প্রশ্নঃ তালক্বীন কী জিনিস? মৃত্যুর সময় যে তওবাহ্ পড়ানো হয়- উহা কি তালক্বীনের মধ্যে গণ্য? কবর দেওয়ার পর  কবর  তালক্বীন করার মধ্যে কোন উপকারিতা আছে কি না? কীভাবে তালক্বীন করতে হয়?

জওয়াবঃ মৃত্যুর সময় তওবা পড়ানো  বা কলেমা শরীফ পড়ানো, শিয়রে ছূরা ইয়াসিন পড়া- ইত্যাদিকে তালক্বীন বলা হয়। মৃত্যুকালে এবং কবরে তালক্বীন করলে ঐ সময় শয়তান পলায়ন করে। মৃত্যুর সময় এবং  কবরে শোয়ানোর পর এই দু’টি সময় অতি সংকটময়। ঐ  সময় হুঁশ থাকে না। এই সুুযোগে শয়তান এসে বিভিন্ন রকমের কুফরী কথা শিক্ষা দিতে চেষ্টা করে। তাই নেককার কোন ব্যক্তি বা আলেম দ্বারা ঐ দুই সময়ে মৃত্যু পথযাত্রী ও কবরস্থ ব্যক্তিকে কলেমা স্মরণ করিয়ে দিলে তাঁর বিরাট উপকার হয়।  তখন শয়তান পলায়ন করে এবং মোমেনব্যক্তি কলেমা পড়ে চক্ষু বন্ধ করতে পারে এবং ফিরিস্তার সাওয়াল থেকে রক্ষা পেতে পারে। ইহা হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। যথা :

(ক) মৃত্যুকালীন তালক্বীন করাঃ
======
(১) মুসলিম শরীফে হযরত আবু ছায়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত -
مسلم ۔ عن  ابی سعید الخدریؓ قال قال رسول اللّٰہ ﷺ لقنوا موتاکم لا الہ الا اللّٰہ وذکر ابن ابی الدنیا عن زید بن اسلم قال قال عثمان بن عفانؓ قال رسول اللّٰہ ﷺ اذا احتضر المیت فلقنوہ لا الہ الا اللّٰہ فانہ ما من عبد یختم لہ بھا عند موتہ ۔ الا کانت زادہ الی الجنۃ فقال عمر بن الخطاب ۔ رضی اللّہ عنہ احضروا موتاکم ولقنوھم لا الہ الا اللّٰہ وذکروھم فانھم یرون ما لا ترون ۔

অর্থঃ মুসলিম শরীফে হযরত আবু ছায়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “তোমরা মুমূর্ষু ব্যক্তিকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” কলেমার তালক্বীন করো”। অর্থাৎ- তাঁর কাছে এই কলেমার যিকির কর।

ইবনে আবিদ দুনিয়া হযরত ওসমান  (রাঃ) থেকে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে,   রাসূল  করিম (ﷺ) এরশাদ করেছেন-  “যখন মইয়েত মুমূর্ষ অবস্থায় থাকে, তখন তাঁকে তালক্বীন করো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”। কেননা, যেব্যক্তি মৃত্যুর মুহুর্তে এই কলেমা পড়ে  মৃত্যুবরণ করবে- তাঁর জান্নাতের পাথেয়  সংগ্রহ হয়ে যাবে”। হযরত ওমর (রাঃ) বলেন- “তোমরা তোমাদের মুমূর্ষ রোগীর কাছে হাযির হয়ে তাকে “লা  ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” কালেমার তালক্বীন করো এবং তা স্মরণ করিয়ে দাও। কেননা, এখন সে  যা  কিছু দেখে- (শয়তান) তোমরা তা দেখোনা”। (মুসলিম, ইবনে আবিদ দুনিয়া)।

