❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং-২৯৯৬]
○ অধ্যায়ঃ [বিবাহের ওলী (অভিভাবক) এবং কনের নিকট থেকে অনুমতি লওয়ার বিবরণ]
হযরত আবূ সা'ঈদ ও ইবনে আব্বাস [رضي الله عنهم] হতে বর্ণিত, তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ
"যার সন্তান জন্মগ্রহণ করে, সে যেনো তার উত্তম নাম রাখে(টীকাঃ ১¤) এবং তাকে উত্তম শিক্ষা দান করে।(টীকাঃ ২¤) অতঃপর যখন সে (সন্তান) বয়োঃপ্রাপ্ত হয় তখন তাকে বিবাহ করিয়ে দেবে।(টীকাঃ ৩¤) যদি সন্তান বয়োঃপ্রাপ্ত হয় এবং তাকে বিবাহ না করায় অতঃপর সে যদি কোন গুনাহ করে বসে, তাহলে তার গুনাহ তার পিতার উপর বর্তাবে।"(টীকাঃ ৪¤)
উক্ত হাদিসটি বায়হাক্বী তাঁর 'শো'আবুল ঈমান-এ বর্ণনা করেছেন।
□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখাঃ #MustShAre
     _______________________
১. (যার সন্তান জন্মগ্রহণ করে, সে যেনো তার উত্তম নাম রাখে)
◇ টীকাঃ (১¤)
কেননা, উত্তম নামের প্রভাব নামধারীর উপর পড়ে। উত্তম নাম হচ্ছে তা-ই, যা অর্থহীন হবে না; যেমন- 'বুধুয়া', 'তাল্ওয়া' ইত্যাদি এবং গর্ব-অহংকারও পাওয়া যাবেনা; যেমন- 'বাদশাহ', 'শাহানশাহ্' ইত্যাদি; আর খারাপ অর্থও থাকবে না; যেমন- 'আ-সী' (পাপী) ইত্যাদি। উত্তম হলো এটাই যে, সম্মাণিত নবীগণ অথবা হুযূর [ﷺ]-এর মর্যাদাবান সাহাবীগণ অথবা পবিত্র আহলে রায়ত-এর নামানুসারে নাম রাখবে। যেমন- ইব্রাহীম, ইসমা'ঈল, ওসমান, আলী, হাসান ও হোসাইন ইত্যাদি। আর যে ব্যক্তি ছেলের নাম 'মুহাম্মদ' রাখবে, তাকে ইনশা-আল্লাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং দুনিয়ায়ও সেটার বরকতসমূহ দেখবে। আজকাল বহু বাজে নাম রাখা হচ্ছে। যেমন- নাসীম, আখতার, রায়জানাহ্, গুলফাম ইত্যাদি।
২. (এবং তাকে উত্তম শিক্ষা দান করে।)
◇ টীকাঃ (২¤)
প্রয়োজন মতো 'ইলমে দ্বীন' (ধর্মীয় জ্ঞান) অবশ্যই শেখাবে। দুনিয়াবী জ্ঞান ও পেশা শিক্ষাও এ পরিমাণ দান করবে, যাতে সন্তান কারো মুখাপেক্ষী না হয়।
৩. (অতঃপর যখন সে (সন্তান) বয়োঃপ্রাপ্ত হয় তখন তাকে বিবাহ করিয়ে দেবে।)
◇ টীকাঃ (৩¤)
এ থেকে বুঝা গেলো যে, উত্তম এটাই যে, বিবাহ বালেগ হলেই করাবে; যদিও না-বালেগ সন্তানের বিবাহও শুদ্ধ হয়। বালেগ সন্তানের অভ্যাস ইত্যাদি বুঝা যায়, কিন্তু না-বালেগ সম্পর্কে বলা যায় না, সে কোন অভ্যাসের এবং কোন শ্রেণীর হবে। (আশি'আহ্)
৪. (যদি সন্তান বয়োঃপ্রাপ্ত হয় এবং তাকে বিবাহ না করায় অতঃপর সে যদি কোন গুনাহ করে বসে, তাহলে তার গুনাহ তার পিতার উপর বর্তাবে।)
◇ টীকাঃ (৪¤)
এটা ওই অবস্থায় যে, সন্তান যদি দরিদ্র হয়, নিজে বিবাহের সামর্থ্য রাখে না, আর পিতা ধনী হয়, সন্তানের বিবাহ করাতে পারে। কিন্তু যদি অবহেলাবশত কিংবা ধনীর সন্ধানে রয়ে সে বিবাহ না করায়, তখন সন্তানের গুনাহ্'র পরিণাম ওই বেপরোয়া পিতার উপরও বর্তাবে। (মিরক্বাত) কেননা, পিতার অবহেলাই তার গুনাহ্'র কারণ।
স্মর্তব্য যে, এখানে انما সৃষ্টিগত অভ্যাসজনিত গুনাহের মধ্যে নির্দিষ্টকরণের জন্য; كسبى (তার উপার্জিত) গুনাহের মধ্যে নির্দিষ্টকরণের জন্য নয়। অর্থাৎ গুনাহ্'র কারণ হওয়ার অশুভ পরিণতিই শুধু পিতার উপর বর্তাবে, যদিও অর্জিত গুনাহ্'র অশুভ পরিণতি স্বয়ং সন্তানের উপরও বর্তাবে।
এ হাদীস শরীফ হতে ওই সব লোকের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ যারা শুধু ধনীর খোঁজে সন্তানকে অনেকদিন যাবৎ বিবাহ করায় না। এ থেকেও জঘন্য হলো এটাই যে, নিজের কুমারী যুবতী মেয়েকে স্কুল-কলেজে একাকী পাঠিয়ে দেয়। যার মন্দ পরিণতি বর্তমানে চোখের সামনে বিদ্যমান।
।।।
[সূত্রঃ মিরআতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, কৃত- মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী আশরাফী বদায়ূনী, বঙ্গানুবাদঃ মাওলানা আব্দুল মান্নান, ৫ম খন্ড, পৃ.৪১, হাদীস নং-২৯৯৬ এর টীকাঃ ৩২, ৩৩, ৩৪ ও ৩৫ দ্রব্যষ্ট, প্রকাশনায়- ইমাম আহমদ রেযা রিসার্চ একাডেমী, চট্টগ্রাম।]
[প্রকাশনায়ঃ ইমাম আহমদ রেযা রিসার্চ একাডেমী, চট্টগ্রাম।
সবুচ ভবন, খাজা রোড, কুলগাঁও, ডাকঘর-জালালাবাদ-৪২১৪, বায়েজীদ, চট্টগ্রাম। ফোনঃ ০৩১-৬৮৪২২৪, মোবাইলঃ ০১১৯৯-২২৪৪০৩, ০১৮৬৮-০৩১৬২১]
 
Top