কবরে দাফনের পরপর মুনকার-নকীর من ربك সাওয়াল করার সাথে সাথে শয়তান এসে তার নিজের দিকে ইশারা করে মাইয়্যাতকে বলে اناربك আমি তোমার খোদা বলো!(নাওয়াদেরুল উসুল,হাকেম মুহাম্মদ বিন আলী তিরমিজি, পৃ,৩২৩)
আর বোখারী মুসলিমে আবু হোরায়রা রাঃ থেকে হাদিস বর্ণিত اذا اذن المؤذن ادبر الشيان وله حصاص/ضراط
বুঝা গেলো দাফনের পরপর আযান দিলে শয়তান মাইয়াতকে কুমন্ত্রণা দিতে পারবেনা।সাওয়ালের সঠিক জবাব দিতে পারবে।তাই তালক্বীন করতে আযান দেয়াটা সুন্নত ও হাদিসসম্মত।
সা'দ বিন মায়াজ রাঃ কে দাফনের পর রাসুলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘক্ষণ তাসবীহ ও তাকবীর পড়লেন সাহাবাদেরকেও পড়তে বললেন। পরে সাহাবাগন জিজ্ঞেস করলেন--এয়া রাসুলুল্লাহ এত দীর্ঘক্ষণ ধরে আপনি তাকবীর-তাসবীহ কেন পড়লেন? রাসুলে পাক উত্তর দিলেন -
এই নেককার ব্যক্তিটার কবর তাকে চাপ দিয়ে সংকীর্ণ করে ফেলছিল; আমাদের তাকবীর তাসবীহের বরকতে আল্লাহ পাক তা থেকে উনাকে নিষ্কৃতি দান করলেন।(মুসনাদে আহমদ৩/৩৬০-৩৭৭)
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ত্বীবী রহ, বলেছেন আমার ও তোমাদের অনবরত তাকবীর ও তাসবীহের কারনে আল্লাহ পাক কবরের সংকীর্ণতা দুর করে দিয়েছেন। (মিরকাত,১/২১১পৃ)
#দলিল-৩ঃ
মুসনাদে আহমদ, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ী, ইবনে মাযাহ (রহ.) - আবু সাইদ খুদুরী রাঃ থেকে বর্ণিত হাদিস নকল করেছেন, রাসুলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন,
لقنوا موتاكم لا اله الا الله
তোমরা তোমাদের মাইয়াতদের কে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু এর তালক্বীন করো।
আর আযানের মধ্যে এই কালেমা তাইয়েবা পুরোটাই আছে। তাই আযান দিলে এই হাদিসের উপর পরিপুর্ণ আমল হয়ে যায়।
#দলিল-৪ঃ
মুসনাদে আবি ইয়ালা, তাবরানী তে হজরত আবু হোরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত হাদিস এসেছে, রাসুলে আকরাম সরকারে দোআলম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন,
اذا رأيتم الحريق فكبروا فانه يطفئ النار.
তোমরা যদি অগ্নিকাণ্ড দেখো তখন তাকবীর পড়ো (আযান দাও) কারন এর দ্বারা আগুন নিভে যাবে।(মু'জামে আওসাত, ৯/৩৫৯ পৃষ্টা হা নং৮৫৬৪)
তাইসীর শরহে জামেউস সাগীরে আল্লামা আবদুর রউফ মনাভী রহ,এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন,
فكبروا وقولوا الله اكبر الله اكبر وكرروه كثيرا
অর্থাৎ তোমরা আল্লাহু আকবার কে বারবার পড়তে থাকো।
মানে তাকবীর পড়লে তথা আযান দিলে আগুন নিভে যায়।
মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী বলেছেন,
التكبير علي هذا لاطفاء الغضب الالهي ولهذا ورد استحباب التكبير عند رؤية الحريق
অর্থাৎ তাকবীর বললে আল্লাহর গজব ঠান্ডা হয়ে যায়।এজন্য আগ্নিকান্ড দেখলে আযান দেয়া মুস্তাহাব। (মেরকাত ১/২১১পৃ)