(২) আবু নোয়াইম হযরত ওয়াছেলা ইবনুল আছ্কা’ (রা) থেকে বর্ণনা  করেছেন- নবী   করীম  (ﷺ) এরশাদ করেন-
احضرو موتاکم  ولقنونھم لا الہ الا اللّٰہ وبشروھم بالجنۃ ۔ فان الحکیم من الرجال یتحیر عند ذلک المصرع۔ وان الشیطان اقرب ما یکون من ابن آدم عند ذلک المصرع والذی نفسی بیدہ ۔ لمعانیہ ملک الموت استد من الف ضربۃ بالسیف ۔
অর্থ:  রাসুল করিম (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “তোমরা মুমূর্ষ রোগীদের নিকট গিয়ে  তাঁদেরকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” পূর্ণ কলেমার তালক্বীন করো এবং তাঁকে  জান্নাতের আশ্বাস দিতে থাকো। কেননা, ঐ আছাড় খাওয়ার সময় জ্ঞানী ও কৌশলী পুরুষরাও  হয়রান হয়ে যায়। আর শয়তান ঐ সময় তাঁর সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয়ে প্রলোভন দিতে থাকে। আমি ঐ আল্লাহর শপথ করে বলছি- যার হাতে রয়েছে আমার জান- আযরাঈল দর্শন করা এক হাজার তলোয়ারের আঘাতের চাইতেও বেশি কষ্টদায়ক”।  (তাযকিরাহ্ পৃষ্ঠা ৩৭)

(৩) মুমূর্ষ ব্যক্তির কাছে শয়তান উপস্থিত হয়
روی النبی ﷺ ۔ ان العبد اآا کان عند الموت قعد عندہ شیطانان ۔ الواحد عن یمینہ والاخر عن شمالہ ۔ فالذی عن یمینہ علی صفۃ ابیہ ۔ یقول لہ یا بنی انی کنت علیک شفیعا ۔ ولک محبا ولکن مت علی دین النصرانیۃ فھو خیر الادیان ۔ فالذی علی شمالہ علی صفۃ امہ تقول لہ یا بنی انہ کان بطنی لک وعاء وتوئی لک سقاء ۔ وفخذی لک وطاء ولکن مت علی دین الیھودی ۔ وھو خیر الادیان ۔ ذکرہ ابو الحسن القابسی فی شرح رسالۃ ابی زید لہ وذکر معناہ ابو حامد الغزالی فی کتاب کشف علوم الاخرۃ ۔ وان عند استقرار النفس فی التراقی والارتفاع تعرض علیہ الفتن وذلک ابلیس قد انفذ اعوانہ الی ھذا الانسان خاصۃ ۔ واستمعملھم علیہ ووکلھم بہ فیاتون المراء وھو علی تلک الحال ۔ فیتمثلون لہ فی صورۃ من سلف من الاحباب المیتین الباغین لہ النصح فی دار الدنیا۔ کالاب والام والاخ  والاخت والصدیق الحمیم۔ فیقولون لہ انت تموت یا فلان بن فلان ونحن وقد مسبقناک فی ھذا الشان قمت یھودیا فھوالدین المقبول عند اللّٰہ  تعالی ۔ فان انصرم عنھم وابی ۔ جاۂ آخرون ۔ وقالوا لہ من نصرانیا فانہ دین المسیح قد نسخ اللّٰہ بہ دین موسی ۔ ویذکرون لہ عقائد کل ملۃ فعند ذلک یزیغ اللّٰہ من  یرید زیغۃ ۔ وھو معنی قولہ تعالی ۔ ربنا لا تزغ قلوبنا بعد اذ ھدیتنا وھب لنا من لدنک رحمۃ  ۔ ای لا تزغ قلوبنا عند الموت وقد ھدیتنا وھب لنا من قبل ھذا زمانا ۔ فاذا اراد اللّٰہ بعبدہ ھدایۃ وتثبیتا ۔ جاء تہ الرحمۃ قیل ھو جبرئیل علیہ السلام فیطرد عنہ الشیاطین ۔  ویمسح السحوب عن وجہہ فیبتسم المیت لا محالۃ ، و کثیر من یری مبتسما فی ھذا المقام فرحا بالبشیرہ الذی جاۂ من اللّٰہ تعالی  ۔ فیقول یافلان ام ا تعرفنی ؟ انا جبرائیل وھوء لاء اعدائک من الشیاطین ۔ مت علی الملۃ  الحنفیۃ والشریعۃ الجلیلۃ ۔ فما شئی اصلی الی الانسان وافرح منہ بذلک  الملک وھو قولہ تعالی : وھب لنا من لدنک رحمۃ انک انت الوھاب ۔ لم یقبضن  عند الطعنۃ۔

