♥সিদিরাতুল মুনতাহা♥
 পবিত্র মি'রাজের ঘটনা প্রকৃতি পর্ব (৫)

এর পর নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সিদরাতুল মুনতাহার দিকে নিয়ে যাওয়া হল। এটি হচ্ছে সৃষ্টজীবের কর্মতৎপরতা এবং এলেমের সমাপ্তিস্থল। আল্লাহ তা'আলার হুকুম এখানেই নাযিল হয়। এখান থেকে যাবতীয় আহকাম গ্রহণ করার জন্য ফেরেশতারা অপেক্ষামান থাকে। এস্থান অতিক্রম করার অধিকার ও ক্ষমতা কারো নেই। সব কিছু এখানেই এসে শেষ হয়ে যায়। ফেরেশতারা নিম্নজগত থেকে ঊর্ধ্বজগতে যা কিছু নিয়ে যান এবং ঊর্ধ্বজগত থেকে হুকুম ও বিধান সংক্রান্ত যা কিছু নিয়ে নিম্নজগতে অবতরন করেন, এ সবের সংযোগস্থল হচ্ছে সিদরাতুল মুনতাহা। মাখলুকের দিক থেকে কেউই এস্থান অতিক্রম করতে পারেনি। কেবল হুজুর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ব্যতিক্রম। এ স্থানে আসার পর হযরত জিব্রাইল (আঃ) থেমে গেলেন এবং নবী করীম ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-পৃথক হয়ে গেলেন।

হুজুর পাক ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিব্রাইল (আঃ) জিজ্ঞেসা করলেন, এটা কোন জায়গা এবং পৃথক হওয়ার কারণ কি? তিনি আরও বললেন, এমন স্থানে তো কোন বন্ধু বন্ধুকে একা ফেলে যেতে পারে না। হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন, 'আমি যদি আর এক আঙ্গুল সামনে অগ্রসর হই, তাহলে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাব।' কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, হুযুর পাক (সাঃ) জিব্রাঈল (আঃ) কে বললেন, 'কোন আরয থাকলে বলুন। আমি তা বারিতা'আলার কাছে পেশ করবো।' জিব্রাঈল (আঃ) বললেন, 'আমার আরযু এটাই, কিয়ামতের দিন আল্লাহতা'আলা যেন আমার বাহুকে আরও প্রশস্ত করে দেন, যাতে আপনার উম্মতকে আমার বাহুতে বহন করে পুলসিরাত পার করে দিতে পারি! সিদরাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে বরই বা কুল গাছ। এটির নাম সিদরাতুল মুনতাহা রাখার সম্পর্কে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-ই ভাল জানেন।

বর্ণিত আছে, গাছটির তিনটি বিশেষত্ব রয়েছে।
১. এর ছায়া সুদীর্ঘ।
২. এর ফল অত্যন্ত সুস্বাদু।
৩. এর ঘ্রাণ অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।

ইসলামের সাথে এই গাছটির সাদৃশ্য রয়েছে, যা অন্তরে বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি এবং কাজের বাস্তবায়ন সমন্বয়ে গঠিত হয়। মাটিতে গাছ যেমন লাগানো হয়, আকাশে সম্ভবতঃ সেই গাছটি ওভাবেই লাগানো আছে। মাটিতে গাছ যেমন প্রতিপালিত হয়, সে রখম বাতাসেও প্রতিপালিত হতে পারে। এটা আল্লাহ তা'আলার কুদরেতের বাইরে নয়। যেমন, হুজুর পাক (সাঃ) শূন্যমনণ্ডলে বা হাওয়ায় ভ্রমন করেছিলেন। আবার এমনও হতে পারে যে, গাছটি জান্নাতের মাটিতে পুতে দেয়া হয়েছে। যেমন বেহেশতী বৃক্ষরাজী বেহেশতের মাটিতে প্রোথিত আছে। আবার এমনও হতে পারে বৃক্ষটি কোথাও পুঁতে দেয়া হয়নি, নিছক আল্লাহ তা'আলার কুদরতের মধ্যে তার স্থিতি! প্রকৃত অবস্থা আল্লাহ পাকই ভালো জানেন।

সিদরাতুল মুনতাহা থেকে প্রবাহিত হয়েচে চারটি নহর। দু'টি যাহেরী আর দু'টি বাতেনী। বাতেনীব নহরসমূহ জান্নাতে চলে গিয়েছে। আর যাহেরী নহর দুটো পৃথিবীতে প্রবাহিত হচ্ছে। নীল ও ফোরাত হচ্ছে উল্লিখিত দুটো নহর। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর হাদীস থেকে বুঝা যায়, উক্ত চারটি নহরই জান্নাতের। সেগুলো হচ্ছে নীল, ফোরাত, সহীন ও জীহান। আবার কেউ কেউ বলেছেন, উক্ত নহরসমূহ জান্নাতের-এ কথার অর্থ জান্নাতের কল্যাণ ও পরিণাম, যা চিরস্থায়ী হবে। কেউ কেউ বলেছেন, জান্নাতের নহর মানে জান্নাতের অস্তিত্ব থেকে নির্গত নহর। ওয়ল্লাহু আ'লাম।

নহরে নীলের অবস্থা বেহেস্তী বস্তুর অবস্থার মতই রহস্যময় ও সূক্ষ্ম, যা বুঝা দুঃসাধ্য। এছাড়াও জান্নাতে পানি, দুধ, মধুর নহর প্রবাহমান কোরআন মজীদে এ রখমই উল্লেখ করা হয়েছে। আবু হাতেম রাঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (সাঃ) সপ্তম আকাশ পেরিয়ে একটি নহর দেখতে পেলেন। ইয়াকুত ও জমরুদ পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে নহরটি। তার পাশে পড়ে থাকা পেয়ালাগুলো সোনা, রূপা, ইয়াকুত, মোতি ও যবরযদের। তার পানি দুধের চেয়ে সাদা এবং মধুর চেয়ে মিষ্টি। এটা লক্ষ্য করে নবী করীম (সাঃ) জিব্রাঈল-কে (আঃ) বললেন,

'হে জিব্রাঈল! এটা কি? তিনি উত্তর দিলেন, 'এটা হাউযে কাওসার, আল্লাহ তা'আলা এটা আপনাকে দান করেছেন। হযর আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে জান্নাতে প্রবাহিত একটি নহর রয়েছে। না সালসাবিল। এ সালসাবিল নহর দু'টি ধারা থেকে নেমে এসেছে। একটির নাম কাউসার অপরটির নাম রহমত। গুনাহাগার বান্দা জাহান্নামে জ্বলে পুড়ে যখন কালো হয়ে যাবে এবং নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর শাফায়াতে তারা যখন জাহান্নাম থেকে বের হবে, তখন এই নহরের পানি দিয়ে তাদেরকে গোসল করানো হবে। তারপর তারা পুনরায় প্রানবন্ত হয়ে উঠবে। ( মাদারেজুন নবুয়াত ২য় খন্ড) 

(চলবে).........

 
Top