হাদিস নিয়ে সালাফিদের জালিয়াতি

১৩টি বিষয়ে সালাফিদের বিভ্রান্তির জবাব


লেখকঃ হাফিজ মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ ইকরাম উদ্দিন

খতিব, ব্রিস্টল সেন্ট্রাল মসজিদ, ইউকে



প্রকাশনায়

Protab Ali

Muazzin, Bristol Central Mosque

Owen Street. Bristol. BS5 6AP, UK



প্রকাশকাল : মার্চ ২০২০ইং

     চৈত্র ১৪২৬ বাংলা, রজব-১৪৪১ হিজরি


সর্বস্বত্ব    :    লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত


কম্পোজ    :    মাওলানা মুহাম্মদ আবু তাহের মিছবাহ

       

১.ইয়াযিদকে জান্নাতি সাজাতে আমানুল্লাহ সালাফির হাদিস রচনা

আমানুল্লাহ সাহেব একজন সালাফি শায়খ। তিনি এজিদকে ক্ষমাপ্রাপ্ত ও জান্নাতি সাজাতে গিয়ে বুখারিশরীফের হাদিসকে পরিবর্তন করে নিজস্ব মনগড়া হাদিস তৈরি করতেও দ্বিধাবোধ করেননি। একথা শুনে হয়তো অনেকেই চমকে উঠতে পারেন। কিন্তু তাদের কাছে ইহা আশ্চর্যের বিষয় নয়। তাহলে প্রস্ত্তত হোন এখনই আমরা আমানুল্লাহ সাহেবের বক্তব্যটি দেখব। তিনি বলেছেন-

‘ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) এজিদ বিন মুয়াবিয়া রাহিমাহুল্লাহকে ভাল চোখে দেখতেন। এজিদ হলেন প্রখ্যাত তাবেয়ি। ইউরোপের কনষ্টান্টিনোপলের যুদ্ধে সৈনিক হিসেবে তিনি সেখানে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন।

নবীজির ভবিষ্যত বাণী, আল্লাহর নবী বলেন-

من اشترك فى غزوة قستنطنية كلهم مغفور

অর্থ: যারা কনষ্টান্টিনোপলের যুদ্ধে অংশ নিবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত।

এজিদ বিন মুয়াবিয়া রাহিমাহুল্লাহ মুসলিম রাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, মুসলিম সাম্রাজ্য বিসত্মার করার জন্য তার বিশেষ অবদান ছিল। এবং কনষ্টান্টিনোপলের যুদ্ধে বাপ বেটা দু’জনেই সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। (ইউটিউব থেকে সংগৃহীত)

সম্মানিত পাঠক!  এজিদের ইতিহাস আপনারা প্রত্যেকেই অবগত আছেন। তাই আমি এখানে এ প্রসঙ্গে বক্তব্য দীর্ঘায়িত করতে চাই না।


(এ ব্যাপারে আমার দুটি গ্রন্থ রয়েছে-১. ইয়াজিদের হাকিকত, ২. কুস্ত্তনতুনিয়ার যুদ্ধে ইয়াজিদের অন্তর্ভুক্তি, এ বিষয়ে বিসত্মারিত জানতে পাঠ করার অনুরোধ রইল।)


এখানে আমি শুধুমাত্র আমানুল্লাহ সাহেব কর্তৃক রচিত হাদিসটি সম্বন্ধে আলোচনা করতে চাই।

সুপ্রিয় পাঠক, আমানুল্লাহ সাহেব যে এবারত পাঠ করেছেন ইহা তার সম্পূর্ণ স্বরচিত। এ রকম শব্দে কোন হাদিস কোন ইমামই বর্ণনা করেননি। ইহা হাদিসের নামে ষড়যন্ত্র। তাই আসুন, বিসত্মারিত ব্যাখ্যায় যাবার পূর্বে মূল হাদিসটি দেখি-

قال النبى صلى الله عليه وسلم اول جيش من امتى 

يغزون مدينة قيصر مغفورلهم

অর্থ: নবী করিম (ﷺ) বলেছেন-‘আমার উম্মতের প্রথম বাহিনী যারা কায়সারের শহরে অভিযান করবে তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত। (বুখারি হাদিস নং ২৯২৪)

বুখারি শরীফের মূল হাদিস ও আমানুল্লাহ সাহেবের বনানো হাদসি দুটি নিয়ে একটু খেয়াল করুন দেখবেন এখানে আকাশ পাতাল ব্যবধান।

প্রথমত : হাদিসের শাব্দিক বর্ণনা পরিবর্তন করার কোন অধিকার কোন মানুষের নাই। 

দ্বিতীয়ত : হাদিসের মধ্যে কুস্ত্তনতুনিয়া শব্দটি বিদ্যমান নাই। অথচ আমানুল্লাহ সাহেব সেটা সংযুক্ত করেছেন। 


তৃতীয়ত : রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন শুধুমাত্র কায়সারের শহরে প্রথম অভিযানকারী ব্যক্তি ক্ষমাপ্রাপ্ত। এখানে কোন কোন মুহাদ্দিসগণ বলেছেন কায়সারের বলতে কুস্ত্তনতুনিয়ার শহরকে বুঝানো হয়েছে। আচ্ছা ধরে নিলাম কুস্ত্তনতুনিয়া শহরকেই বুঝানো হয়েছে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন-اول جيش অর্থাৎ সর্বপ্রথম বাহিনীর কথা। শুধুমাত্র প্রথম অভিযানে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে। অথচ আমানুল্লাহ সাহেব বললেন-নবীজি (ﷺ) নাকি বলেছেন من اشترك অর্থাৎ যে ব্যক্তিই যে কোন সময় অংশগ্রহণ করবে সেই ক্ষমাপ্রাপ্ত। এখানে যে কোন ব্যক্তিকে ক্ষমার অন্তর্ভুক্ত করতে গিয়ে হাদিসের ইবারতকে পরিবর্তন করেছেন।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, এভাবে হাদিস পরিবর্তন করে তাদের লাভ কি ? উত্তরে বলব, ইহাই তো মূল বিষয়। এই পরিবর্তন না হলে যে তাদের প্রেমিক এজিদকে ভেজা বেড়াল সাজানো যায় না। তাকে যে ক্ষমাপ্রাপ্ত বলা যায় না। ধিক তোমাদের প্রেম ভালবাসাকে। সমস্ত উলামায়ে কিরামগণ যেখানে একমত যে এজিদ ছিল একজন ফাসিক, ফাজির, মদ্যপায়ী। আবার কারো মতে সে ছিল কাফির। সে ব্যক্তিকে বাঁচাতে গিয়ে জাল হাদিস রচনা ইহা সুষ্পষ্ট ষড়যন্ত্রের শামিল।


২. শবে বরাতের সহিহ হাদিসকে অস্বীকার

শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত যা শবে বরাত নামে পরিচিত। হাদিসের ভাষায় যাকে বলা হয়েছে ليلة النصف من شعبان বা শাবানের মধ্যবর্তী রাত। এ রাতের ফজিলত সম্বন্ধে অনেকগুলো হাদিস বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। যার মধ্যে সহিহ ও হাসান হাদিসও রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কিছু আলিম এতদ সংক্রান্ত সবগুলো হাদিসকে জয়িফ কিংবা মাওজু আখ্যায়িত করে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন। তাদের মধ্যে শায়খ আব্দুল কাইয়ুম অন্যতম। তিনি ‘ইস্ট ল-ন মসজিদের জুমুআর খুতবাহ’ গ্রন্থে বলেছেন এ সব হাদিসের কোনটিই সহিহ নয় বরং সবগুলোই জয়িফ। তাই আমি বিষয়টি নিয়ে কিছু লিখতে চাই। প্রথমে আসুন উনার বক্তব্যটি দেখি, তিনি লিখেছেন-

‘আর দ্বিতীয় প্রকার হাদিস হল এ রাতের ফজিলত, ইবাদতের গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয়ে। এসব হাদিসগুলোর কোনটাই সহীহ হিসেবে প্রমাণিত নয়। বরং সবগুলোই দ্বায়ীফ (দুর্বল)। তবে সবগুলোই মাওদু (জাল বা বানোয়াট নয়)।

কয়েক লাইন পরে লিখেছেন-

‘শবে বরাত সংক্রান্ত কোন একটি হাদিস ও বুখারী ও মুসলিম গ্রন্থদ্বয়ে আসেনি। আর বাকী ৪টি গ্রন্থে বা অন্যান্য আরো কিছু গ্রন্থে এ সংক্রান্ত যে হাদিসগুলো এসেছে তার একটিও সহিহ হাদিসের মানদ-- উত্তীর্ণ হতে পারেনি। (ইস্ট ল-ন মসজিদের খুতবাহ ১৩৮-১৩৯)

সম্মানিত পাঠক!  এতক্ষণ আব্দুল কাইয়ুম সাহেবের বক্তব্যের কিছু অংশ দেখলেন। তার বক্তব্যের সারাংশ হল শবে বরাত সম্বন্ধে কোন সহিহ হাদিস নাই। এ ব্যাপারে যতগুলো হাদিস বর্ণিত হয়েছে এর সবগুলোই দ্বায়ীফ।

আমি বলব ইহা তার মনগড়া বক্তব্য। শবে বরাত সংক্রান্ত অনেকগুলো হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যার কোনটা হাসান আবার কোনটি সহিহ পর্যায়ের হাদিস। দেখুন নিম্নের হাদিসটি-

عن ابى موسى الاشعرى عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله ليطلع فى ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن 

( ابن ماجه)

অর্থ: হযরত আবু মুসা আশয়ারি (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন-শাবানের মধ্যবর্তী রাতে আল্লাহতা’য়ালা আত্মপ্রকাশ করেন। অতঃপর আল্লাহতা’য়ালা মুশরিক ও মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকারী ব্যতীত সবাইকে মাফ করে দেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৩৯০)

এ হাদিসটিকে স্বয়ং সালাফিদের মান্যবর নাসিরউদ্দিন আলবানী সাহেবও সহিহ বলেছেন। দেখুন তার মন্তব্য-

حديث صحيح روى عن جماعة من الصحابة من طرق مختلفة يشد بعضها بعضا وهو معاذ ابن جبل وابو ثعلبة الخشنى وعبد الله بن عمرو وابى موسى الاشعرى وابى هريرة- وابى بكر الصديق وعوف ابن مالك وعائشة-

অর্থ: হাদিসটি সহিহ। ইহা ভিন্ন ভিন্ন সনদে একদল সাহাবা থেকে বর্ণিত হয়েছে। যার একটি সূত্র অন্যটিকে শক্তিশালী করে। তারা হলেন মুয়াজ ইবনে জাবাল, আবু সা’লাবা আল খাশানী, আব্দুল্লাহ বিন আমর, আবু মুসা আশয়ারি, আবু হুরায়রা, আবু বকর সিদ্দিক, আওফ বিন মালিক এবং আয়েশা সিদ্দিকা প্রমূখ ((رضي الله عنه)ম)

(সিলসিলাতুল আহাদীস আস সাহীহা, হাদিস নং ১১৪৪)

অতঃপর আলবানী সাহেব এই হাদিসটি বর্ণনাকারী মুহাদ্দিসগণের দীর্ঘ তালিকা পেশ করেছেন। যেমন-মুয়াজ বিন জাবাল (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন যথাক্রমে।

১. আবি আসীম-‘আস সুন্নাহ’ গ্রন্থে, হাদিস নং ৫১২। ২. ইবনে হিববান, হাদিস নং ১৯৮০। ৩. আবুল হাসান আল কাযুনী-‘আল আমালী গ্রন্থে’ ২/৪, ৪. আবু মুহাম্মদ আল জাওহারী’-আল মাজলি আস-সাবিয় গ্রন্থে ২/৩। ৫. মুহাম্মদ ইবনে সুলাইমান আর রাবযী-‘জুয উম মিন  হাদিস’ গ্রন্থে। ১/২১৭ এবং ১/২১৮। ৬. আবুল কাসিম আল হুসায়নী-‘আল আমালী’ গ্রন্থে। ৭. বায়হাকী-শুয়াবুল ঈমান, ২/২৮৮। ৮.  ইবনে আসাকির-তারিখ গ্রন্থে, ২/৩০২। ৯. হাফিজ আব্দুল গণি মুকাদ্দাসী-‘আস সালিস ওয়াত তিসঈন’ গ্রন্থে। ১০.  ইবনুল মুহিব صفات رب العالمين গ্রন্থে ২/৭। ১১. হায়সামী مجمع الزوائد গ্রন্থে ৮/৬৫। ১২. তাবরানী الاوسط এবং الكبير গ্রন্থে ‘বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত’।


দেখুন আরেকখানা হাদিস-

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله ينزل ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لاكثر من عدد شعر غنم كلب-

অর্থ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন-নিশ্চয় আল্লাহতা’য়ালা শাবানের মধ্যবর্তী রাতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন। (অর্থাৎ আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয়) অতঃপর আল্লাহ বনি ক্বলব গোত্রের ছাগলের পশমের চেয়ে অধিক লোকদেরকে ক্ষমা করেন। (তিরমিজি হাদিস নং ৭৩৯)

নাসির উদ্দিন আলবানীর বিশ্লেষণ

واما حديث عائشة فيروية حجاج عن يحى بن ابى كثير عن عروة عنه مرفوعا- اخرجه الترمذى وابن ماجه واللالكائ واحمد وعبد بن حميد فى المنتخب من المسند- وقال الترمذى وسمعت محمد (يعنى البخارى) يضعف هذا الحديث-

অর্থ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন হাজ্জাজ, তিনি ইয়াহইয়া বিন আবি কাসির থেকে তিনি উরওয়াহ থেকে, তার থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত।

এই হাদিসটি সংকলন করেছেন তিরমিজি, ১/১৪৩, ইবনে মাজাহ ১৩৮৯, লা’লাকাঈ ১/১০১, আহমদ ৬/২৩৮, আব্দ ইবনে হুমাইদ المنتخب من المسند গ্রন্থে ১/১৯৪, ইমাম তিরমিজি বলেছেন, আমি শুনেছি ইমাম বুখারি এই হাদিসকে দ্বায়ীফ বলেছেন। (সিলসিলাতুল আহাদীস আস সাহীহাহ, হাদিস নং ১১৪৪)

অতঃপর শায়খ আলবানী বলেন-

وجملة القول ان الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح-

অর্থ: সারকথা হল, এই হাদিসটি উল্লেখিত বিভিন্ন সূত্রের সমন্বয়ে নিঃসন্দেহে সহিহ ও বিশুদ্ধ।

আলহামদুলিল্লাহ-সালাফিদের মান্যবর আলবানী সাহেবের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমেই প্রমাণিত হল যে, শবে বরাতের ফজিলত সংক্রান্ত হাদিসটি সহিহ। অতএব যারা বলেন-শবে বরাত সম্বন্ধে কোন সহিহ হাদিস নাই তারা প্রকৃতপক্ষে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন।


৩.কোন মু’মিন জাহান্নামে গেলেও একদিন মুক্তি পাবে-এ হাদিস অস্বীকার

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা হল-কাফির মুশরিকগণ চিরস্থায়ী জাহান্নামী। তাদেরকে কখনো জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হবে না। কিন্তু যারা কালেমা পড়ে মুসলমান হয়েছে তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না। জীবনে একবারও যে কালেমা পড়েছে সে যদি জাহান্নামে যায়, তাকেও আল্লাহতা’য়ালা এক সময় জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। ইহা বুখারি, মুসলিমসহ সমস্ত হাদিসের কিতাবদ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের আমির হামযা নামক জনৈক বক্তা এই সহিহ হাদিসকে ভ্রান্ত ও মিথ্যাকথা বলে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তার দাবি যে ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে সে চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। কখনও বের হবে না।

যেহেতেু ইহা একটি মৌলিক ঈমানী বিষয় তাই আমি এ ব্যাপারে কলম ধরতে বাধ্য হয়েছি। তাহলে আসুন প্রথমে আমরা তার বক্তব্যটি শুনি, সে বলেছে-

