অজু ব্যতীত কোরআন স্পর্শ করা যাবে না।

কিয়ামাত যত কাছে আসবে তত ফিতনা-ফ্যাসাদ তৈরী হতে থাকবে। এটাই আল্লাহর নবী, রাসূলে খোদা (صلى الله عليه و آله وسلم) এর ভবিষ্যতবাণী।

এলমে দ্বীন মানুষের ভেতর থেকে হারিয়ে যাবে এবং মূর্খরা জ্ঞানীর আসনে অধিষ্ঠিত হবে।
পরবর্তীগণ পূর্ববর্তীগণকে এই বলে দোষারোপ করবে যে তারা তাদেরকে বিপথে পরিচালিত করেছে। বস্তুত সেই সময় মনে হচ্ছে উপস্থিত।

তার একটা প্রমাণ হাজার বছর ধরে চলে আসা নিয়ম-নীতি যা সাহাবাদের ও ইমামদের দ্বারা প্রমাণিত তা সম্পর্কে অনেকের সন্দেহ প্রকাশ।

যেখানে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و آله وسلم) বলেছেন, “সাহাবাগণ,তাবেঈগণ এবং তাবে তাবিঈগণ ইলমের দিক দিয়ে এবং আমলের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠতম।” সেখানে তাদের দেওয়া সিদ্ধান্ত ও তাদের দেখানো পদ্ধতি নিয়ে নিত্যনতুন বিতর্কের সূত্রপাত করা হচ্ছে।

তার একটি উদাহরণ হচ্ছে অযু ব্যতীত কোরআন স্পর্শ করা যাবে কিনা।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে শৌখিন পড়ুয়ার দল অল্পবিস্তর কিছু পড়াশুনা করে এসব নিয়ে ইখতিলাফি বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছে।

বস্তুত প্লেনের ককপিঠে একজন পাইলটকেই মানায়, অপারেশন থিয়েটারে একজন ডাক্তারকেই মানায় আর দ্বীনের হুকুম আহকাম নির্ণয় করা একজন আলেমকেই মানায়।

বর্তমানে বলা হচ্ছে কোরঅান মাজীদ যে অজু ছাড়া ধরা যাবেনা এটা নাকি ফকিহ, মুফতি এবং আলেমদের বোঝার ভুলে সিদ্ধান্ত এসেছে।

বলা হচ্ছে - আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আলেমগণ এতোদিন এই বিষয়ে ভুল বুঝে ও বুঝিয়ে এসেছেন। এবং তারা বলছে প্রকৃত সত্য হল কোরান মাজীদ অযু ছাড়া ধরা ও পড়া উভয়টি জায়েজ। (নাউযুবিল্লাহ্)
অথচ, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা হলো অযু ছাড়া কুরআন শরীফ স্পর্শ করা যাবেনা । যা সম্পূর্ণ হারাম।

চোখের সামনে চার মাযহাবের ইমাম, অধিকাংশ সাহাবী, তাবেঈ, তাবে তাবেঈ এবং আলেমদের সিদ্ধান্ত ও ইজতেহাদকে ভূলুন্ঠিত হতে দেখে চুপ করে থাকা যায় কি?
এই ভ্রান্তির অবসান হওয়া একান্ত আবশ্যক।
যাতে কেউ এই লিখা পড়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আলেমদের দায়িত্বজ্ঞানহীন মনে না করেন। এই কামনায় আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

আখেরী যামানার ফিত্না, কথিত আহলে হাদীস, সালাফী নামধারী ওহাবীরা বলে কোরআন বিনা অজুতে ধরা যাবে।

তাদের যুক্তিগুলো নিম্নে তুলে ধরা হল –
এক মুসলিম অজু ছাড়া কোরআন না ধরা প্রসঙ্গে কথিত অাহলে হাদিস ওহাবীকে বলল,

"লা ইয়ামাচ্ছুহু ইল্লাল মুতহহারূন"- অর্থ কি?

উত্তরে উক্ত কথিত আহলে হাদিস ওহাবী উদ্ভট ব্যক্তিটি বলল,
"তবে, প্রকৃতপক্ষে উক্ত আয়াতের আপনাদের করা ব্যাখ্যা আয়াতের পূর্বাপর প্রসঙ্গের সাথে খাপ খায় না;  পূর্বাপর বিষয় বস্তু থেকে বিচ্ছিন্ন করে এ বাক্যের এরূপ অর্থ করা যেতে পারে, কিন্তু যে বর্ণনা ধারার মধ্যে কথাটি বলা হয়েছে সে প্রেক্ষিতে রেখে একে বিচার করলে এ কথা বলার আর কোন সুযোগই থাকে না যে, “পবিত্র লোকেরা ছাড়া কেউ যেন এ গ্রন্থ স্পর্শ না করে।”
কারণ, এখানে সম্বোধন করা হয়েছে কাফেরদেরকে। তাদের বলা হচ্ছে, এটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত কিতাব। এ কিতাব সম্পর্কে তোমাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত যে, শয়তানরা নবীকে তা শিখিয়ে দেয়।
(ওহাবী উদ্ভট গবেষকটি বলল) কোন ব্যক্তি পবিত্রতা ছাড়া এ গ্রন্থ স্পর্শ করতে পারবে না শরীয়াতের এই নির্দেশটি এখানে বর্ণনা করার কি যুক্তি ও অবকাশ থাকতে পারে?
বড় জোর যা বলা যেতে পারে তা হচ্ছে, এ নির্দেশ দেয়ার জন্য যদিও আয়াতটি নাযিল হয় নি, কিন্তু বাক্যের ভঙ্গি থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, আল্লাহর দরবারে যেমন কেবল পবিত্র সত্তারাই এ গ্রন্থ স্পর্শ করতে পারে, অনুরূপ দুনিয়াতেও অন্তত সেসব ব্যক্তি নাপাক অবস্থায় এ গ্রন্থ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুক, যারা এ গ্রন্থকে আল্লাহর বাণী হওয়া সম্পর্কে বিশ্বাস পোষণ করে।

