একটি সওয়াল ও তার জবাব
সওয়াল 
====
যদি তুমি বল ঐ সমস্ত হাদিসের  কি জবাব দেবেন যেগুলো দ্বারা বুঝা যায় যে আমিনা রাদিয়াল্লাহু আনহা জাহান্নামী?  যেমন একটি হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- 

ليت شعرى ما فعل ابواى؟ فنزلت (ولا تسئل عن اصحب الجحيم) 
অর্থ: হায়! আমার পিতামাতার কি হবে? তখন অবতীর্ণ হল আপনি দোযখবাসীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন না। (বাকারা- ১১৯) 

অন্য   হাদিসে রয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মায়ের জন্য মা প্রার্থনা   করলে জিব্রাইল আলাইহিস সালাম  তাঁর বে আঘাত করে বললেন মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীর  জন্য মা প্রার্থনা করবেন না। 

অন্য হাদিসে রয়েছে ‘আল্লাহতায়ালার বাণী- 
ما كان للنبى والذين امنوا ان يستغفروا للمشركين- 

অর্থ: নবী ও  মু’মিনদের উচিত নয়  মুশরিকদের মাগফিরাত কামনা করা। (তাওবা- ১১৩) 

অন্য হাদিসের মধ্যে রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মালিকার দু’সন্তানকে বললেন- তোমাদের মাতা জাহান্নামী। ইহা শুনে তারা দুঃখিত হল। তখন নবীজী  তাদেরকে ডেকে বললেন- আমার মা  তোমাদের মায়ের সাথে আছেন। 

জবাব 
====
আমি বলব এ  ব্যাপারে উল্লেখিত  বর্ণনাগুলোর অধিকাংশই জয়িফ। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এর মাতা সম্পর্কে বর্ণিত কোন সহিহ হাদিস নাই। শুধুমাত্র একটি ব্যতিত। তাহল, তিনি তাঁর জন্য মা প্রার্থনার অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে অনুমতি দেয়া হয়নি। 

ঠিক তেমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা সম্বন্ধে মুসলিমশরীফের একটি  হাদিস ব্যতিত অন্য কোন সহিহ হাদিস নাই, এ দু’টি হাদিসের জবাব কিছুণ পরে আসবে। 

অতএব উল্লেখিত হাদিসগুলোর মধ্যে- ليت شعرى ما فعل ابواى হাদিসটি কোন গ্রহণযোগ্য হাদিসের কিতাবে উল্লেখিত হয়নি।  তবে কোন কোন তাফসির গ্রন্থে বিচ্ছিন্ন সনদে বর্ণিত  হয়েছে। তাই এর দ্বারা দলিল প্রদান করা যায় না। 

এ হাদিসের বিপরীতে অন্য একটি হাদিস ইবনুল জুযি হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু  থেকে মরফু সনদে বর্ণনা করেছেন- 

هبط جبريل على فقال ان الله يقرئك السلام ويقول انى حرمت النار على صلب انزلك وبطن حملك وحجر كفلك- 

অর্থ: রাসূল বলেন- জিব্রাইল আলাইহিস সালাম আমার কাছে এসে বললেন- আল্লাহ আপনাকে সালাম দিয়ে বলেছেন- আমি তাদের জন্য জাহান্নামকে হারাম  করেছি। যাদের পৃষ্ঠদেশের মাধ্যমে আপনাকে প্রেরণ করা হয়েছে, যে গর্ভ আপনাকে বহন করেছে এবং যে ঘর আপনাকে লালন পালন করেছে। 

তাছাড়া উসূল, বালাগাত ও আসরারুল বয়ানের কায়দা অনুযায়ী ও উল্লেখিত হাদিসের মর্মটি প্রত্যাখ্যাত। তা হলো   উল্লেখিত আয়াতটির পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবগুলো আয়াত ইহুদিদের ব্যাপারে  আলোচিত হয়েছে। 

যেমন  সূরা বাকারার ৪০নং আয়াত- يبنى اسرائيل اذكروا نعمتى থেকে ১২৪নং আয়াত- واذ ابتلى ابراهيم ربه بكلمة পর্যন্ত ইহুদিদের আলোচনা করা হয়েছে। 

অতএব বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেল যে- اصحب الجحيم তথা দোযখবাসী দ্বারা আহলে কিতাবদের কুফফারদেরকে বুঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারটি স্পষ্টভাবে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। 

যেমন আব্দ বিন হুমাইদ ইমাম ফিরইয়াব, ইবনে  জারির এবং ইবনে  মুনযির তারা প্রত্যেকে তাদের তাফসির গ্রন্থে হযরত মুজাহিদ  রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন- সূরা বাকারার প্রথম চার আয়াত  মুমিনদের প্রশংসাসংক্রান্ত এবং পরবর্তী তের আয়াত মুনাফিকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। এবং চল্লিশ  আয়াত থেকে একশত বিশ আয়াত পর্যন্ত বনী ইসরাইলের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে। এ হাদিসের সনদ সহিহ। তাছাড়া এ  সুরাটি হচ্ছে মাদানি। আর অধিকাংশ মাদানী  সূরা ইহুদিদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। 

