বাবার মহত্ত্ব ও মর্যাদা
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ وَالصَّلوةُ وَالسَّلَامُ عَلَى خَاتَمِ النَّبِيِّنَ أَمَّا بَعْدُ فَأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَنِ الرَّجِيمِ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
১. এই বয়ানটি মুবাল্লিগে দাওয়াতে ইসলামী ও রুকনে শুরা হাজী আবু মাদানী, আব্দুল হাবিব আত্তারী مُدَّ ظِلُهُ الْعَالِي ১৪৪২ হিজরির ১লা সফরুল মুযাফফর, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে, করাচির মঞ্জুর কলোনির ফয়যানে আলা হযরত মসজিদে তাঁর মরহুম পিতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আশিকানে রাসূলের সুন্নাতে ভরা এক ইজতিমায় তাঁর ঈছালে সাওয়াবের জন্য এই বক্তব্য প্রদান করেন। যখন তাঁর এই বয়ান মাদানী চ্যানেলে প্রচারিত হয়, তখন আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত আল্লামা মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবী দَامَتْ بَرَكَاتُهُمُ الْعَالِيَهِ তাঁকে দোয়ার মাধ্যমে সম্মানীত করেন এবং এই বিষয়ে একটি গ্রন্থ লিখিত আকারে প্রকাশের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। (মালফুযাতে আমীরে আহলে সুন্নাত বিভাগ)
🕌 দরূদ শরীফের ফযিলত
প্রিয় নবী صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর বাণী: যে ব্যক্তি কিতাবে আমার উপর দরূদ শরীফ লিখেছে, তো যতক্ষণ পর্যন্ত আমার নাম তাতে থাকবে, ফেরেশতারা তার জন্য ইস্তিগফার (তথা ক্ষমার দোয়া) করতে থাকবে। (মু'জামু আউসাত, বাবুল আলিফ, মাস ইসফমুহু, ১/৪৯৭, হাদিস: ১৮৩৫।)
🕌 মায়ের ভালবাসার পাশাপাশি বাবার ভালবাসাও প্রকাশ করা উচিত
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! পিতা-মাতার সেবা করা অনেক বড় সৌভাগ্যের বিষয়, কিছু লোক পিতা-মাতার সেবা এবং বরকত থেকে অনেক দূরে থেকে যায়, তারা এই বিষয়টি বুঝতে পারে না যে তারা কত বড় ব্যক্তিত্ব। মায়ের ব্যাপারে তো আমরা অনেক শুনতে থাকি যে, মায়ের দোয়া জান্নাতের হাওয়া। মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত।' মায়ের কদমকে জান্নাতের চৌকাঠ বলা হয়েছে।২ মা, মা-ই হন, এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে মায়ের সাথে কারো তুলনা করা যায় না, মায়ের দুনিয়াতে কোনো বিকল্প নেই কিন্তু বাবার সেবা এবং আদব ও সম্মানের ক্ষেত্রে সেই জিনিসটি দেখা যায় না যা দেখা উচিত এবং বাবার প্রতি ততটা ভালবাসাও প্রকাশ করা হয় না যদিও আমাদের জীবনে বাবার একটি বিশেষ গুরুত্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
১. মুসনদুল শিহাব, ১/১০২, হাদিস: ১১৯।
২. দুররে মুখতার, কিতাবুল হাযর ওয়াল ইবাহাত, ৯/৬০৬।
🕌 বাবার সেবা ছেলেকে ধনবান করে দিল
এক ব্যক্তির চার ছেলে ছিল, সে অসুস্থ হলে তার এক ছেলে তার ভাইদের সামনে একটি বড় অদ্ভুত ফর্মুলা পেশ করল যে, তোমরা তিনজন মিলে বাবার সেবা-শুশ্রূষা করো, যখন তোমরা এত বড় নেকী অর্জন করবে তখন উত্তরাধিকার সূত্রে কোনো অংশ নেবে না অথবা আমাকে এই কাজ দাও যে আমি বাবার সেবা-শুশ্রূষা করব, সমস্ত সেবা করব এবং উত্তরাধিকার সূত্রে কোনো অংশ নেব না। খুবই অদ্ভুত কথা ছিল, টাকা কে ছাড়ে কিন্তু সেই ভাই জানত যে বাবার সেবার কী প্রতিদান? সুতরাং তিনজন ভাই বলল: এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে, তুমিই বাবার সেবা করো এবং উত্তরাধিকার সূত্রে কিছু নিও না। যাইহোক, এই ফর্মুলা ঠিক হয়ে গেল এবং সেই ভাই তার বাবার সেবা করতে লাগল, এমনকি বাবার ইন্তেকাল হয়ে গেল। সেই সেবা-যত্নকারী ছেলে উত্তরাধিকার সূত্রে কোনো অংশ নেয়নি কারণ সে ওয়াদা করেছিল যে আমি বাবার সেবা করলে উত্তরাধিকার সূত্রে অংশ নেব না। এখন কী হলো, এক রাতে সে ঘুমাল, স্বপ্নে আওয়াজ শুনতে পেল, কেউ বলছিল যে অমুক জায়গায় যাও এবং সেখানে ১০০ দিনার অর্থাৎ ১০০টি সোনার মুদ্রা আছে, সেগুলো নিয়ে নাও। এই ব্যক্তি স্বপ্নে কথককে জিজ্ঞেস করল যে, ওই ১০০ দিনারে বরকত আছে কি? সে বলল: বরকত নেই। সকালে উঠে এই ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বলল: আমাকে স্বপ্নে একটি জায়গা দেখানো হয়েছে যে সেখানে ১০০ দিনার আছে কিন্তু আমি নিতে অস্বীকার করেছি কারণ তাতে বরকত নেই। স্ত্রী বলল: অদ্ভুত মানুষ তুমি, প্রথমে উত্তরাধিকার ছেড়ে দিলে, তা থেকেও কোনো অংশ নিলে না, এখন ১০০ দিনার পাওয়া যাচ্ছিল, তুমি মানুষও গরিব, এটা তো নিয়ে নিতে পারতে। সে বলল: আমার সেই মাল চাই না যাতে বরকত নেই। দ্বিতীয় রাতে ঘুমাল, আবার তাকে স্বপ্নে একটি জায়গা দেখানো হলো যে অমুক জায়গায় সোনার ১০টি আশরাফি আছে, সেগুলো নিয়ে নাও। সে বলল: তাতে বরকত আছে কি? বলা হলো: তাতে বরকত নেই। সকালে উঠে এই ব্যক্তি স্ত্রীকে জানাল, স্ত্রী