‘অনেক মানুষ একটি ভ্রান্ত কথা চালু করে দিয়েছে যা কর তা কর কালিমা একবার পড়লে যদি জাহান্নামে আল্লাহ দেয়ও শেষে তোমাকে একদিন জান্নাতে দেবে। এই কথা কিন্তু বাংলাদেশে প্রচলন আছে। এটা হাদিসের নামে জালিয়াতি। কালিমা একবার যদি কেউ পড়ে একদিন না একদিন জান্নাতে যাবে এই কতাটা ভুল। আমি আবার বলছি-আল্লাহপাক কুরআনে যেখানেই জান্নাত আর জাহান্নামের কথা বলেছেন সেখানেই বলেছেন  خلدين فيها ابدا খালিদীনা ফিহা আবাদা মানে কি ? সেখানে যে প্রবেশ করবে সেখানে চিরকাল স্থায়ীভাবে থাকবে। স্থায়ী, চিরকাল বললেন আর কোন কথা থাকে ? সুতরাং এই ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে যারা বসে আছেন কালেমা একবার যখন পড়েছি জাহান্নামে যদি দেয়ও একদিন না একদিন জান্নাতে যাব। না যাকে আল্লাহ জান্নাতে দেবে এটাই ফাইনাল। কোন দিন আল্লাহ তাকে আর বের করবে না। আর যাকে জাহান্নামে দেবে, কোন দিন আল্লাহ তাকে আর বের করবে না। এটাই ফাইনাল। এখন আপনি কি করবেন ভেবে চিন্ত পা দেন।’

পর্যালোচনা:

সম্মানিত পাঠক!  আমির হামযা সাহেবের বক্তব্যের জবাবটিকে আমি দুইটি ভাগে আলোচনা করব। 

প্রথমত:خلدين فيها ابدا  আয়াতের ব্যাখ্যা ও জবাব।

দ্বিতীয়ত: উক্ত বিষয়ে সহিহ হাদিস থেকে প্রামাণিক জবাব।

প্রথমত: আল্লাহতা’য়ালা কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন সূরায় বলেছেন-فى نار جهنم خلدين فيها ابدا

অর্থাৎ ‘জাহান্নামের আগুনে তারা স্থায়ীভাবে থাকবে’।

এই আয়াতটি যেখানে আল্লাহতা’য়ালা এরশাদ করেছেন, সেখানেই কাফির মুশরিকদের আলোচনা করে এ কথা বলেছেন। কোথাও বলেননি যে কালেমা পাঠকারী কোন মুসলমান চিরস্থায়ী জাহান্নামে থাকবে। তাহলে আসুন আমরা এ ব্যাপারে কয়েকটি আয়াত দেখি।

আয়াত-১

 ان الذين كفروا من اهل الكتاب والمشركين  فى نار جهنم خلدين فيها اولئك هم شر البرية

অর্থ: নিশ্চয় আহলে কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কুফুরি করেছে তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম। (সূরা বাইয়্যিনাহ আয়াত-৬)

আয়াত-২ 

والذين كفروا وكذبوا بايتنا اولئك اصحاب النار هم فيها خلدين

অর্থ: আর যারা কুফুরি করবে এবং আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার প্রয়াস পাবে তারাই হবে জাহান্নামী। অনন্তকাল তারা সেখানে থাকবে। (সূরা বাকারা, আয়াত-৩৯)


আয়াত-৩

.والذين كفروا وكذبوا بايتنا اولئك اصحاب النار خلدين

 فيها وبئس المصير

অর্থ: এবং যারা কুফুরি করবে এবং আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা বলবে তারাই জাহান্নামের অধিবাসী। তারা তথায় অনন্তকাল থাকবে। আর ইহা কতই না মন্দ প্রত্যাবর্তন স্থল। (সূরা তাগাবুন, আয়াত-১০)

আয়াত-৪

.ان الذين كفروا وظلموا لم يكن الله ليغفرلهم ولا ليهدهم طريقا- الا طريق جهنم خلدين فيها ابدا

অর্থ: নিশ্চয় যারা কুফুরি করেছে এবং যুলুম করেছে আল্লাহ কখনো তাদের ক্ষমা করবেন না। এবং সরল পথ দেখাবেন না। তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের পথ সেখানে তারা বাস করবে অনন্তকাল। (সূরা নিসা, আয়াত-১৬৮-১৬৯)

আয়াত-৫.

 ان الله لعن الكافرين واعدلهم سعيرا خلدين فيها ابدا

অর্থ:নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্য জলন্ত অগ্নি প্রস্ত্তত রেখেছেন। তথায় তারা অনন্তকাল থাকবে। (সূরা আহযাব, আয়াত-৬৪-৬৫)

সুপ্রিয় পাঠক!  উল্লেখিত আয়াতগুলো দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, যেখানেই আল্লাহ চিরস্থায়ী আযাবের কথা বলেছেন শুধুমাত্র কাফির মুশরিকদের জন্য বলেছেন। কোন মুসলমানের জন্য চিরস্থায়ী আযাবের কথা বলা হয়নি।


দ্বিতীয়ত:হাদিস শরীফ থেকে প্রমাণ

আমির হামযা বলেছেন-‘বাংলাদেশে একটি ভ্রান্ত ধারণা চালু আছে-কালেমা একবার পাঠ করলে যদি আল্লাহ জাহান্নামে দেয়ও শেষে একদিন আল্লাহ জান্নাতে দেবে’ ইহা ভুল এবং হাদিসের নামে জালিয়াতি।’ নাউজুবিল্লাহ

তাহলে আসুন আমরা এ ব্যাপারে কয়েকটি হাদিস দেখি।

হাদিস-১.

عن ابى سعيد الخدرى رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال يدخل اهل الجنة الجنة واهل النار النار- ثم يقول الله ةعالى اخرجوا من كان فى قلبه مثقال حبة من خردل من ايمان فيخرجون منها قد اسودا- فيلقون فى نهر الحيا اوالحياة فينبةون كما ةنبة الحبة فى جانب السيل- الم ةرى انها ةخرج صفراء ملةوية-

অর্থ: হযরত আবু সাঈদ খুদরি (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-নবী করিম (ﷺ) বলেছেন, জান্নাতিগণ জান্নাতে এবং জাহান্নামীগণ জাহান্নামে প্রবেশ করার পর আল্লাহতা’য়ালা (ফেরেশতাদেরকে) বলবেন-‘যাদের অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান ছিল তাদেরকেও বের করে নিয়ে আস। অতঃপর ফেরেশতারা তাদেরকে বের করে আনবেন। এমতাবস্থায় তারা পুড়ে কালো হয়ে যাবে। অতঃপর তাদেরকে হায়াত নামক ঝর্ণার মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে। তখন তারা এমনভাবে সতেজ হয়ে উঠবে যেমনিভাবে নদীর কিনারায় পানি পেয়ে কোন শষ্য দানা গজিয়ে উঠে। তুমি কি দেখনা সে বীজ কেমন হলুদ বর্ণ ধারন করে ফোটে উঠে। (বুখারি হাদিস নং ২২, মুসলিম হাদিস নং ...)

হাদিস-২ ইমাম বুখারি ‘কিতাবুত তাওহিদ’ অধ্যায়ে শাফায়াত সংক্রান্ত লম্বা একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। নিম্নে হাদিসটির শেষাংশটুকু উল্লেখ করা হল-

من رواية ابى هريرة وزاد هنا فى اخره فيأتون عيسى فيقول لست لها ولكن عليكم بمحمد صلى الله عليه وسلم فيأتونى فاقول انالها فاستأذن على ربى فيؤذن لى ويلهمنى محامد احمده بها لاتحضرنى الان فاحمده بتلك المحامد واخرله ساجدا فيقال يا محمد ارفع رأسك وقل يسمع لك وسل تعط واشفع تشفع فاقول يا رب امتى امتى فيقال انطلق فاخرج منها من كان فى قلبه مثقال شعيرة من ايمان فانطلق فافعل-

(উল্লেখিত হাদিস অনেক লম্বা তাই ইবারত সংক্ষেপ করা হল। তবে সম্পূর্ণ অনুবাদ প্রদত্ত হল)

অনুবাদ: পূর্বে উল্লেখিত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের শেষে অতিরিক্ত বর্ণনা হয়েছে এভাবে ‘কিয়ামতের দিন লোকজন অবশেষে ঈসা আলাইহিস সালাম এর কাছে এসে শাফায়াতের জন্য অনুরোধ করবে। তখন তিনি বলবেন আমি এর জন্য নয় বরং তোমরা মুহাম্মদ (ﷺ) এর কাছে গমন কর। অতঃপর লোকজন আমার কাছে আসবে। তখন আমি বলব, আমিই শাফায়াত করব। অতঃপর আমি আমার প্রভূর অনুমতি প্রার্থনা করব। এবং আমাকে অনুমতি প্রদান করা হবে। তখন আমাকে এমন কিছু প্রশংসার বাক্য ইলহাম করা হবে, যার মাধ্যমে আমি আল্লাহর প্রশংসা করব। কিন্তু এখন তা আমার স্মরণে আসছে না। অতঃপর আমি আল্লাহর জন্য সিজদায় অবনত হব। তখন বলা হবে হে মুহাম্মদ!  আপনার মাথা উত্তোলন করুন। আপনি বলুন আপনার কথা শুনা হবে। আপনি প্রার্থনা করুন আপনাকে প্রদান করা হবে। আপনি শাফায়াত করুন গ্রহণ করা হবে। তখন আমি বলব, হে প্রভূ আমার উম্মত, আমার উম্মত। তখন বলা হবে যার অন্তরে গমের দানা পরিমাণ ঈমান ছিল তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসুন। তখন আমি তাই করব। 

অতঃপর আমি পুনরায় সিজদাবনত হব এবং আল্লাহর প্রশংসা করব। তখন আল্লাহতা’য়ালা পূর্বের ন্যায় বলবেন। আমি বলব হে প্রভূ আমার উম্মত, আমার উম্মত। তখন বলা হবে যার অন্তরে সরিষা পরিমাণ ঈমান ছিল তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসুন। আমি যাব এবং তাই করব। অতঃপর আমি পুনরায় সিজদাবনত হব এবং পূর্বের ন্যায় প্রশংসা করব। তখন আল্লাহ পূর্বের ন্যায় অনুমতি দিবেন। তখন আমি বলব হে প্রভূ আমার উম্মত, আমার উম্মত। তখন বলা হবে যার অন্তরে ছোট থেকে ছোট পরিমাণ ঈমান ছিল তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসুন। নবীজি বলেন-তখন আমি তাদেরকেও জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসব। (বুখারি হাদিস নং ৭৫১০) 


হাদিস-৩.

وفى رواية عنه قال ثم اعود الرابعة فاحمد بتلك المحامد ثم اخر له ساجدا فيقال يا محمد ارفع رأسك وقل يسمع وسل تعط واشفع تشفع فاقول يا رب ائذن لى فيمن قال لا اله الا الله فيقول وعزتى وجلالى وكبريائ وعظمتى لاخرجن منها من قال لا اله الا الله-

অর্থ: অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেন-অতঃপর আমি চতুর্থবার পুনরায় সিজাদাবনত হব। পূর্বের ন্যায় আল্লাহর প্রশংসা করব। তখন বলা হবে হে মুহাম্মদ!  আপনার মাথা মোবারক উত্তোলন করুন। আপিন বলুন, শ্রবণ করা হবে। প্রার্থনা করুন প্রদান করা হবে। শাফায়াত করুন কবুল করা হবে। তখন আমি বলব, হে প্রভূ আমাকে অনুমতি দিন, আমি ঐ ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনব যে পড়েছিল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। তখন আল্লাহ বলবেন-আমার ইজ্জত, বড়ত্ব, জালালিয়ত ও মহত্বের কসম, আমি অবশ্যই তাকে জাহান্নাম থেকে বের করব যে পড়েছিল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’। (বুখারি হাদিস নং ৭৫১০)

সম্মানিত পাঠক!  এ ব্যাপারে বুখারি মুসলিমসহ অন্যান্য কিতাবে আরো অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আমার লিখিত ‘শাফিউল মুযনিবীন’ গ্রন্থে এ ব্যাপারে বিসত্মারিত আলোচনা রয়েছে।

এবার আপনারাই বলুন, আমির হামযা সাহেবের বক্তব্য মনগড়া নয় কি ? ইহা সরাসরি কুরআন ও সহিহ হাদিসের খেলাফ। এর মাধ্যমে সরলপ্রাণ মুসলমানদের ঈমান নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। আল্লাহ সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন।


৪. কালিমায়ে তাইয়্যিবাহ অস্বীকার

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(ﷺ)’ হল ঈমানী কালেমা বা কালেমায়ে তাইয়্যিবাহ। এই কালেমার দুটি অংশ পবিত্র কুরআন মাজীদের আলাদাভাবে এবং হাদিস শরীফে যুক্তভাবে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কিছু সালাফি শায়খগণ এই কালেমা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তাদের দাবি এই কালেমা নাকি পৃথিবীর কোন কিতাবে বর্ণিত হয় নাই। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর সাথে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(ﷺ)’ যুক্ত করা শিরক। ইহা পাশাপাশি লিখা যাবে না। ইহা নাকি ইহুদি খ্রিস্টানদের চক্রান্তর ফসল। এই কালেমার মাধ্যমেই নাকি আমাদের ঈমান আকিদার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। নিম্নে আব্দুর রহিম সালাফি নামক জনৈক শায়খের বক্তব্যটি একটু দেখুন, তিনি বলেছেন-

‘আমাদের দেশে আকিদার ত্রম্নটি ঢুকিয়ে দিয়েছে সর্বপ্রথম ইহুদি খ্রিস্টানদের চক্রান্তর মাধ্যমে। ইহুদি খৃস্টানদের চক্রান্তর মাধ্যমে, সর্বপ্রথম যেই জিনিসটির মাধ্যমে মানুষের ঈমান ধ্বংশ করা যায় সেই জিনিসটি হইল কালিমার বাক্য। সেই জিনিসটি কি? কালিমার বাক্য। তাওহীদের বাক্য। বলতে পারেন সেটা কি? লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তারপর ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(ﷺ)’’ বলেছেন? ভুল, ভুল। এই জাগায় যারা আছেন-আলেম-উলামা, হাজী গাজী, অনেক লোক আছেন আমার বিশ্বাস। একজন লোক হাত দেখাইয়া বলেন যে আমার এই চক্ষু দুইটি দিয়ে বুখারি শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিজি শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, নাসাঈ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মুসত্মাদরাকে হাকিম, সুনানে কুবরা, বায়হাকী তারপরে মুসনাদে আহমদ, তারপরে কি বলে? ফতহুলবারি, তারপরে এই ধরনের যত কিতাব আছে মিযানুল ইতেদাল, মুহল্লা মুবনি ইনায়া, বিনায়া, নেহায়া, মবসুত, মুহিত, যত কিতাব আছে পৃথিবীর বুকে একটা কিতাবের মধ্যে লেখা দেখেছেন একজাগায় হাদিসে রাসূল থেকে প্রমাণিত যে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(ﷺ)’ দেখেছেন একজনে হাত দেখান। কি প্রমাণিত হল? নাই। অথচ এদেশের মাটিতে এই কালিমা পড়ানো হয়েছে, শিখানো হয়েছে, মক্তব থেকে শিখানো হয়েছে। কালিমায়ে তাইয়্যিবাহ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(ﷺ)’। রোগী যখন সর্বরোগে আক্রান্ত হয় তখন ডাক্তার হিমশিম খেয়ে যায় কোন রোগের ঔষধ দিয়ে আবার রোগী মাইরা পালাই। সর্বরোগে আক্রান্ত এই জাতি। কোন রোগের ঔষধটি দেব? সর্বপ্রথম যেই বাক্যটি মুসলমানদের জন্য শিখা প্রয়োজন, সেই বাক্যটি আজ পর্যন্ত মুসলিম জাতিকে সুন্দরভাবে শিখানো হয় নাই। সঠিকভাবে বিশুদ্ধভাবে শিখানো হয় নাই। আজও পর্যন্ত মুসলিম জাতি ঘোলাটের মধ্যে রয়েছে। সর্বপ্রথম ঈমান আনার জন্য যেই বাক্যটি শিখা দরকার সেই বাক্যটি শুদ্ধ করে এদেশে আলেমরা শিখায় নাই। এজন্য  দায়ী হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, নাসারা, মজুসি, ইহুদি নয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি তারা নয়। এজন্য আমার মত মৌলভীরা দায়ী।’ (ইউটিউব থেকে সংগৃহীত)