বিনা অজুতে রোজা রাখার ব্যপারে কিছু বললেন না যে!
আপনি সারা দিন অজুর সহিত থাকুন তা অবশ্যই উত্তম কিন্তু তাই বলে আপনি বলতে পারবেন না যে সব সময় অজুর সহিত থাকা ফরজ কিম্বা সুন্নত বা থাকতেই হবে।
ফরজ অনেক কাজেই অজু বাধ্যতামুলক করা হয়নি, যেমন রোজা রাখতে কিম্বা যাকাত দিতে এমনকি হজ্জেরও কিছু কিছু পর্বে অজু না থাকলেও চলে। আর কোরআন স্পর্শ করতে কিম্বা তেলোয়াতে এক অজুর সাথে আরেক অজু করুন। তা উত্তম ( নুরুন আ’লা নুর) । কিন্তু আপনি যদি রাসুল যা বলেননি তা ইসলামে যুক্ত করেন তবেতো আপনি অবশ্যই বেদআত সৃষ্টি করলেন।
আল্লাহ যে ব্যাপারে শিথিলতা দান করেছেন সে ব্যাপারে আপনি কেন কঠোরতা আরোপ করবেন ইহুদী খৃষ্টানদের মত, যাদের উপর অনেক কিছু বাধ্যতামুলক করা হয় নি কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের উপর আরোপ করেছিল (যেমন সন্ন্যাসবৃত্তি)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সালাত আদায় করার জন্য ওযু করতে বলেছেন সূরা মায়েদার ৬ নং আয়াতে। কিন্তু কুরআন ওযু করে ধরতে হবে এটা কোন আয়াতে বলেছেন দেখাতে পারবেন কি?
কেউ বিনা অযুতে থাক বা নাপাক অবস্থায় থাক কিংবা ঋতুবতী স্ত্রীলোক হোক সবার জন্য কুরআন পাঠ করা এবং হাত দিয়ে তা স্পর্শ করা সবর্বাবস্থায় জায়েয। ইবনে হাযম তাঁর আল-মুহাল্লা গ্রন্থে (১ম খন্ড, ৭৭ থেকে ৮৪ পৃষ্ঠা)

আরো একটি প্রশ্ন করতে চাই, কোরআন কী শুধু মুসলমানদের জন্য নাযিল হয়েছে না সমগ্র মানব জাতির জন্য? যদি তারা মানেন সমগ্র মানব জাতির জন্য তবে অমুসলিমরা লক্ষ কোটি বারও অযু গোছল করে তবুও কী তারা পবিত্র হবে? তাহলে
অমুসলিমগন কিভাবে কোরআনের আলো পাবেন? আর ”পবিত্ররা ছাড়া কেউ স্পর্শ করতে পারে না” এটা যদি মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলত তাহলে তো যারাই স্পর্শ করবে তারাই পবিত্র হয়ে যাবে তার মানে জান্নাতী হয়ে যাবে!
আশা করি জবাব দিয়ে উপকার করবেন।.......

[সুপ্রিয় পাঠক, অনেকে এই কথাও প্রচার করে,
অজু ছাড়া কি কুরআন স্পর্শ করা যায় না?]
মানুষের বেশিরভাগ সময় অজু থাকে না। আর যদি অজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা না যায় তাহলে বেশিরভাগ সময় কুরআন পড়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আর কুরআন পড়া থেকে বিরত রাখা শয়তানের কাজ।
যারা বলে অজু ছাড়া কুরআন পড়া যাবে না তারা সূরা ওয়াক্বিয়ার ৭৯ নং আয়াতের রেফারেন্স দিয়ে থাকেন। আয়াতটি নিম্নরূপ

لاَ يَمَسُّهُ إلاَّ الْمُطَهَّرُوْنَ.
আয়াতখানির মূল শব্দ (Key words) হচ্ছে তিনটি। যথা-মাস্ (مَسٌّ)=স্পর্শ করা/ধারে কাছে আসা, উপলব্ধি করা, হু (هُ)=ঐ এবং মুতাহ্হারুন (مُطَهَّرُوْن) বা পাক-পবিত্র।

