❏ প্রশ্ন-৮ঃ তাওহীদ ও ‘তাওহীদে রাবুবিয়্যাত’-এর সংজ্ঞা কী? বিস্তারিতভাবে বর্ণনা কর।


✍ উত্তরঃ هوالمستعانঃ তাওহীদের আভিধানিক অর্থ- কোন বস্তুকে একক জানা। পরিভাষায় আল্লাহ্ তা‘আলাকে পালনকর্তার গুণে একক, তাঁর একত্ববাদের স্বীকৃতি এবং যে কোন ধরনের মন্দ থেকে পবিত্র মনে করা।

তাওহীদের মাসআলা অত্যন্ত কঠিন ও সূক্ষ্ম। এটাকে যদি ইসলামের যাবতীয় বিষয়ের মূল কেন্দ্র বা সূতিকাগার বলা হয়, তা হবে যথার্থ ও সত্য। তাওহীদ এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, হযরত আদম (عليه السلام) থেকে সৈয়্যদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ)   পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলকে যা বর্ণনা করার জন্যে প্রেরণ করেছেন। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল ধর্মে এটি ঐকমত্য বিষয়। তা হৃদয়ঙ্গম ও অনুধাবন করার জন্য সর্বপ্রথম আল্লাহর অস্তিত্বকে প্রমাণ করা আবশ্যক। এ প্রসঙ্গে الحقوق والفرائض নামক কিতাবের উদ্ধৃতিই যথেষ্ট।

‘পৃথিবীর এই বিশাল কারখানার প্রত্যেক অণু-পরমাণুতে সমুদ্রের প্রতিটি বিন্দুতে, গাছের পাতায় পাতায় আল্লাহর অস্তিত্বের সাক্ষ্য বিদ্যমান। এ জন্যে কোন বস্তু বড় হোক বা ছোট, পৃথিবীতে হোক বা আকাশে, জলে হোক বা স্থলে, প্রাণী হোক বা জড়পদার্থ ইত্যাদিতে এমন বস্তু আছে যা নিজে নিজে অস্তিত্ব লাভ করেছে? অবশ্যই কোন না কোন নির্মাতা এগুলো তৈরী করেছেন। আমরা ঐ প্রস্তুতকারীকে পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত সকল স্থানে অনুসন্ধান ও বিচার-বিশে­ষণ করে কাউকে উহার উপযুক্ত পাইনি। যাকেই বিচার করি অনুপযুক্ত ও অপারগ পাওয়া যায়।

সুলতান মাহমুদ নিজের মর্যাদা ও যোগ্যতা সম্বন্ধে অবগত হয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হলে পরাজিত ও অক্ষমতা প্রকাশ করতে বাধ্য হন। অনন্যোপায় হয়ে আকাশের দিকে থাকালে হযরত ইবরাহীম (عليه السلام)-এর কাহিনী স্মরণ করে নিরব-নিস্তব্ধ হয়ে পড়েন। পরিশেষে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, যাকে তালাশ করছি তাঁকে তো দিব্যি চোখে বা কপালের চোখে দেখার বস্তু নয়। বনি ইসরাঈল অনিষ্টের চেষ্টা করলে   فَأَخَذَتْهُمُ الصَّاعِقَةُ-এর শাস্তি পেল এবং আকাশ থেকে আওয়াজ এসে ধ্বংস করে দিল। হযরত মূসা (عليه السلام) অতি উৎসাহে এসে প্রভুকে দেখার সাহস করেন, অথচ তাজাল্লি দেখেই وَخَرَّ مُوْسٰى صَعِقًا  ‘মূসা (عليه السلام) বেহুশ হয়ে লুটিয়ে পড়েন এবং লজ্জিত হন।’ আসল কথা হলো- আল্লাহ্ তা‘আলা হলেন আমাদের প্রকাশ্য অনুভূতির ঊর্ধ্বে এবং এটি আমাদের ইন্দ্রিয় ও বোধশক্তি দিয়ে জানা অক্ষম। যদি দুর্দান্ত ও নির্ভীক বাঘ চোখ দ্বারা পানির প্রস্রবণ দেখতে না পায় তাহলে সূর্যের কি দোষ?

