ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম এক বিতর্কের নাম হাফেয ইবনে তায়মিয়াহ।


শায়খুল ইসলামি ওয়াল মুসলিমীন,ওয়াফাদার আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামআ,ইমামুল হারামিশ শারিফ,আল মুফতিয়্যী বিলাদিল্লাহিল হারাম,শায়খুল ফুক্বাহাই ওয়াল মুহাদ্দিসীন ইমাম আবুল আব্বাস শিহাবউদ্দীন আহমদ ইবনে হাজার আল-হায়তামী আল-মিসরী আল-মাক্কী আশ-শাফেয়ী (রফিআল্লাহু দারাজাতিহী) স্বীয় বিখ্যাত 'ফাতাওয়া হাদিসীয়্যাহ' তে হাফেয ইবন তায়মিয়াহ সম্পর্কে উল্লেখ করেন—

إبن تيمية عبد خذله الله وأضله، وأغناه وأضمه وأذله، وبذلك، صرح الأئمة الذين بينوا فساد أخواله وكذب أقواله، ومن أراد ذلك؛ فعليه بمطالعة كلام الإمام المجتهد المتفق على إمامته وجلاليه وبلوغه مرتبة الاجتهاد أبي الحسن الشبكي، وولده التاج، والشيخ الإمام العز بن جماعة، وأهل عضرهم، وغيرهم من الشافعية والمالكية والحنفية. ولم يقصر اعتراضه على متأخري الصوفية بل اعترض على مثل عمر بن الخطاب، وعلي بن أن طالب رضي الله عنهما. والحاصل أن لا يقام لكلامه وزن؛ بل يرمي في كل وغر وخزن، ويعتقد فيه أنه مبتدع ضال ومضل؛جاهل غال عامله الله بعدله، وأجارنا من مثل طريقته وعقيدته وفعله؛ آمين.

❝ত্বকিউদ্দীন ইবনে তায়মিয়াহ এমন এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ ﷻ নিরাশ এবং গোমরাহ করেছেন। আল্লাহ ﷻ সত্য দেখার ও শোনার শক্তি তার কাছ থেকে থেকে কেড়ে নিয়েছেন। আল্লাহ ﷻ তাকে অপমান লাঞ্ছনার অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করেছেন। তার গোমরাহি এবং ভ্রান্তি সম্পর্কে অনেক শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম সুস্পষ্ট মতামত ব্যক্ত করেছেন।যে ব্যক্তি তার অপকর্ম ও বদ-আক্বীদা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী তার উচিত জগদ্বিখ্যাত আলেমগণের রচিত গ্রন্থাবলী অধ্যয়ন করা।যেমন: আল-ইমাম আল মুজতাহিদ আল মুজাদ্দিদ আল্লামা আবুল হাসান ত্বকীউদ্দিন আস-সুবকী শাফেয়ী رضي الله عنه ،উনার সুযোগ্য পুত্র আল্লামা ইমাম তাজুদ্দীন আস-সুবকী رحمة الله تعالى عليه ،আল্লামা শায়খ ইযয-উদ্দীন ইবনে জামাআহ رحمة الله تعالى عليه. এছাড়াও তাঁদের সমসাময়িক হানাফী,মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণের গ্রন্থাবলীও অধ্যয়ন করা যেতে পারে।
ইবনে তাইমিয়া কেবল তার সমসাময়িক আউলিয়ায়ে কেরাম ও সুফিয়ায়ে কেরামের বিরুদ্ধেই আপত্তি করেননি।বরং তিনি সায়্যিদুনা হযরত ফারুকে আযম رضي الله عنه এবং সায়্যিদুনা আলী رضي الله عنه এর বিরুদ্ধেও চরম আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন।
সারকথা হল,ইবনে তাইমিয়ার অযাচিত কথাবার্তার কোন মানদণ্ড এবং ভিত্তি নেই।বরং তার কথাগুলো কূপ-আস্তাকুড়ে নিক্ষেপযোগ্য। তার ব্যাপারে আমাদের এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে,তিনি একজন বিদআতী,নিজেই পথভ্রষ্ট,অপরকে ভ্রষ্টকারী এবং সীমালঙ্গনকারী।
আল্লাহ ﷻ তাকে এসবের উপযুক্ত কর্মফল দিন এবং আমাদেরকে তার পথ ও মত থেকে রক্ষা করে তাঁর ﷻ আশ্রয়ে রাখুক।❞
(১১৪পৃষ্ঠা) 

