সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা; সাহাবায়ে কেরাম সত্যের (হকের) মাপকাঠি; সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা হারাম।


সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’য়ালার জন্য যিনি রব্বুল আলামীন। দুরুদ ও সালাম রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম এবং সালেহীন গণের প্রতি।

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি মুহব্বত রাখা, তাঁদের প্রতি সুধারণা পোষণ করা হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ। তাঁদের ইত্তেবা বা অনুসরণ করা -ওয়াজিব ।  আর তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, তাঁদেরকে কষ্ট দেয়া, সমালোচনা করা, নাকিছ বা অপূর্ণ বলা সম্পূর্ণ কুফরী। এটাই আহ্‌লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা বা বিশ্বাস। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণ করা গোম্‌রাহীর নামান্তর।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের একটি মূলনীতি হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাদের ব্যাপারে তাদের অন্তর এবং বাক-যন্ত্র পুত-পবিত্র ও সংযত থাকবে, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীর প্রতিও তারা আমল করবে, রাফেযী খারেজীদের ভ্রষ্ট তরীকা থেকে তারা মুক্ত থাকবে। কিতাব ও সুন্নাহয় সাহাবায়ে কিরামের যে ফযিলত বর্ণনা করা হয়েছে, আহলে সুন্নাত তা মেনে নেয় এবং বিশ্বাস করে যে, তারাই যুগের সর্বোত্তম প্রজন্ম।

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের একটা শিশুও সাহাবায়ে-কেরামের মর্যাদার ব্যাপারে সচেতন। সাহাবায়ে কেরাম রা. যেমন ছিলেন সত্যের মাপকাঠি, তেমনি তারা দুনিয়া থেকেই আল্লাহর সন্তুষ্টির ঘোষণাপ্রাপ্ত।
ইসলামের সঠিক পথ নির্ণয়ের মাপকাঠি হলো, সাহাবায়ে কেরাম রা. এর অনুসৃত পথের অনুসরণ। যুগে যুগে যারাই সাহাবায়ে কেরাম রা. এর পথ থেকে দূরে সরে গিয়েছে, তারাই গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট হয়েছে। হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্যকারী হলেন সাহাবায়ে কেরাম। যারা সাহাবায়ে কেরামকে যথাযথ সম্মান করে, তাদের অনুসৃত পথে চলে, তারাই মুলত: কুরআন ও সুন্নাহের প্রকৃত অনুসারী। সাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত পথ ব্যতীত লক্ষ-কোটি বারও কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরণের দাবী করলেও তারা গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট।

যুগে যুগে যারা সাহাবায়ে কেরামের বুঝকে পায়ে দলে, তাদের অনুসৃত পথকে দূরে সরিয়ে নিজেদের মনগড়া মতবাদ চালু করেছে, তারাই মুলত: ভ্রষ্টতার গভীরে নিমজ্জিত হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের যথার্থ সম্মান ও মর্যাদা না দিয়ে যারা তাদের সমালোচনা করেছে, তারাই যুগে যুগে আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
সুতরাং হক ও বাতিলের পরিচয়ের জন্য আমাদের বিস্তর গোবেষণার প্রয়োজন নেই।
সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, আমরা দেখবো, কারা রাসূল স. এর সাহাবাদের অনুসৃত পথে চলে। যারা কুরআন ও সুন্নাহকে সাহাবায়ে কেরাম এর বুঝ অনুযায়ী অনুসরণ করে তারাই মুলত: মুক্তিপ্রাপ্ত সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত দল। এর বাইরে যতো দল, মত বা মতবাদ রয়েছে, সবগুলোই ভ্রষ্টতা ও গোমরাহী।


আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামা'আতের উলামায়ে কেরাম ও বাতীল ফির্কার আলেমদের মাঝে পার্থক্য

সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা ও মহব্বত সম্পর্কে লিখিত বই-পুস্তক এক সপ্তাহ অধ্যয়ন করলে পাঠক দেখতে পাবেন তাঁদের প্রতি মহব্বত বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। তাদের প্রতি সীমাহীন ভক্তি ও শ্রদ্ধা জন্ম নিয়েছে।
পক্ষান্তরে মওদুদী সাহেবের লেখা খেলাফত ও মুলুকিয়াত বইটি এক সপ্তাহ পড়ে নিজের মধ্যে কি প্রতিক্রিয়া হয় সহজেই জানতে পারবেন।
মওদুদী বা তার আদর্শের পূর্বের বা পরের কারো দ্বারা লিখিত বই পড়ে সাহাবায়ে কেরামের প্রতি অন্তরে ঘৃণাবোধ তৈরি হয়, তাদের সমালোচনা ও দোষত্রুটিই শুধু চোখে ভাসে।

আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামা'আতের উলামায়ে কেরাম ও বাতীল ফির্কার আলেমদের মাঝে এটিই পার্থক্য।

বর্তমান তথাকথিত লা মাযহাবী বা নামধারী আহলে হাদীসদের সাথে আহলুস্ সুন্নাহর বিরোধ শুধু শাখাগত মাসআলা নিয়ে নয়। বরং এদের সাথে আহলুস্ সুন্নাহর বিরোধ মৌলিক আকিদা বিষয়ে।

পবিত্র কুরআনে সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় সাহাবায়ে কেরাম রা. এর  প্রশংসা করেছেন। তাদের মর্যাদা ও অবস্থান তুলে ধরেছেন।

১. আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ﴿১০০﴾ سورة التوبة

‘মুহাজির ও আনসারদের প্রথম অগ্রবর্তী দল এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করে আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন জান্নাত, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, এটাই মহা সাফল্য’
[সূরা তওবা-১০০]।

২. আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন:

مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِمْ مِنْ أَثَرِ السُّجُودِ ذَلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنْجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآَزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَى عَلَى سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا ﴿২৯﴾    سورة الفتح

‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্ট কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদার প্রভাবের চি‎হ্ন পরিস্ফুট থাকবে। তাওরাতে তাদের বর্ণনা এরূপ। আর ইঞ্জিলে তাদের বর্ণনা হল যেমন একটি চারাগাছ, যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অত:পর তা শক্ত ও পুষ্ট হয় এবং কাণ্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে,  যা চাষীকে আনন্দে অভিভূত করে যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন।
[সূরা আল – ফাতহ, ২৯। ]

৩. অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন:

لِلْفُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِينَ الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِنْ دِيارِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا وَيَنْصُرُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ ﴿৮﴾ وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ﴿৯﴾ سورة الحشر

‘এ সম্পদ অভাবগ্রস্ত মুহাজিরগণের জন্য যারা নিজেদের ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি হতে উৎখাত হয়েছে। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে। তারাই সত্যবাদী। আর এ সম্পদ তাদের জন্যও, যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে এ নগরীতে বসবাস করেছে এবং ঈমান এনেছে। তারা মুহাজিরদেরকে ভাল-বাসে এবং মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তার জন্য তারা অন্তুরে ঈর্ষা পোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে নিজেদের উপর অগ্রাধিকার দেয়। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।
[সূরা-হাশর, ৮-৯]।

৪. অপর জায়গায় এরশাদ হয়েছে–

لَّقَدْ رَضِيَ اللَّـهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا

অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লহ তায়া’লা ঐ সকল মুসলমানদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন (যাহারা আপনার সফর সঙ্গী), যখন তাঁহারা আপনার সাথে গাছের নিচে অঙ্গীকার করছিলো এবং তাঁদের অন্তরে যা কিছু (ইখলাস ও মজবুতি) ছিল তাও আল্লহ তায়া’লার জানা ছিল, আর আল্লহ তায়া’লা তাঁদের অন্তরে প্রশান্তি সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন এবং তাদেরকে একটি নিকটবর্তী বিজয় দান করলেন। (এর দ্বারা খায়বরের বিজয় কে বুঝানো হয়েছে, যা  একেবারে নিকটবর্তী সময়ে হয়েছে) আর প্রচুর গনিমতও দান করলেন।
[সূরা ফাতহঃ ১৮]।

৫. সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু আ’নহুমদের ব্যাপারে আল্লহ তায়া’লা এরশাদ করেন–

مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّـهَ عَلَيْهِ ۖ فَمِنْهُم مَّن قَضَىٰ نَحْبَهُ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُ ۖ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا

অর্থঃ ঐ সকল মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা আল্লহর সাথে যে ওয়াদা করেছিলো তাতে সত্য প্রমানিত হয়েছে। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে, যারা নিজ মানত পূর্ণ করেছে (অর্থাৎ শহীদ হয়ে গিয়েছে।) আর কিছু তাদের মধ্য হতে এর জন্য আগ্রহী এবং অপেক্ষায় আছে (এখনও শহীদ হয়নি) এবং নিজেদের ইচ্ছার মধ্যে কোনরূপ পরিবর্তন ও রদ-বদল ঘটায়নি।
[সূরা আহযাবঃ ২৩]।

৬. সূরা নিসার ৯৫নং ও সূরা হাদীদের ১০নং আয়াতে সাহাবায়ে কেরামের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وكلا وعد الله الحسنى

অর্থাৎ, তাদের (মধ্যে পারস্পরিক তারতম্য থাকা সত্ত্বেও) সবাইকে আল্লাহ তা‘আলা হুসনা তথা উত্তম পরিণতির (জান্নাত ও মাগফিরাতের) ওয়াদা দিয়েছেন।

এ আয়াতে আল্রাহ তায়ালা সাহাবায়ে কেরামের জন্য হুসনা এর ওয়াদা করেছেন।
সূরা আম্বিয়ার ১০১নং আয়াতে হুসনা লাভকারীদের  সম্পর্কে বলা হয়েছে,

 إن الذين سبقت لهم منا الحسنى أولئك عنها مبعدون

অর্থাৎ, যাদের জন্য আমার পক্ষ থেকে পূর্বেই হুসনার ওয়াদা হয়ে গেছে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে।

৭. সূরা হুজুরাতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

o لكن الله حبب إليكم الإيمان و زينه في قلوبكم و كره إليكم الكفر و الفسوق و العصيانط أولئك هم الراشدون
অর্থাৎ, কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের অন্তরে ঈমানের মহব্বত সৃষ্টি করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কুফর, শিরক, পাপাচার ও নাফরমানির প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তারাই (সাহাবীগণ) সৎপথ অবলম্বনকারী।
[সূরা হুজুরাত-৮]।

৮. সূরা হুজুরাতের ১৫ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,

oإنما المؤمنون الذين امنوا بالله و رسوله ثم لم يرتابوا و جهدوا بأموالهم و أنفسهم في سبيل اللهط أولئك هم الصدقون
অর্থাৎ, তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করে। তারাই (সাহাবীগণ) সত্যনিষ্ঠ (বা সত্যবাদী)।
[সূরা হুজুরাত-১৫]।