অর্থঃ ইমাম গাযালী (রহঃ) তাঁর  “কাশফু উলুমিল আখিরাহ্” এবং ইমাম ক্বাবেছী (রহঃ) তাঁর  “শরহে রিছালায়ে  আবি যায়েদ” নামক গ্রন্থে হাদীস বর্ণনা করেছেন-

“রাসুল মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া  সাল্লাম এরশাদ করেছেন- বান্দা যখন মুমূর্ষ অবস্থায় পড়ে- তখন দুটি শয়তান এসে (শয়তানের চেলা) তাঁর ডানে ও বামে বসে যায়। ডানেরজন আসে বাপের ছুরতে- আর বায়েরজন আসে মায়ের ছুরতে। ডানের শয়তান বলে- আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি- তুমি খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে মৃত্যু বরন করো। কেননা, এটাই উত্তম ধর্ম। আর বাম দিকের মা রূপী শয়তান বলে- “বাছা! আমার গর্ভ ছিল তোমার জন্য ভাণ্ড স্বরূপ, আমার বুক ছিল তোমার জন্য দুগ্ধবোতল স্বরূপ, আর আমার উরু ছিল তোমার জন্য  বিছানা স্বরূপ। আমি উপদেশ দিচ্ছি- তুমি বরং ইহুদী হয়ে মৃত্যু বরন করো- ইহাই সর্বোত্তম ধর্ম”। (ইমাম  ক্বাবেছী ও ইমাম  গাযালী (রহঃ) হাদীসের শব্দ ও অর্থ এরূপেই বর্ণনা করেছেন)।

কুরতুবী বলেন- রুহ্ কণ্ঠনালীতে এসে  স্থির হয়ে উর্দ্ধদিকে উঠতে থাকাকালীন সময়ে মুমূর্ষ ব্যক্তির উপর এরকম বহু ফিত্না আপতিত হতে থাকে। শয়তান বা ইবলিছের বহু সাহায্যকারী চেলা আছে। সে তাঁদেরকে মুমূর্ষ ব্যক্তির নিকট  প্রেরণ করে তাঁদেরকে কাজে লাগায় এবং তাঁর পেছনে তাঁদেরকে উকিল স্বরূপ  নিযুক্তি দেয়। মৃত্যু পথযাত্রীর এই সন্ধিক্ষনে তাঁরা তাঁর কাছে বন্ধুবান্ধব ও শুভাকাঙ্খীর সূরত ধরে উপস্থিত হয়। যেমন, মা-বাপ, ভাই-বোন, বন্ধুবান্ধব- ইত্যাদি সূরতে আসে এবং তাঁকে কুপরামর্শ দিতে থাকে। তাঁরা এভাবে পরামর্শ দেয়- “হে ফলানা! তুমি এখন মরতে বসেছো- আমরা তোমার পূর্বে মৃত্যু বরন করেছি এবং বর্তমানে ভাল অবস্থায় আছি। তোমাকে বলছি- দ্বীন ইসলাম ত্যাগ করো, ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করো। কেননা, ইহাই আল্লাহর নিকট একমাত্র মকবুল বা গৃহীত ধর্ম। যদি মৃত্যুরোগী তাঁদের থেকে মুখ ফিরায়- আর ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করতে অস্বীকার করে, তখন আরেক দল এসে বলে- “বরং তুমি খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করো। কেননা, ইহা  হযরত ইছা আলাইহিস সালামের ধর্ম। আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর দ্বারা  পূর্ববর্তী মূছা (আঃ)- এর ধর্মকে রহিত করে দিয়েছেন। বর্তমানে ইহাই বলবৎ রয়েছে”। শয়তানের চেলারা এভাবে তাঁকে প্রত্যেক ধর্মের বিভিন্ন আক্বিদা বিশ্বাস স্মরন করিয়ে দিয়ে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিতে চেষ্টা করে। এই সময়ে আল্লাহ্পাক যাকে ইচ্ছা করেন-  সত্য লংঘনের সুযোগ দিবেন (তাঁর অতীত অবস্থার উপর ভিত্তি  করে)। এদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ্পাক ছুরা আলে ইমরানের ৮ আয়াতে এই  সত্যলঙ্ঘন থেকে  পানাহ্ চাওয়ার জন্য বান্দাকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।
رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا  مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ۔
অর্থ : “হে আল্লাহ্! আমাদেরকে হেদায়াত (ইসলাম) দান করার পর আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার পক্ষ হতে আমাদেরকে করুনা দান করো, নিশ্চয়ই  তুমি করুনা দানকারী ও মহান দাতা”। (ছুরা আলে ইমরান, আয়াত -৮)