সম্মানিত পাঠক!  এতক্ষণ আপনারা জনৈক সালাফি শায়খের মস্তিষ্ক প্রসূত বক্তব্যটি শুনলেন। এবার আমি প্রমাণ করব যে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(ﷺ)’ ইহাই হল ঈমানের কালেমা। ইহা কোন ইমাম মৌলভীর কথা নয়। ইহুদি নাসারাদের তৈরিকৃত নয়। বরং কুরআন মাজীদ ও হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। 

উল্লেখ্য যে, এ ব্যাপারে আমার লিখিত স্বতন্ত্র একটি কিতাব রয়েছে কালিমায়ে তাইয়্যিবাহ। সেখানে আমি প্রায় ৮টি তাফসির ও ১০টির অধিক হাদিস গ্রন্থের উদ্ধৃতি সহকারে প্রমাণ করেছি যে, এই কালিমাই হল ঈমানের কালিমা। পাঠকদের সুবিধার্থে নিম্নে এ প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল।

কুরআনুল কারীমে কালিমার বর্ণনা

আল্লাহতা’য়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমের মধ্যে কালিমার বাক্য পুরোটাই উল্লেখ করেছেন। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বাক্যটি বর্ণিত হয়েছে ২ বার এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বাক্যটি বর্ণিত হয়েছে ১ বার। 

* সূরা সাফফাতে বর্ণিত এভাবে-

انهم كانوا اذا قيل لهم لا اله الا الله يستكبرون

অর্থ: যখন তাদের বলা হত, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই’ তখন তারা ঔদ্বত্য প্রদর্শন করত। (সাফফাত ৩৫)

* সূরা মুহাম্মদে বর্ণিত হয়েছে-

فاعلم انه لا اله الا الله واستغفر لذنبك وللمؤمنين والمؤمنات

অর্থ: জেনে রাখুন ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই’। ক্ষমা প্রার্থনা করুন আপনার খাস ও আম মু’মিন পুরুষ ও নারীদের জন্য। (সূরা মুহাম্মদ- ১৯)

* সূরা ফাতাহ এ বর্ণিত হয়েছে-

محمد رسول الله والذين معه اشداء على الكفار رحماء بينهم

অর্থ মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সাথীগণ কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। 

(সূরা ফাতাহ ২৯)



পবিত্র তাফসিরগ্রন্থে কালিমার বর্ণনা


১. তাফসিরে ইবনে কাছির

সূরা ফাতাহ এর ২৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাছির বলেন-

وقال الله جل ثناؤه والزمهم كلمة التقوى وكانوا احق بها واهلها وهى لا اله الا الله محمد رسول الله- فاستكبروا عنها واستكبرعنها المشركون يوم الحديبية

অর্থ: আল্লাহতা’য়ালা বলেন-আর আল্লাহ তাদের জন্য তাকওয়ার কালিমা অপরিহার্য করে দিলেন। আর সে কালিমা হল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(ﷺ)। পূর্ববর্তী লোকেরা এ কালিমা সম্পর্কে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছিল। ঠিক এমনিভাবে হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন মুশরিকগণ এ কালিমা সম্বন্ধে অহংকার প্রদর্শন করেছিল। (সূরা ফাতাহ আয়াত-২৬)


২. তাফসিরে কুরতুবি

ইমাম কুরতুবি সূরা কাউসারের ব্যাখ্যায় বলেছেন-

الثالث عشر قال هلال بن يساف هو لا اله الا الله محمد رسول الله

অর্থ: কাউসার শব্দের অর্থ-হেলাল ইবনে ইয়াসাফের মতে কাউসার অর্থ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(ﷺ)।


৩. তাফসিরে তাবারি

ইমাম তাবারি সূরা ফাতাহ এর ২৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-

حدثنى ابن البرقى قال ثنا عمرو بن ابى سلمة عن سعيد بن عبد العزيز عن عطاء الخراسانى (والزمهم كلمة التقوى) قال لا اله الا الله محمد رسول الله

অর্থ: আমার কাছে বর্ণনা করেছেন ইবনুল বারকি, তিনি আমর বিন আবি সালমাহ থেকে, তিনি সাঈদ বিন আব্দুল আজিজ থেকে, তিনি আত্বা আল খুরাসানি থেকে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর বাণী ‘আল্লাহ তাদের জন্য কালিমায়ে তাক্বওয়া অপরিহার্য করে দিলেন’ এখানে কালিমায়ে তাকওয়া হল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলাল্লাহ।’


পবিত্র হাদিস শরীফ থেকে কালিমার বর্ণনা

সুপ্রিয় পাঠক!  কালিমার মর্ম কথা হচ্ছে তাওহিদ ও রিসালত তথা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। সেই ঈমানী কালিমার বাক্য হাদিস শরীফের মধ্যে কখনো শাহাদত শব্দ সহকারে আবার কখনো শাহাদত শব্দ ব্যতীত বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু উভয় বর্ণনারই মূল প্রতিপাদ্য বিষয় অভিন্ন। নিম্নে এ ব্যাপারে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হল।

হাদিস-১

عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بنى الاسلام على خمس- شهادة ان لا اله الا الله وان محمدا رسول الله واقام الصلوة وايتاء الزكوة- والحج وصوم رمضان-

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন-ইসলামের স্তম্ভ ৫টি। 

১.এই স্বাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল। 

২. নামায প্রতিষ্ঠা করা। 

৩. যাকাত প্রদান করা। 

৪. হাজ্জব করা। 

৫. রামাদ্বান মাসে রোযা রাখা। (বুখারি হাদিস নং-৮)

হাদিস-২

عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال امرت ان اقاتل الناس حتى يشهدوا ان لا اله الا الله وان محمدا رسول الله

অর্থ: হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এরশাদ করেছেন-আমি আদিষ্ট হয়েছি মানুষের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করতে যতক্ষণ না তারা স্বাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল। (সংক্ষেপিত-বুখারি হাদিস নং-২৫)

হাদিস-৩

ইমাম মুসলিম সহিহ মুসলিমশরীফে কিতাবুল ঈমান অধ্যায়ে ৮ নং বাবের মধ্যে বর্ণনা করেছেন এভাবে-

باب الامر بقتال الناس حتى يقولوا لا اله الا الله محمد رسول الله

অর্থ: অধ্যায়-লোকদের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করার নির্দেশ যতক্ষণ না তারা বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(ﷺ)।’

হাদিস-৪.

ইমাম বায়হাকি রহমতুল্লাহ আলাইহি আল আসমা ওয়াস সিফাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন-

عن سعيد بن المسيب  قال ان ابا هريرة اخبره ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال انى امرت ان اقاتل الناس حتى يقولوا لا اله الا الله- فمن قال لا اله الا الله فقد عصم منى نفسه وماله حتى يلقى الله تعالى- وانزل الله عز وجل يذكر قوما استكبروا- انهم كانوا اذا قيل لهم لا اله الا الله يستكبرون (الصفات ۳۵) وانزل الله- اذ جعل الذين كفروا فى قلوبهم الحمية حمية الجاهلية- فانزل الله سكينته على رسوله وعلى المؤمنين والزمهم كلمة التقوى وكانوا احق بها واهلها- (الفتح ۲٦) وهى لا اله الا الله محمد رسول الله استكبر عنها المشركون يوم الحديبية حين دعاهم رسول الله صلى الله عليه وسلم على طول المدة


অর্থ: হযরত সাইদ বিন আল মুসাইয়িব বলেছেন হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) ইরশাদ করেছেন যে, আমি আদিষ্ট হয়েছি মানুষের সাথে ততক্ষন পর্যন্ত যুদ্ধ করতে যতক্ষণ না তারা বলবে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ সে আমার পক্ষ থেকে তার আত্মা ও সম্পদকে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ পর্যন্ত হিফাযত করে নিল।

অতঃপর আল্লাহতা’য়ালা একটি অহংকারী সম্প্রদায়ের বর্ণনাপূর্বক অবতীর্ণ করেছেন। ‘যখন তাদের বলা হত-‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই’ তখন তারা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করত। (সাফফাত ৩৫)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন-‘কাফেররা তাদের অন্তরে জাহেলি যুগের জেদ পোষণ করত। অতঃপর আল্লাহ তাঁর রাসূল ও মুমিনদের উপর স্বীয় প্রশান্তি নাযিল করলেন। এবং তাদের জন্য তাকওয়ার কালিমা অপরিহার্য করে দিলেন। বস্ত্তত তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত। (ফাতাহ ২৬)

উক্ত আয়াতে তাকওয়ার কালিমা হল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(ﷺ)’।এ কালিমা সম্বন্ধেই মুশরিকগণ হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন অহংকার প্রদর্শন করেছিল। যা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) তাদেরকে দীর্ঘ দিন আহবান করেছিলেন। (এই হাদিসটিকে আলবানী সাহেব التعليقات الحسان গ্রন্থে সহিহ বলেছেন)

হাদিস-৫

হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি আল ইসাবাহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন-

واخرجه الحاكم من طريق يونس عن يوسف بن صهيب عن عبد الله بن بريدة عن ابيه- قال انطلق ابو ذرونعيم ابن عم ابى ذر وانا معهم يطلب رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو مستتر بالجبل- فقال له ابو ذر يا محمد اتيناك لنسمع ما تقول قال اقول لا اله الا الله محمد رسول الله فامن به ابو ذر وصاحبه-

অর্থ: ইমাম হাকিম এ হাদিসটি ইউনুসের সুত্রে বর্ণনা করেছেন তিনি ইউসুফ বিন সুহাইব থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ বিন বুরাইদা থেকে, তিনি পিতা বুরাইদা থেকে বর্ণনা করেছেন। বুরাইদা বলেন-একবার আবু যর  ও তার চাচাত ভাই নুয়াইম রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর সাথে সাক্ষাতের জন্য বের হলেন। আমিও তাদের সাথে ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ(ﷺ) পাহাড়ের মধ্যে অবস্থান করছিলেন। তখন আবু যর বললেন-হে মুহাম্মদ (ﷺ) আপনি কি বলেন তা শুনার জন্য আমরা আপনার কাছে এসেছি। তখন রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বললেন-আমি বলছি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(ﷺ)’। তখন আবু যরও তার সাথী ঈমান আনয়ন করলেন। (হা. ন. ৮৮০৯)

হাদিস-৬

ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি الخصائص الكبرى গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন-

اخرج الحاكم والبيهقى والطبرانى فى الصغير وابونعيم وابن عساكر عن عمر ابن الخطاب رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما اقترف ادم الخطيئة قال يا رب بحق محمد لما غفرت لى- قال وكيف عرفت محمدا قال لانك لما خلقتنى بيدك ونفخت فى من روحك رفعت رأسى فرأيت قوائم العرش مكتوبا لا اله الا الله محمد رسول الله- فعلمت انك لم تضف الى اسمك الا احب الخلق اليك- قال صدقت يا ادم ولولا محمد ما خلقتك-

অর্থ: হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন-যখন আদম আলাইহিস সালাম এর নিকট তাঁর ইজতেহাদী ত্রম্নটি ধরা পড়ল তখন তিনি বললেন-হে প্রভূ মুহাম্মদ (ﷺ) এর উসিলায় আমাকে ক্ষমা কর। আল্লাহতা’য়ালা বললেন-তুমি মুহাম্মদ (ﷺ)কে কিভাবে চিনলে? তিনি বললেন-যখন আপনি আমাকে স্বীয় কুদরতে সৃষ্টি করে আমার মধ্যে রূহ প্রদান করলেন তখন আমি আমার মাথা উত্তোলন করলাম। অতঃপর দেখতে পেলাম আরশের প্রতিটি খুটিতে লিখা আছে-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(ﷺ)’। তখন আমি বুঝতে পারলাম সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় না হলে আপনি সে নাম আপনার নামের সাথে যুক্ত করতেন না। অতঃপর আল্লাহ বললেন-হে আদম তুমি ঠিকই বলেছ। মুহাম্মদ (ﷺ)কে সৃষ্টি না করলে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না। (এই হাদিসটি ইমাম হাকিম, ইমাম বায়হাকি, ইমাম তাবরানী, ইমাম আবু নাঈম এবং ইবনে আসাকির প্রত্যেকে স্ব-স্ব কিতাবে বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাকিম এ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন)। (খাসাইসে কুবরা পৃষ্ঠা ২৭)

এ প্রসঙ্গে আরো অনেক হাদিস রয়েছে, এখানে সংক্ষিপ্ত করা হল। উক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হল যে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(ﷺ)’ ইহাই হল ঈমানী কালিমা। ইহা অস্বীকার করা ষড়যন্ত্র বৈ কিছু নয়।


৫. কালিমার অর্থ নিয়ে ষড়যন্ত্র

ইতোপূর্বে আমি আলোচনা করেছি যে, সালাফিগণ ঈমানের কালিমার বাক্যকে কাটসাট করে সেখান থেকে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(ﷺ)’কে বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে।

এবার আমি দেখাতে চাই কালিমার যে অংশটুকু তারা অবশিষ্ট রেখেছে সে অংশটুকুর অর্থও তারা পরিবর্তন করার চক্রান্ত করছে। তাদের মতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর অর্থ ‘আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই।’ ইহা সম্পূর্ণ ভুল। এখানে আমি প্রথমে তাদের কিছু বক্তব্য তুলে ধরব। অতঃপর এর জবাব প্রদান করব ইনশা আল্লাহ।


ইমাম হোসাইন সালাফির বক্তব্য

ইমাম হোসাইন একজন সালাফি শায়খ। তিনি একটা মাহফিলে শ্রোতাগণকে প্রশ্ন করলেন ‘আপনারা বলেন তো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ অর্থ কি? তখন লোকজন বললেন-আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই।‘ তখন তিনি বললেন-আপনারা সবাই জিরো পেয়েছেন। অর্থাৎ উত্তরটি শুদ্ধ হয়নি। এর অর্থ হবে  لا معبود بحق الا الله অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ব মাবুদ নাই। (ইউটিউব থেকে সংগৃহীত)

   

আক্রামুজ্জামান সালাফির বক্তব্য

আক্রামুজ্জামান আরেকজন সালাফি শায়খ। তিনি বলেছেন-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর সঠিক অর্থ হল ‘আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত বা সত্যিকার অর্থে কোন মাবুদ নাই। এটা হল সঠিক অর্থ। আর বেঠিক অর্থ হল ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই’ পার্থক্য বুঝা গেছে? পার্থক্য কয়টি শব্দ দিয়ে হয়েছে? একটা শব্দ মাত্র। এর কারণ কি? কারণ হল কুরআন মাজীদে বিভিন্ন সূরাতে আল্লাহতা’য়ালা বাতিল কতগুলো মাবুদের পরিচয় করাইছেন। যেমন সূরা তওবার ৩১ নং আয়াতে বলা হয়েছে-

اتخذوا احبارهم ورهبانهم اربابا من دون الله

অর্থ: আহলে কিতাবরা ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের ধর্মীয় আলেমদেরকে আল্লাহ বাদ দিয়ে রব হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। এই রবগুলো কি সত্যিকার রব না বাতিল রব?