৯. আল্লাহ তায়ালা সাহাবায়ে কেরামের ঈমানকে মাপকাঠি সাব্যস্ত করে বলেছেন,

فإن امنوا بمثل ما امنتم به فقد اهتدوا و إن تولوا فإنما هم في شقاق

অর্থাৎ, যদি তারা ঈমান আনে, যেরূপ তোমরা ঈমান এনেছ, তবে তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে। আর যদি তারা (এথেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারা হঠকারিতায় রয়েছে। 
[সূরা বাক্বারা-১৩৭]।

১০. সাহাবায়ে কেরাম এর ইমানের গ্রহণযোগ্যতা এবং যারা সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে উপহাস করেছে, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

oو إذا قيل لهم امنوا كما امن الناس قالوا أنؤمن كما امن السفهاء ألا إنهم هم السفهاء و لكن لا يعلمون
অর্থাৎ, যখন তাদেরকে বলা হয়, মানুষরা অর্থাৎ সাহাবীরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন। তখন তারা বলে আমরাও কি বোকাদের মতো ঈমান আনব? মনে রেখো প্রকৃতপে তারাই বোকা; কিন্তু তারা তা বোঝে না।
[সূরা বাক্বারা-১৩]।

১১. সূরা আনফালে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

oأولئك هم المؤمنون حقا لهم درجت عند ربهم و مغفرة و رزق كريم
অর্থাৎ, এমন সব লোকই (সাহাবীরা) সত্যিকারের মুমিন (যাদের ভেতর ও বাহির এক রকম এবং মুখ ও অন্তর ঐক্যবদ্ধ)। তাদের জন্য রয়েছে স্বীয় পরওয়ারদিগারের নিকট সুউচ্চ মর্যাদা ও মাগফিরাত এবং সম্মানজনক রিয্ক।
[সূরা আনফাল-৪]।

১২. আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

وألزمهم كلمة التقوى وكانوا أحق بها

অর্থাৎ, (আল্লাহ তা‘আলা) তাদের (অর্থাৎ সাহাবীদের) জন্য কালিমায়ে তাক্বওয়া তথা সংযমের দায়িত্ব অপরিহার্য করে দিলেন। বস্তুতঃ তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত।
[সূরা ফাত্হ-২৬]।

রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) এর হাদীসে সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা

১. বোখারী-মুসলিমের সহীহ হাদীসে রয়েছে,

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : خير أمتي قرني ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم

হযরত ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম তারা যারা আমার যুগে রয়েছে। অতঃপর তাদরে পরবর্তী যুগের উম্মাত (তথা তাবেয়ীগনের যুগ) অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মাত। (অর্থাৎ, তাবয়ে তাবেয়ীনের যুগ)।
[সূত্রঃ বুখারী ৪/২৮৭- ২৮৮- মুসলিম ৪/১৯৬৪]।

২. রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) সাহাবাদের রাঃ মর্যাদা সম্মন্ধে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেনঃ

الله الله فى أصحابى لا تتخذوهم غرضا من بعدى فمن أحبهم فبحبى أحبهم ومن أبغضهم فببغضى أبغضهم

অর্থাৎ-সাবধান!তোমরা আমার সাহাবীগণের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরে তোমরা তাঁদেরকে (তিরস্কারের) লক্ষ্যবস্তু বানাইও না। যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে সে আমার প্রতি ভালোবাসা বশেই তাঁদেরকে ভালোবাসে। আর যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে সে আমার প্রতি বিদ্বেষবশতঃ তাঁদের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে”।
[সূত্রঃ তিরমিযী-৩৮৬১, ইবনে হিব্বান, হা; ২২৮৪, মুসনাদে আহমদ, খ., ৪, পৃ., ৮৭, আস-সুন্নাহ, ইবনে আবি আসেম, হা/ ৯৯২]।

৩. তিনি আরো ইরশাদ করেছেনঃ

 لاَ تَسُبُّوا أَصْحَابِى فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلاَ نَصِيفَهُ

অর্থাৎ-তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গালি দিওনা। তোমাদের মধ্যে যদি কেহ উহুদ সমপরিমাণ স্বর্ণও যদি আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে,তবেও তাঁদের এক মুদ্দ বা তার অর্ধেক পরিমাণ(এক মুদ=১ রতল। আল্লামা শামী(রাঃ)বয়ান করেছেন যে, এক মুদ্দ ২৬০ দিরহামের সমপরিমাণ। দ্রষ্টব্যঃ আওযানে শরিয়্যাহ)আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার সমতূল্য হবেনা।
[সূত্রঃ সহিহ্ বুখারী-হা/ ৩৭১৭]।

৪. হযরত ইবনে আব্বাস(রাঃ)হতে বর্ণিতঃ রাসুলুলুল্লাহ্ (صلى الله عليه و آله و سلم) ইরশাদ করেছেন-

 ” من سب اصحابي فعليه لعنة الله والملائكة والناس اجمعين ”

অর্থাৎ -“যারা আমার সাহাবীদেরকে গালী দেয়, তাদের প্রতি আল্লাহর, ফেরেস্তাদের এবং জগতবাসীর অভিশাপ বর্ষিত হোক।
[সূত্রঃ তাবরানী ফিল কাবির, হা/ ১২৭০৯]।

৪. হযরত উমর রা. থেকে বর্ণিত রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেন,