বলল: অদ্ভুত মানুষ, ১০০ দিনার থেকে ১০-এ এসেছ, ১০ তো নিয়ে নিতে। বলল: বরকত নেই তো আমার তা চাই না। তৃতীয় রাতে ঘুমাল, আবার স্বপ্নে একটি জায়গা দেখানো হলো যে সেখানে একটি দিনার আছে, সেটি নিয়ে নাও। সে জিজ্ঞেস করল: এতে বরকত আছে কি? স্বপ্নে জানানো হলো যে, হ্যাঁ! এতে বরকত আছে। সুতরাং এই ব্যক্তি সকালে উঠে সেই জায়গায় গেল এবং সেখান থেকে একটি দিনার তুলে নিয়ে এলো। এরপর সে এই দিনার দিয়ে পরিবারের জন্য দুটি মাছ কিনল যে আর কিছু না হোক পরিবারের লোকদের ভালো খাবার তো খাওয়াতে পারব। যখন ঘরে এলো এবং সে দুটি মাছের পেট চিরে ফেলল, তখন সেই দুটি মাছের পেট থেকে একটি করে মুক্তা বের হলো, এগুলো খুবই অদ্ভুত এবং Unique (অনন্য) মুক্তা ছিল, সে এই মুক্তাগুলো নিজের কাছে রেখে দিল। সেই দিনই বাদশাহ আদেশ জারি করলেন যে, আমার এই রঙের এবং এই ডিজাইনের মুক্তা চাই, বাদশাহর প্রতিনিধিরা শহরের সমস্ত জুয়েলার্সের কাছে গেল কিন্তু কোথাও থেকে এই ধরনের মুক্তা পাওয়া গেল না। অবশেষে জানা গেল যে অমুক মহল্লায় এক ব্যক্তি আছে যার মাছের পেট থেকে এমন মুক্তা বের হয়েছে যার মতো মানুষ দেখেনি। লোকেরা খুঁজতে খুঁজতে তার দরজা পর্যন্ত পৌঁছে গেল। মুক্তা দেখে বলল: বাদশাহর এমনই মুক্তা চাই, যখন বাদশাহকে সেই মুক্তা দেখানো হলো, তখন সেও বলল: হ্যাঁ, এটাই সেই মুক্তা। এখন এই মুক্তার দাম জিজ্ঞেস করা হলো, যেহেতু আগের যুগে গাধা ও ঘোড়ার উপর মাল বোঝাই করা হতো, তাই এই ব্যক্তি বলল: ৩০টি খচ্চর (অর্থাৎ ৩০ Mules) সোনা। বাদশাহ ৩০ খচ্চরের উপর সোনার বস্তা চাপিয়ে তার থেকে মুক্তা কিনে নিলেন। এক দিনারের বরকতে কত মাল হয়ে গেল, সেটাও এখনও একটাই মুক্তা বিক্রি হয়েছে। বাদশাহ এই মুক্তা নিয়ে সেই কাজের যে এক্সপার্ট ছিল তাকে দিলেন, সে বাদশাহকে বলল: একটা মুক্তা দিয়ে সৌন্দর্য আসবে না, এর জোড়া হওয়া উচিত, যখন এই ধরনের দ্বিতীয় মুক্তা পাওয়া যাবে, তখনই এর আসল মূল্য তৈরি হবে। বাদশাহ বললেন: আরেকটা মুক্তা খোঁজ করো যদিও দ্বিগুণ দাম দিতে হয়। তারপর মুক্তা খোঁজা হলো কিন্তু কোথাও পাওয়া গেল না, লোকেরা আবার সেই ব্যক্তির দরজায় পৌঁছাল, তাকে জিজ্ঞেস করল: তোমার কাছে কি এই ধরনের দ্বিতীয় মুক্তা আছে? সে বলল: এই ধরনের দ্বিতীয় মুক্তা তো আছে কিন্তু সেটা তোমরা ডাবল দামে পাবে, সুতরাং তারা সেই ব্যক্তির কাছ থেকে ৬০টি খচ্চর সোনার বিনিময়ে সেই মুক্তা কিনে নিল।' এই ঘটনা থেকে আমরা বাবার সেবা করার পাশাপাশি এটাও শিখতে পারলাম যে নিঃসন্দেহে অল্প মাল যাতে বরকত থাকে সেটা সেই বেশি মাল থেকে উত্তম যা হারাম এবং বরকতশূন্য। যাইহোক, এই ছেলে বাবার সেবা করল তো আল্লাহ পাক তাকে গায়েবের ভান্ডার থেকে ধনবান করে দিলেন।
১. হিলয়াতুল আউলিয়া, তাউস বিন কিসান, ৪/৮, হাদিস: ৪৫৭৩, নং: ২৪৯।
মায়ের খেদমতের প্রতিদান
একই ধরনের একটি বহুল পরিচিত কুরআনের ঘটনা সূরা বাকারাতেও রয়েছে, 'বাকারা' আরবিতে গরুকে বলে, এই সূরাতে সেই গরুর ঘটনা রয়েছে যা দুনিয়ার সবচেয়ে দামী গরু ছিল, যার মূল্যে সেই গরুর চামড়ায় সোনা ভরে সেই যুগের লোকেরা সেই যুবককে দিয়েছিল যে তার মায়ের সেবা করেছিল, মায়ের আনুগত্য করেছিল, ফলে আল্লাহ পাক তাকে এমন একটি গরু দান করেছিলেন যে, সেটার মতো গরু সারা দুনিয়াতে আর কোথাও ছিল না।২
২. তাফসীরে সাভী, পারা: ১, সূরা বাকারা, আয়াত: ৭১, ১/৭৫। কুরআনে এই ঘটনা ও এটা থেকে পাওয়া অনেক শিক্ষা ও উপদেশমূলক কথা জানার জন্য মাকতাবাতুল মদীনার কিতাব "কুরআনের বিস্ময়কর ঘটনাবলি" এর ৩৭ থেকে ৪১ পৃষ্ঠা অধ্যয়ন করুন। (মলফুযাতে আমীরে আহলে সুন্নাত বিভাগ)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এই ঘটনাগুলোতে যা শেখার বিষয়, তাতে পিতা-মাতা এবং সন্তান উভয়ের জন্যই শিক্ষা রয়েছে। পিতা-মাতা বলেন যে সন্তানদের জন্য অনেক কিছু রেখে যেতে হবে, আরে ভাই! সন্তানদের জন্যই তো উপার্জন করছি, সন্তানদের জন্য ঘর বানাতে হবে, ফ্যাক্টরি বানাতে হবে, এটা ভাবেন না যে, সন্তানদের জন্য হালাল উপার্জন করছেন নাকি হারাম? সন্তানদের প্রশিক্ষণ কী করছেন? মনে রাখবেন! যে ব্যক্তি সন্তানদের জন্য মাল রেখে যায় এবং সন্তানদের প্রশিক্ষণ না করে, তাহলে তারা সেই মাল দিয়ে হারাম কাজ করলে আযাব তাকেই পেতে হবে। হযরত সায়্যিদুনা উমর বিন আব্দুল আযিয رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, যখন তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছিলেন, তখন তাঁর কাছে খুব সামান্য মাল ছিল। কেউ বলল: আপনি আপনার সন্তানদের জন্য কিছুই রেখে যাননি। তিনি কী চমৎকার জবাব দিলেন যে, যদি আমার সন্তানরা আল্লাহ পাকের নাফরমান হয়, তাহলে তাদের জন্য কিছু রেখে যাওয়া মোটেই ঠিক নয় যে তারা তা ভুল কাজে খরচ করবে আর যদি আল্লাহ পাকের অনুগত হয়, তাহলে আল্লাহ পাক নিজের গায়েবের ভান্ডার থেকে তাদের দান করবেন, তাদেরকে তিনি নিজেই ধনী করে দেবেন এবং তাদের রিযিকে বরকত ঢেলে দেবেন।১
