❏ প্রশ্ন-৭৬ঃ নামাযীর সামনে দিয়ে মহিলা চলে গেলে নামায ফাসেদ বা ভঙ্গ হবে কি না?


✍ উত্তরঃ নামাযীর সামনে দিয়ে মহিলা চলে গেলে নামায ফাসেদ হবে না যেমন, ফতোয়া শামীতে উল্লেখ আছে,


قال ابن عابدين قوله ولوامرأة او كلب . هذا بيان للاطلاق واشاربه الى الرد على الظاهرة بقولهم يقطع الصلواة مرورالمرأة والكلب والحمار وعلى احمد فى الكلب الاسود. 

او مرّ مارّ فى موضع سجوده لاتفسد سواء المرأة والكلب والحمار لقوله صلى الله عليه وسلّم لا يقطع الصلواة شئى وادرؤا ما استطعتم فانما هو شيطان وان اثم المار. 


‘ইবনে আবেদীন শামী (رحمه الله تعالي ) বলেন- 

قوله ولو امرأة اوكلب অর্থাৎ- যদিও পথচারী কোন মহিলা কিংবা কুকুর হয়’, এ উক্তিটি জাহিরিয়াদের উক্তি। ‘মহিলা, কুকুর কিংবা গাধা নামাযীর সামনে দিয়ে চলে গেলে নামায ফাসেদ হয়ে যাবে’ উক্তিকে খন্ডন করার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ইমাম আহমদ (رحمه الله تعالي ) এর মতে, কালো কুকুর সামনে দিয়ে চলে গেলে নামায ফাসেদ হবে’। 

104. রদ্দুল মুখতার, যে-সব কারণে নামায ভঙ্গ হবে অধ্যায়, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৩৬, মিসরী ছাপা।


‘কোন মহিলা, কুকুর কিংবা গাধা নামাযীর সামনে দিয়ে চলে গেলে নামায ফাসেদ হবে না। কেননা হুযূর   ইরশাদ করেন, কোন বস্তু বা বিষয় নামায ভঙ্গ করে না। যতদূর সম্ভব তোমরা পথচারীকে বাঁধা দিবে। কারণ উক্ত পথচারী শয়তান এবং এতে পথচারীই গোনাহগার হবে’। 

105. মারাকিউল ফালাহ, পৃষ্ঠা-২০৫, ফতওয়া হক্কানিয়া, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-২২৮।


❏ প্রশ্ন-৭৭ঃ ইমাম নামায আদায়ের নিমিত্তে সম্পূর্ণরূপে মিহরাবের ভিতর দাঁড়ানোর ফলে তাঁর উঠা-বসা, রুকু-সিজদা এবং তাঁর প্রত্যেক কর্মকান্ড ও অবস্থা সম্পর্কে মুক্তাদিরা অজ্ঞাত থাকলে অথবা ইমাম নির্ধারিত স্থানে দাঁড়ালে মুক্তাদিগণ তাঁর কর্মকান্ড ও অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজানা থাকলে- এমতাবস্থায় নামাযের হুকুম কী?


✍ উত্তরঃ ইমাম মিহরাবে এভাবে দাঁড়ানো যাতে মুকতাদিরা তার অবস্থার পরিবর্তন ও কর্মকান্ড সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকে- এমতাবস্থায় নামায মাকরূহ হবে। হ্যাঁ! অবশ্য ইমাম যদি এমন স্থানে দাঁড়ায় যাতে তার সকল কার্যক্রম ও অবস্থা সম্পর্কে মুক্তাদিরা অবগত থাকে, তবে মাকরূহ হবে না। যেহেতু ইমামের কার্যক্রম মুক্তাদিগণের নিকট অস্পষ্ট নয়, তাই মাকরূহ হবে না। 

অনুরূপ ইমাম নির্দিষ্ট স্থানে এবং মুক্তাদিরা আঙ্গিনায় দাঁড়ালে, তখন ইমামের সকল কার্যক্রম ও অবস্থা তাদের নিকট স্পষ্ট হলে নামায বিনা মাকরূহে জায়েয। আর যদি অজানা থেকে যায়, তাহলে মাকরূহ হবে। 