(এর সরল  অর্থ হলো- মউতের সময় আমাদের  কলবকে সত্য লঙ্ঘনে উদ্বুদ্ধ করোনা, কেননা- এর পূর্বে তো তুমি আমাদেরকে অনেকদিন ধরে হেদায়াত দান করেছিলে)।

আল্লামা কুরতুবী  (রহঃ) বলেন- আর আল্লাহ্ যাকে মৃত্যুর মুহুর্তে হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখতে ইচ্ছা করেন- তখন মুমূর্ষ  রোগীর কাছে আল্লাহর রহমত স্বরূপ হযরত জিবরাঈল বা অন্য  কাউকে পাঠিয়ে তাঁকে সাহায্য  করেন। জিবরাঈলকে দেখামাত্র  শয়তানের চেলারা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। জিবরাঈল (আঃ) এসে তাঁর চেহারা থেকে পেরেশানীর মেঘমালা মূছে দেন। এবার মুমূর্ষ ব্যক্তি খুশীতে হাসতে থাকেন। এজন্যই অনেক নেক্কার ব্যক্তিকে মৃত্যুর সময় খুশীতে হাসতে দেখা যায়।  কেননা, এসময় সু-সংবাদবাহী ফিরিস্তা এসে তাঁকে সুসংবাদ দেয়  এবং বলে- “হে অমুক!  তুমি কি আমাকে চিনো? আমি হলাম  জিবরাঈল- আর এরা ছিল তোমার চিরশত্র“ শয়তানের চেলা। এবার তুমি আদিধর্ম মিল্লাতে  ইব্রাহিমী ও শরিয়তে মোহাম্মাদীর উপর দৃঢ় থেকে  মৃত্যু বরন করো”।

তখন এই ফিরিস্তার  চেয়ে বেশী প্রিয় ও  বেশী আনন্দদায়ক আর কিছুই মনে হবে না। এদিকে ঈঙ্গিত করেই আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন-
وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ۔
অর্থ- “হে আল্লাহ্! তুমি আমাদেরকে তোমার পক্ষ হতে রহমতস্বরূপ জিবরাঈলকে দান করো। কেননা, তুমিই সর্বোত্তম দানকারী। অত:পর মুমূর্ষরোগী এই শয়তানী প্ররোচনা থেকে সহি-সালামতে ইন্তিকাল করে”। (আত্ -তাযকিরাহ্ পৃষ্ঠা ৪০-৪১)।

হাদীসের সংক্ষিপ্ত সারঃ
======
(ক) প্রথম হাদীসে দুই শয়তানের আগমনের কথা এবং পিতা মাতার সুরতে কুপরামর্শ দান করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাই তালক্বীন করতে হবে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”- পূর্ণ কলেমা তাইয়্যেবা।

