হযরত আলী (রাঃ) এর যবানিতে হযরত উমর (রাঃ)


হযরত আলী (رضي الله عنه) এর যবানিতে হযরত উমর (رضي الله عنه)


খলিফাতুল মুসলীমিন হযরত উমর (رضي الله عنه) এর উপর আক্রমণ হয় জিলহজ্জ মাস বাকী থাকতে ৩-৪ দিন পূর্বে এবং উনার দাফন কার্য সম্পন্ন হয় ২৪ হিজরী সনের ১লা মুহাররাম। 

এ তথ্যগুলো পাওয়া যাবে—

➤আল-ইবার ফি খবর মিন গাবার, ১/২০ (দারুল কুতুব ইলমিয়াহ)

➤আল্লামা আবু মুহাম্মাদ আফিফ উদ্দীন মারজানি (৭৭০হি.), বাহজাতুন নুফুসি ওয়াল আসরার, ১/৪২৮ (দারুল কুতুব ইলমিয়াহ)

➤ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আ'লাম আন-নুবালা, সিয়ারু খুলাফাইর রাশিদীন, ১৬৪পৃঃ। (মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ)

➤ইমাম সুয়ুতি, তারিখুল খুলাফা প্রভৃতি কিতাবে। 


হযরত উমর (رضي الله عنه) ছিলেন ইসলামের ইতিহাসের এক কিংবদন্তি নাম। উনার ইসলাম গ্রহণ মুসলিম পরিমণ্ডলে এক যুগান্তকারী ঘটনা ছিলো। যেমনটাঃ


ইমাম হাকেম নিসাপুরী বোখারী-মুসলিমের শর্তে এই হাদীস নিরূপণ করেন যে (৩/৮৪)—


عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ لَمَّا أَسْلَمَ عُمَرُ نَزَلَ جِبْرِيلُ (عليه السلام) فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ (ﷺ) لَقَدِ اسْتَبْشَرَ أَهْلُ السَّمَاءِ بِإِسْلاَمِ عُمَرَ


—ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ❝উমার ইসলাম গ্রহণ করলে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করে বলেন, হে মুহাম্মাদ (ﷺ)! হযরত উমরের (رضي الله عنه) ইসলাম কবূল করার সুসংবাদে ঊর্ধ্ব জগতের বাসিন্দারা আনন্দিত হয়েছেন। ❞

[ইমাম ইবন মাজাহ, আস-সুনান, মুকাদ্দিমাহ, بَاب فَضْلِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ]


বর্তমান সময়কালে তাফজীলি প্রবণতা প্রচন্ডরকম বেড়ে যাওয়ায় আমি ভাবলাম উমর (رضي الله عنه) এর ব্যাপারে এমন কিছু মানাক্বিব সংকলনের চেষ্টা করি, যেগুলো খোদ হযরত আলী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন। যেমনঃ


➤➤'তারিখুল খুলাফা' ২০৭ পৃষ্ঠায় ইমামুল মুহাদ্দিসীন জালালুল ইলম ইমাম জালালউদ্দিন সুয়ুতি কুদ্দিসাস সিররুহ বলেন—


روىٰ عنه: عثمان وعلي......


— হযরত উমর (رضي الله عنه) হতে যারা হাদীস বর্ণনা করেছেন তারা হলেন: হযরত উসমান (رضي الله عنه), হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু..... প্রমুখ। 


➤➤হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুল কারীম বলেন, 


❝আমরা হযরত উমর (رضي الله عنه) ব্যতীত অন্য কারো নাম বলতে পারবো না যিনি প্রকাশ্যে হিজরত করেছেন। হিজরতের সময় তিনি গলায় তলোয়ার এবং কাঁধে ধনুক ঝুলিয়ে হাতে কয়েকটি তীর নিয়ে বাইতুল্লাহ শরীফে যান, সেখানে কুরাইশ নেতৃবৃন্দ বসে ছিল। তিনি সাত বার তাওয়াফ করে মাকামে ইবরাহীমে দু'রাকাত নামায পড়েন। অতঃপর কুরাইশ নেতৃবৃন্দের নিকট এসে পৃথক পৃথকভাবে বললেন, তোমাদের মুখ কালিমালিপ্ত হোক। যে মাকে ছেলে হারা, সন্তানকে এতিম, স্ত্রীকে বিধবা করতে চায় সে যেন আমার সাথে লড়াই করে, কিন্তু তার ছায়া মাড়ানোর সাহসটুকুও কারো ছিল না। ❞