اكرموا أصحابى فإنهم خياركم

অর্থাৎ-তোমরা আমার সাহাবীগণকে সম্মান কর। কেননা তাঁহারা তোমাদের মধ্যকার উত্তম মানব।
[সূত্রঃ মুসনাদে আহমাদ, খ.১, পৃ.১১২, তাহকীক, আহমাদ শাকের, নাসায়ী, হাকেম, মেশকাত, খ.৩, পৃ., ১৬৯৫]।

৫. হযরত আবু বুরদাহ(রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ্ (صلى الله عليه و آله و سلم) ইরশাদ করেছেন যে,

عن أبى بردة رضي الله عنه قال : قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم – النجوم أمنة للسماء فإذا ذهبت النجوم أتى السماء ما توعد ، وأنا أمنة لأصحابي فإذا ذهبت أتى أصحابي ما يوعدون ، وأصحابي أمنة لأمتي فإذا ذهب أصحابي أتى أمتي ما يوعدون.

অর্থঃ  নক্ষত্র সমুহ আসমানের জন্য আমানত স্বরুপ। যখন নক্ষত্রগুলি বিলুপ্ত হয়ে যাবে তখন আসমানকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কেয়ামত চলে আসবে। এবং আমি আমার সাহাবীদের জন্য আমানত স্বরুপ। অতএব যখন আমি ইহকাল ত্যাগ করব তখন তাঁদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁদের(সাহাবাদের) মধ্যে ইজতেহাদি মতানৈক্য দেখা দিবে। এবং আমার সাহাবীরা উম্মতের জন্য আমানত স্বরুপ। অতএব যখন তাঁদের যুগের অবসান ঘটবে তখন আমার উম্মতের মধ্যে বিভিন্ন রকমের ফেতনা-ফ্যাসাদের সুত্রপাত ঘটবে।
[সূত্রঃ মুসলিম শরীফ, হা/ ২৫৩১]।

৬. ইরবায ইবনে সারিয়া(রাঃ)হতে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ্ (صلى الله عليه و آله و سلم) ইরশাদ করেছেনঃ

قال النبى صلى الله عليه وسلم: عليكم بسنتى وسنة خلفاء الراشدين المهدين

অর্থঃ আমার এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীন রা. এর সুন্নতকে  শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে।
[সূত্রঃ আবু দাউদ হা/ ৪৬০৭, তিরমিযী-২৮৯১,ইবনে মাজা (ভূমিকা, ৪২), মুসনাদে আহমদ হা/ ১৭৬০৬, মুসনাদে বাযযার, ইবনে হিব্বান, মুসতাদরাক লিল-হাকিম, তারীখে দিমাশক লি-ইবনে আসাকির, আল-মু’জামুল কাবীর, হা/ ৬২৩, আল-আওসাত, আল-কাবীর লিত্তাবরানী]।

৭. রাসুলে কারীম (صلى الله عليه و آله و سلم) সমস্ত উম্মতকে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলে গেছেনঃ

ستفترق أمتى ثلاثا وسبعين فرقة كلهم فى النار إلا واحدة : قالوا من هى يا رسول الله! قال: ما أ نا عليه وأصحابى

অর্থঃ“ অতিশীঘ্র আমার উম্মত তেহাত্তর(৭৩) ফের্কায় বিভক্ত হয়ে পড়বে। তন্মধ্যে মাত্র একটি দলই মুক্তিপ্রাপ্ত এবং জান্নাতী হবে। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেনঃ সেই মুক্তিপ্রাপ্ত সৌভাগ্যশালী দলটি কারা এবং এত বড় সৌভাগ্য লাভের ভিত্তি কোন নীতি বা আদর্শের উপর? উত্তরে নবী কারিম (صلى الله عليه و آله و سلم) বললেন, যে নীতি, তরীকা ও আদর্শের উপর আমি এবং আমার সাহাবায়ে কেরাম আছেন।
[সূত্রঃ তিরমিজী শরীফ, হা/ ২৬৪০, ইবনে মাজা, হা/ ৪৭৯, মুসনাদে আহমদ খ., ৪, পৃ., ১০২, আল-মুসতাদরাক, খ., ১, পৃ., ১২৮]।

৮. হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেন,

آية الإيمان حب الأنصار ، وآية النفاق بغض الانصار

অর্থ: ঈমানের নিদর্শন হলো, আনসারী সাহাবীদের মহব্বত এবং মুনাফেকীর নিদর্শন হলো, আনসারীদের প্রতি বিদ্বেষপোষণ।
[সূত্রঃ বোখারী শরীফ, খ.৭, পৃ.১১৩, মুসলিম শরীফ, হা/ ৭৪, ইমান অধ্যায়]।

৯. রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) ইরশাদ করেন,

لا تزالون بخير ما دام فيكم من رآني وصحبني، والله لا تزالون بخير ما دام فيكم من رأي من رآني وصاحبني

অর্থ: তোমরা ততোদিন পর্যন্ত কল্যাণের মাঝে থাকবে যতক্ষণ তোমাদের মাঝে আমাকে যারা দেখেছে এবং আমার সংস্পর্শে থেকেছে তারা বর্তমান থাকবে। আল্লাহর শপথ, তোমরা কল্যানের মাঝে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের মাঝে এমন লোক থাকবে, যারা আমার সাহাবী ও সংস্পর্শ অবলম্বনকারীদেরকে দেখেছে।
[সূত্রঃ মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, খ., ১২, পৃ., ১৭৮, ত্ববরানী ফিল কাবির, খ., ২২, পৃ., ৮৫, ফাতহুল বারী, খ., ৫, পৃ., ৭]।