(খ) এসময়  ইবলিসের সহযোগীদের আগমন এবং ইসলামধর্ম ত্যাগ করার কুপরামর্শ দান।

(গ) ঈমানে মজবুত থাকলে জিবরাঈল  এসে কথা বলবে। তদ্রুপ নবীজিকে দেখলেও শয়তান ভাগবে এবং মৃত্যুযন্ত্রণা অনুভূত হবে  না- যা  ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে।

কবি বলেছেন-
- আমার মউতের নিদান কালে- আসিবেন   নবী গো আমারি শিয়রে।
দেখিব আপনাকে আপন নয়নে- ইয়া রাসুলাল্লাহ্ -ইয়া হাবিবাল্লাহ্।

(৪) হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রাঃ) বর্ণনা করেন-
قال رسول اللّٰہ  ﷺ من کان آخر کلامہ لا الہ الا اللّٰہ دخل الجنۃ وفی راویۃ حرمہ اللّٰہ علی النار وتوفی ۔
অর্থঃ ”রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম এরশাদ করেছেন- যেব্যক্তির  শেষ বাক্য হবে ‘লা ইলাহা  ইল্লাল্লাহ্’ পূর্ণ কলেমা- সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে- “আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন এবং সে সহিসালামতে মৃত্যুবরণ করবে”। (মুসনাদে ইমামে আযম  হাদীস গ্রন্থে কালেমা এভাবে লিখা আছে- “আশহাদু আল্ লা ইলাহা  ইল্লাল্লাহু  ওয়া আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্”)।

(খ) কবরে তালক্বীন করাঃ
=======
১৩২  পৃষ্ঠায় মউতের তালক্বীনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কবরেও অনুরূপ তালক্বীন করা অনেক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। যথা-

(১) হযরত আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত এবং তাবরানীর মো’জাম গ্রন্থে সংগৃহীত  হাদীসে এসেছে,
عن سعید الازدی قال دخلت علی ابی امامۃ الباھلی رضی اللّٰہ عنہ وھو فی النزع فقال لی یا سعید : اآ انامت  فاصنعوا  لی  کما  امرنا رسول اللہ ﷺ  ان نصنع بمرتانا۔ فقال اذا مات الرجل منکم فرفنوہ فلیقم احدکم عند  راسہ فلیقل یا فلان بن فلانۃ فانہ یسمع ۔ فلیقل یا فلان بن فلانۃ فانہ یستوی قاعدا فلیقل ؛ یا فلان بن فلانۃ فانہ سیقول ارشدنا یرحمک اللّٰہ  فلیقل اذکر ما خرجت علیہ من الدنیا شھادۃ ان لا الہ الا اللّہ وان محمدا عبدہ ورسولہ وان الساعۃ آتیۃ لا ریب فیھا وان اللّٰہ باعث من فی القبور  فان منکرا ونکیرا عند ذلک اخذ کل واحد منھما بید صاحبۃ ویقول ما نصنع عند رجل لقن حجتہ ۔ فیکون اللّٰہ حجیجھما دونہ ۔ حدیث ابی امامۃ فی النزع غریب من حدیث حماد بن زید ما کتبناہ الامن حدیث سعیدا لازدی ۔

অর্থঃ ছায়ীদ ইজ্দী (রহঃ) বলেন- আমি হুযুরেপাকের (ﷺ) সাহাবী আবু উমামা বাহেলীর মৃত্যু যন্ত্রণার সময় তাঁর কাছে গেলাম। তিনি আমাকে দেখে ওসিয়ত করে বললেন- “হে ছায়ীদ! যখন আমি মারা যাবো- তখন তোমরা আমার জন্য ঐ ব্যবস্থা গ্রহণ করো- যে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমাদের  মৃত ব্যক্তিদের   ব্যাপারে   আল্লাহর  রাসূল (ﷺ)  আমাদেরকে  নির্দেশ  দিয়েছিলেন। তা হলো-

