যাদের     ওয়াসওয়াসা     বা     কুমন্ত্রণা     এবং     ধ্বংশশীল  চিন্তাভাবনার  সম্ভাবনা  রয়েছে   তাদের    জন্য   উচ্চস্বরে পড়া       নির্দেশিত।       কারণ       ইহা       উক্ত       কুমন্ত্রণাকে দূরীকরণে অধিক কার্যশীল।

ইমাম  সুয়ুতি  বলেন-  আমি    বলব,  উক্ত  মতটির  স্বপে একটি হাদিস ইমাম বাযযার হযরত মায়ায বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন-

قال  رسول  الله   صلى   الله    عليه  وسلم   من  صلى  منكم بالليل فليجهر بقرائته فان الملائكة تصلى بصلاته وتسمع لقرائته    وان    مؤمنى    الجن    الذين    يكونون    فى    الهواء  وجيرانه   معه   فى   مسكنه    يصلون   بصلاته     ويستمعون قراءته  وانه  ينطرد  بجهره  بقراءته   عن  داره  وعن   الدور التى حوله فساق الجن ومردة الشياطين-

অর্থ:        রাসূলুল্লাহ      সাল্লাল্লাহু       আলাইহি       ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রাত্রি বেলায় নামায পড়ে  সে  যেন    উচ্চ-স্বরে   কিরাত  পাঠ  করে।  কেননা ফেরেস্তাগণ    তার     সাথে    নামায    পড়েন     এবং    তার কিরাত  শ্রবণ  করেন।  তাছাড়া  মু’মিন    জিনগণ    যারা  বাতাসের      মধ্যে      অবস্থান      করে     এবং      যারা      তার আশেপাশে    বসবাস   করে   তারাও   ঐ    ব্যক্তির    সাথে  নামায    পড়ে    এবং    তার      তিলাওয়াত    শ্রবণ    করে। এমনিভাবে উচ্চস্বরে  কিরাত পাঠের কারণে ঐ  ব্যক্তির বাড়ি   ও   তার  আশপাশের  বাড়ি-ঘর  থেকে   ফাসিক জ্বিন ও শয়তানসমূহ পলায়ন করে।

প্রশ্ন নং- ২
আপনি যদি প্রশ্ন করেন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
ادعوا ربكم تضرعا وخفية انه لا يحب المعتدين
অর্থ:  তোমরা  তোমাদের প্রভুকে ক্রন্দনরত অবস্থায় নিু স্বরে   আহ্বান   কর।    নিশ্চয়    তিনি   সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (সূরা আরাফ- ৫৫)

উক্ত  আয়াতে  ‘ই’তেদা’  বা  সীমালঙ্ঘন  এর  তাফসিরে  বলা   হয়েছে  সীমালঙ্ঘন  হলো  উচ্চ-স্বরে  দোয়া  করা।  অতএব এর জবাব কি?

উত্তর: আমি বলব উক্ত প্রশ্নটির দুটি জবাব রয়েছে-

প্রথম জবাব
উক্ত আয়াতে ‘ইতেদা’  বা সীমালঙ্ঘন শব্দের    অগ্রগণ্য  তাফসির      হল      যে,      নির্দেশিত     বিষয়টির      ব্যাপারে  সীমাতিক্রম  করা।  অথবা এমন বস্তুর  জন্য দোয়া করা শরিয়তে যার কোন অস্তিত্ব নেই।  এ অভিমতটির স্বপে একটি হাদিস  বর্ণনা   করেছেন ইমাম ইবনে   মাজাহ ও  ইমাম   হাকিম   স্বীয়   মুস্তাদরিক   গ্রন্থে।   (ইমাম   হাকিম  ইহাকে সহীহ বলেছেন)

عن ابى نعامة رضى الله عنه- ان  عبد الله بن مغفل سمع ابنه   يقول   اللهم    انى   اسألك   القصر   الابيض    عن   يمين الجنة-  فقال انى سمعت رسول  الله  صلى    الله  عليه  وسلم يقول سيكون فى هذه الامة قوم يعتدون فى الدعاء-

অর্থ:   হযরত   আবু    নুয়ামা    রাদিয়াল্লাহু    আনহু    থেকে  বর্ণিত,   হযরত  আব্দুল্লাহ   বিন  মুগাফফাল     রাদিয়াল্লাহু আনহু শুনলেন তাঁর ছেলে এভাবে দোয়া করতেছে,  হে আল্লাহ আমি  জান্নাতের  ডান পার্শ্বে একটি সাদা  রঙের প্রাসাদের  জন্য  আপনার  কাছে   প্রার্থনা  করছি।    তখন আব্দুল্লাহ  বিন  মুগাফফাল  রাদিয়াল্লাহু  আনহু  বললেন-  আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ  করেছেন-   অচিরেই   এ  উম্মতের  মধ্যে  এমন এক   সম্প্রদায়ের  আবির্ভাব  ঘটবে   যারা  দোয়ার  মধ্যে সীমালঙ্ঘন করবে। অতঃপর ইমাম সুয়তি বলেন- فهذا تفسير  صحابى   وهو  اعلم    بالمراد  অর্থ:  এ  হচ্ছে  একজন সহাবি  কর্তৃক   কৃত  তাফসির  যিনি  এর  ভাবার্থ   সম্বন্ধে অধিক জ্ঞাত।

