নামাযের ভিতরে সালাত-সালাম পাঠ করার হেকমত

নামাযে   তাশাহহুদ  পাঠ  করাকালীন   অবস্থায়  আল্লাহর হাবিবকে     সালাম     ও     দরূদে     ইব্রাহিম     পাঠ     করার  হেকমত।

১.  বিশ্ববিখ্যাত   মুহাদ্দিস  শাহ  ওলী  উল্লাহ    আলাইহির রহমত   তদীয়   حجة   الله  البالغة     নামক  কিতাবের  ২য় জিলদের ২৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
ثم  اختر  بعده  السلام   على   النبى   تنويها  بذكره  واثباتا للاقرار برسالته واداء لبعض حقوقه-

অর্থাৎ   তিনি    বলেন,   অতঃপর   (নামাযে  আত্তাহিয়্যাতু পাঠ   করাকালীন   অবস্থায়)   আল্লাহর   হাবিব   সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লামার প্রতি সালাম পেশ করার বিধান এ   জন্য  দেওয়া  হয়েছে,  যেন  হাবিবে  খোদার জিকির তা’জিম   বা   সম্মানার্থে    অনুষ্ঠিত     হয়    এবং   নামাযের  ভিতরে   সালাম   পেশ   করার   দরুন   তাঁর   রেসালাতের  স্বীকারোক্তি হয়ে যায়। এতে আল্লাহর  হাবিবের  কিছুটা হক   আদায়   হয়ে   যায়।  অর্থাৎ  নামাযী  যে    সত্যিকার  হাবিবে খোদার রেসালাতের ঈমান এনেছে তার  প্রমাণ এবং তার    ঈমান যেন কলবে অঙ্কিত  হয়ে  যায়।  এতে হাবিবে খোদার কিছুটা হক আদায় হয়ে যায়।

২.      আল্লামা      ইমাম      গাজ্জালী        আলাইহির      রহমত  এহইয়ায়ে উলুমিদ্দিন   কিতাবের  ১/৯৯ পৃষ্ঠায়   বাতেনি শর্তের বয়ানে উল্লেখ করেন,

‘তোমার    কলব     বা   অন্তরে   নবী    সাল্লাল্লাহু    আলাইহি ওয়াসাল্লামকে  এবং  তাঁর  সুরত  মোবারককে  উপস্থিত  জানবে        এবং        বলবে          আস        সালামু        আলাইকা আইয়ুহান্নাবীউ   ওয়া   রাহমাতুল্লাহহি   ওয়া   বারাকাতুহু’  এমতাবস্থায় তুমি বিশ্বাস  রাখবে  যে তোমার এ সালাম হাবিবে  খোদার  নিকট  পৌঁছার  সাথে  সাথে  তার  পক্ষ  থেকে   তোমার কাছে  উত্তম সালামের  জওয়াব আসছে এবং তুমি এ মহান নেয়ামতের মালিক হয়েছ,
واحضر   فى   قلبك   النبى   صلى   الله   عليه   وسلم   وشخصه  الكريم وقل سلام عليك ايها النبى ورحمة الله وبركاته ولتصدق املك فى انه يبلغه ويرد عليك ما هوا وفى منه  احياء-

দরূদ-সালাম     পাঠ     করাকালীন     অবস্থায়     এ     ঈমান  রাখবেন যেন হাবিবে খোদা দেখেন ও শুনেন
==================
এ প্রসঙ্গে আল্লামা শেখ আব্দুল হক  মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির  রহমত   তদীয়   ‘মাদারিজুন   নবুয়ত’   নামক কিতাবের ২/৭৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,

ذکر   کن   اورا  ودرود  بفرست   بروی    صلی  اللہ  علیہ  وسلم  وباش درحال ذکرگویا  حاضراست پیش تودر حالت حیات ومی  بینی   تو  اورا   متادب   باجلال  وتعظیم  وہمت    وحیا بدانکہ وے صلی اللہ علیہ وسلم می بیند ومی شنود کلام ترا زیراکہ وی  متصف است بصفات اللہ تعالی ایکہ  از   صفات الھی آنست کہ انا جلیس من ذکرنی-

