🕌হাঁচির আদব

نَحْمَدُهُ وَنُصَلِّي وَنُسَلِّمُ عَلَى خَاتَمِ النَّبِيِّنِ

হাঁচিকে আরবিতে "عطس" বলা হয়। এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যা শুধু মানুষ নয়, পশুরও হয়ে থাকে। অনেক হাদীস শরীফে হাঁচির উল্লেখ রয়েছে। একারণেই আমাদের পবিত্র শরীয়তে হাঁচি সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ শরয়ী মাসআলা, আদব এবং আহকাম (বিধান) ইত্যাদি বর্ণিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে এমন কিছু বিধানও রয়েছে, যা পালন না করলে ব্যক্তি "গুনাহগার" হতে পারে। তাই এই বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা অপরিহার্য। শায়খে তরিকত, আমীরে আহলে সুন্নাত, দা'ওয়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা, হযরত আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী دَامَتْ بَرَكَاتُهُمُ الْعَالِيَهِ ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১ হিজরিতে মাদানী চ্যানেলে সরাসরি "হাঁচি”র বিষয়ে বয়ান করেছিলেন।


الْحَمْدُ لله দা'ওয়াতে ইসলামীর মজলিশ আল মদীনাতুল ইলমিয়া (ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার)-এর 'সাপ্তাহিক পুস্তিকা অধ্যয়ন' বিভাগ, আমীরে আহলে সুন্নাতের সেই বয়ানটিকে প্রয়োজনীয় সম্পাদনা এবং বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কিছু অতিরিক্ত তথ্যাবলীসহ পুস্তিকা আকারে উপস্থাপন করছে। এই পুস্তিকায় আপনারা জানতে পারবেন যে, হাঁচি আসলে "الْحَمْدُ الله" কেন বলা উচিত? হাঁচির উত্তর কী? নামাযে হাঁচি আসলে কী করণীয়? হাঁচি কি আমাদের প্রিয় নবী ও সর্বশেষ নবী صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এরও এসেছিলো? এছাড়াও প্রয়োজনীয় তথ্য সহকারে পাঠকদের আগ্রহের জন্য এই পুস্তিকায় কিছু ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন এবং দ্বীনি জ্ঞান অর্জনের জন্য নিজেও এই পুস্তিকাটি পড়ুন এবং নেকির দাওয়াত প্রসার করার উদ্দেশ্যে অন্যদেরকেও উপহার দিন।


মদীনা ও বক্বী এবং বিনা হিসেবে ক্ষমার আকাঙ্ক্ষী

আবু মুহাম্মদ তাহির আত্তারি মাদানী عفى عنه

সাপ্তাহিক পুস্তিকা অধ্যয়ন বিভাগ

الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ وَالصَّلوةُ وَالسَّلَامُ عَلَى خَاتَمِ النَّبِيِّنَ اَمَّا بَعْدُ فَأَعُوْذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَنِ الرَّحِيمِ بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ


🕌আত্তারের দোয়া

হে দয়ালু আল্লাহ! যে কেউ এই "হাঁচির আদব" পুস্তিকাটি পড়ে বা শুনে নিবে, তাকে তোমার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট থাকার তৌফিক দান করো এবং তার মাতা-পিতাসহ সকলের বিনা হিসাবে মাগফিরাত করো।

اللهم امين بجادِ خَاتَمِ النَّبِيِّنَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم


🕌দরূদ শরীফের ফযিলত

আল্লাহ পাকের সর্বশেষ নবী صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি আমার প্রতি একদিনে এক হাজারবার দরুদ শরীফ পড়বে, সে ততক্ষণ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না, যতক্ষণ না জান্নাতে নিজের স্থান দেখে

নেবে। (আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, ২/৩২৮, হাদীস: ২২)

صَلُّوا عَلَى الْحَبِيب ! صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَى مُحَمَّد


🕌সর্বপ্রথম হাঁচি কার এসেছিল?

আল্লাহ পাক যখন হযরত আদম সফিউল্লাহ عَلَيْهِ السَّلام কে সৃষ্টি করার ইচ্ছা করলেন, তখন মালাকুল মউত হযরত আজরাঈল عَلَيْهِ السَّلَامِ কে আদেশ দিলেন যে, জমিন থেকে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে এসো। আল্লাহ পাকের আদেশে হযরত মালাকুল মউত عَلَيْهِ السَّلَام যখন জমিন থেকে এক মুষ্টি মাটি ভরলেন, তখন পৃথিবীর উপরিভাগের স্তরটি খোসার মতো উঠে তাঁর মুষ্টিতে চলে আসল। যার মধ্যে ষাটটি রঙ (Sixty colours) এবং বিভিন্ন প্রকৃতির মাটি অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই মাটিকে বিভিন্ন পানি দিয়ে মেশানোর আদেশ দেওয়া হলো। অতঃপর সেই মাটি দ্বারা হযরত আদম عَلَيْهِ السَّلَام এর দেহ তৈরি করে জান্নাতের দরজায় রেখে দেওয়া হলো, যা দেখে ফেরেশতারা আশ্চর্য হলেন, কারণ ফেরেশতারা এমন আকৃতির কোনো সৃষ্টি কখনো দেখেননি। আল্লাহ পাক এরপর সেই দেহে রুহ প্রবেশের আদেশ দিলেন। রুহ প্রবেশ করে যখন আদম عَلَيْهِ السَّلام এর নাক পর্যন্ত পৌঁছাল, তখন তাঁর হাঁচি আসল। যখন রুহ জিহ্বা পর্যন্ত পৌঁছাল, তখন আল্লাহ পাক ইরশাদ করলেন: "الْحَمْدُ للهِ বলো! আদম عَلَيْهِ السَّلَام