মূল শব্দ তিনটি অপরিবর্তিত রেখে আয়াতখানির
সরল অর্থ দাঁড়ায়
“মুতাহ্হারুন (পাক-পবিত্র) ব্যতীত ঐ কুরআন কেউ মাস্ (স্পর্শ) করতে পারে না।”
আগের দুটি আয়াত সহ দেখলে অর্থ হয়
“নিশ্চয় এটা সম্মানিত কোরআন, যা আছে এক সুরক্ষিত গোপন কিতাবে, যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ ঐটি স্পর্শ করতে পারে না।” (৫৬:৭৭-৭৯)
এখানে যে কুরআনের কথা বলা হয়েছে তা পৃথিবীর কুরআন নয়, এটা লাওহে মাহফুজের কুরআন। আর পাক-পবিত্র বলতে ফেরেস্তাদেরই বুঝানো হয়েছে। কারন,
১/ যখন এই আয়াতগুলি নাজিল হয় তখন সম্পুর্ন কুরআন নাজিল হয় নি। তাই পৃথিবীর কুরআন এই আয়াত গুলিতে উল্লেখিত সুরক্ষিত গ্রন্থ হতে পারে না।

২/ “(هُ)=ঐ” দ্বারা দুরবর্তী সংরক্ষিত কুরআন বুঝিয়েছে। আর দুরবর্তী সংরক্ষিত কুরআন হচ্ছে লাওহে মাহফুজের কুরআন।

৩/ এখানে “স্পর্শ করো না” উল্লেখ নেই। উল্লেখ আছে “স্পর্শ করতে পারে না”। পৃথিবীর কুরআন যে কেউ স্পর্শ করতে পারে। তাই ঐটি পৃথিবীর কুরআন নয় লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত কুরআন।
তাই কুরআন স্পর্শ করতে বা পড়তে অজু কোনও বিষয়ে নয়। যারা মানেন তাদের জন্য নিচে দুটি মানব রচিত হাদিসও উল্লেখ করছিঃ
“ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। একদা রাসূল (সা.) শৌচাগার হতে বের হয়ে আসলে তাঁর সামনে খাবার উপস্থিত করা হল। তখন লোকেরা বলল, আমরা কি আপনার জন্যে অজুর পানি আনব না? তিনি বললেন, যখন নামাজের প্রস্তুতি নিব শুধু তখন অজু করার জন্যে আমি আদিষ্ট হয়েছি।” (তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসায়ী)

“আলী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) পায়খানা হতে বের হয়ে বিনা অজুতে আমাদের কুরআন পড়াতেন এবং আমাদের সঙ্গে গোশত খেতেন। তাঁকে কুরআন হতে বাধা দিতে পারত না বা বিরত রাখত না জানাবাত (গোসল ফরজ) ব্যতীত অন্য কিছু।”
(আবু দাউদ, নাছায়ী ও ইবনে মাজাহ)

উপরোক্ত আয়াতের প্রকৃত অর্থ দাঁড়ায়
[৫৬:৭৯] যারা আন্তরিক তারা ব্যতিত কেউই এটা উপলদ্ধি করতে পারে না। আন্তরিকতাহীন যারা সন্তুষ্ট নয় শুধুমাত্র কুরআনে তারা ঐশ্বরিকভাবে কুরআন বুঝা থেকে প্রতিরোধপ্রাপ্ত হয়। এই ধারনা কুরআনে বারবার দেওয়া হয়েছে (১৭:৪৫-৪৬, ১৮:৫৭)। ফলে তারা এই আয়াতটিও বুঝতে পারে না। ৭:৩,১৭:৪৬,৪১:৪৪, এবং ৫৬:৭৯ এর অনুবাদ সমূহ মিলিয়ে দেখুন।
তাই অজুর অজুহাতে কুরআন থেকে দূরে থাকার অর্থই হয় না।
(আখেরী যামানার ফেত্না, ওহাবী উদ্ভট গবেষকটি বলল) উল্লেখিত বক্তব্যটির দ্রুত উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।"

সুপ্রিয় পাঠক, উপরে আমরা কথিত অাহলে হাদিস বাতীল ওহাবী ফির্কার ফিত্নাপূর্ণ ন্যাকামিপনা পড়লাম।
এখন আসুন, তাদের সে শয়তানী যুক্তিগুলোর পর্যালোচনা করে দেখি।