106. দুররুল মুখতার শরহে রদ্দুল মোহতার, অধ্যায়ঃ নামাযের পরের বর্ণনা, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৬৪৫।


قيام الامام فى المحراب لاسجوده فيه وقدماه خارجه لان العبرة للقدم مطلقًا وان لم يتشبه حال الامام ان علل بالتشبه وان بالاشتباه ولا اشتباه فلا اشتباه فى الكراهة، قال الشيخ السيد احمد الطحطاوى لايكره قيام الامام بجملة فى المحراب لاقيامه خارجه وسجوده فيه مسمّى محرابًا لانه يحارب النفس والشيطان بالقيام اليه والكراهة لاشتباه الحال على القوم واذا ضاق المكان فلا كراهة . 


‘সম্পূর্ণভাবে মিহরাবে দাঁড়ানো মাকরূহ। হ্যাঁ! যদি মিহরাবে সিজদা পড়ে আর উভয় পা মিহরাবের বাইরে থাকে তাহলে মাকরূহ হবে না। যেহেতু নামাযে কদমের অবস্থান প্রযোজ্য। এতে যদিও ইমামের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে না হয়।

ইমাম তাহ্তাবী বলেন, ইমাম সম্পূর্ণরূপে মিহরাবের ভিতর দাঁড়ালে নামায মাকরূহ হবে না। আর যদি মিহরাবের বাইরে দাঁড়ায় এবং মিহরাবে সেজদা করে তবে ভিন্ন কথা।

মিহরাব নামকরণের কারণ হচ্ছে যেহেতু এখানে স্বীয় রিপু ও শয়তানের সাথে যুদ্ধ করা হয়, তাই মিহরাব নামকরণ করা হয়েছে। এখানে দাঁড়ানো মুক্তাদির সাপেক্ষে মাকরূহ বলা হয়েছে। তথাপি জায়গার সঙ্কীর্ণতা হলে মাকরূহ হবে না।’ 

107. তাহতাবী আলা দুর্রিল মুখতার, মাকরূহ পরিচ্ছেদ, পৃষ্ঠা-২৯৪।


সারকথাঃ ইমাম মিহরাব কিংবা নির্ধারিত এমন স্থানে দাঁড়ালে মুক্তাদিরা তার অবস্থার পরিবর্তন বা কর্মকান্ড সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকলে নামায মাকরূহ হবে। অন্যথায় মাকরূহ হবে না।


❏ প্রশ্ন-৭৮ঃ নামাযে নবীকুল সরদার বুরহানুত্ তাওহীদ হুযূর মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কল্পনা ও ধ্যান আসলে নামায ভঙ্গ কিংবা নামাযের কোন ক্ষতি হবে কিনা? কিছু অনুপযুক্ত লোকের ধারণা যে, এতে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে- বর্ণনা কর।


✍ উত্তরঃ নামাযে তাওহীদের সাক্ষ্য হযরত মুহাম্মদ  -এর ধ্যান ও চিন্তা-ভাবনা আসা মানে ঈমানী ও রূহানী খোরাক দ্বারা সৌভাগ্যবান হওয়া। এখানে নামায ফাসেদ হওয়া তো দূরের কথা বরং নামাযে হুযূর (ﷺ)-এর পবিত্র খেয়াল ও কল্পনা আসা নামায গ্রহণীয় ও পরিপূর্ণতার স্থানে পৌঁছার অন্যতম মাধ্যম। কেননা আত্-তাহিয়্যাতু এবং দরূদ শরীফ পাঠ করলে মু’মিনের অন্তরে রাহমাতুলি­ল আলামীন (ﷺ)-এর খেয়াল ও ধ্যান স্বাভাবিকভাবে এসে যায়, যা ঈমানের দাবী। على سبيل التعظيم لا على العبادة ‘যা হুযূর (ﷺ) এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে, ইবাদতের উদ্দেশ্যে নয়।’ আর কেবল খেয়াল ও ভাবনার দ্বারা নামায ফাসেদ হবে না। 

 
Top