"الْحَمْدُ للهِ বললেন। তখন আল্লাহ পাক ইরশাদ করলেন : "يَرْحَمُكَ اللهُ يَا أَبَا مُحَمَّد" অর্থাৎ আল্লাহ তোমার উপর রহমত করুন, হে আবু মুহাম্মদ! (এটি হযরত আদম عَلَيْهِ السَّلام এর উপাধি ছিল) আমি তোমাকে আমার হামদ অর্থাৎ প্রশংসা বর্ণনা করার জন্যই সৃষ্টি করেছি। এরপর রুহ ধীরে ধীরে পুরো শরীরে পৌঁছে গেল এবং তিনি উঠে দাঁড়ালেন। (তাফসীরে খাযিন, পারা ১, সূরা বাকারা, ৩০নং আয়াতের পাদটিকা, ১/৪৩। তাফসীরে রুহুল বয়ান, পারা ১, সূরা বাকারা, ৩০নং আয়াতের পাদটিকা, ১/১০০)


আল্লাহ পাকের রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁর উসিলায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।

أمين بجاهِ النَّبِيِّ الْآمِينَ صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم


🕌হাঁচি এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা

হে আশিকানে রাসূল! হাঁচি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ পাক নাক, মুখ, গলা থেকে শুরু করে ফুসফুস পর্যন্ত সমস্ত বায়ুপথকে নরম ঝিল্লি (অর্থাৎ মানুষ ও পশুর মাংসের খুব পাতলা পর্দা বা ত্বক যার ভেতর দিয়ে দেখা যায়) দ্বারা তৈরি করেছেন। বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুসারে, যখন আমাদের হাঁচি আসে, তখন নাকে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস বাইরে বেরিয়ে যায় এবং আমাদের শরীর জীবাণুমুক্ত হয়ে যায়। আমাদের দয়ালু প্রতিপালক আমাদের জন্য কত সুন্দর একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছেন। سُبْحَنَ اللهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ অর্থাৎ মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং তাঁরই প্রশংসা করছি।

হার শেয় সে হে আয়াঁ মেরে সানেয়ে কি সানআতেঁ আলাম সব আয়নো মে হে আয়না সায কা

(যওকে না'ত, পৃষ্ঠা ১৭)

صَلُّوا عَلَى الْحَبِيب ! صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَى مُحَمَّد


🕌(১) “হাঁচি” আল্লাহ পছন্দ করেন

আল্লাহ পাকের সর্বশেষ নবী صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: আল্লাহ পাক হাঁচি পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন। সুতরাং তোমাদের মধ্যে কেউ যখন হাঁচি দেয় এবং আল্লাহর প্রশংসা করে, তখন প্রত্যেক শ্রবণকারী মুসলমানের উপর হক হলো যে, সে যেন হাঁচির উত্তর দেয় অর্থাৎ “يَرْحَمُكَ اللهُ” বলে। (বুখারী, ৪/১৬৩, হাদীস: ৬২২৬)


🕌হাঁচির পর "الْحَمْدُ لله” কেন বলা হয়?

বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারক, হযরত আল্লামা শরীফুল হক আমজাদী رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ লেখেন: হাঁচি স্বাস্থ্যের জন্য 'সিত্তাহ্ যরুরিয়‍্যাহ্'-এর অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয়। ('সিত্তাহ্ যরুরিয়‍্যাহ্' হলো সেই ছয়টি অপরিহার্য বিষয়, যা মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত প্রয়োজন হয়। যথা: (১) বাতাস (২) খাওয়া-দাওয়া (৩) শারীরিক নড়াচড়া ও বিশ্রাম (৪) মানসিক নড়াচড়া ও বিশ্রাম (৫) ঘুমানো ও জাগা (৬) শরীরের ভেতরের যা কিছু আছে তা উপযুক্ত সময় পর্যন্ত শরীরে রাখা এবং তারপর শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়া।) হাঁচি আসার ফলে দূষিত আর্দ্রতা বাইরে বেরিয়ে যায়, একারণে হাঁচি প্রদানকারীকে "الْحَمْدُ لله বলার আদেশ দেওয়া হয়েছে।(নুযহাতুল ক্বারী, ৫/৫৯৭)


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! উল্লেখিত হাদীস শরীফে হাই তোলার কথা বলা হয়েছে। হাই তোলাকে পাঞ্জাবিতে 'উবাসী' বলা হয়। কিছু লোক কথা বলা হয়েছে। হাই তোলাকে পাঞ্জাবিতে 'ডবাসা' বলা হয়। কিছু লোক হাই তোলার সময় মুখ খুলে অদ্ভুত ধরনের শব্দ করে, তাদের এমন করা উচিত নয়। হাদীস শরীফে রয়েছে: হাই তোলা ব্যক্তি যখন "হায়” করে, তখন শয়তান হাসে। (বুখারী, ৪/১৬৩, হাদীস: ৬২২৬) অর্থাৎ যখন কেউ হাই তোলার সময় মুখ বড় করে এবং “হাহ্” বলে, তখন শয়তান অট্টহাসি দেয় যে, আমি একে পাগল বানিয়ে দিয়েছি, আমার প্রভাব তার উপর পড়েছে।