রাসূলে খোদা صلى الله عليه و آله وسلم হাদীসে যথার্থই বলেছেন যে,

عن عبد الله بن عمرو بن العاص قال : سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول ( إن الله لا يقبض العلم انتزاعا ينتزعه من العباد ولكن يقبض العلم بقبض العلماء حتى إذا لم يبق عالما اتخذ الناس رؤوسا جهالا فسئلوا فأفتوا بغير علم فضلوا وأضلوا )
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূলে মাকবুল صلى الله عليه و آله وسلمইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদের অন্তর থেকে ইলম টেনে বের করে উঠিয়ে নেবেন না; বরং আলেমগণকে উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমেই ইলম তুলে নিবেন। শেষ পর্যন্ত দুনিয়ায় যখন আর কোন আলেমকেই বাকি রাখবেন না, তখন মানুষ গন্ড মুর্খদেরকে নেতারূপে গ্রহণ করবে। তারপর তাদের নিকটই মাসআলা মাসায়েল জিজ্ঞেস করা হবে, আর তারা শিক্ষা-দীক্ষা ছাড়াই ফাতওয়া দিবে। এভাবে নিজেরাও ভ্রান্ত হবে এবং অপরকেও বিভ্রান্ত করবে।
[সূত্রঃ সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/ ৪৫৭১,বুখারী শরীফ, হা/ ১০০, সহীহ মুসলিম শরীফ, হা/ ৬৯৭১, মুসনাদুশ শিহাব, হা/ ৫৮১,  আল মু’জামুল আওসাত, হা/ ৫৫, সুনানে ইবনে মাজাহ হা/ ৫২, সুনানে তিরমিযী, হা/ ২৬৫২, সুনানে দারেমী, হা/ ২৩৯, সুনানে নাসায়ী কুবরা, হা/ ৫৯০৭, মুসনাদে আহমাদ, হা/ ৫৬১১, মুসনাদুল বাজ্জার, হা/ ২৪২২, মুসনাদে ইবনুল জিদ, হা/ ২৬৭৭, মুজামে ইবনে আসাকীর, হা/ ১৭২]।

সেই যুগ-জমানাই চলে এসেছে। উক্ত প্রশ্নে কুরআন হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ লোকটির বাগাড়ম্বরতা এ হাদীসের স্পষ্ট লক্ষ্য হিসেবে পরিস্ফুটিত হচ্ছে। নিজের মনগড়া ধারণাকে পূঁজি করে কুরআনের একটি স্পষ্ট অর্থবোধক আয়াতকে বিকৃত অর্থ করার চেষ্টা করেছে। কোন দলীল ছাড়া নিজের অপরিপক্ক জ্ঞান ফলানোর অপচেষ্টা করেছে এ স্পর্শকাতর মাসআলা বিষয়ে।

কথিত গবেষকটির উর্বর মস্তিস্কের অজ্ঞতা আর মুর্খতার চিত্রটি ভাল করে খেয়াল করুন-
আল্লাহ তাআলা জাতিকে এসব ফিতনাবাজ অতি পন্ডিত বিশেষ অজ্ঞদের হাত থেকে রক্ষা করুন।

কথিত গবেষক_পাগলের প্রলাপঃ
“বিনা অজুতে রোযা রাখা বিষয়ে কিছু বললেন না যে!”
গবেষকটির উক্তি “বিনা অজুতে রোযা রাখা বিষয়ে কিছু বললেন না যে!” দ্বারা তার গবেষণার অজ্ঞতার চিত্র পরিস্কারভাবে প্রতিভাত হয়ে উঠে।

একটি হল পবিত্র বস্তু ধরতে হবে। আরেকটি হল কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

একজন সাধারণ মেধার ব্যক্তিও বুঝবেন দুটি বস্তুর একই ধরণের হুকুম হবে না। ধরতে যাওয়া বস্তুটি পাক পবিত্র হলে অপরিচ্ছন্ন ও অপরিস্কার হাত দিয়ে তা ধরলে বস্তুটি অপরিস্কার হয়ে যেতে পারে। তাই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে বস্তুটি ধরা উচিত। এটা স্বাভাবিক রীতি। যে কেউ তা বুঝতে সক্ষম।
আর কোন কিছু থেকে বিরত থাকতে হলে যেহেতু উক্ত বস্তুকে স্পর্শ করা হচ্ছে না, তাই এখানে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়ার প্রশ্ন আসাটাই অবান্তর।
কুরআন একটি পবিত্র গ্রন্থ। নাপাক হাত দিয়ে তাই এটা ধরা যাবে না। আর রোযা হল পানাহার আর স্ত্রী সহবাস থেকে নিয়তের সাথে বিরত থাকার নাম। তাই কুরআন স্পর্শ করার হুকুমকে বিরত থাকার হুকুমের সাথে ঘুলিয়ে ফেলতে পারে কেবল চূড়ান্ত পর্যায়ের গবেট ব্যক্তিই। কোন বিবেকবান ব্যক্তি এ দুইয়ের মাঝে সাযুজ্যতা স্থাপন করতে পারে না।

আরবী ব্যকরণ সম্পর্কে অজ্ঞতা-
কুরআন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পবিত্র কালাম। এ পবিত্র কালাম কোন অপবিত্রের জন্য ধরা জায়েজ নেই। এ বিধান মুসলমানদের জন্য। যেমন নামায রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদির বিধান মুসলমানদের জন্য। এ বিধান বিধর্মী ব্যক্তি পালন নাও করতে পারে। কিন্তু মুসলমানদের জন্য এ বিধান লঙ্ঘণ করার কোন সুযোগ নেই।
তেমনি কুরআন স্পর্শ করতে হলে পবিত্র থাকতে হবে। অপবিত্র অবস্থায় কোন মুসলমানের জন্য কুরআন স্পর্শ জায়েজ নয়। যদি নিজেকে মুসলিম দাবি করে অমুসলিমের মতই মনে করে থাকে, তাহলে তার জন্য ভিন্ন কথা।
এ বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-

