পবিত্র মিলাদ শরীফ সম্পর্কে বিরোধিদের আপত্তি ও তার জবাব, পর্ব: ০১

সাহাবাগণ ﷺ উনারা নেয়ামতের শোকরিয়া স্বরূপ শুধুমাত্র আল্লাহর  জিকিরেরই মজলিস করেছেন, অন্য কোন আমলের মজলিস করেননি অথচ বর্তমানে মিলাদে প্রচলিত পদ্ধতিতে যে আমলসমূহ করা হয় তা সাহাবাগণ  কর্তৃক প্রমাণিত নয়। অতএব মিলাদ পড়া নাজায়েয। 

জবাব : আপনাদের এ আপত্তির কয়েকটি জবাব রয়েছে।

প্রথমতঃ বর্তমান প্রচলিত মিলাদ শরীফের সমস্ত আমলই তথা (কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ সালাম, নবী করিম  ﷺ-এর দুনিয়ায় আগমন-বৃত্তান্ত আলোচনা করা, নাত-কসিদা পাঠ করা, জিকির, মুনাজাত করা) সবই কোরআন, সুন্নাহ ও সাহাবাগণ এর আমল দ্বারা প্রমাণিত। 

দ্বিতীয়তঃ মিলাদ মাহফিলের সমস্ত আমলই জিকিরের অন্তর্ভুক্ত। কেননা জিকির কেবল কয়েকটি তাসবীহর নাম নয় বরং জিকির শব্দটি ব্যাপক। যেমন এ বিষয়ে বর্ণিত আছে

ويشمل كل انواع العبادات من صلاة وصيام وحج وقراءة

قرآن وثناء ودعاء وتسبيح وتحميد وتمجيد وغير ذالك -

অর্থ:- প্রত্যেক প্রকার ইবাদত যেমন নামায, রোযা, হজ্ব, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া, তাসবীহ- তাহমীদ, এরকম বিভিন্ন প্রকার আনুগত্যমূলক আমল সবই জিকিরের অন্তর্ভূক্ত। 

এ সম্পর্কে অন্যত্র বলা হয়েছে

كل ما تكلم به اللسان وتصوره القلب مما يقرب الى الله ، تعلم علم وتعليمه وامر بمعروف وهي عن منكر فهو من ذكر الله -

অর্থ:- আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের আশায় প্রত্যেক এমন বিষয়  যা মুখে উচ্চারণ বা অন্তরে স্মরণ করা হয়, যেমন ইলম অর্জন করা,  জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া, ভাল কাজের আদেশ দেওয়া, খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করা সবই জিকিরের অন্তর্ভুক্ত।"
→মাজমুওয়ুল ফতোয়া,  খন্ড-১০, পৃঃ৬৬১।

মূলকথা হল জিকির বলতে সে আমাকেই বুঝানো হয় যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার স্মরণ করা হয়। জিকির সাধানণত তিন ধরণের হয়ে থাকে।

(১) الذكر بالقلب বা কলবের মাধ্যমে জিকির। যেমন- অন্তরে অন্ত রে আল্লাহর স্মরণ করা, আল্লাহকে ভয় করা, ইত্যাদি। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন

ائما المؤمنون الذين اذا ذكر الله وجلت قلوبهم

অর্থ:- ঈমানদারগণ এমনই যে, যখন আল্লাহর স্মরণ করা হয়, তখন তাদের অন্তর ভয়ে প্রকম্পিত হয়। (সুরা আনফাল, আয়াত-২)

(২) الذكر بالسانবা মুখে উচ্চারণের মাধ্যমে জিকির। যেমন কোরআন তেলাওয়াত, মুখে উচ্চারণ করে তাসবীহ পাঠ, সালাম আদান প্রদান, দরুদ শরীফ পাঠ করা ইত্যাদি।। এ বিষয়ে পবিত্র হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে

عن المهاجر بن قنفذ أنه أتى النبي صلى الله عليه وسلم وهو يبول فسلم عليه فلم يرد عليه حتى توضأ ثم اعتذر اليه فقال انى گرهت  ان اذكر الله عزوجل الا على طهارة .رواه أحمد أبو داود والنسائي وابن ماجة وغير هم باسا نيد صحيحة
অর্থ:- হযরত মুহাজির বিন কুমপুয রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু  হতে বর্ণিত, তিনি হুযুর (  ﷺ) এর নিকট এসে এমন অবস্থায় সালাম দিলেন যখন রাসূল ﷺ  প্রস্রাব খানায় ছিলেন । কিন্তু হুযুর  ﷺ তাঁর সালামের জবাব দিলেন না । বরং নবীজি অযু করেই সালামের জবাব দিলেন এবং জবাব দেরিতে দেওয়ার কারণ হিসেবে বলেন, আমি পবিত্র অবস্থায় ছাড়া আল্লাহ তাআলার জিকির করাকে অপছন্দ করি।
→আবু দাউদ শরীফ, খন্ড-১, পৃ:৪, হাদিস নং- ১৭, সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস নং- ৮৯৩।

হাদিসটি ইমাম আহমদ, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ তাঁদের কিভাবে সহিহ সনদে বর্ণনা করেছেন।


(৩) الذكر بالعمل বা আমলের মাধ্যমে জিকির। যেমন নামায, রোযা, হজ্ব ইত্যাদি। যেমন- হজ্বকে জিকির হিসেবে উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন

واذكروا الله في أيام معدودات 
অর্থ: আর স্মরণ কর আল্লাহকে নির্দিষ্ট সংখ্যক কয়েকটি দিনে। (সুরা বাকারা, আয়াত-২০৩)

 অনূরূপ নামাযকে জিকিরের অন্তর্ভুক্ত করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন

الني أنا الله لا إله الا أنا فاعبدوني واقم الصلاة لذكرى অর্থ:- নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। অতঃপর আমার ইবাদত কর। 
এবং আমার জিকিরের জন্য নামায পড়।
(সুরা ত্বহা, আয়াত-১৪)

সুতরাং প্রমাণিত হল নামায, কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরীফ তাসবিহ সবই মূলত আল্লাহ তাআলার জিকিরেরই অন্তর্ভূক্ত। অনুরূপভাবে মিলাদ শরীফের সকল আমলসমূহও জিকির শরীফের অন্তর্ভূক্ত। যেমন মিলাদের বর্তমান প্রচলিত আমলসমূহে কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরীফ, নাত, তাসবিহ-তাহলিল, হুযুর ﷺ -এর জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা সবই হল জিকিরে লিসানি বা মৌখিক জিকিরের অন্তর্ভূক্ত। আর তাবারুক বিতরণ হল জিকিরে আমালি বা আমলগত জিকিরের অন্তর্ভূক্ত। অতএব মিলাদ মাহফিল মূলত জিকির মাহফিলেরই অন্তর্ভূক্ত, যা আল্লাহ পাকের সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত হুযুরে পাক নাকে প্রাপ্তির শোকরিয়া স্বরূপ পালন করা হয়।
 
Top