“যখন তোমাদের কোন মৃত ব্যক্তিকে কবরে দাফন  করবে- তখন দাফন সম্পন্ন করে তোমাদের মধ্য হতে একজন তাঁর কবরের মাথার দিকে দাঁড়াবে এবং তাঁকে সম্বোধন করে বলবে- “হে অমুক মহিলার পুত্র অমুক”। কবরবাসী তখন তোমার কথা কান লাগিয়ে শুনবে। তারপর আবার প্রথমবারের মত বলবে-  তখন  কবরবাসী সোজা হয়ে বসবে। আবার প্রথমবারের মত বলবে। তখন সে কবর থেকে বলবে- “এরশাদ করুন- আল্লাহ্ আপনাকে রহম করুন”! তৃতীয়বারের পর  তালক্বীনকারী ব্যক্তি যেন কবরবাসীর উদ্দেশ্যে বলে- “তুমি দুনিয়া থেকে আসার সময়  যে জিনিস নিয়ে এসেছো- তা এখন স্মরণ করো- অর্থাৎ “আল্লাহ্ ছাড়া কোন  মা’বুদ  নেই,  হযরত  মুহাম্মদ  (ﷺ) আল্লাহর রাসূল”,  কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে  কোন সন্দেহ  নেই, আল্লাহ্পাক কবরবাসীকে পুনরায় জীবিত করবেন”।

তালক্বীনকারীর এই তা’লিমের কথা    শুনে মুনকার-নকীর পরস্পর হাত  ধরাধরি করে বলবে- “চলো, আমরা চলে যাই- যেব্যক্তিকে মুক্তির তাল্ক্বীন (তা’লীম) দেয়া হচ্ছে- তার কাছে থেকে আমরা  কি করবো? তখন আল্লাহ্ই তার সামনে দুই ফিরিস্তার  পক্ষে সাক্ষী  হয়ে যাবেন”। (আত্-তাযকিরাহ্ ১১৬ পৃষ্ঠা)। (এটা ছিল তাঁর মৃত্যু সময়ের বর্ণিত সহীহ্  হাদীস)।

(২) হযরত আবু উমামা বাহেলীর বর্ণিত হাদীসখানা ইমাম তাবরানী তাঁর ‘মুজাম’ গ্রন্থে এভাবে  উল্লেখ করেছেন-
عن ابی امامۃ الباھلی رضی اللّٰہ عنہ قال قال رسول اللّٰہ ﷺ اذا مات  احدکم فسویتم علیہ التراب ۔ فلیقم احدکم  علی رأس قبرہ ،ثم یقول یا فلان بن فلانۃ فانہ یسمع ولا یجیب  ثم لیقل ۔ یا فلان بن فلانۃ الثانیۃ ۔ فان یستوی قاعدا ثم لیقل  یا فلان بن فلانۃ فاند ارشدنا رحمک اللّٰہ ولکنکم لا تسمعون ۔ فیقول : اذکر اخرجت علیہ من الدنیا شھادۃ ان لا الہ الا اللّٰہ وان محمدا رسو ل اللّٰہ وانک رضیت باللّٰہ ربا۔ وبالاسلام دینا وبمحمد نبیا۔ وبالقران امام فان منکرا و نکیرا ۔ یتاخر کل واحد منھما ویقول انطلق بنا ما یقعدنا عند ھذا وقد لقن حجتہ ویکون اللّٰہ حجیجھما دونہ فقال رجل یا رسول اللّٰہ فان لم یعرف امہ۔ قال بنسبہ الی امہ حوا ء (وقال ابن القیم ھذا حدیث ضعیف)

অর্থঃ হযরত আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “তোমাদের কেউ মারা  গেলে যখন তার কবরের মাটি দেওয়া ঠিকঠাক হয়ে যাবে-  তখন তোমাদের কেউ যেন তার কবরের মাথার কাছে  দাঁড়িয়ে এভাবে বলে- “হে অমুক মহিলার পুত্র অমুক”। তখন  সে শুনবে- কিন্তু জবাব দেবেনা। দ্বিতীয়বার বলবে- “হে অমুক  মহিলার পুত্র অমুক”। তখন সে সোজা হয়ে বসবে। তারপর তৃতীয়বার ঐভাবে ডাক দিবে। তখন মৃতব্যক্তি এভাবে কথা বলবে- “আল্লাহ্ আপনাকে রহম করুন! মেহেরবানী  করে এরশাদ করুন”! কিন্তু তোমরা কেউ  তার কথা  শুনতে পাবেনা”।