لَّا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ [٥٦:٧٩
যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না।
[সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত ৭৯]।
একেতো আয়াতেই স্পষ্ট। আরো স্পষ্ট হতে এ আয়াতের পূর্বের আয়াতের দিকে দৃষ্টি দেই-

إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ [٥٦:٧٧] فِي كِتَابٍ مَّكْنُونٍ [٥٦:٧٨
নিশ্চয় এটা সম্মাণিত কুরআন। যা আছে এক গোপন কিতাবে।
[সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত ৭৭-৭৮]।
একথা বলার পরই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন স্পর্শ করার আদবের প্রতি নির্দেশ দিয়ে আরবী ব্যাকরণের মুজারে’ তথা বর্তমান ও ভবিষ্যতকালীন অর্থবোধক ক্রিয়া ব্যবহার করে বলেন- যারা পাক পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করছে না এবং করবে না।
কিন্তু لَّا يَمَسُّهُ  এর অনুবাদ “স্পর্শ করতে পারে না” করাটা আরবী ব্যকরণ সম্পর্কে চূড়ান্ত জাহিল ছাড়া কেউ করতে পারে না। কোথায় ভবিষ্যত অর্থবোধক শব্দ আর কোথায় অতীত কালীন শব্দ “পারে না”।
একেই বলে আদার বেপারী জাহাজের খবর নেয়।
কথিত গবেষক-বিশেষ অজ্ঞ আরবী ব্যকরণের এ সহজ সীগা সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে তিনি ধোঁকায় পড়ে দাম্ভিকতার সাথে ঘোষণা দিলেন-
“যখন এই আয়াতগুলি নাজিল হয় তখন সম্পুর্ন কুরআন নাজিল হয় নি। তাই পৃথিবীর কুরআন এই আয়াত গুলিতে উল্লেখিত সুরক্ষিত গ্রন্থ হতে পারে না”।
আরবী ব্যকরণিক এ রীতি তিনি জানলে বুঝতে পারতেন যে, বর্তমানে নাজিলকৃত অপূর্ণাঙ্গ কুরআন এবং ভবিষ্যতে পূর্ণ নাজিল হওয়া কুরআনের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ হচ্ছে যে, তা অপবিত্র অবস্থায় স্পর্শ করা যাবে না।
“পারে না” আর “পারবে না” শব্দ দুটির পার্থক্য না বুঝার কারণে বোকার মত উদ্ভট গবেষকটি বলে দিলেন যে, এ কুরআন যারা স্পর্শ করবে তারা নাকি পবিত্র আর জান্নাতী হয়ে যাবে!!
আহারে গবেষক! আহারে মস্ত পন্ডিত!

কুরআনের বর্ণনাভঙ্গি সম্পর্কে অজ্ঞতা-
কথিত গবেষকটি কুরআনের বর্ণনা ভঙ্গির সাথে সামান্যতম সম্পর্ক রাখলে বোকার মত বলতো না যে, “(هُ)=ঐ” দ্বারা দুরবর্তী সংরক্ষিত কুরআন বুঝানো হয়েছে।
যদি তাই হয়, তাহলে কুরআনে কারীমের শুরুতে সূরা বাকারায় আল্লাহ তাআলা দূরবর্তী শব্দ ব্যবহার করে বলেছেন-

ذَلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيهِ
তথা ঐ কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই।
[সূরা বাকারা, আয়াত ২]।
এ আয়াতে দূরবর্তী শব্দ ذَلِكَ ব্যবহার করার কারণে অর্থ কি এই যে, শুধুমাত্র ঐ দূরে লৌহে মাহফুজে সংরক্ষিত কুরআনেই কেবল কোন সন্দেহ নেই। আর জমিনে অবস্থিত কুরআনে সন্দেহ আছে [নাউজুবিল্লাহ]?
নাকি আমরা বলে থাকি যে, এখানে দূরবর্তী শব্দ ব্যবহার করা হলেও এখানে আসমান ও জমিনের উভয় কুরআনকেই সন্দেহমুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে? নিশ্চয় আমরা এ ব্যাখ্যাই করে থাকি। আর সুনিশ্চিতভাবে ব্যাখ্যা এটাই যে, দূরবর্তী শব্দ ব্যবহার করা হলেও এখানে আসমান ও জমিনের উভয় কুরআনই এখানে উদ্দেশ্য।
সূরা বাকারার এ আয়াতের দিকে যদি উদ্ভট ওহাবী গবেষকটির কোন দিন দৃষ্টি বুলানোর তৌফিক হতো তাহলে এমন ধোঁয়াশায় তার পরতে হতো না।

