কিতাবঃ ফতোওয়ায়ে আহলে সুন্নাহ ২৫,২৬,২৭,২৮
লেখকঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাহাদুর
Edited by (Masum Billah Sunny)

আল-কুরআনের আলোকে রাসূলুল্লাহ ﷺ হাজির নাজিরঃ

“আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি ।" (আল-আম্বিয়া ১০৭)

অন্যত্র বলা হয়েছে,
“আমার রহমত প্রত্যেক কিছুকেই পরিবেষ্টন করে আছে।" (সূরা আ'রাফ, আয়াত ১৫৬)

বোঝা গেল যে, রাসূল (ﷺ) বিশ্ব চরাচরের জন্য রহমত
স্বরপ এবং রহমত সমগ্ৰ বিশ্বকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে।

“হে মাহবুব এটা আল্লাহর অভিপ্রেত (কাম্য) নয় যে আপনি তাদের মধ্যে অবস্থান কালে আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন ।
(সূরা আনফাল, আয়াত ৩৩)

অর্থাৎ খোদার কঠিন শাস্তি তারা পাচ্ছে না এজন্য যে, আপনি তাদের মধ্যে রয়েছেন ।
আর, সাধারণ ও সর্বব্যাপী আযাব তো কিয়ামত পর্যন্ত কোন জায়গায় হবে না।
'
হাযির-নাযির বিষয়ক হাদিস সমূহের বর্ণনা

(হাদিস ১)

♥ সুবিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ মিশকাত শরীফের ‘ইছবাতু আযাবিল কবর' শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছেঃ

"মুনকার-নকীর ফিরিশতাদ্বয় কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন, ওনার
(মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ ﷺ) সম্পর্কে তুমি কি ধারণা পোষন করতে?

Reference:
★ খতিব তিবরিযী । মেশকাত ১/৪৫ পৃ. হাদিসঃ ১২৬,
★ মুসলিমঃ আসসহীহ : ৪/২২০০ হাদিসঃ
১৮৭০,
★ বুখারী ও আস-সহীহঃ ৩/২০৫, হাদিসঃ  ১৩৩৮,
★ মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ১/৪৪২ হাদিস : ৭০,
★ নাসায়ীঃ সুনানে কোবরাঃ ৪/৯৭ পৃ. হাদিসঃ ২০৫১,
★ আবু দাউদঃ আফু-সুনান ৫৫/১১৪ পৃ- হাদিস ৪৭৫২

♦ এ হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ) লিখেনঃ

“মুসলিম শরিফের ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী (রহ) বলেন, মৃত ব্যক্তির দৃষ্টি থেকে আবরণ উঠিয়ে নেয়া হয়, যার ফলে সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পায়। এটা তার জন্য বড়ই শুভ সংবাদ । যদি সে সঠিক পথে থাকে।
Reference :
★ ইমাম সুয়ূতি, শরহে সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/৩১৬পৃ. হাশীয়ায়ে মেশকাত ২৪ পৃ. নূর মুহাম্মদ কুতুবখানা, করাচী, পাকিস্তান।

তাই রাসূল (ﷺ) সর্ব অবস্থায়ই হাযির-নাযির আছেন। আমরা আমাদের পাপ রাশির কারণে দেখিনি।

ইমাম কুস্তালানী (রহ.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেনঃ

-"এও বলা হয়েছে যে, তখন মৃত ব্যক্তির দৃষ্টির আবরণ অপসারণ করা হয়, যার দরুণ সে নবী আলাইহিস সালামকে দেখতে পায় ।
এটি মুসলমানদের জন্য বড় সুখের বিষয়,
যদি সে সঠিক পথে থাকে ।”
Reference :
★ ইমাম কুস্তালানীঃ ইরশাদুস-সারীঃ ২/৪৬৪পৃ.

আহলে হাদিসদের ইমাম আযিমাবাদী এবং
মোবারকপুরীও অনুরূপ তাদের হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন ।
Reference :
★ আযিমাবাদী, আবুল মা'বুদ, ১৩৬২পৃ.
★ মোবারকপুরীঃ তুহফাতুল আহওয়াজী৪/১৫৫পৃ.