হ্যাঁ! অন্তর—চক্ষু দ্বারা যদি দেখা যায়, তবে গোটা পৃথিবী আয়না ঘর বা দর্পনে পরিণত হবে। ঘরে-বাইরে যেদিকে তাকাই মহান আল্লাহ'র জ্যোতির্ময় নূর ঝলমল করতে দেখা যায়। অন্তরের আয়নাতে থাকে বন্ধুর প্রতিচ্ছবি।


دل كے آ ئينہ ميں ہے تصوير يار   ٭ جب ذرا گردن جهكائى ديكھ لى


“অন্তরের আয়নাতে বন্ধুর রূপ নক্শা বিদ্যমান রয়েছে গ্রীবাদেশ একটু ঝুঁকিয়ে দেখে নিন।”


دوست نزديك شراز من عين است   ٭ وايں عجب تركہ من اتردے مهجرام. 

او  دوست نزديك شراز من عين است  ٭ وايں عجب تركہ من نزدوے بهجرم. 


‘বন্ধু মন্দের নিকট আমার মতোই, এটি আশ্চর্যের বিষয় যে, আমি অপমানিত হলে তার নিকট পরিত্যক্ত হই।’ 

অথবা, ‘বন্ধু শত্রুর নিকট আমার মতোই, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় যে, আমি অপমানিত হলে তার নিকট পরিত্যক্ত হই।’

আমাদের ধারণা যে, মানুষ শুরু থেকেই আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে ভুল সংঘটিত হয়েছে এবং বর্তমানেও অধিকাংশ আল্লাহ'র বান্দা সে-ই ভুলে লিপ্ত রয়েছে। যারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে প্রকাশ্য ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করছে। তারা যখন উক্ত লক্ষ্য অর্জনে সফলকাম হয়নি, তখন মনগড়া ও বানোয়াট খোদাকে মেনে নিল। أتخذ الهه هواه  স্বীয় কুপ্রবৃত্তিকে নিজের প্রভু বানিয়ে নেয় এবং নিজের ভ্রান্ত ধারণা অনুপাতে প্রভু মান্য করার স্বভাব গড়ে নিতে কোন ধরনের দ্বিধাবোধ করে না। তাই একেবারে নিকৃষ্ট ও তুচ্ছ বস্তুকেও খোদার স্বীকৃতি দিতে দ্বিধা করে না। তাদের স্বভাব হলো, কোন বস্তুকে পরিপূর্ণ মনে করে এবং খোদা বিশ্বাস করে তাদের ভ্রান্ত ধারণা মতে আল্লাহ'র ইখতিয়ার তাঁর থেকে ছিনিয়ে নিয়ে অযোগ্য ও অনুপযুক্তদের দায়িত্বভার দিয়ে দেয়। এভাবেও বলা যায় যে, আল্লাহ্ তা‘আলার পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়ে অন্যকে স্থলাভিষিক্ত করে দিয়েছে। যেভাবে আল্লাহ'র বান্দারা তাঁর ব্যাপারে বেআদবী ও অবাধ্যতা মূলক আচরণ করেছে এবং করে আসছে। যা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনও কতিপয় বান্দা আছে যারা আল্লাহর পবিত্র সত্তার ওপরও আক্রমণ করছে, তারা দু’ খোদার প্রবক্তা এবং বলে যে, এক- জীবনদাতা, দুই- মৃত্যুদাতা। এক-ভাল ও কল্যাণের স্রষ্টা, দুই- মন্দ ও অকল্যাণের স্রষ্টা।