(মিরআতুল মানাজীহ, ৬/৩৯২)


🕌হাঁচির উপকারিতা

হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতি আহমদ ইয়ার খান رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ বলেন: হাঁচি দিলে মস্তিষ্ক পরিষ্কার হয়, মাথা হালকা হয়ে যায়, মেজাজ ফুরফুরে হয়, যার ফলে ইবাদতে বেশি শক্তি পাওয়া যায়। চিকিৎসকরা বলেন যে, সর্দি হয়ে ভালোভাবে সেরে গেলে তা অনেক রোগের চিকিৎসা হয়ে যায়। আর হাই তোলা অলসতার লক্ষণ, এর ফলে শরীরে স্থবিরতা আসে। হাঁচি আল্লাহ পছন্দ করেন আর হাই তোলা শয়তান পছন্দ করে। একারণে আম্বিয়ায়ে কিরামের عَلَيْهِمُ السَّلَام কখনো হাই আসেনি। (মিরআতুল মানাজীহ, ৬/৩৯১(


🕌(২ ও ৩) যখন তোমাদের মধ্যে কেউ হাঁচি দেয়

আল্লাহ পাকের প্রিয় ও সর্বশেষ নবী صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: যখন তোমাদের মধ্যে কেউ হাঁচি দেয়, তখন সে যেন বলে: “الْحَمْدُ لِلَّهِ” এবং তার ভাই বা সঙ্গী যেন তাকে বলে: “يَرْحَمُكَ الله"। এরপর যখন সে “يَرْحَمُكَ الله" বলবে, তখন হাঁচি দেওয়া ব্যক্তি যেন তাকে বলে: يَهْدِيكُمُ اللَّهُ وَ يُصْلِحُ بَالَكُمْ “ তোমার অবস্থা ঠিক করে দিন। (বুখারী, ৪/১৬২, হাদীস: ৬২২৪) অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, সে বলবে: “يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ” অর্থাৎ আল্লাহ পাক আমাকে এবং তোমাকে ক্ষমা করুক। (তিরমিযী, ৪/৩৪০, হাদীস: ২৭৪৯)


মুফতি আহমদ ইয়ার খান رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ বলেন: হাঁচি আল্লাহ পাকের নেয়ামত, তাই এর জন্য আল্লাহর হামদ করা উচিত। যেহেতু এই হামদের মাধ্যমে সে আল্লাহর নেয়ামতের কদর করেছে, তাই শ্রবণকারী তাকে দোয়া দিলো : "يَرْحَمُكَ الله"। যেহেতু এই দোয়া প্রদানকারী তার (অর্থাৎ হাঁচিদাতার) প্রতি অনুগ্রহ করেছে, তাই অনুগ্রহের প্রতিদানে অনুগ্রহ দিয়ে সেও তাকে দোয়া দিবে (অর্থাৎ এখন হাঁচিদাতা "يَرْحَمُكَ الله" শুনে এই দোয়া দিবে(: “يَهْدِيكُمُ اللَّهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ”। মোটকথা এই যিকিরগুলোর আদান-প্রদানে অদ্ভুত হিকমত রয়েছে। (মিরআতুল মানাজীহ, ৬/৩৯৩)


🕌(৪) হাঁচিদাতা যদি হামদ না করে তবে

নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর পাশে দুজন ব্যক্তি হাঁচি ছিলো। তিনি একজনকে উত্তর দিলেন, অন্যজনকে দিলেন না। (যাকে উত্তর দেননি) সে আরয করল: ইয়া রাসূলাল্লাহ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ! আপনি তাকে উত্তর দিয়েছেন কিন্তু আমাকে দেননি। রাসূলে পাক صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: সে আল্লাহ পাকের প্রশংসা করেছে আর তুমি করোনি। (বুখারী, ৪/১৬৩, হাদীস: ৬২২৫)


(৫) ফেরেশতার পক্ষ থেকে উত্তর

নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি হাঁচি দিয়ে “الْحَمْدُ لِلَّهِ” বলে, ফেরেশতা বলেন: “رَبِّ الْعَالَمِين” (অর্থাৎ এই বাক্যটি পূর্ণ করে দেন)। আর যদি হাঁচিদাতা “الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ বলে, তবে ফেরেশতা বলেন: "يَرْحَمُكَ الله” অর্থাৎ আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া করুক।

(কিতাবুদ দু'আ লিত-তাবারানী, পৃষ্ঠা ৫৫২, হাদীস: ১৯৫১)


হাঁচি দেয়ার পর আল্লাহ পাকের প্রশংসার উত্তম শব্দাবলী আ'লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ বলেন: (হাঁচির সময়) অনেক লোক শুধু "الْحَمْدُ لِلَّهِ বলে, পুরো বাক্য বলা উচিত : “الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ"। (আরো বলেন:) কত বড় সৌভাগ্য যে, নিষ্পাপ ফেরেশতার মুখ থেকে রহমতের দোয়া পাওয়া যায়। অর্থাৎ যখন হাঁচিদাতা “الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ বললে, তখন ফেরেশতারা তাকে এই দোয়া দিবেন: "يَرْحَمُكَ الله” অর্থাৎ আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া করুক। তাই “الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ” বলা উচিত। শুধু "الْحَمْدُ لِلَّهِ” বললেও সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে, কিন্তু ফেরেশতা থেকে দোয়া পাওয়ার যে সৌভাগ্য ছিল, তা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। আ'লা হযরত رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ “আল-কওলুল বদী” এর উদ্ধৃতিতে বলেন: হাঁচি দেয়ার পর প্রশংসার সবচেয়ে উত্তম ও পূর্ণাঙ্গ শব্দ হলো যে:

الْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ مَّا كَانَ مِنْ حَالٍ وَصَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَى خَيْرٍ خَلْقِهِ مُحَمَّدٍ وَأَهْلِ بَيْتِهِ

(মালফুযাতে আলা হযরত, পৃষ্ঠা ৩১৯-৩২০)


শাহযাদায়ে আ'লা হযরত, হযরত মুফতিয়ে আযম হিন্দ, মাওলানা মুস্তাফা রযা খান رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ লেখেন:

জো হায় গাফেল তেরে যিকির সে যুল জালাল উস কি গাফলত হে উস পর ওয়াবাল ও নাকাল

কা'রে গাফলত সে হাম কো খোদায়া নিকাল হাম হোঁ যাকির তেরে অউর মাযকুর তু

আল্লাহু, আল্লাহু, আল্লাহু, আল্লাহু (সামানে বখশিশ, পৃষ্ঠা ২১)

صَلُّوا عَلَى الْحَبِيب ! صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَى مُحَمَّد


🕌হাঁচির উত্তর দেওয়া কি জরুরি?

আজকাল বড় বড় লোকেরাও "يَرْحَمُكَ الله” বলতে জানে না, এমনকি হাঁচি আসার পর এবং হাঁচির উত্তর শুনে কিছু পড়তে হয়, সেটাও তাদের জানা নেই। মনে রাখবেন! হাঁচি আসার পর "الْحَمْدُ لله" বলা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। (হাশিয়াতুত তাহতাবী 'আলা মারাকিইল ফালাহ, পৃষ্ঠা ৭)


🕌গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা

মনে রাখবেন! সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ সম্পর্কে মাসআলা হলো, একবার বা দু'বার ছেড়ে দেয়া খারাপ কাজ করল, আর তা না করার অভ্যাস বানিয়ে নিলে গুনাহগার হবে।


🕌এক দিরহামের বিনিময়ে জান্নাত কিনে নিলেন (ঘটনা)

হাদীস শরীফের প্রসিদ্ধ কিতাব "সুনানে আবু দাউদ শরীফ”-এর লেখক হযরত ইমাম আবু দাউদ সুলাইমান বিন আশ'আস সিজিস্তানী رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ একবার এক নৌকায় সফর করছিলেন। নদীর তীরে এক ব্যক্তির হাঁচি দিয়ে "الْحَمْدُ لِلَّهِ" বলতে শুনলেন। তিনি رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ এক দিরহামে অন্য একটি ছোট নৌকা ভাড়া করলেন এবং নিজের নৌকা থেকে নেমে সেই নৌকায় বসে তীরের দিকে ফিরে গেলেন এবং সেই ব্যক্তির কাছে গিয়ে হাঁচির উত্তর "يَرْحَمُكَ الله" দিয়ে ফিরে আসলেন। যখন তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলো, তখন তিনি বললেন: হাঁচি দেয়ার পর সেই ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করেছিল এবং হতে পারে যে, সে আল্লাহর দরবারে মকবুল এবং তার দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যখন নৌকার লোকেরা ঘুমিয়ে পড়ল, তখন তারা স্বপ্নে এক ঘোষককে বলতে শুনল: “হে নৌকার লোকেরা! আবু দাউদ এক দিরহামের বিনিময়ে আল্লাহ পাকের কাছ থেকে জান্নাত কিনে নিয়েছেন।” (ফাতহুল বারী, ১১/৫১৪, ৬২২৫নং হাদীসের পাদটিকা)


আল্লাহ পাকের রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁর উসিলায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।

أمين بجاهِ النَّبِيِّ الْآمِينَ صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم

ওহ তো নেহায়াত সসতা সাওদা বেচ রাহে হাঁয় জান্নাত কা হাম মুফলিস কিয়া মোল চুকায়ে আপনা হাত হি খালি হে

(হাদায়েকে বখশিশ, পৃষ্ঠা ১৮৬)

صَلُّوا عَلَى الْحَبِيب ! صَلَّى اللَّهُ عَلَى مُحَمَّد


🕌(৬) কাফেরের হাঁচির উত্তর

নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর দরবারে ইহুদিরা হাঁচি দিত এবং এই আশা করত যে, নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم তাদের জন্য "يَرْحَمُكَ اللهُ” বলবেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم বলতেন :

“ ا يَهْدِيكُمُ اللَّهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ

(তিরমিযী, ৪/৩৩৯, হাদীস: ২৭৪৮)


🕌(৭) হাঁচির উত্তর না দেওয়ার ক্ষতি

মুসলমানদের চতুর্থ খলিফা হযরত মওলা আলী মুরতাদ্বা শেরে খোদা رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ বলেন: আমি আল্লাহ পাকের প্রিয় রাসূল صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم কে ইরশাদ করতে শুনেছি: তোমাদের মধ্যে কেউ যদি তার ভাইয়ের হাঁচির উত্তর দিলো না, যখন সে হাঁচি দিলো (এবং الْحَمْدُ لِله বললো) তবে কিয়ামতের দিন সেই হাঁচিদাতা তার কাছে দাবি করবে এবং (হাঁচির উত্তর না দেওয়ার কারণে) তার কাছ থেকে বদলা নেওয়া হবে।