১. ইহয়াউল উলুম, কিতাবু যুল বুখলি ওয়া যম হুব্বুল মাল, বয়ান যামুল মাল ওয়া কারাহাতু হুব্বুহু, ৩/২৮৮।
🕌 হালাল অল্প হলেও তাতে বরকত অনেক বেশি হয়
এখানে দুটি কথা উল্লেখযোগ্য: প্রথম কথা নেক সন্তান যারা পিতা-মাতার রেখে যাওয়া মাল সঠিক উপায়ে ব্যবহার করে এবং দ্বিতীয় কথা হালাল মাল। যদি হালাল মাল অল্পও হয়, তবুও আল্লাহ পাক সেই অল্প মালেও সন্তানদের জন্য বরকত ঢেলে দেন। দুনিয়াতে এমন অনেক উদাহরণ বিদ্যমান আছে যে, কোটিপতি লোকেরা তাদের সন্তানদের জন্য অনেক বড় Business (ব্যবসা) রেখে দুনিয়া থেকে চলে যায়, তাদের সন্তানরা ভুল কাজে লিপ্ত থাকে, অল্প সময়ের মধ্যেই সমস্ত ব্যবসার ভরাডুবি হয়ে যায়, কিন্তু গরিব মানুষ কখনও কখনও দুনিয়া থেকে যায়, তার সন্তানরা নেককার হয়, আল্লাহ পাক তাদের এমনভাবে দান করেন এবং তাদের মালে বরকত ঢেলে দেন যে, তারা তাদের বাবার চেয়েও ব্যবসায় এগিয়ে যায়। আল্লাহ পাকের কাছে হালাল রিযিক চাওয়া উচিত যে, মাওলা! যা কিছু দেন হালাল দেন, বরকতওয়ালা দেন, কল্যাণ ও শান্তিওয়ালা দেন। হালাল যদিও অল্পও হয়, তা অনেক বরকতওয়ালা হয়। অনেক কোটিপতি লোক এমন রোগে আক্রান্ত হয় যে সারারাত ঘুমাতে পারে না, অথচ একজন ঠেলাগাড়ি চালক গরিব মানুষ রাতে শান্তির ঘুম ঘুমায়, পাঁচ ওয়াক্তের নামাযী হয় এবং তার সন্তানরা আনুগত্যশীল হয়। বোঝা গেল যে আসল হলো জিনিস Peace of Heart (অন্তরের শান্তি), টাকার নোট থাকা জরুরি নয়, অন্তরের শান্তি জরুরি।
🕌 বাবা ছায়াদানকারী বৃক্ষ
মনে রাখবেন! বাবা সেই ছায়াদানকারী বৃক্ষ যে রোদ নিজের উপর নেয় এবং সন্তানদের ছায়া দেয়, দিনরাত কাজ করে যাতে সন্তানরা ভালোভাবে খেতে পারে, আমরা বুঝতে পারি না কিন্তু বাবা নিজের আকাঙ্ক্ষাগুলো কুরবান করে আমাদের খাওয়াচ্ছেন এবং আমাদের আবদার পূরণ করছেন, যখন সন্তান বাজারে গিয়ে আবদার করে যে বাবা এটা নিতে হবে আর বাবা দেখেন যে পকেটে অত টাকা নেই কিন্তু সন্তান খুব জিদ করছে, তখন বাবা নিজের বাজেট আউট করেও নিজের সন্তানের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেন, এটা আমাদের বাবা আমাদের সাথে করেছেন এবং আপনার বাবাও আপনার সাথে করেছেন যে নিজে কষ্ট সহ্য করেছেন কিন্তু সন্তানদের সুবিধা প্রদান করেছেন। মনে রাখবেন! গাছের পাতার নিচে ছায়া থাকে কিন্তু গাছ উপর থেকে খুব গরম থাকে কারণ সে সমস্ত রোদ নিজের উপর নিয়ে নেয়। আল্লাহ পাক এই বাবাকে এত বড় নেয়ামত দিয়েছেন যে আঙ্গুল ধরে হাঁটতে শেখান, বাবা সবসময় চান যে আমার ছেলে উন্নতি করুক, দুনিয়াতে সাধারণত মানুষ কাউকে উন্নতি করতে দেখলে পছন্দ করে না, মানুষ হিংসার শিকার হয়ে যায় কিন্তু বাবা সেই সত্তা যখন তার ছেলে উন্নতি করে তখন তার আনন্দ হয়, কারণ বাবা ও সন্তানের যে সম্পর্ক তা নিঃস্বার্থ সম্পর্ক, সে নিজের দুঃখ সইবে কিন্তু নিজের সন্তানদের দুঃখী হতে দেবে না। সন্তান Demoralize (হতাশার শিকার) হয়ে গেলে বা কোনো সমস্যায় পড়লে সে তার সাহস বাড়াবে, তাকে বলবে: বৎস! ঘাবড়াবে না, আমি তো আছি, যদিও সে নিজেও ঘাবড়ে থাকে, সে নিজেও টেনশনে থাকে কিন্তু ঘরের কাউকে জানায় না যে আমার উপর কত Problems (সমস্যা) এসেছে। সে জানে যে সন্তানদের বললে বা সন্তানদের মাকে বললে এরা সবাইও টেনশনে পড়ে যাবে, এদের টেনশনে ফেলার কী দরকার? আরে আমি তো আছি! সহ্য করে নেব, তারপর কখনো ঋণ নেয় তো কখনো কঠিন জীবন কাটায় কিন্তু নিজের সন্তানদের উপর কোনো ধরনের আঁচ আসতে দেয় না।
🕌 মা-বাবার সেবা করা সৌভাগ্যবানদের কাজ
একটা সময় আসে যখন সন্তান যুবক আর বাবা বৃদ্ধ হয়ে যায়, এখন সন্তানের পালা যে সে বাবার সেবা করবে। মনে রাখবেন! যদি আমরা সারাজীবনও মা-বাবার সেবা করি, তবুও তাদের অনুগ্রহ এবং প্রতিদান শোধ করতে পারব না কারণ তারা সেই সময় আমাদের সেবা করেছেন যখন আমরা হাঁটতে পারতাম না, খেতে পারতাম না, আমরা বস্ত্রহীন এবং দুর্বল ছিলাম, তারা আমাদের সাহস দিয়েছেন এবং আমাদের লালন-পালন করে একটি শক্তিশালী বৃক্ষ বানিয়েছেন। এখন যখন তাদের সেবার পালা, তখন আমাদের সৌভাগ্য মনে করে তাদের সেবা করা উচিত। সৌভাগ্যবান সেই সন্তান হলো যে মা-বাবার খেদমেতর সুযোগ পায়, নইলে অনেক মা-বাবা তো এমন হন যে তারা খেদমতের সুযোগই দেন না, আমাদের সেবা করতে করতে দুনিয়া থেকে চলে যান। মানুষ বলে, আমার তো Chance (সুযোগ)-ই মেলেনি, শেষ সময় পর্যন্ত বাবাই আমাদের খাওয়াতেন, বাবাই আমাদের উপর মেহেরবানী করতেন, আমাদের মা-ই আমাদের উপর মেহেরবানী করতেন, আরে আমাদের তো সুযোগই দেননি যে আমরা তাদের কিছু সেবা করতে পারি।