এ বিষয়ের হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতা-

হাদিস দ্বারা প্রমাণ
________________
হাদীসে এসেছে-

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَزْمٍ أَنَّ فِي الْكِتَابِ الَّذِي كَتَبَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَمْرِو بْنِ حَزْمٍ أَنْ لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবু বকর বিন হাযম বলেনঃ রাসূলে কারিম صلى الله عليه و آله وسلمআমর বিন হাযম এর কাছে এই মর্মে চিঠি লিখেছিলেন যে, পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন কেউ স্পর্শ করবে না”।
[সূত্রঃ মুয়াত্তা মালিক, হা/ ৬৮০, কানযুল উম্মাল, হা/ ২৮৩০, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হা/ ২০৯, আল মুজামুল কাবীর, হা/ ১৩২১৭, আল মুজামুস সাগীর, হা/ ১১৬২, মিশকাতুল মাসাবীহ, হা/ ৪৬৫, সুনানে দারেমী, হা/ ২২৬৬; মুসান্নাফে আব্দির রাযযাক ১/৩৪১; মুসতাদরকে হাকিম ১/৩৯৭; সুনানে বাইহাকি ১/৮৭; সহিহ ইবনে হিব্বান ৪র্থ খন্ড]।

অন্যত্র,

عن عبد الله بن عمر أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال:”لا يمس القرآن إلا طاهر“.

رواه الطبراني في الكبير والصغير ورجاله موثقون.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূলে صلى الله عليه و آله وسلمইরশাদ করেছেনঃ পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না।
[সূত্রঃ সুনানে দারাকুতনি ১/১২১; আলমুজামুস সাগির লিত তাবরানী ১/২৭৬; মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হা/ ১৫১২]।
আল্লামা হাফেজ নূরুদ্দীন বিন আবু বকর হায়সামী বলেনঃ ইমাম তাবারানী কাবীর ও সাগীর উভয় গ্রন্থে তা বর্ণনা করেছেন। আর এর সকল বর্ণনাকারী সিক্বা তথা গ্রহণযোগ্য।

বর্ণিত আছে,

ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ ، ﻗﺎﻝ : ﻛﻨﺎ ﻣﻊ ﺳﻠﻤﺎﻥ ، ﻓﺨﺮﺝ ﻓﻘﻀﻰ ﺣﺎﺟﺘﻪ ، ﺛﻢ ﺟﺎﺀ ﻓﻘﻠﺖ : ﻳﺎ ﺃﺑﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻟﻮ ﺗﻮﺿﺄﺕ ﻟﻌﻠﻨﺎ ﻧﺴﺄﻟﻚ ﻋﻦ ﺁﻳﺎﺕ ، ﻗﺎﻝ : ﺇﻧﻲ ﻟﺴﺖ ﺃﻣﺴﻪ ، ﺇﻧﻪ ﻻ ﻳﻤﺴﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻤﻄﻬﺮﻭﻥ ، ﻓﻘﺮﺃ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﻣﺎ ﺷﺌﻨﺎ
আব্দুর রহমান বিন ইয়াযিদ বলেন, “আমরা সালমান (রা) এর সাথে ছিলাম। (কিছুক্ষণপর) তিনি বের হয়ে ইস্তেঞ্জা করতে গেলেন। (ফিরে আসার পর) আমি তাকে বললাম, হে আবু আব্দিল্লাহ !
আপনি যদি একটু অযু করে আসতেন, আমরা কোরআনের একটি আয়াতের ব্যাপারে আপনাকে প্রশ্ন করতে চেয়েছিলাম। তিনি জবাব দিলেন– আমি তো এখন কোরআন স্পর্শ করছি না। পবিত্র না হয়ে কোরআন স্পর্শ করা যায় না। (কিন্তু, স্পর্শ না করে শুধু পড়তে তো কোন সমস্যা নেই)।
এরপর আমরা যা শুনতে চেয়েছিলাম, তিনি তা আমাদের পড়ে শোনালেন।”
[সূত্র- মুসতাদরকে হাকেম ২/ ৪৭৭; সুনানে দারাকুতনি ১/১২৪; মুসান্নেফে ইবনে আবি শাইবা, ১/১২৬]।
উল্লিখিত কুরআনের আয়াত এবং রাসূল (صلى الله عليه و آله وسلم) এর হাদীস থেকে এই কথাই প্রমাণীত হয় যে, অযু ছাড়া কুরআন শরীফ স্পর্শ করা সম্পূর্ণ হারাম।

প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের মত সম্পর্কে অজ্ঞতা-
কুরআন হাদীস ও ইসলামী শরীয়ত সম্পর্কে সকল হকপন্থী মুসলমানদের নিকট স্বীকৃত চার মাযহাবের ইমামদের মত হল, পবিত্র ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে না।

قال ابن عبد البر في الاستذكار (8/10): ((أجمع فقهاء الأمصار الذين تدور عليهم الفتوى وعلى أصحابهم بأن المصحف لا يمسه إلا طاهر
আল্লামা ইবনে আব্দিল বার রহঃ বলেনঃ সমগ্র পৃথিবীর সকল ফক্বীহগণ ও তাদের অনুসারীগণ একমত এবং এর উপরই সকলে ফাতওয়া প্রদান করে থাকেন যে, কুরআনে কারীম পবিত্র হওয়া ছাড়া স্পর্শ করা জায়েজ নেই।
[সূত্রঃ আল ইসতিজকার-১০/৮]।

সাহাবাগণের মত সম্পর্কে অজ্ঞতা-
এ সঙ্গীন বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম কী মত পোষণ করতেন? একবারও কি কথিত গবেষকটি ভেবে দেখেছে।
দেখুন সাহাবায়ে কেরাম কী মত পোষণ করতেন?