(আল-বদুরুস সাফিরাহ ফী উমুরিল আখিরাহ, পৃষ্ঠা ৩৮২)

صَلُّوا عَلَى الْحَبِيب ! صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَى مُحَمَّد


🕌হাঁচির উত্তর সম্পর্কে দারুল ইফতা আহলে সুন্নাতের ফতোয়া

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! গভীর মনোযোগ সহকারে পড়ুন যে, হাঁচির উত্তরের ব্যাপারে মাসআলা হলো, একবার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেওয়া ওয়াজিব এবং এতে শরয়ী অপারগতা ছাড়া দেরি করা গুনাহ।

হযরত আল্লামা ইমাম ইবনে আবেদীন শামী দামেশকী رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ লেখেন: সালাম এবং হাঁচির উত্তর সঙ্গে সঙ্গে দেওয়া ওয়াজিব। এর দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, অপারগতা ছাড়া উত্তর দিতে দেরি করলে তবে মাকরুহে তাহরীমী হলো এবং গুনাহ শুধু পরে উত্তর দিয়ে দিলেই ক্ষমা হবে না, বরং

তাওবাও করতে হবে। (দুররে মুখতার মা'আ রদ্দুল মুহতার, ৯/৬৮৩)


অতএব সতর্কতামূলক তাওবা করে নিন যে, হে আল্লাহ পাক! আজ পর্যন্ত হাঁচির উত্তর ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দ্বারা জেনে বা ভুলে যে দেরি হয়েছে অথবা আমরা উত্তরই দিইনি, এর জন্য আমরা তাওবা করছি, তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও।

أمين بجاهِ النَّبِيِّ الْآمِينَ صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم


🕌(৮) নামাযে হাঁচি

(তিরমিযী, ৪/৩৪৪, হাদীস: ২৭৫৭) মনে রাখবেন! নামাযে হাঁচি আসলে শয়তান খুশি

হাদীস শরীফে রয়েছে: নামাযে হাঁচি শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। হয় যে, আমি তার নামাযে বিঘ্ন ঘটিয়েছি, নতুবা এটি নিষিদ্ধ নয়, বরং এটি তো আল্লাহ পাকের নেয়ামত, যদি না তা অসুস্থতার কারণে হয়।

(মিরআতুল মানাজীহ, ২/১৩৯)


🕌(৯) পরপর তিনবার হাঁচি

মুসলমানদের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান বিন আফফান رَضِيَ اللهُ عَنْهُ এর রাসূলুল্লাহ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর উপস্থিতিতে তিনবার হাঁচি আসল। আল্লাহ পাকের শেষ নবী صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: হে উসমান! আমি কি তোমাকে একটি সুসংবাদ দেব না? এই হলেন জিবরাঈল, যিনি আমাকে আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে সংবাদ দিয়েছেন যে, “যেই মুমিন পরপর তিনবার হাঁচি দেয়, তার অন্তরে ঈমান স্থির (অর্থাৎ পাকা) হয়ে যায়।" (নাওয়াদিরুল উসুল, ৪/৪৭১, হাদীস: ১০৬৬)


🕌(১০) কথা বলার সময় হাঁচি

নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: সবচেয়ে সত্য কথা হলো সেটি, যা বলার সময় হাঁচি আসে। (মুজামুল আওসাত, ২/৩০২, হাদীস: ৩৩৬০)

হযরত সায়্যিদুনা উমর বিন খাত্তাব رَضِيَ اللهُ عَنْهُ বলেন: কথা বলার সময় একটি হাঁচি আমার কাছে একজন 'আদিল' (অর্থাৎ ন্যায়পরায়ণ) সাক্ষীর চেয়েও বেশি প্রিয়। (নাওয়াদিরুল উসুল, ৪/৪৬৯, হাদীস: ১০৬৩) আমার আক্বা আ'লা হযরত رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ বলেন: যা কিছু বলা হচ্ছে, যার সত্য-মিথ্যা (অর্থাৎ সত্য না মিথ্যা) জানা নেই এবং সেই সময় কারো হাঁচি আসে, তবে তা সেই কথার সত্য (অর্থাৎ সঠিক) হওয়ার প্রমাণ।

(মালফুযাতে আ'লা হযরত, পৃষ্ঠা ৩১৯)


🕌(১১) দোয়ার সময় হাঁচি

হাদীস শরীফে রয়েছে: দোয়ার সময় হাঁচি আসা সত্যিকার সাক্ষী। (কানযুল উম্মাল, খণ্ড: ৯, ৫/৬৮, হাদীস: ২৫৫২০) আ'লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ বলেন: দোয়ার সময় হাঁচি আসা কবুল হওয়ার দলীল (অর্থাৎ দোয়া কবুল হওয়ার প্রমাণ)। (মালফুযাতে আ'লা হযরত, পৃষ্ঠা ৩১৯)