(এই বিষয়ে দা'ওয়াতে ইসলামীর মুবাল্লিগ ও রুকনে শূরা, হাজী আবু মাদানী, আব্দুল হাবীব আত্তারী مدَّ طِلُهُ الْعَانِي তার সম্মানীতা আম্মার কথা উল্লেখ করে বলেন:) "আমার মরহুমা আম্মা যখন ইন্তেকাল করেন, আমি তখন পাকিস্তানে ছিলাম না বরং বাগদাদ শরীফে ছিলাম। আমাকে বাড়ির লোকেরা জানিয়েছিল যে রাতে মা ইন্তেকাল করেন, সেই রাতের খাবার তিনি নিজেই রান্না করেছিলেন, তখনও তিনি নিজের সেবার সুযোগ দেননি। তিনি আল্লাহ পাকের দরবারে দোয়া করতে করতেন যে, হে আল্লাহ পাক! আমাকে আপনি ছাড়া অন্য কারো মুখাপেক্ষী করবেন না। আল্লাহ পাক তার দোয়া কবুল করে নিয়েছিলেন।” এখন এর চেয়ে বড় বদনসীব কে আছে যাকে বাবা বা মায়ের সেবার সুযোগ (পেল) এবং সে এই বলে যে আমি এই বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার কারণে বিরক্ত হয়ে গেছি। এত টাকা মা-বাবার উপর খরচ করব? ধিক্কার সেই সন্তানের উপর যে নিজের পিতা-মাতার সেবা করাকে বোঝা মনে করে। আল্লাহর ওয়াস্তে! এটা আমাদের টাকার নসীব যে তা পিতা-মাতার উপর খরচ হয়ে যায় কারণ সারাজীবন তো তারাই খরচ করেছেন না, যা কিছু দিয়েছেন তারাই দিয়েছেন। আমরা যা কিছু এবং আমাদের যে সম্মান, খ্যাতি ও ধন-সম্পদ মিলেছে, এসব মা-বাবার সদকা এবং এতে বাবার অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে এবং আমাদের অবস্থা এই হয় যে আমরা কখনও কখনও বাবার শুকরিয়াও আদায় করি না। আমার মা আমাকে খাওয়ান, আমার মা আমাকে পান করান, আমার মা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন, আমার মা আমাকে কোনো জিনিস এনে দেন, তো মাকে টাকা কে দেয়? উপার্জন করে কে নিয়ে আসে? বাবা পুরো ঘরের স্তম্ভ কিন্তু কেউ তার শুকরিয়া আদায় করছে না এবং তার এই কষ্ট বুঝছে না। বাবা পুরো ঘরের কর্তা এবং পুরো ঘরের জন্য ছায়াদানকারী বৃক্ষ যে বেচারা পরিশ্রম করছে, আমাদের ছায়া দিচ্ছে, আমাদের প্রতিপালন করছে, আমাদের কাছে যা কিছু আছে তা আমাদের বাবার, এটা আমি বলছি না, আমাদের প্রিয় নবী صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم বলছেন। নবী পাক صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর (বরকতময়) যুগের একটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা লক্ষ্য করুন:
🕌 দুঃখী বাবার কাহিনী তারই মুখে
প্রিয় নবী صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর দরবারে এক ছেলে তার বাবার অভিযোগ নিয়ে উপস্থিত হলো যে, হুযুর! আমার বাবা আমার মাল নিতে চায়। নবী পাক صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم বললেন: তোমার বাবাকে নিয়ে এসো। বাবাকে নিয়ে এলে নবী পাক صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم বললেন: তোমার ছেলে বলছে যে তুমি তার মাল নিতে চাও? সে আরয করল: হুযুর! এর থেকেও তো জিজ্ঞেস করুন যে মাল নিয়ে কী করি? এর থেকে টাকা চেয়ে সেই টাকার কী করি? নিজের আত্মীয়-স্বজনের মেহমানদারি করি এবং নিজের সন্তান-সন্ততির প্রয়োজনে খরচ করি। আলোচনা চলছিল, এরই মধ্যে জিবরাইল আমীন عَلَيْهِ السَّلَام উপস্থিত হলেন এবং বললেন: হুযুর! এই বাবা মনে মনে কিছু কবিতা রচনা করেছেন, এখনো সেই কবিতা তার নিজের মুখেও আসেনি, হুযুর! আপনি তাকে বলুন সেই কবিতাগুলো শোনাতে। নবী পাক صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم অদৃশ্যের খবর জানিয়ে ইরশাদ করলেন যে, তুমি কিছু কবিতা ভেবে রেখেছ যা এখনো তোমার মুখ থেকে বের হয়নি, এতে সে বলল: আল্লাহ পাক সব সময় আপনার মু'জিযার মাধ্যমে আমাদের অন্তরের বিশ্বাস এবং অন্তর্দৃষ্টি বৃদ্ধি করেন। এখন এই বাবা নবী পাক صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم কে সেই কবিতাগুলো শোনালেন যার বাংলা অনুবাদ হলো: "আমি তোমাকে খাদ্য পৌঁছিয়েছি, যখন থেকে তুমি জন্ম নিয়েছ তোমার ভার বহন করেছি, যখন তুমি ছোট ছিলে আমার উপার্জন থেকে বারবার পরিতৃপ্ত হয়েছ, যখন কোনো অসুস্থ পেরেশান হয়ে তোমার উপর আসত, তখন আমি তোমার অসুস্থতার কারণে সারারাত জেগে থাকতাম, আমার অন্তর তোমার মরণের ভয় পেত যদিও আমি খুব ভালো করেই জানতাম যে মৃত্যু নিশ্চিত এবং সবার উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমার চোখ এমনভাবে ঝরত যেন সেই রোগ যা রাতে তোমার হয়েছিল, আমার নয়, এমন হতো যে আমার হয়েছে অর্থাৎ অসুস্থ তুমি হতে, কষ্ট আমার হতো, আমি অস্থির হয়ে যেতাম, আমি তোমাকে এমনভাবে লালন-পালন করেছি যখন তুমি বড় হয়েছ এবং সেই পর্যায়ে পৌঁছেছ যে আমার আশা লেগেছিল যে এখন তুমি আমার কাজে আসবে, তখন তুমি আমার প্রতিদান কঠোরতা ও কটু কথা দিয়ে দিয়েছ, হায়! যখন তুমি বাবা হওয়ার অধিকারের খেয়াল রাখোনি, তখন এমন আচরণ করতে পারতে যেমন এক প্রতিবেশী অন্য প্রতিবেশীর সাথে করে, অন্তত আমার এতটুকু খেয়াল রাখতে। "সেই দুঃখী বাবা যখন নবী صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم কে এই কবিতাগুলো শোনালেন, তখন صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হয়ে গেল, নবী পাক صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم সেই যুবক ছেলের কলার ধরে বললেন: إِذْهَبْ أَنْتَ وَمَالُكَ لِأَبِيْكَ যাও, তুমি আর তোমার মাল সব তোমার বাবার।১
