এ মাসআলার উপর উলামায়ে কিরামদের তৃতীয় মসলক বা অভিমত
আল্লাহতায়ালা  নবীয়েপাক  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতামাতাকে পূনর্জীবিত করেছেন। অতঃপর তারা নবীজীর উপর ঈমান আনয়ন করেছেন। 

হুফফাজে মুহাদ্দিসিনে কিরামদের বিরাট একটি জামাত এ মসলকের প্রতি সমর্থন করেছেন।  তাদের মধ্যে ইবনে শাহীন হাফিজ আবু বকর আল খতিব বাগদাদী, সুহাইলী, কুরতুবী, মুহিব তাবারী, আল্লামা নাছিরুদ্দিন বিন  আল মুনির প্রমুখ অন্যতম। তারা প্রত্যেকে এ ব্যাপারে দলিল প্রদান করেছেন  যা ইবনে শাহীন- الناسخ والمنسوخ গ্রন্থে খতিব আল বাগদাদী السابق والاحق গ্রন্থে এবং দারে কুতনী ও ইবনু  আসাকির উভয়ে غرائب  গ্রন্থে জয়িফ সনদে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন- 

قالت حج بنا رسول الله صلى الله عليه وسلم حجة الوداع فمربى على عقبة بالحجون وهو باك حزين مغتم فنزل فمكث عنى طويلا ثم عاد الى وهو فرح متبسم فقلت له؟ فقال ذهبت لقبر امى فسألت الله ان يحييها فاحياها فامنت بى وردها الله- 

অর্থ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন- বিদায় হজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে হজ্জ করতে গেলেন। তখন আমাকে নিয়ে হুজুন নামক স্থানে উকবার কাছ দিয়ে গমন  করলেন। তখন  তিনি খুবই চিন্তিত ও ক্রন্দনরত অবস্থায় ছিলেন। তখন তিনি আমাকে রেখে অন্যথায় চলে গেলেন। দীর্ঘণ   পরে যখন আসলেন তখন দেখলাম তিনি ভীষণ খুশি এবং মুচকি হাসছেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ব্যাপার কি। তিনি বললেন আমি আমার মায়ের কবরের  কাছে গিয়েছিলাম। অতঃপর আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি যেন  তাকে জীবিত করে  দেন। তখন আল্লাহ তাকে  জীবিত করেছেন। অতঃপর আমার  উপর ঈমান আনয়ন করেছেন। অতঃপর আল্লাহ তাকে ফিরিয়ে নিয়েছেন। 

মুহাদ্দিসিনে কেরামদরে ঐকমত্য এ হাদিসটি জয়িফ। কেউ কেউ মওজু বলেছেন। তবে সঠিক কথা হল ইহা মওজু নয় জয়িফ। এর উপর আমি পৃথক একটি অধ্যায় রচনা করেছি। 

ইমাম সুহাইলী الروض الانف গ্রন্থে সনদসহ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা  থেকে বর্ণনা  করেছেন এবং বলেছেন এ সনদে অজ্ঞাত রাবী রয়েছেন- 

ان رسول الله صلى  الله عليه وسلم سأل ربه ان يحيى ابويه فاحياهما له فامنأ به ثم اماتهما- 

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি  ওয়াসাল্লাম আল্লাহর  কাছে দোয়া  করলেন তিনি যেন তাঁর পিতা-মাতাকে  জীবীত করে দেন। তখন আল্লাহ তাদেরকে জীবীত করে দেন। অতঃপর তারা নবীর প্রতি ঈমান আনয়ন করলেন। অতঃপর তারা মৃত্যুবরণ করলেন। 

এ হাদিসটি বর্ণনা করার পর সুহাইলী বলেন- আল্লাহ সর্ব বিষয়ে মতার অধিকারী। তাঁর রহমত ও কুদরতের কাছে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। আর  নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন আল্লাহর এমন প্রিয়পাত্র যার জন্য তিনি তাঁর অনুগ্রহ দ্বারা যে কোন বিষয়  নির্দিষ্ট করতে পারেন এবং তাকে যা ইচ্ছা নিয়ামত প্রদান করতে পারেন। 

ইমাম কুরতুবী বলেছেন- পুনর্জীবনসংক্রান্ত হাদিস ও ইস্তেগফার নিষেধ এর মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কারণ পূণর্জীবন সংক্রান্ত ঘটনা ইস্তেগফারসংক্রান্ত  ঘটনার অনেক পরে হয়েছে। যেমন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত  হাদিস তার প্রমাণ। তিনি বলেছেন- পূনর্জীবন এর ঘটনা বিদায় হজ্বের সময় ঘটেছিল। এ জন্য ইবনে  শাহীন এ হাদিসকে অন্যান্য হাদিসের নাসিখ ও বা রহিতকারী নির্ধারণ করেছেন। 