……… ……… ……… ………… ………

❝ইবনে তাইমিয়া অসংখ্য মাসআলায় হক্বপন্থি আলেমগণের বিরোধিতা করেছেন।ইজমায়ে উম্মাতের সাথে যে সকল মাসআলায় বিরোধিতা করেছেন,সেগুলো ইমাম আল্লামা তাজুদ্দীন সুবকী رحمة الله تعالى عليه ও অন্যান্য আলেমগণ চিহ্নিত করেছেন। ইবনে তাইমিয়া যে সকল বিষয়ে ইজমার বিরোধিতা করেছেন, সেগুলোর কয়েকটি নিয়ে উল্লেখ করা হল:
(দারুল মা'আরিফা)





➤স্ত্রীলোকের পিরিয়ডের সময়ে কিংবা যে তুহুরে (طهر) স্ত্রীর সাথে সহবাস হয়েছে সে সময়কালে তালাক দিলে সেই তালাক কার্যকরী হয়না।

➤কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ছেড়ে দিল,পরবর্তীতে ওই নামাযের কাযা আদায় করা ওয়াজিব নয়।

➤মহিলারা পিরিয়ডকালীন সময়ে খানায়ে কা'বা তাওয়াফ করতে পারবে।তাতে কোন অসুবিধা নেই।

➤স্ত্রীকে এক সাথে তিন তালাক প্রদান করলে শুধুমাত্র এক তালাকই পতিত হবে।

➤তরল জাতীয় বস্তু যথা তেল ইত্যাদিতে ইঁদুর ইত্যাদি পড়ে মরলেও তা নাপাক হবেনা।

➤স্ত্রী সহবাসের পর গোসল ব্যতীত রাত্রে নফল নামায পড়তে পারবে,যদিও সে নিজ শহরে অবস্থান করে(অর্থাৎ মুসাফির না হয়)।

➤ইজমা তথা উম্মাতের ঐক্যমতের বিরোধিতাকারীকে কাফির,ফাসিক আখ্যায়িত করা যাবেনা।

➤আল্লাহ্ ﷻ সত্তায় পরিবর্ধন-পরিবর্তন(হাওয়াদেছ) হয়।

➤আল্লাহ্ ﷻ আমাদের মত দেহ আছে।

➤আল্লাহ ﷻ জন্যও ডান-বাম-উঁচু-নিচু ইত্যাদি দিক রয়েছে।

➤আল্লাহ ﷻ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হন। 

➤আল্লাহ ﷻ আরশের সমান আকারের মত।বড়ও নয় এবং ছোটও নয়।

➤তিনি আরো বলেন যে, জাহান্নাম এক সময় ধ্বংস ও বিলীন হয়ে যাবে।

➤আম্বিয়ায়ে কেরাম عليهم السلام মাসুম বা পাপমুক্ত নন। 

➤রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর বিশেষ কোন সম্মান ও মর্যাদা নেই।

➤ রাসুলুল্লাহ ﷺ কে ওসীলা বানানো নাজায়েয

➤রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা হারাম ও গোনাহর কাজ। 

➤রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফরকালীন সময়ে নামায কসর করা যাবেনা। যেহেতু এ সফর পাপকাজের সফর।

➤যারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করবে তারা কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হবে।❞
(১১৬পৃষ্ঠা)
(নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)


    হাফেয ইবনু তায়মিয়ার জ্ঞানের প্রশংসা করেননি এরূপ আকাবির কম পাওয়া যাবে। কিন্তু তার ভ্রান্ত আক্বিদাগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার কমবেশি সবাই ছিলেন।তার আক্বিদা বর্তমানে সালাফীরা গ্রহণ করেছে।আর এর প্রভাব ধীরে ধীরে জেঁকে বসতে শুরু করেছে তরুণ গবেষকদের মাঝে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদেরকে বদ-মাযহাবী এবং বদ-আক্বিদাধারী হতে পানাহ দিন!
 
Top