- নবীসহ কেহই সাহায্যের জন্য  এগিয়ে আসবে না- তারা ভুল ব্যাখ্যা করেছে। তারা মু’তাজিলা ফের্কার অন্তর্ভূক্ত। মো’তাজিলা  ও ওহাবী ফের্কার লোকেরা বলে- “সুপারিশ করে ক্ষমা করালে আল্লাহর ইনসাফ থাকেনা। অপরাধীর শাস্তির ঘোষণা  দেয়া হয়েছে কোরআন মজিদের অকাট্য দলীল দ্বারা। এর খেলাফ হওয়া মূলতঃই অসম্ভব”। তাদের এই  যুক্তির খন্ডন হলো- ইনসাফের পরেই দয়ার স্থান বাকী  থাকে।  ক্ষমা  করার অর্থ ওয়াদাখেলাফী নয়- বরং অনুগ্রহ করা। ফাঁসির হুকুমের পর খালাস  করা সর্বোচ্চ নির্বাহীর দয়ার প্রতীক। দেওবন্দের ওলামাগণ বলেন- “খল্ফুল ওয়ায়িদ” বা শাস্তির পূর্ব প্রতিশ্রুতির খেলাপ করার অর্থ  হলো “ইম্কানুল কিযব” বা মিথ্যা বলার সম্ভাবনা। “আল্লাহ্ শাস্তির পুর্ব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে  অপরাধীকে ক্ষমা করতে পারেন” -এর অর্থ হলো- মিথ্যা বলতে পারেন। নাউযুবিল্লাহ! (ফতুয়া রশিদিয়া-দেখুন ইম্কানুল কিয্ব্ প্রসঙ্গ)। ১২। আমলনামার এপিঠ-ওপিঠ দেখানো হবে ইমাম কুরতুবী তাযকিরাহ্ গ্রন্থের ২৭৯ ও ২৮০ পৃষ্ঠায় হাশরের ময়দানে ডানহাতে আমলনামা ধারনকারী, বামহাতে ধারণকারী ও পিঠের  পিছনে বামহাতে আমলনামা ধারনকারীদের  একটি বিস্তারিত চিত্র এভাবে তুলে ধরেছেন- যার মর্মার্থ নিম্নরূপঃ (১২-  ক) যারা মূলতঃই নেক আমলধারী মানুষ, তাদেরকে আল্লাহর সামনে নেয়া  হবে। আল্লাহ্পাক একটি সাদা কাগজ বের করে দেখাবেন- তাতে সাদা হরফে উপরের পিঠে তার নেক কাজসমূহ  লিখিত থাকবে এবং উল্টো পিঠে লিখিত থাকবে তার কিছু গুনাহ্। আল্লাহ্পাক প্রথমে উল্টো পিঠের লিখিত গুনাহ্সমূহ তাকে  দেখাবেন। এতে নেককারবান্দা ভয় পেয়ে যাবে। তার চেহারা পরিবর্তিত  হয়ে হরিৎ রং ধারণ করবে। যখন শেষ পর্য্যন্ত নযর বুলাবে- তখন তাকে বলা হবে- এগুলো তোমার বদ আমল। আমি এগুলো ক্ষমা করে  দিয়েছি। তখন নেককার ব্যক্তি খুব খুশী হয়ে যাবে। এরপর  উপরের পিঠ  দেখানো হবে- যাতে নেক আমলসমূহ লিখিত থাকবে। যখন সে নেক আমলসমূহ পাঠ করবে- তখন তার খুশী আরো বৃদ্ধি পাবে। যখন পাঠ  শেষ করবে, তখন আল্লাহ্পাক বলবেন- এই তোমার নেক আমলসমূহ। আমি এগুলোকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিয়েছি। তখন তার চেহারা খুশীতে উজ্জল হয়ে উঠবে। তার মাথায় মুকুট পরানো হবে এবং দুই সেট পোষাক  তাকে দেয়া হবে। তার দেহের প্রত্যেক জোড়ায় জোড়ায় অলংকার পরানো হবে। তার দৈর্ঘ হবে হযরত আদম (আঃ) -এর মত ষাইটগজ লম্বা। তাকে বলা হবে- তুমি তোমার বন্ধুদেরকে গিয়ে এই সুসংবাদ দাও যে, প্রত্যেক নেককারের জন্যই এরূপ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যখন সে বিদায় হয়ে  বন্ধুদের কাছে আসবে- তখন বলতে থাকবে- বন্ধুরা আমার! এই নাও আমার আমলনামা- তোমরাও তা পাঠ করে দেখো। আমি জানতাম যে, আমাকে হিসাব নিকাশের সম্মূখীন  হতে হবে। অতঃপর সে সুখীজীবন যাপন করবে সু-উচ্চ জান্নাতে। “তার ফলসমূহ অবনমিত হয়ে মুখের কাছে আসবে”। (ছুরা হাক্কাহ্ ১৯-২৩ আয়াত)। এরপর ঐ ব্যক্তি বন্ধুদেরকে বলবে- আমাকে চিনেন কি? তারা বলবে- আল্লাহর  প্রদত্ত সম্মান তোমাকে আচছাদিত করে রেখেছে- তুমি কে? সে বলবে- আমি অমুকের পুত্র অমুক। তোমাদের প্রত্যেককেই আল্লাহর এ সুসংবাদ দিতে এসেছি- “তোমরা বিগত দিনে তথা উপবাসের দিনে যা প্রেরন করেছিলে- তার প্রতিদানে খাও এবং পান করো”। (সুরা হাক্কাহ্ ২৪ আয়াত)। (১২- খ)  যারা মূলতঃই বদকার হবে, তাদেরকেও আল্লাহর সামনে   ডাকা হবে। তাদের সামনে আল্লাহ্পাক একটি কালো কাগজ বের করে দেখাবেন। সেখানে কালো অক্ষরে আমলসমূহ লেখা  থাকবে। ভিতরের  দিকে লেখা থাকবে নেকের কাজ- আর বাইরের দিকে লেখা থাকবে খারাপ কাজ। আল্লাহ্পাক প্রথমে  দেখাবেন ভিতরের নেক  কাজের পৃষ্ঠা। বদ্লোক উহা পাঠ করে মনে করবে- নাজাত পেয়ে গেছি। শেষ পর্য্যন্ত পড়া হলে আল্লাহ্ বলবেন- তোমার এই নেক্কাজ তোমার কাছে ফেরত দেয়া হলো। তখন তার চেহারা কালো হয়ে যাবে, আর চিন্তা বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং সে নিরাশ হয়ে পড়বে। এরপর আমলনামার উল্টো পিঠ দেখানো হবে। সে তার অপরাধসমূহ পাঠ করে আরো বেশী চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়বে এবং তার চেহারা আরো  কালো হয়ে যাবে। যখন সে  শেষপর্য্যন্ত পৌঁছবে, তখন দেখতে পাবে- “এই দেখ তোমার বদ আমল সমূহ- তোমার আযাব বহুগণে বৃদ্ধি করা হবে”। হাদীস বর্ণনাকারী রাবী বর্ণনা করেন- জাহান্নামের দিকে নযর করে তার চোখ  ঘোলাটে হয়ে যাবে এবং চেহারা হয়ে যাবে কালো। আর তাকে পরানো হবে গলিত আলকাত্রার পোষাক। তাকে বলা হবে- যাও! তোমার বন্ধুদেরকে গিয়ে বলো- যত পাপী ও অপরাধী আছে- তাদের এ ধরণেরই শাস্তি হবে। সে যেতে যেতে বলবে-  হায়! যদি আমাকে আমলনামা না দেওয়া হতো- তাহলে কতই না ভাল হতো। হায়! আমাকে যদি এধরণের আমালনামা না দেয়া হতো। হায়! আমার মৃত্যুই যদি শেষ গন্তব্য হতো! আজ আমার ধন সম্পদের ক্ষমতা ও বাহাদুরী সব ধংস হয়ে গেলো”। তখন আল্লাহ্পাক বলবেন- “একে ধরো, গলায় বেড়ী পরিয়ে দাও।  অতঃপর নিক্ষেপ করো জাহান্নামে। অতঃপর সত্তর গজ দীর্ঘ শিকল দিয়ে তাকে বাধো”। (সূরা হাক্কাহ ২৫-৩২ আয়াত)। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন- দুনিয়ার সত্তর গজ লম্বা শিকল  পরিয়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। লোহার শিক তার মুখে ঢুকিয়ে পায়খানার রাস্তা দিয়ে  টেনে বের করা হবে- অথবা পায়খানার রাস্তা দিয়ে ঢুকিয়ে মুখ দিয়ে টেনে বের করা হবে। ঐ  শিকলের একটি কড়া যদি কোন পাহাড়ে রাখা হতো, তাহলে উক্ত পাহাড় গলে যেতো। সে তার বন্ধুদেরকে ডেকে বলবে- আমাকে তোমরা চিন কি? তারা বলবে- না, চিনি না। তবে তোমার অপমান প্রত্যক্ষ করছি। সে বলবে- আমি  অমুকের পুত্র অমুক।  তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই অনুরূপ শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে”। (১২- গ)  যাদের আমলনামা পিঠের পিছনে দেয়া হবে- তাদের কাঁধের বামদিক ফুঁড়ে বামহাত পিছনের দিকে চলে যাবে। তাফসীর বিশারদ মুজাহিদ বলেন-তার চেহারাও  পিছনদিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর সেও অনুরূপ দেখতে পাবে এবং অনুরূপ শাস্তি ভোগ করবে”। (তাযকিরাহ্ পৃষ্ঠা ২৭৯-২৮০)। (১৩) চার প্রশ্নের জওয়াব না দিয়ে কেউ নড়তে পারবে না, عن ابی  ھریرۃؓ :  قال قال  رسول  اللّٰہ ﷺ لا تزول قد ما عبد یوم القیامۃ حتی یسأل عن اربع : عن عمر فیما افناہ وعن علمہ ما عمل فیہ ، وعن مالہ من این اکتسبہ وفیھا انفقہ، وعن جسمہ فیما ابلاہ رواہ الترمذی۔ অর্থাৎ : হযরত  আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন-“ কিয়ামতের দিনে হিসাবের সময় কোন বান্দা চার প্রশ্নের জওয়াব না দিয়ে পা সরাতে পারবে না- (ক) তার জীবন কোন্ কাজে শেষ করে দিয়েছিল (খ) এলেম শিক্ষা করে আমল করেছে কি? (গ) কোন্ পথে সম্পদ অর্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয়  করেছে? (ঘ) শরীরকে কোন্  কাজে ধ্বংস করেছে” (তিরমিযি)। এই হাদীসটি হাসান লি যাতিহি ও সহীহ লি গায়রিহি পর্যায়ের। (১৪) হক্কুল্লাহর মধ্যে নামায এবং হক্কুল ইবাদ- এর মধ্যে হত্যা সম্পর্কে প্রথম বিচার করা হবে, وخرج النسائی مرفوعا ۔: اول ما یحاسب علیہ العبد الصلوۃ واول ما یقطی بین الناس والدماء অর্থ : ইমাম  নাছায়ী মারফু’ সুত্রে একখানা হাদীস বর্ণনা করেছেন।  নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন-  “হুক্কুল্লাহ্র মধ্যে  সর্বপ্রথম হিসাব-নিকাশ নেয়া হবে নামায সম্পর্কে এবং মানুষের হক্বের মধ্যে সর্বপ্রথম বিচার করা হবে খুন খারাবীর বিষয়ে”। (মাওয়াহিব ৬৫৮ পৃঃ) (১৫) সর্বপ্রথম উম্মতে মোহাম্মদীকে বিচারের জন্য ডাকা হবে, عن ابن عباس قال: قال رسول اللّٰہ ﷺ فاذا اراد اللّٰہ تعالی ان یقضی بین خلقہ نادی مناد : این محمد اومتہ فاقوم تتبعنی امتی عزا محجلین من اثر الطھور ۔ قال ﷺ فنحن الاٰخرون الاولون واول من یحاسب  ۔ وتفرج لنا الامم عن طریقنا وتقول الامم  کادت ھذہ الامۃ ان تکون انبیاء کلھا ۔ خرجہ ابوداؤد الطیالسی مرفوعا ۔ অর্থ : হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লাম এরশাদ  করেছেন- অবশেষে যখন আল্লাহ্পাক আপন বান্দাদের ফায়সালা করার   ইচ্ছা করবেন- তখন একজন আহ্বানকারী ফিরিস্তা ডাক দিয়ে  বলবে- “কোথায় আছেন প্রিয় মোহাম্মদ এবং কোথায়  আছে তাঁর উম্মত? (আপনারা এগিয়ে আসুন  বিচারের জন্য)। হুযুর (ﷺ) বলেন- আমি যাওয়ার জন্য তৈরী হবো এবং আমার পিছনে পিছনে আমাকে  অনুসরণ করবে আমার উম্মতগণ। তাদের প্রতীকচিহ্ন হবে অযুর স্থানসমূহে উজ্জ্বল জ্যোতি। (মূলতঃ ঘোড়ার শরীরে ডোরা চিহ্নকে “গোররা মুহাজ্জাল” বলা হয়)। হুযুর (ﷺ) এ প্রসঙ্গে  নিজের ও উম্মতের মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন- “আমরা সর্বশেষে দুনিয়াতে এসেও পরকালে হবো অগ্রগামী এবং সর্বপ্রথম আমাদের হিসাব নিকাশ চুকিয়ে ফেলা হবে এবং আমাদের রাস্তা  হতে অন্যান্য উম্মতকে সরিয়ে দিয়ে আমাদের জন্য রাস্তা পরিষ্কার করে দেয়া হবে। অন্যান্য উম্মতরা বলাবলি করবে- মনে হয় যেন উনারা সবাই এক একজন নবী”।  (আবু দাউদ  তায়ালেছী ইবনে আব্বাস সুত্রে)। (১৬) পরকালে এক যালেমকে  ক্ষমা করে মযলুম ব্যক্তির জান্নাত লাভ, عن انس : بینا رسول اللّٰہ ﷺ جالس اذ رایناہ یضحک حتی بدت ثنایاہ ، فقال لہ عمر ما اضحکک یا رسول اللّٰہ ﷺ بابی انت وامی ۔ قال رجلان من امتی  جثیا بین یدی رب العزۃ فقال احدھما یا رب خذلی  مظلمتی من اخی فقال اللّٰہ کیف تضع باخیک ولم یبن  من حسناتہ شئی؟ قال یا رب فلیتحمل من اوزاری ۔ وفاضت عینا رسول اللّٰہ ﷺ بالبکاء ۔ ثم قال : ان ذلک لیوم عظیم یحتاج الناس ان یحمل عنھم من اوزارھم ۔ فقال اللّٰہ للطالب ۔ ارفع بصرک فانظر فقال یا رب اری مدائن من ذھب وفضۃ ملکۃ باللؤلؤ لا ی نبی ھذا ۔ او لائی صدیق ھذا اولائی شھید ھذا ۔ قال لمن یعطی الثمن ۔ فقال یارب ومن یملک ذلک؟ قال انت  تملکہ ۔ قال بماذا؟ قال بعفوک عن اخیک قال رب فانی قد عفوت عنہ ۔ قال اللّٰہ تعالی فخز بیک اخیک وادخلہ  الجنۃ فقال رسول  اللّٰہ ﷺ عند ذلک اتقوا اللّٰہ واصلحوا ذات بینکم فان اللّٰہ یصلح   بین المسلمین یوم القیامۃ رواہ الحاکم والبیھقی فی البعث ۔ অর্থাৎ : ইমাম বায়হাকী ও মোস্তাদরাক্ হাকেম হযরত আনাছ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। হযরত আনাছ (রাঃ) বর্ণনা করেন, “একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মজলিসে  বসা অবস্থায় ছিলেন। আমরা দেখতে  পেলাম- তিনি উচ্চ হাসি হাসছেন এবং তার সামনের চারটি দান্দান মোবারক প্রকাশিত  হয়ে পড়েছে। হযরত ওমর (রাঃ) নিবেদন  করে বললেন- আমার পিতা-মাতাকে আপনার  উপর উৎসর্গীত করলাম- আপনি কিজন্য হাসছেন? হুযুর (ﷺ) এরশাদ করলেন- “আমার উম্মতের দু’ব্যক্তিকে আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জতের সামনে নতজানু হয়ে বসে থাকতে দেখ্লাম। তাদের একজন অন্যজনের বিরূদ্ধে আল্লাহর কাছে নালিশ করে বল্ছে- হে আমার রব! আমার এই ভাইয়ের নিকট থেকে যুলুমের বদ্লা নিয়ে আমাকে দিন। আল্লাহ্ বললেন- তোমার ভাইয়ের নিকট তো কোন নেক আমল নেই, কাজেই তুমি এখন তোমার ভাইয়ের থেকে কিভাবে বদ্লা নিবে? বাদী বললো- হে আমার রব! তাহলে সে আমার গুনাহ্সমূহ  থেকে সমপরিমান গুনাহ্ বহন করুক! হযরত আনাছ  (রাঃ)  বলেন-  এসময় হুযুর (ﷺ) -এর দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিলো। কান্না শেষে হুযুর (ﷺ) বললেন- ঐদিনটি হবে খুবই ভয়ঙ্কর দিন। ঐদিন মানুষ এই বিষয়ের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়বে- যেন  তাদের গুনাহ্সমূহ অন্যে নিয়ে যায়।  আল্লাহ্পাক বাদীকে বললেন- তুমি চোখ তুলে দেখ। বাদী বললো- হে রব! আমি স্বর্ণ ও রৌপ্য খচিত লুলু পাথরের অনেক শহর দেখতে পাচ্ছি। এগুলো কি কোন নবী, সিদ্দিক অথবা শহীদের জন্য তৈরী করা হয়েছে? আল্লাহ্ বললেন- না, বরং ঐ ব্যক্তির জন্য, যে এর মূল্য দিতে পারবে। বাদী বললো- হে রব! কার সাধ্য আছে এত মূল্য দেয়ার? আল্লাহ্ বললেন-  তোমারই ক্ষমতা  আছে। বাদী বললো- কিভাবে? আল্লাহ্ বললেন- তোমার অসহায় যালেম  ভাইকে ক্ষমা করার দ্বারা জান্নাতের মূল্য পরিশোধ করতে পারো। বাদী খুশী হয়ে বললো-  তাহলে আমি আমার এই অসহায় ভাইকে ক্ষমা করে দিলাম। আল্লাহ্ বললেন- যাও! তোমার ভাইয়ের হাত ধরে নিজে জান্নাতে যাও এবং তাকেও জান্নাতে প্রবেশ করাও”। নবী করীম (ﷺ) এ ঘটনা বর্ণনা করে এরশাদ করলেন- “তোমরা সদাসর্বদা আল্লাহ্কে ভয় করে চলবে এবং নিজেদের মধ্যে আপোষ করে চলবে। তাহলে পরকালে আল্লাহ্ও মুসলমানদের মধ্যে আপোষ করে দিবেন”। (হাকেম ও বায়হাকী এবং মাওয়াহিব : ৬৫৯-৬৬০ পৃষ্ঠা)। ব্যাখ্যাঃ যুলুম হলো ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। মযলুম ব্যক্তি ক্ষমা না করলে  বা তার প্রতি সন্তষ্ট না হওয়া পর্য্যন্ত আল্লাহ্ ক্ষমা করবেন না। যুলুমের পরিমান মত নেক আমল  যালেম থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পরকালে ময্লুমকে দেয়া হবে। যালেম ব্যক্তির কোন নেক না থাকলে মযলুমের গুনাহের বোঝা তার কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হবে- বলে অনেক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তবে আল্লাহ্পাক ইচ্ছা করলে তাদের মধ্যে এভাবে আপোষ করাতে পারেন যে,  ময্লুম ব্যক্তি যালেমকে ক্ষমা করলে তার বিনিময়ে তাকে উচ্চ মাকাম প্রদান করবেন এবং এই ক্ষমার কারনে যালেমকেও জান্নাত  দিতে পারেন। বর্তমান হাদীসটি তারই প্রমান। তবে  এটা নীতির উপর নির্ভরশীল নয়- বরং দয়ার উপর। সুতরাং- ইবাদত বন্দেগী যদি ক্ষতিপূরণ দিতে দিতে শেষ হয়ে যায়- তাহলে সে ইবাদতের কি মূল্য আছে? তাই ইবাদত দিয়ে যেন যুলুমের ক্ষতিপূরণ দিতে না হয়-  সেজন্য যুলুম করা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করাই কর্তব্য। উক্ত দুই ব্যক্তির ক্ষেত্রেই অত্র হাদীসটি সীমিত, সবার বেলায় নয়- একথা মনে রাখতে হবে। বুঝাগেল আল্লাহ্ কোন্ সময় কি কাজ করেন- নবীজী মদিনায় বসেই তা দেখেন (সোবহানাল্লাহ)। ১৭। এক শস্যবীজ পরিমাণ যুলুমের বিনিময়ে সাতশত মকবুল নামায ছিনিয়ে নেয়া হবে, وقد نقل : لو ان رجلا لہ ثواب سبعین نبیا ولہ خصم بنصف دائق لم  یدخل الجنۃ حتی یرضی خصمہ وقیل یؤخذ بدائق سبع مأتہ صلاۃ مقبولۃ فتعطی لخصمہ ذکرہ القشیری فی التحبیر (المواھب  ص ۰۶۶) অর্থ : “বর্ণিত আছে- কোন ব্যক্তির যদি সত্তরজন নবীর সমপরিমান সওয়াবও থাকে- আর তার প্রতিপক্ষের প্রতি যদি অর্ধদানা পরিমান যুলুম করা হয়-তাহলে যে পর্য্যন্ত প্রতিপক্ষ রাযী না হবে- সে পর্যন্ত সে জান্নাতে প্রবেশ করতে   পারবেনা। আরও কথিত আছে- একদানা পরিমান  যুলুমের পরিবর্তে সাতশ মকবুল নামায ক্ষতিপূরন স্বরূপ তার থেকে ছিনিয়ে নেয়া হবে। ইমাম কোশায়রী তার “তাহ্বীর” নামক গ্রন্থে এ বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। (মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া ৬৬০ পৃষ্ঠা)। (১৮) হাশরের দিনে সবচেয়ে গরীব ও সর্বহারা হবে যালেম ব্যক্তি, عن ابی ھریرۃ عن النبی ﷺ انہ قال اتدرون ماالمفلس ؟ قالوا المفلس فینا من لادرھم لہ ولامتاع ۔ فقال علیہ السلام ان المفلس من امتی من یأتی یوم القیامۃ  الصلوۃ والصیام والزکوۃ ۔ ویأتی قد شتم ھذا وقذف ھذا واکل مال ھذا وسفک دم ھذا وضرب ھذا ۔ فیعطی ھذا من حسنا وھذا من حسناتہ ۔ فان فنیت حسناتہ قبل ان یقضی ما علیہ اخذ من خطایا ھم فطرحت علیہ ثم طرح فی النار رواہ مسلم۔ অর্থাৎ : নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “তোমরা কি জান- প্রকৃত অভাবী ব্যক্তি কে? সাহাবায়ে কেরাম উত্তর দিলেন- আমাদের মধ্যে যাদের দিরহাম বা সম্পদ নেই- তারাই অভাবী। রাসুল করিম (ﷺ) বললেন- আমার উম্মতের মধ্যে প্রকৃত অভাবী  ও  সর্বহারা হলো ঐব্যক্তি- যে হাশরের ময়দানে নামায, রোযা, যাকাত- ইত্যাদির সাওয়াব নিয়ে হাযির হবে- কিন্ত সে দুনিয়াতে কাউকে গালিগালাজ করেছে, কারও চরিত্রের উপর মিথ্যা তোহ্মত দিয়েছে,  কারো সম্পদ অবৈধভাবে হজম  করেছে, অবৈধভাবে কারোও খুন ঝরিয়েছে, কাউকে অন্যায়ভাবে খুন করেছে, কাউকে অন্যায়ভাবে মারপিট করেছে। এমতাবস্থায় পরকালে জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ স্বরূপ সকলকে দেয়া হবে তার নেক আমল। যখন দিতে দিতে তার নেক আমল শেষ হয়ে যাবে- তখন মযলুম ব্যক্তির গুনাহ্র বোঝা যালেমের মাথায় চাপিয়ে দেয়া হবে। এরপর যালেম ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে”। (মুসলিম) (১৯) মযলুমের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়, قال  رسول اللّٰہ ﷺ ایاک ودعوۃ المظلوم وانما یسأل اللّٰہ تعالی جقہ وان اللّٰہ لا یمنع ذاحق (مشکوۃ) অর্থাৎ : নবী করীম (ﷺ)  এরশাদ করেছেন- “মযলুমের  বদ্দোয়া ও আহাজারী থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখো। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ময্লুমের হক সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন। আর আল্লাহ্পাক ময্লুমকে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করবেন না”। (মিশকাত)। (২০) বেনামাযীর শাস্তি, নামাযীর পুরস্কার عن عمروبن العاص عن النبی ﷺ انہ ذکر الصلوۃ یوما فقال من حافظ علیھا کانت لہ نورا وبرھانا ونجاۃ  یوم القیامۃ ومن لم یخاف علیھا لم یکن لہ نوا ولا برھانا ولا نجاۃ وکان یوم القیامۃ  مع قارون وفرعون وھامان وابی بن خلف رواہ احمد والبیھقی فی شعب الایمان (مشکوۃ کتاب الصلوۃ فی فضیلتھا) অর্থাৎ  : আমর ইবনে আছ  (রাঃ) নবী করীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন- একদিন রাসুলে করিম  (ﷺ) নামায প্রসঙ্গে আলোচনায় এরশাদ করলেন- যেব্যক্তি ঠিকমত নিয়ম কানুন  অনুযায়ী নামায আদায় করবে- তার জন্য কিয়ামত দিবসে নামায হবে নূর, মুক্তির সনদ এবং স্বয়ং মুক্তির  দলীল। আর যেব্যক্তি নামায  নিয়ম অনুযায়ী আদায় করবেনা (ফরয, ওযাজিব, সুন্নাত সহ) তার জন্য নামায- না হবে নূর, না হবে মুক্তির সনদ, আর না হবে মুক্তির দলীল। তদুপরি- তার হাশর হবে কারুন, ফিরাউন,  হামান ও নবীর দুশমন উমাইয়া ইবনে খালফ- এর সাথে”।  (ইমাম আহমদ এবং বায়হাকী শুয়াবুল ঈমান, মিশকাত ফাযায়েলে সালাত অধ্যায়)। ব্যাখ্যাঃ ইমাম তীবী বলেন- নামাযীরা নবী, সিদ্দীক ও শহীদানদের সাথে হাশরে উঠবে এবং বেনামাযী বা নামাযের হক্ব অনাদায়ী  ব্যক্তির হাশর হবে কারুন, ফিরাউন, হামান ও উমাইয়া ইবনে খল্ফের সাথে। (২১) যাকাত অনাদায়ী ব্যক্তির শাস্তি হবে আগুনের লৌহদণ্ডের দাগ, عن ابن عمر قال قال رسول اللّٰہ ﷺ ما من صاحب ذھب ولا فضۃ لا یؤدی منھا حقھا الا اذا کان یوم القیامۃ صفحت لہ صفائح من نار فاحمی علیھا فی نار  جھنم فیکوی بھا جنبہ وظھرہ کلما بردت اعیدت لہ فی یوم کان مقدارہ خمسین الف سنۃ حتی یقضی بین العباد فیری سبیلہ ام الی الجنۃ واما الی النار رواہ مسلم ۔ অর্থাৎ  : হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন-  রাসুল  (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “যেব্যক্তি স্বর্ণরৌপ্যের ছাহেবে নেছাব হয়েও যাকাত আদায়ের মাধ্যমে তার হক্ব আদায় করলোনা, কিয়ামতের দিনে আগুনের লৌহদন্ড দিয়ে তাকে দাগ দেয়া হবে। উক্ত লৌহদন্ড জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তা দ্বারা তার কপালে, পিঠে এবং পার্শ্বদেশে ছেঁক দিয়ে দগ্ধ করা হবে। যখনই তা ঠান্ডা হবে, পুনরায় তা উত্তপ্ত করা হবে- এমন একদিনে- যা হবে পঞ্চাশ  হাজার বছরের সমান। ঐদিন আল্লাহ্পাক বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করবেন। সে দেখতে পাবে, তার  ঠিকানা জান্নাতে- নাকি  জাহান্নামে”। (মুসলিম  শরীফ)। ব্যাখ্যাঃ এই হাদীসখানা কোরআন  মজিদের সূরা তাওবার ৩৪-৩৫ আয়াতের বিস্তারিত ব্যাখ্যা স্বরূপ। আয়াত দুটি হলো, الَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ - يَوْمَ يُحْمَىٰ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ ۖ هَٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنتُمْ تَكْنِزُونَ অর্থাৎ : “যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য (টাকা পয়সা) জমা করে রাখে এবং  তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না (যাকাত দেয় না), হে রাসুল! তাদেরকে বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা (জমাকৃত সম্পদ) উত্তপ্ত করা হবে এবং তার  দ্বারা তাদের ললাটে, পার্শ্বদেশে ও পৃষ্ঠদেশে ছেঁক দিয়ে দগ্ধ করা হবে এবং বলা হবে- এগুলো হলো ঐ সম্পদ- যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং এক্ষনে স্বাদ গ্রহণ করো জমাকৃত সম্পদের”। (ছুরা তাওবাহ্ ৩৪-৩৫ আয়াত)। (২২) যাকাত অনাদায়ী মাল গলায় সাপ হয়ে দংশন করবে, روی النسائی والبخاری مرفوعا عن ابی ھریرۃؓ رضی اللّٰہ عنہ قال قال رسول اللّٰہ ﷺ من آتاہ اللّٰہ مالا فلم یود زکاتہ مثل لہ یوم القیامۃ شجاعا اقرع  لہ زبیبتان یطوقۃ یوم القیامۃ ثم یاخذ بلھزمتیہ یعنی شد فیہ ۔ ثم یقول انا مالک ان کنزک ثم تلا قولہ تعالی ولا  یحسبین الذین یبخلون بما اٰثھم اللّٰہ من فضلہ ھو خیرا لھم ۔ بل ھو شرلھم یسطوقون مایخلوا بہ یوم القیامۃ۔ অর্থাৎ : “ইমাম নাছায়ী ও ইমাম বুখারী হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। হযরত আবু  হোরায়রা  (রাঃ)  বলেন-  রাসুলেকরিম  (ﷺ) এরশাদ করেছেন- আল্লাহ্ যাকে সম্পদের মালিক বানিয়েছেন- কিন্ত সে যাকাত আদায় করেনি, হাশরের দিনে ঐ মাল বিষধর দ্বিমূখী সাপ হয়ে তার গলায় জড়িয়ে ধরবে এবং তার দুই ঠোঁট দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলবে- আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সঞ্চয়কৃত ধনভান্ডার। এই ঘটনা বর্ণনা করে রাসুলেপাক (ﷺ)  প্রমান স্বরূপ কালামে  মজিদের ছুরা আলে ইমরানের ১৮০ নং আয়াত তিলাওয়াত করলেন- যার অর্থ হচ্ছে- “আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যে সম্পদ দান  করেছেন, তাতে যারা কৃপনতা করে এই ধারনায় যে, কার্পন্য করাই তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে- তারা যেন এরূপ ধারনা না করে। বরং এটা তাদের জন্য একান্তই ক্ষতিকর বলে প্রতিপন্ন হবে (কিয়ামতের দিনে)। যে সম্পদে তারা বখিলী   করে- সেসব ধনসম্পদ কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরিয়ে দেয়া হবে”। (সূরা আলে ইমরান ১৮০ আয়াত)। ব্যাখ্যাঃ আয়াতে বলা হয়েছে- শুধু বেড়ী পরানো হবে। কিন্ত নবী করীম (ﷺ) সেই বেড়ীর ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে-  বিষাক্ত দ্বিমূখী সাপ তার গলায় বেড়ীর ন্যায় জড়িয়ে ধরে তাকে দংশন করতে থাকবে। পরকালের শাস্তি বা শান্তি- সবকিছু নবীজীর নখদর্পনে। তিনি এখান থেকেই সব কিছু দেখছেন। হাযির নাযির হওয়ার এটি একটি দলীল। অর্থাৎ এক জায়গায় থেকেই সবকিছু দেখা ও দৃষ্টিগোচরে আনয়ন করা। হাযির নাযিরের আর এক অর্থ- তিনি সশরীরে একই সময়ে  বিভিন্নস্থানে উপস্থিত হতে পারেন। আরবীতে এটাকে  বলা হয় “শাহেদুন” বা সশরীরে উপস্থিত ও চাক্ষুস সাক্ষী (রাগেব ইস্পাহানী)। (২৩) হাশরে  উজ্জ্বলচেহারা হবে  আহ্লে সুন্নাত অনুসারীদের- আর কালো চেহারা হবে ৭২ ফের্কার বাতিলপন্থীদের, عن ابن عمر بن الخطاب رضی اللّٰہ عنھا قال قال رسول اللّٰہ ﷺ فی قولہ تعالی ’’یوم تبیض وجوہ تسود وجوہ‘‘ قال : یعنی وجوہ اھل السنۃ  وتسود وجوہ اھل البدعۃ ۔ وقال مالک بن انس رضی اللّٰہ عنہ ھی فی اھل الھواء ۔ وقال الحسن ھی فی المنافقین وقال قتادۃ فی المرتدین ۔ وقال ابی بن کعب ھی فی الکفار وھو اختیار الطبری (وقال القرطبی اللّٰھم بیض وجھنا یوم تبیض  وجوہ اولیائک ولا تسود وجوھنا ۔ یوم تسود وجوہ اعدائک بحق رسلک وانبیائک واصفیائک بفضل یاذا الفضل العظیم وکرمک یا کریم ۔ অর্থাৎ : হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন- আল্লাহ্পাকের কালামে মজিদের সূরা আলে ইমরান -এর ১০৬ আয়াত “ঐদিন অনেক চেহারা হবে উজ্জ্বল এবং অনেক চেহারা হবে কালো”- একথার ব্যাখ্যায় নবী করিম (দ:) এরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ্ পাকের একথার অর্থ হলো- “আহ্লে সুন্নাত অনুসারীদের চেহারা হবে উজ্জ্বল- আর আহ্লে বিদ্আত (ওহাবী, খারেজী, মৌদুদীসহ ৭২ ফের্কা) -এর চেহারা হবে কালো। ” (ইবনে ওমর) ইমাম মালেক (রাঃ) বলেছেন- কালো  চেহারা হবে “আহ্লে হাওয়া” বা বাতিলপন্থীদের।  হযরত হাসান বসরীর মতে- কালো চেহারা হবে  “মুনাফিকদের”। কাতাদাহ্ বলেছেন- “ধর্মত্যাগীদের”  চেহারা হবে কালো। হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ)  বলেছেন- উক্ত আয়াতে কালো চেহারা বলতে “কাফেরদেরকে” বুঝানো হয়েছে এবং ইমাম তাবারী তাঁর তাফসীরে এ মতই সমর্থন করেছেন”। (তাযকিরাহ্) (অর্থাৎ-আহ্লে সুন্নাত পরিপন্থী কাফির,  মুনাফিক, ধর্মত্যাগী, বাতিলপন্থী- তথা আহ্লে বিদআত বা  ৭২ দল- সকলের চেহারাই হাশরের দিনে কালো হবে। ইহাই জাহান্নামী হওয়ার আলামত)। “সুন্নীয়ো কে মুহ্ উজালা, ওহাবীয়ো কেমুহ্ কালা” ইয়া নবী ছালাম আলাইকা,  ইয়া রাসুল ছালাম  আলাইকা। ইমাম কুরতুবী আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ  করছেন এভাবে- “হে আল্লাহ্! যেদিন তোমার বন্ধুদের  মুখ উজ্জ্বল হবে- সেদিন আমাদের মুখও উজ্জ্বল করো এবং যেদিন তোমার শত্র“দের মুখ কালো হবে- সেদিন  আমাদের মুখ কালো করোনা  (কেননা, আমরা তো সুন্নী)। হে আল্লাহ্! তোমার নবীরাসুল ও খাস লোকদের তোফায়লে এবং তোমার অনুগ্রহে আমাদের ফরিয়াদ কবুল করো- হে মহান অনুগ্রহদাতা এবং কবুল করো তোমার দয়ায়- হে দয়াবান। ” (তাযকিরাহ্) বিঃ দ্রঃ “আহ্লে সুন্নাত” শব্দটি নতুন  নাম নয়- বরং নবীজী এবং  সাহাবীগণের  প্রদত্ত নাম। ইহাই ইসলামের মূল ধারা। যে এটাকে ব্যঙ্গ করবে- সে নবী ও সাহাবীদের দুশমন। আমরা সুন্নী হয়ে গৌরববোধ করি এবং আহ্লে সুন্নাতের  সেবা করি। বাতিল ৭২ ফের্কাকে সংক্ষেপে ও এক নামে বলা  হয় “আহ্লে বিদ্আত”।  সুতরাং আহ্লে সুন্নাত হলো জান্নাতী দল এবং আহ্লে বিদ্আত হলো ৭২ ফের্কাভূক্ত জাহান্নামী দল। (২৪) ছোট ছোট গুনাহ্ একসাথ হয়ে কবিরা গুনাহে পরিনত হয়- যদি তা প্রতিনিয়ত করতে থাকে, وقد روی ان النبی ﷺ ضرب بصغائر الذنوب مثلا فقال : انما محقرات الذنوب کمثل قوم نزلوا سوادا واججوا نارا فشورا خبزھم ۔ وان الذنب الصغیر یجتمع علی صاحبہ فیھلکہ الا ان یغفروا اللّٰہ واتقوا محقرات الذنوب فان لھا من اللّٰہ طالبا ۔ অর্থাৎ : “হাদীসে   বর্ণিত  আছে- নবী করীম (ﷺ) সগীরা  গুনাহ্সমূহের একটি উদাহরণ  এভাবে দিয়েছেন- “নিশ্চয়ই ছোট ছোট গুনাহ্সমূহের উপমা হচ্ছে এরূপঃ যেমন একদল লোক কোন এক বিরান  ময়দানে অবতরন করলো এবং খাদ্যদ্রব্য পাকানোর জন্য অন্য লোকেরাও এসে  উপস্থিত হলো। তাদের প্রত্যেকে লাক্ড়ী সংগ্রহ করতে নেমে পড়লো। কেউ সংগ্রহ করে আনলো এক মুঠি লাক্ড়ী, কেউ দু মুঠি। এভাবে তারা অল্প অল্প করে লাকড়ীর বিরাট স্তপ করলো  এবং আগুন জ্বালিয়ে প্রয়োজনীয় রুটি তৈরী করলো। অনুরূপ ভাবেই ছোট ছোট গুনাহ্সমূহ একত্রিত হয়ে গুনাহ্কারীকে ধ্বংস করে দেয়। তবে আল্লাহ্পাক ক্ষমা করে দিলে অন্য কথা। তোমরা ছোট ছোট গুনাহ্সমূহ হতে  বেঁচে থাকো। কেননা, এগুলো সম্পর্কেও  আল্লাহর কাছে বিচারপ্রার্থী রয়েছে। ” (আত্ তাযকিরাহ্ ২৮২ পৃষ্ঠা)। ব্যাখ্যাঃ নীতিমালা হলো- সগীরা গুনাহ্  অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে মাফ হয়ে যায়- যদি অনিচ্ছাকৃত হয়। কিন্ত ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিনিয়ত করতে  থাকলে বিনা তাওবাহ্তে তা ক্ষমা হবে না এবং  এগুলো একত্রিত হয়ে কবিরা গুনাহ্য় পরিনত হয়। আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে কবিরা- সগীরা- সব  ধরণের গুনাহ্-ই ক্ষমা করতে পারেন। ইহা সাধারণ নিয়মের অন্তর্ভূক্ত নয়। আল্লাহ্পাক  এরশাদ করেন- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমা করেননা শিরিক গুনাহ্।  এছাড়া অন্যান্য সগীরা কবিরা- সব ধরণের গুনাহ্ই ক্ষমা করার অধিকারী  তিনি। যাকে ইচ্ছা- তিনি ক্ষমা করবেন” (সুরা নিসা)। (২৫) কি কি বিষয়ে কাকে কাকে হাশরে প্রশ্ন করা হবে এবং প্রশ্নের ধরন কি হবে? আল্লাহ্পাক সুব্হানাহু ওয়া তায়ালা কোরআন মজীদে হাশরের  ময়দানে বিভিন্ন  বিষয়ে প্রশ্নের উল্লেখ করেছেন। যথা- ২৫- (ক) চোখ, কান ও অন্তকরনকে প্রশ্ন করা হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন- إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا অর্থাৎ “নিশ্চয়ই কান, চোখ ও  অন্তকরন- এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে”। (সুরা বনী ইসরাঈল ৩৬ আয়াত)। ব্যাখ্যাঃ কানকে প্রশ্ন করা হবে- তুমি সারাজীবন কি কি আকথা-কুকথা শুনেছ? চোখকে প্রশ্ন করা হবে- তুমি সারা জীবন কি কি খারাপ জিনিস দেখেছ? অন্তরকে প্রশ্ন করা হবে-তুমি সারা জীবন  মনে মনে কি কি খারাপ  কল্পনা  করেছ  এবং  কোন্ কোন্ আক্বিদা-বিশ্বাস পোষন করেছ? যদি কান দ্বারা শরিয়ত বিরোধী কথাবার্তা শুনে থাকে; যেমন কারো গীবত এবং হারাম গানবাদ্য শুনে থাকে। চক্ষু দ্বারা যদি শরিয়ত বিরোধী কোন বস্তু দেখে থাকে- যেমন বেগানা স্ত্রীলোক বা বেগানা  পুরুষের প্রতি কু-দৃষ্টি দিয়ে থাকে। অন্তকরন দ্বারা যদি কোরআন- সুন্নাহ্ বিরোধী কোন  আক্বিদা পোষন করে থাকে- অথবা প্রমাণ ছাড়া কারো প্রতি যদি মনে মনে কোন অভিযোগ  স্থাপন করে  থাকে- তাহলে এগুলো সম্পর্কেও প্রশ্ন করা হবে। আল্লাহ্পাক আরো বলেন- إِن تُبْدُواْ مَا فِي أَنفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُم بِهِ اللّهُ অর্থাৎ “তোমরা মনে মনে যা কিছু  দৃঢ়ভাবে পোষন করে থাক- কিংবা মুখে তা প্রকাশ কর- সে সম্পর্কেও তোমাদের থেকে হিসাব নেয়া  হবে” (সুরা বাক্কারাঃ ২৮৪)। এ ধরণের বিষয়ে হিসাব নিকাশ নিয়ে শাস্তি দেয়া হবে। কিন্তু হাদীসে এসেছে- “মনের  কল্পনা বাস্তবায়ন না করা পর্য্যন্ত এগুলোর শাস্তি হবে না”। তাই এ ধরণের আয়াতের তিলাওয়াত বহাল থাকলেও অন্য আয়াত ও হাদীসের দ্বারা এ হুকুম রদ হয়ে গেছে। যেমন, عن  ابی ھریرۃ قال  قال  رسول  اللّٰہ  ﷺ ان اللّٰہ تجاوز عن امتی ما وسوست بہ صدورھا مالم تعمل بہ اوتتکلم متفق علیہ ۔ অর্থাৎ : “হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রাসুলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “আমার উম্মতের মনে যেসব কুখেয়াল বা পাপের উদ্ভব হয়- আল্লাহ্পাক  তা  ক্ষমা করে দিবেন-যে পর্যন্ত না তা বাস্তবায়ন করা হয় অথবা মুখে তা উচ্চারণ করা হয়”। (বুখারী ও মুসলিম)। অধিকাংশ উলামাদের ব্যাখ্যা হলো- মনে ওয়াছ্ওয়াছা বা কুচিন্তা আসলে তা ধর্তব্য নয়- কিন্ত  মনে মনে কুকাজের সিদ্ধান্ত عزم بالجزم নিয়ে ফেললে তার শাস্তি হবে। উপরে বর্ণিত হাদীসে وَسْوَست দ্বারা  ইঙ্গিতে অন্তঃকরনের স্থিরচিন্তা ও স্থিরসিদ্ধান্তের শাস্তির কথাই বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ্পাক অন্য আয়াত দ্বারা ছুরা বাক্বারার উক্ত আয়াতের (২৮৬) হুকুম স্থগিত করেছেন অথবা ব্যাখ্যা করেছেন। আয়াতটি হলে, لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا অর্থাৎ : “আল্লাহ্ সাধ্যের বাইরে কারো উপর বোঝা চাপিয়ে দেন না”।  মনের কুচিন্তা সাধ্যের বাইরের জিনিস। ২৫- (খ) ভালমন্দ  সমস্ত আমল সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে, এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন, مَّتَاعَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ثُمَّ إِلَينَا مَرْجِعُكُمْ فَنُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ অর্থাৎ  : “পার্থিব জীবনের সুফল ভোগ করে নাও। তারপর আমার নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন আমি বলে দেবো-  তোমরা দুনিয়াতে কি কি কাজ করতে” (ছুরা ইউনুছ ২৩ আয়াতের শেষাংশ)। এতে বুঝা গেল- ভালমন্দ সব কাজেরই হিসাব নিকাশ ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ২৫- (গ) অনু পরমানু পরিমান আমলের হিসাব নেয়া হবে, এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন, فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ - وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ অর্থাৎঃ “অতঃপর যে কেউ অনু পরিমান ভাল কাজ করবে- তা সে দেখতে পাবে এবং অনু  পরিমান মন্দকাজ করলে- তাও  সে দেখতে পাবে”। (ছুরা যিলযাল)। ব্যাখ্যাঃ বুঝা  গেল- শরিয়তসম্মত সৎকর্ম অনুযায়ী সুফল পাবে। ঈমান অবস্থায় শরিয়ত সমর্থিত সৎকাজ করলে তার  বিনিময়ে জান্নাতে উচ্চ মাকাম লাভ করবে।  