বর্তমানে মিলাদ শরীফে যে আমলসমূহ প্রচলিত রয়েছে তা সম্পূর্ণ শরীয়ত সম্মত উত্তম আমল। এতে নাজায়েযের লেশ মাত্র নেই এবং প্রত্যেকটি আমল হুযুর ﷺ সাহাবাকেরাম,ও তাবেয়ীনগণের আমলে বর্তমান ছিল। মিলাদ শরীফের বর্তমান প্রচলিত  আমলসমূহ হল

(১) পবিত্র কোরআন হতে তেলাওয়াত। 
(২) দরুদ শরীফ ও সালাম পাঠ ।
(৩) নবীজির মিলাদ বা দুনিয়ার আগমন-বৃত্তান্ত আলোচনা 
(৪) কিয়াম করা।
(৫) নাতে মোস্তফাﷺ বা কসিদা পাঠ।
(৬) জিকির করা। 
(৭) মোনাজাত করা।

নিম্নে প্রত্যেকটি আমলের দলিল কোরআন-সুন্নাহর আলোকে পেশ করা হল

(১) পবিত্র কোরআন হতে তেলাওয়াত করা

পবিত্র মিলাদ শরীফ শুরু হয় কোরআনে করিম হতে তেলাওয়াতের মাধ্যমে। এ বিষয়ে কারো সন্দেহ থাকার প্রশ্নই আসেনা যে কোরআনে করিম তেলাওয়াত জায়েয। হোক তা একাকী বা সম্মিলিত মাহফিলের মাধ্যমে। এরপরও মিলাদ বিদ্বেষীদের সুবুদ্ধি উদয়ের জন্য কোরআনে করিম হতে তেলাওয়াত জায়েযের দলিল উপস্থাপন করা হল।

(ক) একাকী অবস্থায় তেলাওয়াতের দলিল:

একাকী কোরআন তেলাওয়াত করা জায়েয। এ ব্যাপারে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে

عن عبد الله قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أقر على قال قلت أقرأ عليك وعليك انزل قال اني اشتهى ان اسمعه من غيري قال فقرأت النساء حتى اذا بلغت فكيف اذا جئنا من كل أمة بشهيد وجئنا بك على هؤلاء شهيدا قال لي كفت أوامسك فرايت عينيه تذرفان 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে পাক ﷺ আমাকে বললেন, তুমি আমাকে কুরআন পড়ে শোনাও। আমি বললাম, আমি তা আপনাকে পড়ে শোনাব? অথচ তা আপনার উপর নাযিল হয়েছে। তিনি বললেন, আমি তা অন্যের নিকট থেকে শুনতে ভালবাসি। অতঃপর আমি সুরা নিসা পড়তে পড়তে এই আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলাম যার অর্থ হল "আর কেমন অবস্থা হবে যখন আমি প্রত্যেক গোষ্ঠী থেকে একজন সাক্ষী আনব এবং আপনাকে তাদের উপর সাক্ষা বানাবো?” তিনি বললেন, থাম। আমি দেখলাম তাঁর দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে।"
→সহীহ বোখারী শরীফ, হাদিস নং- ৪৬৬৭

দলিল: অপর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল ইরশাদ করেছেন بعشر من قرأ حرفا من كتاب الله فله به حسنة والحسنة . لها لا أقول الم حرف ولكن ألف حرف ولام حرف وميم حرف

অর্থ:- যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম- মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ,লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।
→সুনানে আত তিরমিজি, হাদিস নং- ২৯১০

উপরোক্ত হাদি দ্বারা প্রমাণিত একাকী কোরআন তেলাওয়াত করা জায়েয।

(খ) দলবদ্ধভাবে কোরআন তিলাওয়াতের দলিল: দলবদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করা জায়েয। এ বিষয়ে রাসূলে পাক এরশাদ করেছেন

ما اجتمع قوم في بيت من بيوت الله يتلون كتاب الله ويتدارسونه بينهم الا نزلت عليهم السكينة وغشيتهم 
الرحمة وحفتهم الملائكة وذكرهم الله فيمن عنده

অর্থ:-যদি একদল  মানুষ আল্লাহ তাআলার কোন ঘরে একত্রিত হয়ে তাঁর কিতাব তেলাওয়াত করে এবং পরস্পর এর পাঠদান তাদের উপর প্রশান্তি বর্ষিত হয়, রহমত তাদেরকে ঘিরে নেয় এবং ফেরেশতারা তাদেরকে বেষ্টনী দিয়ে রাখে। আর আল্লাহ তাআলা তাঁর  নিকট যারা আছেন তাদের মাঝে এদের আলোচনা করেন। 
→সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদিস নং- ৪৮৬৭
 উপরোক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হল দলবদ্ধ বা মজলিস সহকারে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত শুধুমাত্র জায়েযই নয়, বরং তা অত্যন্ত বরকতময় আমল।