ভাবার্থ:   নূর    নবী   সাল্লাল্লাহু     আলাইহি   ওয়াসাল্লামকে স্মরণ   করুন,  তাঁর   প্রতি  দরূদ   পেশ    করুন।  আল্লাহর  হাবিবের  জিকির  বা  তাঁর  প্রতি  দরূদ  ও  সালাম  পেশ  করার   সময়    এমনভাবে    অবস্থান   করুন,    যেন     তিনি আপনার  সামনে  হায়াতে  জিন্দেগিতে  হাজির  আছেন,  আর আপনি তাঁকে  দেখছেন। সুতরাং দরূদশরীফ পাঠ করাকালীন   আল্লাহর   হাবিবকে   সৃষ্টির   মধ্যে      সর্বোচ্চ শানের  অধিকারী  ঈমান  রেখে আদব,  মর্যাদা ও   শ্রদ্ধা  অক্ষুন্ন রেখে ভীত  ও  লজ্জিত   থাকুন  এবং  এ  আক্বিদা  রাখুন      যে      হুজুর      সাল্লাল্লাহু      আলাইহি      ওয়াসাল্লাম  আপনাকে      দেখছেন,     আপনার     কথাবার্তা    শুনছেন। কেননা    তিনি    খোদার   গুণাবলীতে    গুণান্বিত।   আল্লাহ তা’য়ালার   একটি   গুণ    হচ্ছে,   আমি   (আল্লাহ)   আমার  জিকিরকারীদের সঙ্গে সহাবস্থান করি।

মুদ্দাকথা হলো আল্লাহর হাবিবের প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ    করাকালীন     অবস্থায়    আদবের    সাথে      হাবিবে  খোদার    চেহরায়ে    আনোয়ারের    দিকে    খেয়াল    করে  আদবের  সাথে বসে অথবা   দাঁড়িয়ে দরূদ ও   সালাম  পেশ করবেন।

একাদশ  শতাব্দীর  দশম মুজাদ্দিদ  আল্লামা মুল্লা   আলী ক্বারী আলাইহির রহমত (ওফাত ১০১৪ হিজরি) তদীয়, مرقاة   شرح   مشكوة   ‘মিরকাত   শরহে   মিশকাত’   নামক  কিতাবের পঞ্চম  জিলদের ২৪৫ পৃষ্ঠা باب الحشر ‘বাবুল হাশর’ অধ্যায়ে উল্লেখ করেন,
(ويكون  الرسول) اى  رسولكم ... والمراد  محمد  صلى  الله عليه  وسلم    (عليكم  شهيدا)  اى   ...  وناظرا  لافعالكم ومزكيا لاقوالكم-

ভাবার্থ: হাশরের ময়দানে পূর্বেকার নবীগণের বেঈমান উম্মতগণ    তাদের    নিকট   দ্বীনের    দাওয়াত   পৌঁছাননি বলে    আল্লাহর    দরবারে   অভিযোগ   উত্তাপন    করলে,   আল্লাহতা’য়ালা নবীগণকে তাদের দাওয়াত পৌঁছানোর দাবির পক্ষে সাক্ষী পেশ করতে আদেশ করলে নবীগণ হযরত        মোহাম্মদ        মোস্তফা        সাল্লাল্লাহু        আলাইহি  ওয়াসাল্লাম  ও  তাঁর  উম্মতগণকে  সাক্ষী   হিসেবে   পেশ করবেন।     উম্মতে   মোহাম্মদীগণ   সম্মানিত   নবীগণের  পক্ষে  সঠিকভাবে  দাওয়াত  পৌঁছানোর    সাক্ষ্য    প্রদান  করলে, আপত্তি উত্থাপন হবে,   তোমাদেরকে এ বিষয়ে কে    শিক্ষা    দিয়েছেন?     উত্তরে   উম্মতে    মোহাম্মদীগণ বলবেন, আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এ সংবাদ দিয়েছেন এবং  আমরা  তা  একিন  বা  বিশ্বাস  করে  সাক্ষ্য  প্রদান  করলাম  যে,  পূর্বেকার  নবীগণ  উম্মতের  নিকট  দ্বীনের  দাওয়াত সঠিকভাবে পৌঁছিয়েছেন।

উম্মতের  এ  সাক্ষী   প্রত্যক্ষদর্শী  সাক্ষী  নয়  বরং  শোনা  একিনী সাক্ষী। এ হল উম্মতে মুহাম্মদীর شهيد ‘শাহীদ’ বা شهداء ‘শুহাদা’ হওয়ার ভাবার্থ।

আল্লাহ তা’য়ালার নূরানী ফরমান- ويكون الرسول عليكم شهيدا     নূর      নবী      সাল্লাল্লাহু      আলাইহি       ওয়াসাল্লাম তোমাদের    উপরে   অর্থাৎ    উম্মতে   মুহাম্মদীর   সাক্ষীর উপর   সাক্ষী।    সুতরাং   নবীর   সাক্ষী   হল     প্রত্যক্ষদর্শী  সাক্ষী।