(ইউটিউব থেকে সংগৃহীত)



পর্যালোচনা

সম্মানিত পাঠক!  এতক্ষণ আপনারা দুইজন সালাফি শায়খদের বক্তব্য শুনলেন। কি বুঝলেন? তারা এবার কালিমার শব্দ ও অর্থ উভয়টাকেই পরিবর্তন করে ফেলেছেন। আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই ইহা নাকি ভুল। বলতে হবে ‘লা মা’বুদা বিহাক্বিন ইল্লাল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ব মাবুদ নাই। তাদের যুক্তি হল আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই কেমনে? কুরআনেই তো বর্ণিত হয়েছে যে, ইহুদি নাসারাগণ তাদের আলিমদেরকে রব হিসেবে গ্রহণ করেছিল।

তাহলে আসুন আমরা এবার দেখি কুরআনুল কারীম ও হাদিসশরীফে কালিমার বাক্যটি কিভাবে বর্ণিত হয়েছে।

১. সূরা সাফফাত

انهم كانوا اذا قيل لهم لا اله الا الله يستكبرون

অর্থ: তাদেরকে যখন বলা হত ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তখন তারা ঔদ্বত্য প্রদর্শন করত। (আয়াত-৩৫)


২. সূরা মুহাম্মদ

فاعلم انه لا اله الا الله

অর্থ: জেনে রাখুন আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। (আয়াত ১৯)

৩. বুখারি শরীফ

عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- بنى الاسلام على خمس- شهادة ان لا اله الا الله وان محمدا رسول الله واقام الصلوة وايتاء الزكوة والحج وصوم رمضان

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন-ইসলামের মূলভিত্তি হল ৫টি। ১. এই স্বাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। ২. নামায প্রতিষ্ঠা করা। ৩. যাকাত প্রদান করা। ৪. হজ্জব করা ও ৫. রামাদ্বান মাসে রোযা রাখা। (হাদিস নং-৮) 

৪. মুসলিম শরীফ

ইমাম  মুসলিম রহমতুল্লাহ আলাইহি  সহিহ মুসলিমশরীফের কিতাবুল ঈমান অধ্যায়ে ৮ নং বাবের মধ্যে উল্লেখ করেছেন-

باب الامر بقتال الناس حتى يقولوا لا اله الا الله محمد رسول الله

অর্থ: অধ্যায়: লোকদের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করার নির্দেশ যতক্ষণ না তারা বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(ﷺ)।

এ ব্যাপারে আরো অনেক হাদিস আমার ‘কালেমায়ে তাইয়্যিবাহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করা হয়েছে।

সম্মানিত পাঠক! আপনারা দেখলেন পবিত্র কুরআনুল কারীম ও হাদিসশরীফে কোথাও لامعبود بحق الا الله বলা হয় নাই। সব জাগাতেই বলা হয়েছে-لا اله الا الله

তাফসির গ্রন্থ থেকে ব্যাখ্যা

এখন আমি কয়েকটি তাফসির গ্রন্থ থেকে উক্ত কালেমার ব্যাকরণগত ব্যাখ্যা ও অর্থ বিশ্লেষণ করে প্রমাণ করব যে, আমরা যেভাবে কালেমার বাক্য ও অর্থ শিখেছি তাই সঠিক।

তাফসিরে কাশশাফ

আল্লামা যামাখশারী ‘তাফসিরে কাশশাফ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন-

الله اصله الاله- فحذفت الهمزة وعوض منها حرف التعريف والاله من اسماء الاجناس يقع على كل معبود بحق او باطل واما الله- بحذف الهمزة فمختص بالمعبود بالحق لم يطلق على غيره-

অর্থ:الله শব্দটি মূলত الاله ছিল। অতঃপর হামযাকে বিলোপ করে নির্দিষ্টবাচক শব্দ হরফে তারিফকে যুক্ত করে الله শব্দটি গঠন করা হয়েছে। আল ইলাহ শব্দটি হল ইসমে জিনস বা জাতী বাচক বিশেষ্য। ইহা হাক্ব অথবা বাতিল প্রত্যেক মাবুদের জন্যই ব্যবহৃত হয়। অতঃপর যখন হামযাকে বিলোপ্ত করে الله শব্দ গঠন করা হল তখন ইহা শুধুমাত্র হাক্ব মাবুদ বা সত্য প্রভূর জন্য নির্দিষ্ট হয়ে গেল। অতএব আল্লাহ শব্দটি মিথ্যা ইলাহ বা বাতিল মাবুদের জন্য প্রয়োগ হয় না। (সূরা ফাতিহা)

তাফসিরে বায়দ্বাভী

ইমাম নাসির উদ্দিন বায়দ্বাভী তাফসিরে বায়দ্বাভীতে বর্ণনা করেছেন-

والله اصله اله- فحذفت الهمزة وعوض منها الالف والام والله مختص بالمعبود بالحق- والاله فى الاصل لكل معبود ثم غلب على المعبود بالحق-

অর্থ:আল্লাহ মূলে ইলাহ ছিল। অতঃপর ইলাহ শব্দের হামযাহ অক্ষরকে বিলোপ করে আলিফ ও লামযুক্ত করে الله শব্দ গঠন করা হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ শব্দটি শুধুমাত্র হক মাবুদ বা সত্য ইলাহের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ইলাহ শব্দটি মূলত সকল প্রকার মাবুদের জন্যই ব্যবহৃত হত। অতঃপর যখন আল্লাহ গঠন করা হল তখন শুধুমাত্র হক্ব মাবুদের জন্য খাস হয়ে গেল। (সূরা ফাতিহা)

ব্যাকরণগত বিশ্লেষণ

আরবি ব্যাকরণ তথা ইলমে নাহুর মতে لا শব্দটি হল একটি হরফ বা অব্যয়। যাকে বলা হয় لا التى لنفى الجنس বা লায়ে নাফি জিন্স। لا শব্দটি যখন কোন ইসমের পুর্বে ব্যবহৃত হয় তখন তার খবরকে ইসমের সমস্ত শ্রেণি থেকে নিষেধ করে। যেমন-শায়খ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমীন বলেছেন-

لا التى لنفى الجنس- اى لنفى جنس مدخولها- وتكون فى ذالك نصافى العموم- لانك اذا قلت لا رجل فى البيت فالمعنى لايوجد هذا الجنس فى البيت لا واحد ولا اثنان ولا اكثر فنتضى الجنس

অর্থ: লায়ে নাফি জিন্স এমন হরফ যা তার অন্তর্গত সমস্ত জিনস বা প্রকারকে নিষেধ করে। আর ইহা আমভাবে এভাবেই প্রয়োগ হয়। আপনি যদি বলেন-‘লা রাজুলা ফিল বাইত’ অর্থ ‘বাড়িতে কোন পুরুষ নেই’। তখন অর্থ দাড়ায়-বাড়িতে পুরুষ জাতীয় কোন লোকের অস্তিত্ব নাই। একজন হোক, দুইজন হোক কিংবা ততোধিক সকল প্রকারকেই নিষেধ করে। (শরহে আল ফিয়াতু ইবনু মালিক)

সম্মানিত পাঠক!  কালিমার মধ্যে যে ‘লা’ ইহা লায়ে নাফি জিনস। অতএব ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার সাথে সাথে আল্লাহ ছাড়া আর যত দেব-দেবি, গড, ঈশ্বর, বাতিল ইলাহ সবকিছু বাদ পড়ে যায়। এখানে لا معبود بحق الا الله বা আল্লাহ ছাড়া কোন হক মাবুদ নাই। বলার প্রয়োজন নাই। বরং আল্লাহ ছাড়া কোন হক মাবুদ বলার মধ্যেই শিরকের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এতে বুঝা যায় আল্লাহ ছাড়া আরো বেহক বা বাতিল মাবুদ রয়েছে। (নাউজুবিল্লাহ) অথচ কাফির মুশরিকগণ যাদেরকে তাদের প্রভূ বলে ডাকে ইসলাম তো তাদেরকে মাবুদ বলে না। মাবুদ শুধু একজনই, তিনি আল্লাহ।


অতএব কালিমার প্রকৃত অর্থ ভুল দাবি করে নতুন অর্থ সংযোজন করা ফিতনা ছাড়া কিছুই নয়।



৬.নামায জান্নাতের চাবি-এ হাদিস অস্বীকার


‘নামায বেহেস্তের চাবি’ ইহা একটি সহিহ হাদিস। কিন্তু বর্তমানে মুজাফফর বিন মুহসিন নামক জনৈক সালাফি শায়খ এই হাদিসটিকে কখনো জাল আবার কখনো মিথ্যা ও কাল্পনিক বলে অভিহিত করেছেন। তাই আমি এই হাদিসটির ব্যাপারে উলামায়ে কেরামদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণসহ প্রমাণ করব যে ইহা একটি সহিহ হাদিস। তাহলে আসুন প্রথমে আমরা মুযাফফর সাহেবের বক্তব্যটি তার লিখিত ‘জাল হাদিসের কবলে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর সালাত’ বই থেকে দেখি-তিনি লিখেছেন-

‘এক কথায় সালাতের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য পবিত্র কুরআন ও সহিহ সুন্নাহর অমীয় বাণীই যথেষ্ট। কিন্তু বর্তমানে সেই অভ্রান্তবাণী ছেড়ে যয়ীফ ও জাল হাদিস মিথ্যা ও উদ্ভট ও কাল্পনিক কাহিনী শুনিয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আমরা এই অধ্যায়ে সেগুলো উল্লেখ করার পাশাপাশি সহিহ দলিলগুলোও উল্লেখ করার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।

অতঃপর তিনি লিখেন-

‘সালাত জান্নাতের চাবি’ কথাটি সমাজে বহুল প্রচলিত। অনেকে বুখারিতে আছে বলেও চালিয়ে দেয়। অথচ এর সনদ ত্রম্নটিপূর্ণ।

عن جابر بن عبد الله قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم مفتاح الجنة الصلاة ومفتاح الصلاة الطهور-

অর্থ: জাবের ইবনু আব্দিল্লাহ (رضي الله عنه) বলেন-রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন-জান্নাতের চাবি হল সালাত। আর সালাতের চাবি হল পবিত্রতা।

(মুসনাদে আহমদ-১৪৭০৩, তিরমিজি-৪)

তাহকিকঃ হাদিসটির প্রথম অংশ যইফ। আর দ্বিতীয় অংশ পৃথক সনদে সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।

প্রথম অংশ যঈফ হওয়ার কারণ হল-উক্ত সনদে দুজন রাবী দুর্বল রাবী আছেন। ক. সুলায়মান বিন করম, খ. আবু ইয়াহইয়া আল ক্বাত্তাত। (সূত্র আলবানী)


পর্যালোচনা

সম্মানিত পাঠক!  এতক্ষণ আপনারা মুজাফফর সাহেবের মনগড়া ফতোয়াটি দেখলেন। বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, তিনি শুধুমাত্র আলবানী সাহেবের যুক্তি পেশ করেই হাদিসটিকে কখনো জাল, কখনো সনদে ত্রম্নটি আছে আবার কখনো যয়ীফ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ হিসেবে বলেছেন উক্ত সনদে দুজন দুর্বল রাবী রয়েছেন।

আমি বলব কোন হাদিসের রাবী দুর্বল হলেই হাদিসটিকে জাল বা মিথ্যা বলা ষড়যন্ত্রের শামিল।

এখানে একটা মজার বিষয় হল, মুজাফফর সাহেবের গুরু আলবানী সাহেব এই হাদিসটিকে সহিহ তিরমিজি থেকে উল্লেখ করেছেন। আরেকটু খোলাসা করে বলি, আলবানী সাহেব তিরমিজিশরীফকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন। এক ভাগ হল সহিহ তিরমিজি আর একভাগ হল যয়ীফ তিরমিজি। আলহামদু লিল্লাহ এই হাদিসকে তিনি সহিহ তিরমিজিতে উল্লেখ করেছেন। (হাদিস নং-৪)

মুজাফফর সাহেব লিখেছেন-হাদিসটির প্রথম অংশ যয়ীফ আর দ্বিতীয় অংশ সহিহ। ইহা কেমন কথা ? একই হাদিসের অর্ধেক সহিহ আর অর্ধেক যয়ীফ ইহা তার মনগড়া কথা।

যদি রাবী দুর্বলের কারণে হাদিসটি দুর্বল হয় তাহলে পুরো সনদটিই দুর্বল হবে। এখানে আরো একটি বিষয় স্পষ্ট হল যে, কোন হাদিসের একটি সূত্র দুর্বল হলেই হাদিসটি জাল নয় বরং অন্যান্য সূত্র দেখতে হবে।

সম্মানিত পাঠক!  এবার আসুন আমরা দেখি হাদিসটি কোন কোন ইমামগণ বর্ণনা করেছেন এবং মুহাদ্দিসীনে কেরামদের কী মতামত।

ইমাম তিরমিজি

عن جابر بن عبد الله رضى الله تعالى عنه قال قال رسول لله صلى الله عليه وسلم مفتاح الجنة الصلاة ومفتاح الصلاة والوضوء

অর্থ: হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন-জান্নাতের চাবি হল নামায আর নামাযের চাবি হল অজু। (তিরমিজি হাদিস নং ৪)

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, মুসনাদ গ্রন্থ হাদিস নং ১৪৬৬২

ইমাম বায়হাকি শুয়াবুল ঈমান। হাদিস নং ২৪৭৯

ইমাম তাবরানি, আল মু’জামুল আওসাত। হাদিস নং ৪৩৬৪

এছাড়া আরো ইমামগণ তাদের স্ব-স্ব কিতাবে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।

এবার আসুন যে দুজন রাবী সম্বন্ধে তিনি আপত্তি তুলেছেন তাদের সম্বন্ধে মুহাদ্দিসীনে কেরামদের বক্তব্য দেখি।

ক. সুলাইমান ইবনে করম 

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহ আলাইহি تهذيب التهذيب গ্রন্থে বলেছেন-

سليمن بن قرم بن معاذ التميمى الضبى ابوداود النحوى- روى عن ابى اسحاق السبيعى وابى يحى القتات وعطاء بن السائب وابن المنكدر والاعمش وسماك بن حرب وعاصم بن بهدلة وغيرهم-

وعنه سفيان الثورى وهو من اقرانه وابو الجواب وحسين بن محمد المروذى- ويعقوب بن اسحاق الحضرمى ويونس بن محمد المؤدب وابو الاحوص وابو بكر بن عياش وابوداود الطيالس وغيرهم-

অর্থ: সুলায়মান বিন করম বিন মায়ায আত তামিমী, আদ দ্বাবি আবু দাউদ আন নাহুবী। তিনি হাদিস বর্ণনা করেছেন আবু ইসহাক আস সাবিয়ী, আবু ইয়াহইয়া আলকাত্তাত আতা বিন সাইব, ইবনুল মুনকাদির আ’মাশ, সিমাক বিন হারব এবং আসিম বিন বুহদালাহ সহ অন্যান্যাদের কাছ থেকে। তার কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন সুফিয়ান সাওরি, আবুল জওয়াব, হুসাইন বিন মুহাম্মাদ আল মারুযি, ইয়াকুব বিন ইসহাক আল হাদরামী ইউনুস বিন মুহাম্মদ আল মুয়াদ্দাব, আবুল আহওয়াস, আবু বকর বিন আইয়াশ এবং আবু দাউদ আত তায়ালিসি প্রমূখ।

অতঃপর ইমাম আসকালানী বলেন-

قال عبد الله بن احمد بن حنبل- كان ابى يتتبع حديث قطبة بن عبد العزيز وسليمان بن قرم ويزيد بن عبد العزيز بن سياه وقال هؤلاء قوم ثقات- وهم اتم حديثا من سفيان وشعبة وهم اصحاب كتب وان كان سفيان وشعبة احفظ منهم-

অর্থ:আব্দুল্লাহ বিন আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন-আমার পিতা (ইমাম আহমদ) কুত্ববাহ বিন আব্দুল আজিজ, সুলাইমান বিন করম, এবং ইয়াযিদ বিন আব্দুল আজিজ এর হাদিস খোঁজ করতেন। তিনি বলেছেন-এরা হলেন বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী। তারা সুফিয়ান ও শুয়বাহর চেয়ে পরিপূর্ণ। তারা কিতাবের অধিকারী। যদিও সুফিয়ান ও শুয়বাহ তাদের চেয়ে অধিক স্মৃতিসম্পন্ন। (সংক্ষেপিত)