১. মু'জামু সগীর, বাবু মিন ইসমুহু মুহাম্মদ, ২/৪৩, হাদিস: ৯৬৬।
🕌 মা-বাবা নিজেদের জন্য নয়, নিজেদের সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকেন
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! আমার আকা صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم বলেছেন যে "তুমি আর তোমার সবকিছু তোমার বাবার।" আজ টাকা দেওয়ার সময় ছেলে বলে: বাবা, এগুলো আমার আর এগুলো আপনার, কত দেব? বারবার কেন চান? বাবা তো খাওয়ানোর সময় কখনো এটা বলেননি বরং নিজের লোকমা থামিয়ে আমাদের মুখে তুলে দিয়েছিলেন, নিজের আকাঙ্ক্ষা মেরে আমাদের লালন-পালন করেছিলেন, বাবা নিজে নতুন পোশাক কম পরেছিলেন কিন্তু আমাদের নতুন নতুন পোশাক এবং নতুন নতুন জুতো এনে দিয়েছিলেন, যা আমরা চেয়েছি আমাদের বাবা পূরণ করেছেন, কখনো আমরা ভেবেছি যে আমাদের বাবা নিজের জন্য কখন কী কিনেছেন? কখনো বলেছেন যে বাবা আজ এই জুতো খুব পছন্দ হয়েছে তাই নিজের জন্য এনেছি, আরে না না, বরং বাবার মুখে সব সময় এটাই থাকত যে আমি আমার ছেলের জন্য এনেছি, আমার মেয়ের জন্য এনেছি, আমার স্ত্রীর জন্য এনেছি। মা-বাবা অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, তারা নিজেদের জন্য বাঁচে না, নিজেদের সন্তানদের জন্য বাঁচে এবং যখন সন্তান বড় হয়ে মা-বাবার সাথে বেয়াদবি ও খারাপ আচরণ করে, মনে কষ্ট দেয় এমন কথা বলে, তখন এতে মা-বাবার মনে কতটা কষ্ট পায়! কিতাবে বাবার আদব এতদূর পর্যন্ত লেখা আছে যে “সন্তান বাবার সামনে এমনভাবে থাকবে যেমন গোলাম মালিকের সামনে থাকে।১ বাবা যখন ছেলেকে কোনো Order (আদেশ) দেন, তখন ছেলে বলবে আমি হাযির, এটা বাবার ছেলের উপর অধিকার এবং আদব। আজ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ছেলে বাবা আর বাবা গোলাম হয়ে গেছে, এখন বাবা বলে যে, বাবা কিছু টাকা লাগবে, ছেলে বলে যে আমার কাছে টাকা নেই বা বাবা বলে যে, (বাবা) এদিকে এসো একটু কাজ আছে, তো ছেলে জবাব দেয় যে আমার সময় নেই।
১. মুসতাদরাক, কিতাবুল বির ওয়াস সিলাহ, ৫/২১৭, হাদিস: ৭৩৪৫।
🕌 বাবাকে নির্জন স্থানে ফেলে আসা দূর্ভাগা ছেলে
হাদিস শরীফে আছে: সব গুনাহের শাস্তি আল্লাহ পাক চাইলে কিয়ামতের জন্য উঠিয়ে রাখেন কিন্তু মা-বাবার নাফরমানির জীবদ্দশায় দুনিয়াতেও দেন। এর Reaction (প্রতিক্রিয়া) এই হয় যে তার নিজের সন্তান তার নাফরমানি করে। প্রসিদ্ধ ঘটনা আছে যে, এক যুবকের বিয়ে হলো, তার বাবা বৃদ্ধ ছিল, কাঁশতে থাকত, তার স্ত্রী বলল যে এই বৃদ্ধকে ঘর থেকে বের করে দাও। ছেলে যেহেতু স্ত্রীর গোলাম হয়ে গিয়েছিল, সে নিজের বাবাকে নিয়ে চলল যে, কোথাও নির্জন স্থানে ফেলে আসবে। বাবা বলতে লাগল: পুত্র! ঠান্ডায় আমাকে কোথাও ফেলে যাচ্ছ, আমাকে কোনো কম্বল তো দাও। তার সাথে তার ছোট ছেলেও ছিল, সে তার দাদাকে বলতে লাগল: দাদা আমি আপনার জন্য কম্বল নিয়ে আসছি। যখন সেই ছেলে কম্বল নিয়ে এলো, তখন সেই নাফরমান ছেলে দেখল যে কম্বলকে মাঝখান থেকে কেটে দু'টুকরো করা হয়েছে এবং অর্ধেক কম্বল নিয়ে এসেছে, সেই নাফরমান ছেলে নিজের ছেলেকে বলতে লাগল: তুমি অর্ধেক কম্বল কেন এনেছ? সে বলতে লাগল: অর্ধেক এদের জন্য এনেছি আর যখন আপনি বৃদ্ধ হয়ে যাবেন, তখন আপনাকেও তো আমি কোথাও ফেলে যেতে হবে, তখন অর্ধেক আপনাকে দিয়ে দেব। এখন সেই নাফরমান ছেলের চোখে অশ্রু এসে গেল, সে এই কথা বুঝতে পারল যে আজ আমি যা আমার বাবার সাথে করতে যাচ্ছি, কাল আমার সন্তানও আমার সাথে এটাই করবে।
🕌 বাবার স্নেহ কখনো ভুলবেন না
আগে আমরা শুনতাম যে Old House (বৃদ্ধাশ্রম) ইউরোপ এবং আমেরিকাতে আছে, এখন তো বাংলাদেশেও তৈরি হতে শুরু করেছে এবং এখানকার লোকেরাও নিজের বাবাকে Old House এ পাঠাতে শুরু করেছে। আরে হতভাগা! এটা জান্নাতের দরজা ছিল যাকে ঘর থেকে বের করে Old House এ পাঠিয়ে দিয়েছ। যৌবনে এসে বৃদ্ধ বাবার কাঁশি খারাপ লাগছে, এটা ভাবোনি যে আমরা তো তাদের বিছানায় ময়লা করেছিলাম কিন্তু সেই সময় বাবা তো আমাদের লাথি মেরে ঘর থেকে বের করে দেননি। কখনো এটাও ভেবেছ যে বাবা আমাদের শৈশবে কত রাত জেগে কাটিয়েছেন? এই সব কথা সেই সময় মানুষের মাথায় আসে যখন সে নিজে বাবা হয়, তখন সে বুঝতে পারে যে সন্তান কতটা জ্বালাতন করে? এখন তো অনেক Facilities (সুবিধা) এসে গেছে, বাচ্চাদের প্যাম্পারস এসে গেছে এবং আরও নানা ধরনের Facilities এসে গেছে। ভাবা উচিত যে ৩০-৪০ বছর আগে যখন আমরা ছোট ছিলাম, সেই সময় তো তাদের কাছে টাকাও থাকত না, তারপর তারা আমাদের কীভাবে লালন-পালন করেছেন?