যদি অনু পরিমান সৎকর্মও না থাকে- শুধু ঈমান থাকে- তাহলেও সে আল্লাহর  দয়ায় বিলম্বে হলেও জান্নাতে প্রবেশাধিকার  পাবে।  যতবড় গুনাহ্গারই হোকনা কেন- মুমিন চিরকাল জাহান্নামে থাকবেনা। কিন্ত কাফের ব্যক্তির দুনিয়াতে যতই সৎকর্ম থাকুক না কেন- সে দুনিয়াতেই শুধু  তার সুফল ভোগ করবে। কিন্ত ঈমানের অভাবে জান্নাতে প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবে। আর অনু  পরিমান অসৎকর্ম করে থাকলেও সাজা পাবে- যদি  তাওবা করে তা থেকে বিরত না হয়। তাওবা করে গুনাহ্ থেকে বিরত থাকলে বিগত সব গুনাহ্ মাফ- ঐগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে না। ইহাই শেষ আয়াতের ব্যাখ্যা। সুতরাং ছোট বড় সব ধরণের গুনাহ্ থেকে তাওবা করে বিরত থাকতে হবে- নতুবা পরকালে ছোট বড় সব গুনাহেরই হিসাব নিকাশ করে পাকড়াও  করা হবে। অত্র অধ্যায়ের ২৪নং হাদীস এদিকেই ইঙ্গিত করেছে। (২৬) মোমিনবান্দার  হিসাব নিকাশ  হবে- অতি গোপনে عن علی بن ابی طالب رضی اللّٰہ عنہ قال : قال رسول اللّٰہ ﷺ اذا کان یوم القیامۃ خلا اللّٰہ عزوجل بعبدہ المومن یوقفہ علی ذنوبہ ذنبا ذنبا ثم یغفر اللّٰہ لہ لا یطلع علی ذلک ملک مقرب  ولا مرسل و ستر علیہ من ذنوبہ ما یکرہ ان یقف علیھا ثم یقول لساتہ کونی حسنات ۔ خرجہ مسلم بمعناہ ۔ অর্থাৎ : “হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রাঃ) বর্ণনা করেন- রাসুলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন : যখন  কিয়ামত দিবসে বিচার অনুষ্ঠিত হবে- তখন আল্লাহ্ জাল্লা  জালালুহু তাঁর মোমেন বান্দাকে একান্তে ডেকে নিয়ে তার গুনাহ্সমূহ একটি একটি করে তাকে অবহিত করবেন। তারপর তাকে এমন গোপনে ক্ষমা করে দিবেন যে, কোন ঘনিষ্ট ফিরিস্তা বা অন্য কোন প্রেরিত নবীও তা জানতে  পারবেন  না। আর উক্ত বান্দা তার যেসব গুনাহ্ সম্পর্কে অন্যের জানা পছন্দ করতোনা- সেগুলোকে আল্লাহ্ গোপন করে রাখবেন।  এরপর  তার  গুনাহ্সমূহকে সম্বোধন করে বলবেন- “তোমরা নেকী হয়ে যাও”। (ইমাম মুসলিম এ  মর্মেই হযরত আলী থেকে অন্য রেওয়ায়াত করেছেন)। ব্যাখ্যাঃ “কিছু গুনাহ্ থাকা সত্বেও আল্লাহ্পাক নবীজীর প্রিয়   উম্মতকে লোকসম্মূখে অপমানিত করবেন না”-এমর্মে নবীজীর সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন-  তারই বাস্তবায়ন হবে এভাবে। আল্লাহ্পাক কোরআন মজিদে ওয়াদা করেছেনঃ يَوْمَ لا يُخْزِي اللَّهُ النَّبِيَّ وَ الَّذينَ آمَنُوا অর্থাৎঃ “আল্লাহ্পাক ঐদিন আপন  প্রিয়নবী  ও মোমনদেরকে অপদস্ত করবেন না”। (কুরআনঃ ৮) এটা নবীজীর শানে  মাহবুবীর বহিঃপ্রকাশ। তিনি হাবিবুল্লাহ- যার সন্তষ্টি আল্লাহর একান্ত কাম্য। তাই  অগ্রিম এই প্রতিশ্রুতি।  নবীজীর উম্মতের গুনাহ্ সম্পর্কে অন্য কোন নবী জানতে পারবেন না। ইহাই হাদীসের মর্ম। হে  আল্লাহ্-  নবীজীর সম্মান রক্ষা করার জন্য আমাদেরকে  তৌফিক দান করো- আমরা যেন  অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে পারি! বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে হবে-  আল্লাহ্তায়ালা শুধু নিজের ইবাদতের ক্ষেত্রেই এরূপ গোপনীয়তা অবলম্বন করবেন। অন্যের হক কখনও গোপন করবেন  না। সুতরাং, পরের ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে- নতুবা নিজের কৃত সব নেক আমল দিয়ে ঐদিন ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। কাজেই এমন আমল করতে হবে- যাতে অন্যকে ক্ষতিপূরন দিতে না হয়। বান্দার হক সম্পর্কে আল্লাহ্ অবশ্যই কঠোরতা অবলম্বন করবেন। কেননা, তিনি ন্যায়ের  পৃষ্ঠপোষক। মোহাদ্দেছ আবু বকর ইবনে আরবী এবং  ইমাম কুরতুবী এভাবেই বিভিন্ন হাদীসের সমন্বয় করেছেন। (২৭) আল্লাহর গোপন ক্ষমা দেখে মোমেনরা সেদিন বারবার সিজ্দা করবে, عن ابی ھریرۃ رضی اللّٰہ عنہ : یدنی اللّہ العبد منہ یوم القیامۃ ویضع علیہ کنفہ فیسترہ عن الخلائق کلھا یدفع الیہ کتابہ فی ذلک الستر فیقول لہ اقرأ یا ابن آدم کتابک قال۔ فیمر الحسنۃ فیبیض لھا وجھہ ۔ ویمر بالسیۃ فیسودلھا وجھہ ۔ قال : فیقول اللّٰہ تعالی لہ وتعرف یا عبدی ؟ قال : فیقول تعم یا رب اعرف قال فیقول انی اعرف بھا منک قد غفرتھا لک ۔ قال فلا تزال حسنۃ تقبل فیسجد وسیءۃ فیسجد۔ فلا یری الخلائق منہ الا ذلک حتی ینادی الخلائق بعضھا بعضا طوبی لھذا العبد الذی لم یعص قط ولا یدرون ما  قد بقی فیما بینہ وبین اللّٰہ تعالی مما  قد وقفہ  علیہ (خرج ابو القسم فی الدیباج) অর্থাৎ : “হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ্পাক মোমেনবান্দাকে কাছে নিয়ে তার উপর নিজের কুদরতী (স্নেহের) হাত স্থাপন করবেন। অতঃপর তাকে সমস্ত হাশরবাসীর দৃষ্টি থেকে আড়াল করে ফেলবেন এবং ঐ গোপন অবস্থায়ই তাকে তার আমলনামা দিবেন- আর বলবেন, হে বনী আদম! তোমার  আমলনামা পড়ে দেখ।  