এখন তালক্বীনকারী ব্যক্তি তাকে উদ্দেশ্য করে বলবে- “তুমি স্মরণ করো- যেসব কালাম বা আক্বিদা নিয়ে তুমি দুনিয়া ত্যাগ করেছো। ”তুমি বলো- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি- আল্লাহ্ ছাড়া  কোন উপাস্য নেই এবং মোহাম্মদ (ﷺ) তাঁর রাসুল”। আমি রব হিসাবে আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট, নবী হিসাবে মোহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) -এর উপর সন্তুষ্ট, দ্বীন হিসাবে ইসলামের উপর রাযী, পথ চলার  দিশারী হিসাবে কোরআনের উপর তুষ্ট”।

তাঁর একথা শুনে মোনকার-নকীর উভয়েই পিছনে হটে আসবে এবং বলবে- এসো! আমরা  চলে যাই, এই ব্যক্তির কাছে বসে থেকে কি লাভ হবে? সে তো  মুক্তির তালক্বীন পেয়েই গেছে। আল্লাহ্ তখন তাদের উভয়ের কথার সাক্ষী হয়ে যাবে”।

এ  হাদীস শুনে জনৈক সাহাবী প্রশ্ন করলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ্!  যদি তার মায়ের নাম জানা না থাকে? হুযুর (ﷺ) এরশাদ করলেন- তাহলে বলবে- یا فلان بن حواء অর্থাৎ- “হাওয়ার পুত্র অমুক”। (তাযকিরাহ্ ও কিতাবুর রূহ্- যথাক্রমে পৃষ্ঠা ১১৭ ও ৩৯)।

সতর্কবাণীঃ ইবনে কাইয়েম এ বর্ননা সম্পর্কে এভাবে মন্তব্য করেছেন- “এই  হাদীসখানা জয়ীফ”। ওহাবী আরেক  নেতা নাসিরুদ্দীন আল্বানী বলেছে- “জয়ীফ হাদীসের উপর আমল করা দুরস্ত নেই- ইহা বিদ্আত”। মনে রাখতে হবে- তারা উভয়েই খারেজী মতবাদী। তারা আল্লাহকে সাকার মানে।

হানাফী মাযহাব মতে আমলের ক্ষেত্রে সহীহ, হাসান ও জয়ীফ-  সবধরণের হাদীস গ্রহণযোগ্য”। সনদের দূর্বলতার কারণে হাদীসের উপর আমল করা বিদ্আত হতে পারেনা। তদুপরি- তারা যে সনদের উপর ভিত্তি করে জয়ীফ বলেছে- অন্য সনদে উহা জয়ীফ নয়- বরং হাসান  ও সবল হয়ে গেছে। সর্বোপরি- হযরত আবু উমামা (রাঃ) নিজেই বলেছেন-  এই  তালক্বীন মদিনাবাসী আনসারদের আমল। সাহাবীদের আমল কি করে বিদ্আত হতে পারে? ইহা সাহাবীদের  সাথে বেয়াদবী তুল্য। তাই, মৃত্যুকালে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্” এই কালেমার তালক্বীন করা এবং কবরে কলেমা শাহাদাতের তালক্বীন করা হাদীস দ্বারাই সুন্নাত প্রমানিত হলো। এর উপর আমল করার জন্য আল্লাহ্  সবাইকে সুমতি দান করুন।  এই অধ্যায়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। (এবিষয়ে আমার লিখিত “প্রশ্নোত্তরে আকায়েদ ও মাসায়েল” দেখুন, লেখক )।


------

 
Top