অতঃপর ইবনে হাজার আরো কিছু উক্তি বর্ণনা করেছেন-

وقال محمد بن عوف عن احمد لاارى به بأسا لكنه كان يفرط فى التشيع وقال ابن معين ضعيف وقال مرة ليس بشئ

অর্থ: মুহাম্মদ বিন আওফ আহমাদ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন-আমি এতে কোন সমস্যা দেখিনি। তবে তিনি শিয়াতের ব্যাপারে অতিরিক্ত করতেন। ইবনে মুয়িন বলেছেন-দুর্বল মুররাহ বলেছেন-কোন সমস্যা নাই।

(সংক্ষেপিত) (তাহযিব আত তাহযিব, ৪র্থ খ- ২১৩ পৃষ্ঠা)


সম্মানিত পাঠক!  একজন রাবী সম্পর্কে বিভিন্ন ইমামের ভিন্ন ভিন্ন মতামত থাকতে পারে। তাই বলে একজন রাবীকে মিথ্যাবাদী বা জাল হাদিস বর্ণনাকারী বলা যাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত কোন হাদিসের ইমাম তাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত না করবেন। এখানে আমরা কি দেখলাম? ইমাম আহমাদসহ অনেকেই সুলাইমান বিন করমকে বিশ্বস্ত রাবী বলেছেন। যদিও কেউ দুর্বল বলেছেন কিন্তু কেউ মিথ্যাবাদী বলেননি।



খ. আবু ইয়াহইয়া আল কাত্তাত

জামাল উদ্দিন আবুল হাজ্জাজ ইউসুফ আল মাযী الكمال تهذيب গ্রন্থে দীর্ঘ বর্ণনা করেছেন। সেখান থেকে নিম্নে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরা হল-

ابو يحى القتات الكوفى الكناسى

روى عن حبيب بن ابى ثابت وعطاء ابن ابى رباح وجاهد بن جبر المكى

روى عنه اسرائيل بن يونس وخديج بن معاوية وزياد بن خيثمة وسفيان الثورى وسليمان بن قرم وسليمان الاعمش

قال عبد الله بن احمد بن حنبل عن ابيه كان شريك يضعف ابا يحى القتات

قال عثمان بن سعيد الدارمى عن يحى من معين ثقة قال احمد بن سنان القطات سمعت يحى بن معين يقول  ابو يحى القتات فى الكوفين مثل ثابت فى البصرين

وقال السنانى ليس بالقوى:

روى له البخارى فى الادب وابو داود والترمذى وابن ماجه

অর্থ: আবু ইয়াহইয়া আল কাত্তাত আল কুফি, আল কানাসী, তিনি হাদিস বর্ণনা করেছেন হাবিব বিন আবি সাবিত আত্বা ইবনে আবি রিবাহ এবং মুজাহিদ বিন জবর আল মাক্কী থেকে। তাঁর কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন ইসরাইল বিন ইউনুস। খাদিজ বিন মুয়াবিয়াহ, যিয়াদ বিন খায়সামাহ, সুফিয়ান সাওরি, সুলাইমান বিন করম এবং সুলাইমান আল আ’মাশ। আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন হাম্বল তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। শারীক নামক রাবী আবু ইয়াহইয়াকে দুর্বল বলেছেন। উসমান বিন সাঈদ আদ দারামী ইয়াহইয়া বিন মুয়িন থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আবু ইয়াহইয়া ছিলেন নির্ভরযোগ্য। আহমাদ বিন সিনান আল কাত্তান বলেন-আমি ইয়াহইয়া বিন মুয়িন থেকে শুনেছি। কুফাবাসীদের জন্য আবু ইয়াহইয়া তেমন বসরা বাসিদের জন্য সাবিত যেমন।

নাসাঈ বলেছেন-তিনি শক্তিশালী ছিলেন না। আবু ইয়াহইয়া থেকে ইমাম বুখারি আদাব গ্রন্থে এবং আবু দাউদ, তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ হাদিস বর্ণনা করেছেন।

(তাহযিবুল কামাল, পৃষ্ঠা ৪০১-৪০৩) রাবী নং ৭৬৯৯)

উপরোক্ত দলিলভিত্তিক আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে, ‘নামায বেহেস্তের চাবি’ ইহা মিথ্যা বা জাল হাদিস নয়। বরং ইহা একটি সহিহ হাদিস। 


৭. মহিলাদের পাঁচ কাপড় ও আব্দুর রাজ্জাকের মিথ্যাচার


এ ব্যাপারে সমস্ত উলামায়ে কেরামগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, মৃত ব্যক্তি পুরুষের জন্য ৩টি কাফন এবং মহিলার জন্য ৫টি কাফনের কাপড় পরিধান করানো সুন্নাত। ইহা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু বর্তমানে কিছু আহলে হাদিস নামধারি স্বঘোষিত শায়খগণ ইহাকে ভুয়া ও বানানো কথা বলে গলাবাজি করছেন। তারা বলেন পুরুষ, মহিলা উভয়ের জন্য তিনটি কাপড় হতে হবে। তাদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ অন্যতম। তাই আমি প্রথমে তার বক্তব্যটি নিম্নে হুবহু তুলে ধরলাম। আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ বলেছেন-

‘মহিলাদেরকে পাঁচ কাপড়ে কাফন দিতে হবে হাদিস ঠিক নয়। আবু দাউদে বর্ণিত হাদিস। পুরুষ নারী সবার জন্য তিনটা হবে। ছোট বড় করতে এর কোন বিধান নেই। এইটা কামিস, এইটা জামা এইটা মাথা বান্দ, এইটা বুকবান্দ এইটা উড়না এগুলো সব বানানো কথা। একটাও ঠিক নয়।’ (ইউটিউব থেকে সংগৃহীত)

সম্মানিত পাঠক!  আপনারা আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের বক্তব্যটি শুনলেন। তিনি এ ব্যাপারে আবু দাউদশরীফে বর্ণিত একটি হাদিসের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন ইহা সঠিক নয়। এগুলো সব বানানো কথা। তাই আসুন আমরা প্রথমে আবু দাউদশরীফের হাদিসটি দেখি-

عن ليلى بنت قانف الثقفية قالت كنت فمن غسل ام كلثوم بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم عند وفاتها فكان اول ما اعطانا رسول الله صلى الله عليه وسلم الحقى ثم الدرع ثم الخمار ثم الملحفة ثم ادرجت بعد فى الثوب الاخر قالت ورسول الله صلى الله عليه وسلم جالس عند الباب معه كفنها يناولناه ثوبا ثوبا-

অর্থ: লাইলা বিনতে কানিফ আস সাক্বাফী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-যখন রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর মেয়ে উম্মে কুলসুম ইন্তকাল করলেন। তাঁকে গোসল দানের সময় আমিও সেখানে ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ(ﷺ) আমাদেরকে কাফনের জন্য ধারাবাহিকভাবে ৫টি কাপড় প্রদান করলেন। ১. আল হিক্কা, ২. দিরা, ৩. খিমার, ৪. মুলহিফাহ এবং ৫. আরো একটি টুকরা।

লাইলা বলেন-সে সময় রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কাফনের কাপড় নিয়ে দরজায় বসাছিলেন। তিনি একটি একটি করে আমাদেরকে কাপড়গুলো বুঝিয়ে দিলেন। (আবু দাউদ, হাদিস নং ৩১৫৭) 

উপরে বর্ণিত আবু দাউদ শরীফের হাদিসে স্পষ্টভাবে ৫টি কাপড়রের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু রাজ্জাক সাহেব ইহাকে বানানো কথা বলে উল্লেখ করেছেন। প্রশ্ন হল তিনি এ কথা কোথা থেকে বললেন ? উত্তর একবারে সহজ। অর্থাৎ আলবানী সাহেব ارواء الغليل গ্রন্থে হাদিসটিকে যয়ীফ বলেছেন। তিনি বলেছেন-

قلت وهذا سند ضعيف نوح هذا مجهول

অর্থাৎ আমি বলব এই সনদটি দুর্বল কারণ এতে নূহ নামক একজন অপরিচিত বর্ণনাকারী রয়েছেন। (৩য় খ- হাদিস নং ৭২৩)

সম্মানিত পাঠক!  এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন কোথাকার পানি কোথায় গড়াচ্ছে? আলবানী সাহেবের সাথে তাল মিলিয়ে শাগরিদও হাদিসটিকে বানানো বলে আখ্যায়িত করলেন।

আমি বলতে চাই একটি হাদিসের একাধিক সূত্র থাকতে পারে। কোন একটি সূত্র দুর্বল হলেই হাদিসটিকে জাল বা বানানো বলা চরম প্রতারণার নামান্তর। অন্যান্য সূত্র গুলোও তালাশ করা দরকার। তাই আসুন আমরা অন্যান্য সূত্রগুলো দ্বারা প্রমাণ করি যে, মহিলাদের জন্য ৫টি কাপড় বিশিষ্ট হাদিসটি সহিহ।

ইমাম বুখারি রহমতুল্লাহ আলাইহি বুখারিশরীফে ‘কিতাবুল জানাইয’ অধ্যায়ে باب كيف الاشعار للميت পরিচ্ছেদে একটি তালিকা বর্ণনা করেছেন-

وقال الحسن: الخرقة الخامسة يشدبها الفخذين والوركين تحت الدرع

অর্থ: হাসান আল বাসরী বলেছেন-পঞ্চম খ- দ্বারা কামিসের নীচে উরুদ্বয় ও নিতম্বদ্বয় uঁবধে দিবে। (হাদিস নং ১২৬১)

ইবনে হাজার আসকালানী:

হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহ আলাইহি ফাতহুল বারী গ্রন্থে উক্ত বাবের ব্যাখ্যায় বলেছেন-

(الخرقة الخامسة) هذا يدل على ان اول الكلام ان المرءة تكفن فى خمسة اثواب وقد وصله ابن ابى شيبة نحوه وروى الجوزقى من طريق ابراهيم بن حبيب بن الشهيد عن هشام عن حفصة عن ام عطية قالت فكفناها فى خمسة اثواب وخمرناها كما يخمر الحى- وهذه الزيادة صحية الاسناد

অর্থ:‘পঞ্চম বস্ত্র খ-’ বাক্য দ্বারা প্রমাণ করে যে, মহিলাদের পাঁচটি কাপড় দ্বারা কাফন দিতে হবে। ইবনে আবি শাইবা থেকেও অনুরূপ বর্ণনা এসেছে। 

তাছাড়া আল জাওযাকী আরেকটি সনদ বর্ণনা করেছেন ইব্রাহিম বিন হাবিব বিন শাহীদ থেকে, তিনি হিশাম থেকে তিনি হাফসা থেকে, তিনি উম্মে আতিয়্যাহ থেকে।

উম্মে আতিয়্যাহ বলেন-আমরা তাকে (রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর মেয়েকে) পাঁচটি কাপড় দ্বারা কাফন দিয়েছি এবং এমনভাবে চাদর জড়িয়েছি যেমনভাবে জীবিতদেরকে চাদর জড়ানো হয়। অতঃপর ইমাম আসকালানী বলেন-এই অতিরিক্ত বর্ণনাটুকুর সনদ সহিহ। (ফাতহুল বারী ৩য় খ-, হাদিস নং ১২৬১) 

বাদাইউস সানায়ী:

ইমাম আলা উদ্দিন আবু বকর বিন মাসউদ আল কাসানী আল হানাফিبدائع الصنائع  গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন-

واما المرئة فاكثر ماتكفن فيه خمسة اثواب- درع وخمار وازار ولفافة وخرقة هو السنة فى كفن المرئة لما روى عن ام عطية ان النبى صلى الله عليه وسلم ناول اللواتى غسلن ابنتها فى كفنها ثوبا ثوبا حتى ناولهن خمسة اثواب-

অর্থ: মহিলাদের কাফনের কাপড় হল ৫টি। দিরা, খিমার, ইযার, লেফাফাহ এবং খিরকাহ। মহিলাদের জন্য ইহাই সুন্নাত। যেমন উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদিস। নবী করিম (ﷺ) ঐ সমস্ত মহিলাদেরকে একটি একটি করে ৫টি কাপড় প্রদান করেছিলেন যারা তাঁর মেয়ে (উম্মে কুলসুম রাদিয়াল্লাহু আনহাকে গোসল করিয়েছিলেন) (বাদাইয়ুস সানায়ী, ১ম খ- ৩১৭ পৃষ্ঠা)


ইবনে তাইমিয়া

সালাফিদের শায়খ ইবনে তাইমিয়া ‘মাজমুয়া ফাতাওয়া’ গ্রন্থে বলেন-

اما المرئة فافضل تكفينها فى خمسة اثواب ازار وخمار وقميص ولفافتين فهذا هو الافضل كما ذكره اهل العلم وجاء فى ذلك احاديث تدل عليه وان كفنت فى اقل من ذلك فلا بأس

অর্থ:মহিলাদের জন্য উত্তম হল পাঁচ কাপড়ে কাফন প্রদান করা। আর তা হল ইযার, খিমার, কামিস এবং দুটি লুফাফাহ। আর ইহাই হল সর্বোত্তম। আহলে ইলম তথা উলামায়ে কেরামগণ এভাবেই বর্ণনা করেছেন। এ ব্যাপারে অনেকগুলো হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যা পাঁচটি কাপড়ের কথাই প্রমাণ করে। যদি পাঁচ কাপড়ের চেয়ে কম হয় এতেও কোন অসুবিধা নাই। (মাজমুয়া ফাতাওয়াباب كيف تكفين الميت  ১৩তম খ- ১২৭ পৃষ্ঠা)

আলহামদুলিল্লাহ উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হল যে, মহিলাদের কাফনের কাপড় ৫টি হবে। ইহাই সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। 


৮. সাতভাগে কুরবানি ও সালাফি ফিতনা


কুরবানির পশু যদি উট, গরু কিংবা মহিষ হয়, তাহলে একটি পশুকে সাতজনের পক্ষ থেকে কুরবানি দেয়া যায়। হোক সবাই একই পরিবারভুক্ত অথবা পাড়া প্রতিবেশি। তবে ছাগল কিংবা ভেড়া হলে একটি পশু একজনের পক্ষ থেকেই প্রদান করতে হবে। ইহাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ফতোয়া এবং এ ব্যাপারে সকল উলামায়ে কেরামগণ একমত পোষণ করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল বর্তমানে সালাফি নামধারী কতিপয় শায়খ এ ব্যাপারে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে ফিতনা তৈরি করছেন। তাদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ অন্যতম। তার মতে সাতজনের পক্ষ থেকে একটি পশু কুরবানি করার কোন হাদিস পৃথিবীতে নাই। আমি প্রথমে তার বক্তব্যটি হুবহু তুলে ধরলাম। দেখুন, তিনি বলেছেন-‘সম্মানিত দ্বীনি ভাই, এবার আমরা চলে আসি সাতভাগে কুরবানি, গরু ও উট সাতজনের পক্ষ থেকে কুরবানি করা যায়। তবে সাতজন, সাত পরিবার নয়। প্রথমত: বলছি সাত পরিবারের পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানি করতে হবে এ রকম হাদিস পৃথিবীতে নাই। (ইউটিউব থেকে সংগৃহীত)

সম্মানিত পাঠক! রাজ্জাক সাহেবের বক্তব্য থেকে বুঝা গেল একটি গরু বা একটি উট একই পরিবারের সাতজনের পক্ষ থেকে কুরবানি দেয়া যাবে। তবে সাত পরিবারের সাতজনের পক্ষ থেকে কুরবানি দেয়া যাবে না। কারণ এ রকম কোন হাদিস পৃথিবীতে নাই। তাহলে আসুন আমরা এ ব্যাপারে কয়েকটি হাদিস দেখি-

হাদিস-১.