(হাদিস ২)

♥ মিশকাত শরীফে হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ

-“হযরত যায়েদ, জাফর ও ইবন রাওয়াহা (রিদওয়ানুল্লাহে আলাইহিম আজমায়ীন) প্রমুখ।
সাহাবীগণের শাহাদত বরণের সংবাদ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আসার আগেই হযুর ﷺ মদীনার লোকদেরকে উক্ত সাহাবীগণের শহীদ হওয়ার কথা জানিয়ে দেন। তিনি বলেনঃ পতাকা এখন হযরত যায়দের (রাঃ) হাতে, তিনি শহীদ হয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত ‘আল্লাহর তলোয়ার' উপাধিতে ভূষিত সাহাবী হযরত খালেদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ) ঝাণ্ডা হাতে নিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাঁকে জয় যুক্ত করলেন।”
Reference :
★ খতিব তিবরিযী, মিশকাত । ৪/৩৮৪ পৃ. হাদিস : ৫৮৮৯,
★ বুখারীঃ আস-সহীহঃ ৭৫১২ পৃ: হাদিস : ৪২৬২

এতে বোঝা গেল, মদীনা থেকে অনেক দূরে অবস্থিত যুদ্ধ ক্ষেত্র (বেরে মউনায়) যা কিছু হচ্ছিল, হুযুর ﷺ তা' সুদূর মদীনা থেকে অবলোকন করছিলেন।

(হাদিস ৩)

♥ মিশকাত শরীফের ২য় খণ্ডে হযরত উকবা বিন আমের (রাঃ) হতে উল্লেখিত আছেঃ

“তোমাদের সঙ্গে আমার পুনরায় সাক্ষাতকারের জায়গা হল ‘হাউজে কাউছার’ যা আমি এখান থেকেই দেখতে পাচ্ছি ।"
Reference :
★ খতিব তিবরিযী ও মিশকাত ৪/৪০২ পৃ. হাদিস : ৫৯৫৮,
★ বুখারীঃ আস-সহীহঃ ৭/৩৪৮ হাদিসঃ
৪০৪২,
★ মুসলিমঃ আসসহীহঃ ৪/১৭৭৫ হাদিসঃ ২২৯৬,
★ নাসায়ীঃ সুনানে কোবরাঃ ৪/৫১ পৃ. হাদিসঃ
১৯৫৪,
★ আহমদ ইবনে হাম্বলঃ আল মুসনাদঃ ৪/১৪৮পৃ.,
★ মুসলিম : আস-সহীহ ঃ প্রথম খণ্ড, হাদিস : ৩০
কোথায় হাওজে কাউছার কোথায় নবীজি! অথচ সেটি নবীজির সামনেই অর্থাৎ হাযির-নাযির ছিল ।

(হাদিস ৪)

♥ মিশকাত শরীফে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত
আছেঃ

-“নামাযে তোমাদের কাতার সোজা রাখ’ জেনে রাখ, আমি তোমাদেরকে পেছনের দিক
থেকেও দেখতে পাই।"
Reference :
★ খতিব তিবরিযী । মিশকাত ১/২১৭ পৃ. হাদিস :১০৮৬,
★ বুখারী । আস-সহীহ : কিতাবু-সালাত ৷
২/২০৮ হাদিস : ৭১৯,
★ আবু নঈম ও দালায়েলুল নবুয়ত : পৃ. ৭১, হাদিস : ৫৬,
★ আবু আওয়ানাহ ও আল
মুসনাদ : ১/৪৬২, হাদিস ১৭১৭
★ মুসলিম : আস-সহীহ /৩৪ পৃ. হাদিস : ৪৩৪,
★ নাসায়ী ৷ আস সুনানুল কোবরা । ২৯২ পৃ. হাদিস : ৮১৪

(হাদিস ৫)

♥ সুপ্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থ তিরমিযী শরীফ’ ২য় খণ্ডের ‘বাবুল ইলম’ অধ্যায়ে হযরত আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত আছে।

-“একদা আমরা হযুর ﷺ এর সাথেই ছিলাম । তিনি আসমানের দিকে দৃষ্টি
করে বললেনঃ ইহা সে সময়, যখন জনগণ থেকে জ্ঞান ছিনিয়ে নেয়া হবে। শেষ পর্যন্ত তারা এ জ্ঞানের কিছুই ধারণ করতে পারবে না । "
Reference :
★ ইমাম তিরমিজী: কিতাবুল ইলম ৫৫/৩১ হাদিসঃ ২৬৫৩

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় হাদীসের সুবিখ্যাত ভাষ্যকার মোল্লা আলী কারী (রাঃ) তাঁর রচিত মিরকাত" এর কিতাবুল ইলম' এ বলেছেনঃ