🕌 বাচ্চা ও বৃদ্ধ দুজনেই সমান
এই কথাটি বিশেষ করে শিশু এবং তরুণরা সব সময় মনে রাখবেন যে, বয়সের এমন একটি অংশ আসে যেখানে মানুষ বৃদ্ধ হওয়ার পর আবার শিশু হয়ে যায়, যেন এটি একটি সম্পূর্ণ চক্র। শৈশব, যৌবন তারপর বার্ধক্য, এখন এই বার্ধক্য এবং শৈশব একটি স্তরের। যেভাবে শিশু কথা বোঝে না, সেভাবে বৃদ্ধও কথা বুঝতে পারে না। যদি শিশু জিদ করে, তাহলে বৃদ্ধও জিদ করবে। যদি শিশুর Level of Understanding (অনুধাবন শক্তি) কম থাকে, তাহলে বৃদ্ধেরও কম হয়ে যাবে। আমরা বলছি যে বাবা হয়ে এত জিদ করেন, আরে ভাই এদের এখন ৬০ বছরের মনে করবেন না, বরং এদের ছয় বছরের মনে করুন, ছয় বছরের শিশু যখন জিদ করে যে আমার অমুক জিনিস চাই, তখন সেই সময় শিশুর সাথে কে ঝগড়া করে? বরং তার উপর স্নেহ আসে, বাবার বয়স ৬০ বছর, তার Level of Understanding কমে গেছে, এখন তার উপরও স্নেহ আসা উচিত। যখন বাবাও বারবার জিদ করেন বা কথা না মানেন, তখন সেই সময় বুঝে নেওয়া উচিত যে ছয় বছরের শিশুর সাথে কথা বলছি। এভাবে করলে বাবার সেবা করাও সহজ হয়ে যাবে এবং তার কোনো কথাও খারাপ লাগবে না। সাধারণত রাগ এই কথার উপরই আসে যে ইনি আমার কথা কেন বুঝছেন না? প্রথমত তো রাগ আসাই উচিত নয়, হতভাগা সেই লোক যারা এই বয়সে পিতা-মাতার সাথে অভদ্রতা করে ফেলে।
🕌 যেমন করবে তেমন ফল পাবে
বর্ণিত আছে যে, এক পুত্র তার পিতার উপর বিরক্ত হয়ে গেল, সে তার পিতাকে গাড়িতে বসাল এবং পরিকল্পনা করল যে অমুক খালের কিনারায় পৌঁছে তাকে ধাক্কা দিয়ে দেবে। যখন সে তার পিতাকে নিয়ে সেই খালের পুলের উপর পৌঁছাল, তখন পিতা বুঝতে পারল এবং বলতে লাগল: পুত্র! এখানে নয়, একটু এগিয়ে যেখানে পানি গভীর, সেখান থেকে আমাকে ধাক্কা দিও। পুত্র বলতে লাগল: এটা আপনি কী বলছেন? সে বলতে লাগল: কারণ আমিও আমার পিতাকে এই জায়গায় ধাক্কা দিয়েছিলাম। আজ তুমি আমার সাথে যা করতে যাচ্ছ, আমিও আমার পিতার সাথে তা করেছিলাম, যার প্রতিদান আমি পাচ্ছি।' এই দুনিয়া
১. যেমন কর্ম তেমন ফল, পৃষ্ঠা ৯০, সামান্য পরিবর্তিত। আলা হযরত মাওলানা ইমাম আহমদ রেখা রَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ বলেন: বুদ্ধিহীন, দুষ্ট এবং অবুঝ (সন্তান) যখন শক্তি ও সামর্থ্য লাভ করে, তখন বৃদ্ধ পিতার উপরই জোর খাটায় এবং তাঁর আদেশ অমান্য করে। শীঘ্রই দেখা যাবে যে, যখন তারা নিজেরা বৃদ্ধ হবে, তখন নিজেদের কৃতকর্মের ফল নিজেদের হাতেই ভোগ করবে। যেমন কর্ম তেমন ফল। আর আখেরাতের আযাব অত্যন্ত কঠিন ও চিরস্থায়ী। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৪/৪২৪) হযরত সায়্যিদুনা সাবিত বুনানী রَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ বলেন: কোনো এক স্থানে এক ব্যক্তি তার পিতাকে মারধর করছিল। লোকেরা তাকে তিরস্কার করে বললো, “ওহে নরাধম! এ কী করছিস?” তা শুনে পিতা বললেন: "ওকে ছেড়ে দাও, কারণ আমিও এই একই জায়গায় আমার পিতাকে মারতাম। এ কারণেই আমার ছেলেও আমাকে এই একই স্থানে মারছে। এটা তারই কর্মফল, ওকে তিরস্কার করো না।” (তানবীহুল গাফিলীন, বাব হাক্কুল ওয়ালাদ আলাল ওয়ালিদ, পৃ: ৬৯)
প্রতিফলনের স্থান, যে সন্তান তার পিতার আদব করে, সেও পরবর্তীতে তার সন্তানের দ্বারা আদব প্রাপ্ত হয়। যদি আপনি কোথাও সন্তানদেরকে তাদের পিতার হাত চুম্বন করতে দেখেন, তাহলে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন যে মনে হচ্ছে আপনি আপনার পিতার আদব ও সম্মান করেছেন, সে অবশ্যই বলবে যে الْحَمْدُ لله আমি আমার পিতার সম্মান করেছি। যে ব্যক্তি তার পিতার সম্মান করবে, আল্লাহ পাক তার সন্তানকে তার বাধ্যগত বানিয়ে দেবেন।' অতএব, নিজের পিতার সাথে ভালোবাসা পোষণ করুন, তার আদব করুন এবং নিজের পিতাকে Discouragement (হতাশা) করবেন না! কিছু তো এমন নাদান থাকে যারা নিজের পিতার সাথে কথাও বলে না এবং মেলামেশাও করে না। মা নিজের ছেলেকে 'আমার কলিজা' ইত্যাদি বলে বুকে জড়িয়ে নেয়, ভালোবাসাপূর্ণ শব্দ বলে, পিতা যদিও স্পষ্ট এবং খোলাখুলি শব্দে এটা বলেন না কিন্তু বাস্তবে তিনিও সন্তানদের ভালোবাসেন, বাবা তো সন্তানদের জন্য সবকিছু করেন, তিনি মুখে বলেন না কিন্তু তার হৃদয়েও সন্তানদের জন্য অনেক সহানুভূতি থাকে। অন্তত তাকে Acknowledge (স্বীকার) তো করুন, পিতার ভালোবাসার কখনো তো তাকে প্রতিদান দিন। কখনো পুত্রও পিতাকে বলে দিক যে আজ আমি যা কিছু, আপনারই কারণে, এটা শোনার পর নিশ্চয়ই পিতা অশ্রুসিক্ত হবেন।
১। হুজুর আকরাম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন:
عِفُوا تَعِفَّ نِسَاؤُكُمْ وَبِرُوا آبَاءَكُمْ يَبَرُّكُمْ أَبْنَاؤُكُم
অর্থাৎ, তোমরা সচ্চরিত্র হও (পবিত্রতা অবলম্বন করো), তোমাদের নারীরাও সচ্চরিত্রা (পবিত্র) থাকবে এবং তোমরা তোমাদের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো, তোমাদের সন্তানরাও তোমাদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। (মুজামুল আওসাত, মান ইম্মুহু মুহাম্মাদ, খণ্ড ৪, পৃঃ ৩৭৬, হাদিস: ৬২৯৫)
