উলঙ্গ হয়ে ঘুমানো কিংবা উলঙ্গ হয়ে গোসল করাও নিষেধ।

হাদীসে পাকে একা থাকা অবস্থায় আংশিক কিংবা পূর্ণ উলঙ্গ থাকাকেও অনুৎসাহিত করা হয়েছে।

حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الرَّقِّيُّ، حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ يَحْيَى، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ إِنَّ لِكُلِّ دِينٍ خُلُقًا وَخُلُقُ الإِسْلاَمِ الْحَيَاءُ ‏"‏ ‏.‏

হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক ধর্মের অন্য ধর্ম থেকে পার্থক্যযুক্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে, ইসলাম ধর্মের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, লজ্জা বা শরম।
[সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ্, কিতাবুয যুহুদ, হা/ ৪৩২১ (আরবী)]।

عَنْ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِيَّاكُمْ وَالتَّعَرِّيَ فَإِنَّ مَعَكُمْ مَنْ لَا يُفَارِقُكُمْ إِلَّا عِنْدَ الغَائِطِ وَحِينَ يُفْضِي الرَّجُلُ إِلَى أَهْلِهِ، فَاسْتَحْيُوهُمْ وَأَكْرِمُوهُمْ»

ইবনু উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা নগ্নতা হতে বেঁচে থাক। কেননা তোমাদের এমন সঙ্গী আছেন (কিরামান-কাতিবীন) যারা পেশাব-পায়খানা ও স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের সময় ছাড়া অন্য কোন সময় তোমাদের হতে আলাদা হন না। সুতরাং তাদের লজ্জা কর এবং সম্মান কর।
[সুনানে তিরমিজী, হা/ ২৮০০]।

عَنْ جَابِرٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلَا يَدْخُلِ الحَمَّامَ بِغَيْرِ إِزَارٍ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلَا يُدْخِلْ حَلِيلَتَهُ الحَمَّامَ،

হযরত জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নাবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ও পরকালের প্রতি যে লোক ঈমান রাখে সে যেন ইযার (লুঙ্গি) পরিহিত অবস্থা ছাড়া গোসলখানায় প্রবেশ না করে। আল্লাহ তা’আলা এবং পরকালের প্রতি যে লোক ঈমান রাখে সে যেন তার স্ত্রীকে গোসলখানায় প্রবেশ না করায়।
[সুনানে তিরমিজী, হা/ ২৮০১]।

حدثنا بهز بن حكيم حدثني أبي عن جدي قال قلت : يا رسول الله عوراتنا ما نأتي منها وما نذر ؟ قال احفظ عورتك إلا من زوجتك أو مما ملكت يمينك فقال الرجل يكون مع الرجل ؟ قال إن استطعت أن لا يراها أحد فافعل قلت والرجل يكون خاليا قال فالله أحق أن يستحيا منه

এক হাদিসে এসেছে যে, মুয়াবিয়া বিন হাইদা হতে বর্ণিত। একদা রাসূলে কারিম  (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেছেন যে, তুমি তোমার বিবি ও তোমার দাসী (দাস প্রথার এ হকুম বিলুপ্ত, ইসলামে দাস প্রথা নিষিদ্ধ।) ছাড়া অপরের নিকট হতে তোমার লজ্জাস্থানকে সর্বদা রক্ষা কর (অর্থাৎ ঢেকে রাখবে)। আমি বললাম- “ইয়া রাসূলাল্লাহ! বলুন! যদি কোন ব্যক্তি নির্জনে একাকী থাকে! (তখনও কি তা ঢেকে রাখতে হবে? প্রয়োজন ছাড়া খোলা নিষিদ্ধ?) তিনি বললেন (হ্যাঁ) আল্লাহ তায়ালাকে অধিক লজ্জা করা উচিত।
[জামে তিরমিজী, হা/ ২৭৬৯]।

في صحيح البخاري (1/ 64)(باب من اغتسل عريانا وحده في الخلوة، ومن تستر فالتستر أفضل وقال بهز بن حكيم عن أبيه عن جده عن النبي صلى الله عليه وسلم: «الله أحق أن يستحيا منه من الناس»