[ইমাম ইবনে আসাকির, তারিখে দামেষ্ক, ৪৪/৫১-৫২পৃষ্ঠা]


➤➤হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু হতে আরো বর্ণিত আছে, তিনি বলেন—


كنا أصحاب محمد (ﷺ) لا نشك أن السكينة تنطق على لسان عمر


—❝আসহাবিন্নাবীয়্যী (ﷺ) (সাহাবীগণ) এর মধ্যে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, উমর (رضي الله عنه) এর যবানে আল্লাহ প্রশান্তি দিয়েছেন। ❞

[ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী রহ., মাত্বালিবুল আলিয়া, ৩৮৮৩ নং হাদীস]


➤➤আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু হযরত উমর (رضي الله عنه) এর ব্যাপারে বলেন, 


إذا ذكر الصالحون فحيهلا بعمر


— ❝তোমরা যখন আল্লাহর নেক বান্দাদের আলোচনা করবে তখন তোমাদের আলোচনাকে উমরের (رضي الله عنه) আলোচনা দ্বারা অলংকৃত করে নিবে। ❞

[ইমাম তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত, ৫৫৪৯ নং হাদীস]


➤➤হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) বলেন, যখন সৈয়্যদুনা উমর (رضي الله عنه) শাহাদাত বরণ করলেন, হযরত আলী (رضي الله عنه) এসে বললেন, 


ما من أحد أحب إلي أن ألقى الله بما في صحيفته بعد صحيفة النبي (ﷺ) من هذا المسجى


— ❝আমার নিকট রসুল (ﷺ) এঁর পর কাপড়ে ঢাকা এই ব্যক্তিটির (হযরত উমর (رضي الله عنه)) আমল অপেক্ষা পছন্দনীয় অন্য কারো আমল ছিল না। ❞


➤➤মওলায়ে কায়েনাত আলী মুরতাযা (رضي الله عنه) হযরত উমর (رضي الله عنه) সম্পর্কে বলেন—


ملىء عزما وحزما وعلما ونجدة


— ❝দৃঢ়সংকল্প! সমুদ্রের ন্যায় প্রজ্ঞা, সাহসিকতা এবং শৌর্যকে হযরত উমর (رضي الله عنه) এর মধ্যে প্রবিষ্ট করানো হয়েছে। ❞

[ইমাম ইবনু আসাকির, প্রাগুক্ত, ৩০/৩৮৬]


➤➤মওলাল মুমিনীন আলী ইবন আবি ত্বালিব (رضي الله عنه), যার শানে সর্বাপেক্ষা কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে, তিনি নিজে বলেনঃ


ان في القرآن لرأيا من رأي عمر


— ❝কুরআনের রায়সমূহ, যা আল্লাহ দিয়েছেন তার অধিকাংশই হযরত উমর (رضي الله عنه) এর রায়ের সাথে মিলেছে। ❞


ইমাম জালালউদ্দিন আব্দুর রহমান সুয়ুতি রহ. 'তারিখুল খুলাফা' গ্রন্থে 'ফাদ্বাইলুল ইমামিন' এর বরাতে একুশটি বিষয় উল্লেখ করেছেন, যেখানে আল্লাহ ﷻ হযরত উমর (رضي الله عنه) এর সাথে ঐকমত্য করে আয়াত নাযিল করেছেন। 