(২) দরুদ শরীফ ও সালাম পাঠ

মিলাদ শরীফের অন্যতম আমল হল প্রিয় নবী এর উপর দরুদ সালাম পেশ করা। দরুদ সালাম জায়েজ  হওয়ার ব্যপারে কারো সন্দেহ নেই। তবে বর্তমানে অনেকে দলবদ্ধভাবে বা মজলিশ সহকারে দরূদ সালাম পাঠ করার বিরোধীতা করছে। নিম্নে একাকী ও মজলিশ সহকারে উভয় হালতে দরুদ সালাম পেশ করার বৈধতার দলিল উপস্থাপিত হল ।

(ক) একাকী অবস্থায় দরুদ সালাম পাঠের দলিল

দলিল: হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে

عن انس بن مالك قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صلى على صلاة واحدة صلى الله عليه عشر صلوات وحط عنه عشر خطيئات -

অর্থ:- হযরত আনাস বিন মালেক থেকে বর্ণিত, মহানবী (  ﷺ) -বলেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটা রহমত নাযিল করবেন এবং তার আমলনামা থেকে দশটা পাপ মুছে দিবেন।
→সহীহ ইবনে হিব্বান,  হাদিস নং- ৯০৬

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ বলতে শুনেছেন, “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার উপর দশবার দরুদ পাঠ করবেন।"
→ সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদিস নং- ৩৮৪

দলিল: অপর একটি হাদিস শরীফ

عن ابن مسعود رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال أولى الناس بي يوم القيامة أكثرهم على صلاة

অর্থ:- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সব লোকের চাইতে আমার বেশি নিকটবর্তী হবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমার উপর দরুদ পড়বে।
→তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং- ৪৮৪

উপরোক্ত হাদিসসমূহ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে, একাকী অবস্থায় দরুদ পাঠ করা জায়েয।

(খ) দলবদ্ধভাবে, মালিশ সহকারে বা সম্মিলিত দরুদ সালাম পাঠ করার দলিল:

দলিল: পবিত্র হাদিসে বর্ণিত আছে - عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال ما جلس قوم مجلسا لم يذكروا الله فيه ولم يصلوا على نبيهم الا كان عليهم ترة فإن شاء عذبهم وان شاء غفر لهم قال أبو عيسى هذا حديث حسن صحيح

অর্থ:- হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসুল ﷺ বলেন, কোন গোষ্ঠী যদি কোন মজলিসে বসে এবং সেখানে আল্লাহর জিকির না করে আর নবী  ﷺ -এর উপরও দরুদ না পড়ে তবে উক্ত মজলিসটি তাদের জন্য (কিয়ামতের দিন) আফসোসের কারণ হবে। তিনি ইচ্ছা করলে তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন এবং ইচ্ছা করলে তাদেরকে মাফ করতে পারেন।
→জামে তিরমিজি,  হাদিস নং- ৩৩০২

ইমাম তিরমীযি (রহ) বলেন, হাদিসখানা হাসান সহিহ। অত্র হাদিস দ্বারা এটাই প্রমাণিত যে, মজলিশের মধ্যে দরুদ পাঠ করা আবশ্যক। অন্যথায় কিয়ামতের দিন এর জন্য জবাবদিহিতা রয়েছে।

দলিল: রাসূলে পাকের ওফাত মোবারকের পর সাহাবা নারী-পুরুষগণ, শিশুরা নবীজির ঘরে দলে দলে সম্মিলিতভাবে দরুদ সালাম পাঠ করেছেন। যেমন হাদিস শরীফে এরশাদ হয়েছে

فرفع فراش رسول الله صلى الله عليه وسلم الذي لو في فيه فحفر له تحته ثم دعى الناس على رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلون عليه ارسالاً الرجال حتى اذا فرغ منهم أدخل النساء حتى اذا فرغ من النساء أدخل الصبيان
অর্থ:- যখন নবী করীম ﷺ ওফাত বরণ করলেন, এখন বিছানা  মোবারক সরানোর পর নবীজিকে ওই স্থানে রাখা হল যেখানে তিনি ওফাত বরণ  করেছেন। তারপর লোকদেরকে নবীজির উপর দলে দলে দরুদ  পড়ার জন্য বলা হল প্রথমে পুরুষরা দলবদ্ধভাবে দরুদ পড়ল।যখন  পুরুষরা বের হল, তখন মহিলারা দলবদ্ধভাবে প্রবেশ করে দরুদ পড়ল। যখন মহিলারা বের হল, তখন শিশুরা দলবদ্ধভাবে প্রবেশ করে দরুদ পাঠ করল।
→সুনানে আবী ইয়ালা, হাদিস নং- ২২