→ ইমাম তিব্বী (রহ.) বলেন, হুযুর ﷺ যখন আসমানের দিকে তাকালেন তখন তাঁর নিকট প্রকাশ পায় যে তাঁর পরলোক গমনের সময় ঘনিয়ে আসছে। তখনই
তিনি সে সংবাদ দিয়েছিলেন ।"
Reference :
★ ইমাম মোল্লা আলী কারী ! মেরকাত ৫১/৩২০পৃ. হাদিস : ২৪৫

(হাদিস ৬)

♥ মিশকাত শরীফের ২য় খণ্ডে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছেঃ

হযরত উমর (রাঃ) হযরত সারিয়া (রাঃ) কে এক সেনা বাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করে ‘নেহাওয়ানন্দ' নামক স্থানে পাঠিয়েছিলেন। এরপর একদিন উমর ফারুক (রাঃ) মদীনা মুনাওয়ারায় খুতবা পাঠের সময় চিৎকার করে
উঠলেন। হাদীছের শব্দগুলো হলঃ

-"হযরত উমর (রাঃ) মদীনা মুনাওয়ারায় খুতবা পড়ার সময় চিৎকার করে বলে উঠলেন
ওহে সারিয়া ! পাহাড়ের দিকে পিঠ দাও । বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর উক্ত সেনাবাহিনী থেকে বার্তা বাহক এসে জানানঃ আমাদিগকে শত্রুরা প্রায় পরাস্ত করে ফেলেছিল। এমন সময় কোন এক আহবানকারীর ডাক শুনতে পেলাম। উক্ত অদৃশ্য আবানকারী বলেছিলেনঃ ওহে সারিয়া ! পাহাড়ের শরণাপন্ন হও । তখন আমরা পাহাড়কে পিঠের পেছনে রেখে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলাম । এরপর আল্লাহ আমাদের প্রতি সহায় হলেন, ওদেরকে পরাস্ত করে দিলেন।"
Reference :
★ খতিৰ তিবরিযী ! মেশকাত ও ৪/৪৪৬ পৃ. হাদিস : ৫৯৫৪,
★ ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুল নবুয়ত : ৬/৩৭০ পৃ.
★ ইমাম ইউসূফ নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন ? ৬১২-৬১৩ পৃ,
★ ইমাম আবু নঈম ইম্পহানী : দালায়েলুল নবুয়ত : পৃ. ৫১৮-৫১৯,
★ মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল ৫৭১ পৃ. হাদিস : ৩৫৭৮৮,
★ বায়হাকী ৷ কিতাবুল ইতিকাদ : ২০৩ পৃ.

(হাদিস ৭)

♥ হযরত হারিছ ইবনে নুমান (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন, একবার আমি (হারিছ) হযুর
আলাইহিস সালামের খিদমতে উপস্থিত হই। সরকারে দু'জাহান আমাকে জিজ্ঞাস করলেন, হে হারিছ, তুমি কোন অবস্থায় আজকের এ দিনটিকে পেয়েছ?" আরয করলামঃ
খাঁটি মুমিন। পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেনঃ
তোমার ঈমানের স্বরূপ কি? আরয করলামঃ

-“আমি যেন খোদার আরশকে প্রকাশ্যে দেখছিলাম । জান্নাতবাসীদেরকে পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাত করতে এবং দোযখবাসীদেরকে অসহনীয় যন্ত্রণায় হট্টগোল করতে দেখতে পাচ্ছিলাম।"

Reference :
★ ইমাম আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৬/১৭০ পৃ. হাদিস : ৩o৪২৩-২৫, মাকতাবাড়ুর রাশাদ, রিয়াদ, সৌদিআরব।
★ ইমাম আব্দুর রাযাক, জামেউ মামার বিন রশীদ, ১১/১২৯. হাদিস : ২০১১৪
★ ইমাম ইবনে মোবারক : আজ যুহুদ-ওয়াল রিকাক, ১/১০৬পৃ. হাদিস : ৩১৪,
★ ইমাম মহিউদ্দীন ইবনুল আরাবী, মু'জাম, ১/১৩০পৃ. হাদিস ২০৬
★ ইমাম তাবরানী : মুয'মাউল কবীর : ৩/২৬৬ হাদিস : ৩৩৬৭
★ ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ১৩/১৫৯প. হাদিস : ১০১০৭ ও ১০১০৮,
→ ইমাম বায়হাকী (রহ) এ হাদিসটির আকেটি সূত্র সাহাবি হযরত আনাস বিন মালেক (রা) হতে সংকলন করেন ( শুয়াকুল ঈমান, ১৩১৫৮ ”
হাদিস : ১০১০৬)

 
Top