🕌(১২) ক্ষমার সুসংবাদ

সাহাবীয়ে রাসূল হযরত আবু রাফেয়ে رَضِيَ اللهُ عَنْهُ বলেন: আল্লাহ পাকের প্রিয় ও সর্বশেষ নবী صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم মসজিদের দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁর মুবারক ঘর থেকে বের হলেন, আমিও তাঁর সাথে ছিলাম। হুযুর صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم আমার হাত ধরে ছিলেন। যখন আমরা বক্বী শরীফে পৌঁছালাম, তখন রাসূলুল্লাহ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর হাঁচি আসল। তখন আক্বা صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم আমার হাত ছেড়ে দিলেন, তারপর এমনভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন যেন কোনো বিস্মিত ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে। আমি আরয করলাম: ইয়া নবী আল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি কুরবান! আপনি কিছু বলেছেন যা আমি বুঝতে পারিনি? তখন হুযুর صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: জিবরাঈল আমীন عَلَيْهِ السَّلام আমার নিকট এসেছিলেন এবং বললেন: যখন আপনার হাঁচি আসে, তখন বলবেন : الْحَمْدُ لِلَّهِ كَكَرَمِهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَعِرِ جَلَالِهِ (অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য তাঁর দয়ার মতো এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য তাঁর মহিমার মর্যাদার মতো)। তখন নিশ্চয় আল্লাহ পাক তিনবার ইরশাদ করেন: আমার বান্দা সত্য বলেছে, আমার বান্দা সত্য বলেছে, আমার বান্দা সত্য বলেছে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো।

(আমালুল ইয়াউমি ওয়াল-লাইলাহ, পৃষ্ঠা ১১৬, হাদীস: ২৬১)

নিঃসন্দেহে এই আমল উম্মতের শিক্ষার জন্য, নতুবা প্রিয় আক্বা صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর শান তো এই যে, তাঁর উসিলায় আমাদের মতো গুনাহগারদের ক্ষমা করা হবে। إِنْ شَاء الله

صَلُّوا عَلَى الْحَبِيب ! صَلَّى اللَّهُ عَلَى مُحَمَّد


🕌(১৩) দাঁত, কান এবং পেটের ব্যথা থেকে সুরক্ষার উপায়


যখন কারো হাঁচি আসল এবং সে "اَلْحَمْدُ لله" বলল আর তার কাছ থেকে প্রথম শ্রবণকারীও "الْحَمْدُ لله” বলে দিল, কাজেই হাদীসে এসেছে যে, এমন ব্যক্তি মাড়ির দাঁত, কান এবং বদহজমের কারণে হওয়া পেটের ব্যথা থেকে সুরক্ষিত থাকবে। (আল মাকাসিদুল হাসানাহ, পৃষ্ঠা ৪২০, হাদীস: ১১৩০)


🕌দাঁতের রোগ থেকে সুরক্ষা

হযরত মুফতি আহমদ ইয়ার খান رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ বলেন: যে ব্যক্তি হাঁচির পর বলে: "الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ عَلَى كُلِّ حال" এবং নিজের জিহ্বা সমস্ত দাঁতের উপর ঘুরিয়ে নেয়, তবে إِنْ شَاء الله সে দাঁতের রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকবে। এটি পরীক্ষিত বিষয়। (মিরআতুল মানাজীহ, ৬/৩৯৬)


🕌(১৪) হাঁচির সময় চেহারা মুবারক ঢেকে নিতেন

রাসূলুল্লাহ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর মহিমান্বিত খেদমতে যখন হাঁচি আসত অর্থাৎ যখন তিনি হাঁচি দিতেন, তখন তাঁর মুবারক হাত দিয়ে বা কাপড় দিয়ে চেহারা মুবারক ঢেকে নিতেন এবং এর মাধ্যমে তাঁর আওয়াজ

মুবারক কম করতেন। (তিরমিযী, ৪/৩৪৩, হাদীস: ২৭৫৪)


🕌হাঁচির সময় আওয়াজ উচ্চ করবেন না

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! হাঁচি ভালো বিষয় এবং এই সমস্ত বর্ণনা স্বাভাবিক হাঁচির সাথে সম্পর্কিত। সর্দির হাঁচি অন্য বিষয়, তবে সে ক্ষেত্রেও আওয়াজ কম করা ভদ্রতা আর মসজিদে হাঁচি আসলে আওয়াজ কম করার ব্যাপারে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। (মালফুযাতে আ'লা হযরত, পৃষ্ঠা ৩২২) অনেকে খুব জোরে "হাঁচ্ছি” দেয় যে, ডান পাশের জনও লাফিয়ে ওঠে আর বাম পাশের জনও বলে যে, এটা কী হলো? মনে রাখবেন! হাঁচিতে আওয়াজ উচ্চ করা বোকামি। (রদ্দুল মুহতার, ৯/৬৮৫) অতএব হাঁচির সময় এভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে আওয়াজ উচ্চ করা ভালো ও সভ্য মানুষের লক্ষণ নয়।


🕌হাঁচি থেকে অশুভ লক্ষণ নেওয়া কেমন?

হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতি আমজাদ আলী আ'যমী رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ

বলেন: অনেক লোক হাঁচিকে অশুভ মনে করে (অর্থাৎ এর থেকে অশুভ লক্ষণ নেয়। যেমন; কোনো কাজে যাচ্ছে আর কারো হাঁচি এসে গেল, তখন মনে করে যে, এখন আর কাজটা হবে না। এটা মূর্খতা, কারণ অশুভবলতে কিছু নেই এবং এমন জিনিসকে অশুভ বলা, যাকে হাদীসে "শাহিদে আদল” (অর্থাৎ ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী) বলা হয়েছে, তা মারাত্মক ভুল।

(বাহারে শরীয়ত, ৩/৪৭৮, অংশ: ১৬)

বদশুগুনী কা আসর নেহী হোতা কভী জু তাকদীর মে হোতা হে, ওহী মিলতা হে হামে

صَلُّوا عَلَى الْحَبِيب ! صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَى مُحَمَّد


🕌হাঁচির ১৪টি আহকাম

(১) হাঁচির উত্তর একবার দেওয়া ওয়াজিব, যখন হাঁচিদাতা "الْحَمْدُ لِلهِ” বলবে। যদি মজলিশে সেই ব্যক্তি আবার হাঁচি দেয় এবং সে “الْحَمْدُ لِلَّهِ” বলে, তবে পুনরায় উত্তর দেওয়া ওয়াজিব নয়, বরং মুস্তাহাব।

(ফতোওয়ায়ে হিন্দিয়া, ৫/৩২৬। বাহারে শরীয়ত, ৩/৪৭৬, অংশ: ১৬) (২) হাঁচিদাতার উচিত জোরে

হামদ করা, যাতে কেউ শুনতে পায় এবং উত্তর দেয়। (৩) যদি কোনো ব্যক্তি অনেক লোকের সামনে হাঁচি দেয় এবং "الْحَمْدُ لِله” বলে, তবে শ্রবণকারীদের মধ্যে একজনও উত্তরে "يَرْحَمُكَ الله" বলে দিলে সকলের পক্ষ থেকে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। এখন সকলের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব নয়। তবে উত্তম হলো, উপস্থিত সবাই যেন উত্তর দেয়। (রদ্দুল মুহতার, ৯/৬৮৪) (৪) খুতবার সময় কারো হাঁচি আসলে শ্রবণকারী তার উত্তর দেবে না। (ফতোওয়ায়ে কাযী খান, ২/৩৭৭) (৫) হাঁচি দিলে নামায ভঙ্গ হয় না।


🕌নামাযে হাঁচির উত্তর দেওয়া কেমন?

(৬) কারো হাঁচি আসল এবং তার উত্তরে নামাযী ব্যক্তি “يَرْحَمُكَ الله” বলল, তবে তার নামায ভঙ্গ হয়ে গেল। আর যদি তার নিজেরই হাঁচি আসে এবং সে নিজেকে উদ্দেশ্য করে "يَرْحَمُكَ الله ” বলে, তবে নামায ভঙ্গ হবে না। অন্য কোনো নামাযী ব্যক্তির হাঁচি আসল এবং সে "الْحَمْدُ لِلَّهِ” বলল, এতে নামায ভঙ্গ হবে না, তবে উত্তরের নিয়তে বললে ভঙ্গ হয়ে যাবে। নামাযে হাঁচি আসল এবং অন্য কেউ "يَرْحَمُكَ اللهُ” বলল আর এর উত্তরে (নামাযী ব্যক্তি) "আমীন” বলল, তবে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। নামাযে হাঁচি আসলে চুপ থাকবে এবং "الْحَمْدُ لِلَّهِ" বললেও নামাযে কোনো সমস্যা নেই (কারণ হাঁচি দিয়ে হামদ করা প্রচলিত অর্থে উত্তর নয়, তাই নামায ভঙ্গের কারণ পাওয়া যায়নি) আর যদি সেই মুহূর্তে হামদ না করে, তবে নামায শেষ করে বলবে। (বাহারে শরীয়ত, ১/৬০৫, অংশ: ৩) (৭) (নামাযের অবস্থায়) হাঁচি, কাশি, হাই, ঢেকুরে যতগুলো অক্ষর বাধ্য হয়ে বের হয়, তা D, ১/৬০৮, অংশ: ৩) (৮) যদি হাঁচিদাতা ব্যক্তি হাঁচি দেওয়ার পর "اَلْحَمْدُ لِلَّهِ" বলে এবং অন্য ঘরে থাকা ব্যক্তি তা শোনে, তবে শ্রবণকারীর উপর উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। যদি সে উত্তর না দেয়, তবে গুনাহগার হবে। হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতি আমজাদ আলী আ'যমী رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ বলেন: "দেয়ালের ওপাশ থেকে কারো হাঁচি আসল এবং সে “الْحَمْدُ لِلَّهِ” বলল, তবে শ্রবণকারীর উপর তার উত্তর দেওয়া ওয়াজিব।