সাহাবায়ে কেরাম রা. এর সমালোচনার ভয়ঙ্কর পরিণতি

ইমাম মালেক রহ. বলেন,

إنما هؤلاء أقوام أرادوا القدح في النبي صلى الله عليه وسلم فلم يمكنهم ذلك ، فقدحوا في أصحابه حتى يقال رجل سوء و لو كان رجلاً صالحاً لكان أصحابه صالحين

অর্থ: যারা সাহাবাদের ব্যপারে কুৎসা রটনা করে এবং তাদেরকে গালি দেয় এরা মূলত: রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) এর বিরুদ্ধেও কুৎসা রটাতে চেয়েছিলো, কিন্তু তাদের দ্বারা তা সম্ভব হয়নি। তাই তারা সাহাবাগণের ব্যাপারে মিথ্যা রটিয়েছে এবং বলেছে, অমুক সাহাবী নিকৃষ্ট লোক ছিল, অমুকে এমন ছিল তেমন ছিল ইত্যাদি। রাসূল স. যদি নেককার ও সৎ হয়ে থাকেন, তবে তাদের নিকট তার সাহাবীরাও সৎ ও নেককার বিবেচিত হতো।
[সূত্রঃ আস-সরিমূল মাসলূল, পৃ., ৫৫৩]।

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. বলেন,

إذا رأيت رجلا يذكر أحدا من الصحابة بسوء فاتهمه على الإسلام

অর্থাৎ যদি কাউকে রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) এর কোন সাহাবীর সমালোচনা করতে দেখো, তবে তার ইসলামের ব্যাপারে সংশয় পোষণ করো।
[সূত্রঃ আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খ., ৮, পৃ., ১৪২]।

আবূ যুর’আ  রহ. বলেন,

فإذا رأيت الرجل ينتقص أحدا من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم فأعلم انه زنديق، وذلك ان الرسول صلى الله عليه وسلم عندنا حق، والقرآن حق، وإنما أدى إلينا هذا القرآن والسنة أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم، وإنما يريدون أن يجرحوا شهودنا ليبطلوا الكتاب والسنة، والجرح بهم اولى وهم زنادقة

"তোমরা যখন কাউকে কোন সাহাবীর অবমাননা করতে দেখ, তখন বিশ্বাস করে নাও যে, সে যিন্দীক ও বির্ধমী। তা এ জন্য যে, আমাদের নিকট রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) সত্য নবী, পবিত্র কুরআন সত্য; কুরআন হাদীস তথা পুরা দ্বীন যা আমাদের পর্যন্ত পৌছেছে, তার প্রথম যোগসূত্র হলেন সম্মানিত এ জামাত। সুতরাং যে ব্যক্তি সাহাবাগণের সমলোচনা করবে, সে আমাদের বিশ্বস্ত সাক্ষীদের সমালোচনার মাধ্যমে সম্পূর্ণ দ্বীনকেঅগ্রাহ্য বলে ঘোষণা করতে চায়। অর্থাত্ ইসলামের মূলভিত্তি ধ্বংস করে দিতে চায়। সুতরাং এজাতীয় লোকদের সমালোচনা করা উত্তম বরং এরা হলো যিন্দিক।
[সূত্রঃ আল-কিফায়া, খতীব বাগদাদী, পৃ., ৯৭]।

ইমাম আবূ আমর ইবনুস সালাহ রহ. বলেন, কুরআন হাদীস ও উম্মতের ইজমা হতে এ বিষয়টি সিদ্ধান্তকৃত যে, কোন সাহাবী রাযি. এর পূত- পবিত্রতা সম্পর্কে প্রশ্ন করারও সুযোগ নেই।
[সূত্রঃ উলূমুল হাদীসঃ ২৬৪]।

ইমাম ইবনে হুমাম রহ. বলেন-

আহলুস-সুন্নাত ওয়াল-জামা’আতের আকীদা হল, সমস্ত সাহাবায়ে কিরাম রাযি. কে পূত ও পবিত্র মনে করা, তাঁদের উপর আপত্তি উত্থাপন থেকে বেঁচে থাকা এবং তাদের প্রশংসা করা ওয়াজিব।
[সূত্রঃ মুসায়েরা- ১৩২পৃঃ]।

সকল সাহাবা রাযি. এর সঙ্গে ভালবাসা পোষণ করা এবং তাঁদের মাঝে পারস্পরিক যে সকল ঘটনা সমূহ সংঘটিত হয়েছে তা লিখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করা, অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা করা, শ্রবণ করা এবং করানো হতে বিরত থাকা এবং তাঁদের সুনাম সুখ্যাতি আলোচনা করা, তাঁদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা এবং তাঁদের প্রতি ভালবাসা রাখা, তাঁদের প্রতি কোন প্রকার আপত্তি প্রর্দশন থেকে বেচে থাকা ফরয।
[সূত্রঃ শরহে আকীদায়ে সাফারানীঃ ২/৩৮৬]।

সাহাবীগণের সমালোচনাকারীদের সম্পর্কে সালাফে-সালেহীনের অবস্থান

সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনাকারীদের সম্পর্কে সালাফে-সালেহীনের কিছু বক্তব্য পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ইমামের অনেক বক্তব্য রয়েছে। সালাফে-সালেহীনের এসব বক্তব্যের সারমর্ম নিচে উল্লেখ করা হলো,

১. সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুমকে গালি দেয়া, তাদের সম্পর্কে অশোভনীয় ভাষা ব্যবহার, তাদের সমালোচনা, তাদের ব্যাপারে কুৎসা রটনা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম। এজাতীয় কাজের কারণে একজন মুসলিম আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত থেকে বের হয়ে পথভ্রষ্ট ফেরকার অন্তর্ভূক্ত হয়।

২. সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা, তাদের প্রতি কুধারণা এবং তাদের কুৎসা রটনা করা বিধর্মী যিন্দিকদের কাজ।

৩. সাহাবায়ে কেরাম রা. সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করা ওয়াজিব।

৪. সর্বদা সাহাবায়ে কেরাম রা. এর ভালো গুণাবলী সম্পর্কে আলোচনা করা উচিৎ।

৫. সব সাহাবীই রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) এর প্রিয় ছিলেন।

৬. সাহাবায়ে কেরাম রা. এর সমালোচনাকারীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা জরুরি।

৭. অনেক সময় সাহাবীদেরকে গালা-গালি করার কারণে মানুষ ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়।

৮. সাহাবায়ে কেরাম রা. এর প্রতি ভালোবাসা ঈমানের শর্ত ও চাহিদা, তাদের প্রতি বিদ্বেষ বেইমানীর আলামত।

সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সমালোচনা হারাম।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘আমার যুগের লোকেরাই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম’ তাঁরা ছিলেন ভূ-পৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তির শ্রেষ্ঠতম সহচর।

আল্লাহ তা‘আলা ছাহাবীদের প্রশংসা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের ওপর তাঁর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। আল্লাহ কর্তৃক তাঁদের সন্তুষ্টি ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তাঁদের ভূয়সী প্রশংসাই প্রমাণ করে যে তাঁরা হলেন ন্যায়নিষ্ঠ। সর্বোপরি আপন নবীর সঙ্গী ও তাঁর সহযোগী হিসেবে আল্লাহ যাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন তাঁদের তো আর কোনো ন্যায়নিষ্ঠতা প্রমাণের প্রয়োজন নেই। এর চেয়ে বড় আর কোনো সনদ হতে পারে না। এর চেয়ে পূর্ণতার আর কোনো দলীল হতে পারে না।
[সূত্রঃ ইবন আবদিল বার, আল-ইস্তি‘আব ফী মা‘রিতিল আসহাব- ১/১]।

তাঁদের যাবতীয় অপ্রকাশ্য বিষয় সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত আল্লাহ কর্তৃক ন্যায়নিষ্ঠতার ঘোষণার পর তাই আর কোনো সৃষ্টি কর্তৃক তাঁদেরকে ন্যায়নিষ্ঠ ঘোষণার প্রয়োজন নেই। আর তাঁদের মর্যাদা এমনই প্রশ্নাতীত যে তাঁদের মর্তবা সম্পর্কে যদি আয়াতগুলো নাযিল না করতেন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরোল্লিখিত হাদীসগুলো উচ্চারণ না করতেন, তথাপি তাঁদের হিজরত, জিহাদ, নুছরত, পদ ও প্রতিপত্তি ত্যাগ, পিতা ও পুত্রের বিরুদ্ধে লড়াই, দীনের জন্য অবর্ণনীয় কল্যাণকামিতা এবং ঈমান ও ইয়াকিনের দৃঢ়তা তাঁদের ন্যায়নিষ্ঠতা থেকে বিচ্যুত হওয়া ঠেকাত। তাঁদের পবিত্রতা ও মহানুভবতার পক্ষে সাক্ষী হত।
মোদ্দাকথা তাঁরা তো সকল সত্যায়নকারী ও সাফাইকারীর চেয়েই শ্রেষ্ঠ যারা তাঁদের পর এসেছে। এটাই উল্লেখযোগ্য আলেম এবং ফিকহবিদের মত।
[সূত্রঃ খতীব বাগদাদী, আল-কিফায়া ফী ইলমির রিওয়ায়াহ্ ১১৮/১]।

প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর আরেকটি উক্তি এখানে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অনুসরণ করতে চায় তবে সে জন্য হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছাহাবীগণেরই অনুসরণ করে। কারণ, তাঁরাই ছিলেন এ উম্মতের মধ্যে আত্মার দিক থেকে সবচে বেশি নেককার, ইলমের দিক থেকে গভীরতর, লৌকিকতার দিক থেকে সল্পতম, আদর্শের দিক থেকে সঠিকতম, অবস্থার দিক থেকে শুদ্ধতম। তাঁরা এমন সম্প্রদায় আল্লাহ যাদেরকে আপন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংস্পর্শধন্য হবার জন্য এবং তাঁর দীন কায়েমের উদ্দেশ্যে বাছাই করেছেন। অতএব তোমরা তাঁদের মর্যাদা অনুধাবন করো এবং তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করো। কারণ, তাঁরা ছিলেন সীরাতে মুস্তাকীমের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
[সূত্রঃ আবূ নাঈম, হিলইয়াতুল আওলিয়া : ৩০৫/১; ড.মুহাম্মদ ইবন আবূ শাহবা, আল ইসরাঈলিয়্যাত ওয়াল মাওযূয়াত ফী কুতুবিত তাফসীর]।