عن جابر بن عبد الله رضى الله تعالى عنه قال قال نحرنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الحديبية البدنة عن سبعة والبقرة عن سبعة

অর্থ: হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-আমরা হুদায়বিয়ার বৎসর রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর সাথে কুরবানি করেছি। একটি উটনি সাতজনের পক্ষ থেকে এবং একটি গাভী সাতজনের পক্ষ থেকে। (মুসলিম, হাদিস নং ৩২৪৬باب الاشتراك فى الهدى  তিরমিজি হাদিস নং-৯০৪)


হাদিস-২.

عن جابر رضى الله تعالى عنه خرجنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم مهلين بالحج فامرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم ان نشترك فى الابل والبقر كل سبعة منا فى بدنة

অর্থ: হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-আমরা রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর সাথে হজ্জ্বের সফরে বের হলাম। তখন রাসূলুল্লাহ(ﷺ) আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন আমরা যেন প্রত্যেক উট ও প্রত্যেক গরুতে সাতজনে মিলে কুরবানি প্রদান করি। (মুসলিম, হাদিস নং ৩২৪৮)

হাদিস-৩.

عن جابر بن عبد الله رضى الله تعالى عنه قال كنا نتمتع مع رسول الله صلى الله عليه وسلم بالعمرة فنذبح البقرة عن سبعة نشترك فيها

অর্থ: হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-আমরা রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর সাথে তামাত্তো হজ্জ্বে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। তখন আমরা একটি গাভী সাতজনের অংশিদারিত্বে কুরবানি করেছিলাম। (মুসলিম ৩২৫২)

হাদিস-৪.

عن جابر بن عبد الله رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال البقرة عن سبعة والجزور اى البعير عن سبعة

অর্থ: হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) বলেছেন-প্রতিটি গাভী সাতজনের পক্ষ থেকে এবং প্রতিটি উট সাতজনের পক্ষ থেকে। (আবু দাউদ হাদিস নং ২৮০৮)

হাদিস-৫.

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه كنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فى سفر فحضر الاضاحى فاشتركنا فى البقرة سبعة وفى البعير عشرة

অর্থ: হযরত ইবনে আববাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-আমরা রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর সাথে একবার সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানির সময় আগমন করল। তখন আমরা একটি গরুতে সাতজন এবং একটি উট দশজন মিলে কুরবানি করলাম। (তিরমিজি হাদিস নং-১৫০১ باب ما جاء فى الاشتراك فى الاضحية)

প্রিয় পাঠক!  উপরে ৫টি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হল যে, উট কিংবা গরু সাত শরীকে কুরবানি করা জায়েয। এখানে কেউ কেউ বলে থাকেন উল্লেখিত হাদিসগুলো শুধুমাত্র হজ্জ্বের কুরবানির সাথে সংশ্লিষ্ট। ঈদুল আদহার কুরবানির ব্যাপারে নয়। তাদের জবাবে বলতে চাই ইমাম তিরমিজি এই হাদিসটি কুরবানি অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। তিনি শিরোনাম দিয়েছেন-

باب ما جاء فى الاشتراك فى الاضحية

অর্থাৎ অংশিদারিত্বে কুরবানি প্রসঙ্গ অধ্যায়।

ইমাম তিরমিজির বক্তব্য

ইমাম তিরমিজি রহমতুল্লাহ আলাইহি এই হাদিসটি বর্ণনা করার পর নিজের অভিমত ব্যক্ত করেছেন এভাবে-

والعمل على هذا عند اهل العلم من اصحاب النبى صلى الله عليه وسلم وغيرهم وهو قول سفيان الثورى وابن المبارك والشافعى واحمد واسحاق- وقال اسحاق يجزئ ايضا البعير عن عشرة احتج بحديث ابن عباس

অর্থ: সাহাবায়ে কেরামসহ অন্যান্য আহলে ইলম তথা উলামায়ে কেরামদের আমল এভাবেই ছিল। (অর্থাৎ একটি উট ও একটি গরুতে সাতভাগ) ইহা হচ্ছে সুফিয়ান সাওরি, ইবনুল মোবারক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমদ এবং ইমাম ইসহাকের অভিমত।

তাছাড়া ইমাম ইসহাক বলেছেন, একটি উট দশ জনের পক্ষ থেকেও যথেষ্ট। তিনি উপরে বর্ণিত ইবনে আববাসের হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করেছেন। (তিরমিজি হাদিস নং ১৫০২)

ইমাম নববীর ব্যাখ্যা

ইমাম মহিউদ্দিন নববী স্বীয় ‘শরহে মুসলিম’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন-

فى هذه الاحاديث دلالة لجواز الاشتراك فى الهدى

অর্থ: উল্লেখিত হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে, অংশিদারিত্বে হাদী বা কুরবানি করা জায়েয।

এর কয়েক লাইন পরে আবার লিখেন-

واجمعوا على ان الشاة لايجوز الاشتراك فيها- وفى هذه الاحاديث ان البدنة تجزئ عن سبعة والبقرة عن سبعة وتقوم كل واحدة مقام سبع شياة

অর্থ: এ ব্যাপারে ইজমা হয়েছে যে, ছাগলের মধ্যে কোন অংশিদারিত্ব জায়েয নয়। উপরোল্লেখিত হাদিসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, একটি উট ও একটি গাভী সাতজনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট। এদের প্রত্যেকটি সাতটি ছাগলের সমপরিমাণ বলে গণ্য হবে। (শরহে মুসলিম, হাদিস নং ৩২৪৬)

* ফাতাওয়া আল লাজনাহ আদ দাইমাহ

فتاوى اللجنة الدائمة একটি ফতওয়া বোর্ড। যার প্রধান মুফতি ছিলেন আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বাজ। এ ফতওয়াগুলো সংকলন করেছেন শায়খ আহমদ বিন আব্দুর রাজ্জাক আদ দোয়াইশ। অংশিদারিত্বে কুরবানি সংক্রান্ত একটি ফতওয়া সেখান থেকে প্রদান করা হল-

س: هل يجوز الاشتراك فى الاضحية- وكم عدد المسلمين الذين يشتركون فى الاضحية- وهل يكونون من اهل بيت واحد- وهل الاشتراك فى الاضحية بدعة ام لا-

অর্থ: প্রশ্ন: কুরাবানিতে অংশিদারিত্ব জায়েয কিনা? কুরবানিতে কতজন মুসলমান অংশ নিতে পারবে? তারা কি সবাই একই পরিবারভুক্ত হতে হবে? সর্বোপরি কুরবানিতে অংশিদারিত্ব বিদআত কি না?

ج: يجوز ان يضحى الرجل عنه وعن اهل بيته شاة والاصل فى ذالك ما ثبت عنه صلى الله عليه وسلم انه كان يضحى بالشاة الواحد عنه وعن اهل بيته متفق عليه

وتجزئ البدنة والبقرة عن سبعة سواء كانوا من اهل بيت واحد او من بيوت متفرقين- وسواء كان بينهم قرابة اولا لان النبى صلى الله عليه وسلم اذن للصحابة فى الاشتراك فى البدنة والبقرة كل سبعة فى واحد


অর্থ: জবাব: একজন ব্যক্তি তার নিজ ও পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ছাগল কুরবানি করা জায়েয হবে। এর মূলভিত্তি হল নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণিত হাদিস। তিনি নিজের পক্ষ থেকে ও পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ছাগল কুরবানি করতেন। (বুখারি-মুসলিম) এমনিভাবে একটি উট ও একটি গাভী সাতজনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট। হোক তারা সবাই একই পরিবারভুক্ত অথবা ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের লোক। হোক তাদের সবার উদ্দেশ্য কুরবত হাসিল বা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ অথবা ভিন্ন। কেননা নবী করিম (ﷺ) সাহাবাদেরকে অনুমতি প্রদান করেছিলেন প্রত্যেকটি উট ও গাভী সাতশরীকে কুরবানি করতে। (ফতোয়া নং ২৪১৬, পৃষ্ঠা নং-৪০০) 

সম্মানিত পাঠক!  এ ব্যাপারে আমি আর বক্তব্য দীর্ঘায়িত করতে চাই না। আশা করি বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে। এতগুলো সহিহ হাদিস থাকার পরেও এ বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য প্রদান করা ষড়যন্ত্র বৈ কিছু্ই নয়।


৯. মৃতব্যক্তির মাগফিরাতের জন্য জিয়াফত ও চল্লিশার বিরুদ্ধে মনগড়া ফতোয়া


সালাফি শায়খ কাজী ইব্রাহিম সাহেবের নিকট জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন-‘কোন ব্যক্তি ইন্তকালের পর গ্রামের লোকদেরকে দাওয়াত করে খাওয়ানো যাবে কি না? জবাবে কাজী সাহেব বললেন-

‘হ্যাঁ যাবে। কেউ মারা গেলে আপনি দশজন, বিশজন একশজন, চারশজন নিয়া খাওয়াইলেন, অনুষ্ঠান করলেন। হ্যাঁ করতে পারেন,যদি আপনার নিয়তে থাকে কবর ওয়ালা মানুষটার উপর একটু আযাব হোক। আপনি যদি কবর ওয়ালা মানুষটিকে আযাব দিতে চান, এই লোকটা এত সুখে থাকবে কেন কবরে ? একটু গযব হোক, একটু আগুন জলুক তার কবরে। তাহলে তার নামে একটি চল্লিশা করে দিবেন। আগুন জ্বলা শুরু হয়ে যাবে। নবীজি বলেছেন-الميت يعذب بما نيح عليه অর্থ: মুর্দাকে আযাব দেয়া হবে যদি মুর্দার জন্য নিয়াহত তথা যিয়াফত বা খাওয়ানোর অনুষ্ঠান বা শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করা হয়।

ইহা কাজী ইব্রাহিমের কথা নয়। কোন মৌলভী মুনসির কথা নয়। ইহা সহিহ বুখারিশরীফ জানাযা পর্বের হাদিস।

সে যদি জীবদ্ধশায় নিষেধ করে না গিয়ে থাকে, আর ছেলে মেয়েরা যদি এটা করে তাহলে তার আযাব শুরু হয়ে যাবে। (ইউটিউব থেকে সংগৃহীত)


পর্যালোচনা

সম্মানিত পাঠক!  দেখলেন তো কাজী ইব্রাহিম সাহেবের মনগড়া ফতোয়া। এখানে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, তিনি মৃত ব্যক্তির রূহের মাগফিরাতের জন্য গরিবদেরকে খাওয়ানোর অনুষ্ঠানকে নাজায়েয এবং কবর আযাবের কারণ বলতে গিয়ে বুখারি শরীফের একটি হাদিসকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি হাদিসটির অর্থকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করে সাধারণ জনগণকে ধোকা দেবার চেষ্টা করেছেন। তিনি হাদিসে ব্যবহৃত নিয়াহত শব্দটিকে যিয়াফত অর্থ করে বিভ্রান্তি তৈরি করেছেন। তাই আসুন আমরা প্রথমে বুখারিশরীফের মূল হাদিসটি দেখি-

عن ابن عمر عن ابيه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال الميت يعذب فى قبره بما نيح عليه

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর বর্ণনা করেছেন তার পিতার কাছ থেকে। তিনি বর্ণনা করেছেন নবী করিম (ﷺ) থেকে, তিনি (ﷺ) বলেন-মৃত ব্যক্তিকে কবরে আযাব দেয়া হবে যদি তার জন্য বিলাপ করে ক্রন্দন করা হয়। (কিতাবুল জানাইয, হাদিস নং ১২৯২)

উক্ত হাদিসে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন-‘নিয়াহত’ তথা মর্সিয়া করে, বিলাপ করে রোদন করলে কবরে মৃত ব্যক্তির আযাব হয়। অথচ কাজী ইব্রাহিম সাহেব নিয়াহত শব্দের অর্থ করেছেন যিয়াফত বা খাওয়ানোর অনুষ্ঠান বা শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান। ইহা সম্পূর্ণ তার মনগড়া ব্যাখ্যা এবং অর্থ বিকৃতি।

এবার আসুন আমরা ‘নিয়াহত’ শব্দের প্রকৃত অর্থ একটু বিশ্লেষণ করি। ইমাম বুখারি উল্লেখিত হাদিসটির শেষাংশে ‘নিয়াহত’ শব্দের ব্যাখ্যা স্বরূপ আরেকটি হাদিস উল্লেখ করেছেন নিম্নরূপ-

وقال ادم عن شعبة الميت يعذب ببكاء الحى عليه

অর্থ: আদম শুবা থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘জীবিত ব্যক্তির ক্রন্দনের জন্য মৃত ব্যক্তিকে আযাব দেয়া হবে। (হাদিস নং ১২৯২)

উক্ত হাদিস দ্বারা সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, নিয়াহত শব্দের অর্থ হলো ক্রন্দন করা।

ইমাম বুখারি রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত হাদিসের শিরোনাম করেছেন এভাবে- باب ما يكره من النياحة على الميت অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির উপর ক্রন্দন করা মাকরূহ অধ্যায়। এর ব্যাখ্যায় হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী আলাইহির রহমত লিখেছেন-

قال الزين بن المنير ما موصولة ومن لبيان الجنس فالتقدير الذى يكره من جنس البكاء هو النياحة-

অর্থ: যাইন ইবনুল মুনির বলেছেন-এখানে ما শব্দটি মাওসুলাহ এবং من শব্দটি জিনস বা শ্রেণি বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। অতএব ‘নিয়াহত’ হলো ক্রন্দন এর একটি প্রকার যা মাকরূহ। (ফাতহুল বারী-৩/১৯২)


নিয়াহত শব্দের বিশ্লেষণ

শায়খ মুহাম্মদ সালিহ আল মুনজিদ অত্যন্ত চমৎকারভাবে নিয়াহত শব্দের ব্যাখ্যা করেছেন। নিম্নে তা প্রদত্ত হলো-

النياحة لغة اسم من النوح وهى البكاء بصوت عال

অর্থ: নিয়াহত শব্দটি একটি বিশেষ্য পদ। ইহা নাওহুন থেকে গঠিত। এর শাব্দিক অর্থ হল উচ্চস্বরে ক্রন্দন করা।

وفى الاصطلاح اختلفت عبارات الفقهاء فى تعريف النياحة فعرفها الحنفية- بانها البكاء مع ندب الميت وعند المالكية- ان النياحة هى البكاء اذا اجتمع معه احد امرين هى صراخ او كلام مكروه

وعند الشافعية بانها رفع الصوت بالندب ولو من غير بكاء- وعرفها الحنابلة بانها رفع الصوت بالندب برنة او بكلام مسجع-

অর্থ: নিয়াহত শব্দের পারিভাষিক অর্থ বর্ণনায় ফোকাহায়ে কিরামদের মধ্যে সামান্য তারতম্য রয়েছে। যেমন-

১. হানাফিদের মতে: নিয়াহত হল মৃত ব্যক্তির নামে ক্রন্দন করা। 

২. মালেকীদের মতে: নিয়াহত অর্থ ক্রন্দন করা। হয়ত সেটা উচ্চস্বরে হবে অথবা মন্দ শব্দ সহকারে হবে। 

৩. শাফেয়ীদের মতে: মৃত ব্যক্তির নামে উচ্চস্বরে বিলাপ করা। যদিও কান্না ব্যতীত বিলাপ করা হয়। 

৪. হাম্বলীদের মতে: মৃত ব্যক্তির নামে উচ্চস্বরে রোদন করা। হোক গানের সুরে অথবা ছন্দাকারে। (সূত্র اسلام سوال وجواب সুয়াল নং ১৬৩২৭২, তাং ১৩/০৬/১১ইং)

উক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হল যে, ‘নিয়াহত’ শব্দের অর্থ যিয়াফত বা খাওয়ানোর অনুষ্ঠান বলে মনগড়া ফতোয়া প্রদান করা ফিতনা বৈ কিছুই নয়।

তাছাড়া এক মুসলমান অপর মুসলমানকে খানা খাওয়ানো অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। এ ব্যাপারে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। দেখুন নিম্নের হাদিস-

عن عبد الله  بن عمرو رضى الله تعالى عنه ان رجلا سأل النبى صلى الله عليه وسلم اى الاسلام خير- قال تطعم الطعام وتقرأ السلام على من عرفت ومن لم تعرف-

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, একব্যক্তি নবী করিম (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করলেন-কোন ব্যক্তির ইসলাম সর্বোত্তম? (ইমাম আসকালানী অর্থ করেছেন اى خصال الاسلام অর্থাৎ ইসলামের কোন আমল সর্বোত্তম ?)