🕌 অসংখ্য হাদিসে মুবারাকায় বাবার ফযিলত
কিছু লোক শুধু মায়ের সাথে সম্পর্ক রাখে এবং বাবার সাথে ঝগড়া করে, এমনটা করা উচিত নয়, বাবারও আদব ও সম্মান করা আবশ্যক। আল্লাহ পাকের শেষ নবী صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم বলেছেন: বাবা জান্নাতের মধ্যবর্তী দরজা (Central Door Of Jannah), তোমার ইচ্ছা এটির যত্ন নিবে নাকি একে ছেড়ে দিবে।' অপর একটি হাদিস শরীফে ইরশাদ করেছেন: সন্তান তার বাবার হক আদায় করতে পারে না যতক্ষণ না সন্তান তার বাবাকে গোলাম হিসেবে পায় এবং তাকে কিনে আজাদ করে দেয়।২ আরেকটি স্থানে হাদিস শরীফে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইরশাদ করেছেন যে "রবের সন্তুষ্টি বাবার সন্তুষ্টিতে এবং রবের অসন্তুষ্টি বাবার অসন্তুষ্টিতে (নিহিত রয়েছে)৩।
১. তিরমিযি, কিতাবুল বিররি ওয়াস সেলাহ, ৩/৩৫৯, হাদিস: ১৯০৪।
২. মুসলিম, কিতাবুল আতকি, বাবু ফদলু আতকিল ওয়ালিদ, ৬২৪ পৃ:, হাদিস: ৩৭৯৯।
এই হাদিসে পাকের ব্যাখ্যায় হযরত মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁ রَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ বলেন: উদ্দেশ্য এটা যে, ছেলে তার পিতার যতই খেদমত করুক না কেন তাঁর হক আদায় করতে পারবে না, তার হক আদায় করার এই অবস্থা যে, যদি ছেলে স্বাধীন ও সম্পদশালী হয় আর পিতা গোলাম হয়ে থাকে তবে ছেলে তাকে ক্রয় করে নিবে যাতে তার পিতা মালিকানায় চলে আসতেই আযাদ হয়ে যায়।
(মিরআতুল মানাজিহ, ৫/১৮৭)
৩. তিরমিযি, কিতাবুল বিররি ওয়াস সিলা, ৩/৩৪০, হাদিস: ১৯০৭।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, যার বাবা রাজি তার রব রাজি এবং যার বাবা নারাজ তার রব নারাজ। আল্লাহ পাকের প্রিয় হাবীব صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর দরবারে কেউ উপস্থিত হয়ে আরয করল: ইয়া রাসূলাল্লাহ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ! আমার সদ্ব্যবহারের সবচেয়ে বেশি হকদার কে? ইরশাদ করলেন: তোমার মা। সে আবার আরয করল: এরপর কে? ইরশাদ করলেন: তোমার মা। আরয করল: এরপর কে? তো তিনি এইবারও এটাই ইরশাদ করলেন: তোমার মা। সে আবারও জিজ্ঞেস করল: এরপর কে? তখন তিনি বললেন: তোমার বাবা।১
নবী পাক صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর সত্যভাষী মুখ থেকে যে শব্দ বের হয়, তা প্রজ্ঞা ভরা থাকে। অবশেষে হুযুর আকরাম صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم তিনবার মায়ের ব্যাপারে এবং একবার বাবার ব্যাপারে কেন বললেন? এর কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে ওলামায়ে কেরাম كَثَرَهُمُ اللهُ السَّلَام বলেছেন যে মায়ের তিনটি ইহসান (উপকার) থাকে: (১) মা নয় মাস সন্তানকে পেটে ধারণ করে (২) প্রসবকালীন কষ্ট সহ্য করে (৩) সন্তানের লালন-পালন করে, অথচ বাবার একটি ইহসান (উপকার) থাকে যে সন্তানের লালন-পালন করে। বাবার যদিও একটি হক এবং মায়ের তিনটি হক, কিন্তু এর মানে এই নয় যে, বাবার আদবই করতে হবে না, বরং ওলামায়ে কেরাম كَثَرَهُمُ اللَّهُ السَّلَامِ লিখেছেন: মায়ের খেদমত বেশি করবে এবং সম্মান বাবার বেশি করবে কারণ তিনি তোমার মায়ের স্বামী এবং তোমার মায়ের শিরোমণি। সায়্যিদুনা আলা হযরত ইমাম আহমদ রযা رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ লিখেছেন যে, যদি পিতা-মাতার মধ্যে ঝগড়া হয়, তাহলে সন্তান কখনো পিতার Favour (পক্ষ) নিয়ে মায়ের সাথে এবং মায়ের Favour (পক্ষ) নিয়ে পিতার সাথে ঝগড়া করবে না। সন্তানের কারো সাথে ঝগড়া করার অনুমতি নেই, তাকে সেখানেও আদবের আঁচল ধরে রাখা আবশ্যক।৪
১. বুখারী, কিতাবুল আদাব, ৪/৯৩, হাদিস: ৫৯৭১।
২. মিরআতুল মানাজিহ, ৪/৫১৫।
৩. ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৪/৩৯০।
৪. ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৪/৩৯০।
🕌 প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি মকবুল হজ্জের সাওয়াব
মনে রাখবেন! মা-বাবা উভয়েই সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব, উভয়ের আদব ও সম্মান করুন এবং তাদের ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখে মকবুল হজ্বের সাওয়াব অর্জন করুন। হাদিস শরীফে আছে: যে নেক সন্তান নিজের পিতা-মাতার দিকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকায়, তো আল্লাহ পাক তার প্রতিটি নজরের বিনিময়ে একটি মকবুল হজ্বের সাওয়াব লিখে দেন।' হজ্বের সাওয়াব ঘরেই বিদ্যমান কিন্তু ভালোবাসার দৃষ্টিও থাকা চাই। আজ সন্তান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এবং ভয় দেখানোর দৃষ্টিতে নিজের পিতা-মাতাকে দেখে।২ এমন সন্তানের উপর আফসোস যে কথা বলার সময় পিতা-মাতা ভয় পায়। মা যে ছেলের সাথে কথা বলতে ভয় পায় যে কথা বললে ছেলে ঝগড়া করবে, রেগে যাবে। সেই মেয়ে যার সাথে কথা বলতে মা ভয় পায়, এমন ছেলে এবং এমন মেয়ে কি দরকার? হওয়া তো উচিত যে যখন মা-বাবা কোনো কথা বলেন, তখন জবাবে لبیک (আমি হাজির) বলে আওয়াজ দেয়া এই শিক্ষা আমাদেরকে শরীয়ত শেখায় কিন্তু আজ সন্তান এই কথা বোঝে না।