আল্লামা নাছিরুদ্দিন ইবনে মুনির মালিকী স্বীয় المقتفى فى شرف المصطفى   গ্রন্থে বলেছেন- আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এর মাধ্যমে মৃতকে জীবিত করা ঈসা ইবনে মরিয়ম কর্তৃক মৃতকে জীবিত করার অনুরূপ। অতঃপর তিনি বলেন- হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামাকে যখন কাফিরদের জন্য ইস্তেগফার করতে বারণ করা হল তখন তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন তাঁর  পিতা-মাতাকে জীবিত করার জন্য।  তখন আল্লাহ তাদেরকে জীবিত করে দিলেন। অতঃপর তারা নবীর প্রতি ঈমান আনয়ন করলেন। অবশেষে মু’মিন হিসেবে ইন্তেকাল করলেন। 

ইমাম কুরতুবী বলেন- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফজিলত কখনো শেষ হয়নি। অতএব ইহাও আল্লাহর প থেকে একটি ফজিলত ও মর্যাদা। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাঁকে সম্মানিত করেছেন। 

তিনি বলেন- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা-মাতার পূনর্জীবন লাভ এবং তাঁর প্রতি ঈমান আনয়ন এগুলো বিবেক বুদ্ধি  ও শরিয়ত কোনটাই নিষেধ করে না। 

যেমন  কুরআনুল  কারীমে বর্ণিত হয়েছে বনী ইসরাইলের নিহিত ব্যক্তির পূনর্জীবন লাভ এবং তার হত্যাকারীর সংবাদ প্রদান করার ঘটনা। 

অনুরূপভাবে ঈসা আলাইহিস সালাম ও মৃতকে জীবীত করেছেন  এমনিভাবে আমাদের  নবীর  হাতে আল্লাহতায়ালা অনেক মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করেছেন। কুরতুবী বলেন- এগুলো যখন প্রমাণিত হল  তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম এর অধিক ফজিলত ও মর্যাদার কারণে  তাঁর পিতা-মাতাকে পূণর্জীবন করা এবং ঈমান আনয়ন করাতে সমস্যা  কোথায়? 

হাফিজ ফাতাহ উদ্দিন বিন সাইদুল নাস তদীয় সীরাত গ্রন্থে  পূণর্জীবন সংক্রান্ত ঘটনা ও  আযাবসংক্রান্ত হাদিসসমূহ বর্ণনার পর বলেছেন কোন কোন আহলে ইলমগণ উল্লেখিত বর্ণনাগুলোর সামঞ্জস্য করতে গিয়ে বলেছেন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র রূহ মোবারক আল্লাহর নিকট ফিরিয়ে নেয়া পর্যন্ত তিনি উচ্চ মর্যাদা ও মহান সম্মানের উচ্চাসনে আরোহন করতে থাকেন। 

অতএব  ইহাই বলা  জায়েয  যে উক্ত সম্মান আল্লাহতায়ালা তাঁকে পরবর্তীতে প্রদান করেছিলেন। অর্থাৎ  পূনর্জীবন লাভ ও ঈমান আনয়ন ঐ সমস্ত হাদিসের পরবর্তী ঘটনা। সুতরাং এতে কোন সংঘর্ষ নাই। কোন কোন উলামায়ে কেরামগণ এদিকেই ইঙ্গিত করেছেন। তারা হালিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর সংবাদ বর্ণনা করার পর বলেছেন- 

هذا جزاء الام عن ارضاعه –  لكن جزاء الله عنه عظيم 
وكذالك ارجو ان يكون لامه – عن ذاك امنة يد ونعيم 
ويكون احياها الا له وامنت – بمحمد فحديثها معلوم 
فلربما سعدت به ايضا كما – سعدت به بعد الشقاء حليم 

অর্থ: ইহা হচ্ছে দুধমাতার প্রতিদান। বরং  আল্লাহর নিকট আরো অধিক প্রতিদান রয়েছে। 

আশা করি এমনিভাবে তাঁর আমিনা রাদিয়াল্লাহু আনহা আরো অধিক প্রতিদান প্রদান করা হবে। 

আল্লাহ তাঁকে পূনর্জীবিত করেছেন। অতঃপর  তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান এনেছেন। এ হাদিসটি প্রসিদ্ধ। 

হালিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা যেমনিভাবে সৌভাগ্য লাভ করেছেন ঠিক তেমনিভাবে তিনিও সৌভাগ্য  লাভ করেছেন। 

হাফিজ শামসুদ্দিন বিন নাছিরুদ্দিন দামেস্কী স্বীয়- مورد الصادى فى مولد الهادى গ্রন্থে উল্লেখিত হাদিসটি বর্ণনার পর বলেছেন- 

حبا الله النبى مزيد فضل – على فضل وكان به رؤوفا 
فاحيا امه وكذا ابوه – لايمان به فضلا لطيفا 
فسلم فالقديم بذا قدير – وان كان الحديث به ضعيفا 

অর্থ: আল্লাহতায়ালা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসংখ্য অগণিত মহব্বত ও অনুগ্রহ করেছেন। তিনি  হচ্ছেন অত্যন্ত স্নেহশীল। অতঃপর তিনি তাঁর পিতা-মাতাকে  জীবিত করেছেন। সাথে তারা তাঁর প্রতি  ঈমান আনেন। ইহা একটি সুক্ষ অনুগ্রহ। অতঃপর তার  উপর সালাম। যদিও এ সংক্রান্ত হাদিস জয়িফ।

 
Top