‘তাঁরা ইলম, ইজতিহাদ, তাকওয়া ও জ্ঞান-বুদ্ধিতে আমাদের ওপরে। তাঁরা আমাদের চেয়ে উত্তম এমন বিষয়ে, যে ব্যাপারে ইলম জানা গেছে কিংবা যা ইস্তিমবাত বা উদ্ভাবন করা হয়েছে। তাঁদের রায়গুলো আমাদের কাছে প্রশংসনীয়। আমাদের নিজেদের ব্যাপারেই আমাদের সিদ্ধান্তের চেয়ে তাঁরাই অগ্রাধিকার পাবার হকদার।’
[সূত্রঃ মুকাদ্দাম ইবনু সালাহ, ড. নূরুদ্দীন ‘ঈতর সম্পাদনা, বৈরুত, প্রকাশকাল : ২০০০ ইং, পৃষ্ঠা- ২৯৭]।

আর এসকল ফযীলতের কারনে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম সম্পর্কে বিখ্যাত ফক্বীহ ছাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ননা করেন- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র সমালোচনা করা, বিদ্বেষ করা কুফরী।
আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন: “নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ পাক ও তার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের প্রতি আল্লাহ পাকের অভিসম্পাত এবং তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।”
[সূরা আহযাব, আয়াত ৫৭]।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন: “তোমরা আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণকে গালি দিও না। কেননা যদি তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমান স্বর্ণ আল্লাহ পাকের রাস্তায় দান করে, তবুও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগনের এক মুদ (১৪ ছটাক) বা অর্ধ মদ (৭ ছটাক) গম দান করার ফযীলতের সমপরিমান ফযীলতও অর্জন করতে পারবে না।”
সমগ্র দুনিয়ার সকল মানুষের নেক আমল এক করলেও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুদের কয়েক মুহূর্তের আমলের সমান হবে না।
হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘তোমরা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছাহাবীদের গালাগাল করো না। কেননা তাঁদের এক মুহূর্তের (ইবাদতের) মর্যাদা তোমাদের প্রত্যেকের জীবনের আমলের চেয়ে বেশি।’
[সূত্রঃ ইবন মাজা : ১৬২; আহমাদ বিন হাম্বল, ফাযাইলুস ছাহাবা ১৫]।

এ ব্যাপারে ইবন হাযম রাহিমাহুল্লাহর একটি মূল্যবান বাক্য রয়েছে, তিনি বলেন, ‘আমাদের কাউকে যদি যুগ-যুগান্তর ব্যাপ্ত সুদীর্ঘ হায়াত প্রদান করা হয় আর সে তাতে অব্যাহতভাবে ইবাদত করে যায়, তবুও তা ওই ব্যক্তির সমকক্ষ হতে পারবে না যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক সেকেন্ড বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য দেখেছেন।’
[সূত্রঃ ইবন হাযম, আল-ফাছলু ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়ান নিহাল ২/৩৩]।

ইবন মুগাফফাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমার ছাহাবীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরবর্তীকালে তোমরা তাঁদের সমালোচনার নিশানায় পরিণত করো না। কারণ, যে তাদের ভালোবাসবে সে আমার মুহাব্বতেই তাদের ভালোবাসবে। আর যে তাঁদের অপছন্দ করবে সে আমাকে অপছন্দ করার ফলেই তাদের অপছন্দ করবে। আর যে তাঁদের কষ্ট দেবে সে আমাকেই কষ্ট দেবে। আর যে আমাকে কষ্ট দেবে সে যেন আল্লাহকেই কষ্ট দিল। আর যে আল্লাহকে কষ্ট দেবে অচিরেই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন।’
[সূত্রঃ তিরমিযী : ৪২৩৬; সহীহ ইবন হিব্বান-৭২৫৬]।

সূতরাং উক্ত দলীল থেকে বোঝা গেল, যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমদের প্রতি বিন্দু মাত্র সমালোচনা করবে, উনাদের বিরুদ্ধে স্বজন প্রীতির অপবাদ দিবে, তারা নিশ্চিত কাফির হয়ে জাহান্নামে যাবে।
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ মুবারক করেন: “একমাত্র কাফিররাই তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে।
[সূরা ফাতাহ ২৯ ]।
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীস শরীফে বর্নিত আছে: যে ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগনের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করবে, সে কাফির।”
[সূত্রঃ মিশকাত শরীফ]।

‘কানযুল উম্মাল’ নামক বিখ্যাত হাদীস শরীফের কিতাবে বর্নিত আছে: “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগনের প্রতি মুহব্বত ঈমান, আর উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করা কুফরী।”

ইমাম আবূ যুর‘আ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘যখন তুমি কোনো ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছাহাবীগণের কোনো একজনের মর্যাদাহানী করতে দেখবে তখন বুঝে নেবে যে সে একজন ধর্মদ্রোহী নাস্তিক। আর তা এ কারণে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে সত্য, কুরআন সত্য। আর এ কুরআন ও সুন্নাহ আমাদের কাছে পৌঁছিয়েছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছাহাবায়ে কিরাম। নিশ্চয় তারা চায় আমাদের প্রমাণগুলোয় আঘাত করতে। যাতে তারা কিতাব ও সুন্নাহকে বাতিল করতে পারে। এরা হলো ধর্মদ্রোহী নাস্তিক। এদেরকে আঘাত করাই শ্রেয়।’
[সূত্রঃ খতীব বাগদাদী, আল-কিফায়াহ ফী ইলমির রিওয়ায়াহ, ১/১১৯]।

হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিছাল শরীফের পর একটা মুরতাদ দল বের হবে যারা কিনা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাদের প্রতি বিদ্বেষ করবে। এদের সম্পর্কে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্বেই সতর্ক করে ভবিষ্যতবানী করেছেন:
“অতি শীঘ্রই একটি দল বের হবে, যারা আমার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগনকে গালি দিবে, তাঁদের নাকিছ বা অপূর্ন বলবে। সাবধান ! সাবধান ! তোমরা তাদের মজলিসে বসবে না, তাদের সাথে পানাহার করবে না, তাদের সাথে বিয়ে-শাদীর ব্যবস্থা করবে না। অন্য রেওয়াতে আছে, তাদের পেছনে নামাজ পড়বে না এবং তাদের জন্য দোয়া করবে না।”

আরো ইরশাদ হয়েছে: “যখন তোমরা কাউকে আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগনকে গালি দিতে দেখবে, তখন তোমরা বলো, এ নিকৃষ্ট কাজের জন্য তোমাদের প্রতি আল্লাহ পাকের লা’নত বর্ষিত হোক।”
[সূত্রঃ তিরমীযি শরীফ ছাহাবীদের অধ্যায়]।

হযরত আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ছাহাবীকে গালি দেবে তার ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা সকল মানুষের অভিশাপ। আল্লাহ তার নফল বা ফরয কিছুই কবুল করবেন না।’
[সূত্রঃ তাবরানী-২১০৮]।

হযরত আতা ইবন আবী রাবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে আমার ছাহাবীদের ব্যাপারে আমাকে সুরক্ষা দেবে কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুরক্ষাকারী হব। আর ‘যে আমার ছাহাবীকে গাল দেবে তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ।’
[সূত্রঃ আহমাদ বিন হাম্বল, ফাযাইলুস ছাহাবা ১৭৩৩]।

বিখ্যাত সিরাত গ্রন্থ “শিফা” তে বর্নিত আছে: “আমার ছাহাবীদের আলোচনাকালে তোমরা সংযত থেকো।”

মহান আল্লাহ ঈমানদারগণকে ছাহাবায়ে কেরাম -এর জন্য দো‘আ প্রার্থনার আদেশ করেছেন এবং সত্যিকার মুমিনগণ তা বাস্তবায়নও করেছেন। কিন্তু কতিপয় লোক কুরআন ও হাদীছ নির্দেশিত এই পথ প্রত্যাখ্যান করে চরম ধৃষ্টতার পরিচয় দিয়েছে। ক্ষমা প্রার্থনার পরিবর্তে তারা তাঁদেরকে দিয়েছে গালি এবং প্রশংসার পরিবর্তে করেছে নিন্দা।

পরিশেষে, ছাহাবীগণের মধ্যে যেসব মতানৈক্য হয়েছে, তদ্বিষয়ে আমাদের করণীয় কি?
সালাফে ছালেহীনের এক ব্যক্তিকে যখন এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তখন তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, আল্লাহ তা থেকে আমাদের তরবারীকে মুক্ত রেখেছেন। অতএব, আমরা তা থেকে আমাদের যবানকেও মুক্ত রাখব’।
[ঘটনাটি ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) থেকে বর্ণনা করা হয়।
দ্রঃ হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৯/১১৪; আল-মুজালাসাহ/১৯৬৫]।

আরেকজনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি নিম্নোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করেন, ‘তারা ছিল এক সম্প্রদায়, যারা গত হয়ে গেছে। তারা যা করেছে, তা তাদেরই জন্য। তারা কি করত, সে সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না’ (সূরা বাক্বারাহ ১৩৪)
[দ্রঃ খাল্লাল, আস-সুন্নাহ, ২/৪৮১]।

عن أبى بردة رضي الله عنه قال : قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم – النجوم أمنة للسماء فإذا ذهبت النجوم أتى السماء ما توعد ، وأنا أمنة لأصحابي فإذا ذهبت أتى أصحابي ما يوعدون ، وأصحابي أمنة لأمتي فإذا ذهب أصحابي أتى أمتي ما يوعدون.

অর্থঃ হযরত আবু বুরদাহ(রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه و آله و سلم) ইরশাদ করেছেন যে, নক্ষত্র সমুহ আসমানের জন্য আমানত স্বরুপ। যখন নক্ষত্রগুলি বিলুপ্ত হয়ে যাবে, তখন আসমানকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কেয়ামত চলে আসবে। এবং আমি আমার সাহাবীদের জন্য আমানত স্বরুপ। অতএব যখন আমি ইহকাল ত্যাগ করব তখন তাঁদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁদের (সাহাবাদের) মধ্যে ইজতেহাদি মতানৈক্য দেখা দিবে। এবং আমার সাহাবীরা উম্মতের জন্য আমানত স্বরুপ। অতএব যখন তাঁদের যুগের অবসান ঘটবে তখন আমার উম্মতের মধ্যে বিভিন্ন রকমের ফেতনা-ফ্যাসাদের সুত্রপাত ঘটবে।
[সূত্রঃ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩০৮]।

উক্ত হাদিস দ্বারা বুঝা গেল যে, সাহাবায়ে কেরামের যুগ ছিল স্বর্ণের যুগ। তাঁদের মধ্যকার কিছু বিষয়াদি নিয়ে পারস্পরিক মতানৈক্য ছিল ইজতিহাদী।

ছাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে আমাদের অন্তঃকরণকে নিষ্কলুষ রাখতে হবে। তাঁদের প্রতি হৃদয়ে কোন হিংসা-বিদ্বেষ বা ঘৃণা থাকবে না; থাকবে না কোন প্রকার শত্রুতা। বরং হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান পাবে শুধু ভালবাসা, অনুগ্রহ আর সহানুভূতি।

وصلى الله على سيدنا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين. والحمد لله رب العالمين
__________
 
Top