(দুররুল মুখতার, ৯/৬৮৪। বাহারে শরীয়ত, ৩/৪৭৭, অংশ: ১৬) (৯) অমুসলিম হাঁচি দিয়ে “الْحَمْدُ لله” বললে উত্তরে “يَهْدِيكَ الله” (অর্থাৎ আল্লাহ তোমাকে হেদায়েত দিক) বা “يَهْدِيكُمُ اللَّهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ” )আল্লাহ তোমাদের হেদায়েত দিক এবং তোমাদের অবস্থা ঠিক করে দিক) বলা যাবে। (তিরমিযী, ৪/৩৩৯, হাদীস: ২৭৪৮। রদ্দুল মুহতার, ৯/৬৮৪) (১০) টয়লেটে (Washroom)-এ হাঁচি আসলে জিহ্বা না নাড়িয়ে মনে মনে "اَلْحَمْدُ لِله” বলে নেবে। যেমন বাহারে শরীয়তে রয়েছে: হাঁচি, সালাম বা আযানের উত্তর জিহ্বা দিয়ে দেবে না। আর যদি হাঁচি দেয়, তবে জিহ্বা দিয়ে "الْحَمْدُ لله" বলবে না, মনে মনে বলে নেবে। (বাহারে শরীয়ত, ১/৪০৯, অংশ: ২) (১১) তিলাওয়াতকারী, দ্বীনি অধ্যয়নকারী, দোয়া বা যিকির-ওযিফায় ব্যস্ত ব্যক্তির উপর হাঁচিদাতার হামদের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব নয়। সুতরাং তার ইচ্ছা, সে উত্তর দিতেও পারে, নাও দিতে পারে। এটা তেমনই, যেমন কোনো ব্যক্তি এই কাজগুলোতে ব্যস্ত থাকলে এবং সেই সময় কেউ তাকে সালাম দিলে তার উপর উত্তর দেওয়া ওয়াজিব হয় না। (দারুল ইফতা আহলে সুন্নাতের ফতোয়া নম্বর: WAT-2311) (১২) হাঁচির কারণে চোখে পানি আসলে ওযু ভঙ্গ হবে না। (১৩) হাঁচিদাতার হাঁচির উত্তর তখন দিতে হয়, যখন সে হাঁচি দেওয়ার পর "الْحَمْدُ لِلهِ” বলে। আর যদি সে এখনো হাঁচি দেয়নি অথবা হাঁচি দিয়েছে কিন্তু এখনো "اَلْحَمْدُ لِلَّهِ" বলেনি, তবে উত্তর দেওয়া ওয়াজিব নয়। তাছাড়া, তার "الْحَمْدُ لله” বলার পর শ্রবণকারীর উপর উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। যদি "الْحَمْدُ لله" বলার আগেই "يَرْحَبُّكَ الله” বলে দেওয়া হয়, তবে তা উত্তর হিসেবে গণ্য হবে না, বরং "الْحَمْدُ لِله” শোনার পর এখন উত্তর দেওয়া ওয়াজিব হবে। (১৪) হাঁচির উত্তর দেওয়া তখনই ওয়াজিব হয়, যখন হাঁচির সাথে সাথে হাঁচিদাতার কাছ থেকে হামদও শোনা যায়। সুতরাং হাঁচিদাতা যদি নিম্নস্বরে "الْحَمْدُ الله" বলে এবং উপস্থিতরা না শোনে, তবে উত্তর দেওয়া ওয়াজিব নয়। তবে উলামায়ে কেরাম বলেন, যখন এটা জানা না যায় যে, হাঁচিদাতা হামদ বলেছে কি না, তখন এইভাবে শর্তযুক্ত উত্তর দেওয়া উচিত যে, “যদি তুমি হামদ বলে থাকো, তবে "ايَرْحَمُكَ الله (দারুল ইফতা আহলে সুন্নাতের ফতোয়া) বাহারে শরীয়তে রয়েছে: হাঁচির উত্তর দেওয়া ওয়াজিব, যখন হাঁচিদাতা "اَلْحَمْدُ لِله” বলে এবং এর উত্তর সঙ্গে সঙ্গে দেওয়া এবং এমনভাবে দেওয়া যে, সে যেন শুনতে পায়, ওয়াজিব। অর্থাৎ মনে মনে উত্তর দিয়ে দিল আর সে (হাঁচিদাতা) শুনল না, তবে ওয়াজিব আদায় হবে না। (বাহারে শরীয়ত, ৩/৪৭৬, অংশ: ১৬)

এটা মনে রাখবেন যে, যখন না-মাহরাম মহিলা হাঁচি দিয়ে “الْحَمْدُ لِلهِ” বলবে, তখন তাকে উত্তরে "يَرْحَمْكِ الله” বলবেন। যেমন; ঘরে আম্মার হাঁচি আসল, তিনি "الْحَمْدُ لله” বললেন এবং ছেলে শুনল, তখন ছেলে উত্তরে বলবে: "يَرْحَمُكِ الله" )কাফ-এর নিচে যের দিয়ে)। আর যদি পুরুষের হাঁচি আসে এবং সে "يَرْحَمُكَ الله” বলে, তবে শ্রবণকারী উত্তরে “يَرْحَمُكَ الله” বলবে (কাফ-এর উপর যবর দিয়ে)।


🕌না-মাহরাম মহিলার যদি হাঁচি আসে তবে?

বাহারে শরীয়ত, ৩ খণ্ডের ৪৭৭ পৃষ্ঠায় রয়েছে: (না-মাহরাম) মহিলার যদি হাঁচি আসে, যদি সে বৃদ্ধা হয়, তবে পুরুষ তার উত্তর দেবে। যদি যুবতী হয়, তবে এমনভাবে উত্তর দেবে যেন সে না শোনে। পুরুষের হাঁচি আসল এবং মহিলা উত্তর দিল; যদি যুবক হয়, তবে মহিলা তার উত্তর মনে মনে দেবে আর যদি বৃদ্ধ হয়, তবে জোরে উত্তর দিতে পারে।

صَلُّوا عَلَى الْحَبِيب ! صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَى مُحَمَّد



সংকলক: আব্দুল মোস্তফা রাহিম রিজওয়ান 

Top