১. শুয়াবুল ঈমান, বাবু ফি বিররিল ওয়ালিদাইন, ৬/১৮৬, হাদিস: ৭৮৫৬।
২. হাদিসে পাকের রয়েছে: যে ব্যক্তি তার মা-বাবাকে রাগের চোখে দেখল সে তার বাবার সাথে ভালো ব্যবহার করেনি। (তাফসীরে দুররে মানছুর, পারা: ১৫, বনী ইসরাইল, আয়াতের পাদটীকা: ২৩, ৫/২৬০)
🕌 মৃত পিতা-মাতাকে রাজি করানোর পদ্ধতি
অনেক লোক এমন হয় যাদের পিতা-মাতা অসন্তুষ্ট অবস্থায় দুনিয়া থেকে চলে যান, সন্তান তাদের রাজি করে না, তারপর পরে বুঝতে পারে যে, এটা আমরা কী করে ফেললাম। মনে রাখবেন! বাবা রাজি তো রব রাজি। যদি কারো পিতা-মাতা দুনিয়া থেকে অসন্তুষ্ট অবস্থায় বিদায় হয়ে যান, তাহলে ওলামায়ে কেরাম كَفَرِهُمُ اللهُ السَّلَام লিখেছেন যে এখন সন্তানের উচিত পিতা-মাতার ঈছালে সাওয়াবের জন্য খুব বেশি বেশি নেক আমল করা এবং তাদের জন্য ক্ষমার দোয়া করতে থাকা।১
মনে রাখবেন! নেক আমল শুধু টাকা দিয়েই হয় না বা শুধু মসজিদ বানিয়ে দেওয়াই নেক আমল নয়, নামায পড়াও নেক আমল এবং কুরআন শরীফের তিলাওয়াত করাও নেক আমল। যে সন্তান নিজের পিতা-মাতার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতে থাকে, তো আল্লাহ পাকের রহমতে আশা করা যায় যে তিনি তাদের রূহকে তাদের প্রতি রাজি করে তাদের অনুগত সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত করে দেবেন।২
১. ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৪/৩৯১।
২. নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم বলেন: যে নিজের মা-বাবা অথবা তাদের মধ্যে একজনের কবরে প্রতি জুমায় যিয়ারত করল তবে তাকে মাফ করে দেয়া হবে এবং তাকে কল্যাণকামীদের অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া হবে। (শুয়াবুল ঈমান, বাবু ফি বিররিল ওয়ালিদাইন, ৬/২০১, হাদিস: ৭৯০১)
🕌 পিতা-মাতার জন্য দোয়া করার পদ্ধতি
এখনও সময় আছে, নিজের বাকি জীবনে নিজের পিতা-মাতার জন্য দোয়া করতে থাকুন। কুরআন কারীমে আল্লাহ পাক পিতা-মাতার জন্য দোয়া করার পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে ইরশাদ করেছেন:
وَقُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيْنِي صَغِيرًا
(পারা: ১৫, সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ২৪)
কানযুল ঈমানের অনুবাদ: এবং আরয কর যে, হে আমার রব, তুমি তাদের উভয়ের উপর দয়া কর যেমন তারা উভয়ে আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছে।
আল্লাহ পাক আমাদের পিতা-মাতার উপর দয়া করুক এবং তাদের জান্নাত নসীব করুক। (এক্ষেত্রে রুকনে শূরা, হাজী আবু মাদানী, আব্দুল হাবীব আত্তারী مُدَّ فِيلُهُ الْعَالِي তার সম্মানীত আব্বার কথা উল্লেখ করে বলেন:( আমার সম্মানীত পিতা যিনি আমাকে আঙুল ধরে হাঁটতে শিখিয়েছেন। কিছুদিন অসুস্থ ছিলেন, যদি এটা বলা হয় যে আল্লাহ পাকের পথে গিয়েছিলেন, তাহলে এই কথা ভুল হবে না কারণ তিনি মসজিদে নামায পড়তে গিয়েছিলেন, সেখানে হঠাৎ পড়ে যান এবং তার মাথায় আঘাত লাগে যার কারণে তিনি হাসপাতালে স্থানান্তরিত হন এরপর থেকে আর ঘরে আসতে পারেননি। আল্লাহ পাক তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিক এবং তার সদকায় আমাদের ক্ষমা দান করুন। সত্যিই পিতা-মাতা মহান ব্যক্তিত্ব, আল্লাহ পাক আমাদের এই মহান ব্যক্তিত্বদের গুরুত্ব নসীব করুক।
أمين بجاهِ النَّبِيِّ الْآمِينَ صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم
🕌রিযিক বৃদ্ধির উপায়
প্রিয় নবী صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর বাণী: যার এটা পছন্দ হয় যে তার বয়স এবং রিযিক বৃদ্ধি করে দেওয়া হোক তবে তার উচিত নিজের পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করা এবং নিজের আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা। (মুসনাদে ইমাম আহমদ, মুসনাদে আনাস বিন মালিক, ৪/৫৩০, হাদিস: ১৩৮১২)
🕌রুজি-রোজগারে বরকত কমে যাওয়ার কারণ
রাসূলে করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: বান্দা যখন মা-বাবার জন্য দোয়া ত্যাগ করে দেয়, তখন তার রিযিক বন্ধ হয়ে যায়।
(কানযুল উম্মাল, খণ্ড: ১৬, ৮/২০১, হাদিস: ৪৫৫৪৮)
🕌আমীরে আহলে সুন্নাতের বাণী
মা-বাবার অনেক খেয়াল রাখা উচিত। যেইমাত্র তাঁরা ডাকেন, সব কাজ ছেড়ে 'জি আম্মু, জি আব্বু' বলতে বলতে তাঁদের সেবায় হাজির হয়ে যাওয়া উচিত।
(নেকীর দাওয়াত, পৃ. ৪৩৭)