“إنه قول علي وسعد بن أبي وقاص وابن عمر رضي الله عنهم، ولم يعرف لهم مخالف من الصحابة”،
ইমাম নববী রহঃ বলেনঃ পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ বক্তব্যটি হযরত আলী রাঃ এবং সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস রাঃ এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ দের। এ মতের উল্টো কোন মত সাহাবাগণ থেকে বর্ণিত নয়।
[সূত্রঃ শরহুল মুহাজ্জাব-২/৮০]।

وقال شيخ الإسـلام ابن تيمية في مجموع الفتاوى (21/266): “وهو قول سلمان الفارسي، وعبد الله بن عمر، وغيرهما، ولا يعلم لهما من الصحابة مخالف
ইবনে তাইমিয়া বলেছেঃ পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন স্পর্শ নিষেধ বক্তব্যটির পক্ষে মত দিয়েছেন হযরত সালমান ফারসী রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ এবং অন্যান্যরা। কোন সাহাবী থেকে এর বিপরীত বক্তব্য বর্ণিত নেই।
[সূত্রঃ মাজমূউল ফাতাওয়া-২১/২৬৬]।

হযরত ওমর রাঃ এর ঘটনা সম্পর্কে অজ্ঞতা-
হযরত ওমর রাঃ যখন কাফের থাকা অবস্থায় বোনকে কুরআন দেখাতে বলেছিলেন, তখন তার বোন বলেছিলেন যে, তুমি নাপাক! আর এ গ্রন্থ পবিত্র ছাড়া কেউ ধরতে পারে না।
[সূত্রঃ মুসনাদুল বাজ্জার-১/৪০১, মুস্তাদরাকে হাকেম-৪/৬৬, সুনানে দারা কুতনী-১/১২১, তাবাকাতুল কুবরা লিইবনে সাদ-৩/২৬৭, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী-১/৮৭]।

যুক্তি সম্পর্কে অজ্ঞতা-
এটি একটি স্বাভাবিক যুক্তি যে, যে কুরআন আসমানে পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ ধরতে পারে না। সেই কুরআন জমিনেও আসার পর পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া ধরতে পারবে না। এটাই স্বাভাবিক।

ইবনে তাইমিয়া বলেছেঃ

وقال شيخ الإسـلام ابن تيمية في شرح العمدة (ص384): “الوجه في هذا، والله أعلم أن الذي في اللوح المحـفوظ هو القرآن الذي في المصحف كما أن الذي في هذا المصحف هو الذي في هذا المصحف بعينه سواء كان المحل ورقاً أو أديماً أو حجراً أو لحافاً، فإذا كان مِنْ حكم الكتاب الذي في السماء أن لا يمسه إلا المطهرون وجب أن يكون الكتاب الذي في الأرض كذلك؛ لأن حرمته كحرمته، أو يكون الكتاب اسم جنس يعم كل ما فيه القرآن سواء كان في السـماء أو الأرض، وقد أوحـــى إلى ذلك قوله تعالى: {رَسُولٌ مِنَ اللَّهِ يَتْلُو صُحُفاً مُطَهَّرَةً} [البينة:2]، وكذلك قوله تعالى: {فِي صُحُفٍ مُكَرَّمَةٍ  مَرْفُوعَةٍ مُطَهَّرَةٍ} [عبس:13-14]. فوصفها أنها مطهرة فلا يصلح للمحدث مسها
আমাদের কাছে যে কুরআন রয়েছে এটি সেই কুরআনই যা লৌহে মাহফুজে রয়েছে। যেমন কুরআন তাই, যা কুরআনের মাঝে রয়েছে, চাই তার স্থান পাতা হোক, বা চামড়া হোক, বা পাথর হোক বা মোড়ক হোক। সুতরাং আসমানে অবস্থিত লিখিত কিতাবের হুকুম যেহেতু তা পবিত্র ছাড়া কেউ স্পর্শ করে না, জমিনে থাকা কুরআনের ক্ষেত্রে একই বিধানকে আবশ্যক করে। কেননা, এ [জমিনে থাকা কুরআন] কুরআনের সম্মান সে [আসমানে থাকা কুরআন] কুরআনের মতই। অথবা আয়াতে কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হল ইসমে জিনস। যা কুরআনকে বুঝাচ্ছে, চাই তা আসমানে থাকুক বা জমিনে থাকুক।
[সূত্রঃ শরহুল উমদাহ-৩৮৪]।
এদিকেই ইংগিত বহন করছে আল্লাহ তাআলার বাণী رَسُولٌ مِنَ اللَّهِ يَتْلُو صُحُفاً مُطَهَّرَةً তথা আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল; যিনি পবিত্র সহীফা তিলাওয়াত করেন।
[সূরা বায়্যিনাহ, আয়াত ২]।
অন্যত্র এসেছে فِي صُحُفٍ مُكَرَّمَةٍ  مَرْفُوعَةٍ مُطَهَّرَةٍ অর্থাৎ সমুচ্চ এবং পবিত্র যা রয়েছে সম্মানিত সহীফায়।
[সূরা আবাসা, আয়াত ১৩-১৪]।
কথিত আহলে হাদীসদের কাছে সম্মানীত ও মান্যবর আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায ওহাবীও এ মত পোষণ করে থাকে- [http://www.binbaz.org.sa/mat/130]