কারো মতে, তিন খোদা রয়েছে। মূলতঃ তিনি একজন। আবার কারো মতে, প্রত্যেক বস্তু স্বয়ং আল্লাহ'র স্থানে অভিষিক্ত। কারো ধারণা মতে, আল্লাহ্ এখন নিষ্ক্রীয় ও দায়িত্বমুক্ত ঘুমিয়ে আছেন এবং সকল উপকরণাদি সৃষ্টি করে রেখেছেন যার মাধ্যমে বিশ্বজগত পরিচালিত হচ্ছে। তাদের মতে, পৃথিবী এক ধরনের ঘড়ি এবং আল্লাহ্ হলেন এর কারিগর। যিনি এটি তৈরি করে সুসজ্জিত করেছেন এবং আওয়াজ ধ্বনি বড় করে দিয়েছেন। আর ঘড়ি অটোমেটিক চলতেছে। আল্লাহ'র জাত বা সত্তার ব্যাপারে তো এগুলো বলা হয়েছে। তাঁর সিফাত বা গুণাবলির ওপরও আক্রমণ চালানো হয়েছে। তারা এতো বেশি খোদা স্বীকার ও মান্য করে যে, প্রত্যেক খোদার ভাগে একজন করে বান্দা মিলানো বড় কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তারা এটা বুঝতেছে না যে, দুটি পাত্র এক স্থানে রাখলে পরস্পর সংঘর্ষ হয়ে আওয়াজ উঠে, তাই এক খোদা ভিন্ন দুই বা ততোধিক খোদা হলে দ্বন্দ্ব ও মতানৈক্য অবশ্যই হবে। আর দ্বন্দ্ব ও মতভিন্নতা হলে পৃথিবী এক সেকেন্ডও স্থির থাকবে না।

মহান আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন,


لَوْ كَانَ فِيْهِمَا آلِهَةٌ إِلَّا اللهُ لَفَسَدَتَا 


অর্থাৎ ‘যদি আল্লাহ্ ব্যতীত (আসমান ও জমীন) এদুভয়ের মধ্যে বহু উপাস্য থাকত তবে উভয়ই ধ্বংস হত।’ 4. সূরা আন্বিয়া, আয়াতঃ ২২


দু’ বাদশাহ যদি পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত থাকে, তাহলে দেশ ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়ে যাবে। আর খোদা বা বহু স্রষ্টার যুদ্ধের পরিণামের কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। কোন ধরনের ব্যতিক্রম ছাড়া পৃথিবী একই নিয়মে পরিচালনা করা, এটা একথারই প্রমাণ যে, সমগ্র সৃষ্টি জগত এক আল্লাহরই নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে।

অন্যান্য জাতি আল্লাহর ব্যাপারে অনেক প্রকারের ধারণা পোষণ করছে, সেটা তাদের বিবেক-বিবেচনার ব্যাপার। আমাদের একান্ত চিন্তা হচ্ছে মুসলমানদের শৃঙ্খলা থাকার ব্যাপারে, যাদের মহান দাবী হচ্ছে তাওহীদ। কিন্তু মুশরিকদের এমন কোন চাল-চলন ও আচার-আচরণ নেই, যা তারা অবলম্বন করেনি।

আল্লাহ্ তা‘আলা সম্পর্কে মুসলমানদের আক্বীদা এতো সহজ-সরল যে, যার চেয়ে সহজ ও পরিষ্কার কোন আক্বীদা হতে পারে না। ইসলাম সৃষ্টি জগতের মাধ্যমে আল্লাহ'র সত্তাগত ও গুণগত পরিচয় লাভ করে থাকে।

ذات শব্দটি ذو-এর مؤنث (স্ত্রীলিঙ্গ) অর্থ- কোন বস্তুর হাক্বিক্বত বা মূলতত্ত্ব। আল্লাহ্ তা‘আলার নাম দু’প্রকার। এক. اسم ذات বা সত্তাগত নাম, 

দুই. اسم صفت বা গুণগত নাম।

 اسم ذات বা সত্তাগত নাম বলা হয়- যা শুধু তাঁর সত্তার ওপর دلالت করে। অর্থাৎ- একমাত্র ‘আল্লাহ্’ ছাড়া অবশিষ্ট সকল নাম গুণবাচক। এখানে তাঁর গুণবাচক নামের কোন অধিকার নেই। اسماء صفت বা গুণবাচক নাম বলা হয়- সত্তাগত নাম ছাড়া যেখানে সিফতের অর্থ বিদ্যমান। অর্থাৎ- কোন বিশেষ গুণাবলীর অর্থ অনুপাতে আল্লাহ'র সত্তার ওপর এর প্রয়োগ হয় যেমন- রহমান, রহীম, আলীম, কাদীর ইত্যাদি।