➡️কবরের আযাবের মধ্যে আগুন একটি মারাত্মক আযাব।তাই দাফনের পর আযান দিলে কবর আযাব আগুন দুর হয়।তাই আযান দিলে মাইয়াতের সবচেয়ে বেশী উপকার হয়।আর হাদিসে এসেছে خيرالناس من ينفع الناس সেই শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি যে মানুষের উপকার করে।
#দলিল-৫ঃ
আবুদাউদ, মুস্তাদরাক, ইবনে হাব্বানে হজরত সাহাল বিন সা'দ থেকে বর্ণিত হাদিস এসেছে, রাসুলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
ثنتان لا ترد الدعاء عند النداء وعند البأس
দুই সময়ে দোয়া ফেরত হয়না,কবুল হয়ে যায়, এক,আযানের সময়। দুই,যুদ্ধের সময়।
(মুস্তাদরাকে হাকেম,১ঃ১৯৮)
মুসনাদে আহমদের আরেক বর্ণনায় এসেছে হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন মুয়াজ্জিনেন আযান যতদূর শোনা যায় অতটুকু পর্যন্ত সকলকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।
(মুসনাদে আহমাদ,২ঃ১৩৬পৃ)
অতএব কবরে আযান দিলে মাইয়াতের গোনাহ মাফ হয়,দোয়াও কবুল হয়।তাই কবরে আযান দেয়া মুস্তাহাব প্রমানিত।
#দলিল-৬ঃ
তবরানী তিন মুজামের মধ্যেই হজরত আনাস রাঃ থেকে হাদিস নকল করেছেন -
اذا اذن في قرية امنها الله من عذابه في ذالك اليوم
কোন গ্রামে যদি আযান দেয়া হয় গোটা গ্রামবাসীকে আল্লাহ পাক ঐ দিন আযাব থেকে নিরাপত্তা দান করেন।(মু'জামে কাবীর১ঃ২৫৭,হা,নং৭৪৬)
অতএব কবরে আযান দিলে মাইয়াতের নিরাপত্তা লাভ হবে নিঃসন্দেহে।
#দলিল-৭ঃ
ইবনে আসাকির হজরত আবুহোরায়রা রাঃ থেকে হাদিস এনেছেন,
نزل ادم بالهند فاستوحش فنزل جبريل فناد بالاذان
হজরত আদম আঃ কে আল্লাহ পাক ভারতবর্ষে পাঠান।তিনি এখানে ভয় পাচ্ছিলেন। পরে হজরত জিবরাইল এসে আযান দেয়,এতে উনার ভয় দুরীভূত হয়।(হুলিয়াতুল আউলিয়া২ঃ১০৭)
বুঝা গেল আযান দিলে ভয়ংকর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
মাইয়াতকে কবরে রাখামাত্র খুব আতঙ্কিত হয়ে যায়। তখন যদও আযান দেয়া হয় তার ভয় ও আতঙ্ক কেটে যায়, তাই আযান দেয়া মুস্তাহাব প্রমানিত।
#দলিল-৮ঃ
মুসনাদে ফিরদাউসে হজরত আলী রাঃ থেকে রেওয়ায়ত এনেছেন
راني النبي صلي الله عليه وسلم حزينا فقال يتابن ابي طالب اني اراك حزينا فمر بعض اهلك يوذن في اذنك فانه درء الهم فجربته فوجدته كذالك
আমাকে একদিন হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেরেশান দেখলেন।তখন আমাকে ডেকে বললেন হে আলী তোমার পরিবারে কাুকে বলো তোমার কানে আযান দিতে।কারন আযান দিনে পেরোশানী দুর হয়।আমি তাই করলাম ঠিকই আমার দুঃশ্চিন্তা দুর হয়ে গেছে।(মিরকাত২ঃ১৪৯)
আর মাইয়াত কে দাফনের পর সবচেয়ে বড় দুঃশ্চিন্তা হলো সাওয়াল জওয়াব এবং আযাবে কবর।তাই তখন আযান দিলে সে দুঃশ্চিন্তা দুর হবে হাদিস দ্বারা প্রমানিত। সুতরাং কবরের তালক্বীন হিসেবে আযান দেয়া মুস্তাহাব প্রমানে এ দলিলগুলো একজন ঈমানদারের জন্য যথেষ্ট। আর অস্বীকার কারীকে কেউ ফেরাতে পারবেনা।তর্ক ছাড়া সে আর কিছু বুঝতে চায়না। আল্লাহ পাক আমাদের কে সঠিক মাসয়ালাটা বুঝার তৌফিক দান করুন। আমিন।