হযরত বাহায (রহঃ) তাঁর পিতার সূত্রে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, নবী কারিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, লজ্জা করার ব্যাপারে মানুষের চেয়ে আল্লাহ্‌ তা’আলাই হকদার।

وفي عمدة القاري شرح صحيح البخاري (3/ (338 باب من اغتسل عريانا وحده في الخلوة ومن تستر فالتستر أفضل أي: هذا باب في بيان جواز غسل العريان وحده إلا أن التستر أفضل، ،
[সহীহ বুখারী ১/৬৪, সুনানে আবু দাউদ, হা/ ৪০১৭, উমদাতুল ক্বারী ৩/৩৩৮, আল মাবসূত লিসসারখসী ৩০/২৬৫]।

হযরত ইয়ালা ইবনু মুররা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و آله و سلم)  উন্মুক্ত স্থানে এক ব্যক্তিকে গোসল করতে দেখলেন। তিনি এই দৃশ্য দেখে মসজিদের মিম্বারে উঠে আল্লাহর প্রশংসা করলেন। অতঃপর বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ লজ্জাশীল ও পর্দাকারী। তিনি লজ্জা ও পর্দা করাকে ভালবাসেন। অতএব যখন তোমাদের কেউ গোসল করে, তখন সে যেন পর্দা করে’।
[সূত্রঃ আবুদাঊদ, মিশকাত হা/ ৪৪৭, হাদীছ ছহীহ]।
______
জিজ্ঞাসা- রাফাদানী তথা নামধারী সালাফী এক ব্যক্তি ফতোয়া দিয়েছে উলঙ্গ হয়ে অজু করা যাবে।

জবাব- বাতীল ৭২ ফির্কার অন্তর্গত সে মৌ লোভীকে জিজ্ঞেস করা হবে উলঙ্গ হয়ে উযু করতে হবে কেন, কিংবা উলঙ্গ হয়ে উযু করাতে সওয়াব হয় কিনা বা না করলে গোনাহ্ হবে কিনা, না কি উলঙ্গ হয়ে উযু করা উযুর আদব বা উযুর ইহসান বলে এমন করা হবে কিনা।

প্রিয় পাঠক, রাসূলে কারিম (صلى الله عليه و آله و سلم) ইরশাদ করেন,

عَنْ أَبِي رُقَيَّةَ تَمِيْم الدَّارِي رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ :الدِّيْنُ النَّصِيْحَةُ . قُلْنَا لِمَنْ ؟ قَالَ : لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُوْلِهِ وَلأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِيْنَ وَعَامَّتِهِمْ .رواه ومسلم .

الراوي: تميم الداري
المحدث: مسلم
المصدر:صحيح مسلم
الصفحة أو الرقم: 55
خلاصة حكم المحدث: صحيح

হযরত আবু রুকাইয়্যা তামীম ইবন আওস আদ্-দারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে- নবীয়ে মুখতার (صلى الله عليه و آله و سلم) ইরশাদ করেন:

দ্বীন হচ্ছে হক আদায় / আদব রক্ষা / শুভকামনা। আমরা জিজ্ঞেস করলাম: কার? তিনি বললেন: আল্লাহ্, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের, মুসলিম ঈমামদের এবং সকল মুসলিমের।
[সূত্রঃ মুসলিম: ৫৫]।

উযু দ্বীনের অংশ। উযুর সুন্নাহ তথা আদব বা হক কখনো উলঙ্গ হয়ে তা সম্পাদন হতে পারে না। শয়তানের ওয়াসওসায় পরে ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করে নামাজ ক্ববুলের শর্ত এই উযুর ক্ষেত্রে উলঙ্গ হয়ে উযু করাকে দ্বীন মনে করা শয়তানের ওয়াসওয়াসা বৈ কিছু নয়।

ওযুর সময় নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত সতর ঢেকে রাখা ওযুর আদব। বরং প্রস্রাব পায়খানা সেরে তাড়াতাড়ি সতর ঢেকে ফেলা উচিত।

বিনা প্রয়োজনে সতর খোলা রাখা নিষেধ এবং জনসম্মুখে সতর খোলা রাখা হারাম।
[সূত্রঃ গুনিয়াতুল মুসতামলি, পৃ. ৩০]।

 
Top