হাদীস নিয়ে ঠাট্টা এবং অজ্ঞতা-
কথিত গবেষকটি ঈমানদার কিনা? এ সন্দেহে ফেলে দিয়েছেন তিনি রাসূলে মাকবুল صلى الله عليه و آله وسلم এর হাদীসকে “মানব রচিত হাদীস” সম্বোধন করে।
কোন ঈমানদার মুসলমান রাসূলে কারিম صلى الله عليه و آله وسلمএর হাদীস সম্পর্কে মানব রচিত হাদীস মন্তব্য করতে পারে না যদি না তা জাল বলে সর্বসম্মতিক্রমে প্রমাণিত হয়।
আর যদি জাল হয়ে থাকে, তাহলে উক্ত হাদীস দলীল হিসেবে উপস্থাপিত করা হল কেন?
যদি হাদীস দুটি জাল না হয়ে থাকে, তাহলে তা মানব রচিত হাদীস বলে ঠাট্টা করে কি ঈমান বিধ্বংসী কাজ করা হয় নি?
আর যদি হাদীস দু’টি জাল হয়ে থাকে, তাহলে দলীল হিসেবে উপস্থাপিত করার মানে কি?

যাহোক, কথিত সালাফী, ওহাবী উদ্ভট গবেষকটির উদ্ভট মস্তিস্কের খেয়ালী বলেই ধরে নিলাম এ মন্তব্যটিকে।

আমাদের দেখার বিষয় হল, আলোচ্য বিষয় কি? আর দলীল হল কি?

আলোচ্য বিষয় হল, কুরআন অপবিত্র অবস্থায় স্পর্শ করা যাবে কি না? কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে কথিত গবেষকের উপস্থাপিত দু’টি হাদীসের কোথাও এর নাম-গন্ধও নেই।

প্রথম হাদীসটিতে রাসূলে খোদা صلى الله عليه و آله وسلم বলেছেন যে, নামায ছাড়া তিনি অযু করতে আদীষ্ট নন।
আর দ্বিতীয় হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলে পাক صلى الله عليه و آله وسلم অজু ছাড়া কুরআন পড়াতেন।
এ দুইটি হাদীসের কোথায় কুরআন স্পর্শের কথা রয়েছে?

রাসূলে খোদা صلى الله عليه و آله وسلم এরতো কুরআন ধরে পড়ার কোন দরকারই নেই। তার কাছেতো কুরআন নাজিলই হতো। আর তিনি তা সাহাবায়ে কেরামকে মুখস্ত করিয়ে দিতেন। তার কুরআনের পাতা ধরে পড়ারতো কোন দরকারই নেই। যেহেতু কুরআন ধরারই তার দরকার নেই। তাই অজু করতে আদীষ্ট হওয়ার কি দরকার?

আর দ্বিতীয় হাদীসে কুরআন পড়ানোর কথা এসেছে। স্পর্শ করার কথাতো নেই।

আমরাওতো বলি যে, কুরআনে কারীম অজু ছাড়া পড়া জায়েজ। শুধু ধরা জায়েজ নেই।
তাহলে উক্ত হাদীস আমাদের মতের বিপক্ষে দলীল হল কিভাবে?
গবেষকটির জন্যে আল্লাহর কাছে কিঞ্চিত আকল দেয়ার দুআ করছি।

এদিকে ইংগিতবহ আরো একটি আয়াতঃ

وَمَن يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ [٢٢:٣٢
কেউ আল্লাহর নামযুক্ত বস্তুসমুহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তা তো তার হৃদয়ের আল্লাহভীতি প্রসূত।
[সূরা হজ্ব, আয়াত ৩২]।
আল্লাহর নামযুক্ত কিতাব তথা কিতাবুল্লাহকে সম্মান করে অপবিত্র অবস্থায় তা স্পর্শ না করা আল্লাহভীতির নিদর্শন নয় কি?

আল্লাহ তাআলা আমাদের এরকম উদ্ভট গবেট-গবেষকদের বিভ্রান্তিকর গবেষণা থেকে জাতিকে হিফাযত করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।
____________

 
Top