জবাবে রাসূল (ﷺ) বললেন-পরিচিত অথবা অপরিচিত ব্যক্তিকে খানা খাওয়ানো এবং সালাম প্রদান করা সর্বোত্তম আমল। (বুখারি কিতাবুল ঈমান-হাদিস নং-১২)


১০.নবীজিকে মাটির তৈরি প্রমাণ করতে হাদিসের অপব্যাখ্যা


মুফতি মুয়াজ্জেম হোসেন আরেকজন সালাফি বক্তা। তিনি প্রায় সময় রাসূল (ﷺ) এর হাদিসকে মনগড়া ব্যাখ্যা করে সাধারণ মানুষদেরকে ধোকা দেন। তিনি রাসূল (ﷺ)কে মাটির তৈরি প্রমাণ করতে গিয়ে ইমাম বায়হাকির একটি হাদিসকে নির্লজ্জভাবে মিথ্যা অনুবাদ করেছেন। ইহা সুষ্পষ্ট প্রতারণার শামিল। আমি নিম্নে তার বক্তব্যটি হুবহু তুলে ধরলাম। তিনি বলেছেন-

‘ইমাম বায়হাকির শুয়াবুল ঈমানের ৯২৩৬ নং হাদিসটা উল্টাও। আল্লাহর নবী একটা কবরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। বিশ্বনবী বললেন-فلان حبشى এটা হল একটা নিগ্রোর কবর, কৃতদাসের কবর, কালো একটা লোকের কবর। কালো লোককে আরবিতে বলা হয় হাবশি। বিশ্বনবী বললেন-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ আল্লাহ ছাড়া আমার কোন মাবুদ নাই। 

এবার বিশ্বনবী সাহাবিদেরকে বললেন-এই মাটিতে যে শুয়ে আছে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে এই মাটি থেকে উঠাবেন। অতঃপর আল্লাহর নবী তিনবার বললেন-وترابة التى خلق منها আমার আল্লাহ আমাকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।

সম্মানিত নবীপ্রেমিক ভাইয়েরা!  এখানে মুয়াজ্জেম হোসেন সাহেব যে কতটুকু মিথ্যাচার করেছেন তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। আসুন আমরা প্রথমে বায়হাকির মূল হাদিসটি দেখি। তাহলে আপনারা বুঝতে পারবেন এই আজব মুফতি কতটুকু খেয়ানত করেছেন-

عن ابى سعيد الخدرى قال مر النبى صلى الله عليه وسلم بجنازة عند قبر فقال قبر من هذا؟ فقالوا قبر فلان الحبشى يا رسول الله فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا اله الا الله- سيق من ارضه وسمائه الى تربته التى خلق منها-

অর্থ: হযরত আবু সাঈদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, একবার নবী করিম (ﷺ) একটা কবরস্থানের পার্শ্বে যানাযার নিকট দিয়ে গমন করলেন। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন-‘ইহা কার কবর ? তখন সবাই বললেন-হে আল্লাহর রাসূল!  ইহা অমুক হাবশির কবর। তখন রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বললেন-‘আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই’ এই লোকটি তার পৃথিবী ও আসমান ছেড়ে ঐ মাটির দিকে চলে গেল যা থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং-৯৪২৫)

বিজ্ঞ পাঠক মহলের নিকট আরজি আপনারা এবার মুয়াজ্জেম হোসেন সাহেবের অনুবাদকৃত অর্থের দিকে একটু লক্ষ্য করুন তাহলে দেখতে পারবেন তিনি কতটুকু খিয়ানত করেছেন।

আমি এখানে শুধুমাত্র তার মূল উক্তিটি সম্বন্ধে একটু পর্যালোচনা করতে চাই। তিনি বলেছেন-আল্লাহর নবী নাকি তিনবার বলেছেন-وترابة التى خلق منها অর্থাৎ আমার আল্লাহ আমাকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। (নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক)

এখানে তিনি যে আরবি ইবারত বলেছেন-ইহা তার স্বরচিত কথা। ইহা মূল হাদিসের ইবারত নয়। আবার তার রচিত ইবারতের অর্থও যদি করা হয় তাহলে হবে এভাবে ‘এই মাটি থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। وترابة التى خلق منها এই বাক্যের অর্থ ‘আমার আল্লাহ আমাকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন’ ইহা ডাহা মিথ্যা কথা। অথচ রাসূলুল্লাহ(ﷺ) ঐ মৃত ব্যক্তি সম্বন্ধে বলেছেন-‘এই লোকটি এ আসমান জমিন ত্যাগ করে ঐ মাটির দিকে চলে গেল, যা থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ সকলকে বুঝার তৌফিক দান করুন।

 


১১. আদম (আ.)কে সৃষ্টির পূর্বেও আমাদের নবী নবীছিলেন-এ হাদিস অস্বীকার


শাহ ওয়ালী উল্লাহ আরেকজন সালাফি শায়খ। তিনি একটা টিভি অনুষ্ঠানে বলেছেন-আদম আলাইহিস সালাম মাটি পানির সাথে মিশ্রিত থাকাবস্থায় মুহাম্মদ (ﷺ) নবী ছিলেন এই হাদিসের কোন ভিত্তি নাই। তাহলে আসুন প্রথমে উনার বক্তব্যটি শুনি, তিনি বলেছেন-

‘যে কথাগুলো আমাদের দেশে প্রচলিত, বলা হয় মুহাম্মদ (ﷺ) নাকি বলেছেন-

كنت نبيا وادم بين الماء والطين

অর্থ: আমি তখনও নবী ছিলাম, যখন আদম আলাইহিস সালাম মাটি আর পানিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলেন।’ 

আসলে এ কথাগুলোর কোন ভিত্তি আমরা পাই নাই। বিশুদ্ধ কোন সনদে সঠিক কোন হাদিসের মধ্যে কথাগুলো নাই। (ইউটিউব থেকে সংগৃহীত)

প্রিয় পাঠক! শায়খ ওয়ালী উল্লাহ সাহেব বলেছেন এ কথাগুলোর কোন ভিত্তি তিনি পান নাই। কিংবা বিশুদ্ধ কোন সনদে সহিহ হাদিসের মধ্যে এ রকম কথা নাই। তাই আমি এ ব্যাপারে সামান্য আলোচনা করতে চাই। আমি প্রমাণ করব যে, এ কথাগুলো সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

প্রথমে বলতে চাই আমাদের নবী মুহাম্মদ (ﷺ) আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টির পূর্ব থেকেই নবী হিসেবে ঘোষিত। এই কথাটি তিনটি শব্দে বর্ণিত হয়েছে। কোন বর্ণনায় এসেছে بين الماء والطين কোন বর্ণনায় এসেছে بين الروح والجسد আবার কোন বর্ণনায় لمنجدل فى طينة বর্ণিত হয়েছে। শাব্দিক তারতম্য থাকলেও অর্থগত কোন পার্থক্য নাই। তাই আমি তিনটি সূত্রই বর্ণনা করব।

প্রথম হাদিস: অর্থাৎ আদম আলাইহিস সালাম যখন মাটি পানির সাথে মিশ্রিত ছিলেন তখন আমি নবী ছিলাম। ইহা বর্ণনা করেছেন-ইসমাইল হাক্কী তাফসিরে রুহুল বয়ান গ্রন্থে দেখুন মূল ইবারত-

لما تجلى الله وحد جميع الارواح فوجد اولا روح نبينا صلى الله عليه وسلم ثم سائر الارواح فلقن التوحيد فقال لا اله الا الله فكرمه الله بقوله محمد رسول الله- فاعطى الرسالة فى ذالك الوقت ولذا قال عليه السلام كنت نبيا وادم بين الماء والطين-

অর্থ: যখন আল্লাহতা’য়ালা সমস্ত রূহগুলোকে পৃথক করলেন তখন সর্বপ্রথম আমাদের নবীর রূহ মোবারক পেলেন। অতঃপর অন্যান্য সমস্ত রূহ। তখন তিনি তাওহিদ ঘোষণা করলেন-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’ অতঃপর আল্লাহ মুহাম্মদ (ﷺ)কে সম্মান করে বললেন-মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(ﷺ)। আর তখনকার সময় তাঁকে রিসালত প্রদান করলেন। এজন্য নবী (ﷺ) বললেন-আমি তখন নবী ছিলাম যখন আদম আলাইহিস সালাম মাটি ও পানির মধ্যবর্তী ছিলেন। (তাফসিরে রুহুল বয়ান-সূরা ফাতাহ, আয়াত ২৮)

আল্লামা ফখরুদ্দীন রাজী তাফসিরে কবীরে বলেছেন-

ولهذا قال عليه السلام كنت نبيا وادم بين الماء والطين

অর্থ: এজন্য নবীজি (ﷺ) বলেছেন-আমি তখন নবী ছিলাম যখন আদম আলাইহিস সালাম মাটি ও পানির সাথে মিশ্রিত ছিলেন। (সূরা কাউছার)



দ্বিতীয় হাদিস:

عن العرباض بن سارية رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انى عند الله لخاتم النبيين وان ادم لمنجدل فى طينته-

অর্থ: হযরত ইরবাদ বিন সারিয়া (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন-নিশ্চয় আমি তখন আল্লাহর নিকট শেষ নবী ছিলাম যখন আদম আলাইহিস সালাম মাটির সাথে মিশ্রিত ছিলেন।

(১. মুসনাদে আহমদ ৪/২১৭, ২. মাওয়ারিদুয যামআন-২০৯৩, ৩. মুসত্মাদরাক ২/৪১৮, ৪. ইমাম বায়হাকী, ইমাম হাকিম ও ইবনুল হিববান ইহাকে সহিহ বলেছেন তাছাড়া ইমাম যাহাবী ইহাকে শক্তিশালী বলেছেন)


তৃতীয় হাদিস:

عن ميسرة الفجر قال قلت يا رسول الله متى كنت نبيا قال وادم بين الروح والجسد-

অর্থ: হযরত মাইসারাহ আল ফাজর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ আপনি কখন নবী হয়েছেন ? নবী (ﷺ) বললেন-যখন আদম আলাইহিস সালাম রূহ ও শরীরের মধ্যখানে ছিলেন। 

(১. মুসনাদে আহমদ ৫/৫৯, ২. মুসত্মাদরাক ২/৬০৭, ৩. তাবরানী, ৪. বুখারি, তারিখ গ্রন্থ, ৫. বায়হাকী, ৬. সুয়ুতি-খাসাইসুল কুবরা ১/ ২১)


এছাড়া সালাফি গুরু আলবানী সাহেব হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন, সূত্র سلسلة الاحاديث الصحيحة ৪র্থ খ-, হাদিস নং ১৮৫৬।



চতুর্থ হাদিস:

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قالوا يا رسول الله ومتى وجبت لك النبوة قال وادم بين الروح والجسد-

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন-ইয়া রাসূলাল্লাহ!  আপনার নবুয়ত কখন অর্জিত হয়েছে ? তিনি বললেন-যখন আদম আলাইহিস সালাম রূহ ও শরীরের মধ্যখানে ছিলেন। (১. তিরমিজি, হাদিস নং ৩৬০৯, ২. মুসত্মাদরাক, সহিহ বলেছেন-হাদিস নং ২/৬০৯)


ইমাম যাহাবী ইহাকে শক্তিশালী বলেছেন-

উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদিসটি بين الماء والطين এ শব্দে কেউ কেউ দুর্বল বলেছেন। তবে বাকি দুটি শব্দে সবাই সহিহ বলেছেন। এমনকি আলবানীও সহিহ বলেছেন। ইমাম সাখাভী বলেন-

فلم نقف عليه بهذا اللفظ

অর্থ: উক্ত শব্দের সাথে আমি অবগত নই।

এখানে ইমাম সাখাভী শুধুমাত্র ماء والطين সম্বন্ধে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু অন্য শব্দে হাদিসটিকে তিনি নিজেও সহিহ বলে প্রমাণ করেছেন। দেখুন তার বর্ণনা-

حديث ميسرة الفجر بلفظ كنت نبيا وادم بين الروح والجسد- اخرجه احمد والبخارى فى تاريخه والبغوى وابن السكن وغيرهما فى الصحابة وابو نعيم فى الحلية وصححه الحاكم وكذا هو بهذا اللفظ عند الترمذى وغيره عن ابى هريرة- وقال الترمذى انه حسن صحيح- وصححه الحاكم ايضا- وفى لفظ وادم منجدل فى طينته وفى صحيح ابن حبان والحاكم من حديث العرباض بن سارية-

অর্থ: মাইসারাহ আল ফাজর থেকে বর্ণিত, নিম্ন শব্দে-كنت نبيا وادم بين الروح والجسد ইহা ইমাম আহমদ, ইমাম বুখারি তারিখ গ্রন্থে, ইমাম বগভী, ইবনে সুকুনসহ অন্যান্য ইমামগণ বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া আবু নাঈম হুলিয়া গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম হাকিম ইহাকে সহিহ বলেছেন। তাছাড়া ইমাম তিরমিজি ও অন্যান্য ইমামগণ একই শব্দে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকেও বর্ণনা করেছেন। অতঃপর ইমাম তিরমিজি বলেছেন ইহা হাসান সহিহ হাদিস এবং ইমাম হাকিম বলেছেন ইহা সহিহ।

তাছাড়া وادم منجدل فى طينته এই শব্দে ইবনে হিববান ও ইমাম হাকিম ইরবাদ বিন সারিয়াহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। (মাকাসিদুল হাসানা-পৃষ্ঠা ৫২১ হাদিস নং ৮৩৭)

উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে, আমাদের নবী করিম (ﷺ) আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টির পূর্ব থেকেই নবী হিসেবে মনোনীত ছিলেন।


১২. বুখারি শরীফের হাদিস সম্বন্ধে আলবানীর অনাস্থা


পবিত্র কুরআনুল কারীমের পরে  সবচেয়ে বিশুদ্ধ কিতাব হল সহিহ বুখারীশরীফ। সালাফিদের গুরু নাসির উদ্দিন আলবানী সাহেব তার লিখিত বিভিন্ন গ্রন্থে বুখারিশরীফের বিভিন্ন হাদিস সম্বন্ধে অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। কোনটাকে তিনি বলেছেন জয়িফ আবার কখনো বলেছেন এ হাদিসের বিশুদ্ধতা সম্বন্ধে আমার মনে প্রশান্তি মিলে না। যা মারাত্মক বিভ্রান্তিকর ও ষড়যন্ত্রের শামিল। নিম্নে এ ব্যাপারে কয়েকটি নমুনা তুলে ধরা হল।


হাদিস-১

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال قال الله- ثلاثة انا خصمهم يوم القيامة- رجل اعطى بى ثم غدر- ورجل باع حرا فاكل ثمنه- ورجل استأجر اجيرا فاستوفى منه ولم يعطه اجره-

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন-আল্লাহতা’য়ালা বলেছেন-কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করব। ১. যে ব্যক্তি আমার নামে কোন শপথ করে তা ভংগ করবে। ২. যে ব্যক্তি কোন স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করবে। ৩. এবং যে ব্যক্তি কোন শ্রমিক নিযুক্ত করল এবং সে তার কার্য সমাধা করল কিন্তু তার পারিশ্রমিক প্রদান করল না।

(বুখারি, কিতাবুল বুয়ু, হাদিস নং-২২২৭ এবং ২২৭০)

এই হাদিসটি বুখারিশরীফ ছাড়াও নিম্নলিখিত কিতাবসমূহে বর্ণিত হয়েছে। ইবনে মাজাহ ২৪৪২, ইমাম তাহাবি মুশকিলুল আসার ৪/১৪২, ইবনুল জারুদ ৫৭৯, বায়হাকি ৬/১২১, আহমদ ২/৩৫৮, আবু ইয়ালা ২/৩০৬।