মুল্লা   আলী     ক্বারী-   ويكون   الرسول    عليكم    شهيدا   এ আয়াতে কারীমার তাফসিরে বলেন,
ناظرا لافعالكم مزكيا لاقوالكم-

হাবিবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম উম্মতের আমলসমূহ   দেখেন    এবং  হাশরের  ময়দানে   উম্মতের সাক্ষীকে     সার্টিফাই    করবেন,     সঠিক    বলে    সত্যায়ন করবেন।          এককথায়        নবী        সাল্লাল্লাহু         আলাইহি  ওয়াসাল্লাম      খোদা       প্রদত্ত       ক্ষমতা      বলে      উম্মতের আমলসমূহকে দেখেন।

এ   আক্বীদার   মাসআলাকে  স্পষ্টভাবে   বর্ণনা  করেছেন দশম   শতাব্দীর    নবম   মুজাদ্দিদ   ইমাম    জালালউদ্দিন  সুয়ুতি আলাইহির রহমত (ওফাত ৯১১ হিজরি) তদীয়- الحاوى    للفتاوى    ‘আল   হাভী     লিল   ফাতাওয়া’   নামক কিতাবের ২/১৮৪ পৃষ্ঠায়  উল্লেখ করেন, النظر فى اعمال امته        আল্লাহর        হাবিব         উম্মতের         আমলসমূহকে দেখেন।

মুদ্দাকথা     হল    নবী     সাল্লাল্লাহু    আলাইহি    ওয়াসাল্লাম উম্মতের আমলসমূহ দেখেন  এবং   উম্মতের  কথাবার্তা শুনেন   এ    ক্ষমতা   নবীকে     স্বয়ং   আল্লাহতা’য়ালা   দান করেছেন।

শায়খুল মুহাদ্দিসীন   হযরত  শেখ  আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী  আলাইহির  রহমত  তদীয়  اخبار  الاخيار  مع  مكتوبات     ‘আখবারুল    আখইয়ার    মা’য়া      মাকতুবাত’  নামক      কিতাবের      ১৫৫      পৃষ্ঠা      পাদটীকায়      উল্লেখ  করেন,

وباچندیں  اختلافات  وکثرت  مذاھب  کہ  در    علماء  امت ست  یک کس رادریں مسئلہ خلافی   نیست کہ  آن     حضرت  صلی اللہ علیہ  وسلم  بحقیقت حیات بی شائبہ  مجاز وتوھم تاویل   دایم  وباقی  ست   وبر     اعمال  امت   حاضر  و   ناظر  و مرطالبان  حقیقت را ومتوجھان  آنحضرت  را مفیض ومربی ست-

উম্মতে মুহাম্মদীর ওলামাদের মধ্যে অনেক মতপার্থক্য ও  মাযহাবের   আধিক্য   সত্ত্বেও   এ    মাসআলায়  কারো  দ্বিমত নেই  যে, হযরত সাল্লাল্লাহু   আলাইহি ওয়াসাল্লাম রূপকের অবকাশ ও কুটিল ব্যাখ্যার  ধারণা ব্যতিরেকে প্রকৃত     জীবনে      জীবিত,    স্থায়ী    ও     বিরাজমান    এবং উম্মতের       আমলসমূহের     প্রতি     হাজির     ও      নাজির। হাকিকত      অন্বেষণকারী       ব্যক্তিবর্গ       এবং       আল্লাহর  হাবিবের     দিকে    মুতাওয়াজ্জাকারী    নবীর     প্রেমিকগণ তাঁরা  মদিনা  ওয়ালার  পক্ষ  থেকে   ফয়েজ    ও   বরকত লাভ  করতে   সক্ষম  হবেন  এবং   স্বয়ং  আল্লাহর   হাবিব তার গার্ডিয়ান হয়ে যাবেন।

ইমাম  জালালউদ্দিন  সুয়ুতি   আলাইহির  রহমত    তদীয় ‘আল  হাবি   লিল  ফাতাওয়া’  নামক   কিতাবের  ২/১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,

قال المتكلمون المحققون من اصحابنا ان نبينا  صلى الله عليه  وسلم  فى  بعد وفاته وانه  يسر بطاعات  امته ويحزن  بمعاصى العصاة منهم وانه  تبلغه  صلاة    من يصلى  عليه من امته-