আল্লাহ্ তা‘আলার জাত বা সত্তা ও গুণাবলীর পরিচয় লাভ করার নিয়মকে موصل الى المطلوب বলে। সৃষ্টি জগতের মাধ্যমে আমরা অনুধাবন করতে পারি যে, বিশ্ব জগতের স্রষ্টা অবশ্যই আছেন। তিনি ওই সকল বস্তুর পর্যায়ে নহেন যা আমরা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জানি। আমরা আল্লাহ'র সত্তার ব্যাপারে এর চেয়ে আর বেশি বলতে পারি না। কারণ মানুষের জ্ঞানের পরিধি এ পর্যন্ত (সীমিত)।

সিফাত বা আল্লাহ'র গুণাবলির ব্যাপারে বলা যায়, গোটা সৃষ্টি জগত তাঁর একক ব্যবস্থাপনা দ্বারা অত্যন্ত সুশৃংখল ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হওয়াই তার গুণসম্পন্নতা প্রকাশ পাচ্ছে। অর্থাৎ- তার নিকট ঐ পরিপূর্ণ গুণাবলি বিদ্যমান থাকা সিফতের মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে।

আল্লাহ্ তা‘আলার নিরানব্বই নাম রয়েছে। যা نُودنہ নামে প্রসিদ্ধ। এগুলোর মধ্যে ‘আল্লাহ্’ اسم ذات বা সত্তাগত নাম হিসেবে পরিচিত। যদিও মাবুদ হওয়ার বিবেচনায় আল্লাহকেও সিফত বলা যায়। কিন্তু যাঁর এতগুলো গুণবাচক নাম আছে, অবশ্যই তাঁর সত্তাগত নাম থাকা আবশ্যক। আর তা হলো ‘আল্লাহ্’; বাকী রইলো আটানব্বই নাম- যা কোন না কোন গুণের অর্থ প্রদান করে। 

সিফাতি নাম সম্পর্কে আমরা একথা বলতে পারি যে, এ নাম সমূহের বাস্তবতা ‘আল্লাহ্’-এর মধ্যে বিদ্যমান থাকা আবশ্যক। সিফত সম্পর্কে আমরা এর বেশি কিছু বলতে পারি না। যেমন- আমরা বলি আল্লাহ্ سميع‘ সর্বশ্রোতা। এর অর্থ হলো- আল্লাহ্ শ্রবণ শক্তির গুণসম্পন্ন। যে জ্ঞান আমরা আদম সন্তানেরা শ্রবণ শক্তির মাধ্যমে অর্জন করি, ওই জ্ঞান আল্লাহ্ তা‘আলার জন্যও পরিপূর্ণরূপে বিদ্যমান এ নয় যে, আমাদের মতো তাঁর কান আছে। কিন্তু মানুষের কান থাকা প্রয়োজন যার মাধ্যমে শ্রবণ করা হয়। আল্লাহ্ তা‘আলার ক্ষেত্রে এমন নয়। আমাদের শ্রবণের প্রকৃতি হলো এই যে, কথা বর্ণনাকারী আওয়াজের মাধ্যমে বাতাসে ঢেউ সৃষ্টি করে, আর ওই ঢেউ শ্রবণ শক্তিসম্পন্ন কানের (রগের সাথে স্পর্শ হলে মানুষ) আবরণে (পর্দা) যখন আঘাত করে, তখন আমাদের আওয়াজ বা ধ্বনির জ্ঞান অর্জিত হয়। মহান আল্লাহ্ পাকেরও অনুরূপ পরিপূর্ণ জ্ঞান রয়েছে। কিন্তু তিনি কান, আওয়াজ বা ধ্বনি এবং কানের রগের মাধ্যমে শ্রবণ করা থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও মুক্ত। 