আলবানীর মন্তব্য

উল্লেখিত হাদিসটি নাসির উদ্দিন আলবানী সাহেব স্বীয়-ارواء الغليل কিতাবের ৫ম খ- ৩০৮ পৃষ্ঠায় ১৪৮৯ নং হাদিসে বর্ণনা করেছেন। উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করার পর আলবানী সাহেব বলেছেন-

قلت وهذا الحديث مع اخراج البخارى اياه فى صحيحه فالقلب لم يطمئن لصحته-

অর্থ: আমি বলব, এই হাদিসটি স্বয়ং ইমাম বুখারি স্বীয় সহিহ কিতাবে বর্ণনা করার পরেও এই হাদিসের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে অন্তর প্রশান্তি লাভ করতে পারে না।


পর্যালোচনা

সম্মানিত পাঠক! আপনারা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন এখানে কতটুকু ফিতনা তৈরি করা হয়েছে। আলবানী সাহেব এখানে একটা যুক্তি প্রদান করেছেন নিম্নরূপ-

ذلك لان مدار اسناده يحى بن سليم وهو الطئفى وقد اختلفت اقوال ائمة الجرح والتعديل فيه-

অর্থ: ইহা এ জন্য যে, উক্ত হাদিসের সনদের মধ্যে ইয়াহইয়া বিন সুলাইম আত তাইফি নামক রাবী রয়েছেন। যার ব্যাপারে (জারহ ও তাদিল) তথা হাদিস বিশারদগণ মতানৈক্য করেছেন। (ইরওয়াউল গালিল-৫/৩০৮)

আমি বলব, সমস্ত মুহাদ্দিসীনে কেরামগণ যেখানে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, কুরআনুল কারীমের পরে বিশুদ্ধ কিতাব হল বুখারিশরীফ সেখানে ১৪০০ বৎসর পরে এসে ইমাম বুখারির হাদিস সম্বন্ধে কারো অন্তর খুশি না হওয়া শুধুমাত্র ষড়যন্ত্র বৈ কিছুই নয়।


হাদিস-২

عن ابى بن عباس بن سهل عن ابيه عن جده قال كان للنبى صلى الله عليه وسلم فى حائطنا فرس يقال له اللحيف-

অর্থ: হযরত উবাই বিন আববাস বিন সাহল (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন-আমাদের বাগানে নবী করিম (ﷺ) এর একটি ঘোড়া ছিল। যার নাম ছিল লুহাইফ। (কিতাবুল জিহাদ, হাদিস নং ২৮৫৫)

এই হাদিসটিকেও আলবানী তার কিতাবে জয়িফ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন-আলবানী সাহেবضعيف الجامع الصغير وزيادته গ্রন্থে ৪৪৮৫ নং হাদিসে বলেছেন-كان له فرس يقال له اللحيف এই হাদিসটি জয়িফ।

তাছাড়া سلسلة الاحاديث الضعيفة গ্রন্থে ৪২২৬ নং হাদিসে ইহা উল্লেখ করে বলেছেন হাদিসটি জয়িফ। অতঃপর তিনি লিখেছেন-

ابى بن عباس ضعيف مع انه من رجال  البخارى وقد اتفقوا على تضعيفه منهم البخارى نفسه فقد قال ليس بالقوى فالعجب منه كيف اخرج له هذالحديث-

অর্থ: উক্ত সনদে উল্লেখিত উবাই ইবনে আববাস জয়িফ। যদিও তিনি ইমাম বুখারির রিজাল বা বর্ণনাকারী। এ ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে যে, তিনি জয়িফ। স্বয়ং বুখারিও বলেছেন তিনি শক্তিশালী নয়। অতএব আশ্চর্যের ব্যাপার হল ইমাম বুখারি কেমন করে এ বর্ণনাকারীর কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করলেন। (সিলসিলাতু দ্বায়িফাহ পৃষ্ঠা-২৩৬)

সুপ্রিয় পাঠক! কি বুঝলেন? আলবানী সাহেব ইমাম বুখারির উপর অভিযোগ করলেন যে, ইহা অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার যে, ইমাম বুখারি কিভাবে উক্ত রাবীর কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করলেন ?

আমি বলতে চাই, ইমাম বুখারির উপর এ ধরনের অভিযোগ শুধুমাত্র কুচক্রি মহলই করতে পারে। ইহা সুস্পষ্ট ষড়যন্ত্রের শামিল।


১৩.নবীজির মুহাব্বত ঈমানের মূল এটা নিয়ে বিভ্রান্তি


আল্লাহতা’য়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের সাথে সাথে তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহর ভালবাসা লাভ করার একমাত্র উপায় হল তার রাসূলকে মুহাববত করা। তাঁর অনুস্মরণ, অনুকরণ করা। এ ব্যাপারে সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল প্রেমই ঈমান। রাসূলের মুহাববতই নাজাতের উপায়। রাসূলের ইত্তেবাই মুক্তির গ্যারান্টি। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় আমাদের দেশের একজন বক্তা আমির হামযা চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন আল্লাহর নবীকে কেউ যদি ভালবাসে আল্লাহ তাকে মাফ করে জান্নাত দান করবেন ইহা একটি বানানো কথা। তাই আমি এ ব্যাপারে কিছু আলোচনা করতে চাই। তাহলে আসুন প্রথমে আমরা তার বক্তব্যটি দেখি-


আমির হামযার বক্তব্য:

আমির হামযা বলেছেন-আল্লাহর নবীকে কেউ যদি ভালবাসে, মুহাববত করে আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে জান্নাতে দিয়ে দিবেন এই কথা কোন জায়গায় নেই। অথচ বাংলার জমিনে অনেক বক্তা ওয়াজ করেন নবীকে যদি ভালবাস আল্লাহর ভালবাসা পাওয়া যাবে। মানুষ মনে করে সবই মনে হয় কুরআন-হাদিসে আছে। অথচ এগুলো সব বানিয়ে বানিয়ে বলে।

কোন আলিম নিয়ে আসবেন নিয়ে আসেন। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি-আল্লাহর নবীকে কেউ যদি ভালবাসে আল্লাহ তাকে মাফ করে জান্নাতে দিবেন এ রকম কথা কুরআনে নেই।

(ইউটিউব থেকে সংগৃহীত)


পর্যালোচনা

সম্মানিত পাঠক! আমির হামযা সাহেবের বক্তব্যটি সুস্পষ্ট। সুতরাং ইহা আর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন আল্লাহর নবীকে মহববত করলে আল্লাহর মহববত পাওয়া যাবে কিংবা আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন ইহা কুরআন-হাদিসে কোথাও নাই। বরং এগুলো সম্পূর্ণ বানানো কথা।

তাহলে আসুন আমরা কুরআন ও হাদিস থেকে এ ব্যাপারে কিছু প্রামাণিক আলোচনা করি। আল্লাহতা’য়ালা সূরা আলে ইমরানে ইরশাদ করেন-

قل ان كنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله 

ويغفرلكم ذنوبكم والله غفور رحيم

অর্থ: হে নবী আপনি বলুন-যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তাহলে আমাকে অনুস্মরণ কর। যাতে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু। (আয়াত-৩১)

উক্ত আয়াতে আল্লাহতা’য়ালা স্পষ্টভাবেই বলে দিয়েছেন, যারা রাসূল (ﷺ)কে অনুস্মরণ করবে আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসবেন। এখানে তারা প্রশ্ন তোলেন-উক্ত আয়াতে তো আল্লাহতা’য়ালা রাসূল (ﷺ)কে মুহাববত করার কথা বলেননি। বরং বলেছেন অনুস্মরণ করার কথা।

আমি বলব, এতে কোন দন্দ্ব নেই। অনুস্মরণ তো তাকেই করা হয় যাকে মুহাববত করা হয়। ভালবাসা ছাড়া অনুকরণ হয় না। যখন আপনি রাসূল (ﷺ)কে প্রাণের চেয়ে বেশি মুহাববত করবেন তখনই দেখবেন তার সুন্নাত, তাঁর আমল, তাঁর চাল-চলন কথা-বার্তা সবকিছু অনুস্মরণ করতে আপনি প্রস্ত্তত, এর নামই ভালবাসা।

এবার আসুন আমরা এ ব্যাপারে কয়েকটি হাদিস দেখি। ইমাম বুখারি রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় সহিহ বুখারিশরীফে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন-باب حب الرسول من الايمان অর্থ: রাসূল (ﷺ) এর মুহাববতই ঈমান। (কিতাবুল ঈমান)

এই অধ্যায়ে ইমাম বুখারি রহমতুল্লাহ আলাইহি ২টি হাদিস বর্ণনা করেছেন-


প্রথম হাদিস:

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم- قال فوالذى نفسى بيده لا يؤمن احدكم حتى اكون احب اليه من والده وولده

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) ইরশাদ করেছেন, সেই আল্লাহর কসম যার নিকট আমার প্রাণ তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি মু’মিন হতে পারবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সে আমাকে তার পিতা ও সমত্মানের চেয়ে অধিক ভাল না বাসবে। (বুখারি হাদিস নং ১৪)


দ্বিতীয় হাদিস:

عن انس قال قال النبى صلى الله عليه وسلم- لا يؤمن احدكم حتى اكون احب اليه من والده وولده والناس اجمعين-

অর্থ: হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন-তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ সে আমাকে তার পিতা, সমত্মানাদি ও সকল মানুষের চেয়ে অধিক ভাল না বাসবে। (বুখারি-হাদিস ১৫, মুসলিম, হাদিস নং ৪৪)

দেখুন আরো একটি হাদিস: 

عن انس رضى الله تعالى عنه ان رجلا سأل النبى صلى الله عليه وسلم عن الساعة- فقال متى الساعة؟ قال وماذا اعددت لها؟ قال لا شئ الا انى احب الله ورسوله صلى الله عليه وسلم فقال انت مع من احببت- قال انس فمافرحنا بشئ فرحنا بقول النبى صلى الله عليه وسلم انت مع من احببت- قال انس فانا احب النبى صلى الله عليه وسلم وابا بكر وعمر- وارجو ان اكون معهم بحبى اياهم- وان لم اعمل بمثل اعمالهم-

অর্থ: হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী করিম (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রাসূল!  কিয়ামত কবে হবে? রাসূল (ﷺ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন-তুমি কিয়ামতের জন্য কি প্রস্ত্তত করে রেখেছ? তখন সে ব্যক্তি বললেন-আমার কোন কিছুই নেই শুধুমাত্র আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)কে ভালবাসি। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন-তুমি যাকে মহববত কর তার সাথেই থাকবে। আনাস বলেন-রাসূলেপাক (ﷺ) এর জবান মোবারক থেকে একথা শুনে (তুমি যাকে মুহাববত করবা তার সাথে থাকবে) যত খুশি হয়েছি, ইতোপূর্বে কোন বিষয়ে এত খুশি হইনি।

অতঃপর আনাস বলেন-আমিও নবী করিম (ﷺ) আবু বকর (رضي الله عنه) ও উমর (رضي الله عنه)কে মুহাববত করি। এবং আশা রাখি এই মুহাববতের কারণেই কিয়ামতের দিন আমি তাদের সাথে থাকব। যদিও তাদের আমলের মত আমার কোন আমল নাই। (বুখারি ৩৬৮৮, মুসলিম-২৬৩৯)

উক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে, রাসূল (ﷺ) এর ভালবাসাই হল আল্লাহর ভালবাসা। রাসূল প্রেমেই রয়েছে মুক্তি। এতেই মিলবে জান্নাত।


শেষ কথা

পরিশেষে মহান আল্লাহর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া যার মেহেরবাণিতে আমি অধম কিতাবটির শেষ প্রান্ত এসে পৌঁছেছি। যশ, খ্যাতি, কিংবা মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর জন্য নয়, শুধুমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) এর রেজামন্দি হাসিলের জন্য আমার এ প্রচেষ্টা। তাই আবারো ফরিয়াদ যদি কোথাও কোন ভুলত্রম্নটি পরিলক্ষিত হয় তাহলে ইসলাহের নিয়তে আমাকে অবহিত করবেন। হে আল্লাহ তুমি আমাদের ঈমান-আমলকে হিফাযত কর। সিরাতে মুসত্মাকিমের উপর পরিচালিত কর। আমিন।


তথ্যসূত্র


১.     আল কুরআনুল কারীম। 

২.     তাফসিরে ইবনুল কাসির-হাফিজ ইবনে কাসির।

৩.     তাফসিরে কুরতুবি-ইমাম কুরতুবি।

৪.     তাফসিরে তাবারি-ইমাম আবু জাফর আত তাবারি।

৫.     তাফসিরে রুহুল বয়ান-আল্লামা ইসমাইল হাক্কী।

৬.     তাফসিরে কবীর-ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি।

৭.     তাফসিরে বায়দ্বাবী-নাসির উদ্দিন বায়দ্বাবী।

৮.     তাফসিরে কাশশাফ-জারুল্লাহ যামাখশারী।

৯.     সহিহ বুখারি-ইমাম বুখারি।

১০.     সহিহ মুসলিম-ইমাম মুসলিম।

১১.  সুনানে তিরমিযি-ইমাম তিরমিযি।

১২.  সুনানে আবু দাউদ-ইমাম আবু দাউদ।

১৩.  ইবনে মাজাহ-ইমাম ইবনে মাজাহ।

১৪.  শুয়াবুল ঈমান-ইমাম বায়হাকি।

১৫.  মুসনাদ-ইমাম আহমদ বিন হাম্বল।

১৬.  মুসত্মাদরাক-ইমাম হাকিম।

১৭.  মাওরিদুল যামআন-ইবনে হিববান।

১৮.  তাবরানী-ইমাম তাবরানী।

১৯.  আল মু’জামুল আওসাত-ইমাম তাবরানী।

২০.  ইরওয়াউল গালিল-নাসির উদ্দিন আলবানী।

২১.  মুশকিলুল আসার-ইমাম তাহাবি।

২২.  ফাতহুল বারী-ইবনে হাজার আসকালানী।

২৩.  তারিখ-ইমাম বুখারি।

২৪.  খাসাইসুল কুবরা-জালাল উদ্দিন সুয়ুতি।

২৫.  মাকাসিদুল হাসানা-ইমাম সাখাভী।

২৬.  আল আসমা ওয়াস সিফাত-ইমাম বায়হাকী।

২৭.  আল ইসাবাহ-ইবনে হাজার আসকালানী।

২৮.  তাহযিবুত তাহযীব-ইবনে হাজার আসকালানী।

২৯.  তাহযিবুল কামাল-জামাল উদ্দিন আবুল হাজ্জাজ আল মাযি।

৩০. বাদাইউস সানায়ী-আলা উদ্দিন আবু বকর বিন মাসউদ আল   হানাফি

৩১.  মাজমুয়া ফাতাওয়া-ইবনে তাইমিয়া।

৩২.  শরহে মুসলিম-ইমাম মুহিউদ্দিন নববী।

৩৩.  ফাতাওয়া আল লাজনাহ-শেখ আহমদ বিন আব্দুর রাজ্জাক।

৩৪.  সিলসিলাতুল আহাদীস আস সাহিহাহ-আলবানী।

৩৫.  সিলসিলাতুল আদীস আদ দ্বায়ীফাহ-আলবানী।

৩৬. ইসলাম, সুওয়াল ও জুওয়াব-শেখ মুহাম্মদ সালিহ আল     মুনজিদ।

৩৭.  শরহে আলফিয়াতু ইবনু মালিক-শেখ আল উসাইমিন।

৩৮.  জাল হাদীসের কবলে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) (দ.) সালাত-মুজাফফর বিন মুহসিন।  

৩৯.  মুসনাদ-আবু ইয়ালা।

৪০.     দ্বায়িফুল জামি আস সাগির-নাসির উদ্দিন আলবানী।





সমাপ্ত



 
Top