উপরোক্ত হাদিসদ্বয় দ্বারা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হল দলবন্ধভাবে, সম্মিলিতভাবে বা মজলিস সহকারে দরুদ সালাম পাঠ করা সাহাবাগণেই সুন্নাত। সুতরাং যারা মজলিশ সহকারে দরুদের বিরোধীতা করল তারা মূলত সাহাবাগণেরই বিরোধীতা করল।

(৩) নবীজির মিলাদ বা দুনিয়ায় আগমন-বৃত্তান্ত আলোচনা

মিলাদ শরীফের মৌলিক একটি আমল হলো হুবুর এর মিলাদ বা দুনিয়ায় আগমনের বৃত্তান্ত আলোচনা করা। এখন আমরা দেখব নবীজির দুনিয়ায় আগমনের বৃত্তান্ত আলোচনা শরীয়তসম্মত কিনা।

পবিত্র কোরান-হাদিস অধ্যায়ন করলে বুঝা যায় নবীজির দুনিয়ায় আগমনের বৃত্তান্ত আলোচনা করা কেবলমাত্র সুন্নাতে সাহাবা কিংবা সুন্নাতে রাসূল নয়, বরং এটি স্বয়ং আল্লাহ তাআলারই সুন্নাত। যেমন (১) পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে।

واذ أخذ الله ميثاق النبيين لما أتيتكم من كتاب وحكمة ثم جاءكم رسول مصدق لما معكم لتؤمنن به ولتنصرته قال أقررتم وأخذتم على ذلكم اصرى قالوا أقررنا قال 
فاشهدوا وأنا معكم من الشاهدين
আর স্মরণ করুন, যখন আল্লাহ নবীদের অঙ্গীকার নিয়েছেন আমি তোমাদেরকে যে কিতাব ও হিকমাত দিয়েছি, অতঃপর তোমাদের সাথে আছে তা সত্যায়নকারীরূপে একজন রাসূল তোমাদের কাছে আসবে তখন অবশ্যই তোমরা তার প্রতি ঈমান আনবে এবং অবশ্যই তাকে সাহায্য করবে। তিনি বললেন, তোমরা কি স্বীকার করেছ এবং এর উপর আমার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছ? তারা বলল, আমরা স্বীকার করলাম। আল্লাহ বললেন, তবে তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।
→সুরা আলে ইমরান, আয়াত নং-৮১

উপরোক্ত আয়াতে করিমায় স্বয়ং রাব্বুল আলামীন নবীজির আগমন উপলক্ষে অন্যান্য নবীদের নিয়ে আলোচনা করেছেন, এবং তাদেরকে নবীজির মিলাদের সুসংবাদ দান করেছেন।

(২) নবী করিম এর দুনিয়ায় আগমনের আলোচনা করা এটা স্বয়ং সুন্নাতে রাসূল। যেমন পবিত্র হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে عن عرباض بن سارية قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انى عبد الله لخاتم النبيين وان آدم عليه السلام لمنجدل في طينته وسائبتكم باول ذلك دعوة ابي ابراهيم ويشارة عيسى بي ورويا امي التي رأت حين وضعته نورا اضاءت منه قصور الشام

অর্থাৎ হযরত ইরবাদ ইবনে সারিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু  হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে পাক ﷺ ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর বান্দাহ, আমি আল্লাহর নিকট তখনো শেষ নবী হিসেবে ছিলাম যখন আদম আর কাদা মাটির মাঝে মিশ্রিত ছিল। আর অচিরেই আমি তোমাদেরকে আমার প্রথম অবস্থা খবর দিচ্ছি। আমি হলাম ইব্রাহিম (আঃ)এর দোয়ার ফসল, এবং ঈসা(আঃ)  এর সুসংবাদ এবং আমার মায়ের ঐ দর্শন যেটা তিনি আমাকে ভূমিষ্ট করার সময় দেখেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন তার থেকে একটি নূর বের হলো যা সুদূর সিরিয়ার প্রাসাদ সমূহকে আলোকিত করেছিল।"
→ক. মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, হাদিস নং- ১৭২০৩
খ. মিশকাত শরীফ, খন্ড-২, পৃ-২৫১, হাদিস নং- ৫৭৫৯
গ. মুসতাদরেক আল হাকেম, খন্ড-২, পৃ-৬৫৬
ঘ. দালায়েলুন নবুয়ত, খন্ড-১, পৃ-৮৩
ঙ. তাফসীরে ইবনে কাসীর, খন্ড-৪, পৃ-৩৬০, হাদিসের মান সহীহ।