আল্লাহ্ পাকের অন্যান্য সিফাত ও গুণাবলিকেও এর ওপর কিয়াস করে নিন। এ সিফাতগুলো আমরা নিজেদের ওপর কিয়াস করে তার জন্য প্রমাণ করছি। অথচ আমাদের সিফাত অসম্পূর্ণ, নগণ্য ও ক্ষুদ্র এবং মধ্যস্থতার প্রয়োজন হয়। পক্ষান্তরে আল্লাহর সিফাত পরিপূর্ণ। যেমন- অনু-কণার আলো এবং সূর্যের তীক্ষন্ড আলোকরশ্মির মধ্যেকার পার্থক্য।


তাওহীদ তিন প্রকারঃ- 

১. আল্লাহ্ পাকের সত্তাগত নাম ও তাঁর সিফাতী নামসমূহ পরিপূর্ণভাবে জানা। 

২. তাঁর প্রভুত্বের বৈশিষ্ট্য ও ইবাদতের উপযোগী জানা

এবং 

৩. তাঁর সকল কার্যাবলি সম্পর্কে ভালভাবে জ্ঞান রাখা।


ইসলাম ধর্মের নাম তাওহীদ এ জন্যে রাখা হয়েছে যে, তার ভিত্তি তিনটি বিষয়ের পরিচিতির ওপর এর ভিত্তি স্থাপিত। এক. আল্লাহ্ পাক স্বীয় রাজত্ব ও কর্ম সম্পাদনে একক, তাঁর কোন শরীক নেই। দুই. স্বীয় সত্তায় তাঁর সমকক্ষ ও প্রতিপক্ষ কেউ নেই এবং তিন. স্বীয় প্রভুত্বে তিনি একক ও অদ্বিতীয়। সকল নবীগণের তাওহীদ এই তিন প্রকারের মধ্যে বিভক্ত। প্রত্যেক প্রকার পরস্পরকে আবশ্যক করে এবং পরস্পর পৃথক হতে পারে না। যে এই প্রকারত্রয় থেকে যে কোন একটিকে মানল, অন্যটিকে মানল না, সে তাওহীদের পরিপূর্ণ হক আদায় করেনি।


❏ প্রশ্ন-৯ঃ ‘দ্বীন’ দ্বারা কী উদ্দেশ্য এবং দ্বীন ও মাযহাবের মধ্যে কী পার্থক্য? আলোচনা কর।


✍ উত্তরঃ দ্বীন দ্বারা ‘মাযহাব’ উদ্দেশ্য। যে সকল বিষয় মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও বোধশক্তির ঊর্ধ্বে যেমন- মৃত্যুর পর কি অবস্থা হবে, পৃথিবীর সূচনা কবে থেকে এবং এর স্থায়ীত্ব কতদিন থাকবে ইত্যাদি, এ জাতীয় বিষয়ে কোন নির্দিষ্ট ধারণা পোষণ করার নাম ‘মাযহাব’। এ নিরিখে দ্বীন শব্দটি সকল হক ও বাতিল মাযহাবের ওপর ব্যবহৃত হয়। মহান আল্লাহ্ তা‘আলা কোরআন মজিদে ইরশাদ করেন- إِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْإِسْلَامُ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম।’ অর্থাৎ- দ্বীন তো অনেক রয়েছে। তৎমধ্যে হক ও সত্য ধর্ম হলো একটিই। যার নাম ইসলাম। يوم الدين -বা বিচার দিবস অর্থ- পরকাল ও আখিরাত।

দ্বীন ও মাযহাবের মধ্যে পার্থক্য এই যে, দ্বীনের সম্পর্ক মুজ্তাহিদগণের প্রতি হয় না, পক্ষান্তরে দ্বীনের সম্পর্ক মাযহাবের প্রতি হয়। দ্বীনের সম্পর্ক বিশেষ করে আন্বিয়া-ই কিরামের প্রতি হয়।

 
Top