ভাবার্থ:   আহলে  সুন্নাত  ওয়াল   জামায়াতের   আকাইদ   শাস্ত্রের     পারদর্শী     মুহাক্কিক     উলামায়ে     কেরামগণের  অভিমত হলো, আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি   ওয়াসাল্লাম   ওফাতশরীফের   পরে   স্বশরীরে  জীবিত  রয়েছেন।  নিঃসন্দেহে    উম্মতের   এতায়াত   বা নেককাজে  তিনি  আনন্দে  মুখরিত   হয়ে  পড়েন    এবং উম্মত    যখন গোনাহের   কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে,  তখন  হাবিবে খোদা দুঃখ   অনুভব  করেন।  নূরনবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের মধ্য থেকে যদি কেউ তাঁর  উপর  দরূদ   ও  সালাম  পেশ   করে,  সে  দরূদ  ও সালাম    হাবিবে   খোদার   নিকট    পৌঁছে    যায়।   অর্থাৎ  ছরকারে দু’জাহা তাজেদারে মদিনা নিজ কান মোবারক দ্বারা   দরূদ     ও    সালামের    আওয়াজ    শুনতে   পান   এ  ক্ষমতা আল্লাহ তাঁর হাবিবকে দান করেছেন।’

চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেজা   খাঁন   আলাইহির   রহমত   তদীয়   الدولة   المكية  ‘আদ  দৌলাতুল   মক্বিয়া’  নামক   কিতাবের  ৩৮  পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,

قال   الله   تعالى   وكذلك   نرى   ابراهيم   ملكوت   السموات  والارض  وللطبرانى    فى  كبيره  ونعيم  ابن  حماد   فى   كتاب الفتن وابى نعيم فى    الحلية عن عبد  الله بن  عمر الفاروق رضى  الله  تعالى  عنهما  عن  النبى  صلى الله  تعالى  عليه  وسلم قال ان الله قد رفع لى الدنيا فانا انظر اليها والى ما هو  كائن   فيها  الى  يوم   القيمة  كانما  انظر  الى  كفى  هذه جليانا  من  الله تعالى   جلاه  لنبيه كما جلاه لنبيين من قبله صلى الله تعالى عليه وسلم وعليهم اجمعين-

ভাবার্থ:     আল্লাহ   আজ্জা  ওয়া  জাল্লার   নূরানী   ফরমান, এমনিভাবে আমি হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে সপ্তআকাশ       ও     সপ্তজমিনের      মালাকুত      বা     আশ্চর্য নিদর্শনাবলী ও সূক্ষ্মতম বস্তুসমূহকে দেখিয়েছি। ইমাম  তাবরানী     আলাইহির  রহমত  তাঁর   ‘কিতাবুল   ফাতান’ এবং  আবু  নাঈম  ‘হিলয়াতুল  আউলিয়া’র মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ  ইবনে   ওমর  ফারুক  রাদিয়াল্লাহু  আনহু   হতে রেওয়ায়েত করেন।

(এছাড়াও  সহিহ  বুখারিশরীফের   ব্যাখ্যাকার   আল্লামা ইমাম    কাসতালানী    রাদিয়াল্লাহু     আনহু    ‘মাওয়াহিবে   লাদুনিয়া’  নামক  কিতাবের ২য়  জিলদের  ১৯২  পৃষ্ঠায়  তাবরানীশরীফ        এর     বরাত     দিয়ে     এ      হাদিসখানা  রেওয়ায়েত করেছেন।)

দশম শতাব্দীর   নবম  মুজাদ্দিদ ইমাম   আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ুতি  আলাইহির রহমত (ওফাত  ৯১১ হিজরি) তদীয়  الخصائص  الكبراى   ‘খাসাইসে  কোবরা’   নামক কিতাবের             দ্বিতীয়             জিলদের             ১৮৫             পৃষ্ঠায় তাবরানীশরীফের        বরাত        দিয়ে         এ          হাদিসখানা দলিলরূপে রেওয়ায়েত করেছেন।