উপরোক্ত হাদিস শরীফ স্পষ্ট বর্ণনা দেয় যে, প্রিয় নবীজি স্বয়ং দুনিয়ায় আগমন-বৃত্তান্ত আলোচনা করতেন।

(৩) এবার আসুন দেখি সাহাবাগণ নবীজির মিলাদ বা দুনিয়ায় আগমনের বৃত্তান্ত আলোচনা করতেন কিনা। عن أبي الدرداء رضي الله عنه اله مر مع النبي صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصاري وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لأبنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك أبواب الرحمة و الملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك

অর্থ:- হযরত আবু দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু  হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি হুযূর পাক ﷺ এর সাথে হযরত আমির আনছারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু  এর গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তান-সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে হুযূর পাকﷺ -এর বেলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে বেলাদত শরীফের ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রাসূলুল্লাহ ﷺ র জমিনে তাশরীফ এনেছেন। এমন সময় হুযূর পাক  ﷺহল তথায় উপস্থিত হলেন। তিনি লোকজনের মিলাদ শরীফের অনুষ্ঠান এবং বেলাদত শরীফের কারণে খুশি প্রকাশ করতে দেখে তাঁদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য রহমতের দরজা উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত  ফেরেশতা তোমাদের জন্য মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যারা তোমাদের মত করবে, তাঁরাও নাজাত লাভ করবে।"
→আত তানবীর ফি মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, পৃ-৪২।

উপরোক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হল সাহাবাগণও নবীজির মিলাদ শরীফ তথা দুনিয়ায় আগমনের বৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা করতেন।

অতএব নবীজির দুনিয়ায় আগমনের বৃত্তান্ত আলোচনা করা হল। সুন্নাতে ইলাহি, সুন্নাতে রাসূল ও সুন্নাতে সাহারা। সুতরাং নবীজির মিলাদ বা জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা বরকতময় আমল ।

(৪) কিয়াম করা

মিলাদ শরীফের অন্যতম আমল হল কিয়াম করা। কিয়াম বলতে বুঝায় হুযুরে পাক -এর বেলাদত শরীফের আলোচনা করার সময় আনন্দ প্রকাশ ও উনার প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে দাঁড়ানো, অতঃপর দাঁড়িয়ে দরুদ সালাম পেশ করা। বিলাদতের আলোচনার সময় দাঁড়ানো এবং দাঁড়িয়ে দরুদ সালাম পেশ করা উভয়টি শরীয়তসম্মত। নিম্নে দাঁড়িয়ে  বেলাদত শরীফের আলোচনা করা ও দাঁড়িয়ে দরুদ সালাম পেশ করা উভয়টির দলিল উপস্থাপন করা হলো।

(ক) দাঁড়িয়ে বেলাদত শরীফের আলোচনা করার দলিলঃ দাঁড়িয়ে বেলাদত শরীফের আলোচনা করা এটা স্বয়ং নবী করীম ﷺ  -এরই সুন্নাত। এ বিষয়ে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে

عن عبد الله بن الحارث عن المطلب بن أبي وداعة قال جاء العباس إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فكأنه سمع شيئاً فقام النبي صلى الله عليه وسلم على المنبر فقال من أنا فقالوا أنت رسول الله عليك السلام قال أنا محمد بن عبد الله بن عبد المطلب ان الله خلق الخلق فجعلني في خيرهم فرقة ثم جعلهم بيوتا فجعلني في 
خيرهم بينا وخيرهم نسبا -


অর্থ:- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হারেস মুত্তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি ইবনে আবি ওয়াদায়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,হজরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু  রাসূলﷺ -এর নিকট আসলেন যে, কেমন যেন তিনি (তার বংশ সম্পর্কে) কিছু শুনেছেন। অতঃপর নবী করীম ﷺ এর মিম্বারের উপর দাড়ালেন এবং বললেন, আমি কে? লোকেরা বলল, আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনাকে সালাম। তিনি বললেন, আমি আব্দুল মুত্তালিবের পৌত্র আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মাখলুকাত সৃষ্টি করে তাদের বিভাজন করে আমাকে উত্তম ভাগে রাখলেন, তারপর তাদেরকে দুই দলে ভাগ করে আমাকে উত্তম দলে রাখলেন, অত:পর তাদেরকে বিভিন্ন গোত্রে ভাগ করে আমাকে সর্বোত্তম গোত্রে রাখলেন, তারপর তাদেরকে অনেক বাড়িতে ভাগ করে আমাকে সর্বোত্তম বাড়ী ও সর্বোত্তম বংশে রাখলেন।
→সুনানে তিরমিজি,  হাদিস নং- ৩৪৪৫