নবীজী বলেন- অতঃপর নিজ আমলনামায় নেকী দেখে তার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং বদী দেখে চেহারা  কালো হবে। নবীজী বলেন- অতঃপর আল্লাহ্ তাকে জিজ্ঞাসা করবেন- তুমি কি এগুলো স্বীকার করো? বান্দা বলবে- হ্যাঁ, স্বীকার করি। আল্লাহ্ বলবেন- আমি তোমার চেয়ে বেশী জানি ও চিনি। যাও- তোমার গুনাহ্ ক্ষমা করে দিলাম। নবীজী বলেন- যখন নেকী তার সামনে পেশ করা হবে- তখন সে সিজদা করতে থাকবে  এবং আল্লাহ্ যখন  গুনাহ্ ক্ষমা করবেন- তখনও  সে শুকরিয়ার সিজদা করতে থাকবে। হাশরবাসীরা শুধু তাকে সিজদা করতেই দেখবে। তখন তাদের মধ্যে একজন আরেকজনকে ডেকে বলবে- এই বান্দা বড়ই ভাগ্যবান যে,  সে কখনও গুনাহ্-ই করেনি। তারা বুঝতেই পারবেনা যে, আল্লাহ্ ও বান্দার মধ্যে গোপনে কি ঘটে গিয়েছে। শুধু তাকেই তার  গুনাহ্ সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। ”  (আবুল কাশেম  কৃত- দীবাজ)। বিশেষ জ্ঞাতব্যঃ  উপরে বর্ণিত হাদীসসমূহে দেখা গিয়েছে- মোমিন,  কাফের, মুনাফিক, গুনাহ্গার ও নেককারদের বিভিন্ন ধরণের কঠিন  প্রশ্নের সম্মূখীন হতে  হবে। আবার অত্র বর্ণনায় দেখা যায়- কারো কারো ক্ষেত্রে হিসাব হবে অতি গোপনে। এখন প্রশ্ন হলোঃ (১) কোন কোন আয়াতে দেখা যায়ঃ  অপরাধীদের অপরাধ সম্পর্কে কোন প্রশ্নই করা হবেনা। যেমন- সূরা কাসাস ৭৮ আয়াতে এরশাদ হয়েছে- وَلَا يُسْأَلُ عَن ذُنُوبِهِمُ الْمُجْرِمُونَ অর্থাৎঃ “অপরাধীদেরকে তাদের কৃত গুনাহ্ সম্পর্কে কোনই প্রশ্ন করা হবে না”। অনুরূপ সূরা আর- রহমান আয়াত নং ৩৯-৪১-বলা হয়েছে, لَّا يُسْأَلُ عَن ذَنبِهِ إِنسٌ وَلَا جَانٌّ - فَبِأَيِّ  آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ - يُعْرَفُ الْمُجْرِمُونَ  بِسِيمَاهُمْ فَيُؤْخَذُ بِالنَّوَاصِي وَالْأَقْدَامِ অর্থাৎ-  “ঐ দিন না কোন ইনসানকে প্রশ্ন করা হবে তার গুনাহ্ সম্পর্কে, না কোন জ্বীনকে প্রশ্ন করা হবে। ” “অপরাধীদের চেহারা দেখেই তাদের পরিচিতি হয়ে যাবে। তাদের মাথা ও পা পাকড়াও করে জাহান্নামে নিক্ষেপ  করা হবে”।  তাহলে প্রশ্ন জাগে- হিসাব নিকাশের দিবস হলো কী করে? (২) কোন কোন হাদীসে দেখা যায়- প্রত্যেক উম্মতেরই হিসাব নিকাশ হবে। যেমন-  হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল, হযরত আবু হোরায়রা, হযরত আনাছ- প্রমূখ সাহাবাগণ বর্ণনা করেছেন যে, “চার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কোন ব্যক্তিই কদম নাড়তে পারবে না” (১৩ নং হাদীস দেখুন)। তাহলে তো কোরআন  ও হাদীসের মধ্যে বৈপরিত্য দেখা যাচ্ছে। এর জবাব কী হবে? জবাবঃ (১) প্রথম প্রশ্নের জবাবে ইমাম কুরতুবী বলেন- ‘হাশরের ময়দানে অনেক ঘাটি বা চৌকি হবে। তন্মধ্যে কোন কোন ঘাটিতে সওয়াল-জওয়াব হবে, আর কোন কোন ঘাটিতে সওয়াল-জওয়াব হবে  না। সুতরাং সওয়াল-জওয়াব যেমন সত্য, তদ্রুপ কোন কোন স্থানে সাওয়াল জওয়াব না হওয়াও সত্য। জায়গা ও স্থানের ব্যবধানের কথাই  কোরআনে বিধৃত হয়েছে। আর যেসব আয়াত ও হাদীসে প্রত্যেকেরই হিসাব নিকাশের কথা উল্লেখ আছে- তা হবে অন্য কোন ঘাটি  বা গেইটে। সুতরাং কোরআন ও হাদীসের মধ্যে কোন বৈপরিত্য বা  বিরোধীতা নেই। দুইটি দুই অবস্থায় হবে। (২) দ্বিতীয় প্রশ্নের জওয়াব হলো- আল্লাহ্পাক হিসাব নিকাশের  সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বিস্তারিত বিবরণ, ব্যাখ্যা ও বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। কোরআন হাদীসে বর্ণিত সওয়াল-জওয়াব  হওয়া এবং না  হওয়ার সারসংক্ষেপ তাফসীর ও হাদীস বিশারদ ওলামায়ে কেরাম এভাবে উল্লেখ করেছেন। (ক) একদল লোকের (চার কোটি নব্বই লক্ষ বা তার চেয়েও বেশী)। মোটেই হিসাব নিকাশ হবে না। শুধু নবীজীর সুপারিশক্রমে- বিচার শুরু হওয়ার পূর্বেই বিনা হিসাবে তাঁরা জান্নাতে প্রবেশ করবে- যার  বিবরণ শাফাআত অধ্যায়ে দেয়া হয়েছে। (খ) দ্বিতীয়দলের হিসাব নিকাশ হবে খুব হাল্কা ধরণের- অর্থাৎ তাদেরকে শুধু  আল্লাহর দরবারে পেশ করা হবে। কোন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। যেমন- হিসাব নিকাশ অধ্যায়ের ১নম্বরে বর্ণিত হয়েছে। (গ) এক ধরণের অপরাধী মোমেন এবং কাফেরদের হিসাব নিকাশ হবে খুবই কঠিন।  তবে মুসলমানগণ আল্লাহর রহমতের খুব কাছাকাছি অবস্থান করবে এবং কাফেরগণের অবস্থান হবে  গযব  ও ধ্বংসের কাছাকাছি। তাদেরকে বিনা হিসাবেই দোযখে প্রেরণ করা হবে। (আত্ তাযকিরাহ্ পৃষ্ঠা ৩১২)। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- امتی امۃ مرحومۃ অর্থাৎ : “আমার উম্মত কোন না কোনভাবে আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত হবেই”। আল্লাহ্পাক মুমিনদের সাথে যেভাবে ব্যবহার করবেন- এটা শুধু নবীজীর উম্মত হওয়ার কারণেই। তাই শেখ শরফুদ্দীন ইয়াহ্ইয়া মানেরী বিহারী- যিনি সোনারগাঁও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আপন শ্বশুর  হযরত আবু তাওয়ামা (রহঃ) -এর মাদ্রাসার প্রধান ছিলেন- তিনি তার “মকতুবাতে সদীতে” উল্লেখ করেছেন- “উম্মতে মোহাম্মদী তাদের গুনাহের কারণে দোযাখে যাবেনা- বরং তাওবা করার সুবর্ণ সুযোগ গ্রহণ  না করার কারণেই দোযখে যাবে। কেননা, যাদের খালেছ দিলে তাওবা করার নসীব হয়েছে- তাদের সব গুনাহ্ মাফ হয়ে যাবে। এভাবে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারলে জাহান্নামে যাওয়ার প্রশ্নই  আসেনা। তাই তিনি এই তত্বপূর্ণ উক্তিটি করেছেন ক্ষোভের সাথে- “দোযখে যাওয়ার শেষ কারণ হলো তাওবার সুযোগ গ্রহণ না করা”।  হযরত আবদুর রহমান জামী (রহঃ) তাঁর “ইউছুফ-যোলায়খা” গ্রন্থে রাসুলেপাকের শাফাআত ও দয়ার প্রত্যাশী হয়ে লিখেছেন- “বড়ি নাযম্ কেহ্ হাস্তম উম্মতে তু- গুনেহ্গারম ওয়া লেকীন খোশ্ নসীবম। অর্থাৎঃ “আমার ইহাই বড় অহংকার  যে, আপনার উম্মত  হতে পেরেছি। শত গুনাহ্গার হওয়া সত্বেও আমি অতি ভাগ্যবান।  কেননা- আপনি শাফিউল মুযনিবীন”। ------ 
 
Top