হাদিসশরীফের ভাবার্থ  হলো, ‘হযরত  আব্দুল্লাহ  ইবনে  উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে     বর্ণিত   নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি        ওয়াসাল্লাম      এরশাদ       করেছেন,       নিশ্চয় আল্লাহতা’য়ালা  আমার জন্য সারা বিশ্বজগতকে উঠিয়ে রাখছেন,      (জাহির     করেছেন)     সুতরাং      আমি     সারা  বিশ্বজগতকে  দেখছি  এবং  কিয়ামত  পর্যন্ত  যা  কিছু  এ  জগতে   হবে   দেখতে   থাকব।   যেমন   হাতের   তালুকে  দেখছি।  এটি আল্লাহতা’য়ালা প্রদত্ত আলো, যেটি  তিনি তার   হাবিব   সাল্লাল্লাহু   আলাইহি    ওয়াসাল্লামের    জন্য  প্রজ্জ্বলিত  করেছেন,  যেভাবে  পূর্ববর্তী  নবীগণের  জন্য  প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন।’

এ  হাদিসশরীফের   ব্যাখ্যায়    ইমাম  আল্লামা  মোহাম্মদ ইবনে     আব্দুল     বাকী    জারকানী     মালিকী    আলাইহির রহমত   তদীয়  ‘জারকানীশরীফ’  নামক  কিতাবের   ৭ম জিলদের ২০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
اى  اظهر وكشف لى الدنيا بحيث بجميع ما    فيها فانا انظر اليها  (الخ)  اشارة  على  انه    نظر   حقيقى     دفع     انه  اريد بالنظر العلم ولا يراد انه اخبار عن مشاهدة-

ভাবার্থ:   আল্লাহপাক    আমার    সামনে   সারা    দুনিয়াকে উঠিয়ে   রাখছেন   অর্থাৎ  সারা   দুনিয়াকে   আমার   জন্য জাহির      ও   কশ্ফ    করে   খুলে    দিয়েছেন    এভাবে   যে, আমার      আয়ত্ত্বাধীনে       সারা       দুনিয়ার      বস্তুকে      করে দিয়েছেন।   সুতরাং   আমি   সারা    বিশ্বজগতকে    দেখছি এবং কিয়ামত পর্যন্ত দেখতে থাকব। আল্লামা জারকানী রাদিয়াল্লাহু     আনহু   বলেন,   রাসূলে    মকবুল   সাল্লাল্লাহু আলাইহি   ওয়াসাল্লাম     খোদা   প্রদত্ত   ক্ষমতাবলে   নিজ চোখ মোবারক  দ্বারা হাকিকী  নজরে দেখছেন। এখানে নজরে  ইলিমও মুরাদ লওয়া যাবে  না এবং  তা দেখার  সংবাদ ও মুরাদ লওয়া হবে না।’

মুদ্দাকথা হলো কোরআনে কারিমার আয়াতে কারীমা ও হাদিসশরীফ  দ্বারা  স্পষ্টভাবে   প্রমাণিত  হলো,   নূরনবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের আমলসমূহকে দেখেন  এবং  তাঁকে  আল্লাহতা’য়ালা  হাজির   ও   নাজির করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।

এ    প্রসঙ্গেই   শারফুদ্দিন    আল  হুসাইন  ইবনে   মুহাম্মদ ইবনে    আব্দুল্লাহ   আততিবী    আলাইহির  রহমত  তদীয় شرح الطيبى على مشكاة المصابيح নামক কিতাবের   প্রথম জিলদের ৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
كذا  الاصوليون مما اوردا من قوله  : اذا  رويتم عنى حديثا فاعرضوا   على  كتاب   الله   فان   وافق  فاقبلوه  وان  خالف فردوه-

ভাবার্থ:  যেমন  উসূলবিদগণ    বলেন,   রাসূল  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি  ওয়াসাল্লাম  এর  বাণী   তোমরা   যখন  আমার পক্ষ   থেকে     কোন    হাদিস    দেখ     তখন   তা    আল্লাহর কিতাবের      সাথে    মিলিয়ে     দেখ,    যদি    তা     আল্লাহর  কিতাবের    অনুকূলে    হয়    তা    গ্রহণ    কর।    আর    যদি  আল্লাহর       কিতাবের        ব্যতিক্রম      পাও       তাহলে      তা প্রত্যাখ্যান কর।

সুতরাং   ان  الله     قد  رفع    لى   الدنيا  এ   হাদিসশরীফের ভাবার্থ কোরআন পাকের   আয়াতে  কারীমা  كذالك  نرى  ابراهيم    এ    আয়াতে     কারীমার    ভাবার্থের    সাথে     পূর্ণ মুয়াফিক    বা    সামঞ্জস্যশীল     থাকায়    এ     হাদিসখানা   গ্রহণযোগ্য।

এই সাইট টিও ভিজিট করুন- নামাযের মাসআলা মাসাইল
 
Top