দলিল: দাঁড়িয়ে বেলাদত শরীফের আলোচনা করা এটা ঈসা এরও সুন্নাত। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে 

وَ اِذۡ قَالَ عِیۡسَی ابۡنُ مَرۡیَمَ یٰبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اِنِّیۡ رَسُوۡلُ اللّٰهِ اِلَیۡکُمۡ مُّصَدِّقًا لِّمَا بَیۡنَ یَدَیَّ مِنَ التَّوۡرٰىۃِ وَ مُبَشِّرًۢا بِرَسُوۡلٍ یَّاۡتِیۡ مِنۡۢ بَعۡدِی اسۡمُهٗۤ اَحۡمَدُ ؕ 

অর্থ:- হে আমার প্রিয় রাসূল! স্মরণ করুন সে সময়ের কথা, যখন মরিয়াম-তনয় ঈসা বলেছিলেন, হে বনী ইস্রাঈল! আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহর রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। আমার পূর্বেকার তাওরাত কিতাবের সত্যায়নকারী এবং এমন এক সম্মানীত রাসূলের সুসংবাদদাতা যিনি আমার পরে তাশরীফ আনবেন, তাঁর নাম হবে আহমদ।
→সুরা আছ ছফ, আয়াত নং -৬

আল্লামা ইবনে কাসির উক্ত আয়াতের তাফসিরে বর্ণনা করেন وخاطب عيسى عليه السلام أمته الحواريين قائما
 
অর্থঃ- হযরত ঈসা (আ:)  যখন তাঁর উম্মত হাওয়ারিদেরকে নবী করীম ﷺ  এর আগমনের সুসংবাদ দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন তিনি কিয়ামরত ছিলেন।"
→তাফসীরে ইবনে কাসীর,  খন্ড-২, পৃ-২৬১

সুতরাং প্রমাণিত হলো হুযুরে করীম ﷺ  -এর বেলাদতের আলোচনার সময় দাঁড়ানো শরীয়তসম্মত।

(খ) দাঁড়িয়ে দরুদ সালাম পেশ করার দলিল: দাঁড়িয়ে দরুণ সালাম পেশ করা এটাও শরীয়তসম্মত। যেমন দাঁড়িয়ে দরুদ পাঠ করার ব্যাপারে পবিত্র হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে

عن عبد الله بن دينار رأيت ابن عمر يقف على قبر النبي فيصلى على النبي صلى الله عليه وسلم وعلى أبي بكر وعمر رضي الله عنهما -

অর্থ:- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে দিনার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরকে রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে দেখেছি, তিনি হুযুর ﷺ -এর রওজা পাকের সামনে দাঁড়িয়ে নবীজির উপর, হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু  ও হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু  এর উপর দরুদ শরীফ পাঠ করছেন।”
→মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক, কিতাবু কাসরিস সালাত আলান নাবিয়্যি, খন্ড-২, পৃ-১৬৬
→আশ শেফা, খন্ড-২, পৃ-৮৬

 দলিল: অনূরূপ অন্যত্র হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে

عن عبد الرزاق عن معمر عن أيوب عن نافع قال كان ابن عمر اذا قدم من سفر أتى قبر النبي صلى الله عليه وسلم فقال السلام عليك يارسول الله صلى الله عليه وسلم 
السلام عليك يا أبا بكر السلام عليك يا أبتاه


অর্থ:- হযরত নাফে রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু  হতে বর্ণিত, তিনি বলেন হযরত আব্দুল্লাহ  ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন সফর থেকে মদীনায় ফিরতেন, তিনি রাসূলে পাক ﷺ  -এর রওজা মোবারকে তাশরীফ আনতেন, এবং বলতেন "আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ  ﷺ  , আসসালামু আলাইকা ইয়া আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, আসসালামু আলাইকা হে আব্বাজান। "
→মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, বাবুস সালামি আলা কাবরিন নাবিয়্যি  ﷺ, খন্ড-৩, পৃ-৫৭৬, হাদিস নং- ৬৭২৪।

সুতরাং প্রমাণিত হলো পবিত্র মিলাদ শরীফে কিয়াম করা তথ্য বেলাদতের আলোচনার সময় দাঁড়ানো এবং দাঁড়িয়ে দরুদ সালাম পেশ করা উভয়টি শরীয়তসম্মত ও বরকতপূর্ণ আমল।









 
Top