➤➤মাওলাল মুমিনীন আলী (رضي الله عنه) একবার রমাদ্বান মাসে মসজিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেখানে তিনি তারাবীহ আদায়কারী মুসল্লিদের দ্বারা মসজিদে আলো জ্বলতে দেখলেন। তখন বললেন, 


نوّر الله على عمر في قبره كما نوّر علينا مسجدنا


— ❝আল্লাহ ﷻ হযরত উমর (رضي الله عنه) এর মাজারকে নূরান্বিত করুন। উনি আমাদের মসজিদগুলোকে নূরান্বিত করেছেন (জামাত সহকারে তারাবীহর মাধ্যমে)। ❞


➤➤হযরত মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়া (رضي الله عنه) স্বীয় পিতা আলী (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞেস করেছিলেন—


أَيُّ النَّاسِ خَيْرٌ بَعْدَ رَسُوْلِ اللهِ (ﷺ) 


 —রাসুলে আরাবী (ﷺ) এঁর পর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ কে?তখন মাওলা পাক বললেন, ❝হযরত আবুবকর (رضي الله عنه) এবং এরপর হযরত উমর (رضي الله عنه)। ❞


➤➤সহিহ বুখারীতে উল্লেখ আছে, হযরত উমর (رضي الله عنه) এর লাশ মুবারকের সামনে দাঁড়িয়ে হযরত আলী (رضي الله عنه) দোয়া করেছেন—


مَا خَلَّفْتَ أَحَدًا أَحَبَّ إِلَيَّ أَنْ أَلْقَى اللهَ بِمِثْلِ عَمَلِهِ مِنْكَ وَايْمُ اللهِ إِنْ كُنْتُ لَاظُنُّ أَنْ يَجْعَلَكَ اللهُ مَعَ صَاحِبَيْكَ وَحَسِبْتُ إِنِّيْ كُنْتُ كَثِيْرًا أَسْمَعُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ ذَهَبْتُ أَنَا وَأَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرُ وَدَخَلْتُ أَنَا وَأَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرُ وَخَرَجْتُ أَنَا وَأَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرُ


—❝হে উমর (رضي الله عنه)! আমার জন্য আপনার চেয়ে বেশি প্রিয় এমন কোন ব্যক্তি আপনি রেখে যাননি, যার কালের অনুসরণ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করব। আল্লাহর কসম!আমার এ বিশ্বাস যে আল্লাহ ﷻ  আপনাকে আপনার সঙ্গীদ্বয়ের সঙ্গে রাখবেন। আমার মনে আছে, আমি অনেকবার নবী (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, "আমি (ﷺ) আবু বকর ও উমর গেলাম। আমি (ﷺ), আবু বকর ও উমর প্রবেশ করলাম এবং আমি (ﷺ), আবু বকর ও উমর বাহির হলাম ইত্যাদি। (رضي الله تعالى عنهم )❞


➤➤ইমামুল আইম্মাহ সৈয়্যদুনা জা'ফর আস-সাদিক্ব ইবনে ইমাম মুহাম্মাদ আল-বাক্বির (رضي الله عنه) বলেন—


أنا بريء ممن ذكر ابا بكر وعمر إلا بخير


— ❝আমি সে ব্যক্তির উপর রুষ্ট হই, যে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এবং হযরত উমর (رضي الله عنه) এর স্মরণ প্রশংসার জন্য করেনা (অর্থাৎ নিন্দার জন্য করে)। ❞

[ইমাম ইবনু আসাকির, প্রাগুক্ত, ৪৪/৩৮৭]


হযরত উমর রাঃ এবং হযরত আলী রাঃ এর মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক দেখুন মুফতি রাশিদ মাহমুদ রেযভী হাফিযাহুল্লাহর এই ইলমি আলোচনাটিতে, যেখানে উনি শিয়া কিতাব হতে দলিল দিয়েছেন।


হযরত উমর ফারুক (رضي الله عنه) এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করে চলা এযুগে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের তাওফিক আতা করুন। 

 
Top