দ্বিতীয় জবাব
সর্বোপরি উল্লেখিত আয়াতটি দোয়ার  ব্যাপারে বর্ণিত।  জিকিরের      ব্যাপারে     নয়।      আর     দোয়ার     খুসুসিয়ত বিশেষত্ব হলো   নিুস্বরে দোয়া করা উত্তম।   কারণ  ইহা   কবুলের    জন্য    অধিক    নিকটবর্তী।    এ    জন্য    আল্লাহ  তায়ালা বলেছেন- اذ نادى ربه نداء خفيا অর্থ: যখন সে তাঁর      পালনকর্তাকে     আহ্বান      করল     নিভৃতে।     (সূরা মারইয়াম- ৩)
এমনিভাবে নামাযের মধ্যে ‘আউযুবিল্লাহ’  নিস্বরে   পাঠ করা    সর্বসম্মতিক্রমে     মুস্তাহাব।     কারণ     ইহা     একটি দোয়া।

প্রশ্ন নং- ৩
আপনি যদি বলেন-  হযরত ইবনে  মাসউদ  রাদিয়াল্লাহু আনহু  থেকে  বর্ণিত  আছে  যে,  তিনি   দেখতে    পেলেন একটি   সম্প্রদায়   মসজিদের   মধ্যে  উচ্চস্বরে    তাহলিল তথা  ‘লা  ইলাহা  ইল্লাল্লাহু’  এর    জিকির   করছে।  তখন তিনি  বললেন-    আমার  মনে  হচ্ছে  তোমরা   বেদআতি সম্প্রদায়।   অতঃপর   তিনি   তাদেরকে   মসজিদ   থেকে  বের করে দিলেন। এ হাদিসের জবাব কি?

উত্তর: আমি বলব,    হযরত ইবনে   মাসউদ  রাদিয়াল্লাহু আনহু  থেকে  বর্ণিত  এ   হাদিসটির    সনদ   সূত্রটি  বর্ণনা করা আবশ্যক। (অর্থাৎ এ হাদিসটির সনদ বর্ণনা করা  হয়   নাই)।  তাছাড়া  আইম্মায়ে   হুফফাজ  বা  হাদিসের ইমামদের মধ্যে কে কোন কিতাবে ইহা বর্ণনা করেছেন এবং   এর    গ্রহণযোগ্যতা   সম্বন্ধে  বিস্তারিত  বর্ণনা  করা আবশ্যক।

কারণ   এ  হাদিসটি   পূর্বে   উল্লেখিত  অনেকগুলি   সহীহ  হাদিসের    সাথে     সাংঘর্ষিক।    সুতরাং     ‘তায়ারুজ’      বা  সাংঘর্ষিক   হবার   কারণে এর উপর অন্যান্য   হাদিসকে প্রাধান্য দিতে হবে।

অতঃপর আমি  দেখেছি অন্য একটি  হাদিসে   যা ইবনে মাসউদ     রাদিয়াল্লাহু     আনহু    থেকে    উক্ত     হাদিসটির  বর্ণনাকে  অস্বীকার  দাবি  করে।  যেমন  ইমাম    আহমদ বিন    হাম্বল  রাদিয়াল্লাহু    আনহু   ‘কিতাবুয  যাহদ’   গ্রন্থে বর্ণনা  করেছেন।    তিনি  বলেন   আমাদের   কাছে  বর্ণনা করেছেন হোসাইন বিন মুহাম্মদ, তিনি বলেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন  আল মাসউদী, তিনি আমির বিন শাক্বীক     থেকে   তিনি   বর্ণনা    করেছেন    আবু   ওয়াইল  থেকে-

قال    هؤلاء  الذين  يزعمون  ان  عبد  الله  كان  ينهى   عن  الذكر ما جالست عبد الله مجلسا قط الا ذكر الله فيه-

অর্থ:    আবু   ওয়াইল   বলেন,   যারা   ধারণা   করেন   যে,  আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু জিকির করতে নিষেধ  করতেন (তাদেরকে বলব) আমি আব্দুল্লাহ বিন  মাসউদের  সাথে  যখনই কোন মাজলিসে বসেছি তখন তিনি সেখানে আল্লাহর জিকির করেছেন।

ইমাম    আহমদ    বিন    হাম্বল    রাদিয়াল্লাহু    আনহু    উক্ত  ‘যাহদ’  কিতাবে  আরো    একটি    হাদিস  হযরত  সাবিত আল        বানানী          রাদিয়াল্লাহু       আনহু       থেকে        বর্ণনা করেছেন-

قال ان  اهل ذكر الله  ليجلسون الى  ذكر الله  وان عليهم من الاثام   امتثال الجبال وانهم   ليقومون من ذكر الله   تعالى ما عليهم منها شئ-

অর্থ: তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহর জিকিরকারীগণ যখন জিকিরের   মাজলিসে     আংশগ্রহণ   করেন    এমতাবস্থায় যদি   তাদের   পাহাড়   সমান   গোনাহ   থাকে   অতঃপর  যখন তারা আল্লাহর জিকির থেকে দণ্ডায়মান  হয় তখন তাদের    কোন    গোনাহ    অবশিষ্ট    থাকে    না।    (অর্থাৎ   আল্লাহ তাদেরকে মা করে দেন)

 
Top