এ ব্যাপারটি অভিধান ও হাদিস দ্বারা আরো স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে ‘জাহিম’ শব্দটি জাহান্নামের ভয়াবহ স্তরের নাম। 

যেমন ইবনে আবি হাতিম হযরত আবু মালিক থেকে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন- ‘জাহিম’ হচ্ছে জাহান্নামের ভয়াবহ স্তর। 

ইমাম ইবনুল জারির  এবং ইবনুল মুনজির হযরত ইবনে জুরাইজ রাদিয়াল্লাহু  আনহু থেকে  বর্ণনা করেছেন  আল্লাহর বাণী- لها سبعة  ابواب অর্থ: (জাহান্নামের সাতটি স্তর রয়েছে) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন- প্রথম স্তর হল জাহান্নাম, অতঃপর লাযা, অতঃপর হুমাযাহ, অতঃপর সাঈর. অতঃপর সাকার, অতঃপর  জাহিম, অতঃপর হাবিয়া। তিনি বলেন- জাহিম হচ্ছে  ষষ্ঠ স্তর। আর সেখানে থাকবে আবু জেহেল। এ হাদিসটির সনদ সহিহ। 

অতএব ‘জাহিম’ স্তরের আযাবের যোগ্য ঐ ব্যক্তি যে ভয়াবহ কুফুরি  করেছে। তাওহীদের দাওয়াতকে অস্বীকার করেছে এবং জেনে শুনে সত্যকে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও গোপন করেছে। এ শাস্তি ঐ ব্যক্তির জন্য নয় যে এ রকম কুফুরি করেনি। 

আবার আবু তালিবের ব্যাপারে সহিহ হাদিস রয়েছে যে, জাহান্নামের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরের শাস্তি হবে তার। আর ইহা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটাত্মীয় হবার দরুণ লাভ করবে। অথচ তিনি লম্বা হায়াত পেয়েছিলেন। তাওহীদের দাওয়াত তার কাছে পৌঁছেছিল এবং তিনি সে  দাওয়াত গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন। 

অতএব রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা-মাতা সম্পর্কে আপনি কি ধারণা করেন, যারা ছিলেন তাঁর অধিক নিকটবর্তী, প্রাণের  চেয়ে প্রিয়। এবং তাদের গ্রহণযোগ্য উযর ছিল তাছাড়া তাদের হায়াত ছিল অতি সামান্য? 

فمعاذ الله ان يظن بهما انهما فى طبقة الجحيم- وان يشدد عليهما العذاب العظيم- هذا لا يفهمه من له ادنى ذوق سليم- 

অর্থ: অতএব আল্লাহর আশ্রয় চাই তাদের থেকে যারা ধারণা করে যে, নবীজীর পিতা-মাতা ‘জাহিম’ স্তরের জাহান্নামী এবং তাদের উপর ভয়াবহ আযাব রয়েছে। যে  ব্যক্তির  সামান্যতম বিবেক-বুদ্ধি আছে সেও একথাটি মেনে নিতে পারবে না। 

অতঃপর ঐ হাদিস জিব্রাইল আলাইহিস সালাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বে আঘাত করে বলেছিলেন মুশরিক অবস্থায় মৃত্যু বরণকারী ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন না। 

ইমাম বাযযার ইহা বর্ণনা করেছেন যার সনদের মধ্যে অজ্ঞাত বর্ণনাকারী রয়েছেন। 

অতঃপর ما كان للنبى والذين امنوا আয়াতের শানে নুযুল সংক্রান্ত হাদিসটিও জয়িফ। বরং বুখারী ও  মুসলিম দ্বারা প্রমাণিত যে আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে আবু তালিবের ব্যাপারে। যেমন  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন ‘আমি তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব’। 

অতঃপর আমার মা তোমাদের মায়ের সাথে রয়েছে হাদিসটি ইমাম হাকিম  মুস্তাদরাক গ্রন্থে বর্ণনা করে ইহাকে সহিহ বলেছেন। মুস্তাদরাক  কিতাবটিতে স্বাভাবিকভাবে সহিহ বলার রীতিটি প্রসিদ্ধ। 

অথচ উসূলে হাদিসের  কিতাবে বর্ণিত  হয়েছে এককভাবে বর্ণিত হাদিস সহিহ ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। 

অতঃপর ইমাম যাহাবী  مختصر المستدرك গ্রন্থে এ হাদিসটি বর্ণনা করার পর ইমাম হাকিম রাদিয়াল্লাহু আনহু এর উক্তি ‘সহিহ’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন। 

উকবা বলেন- আমি বলব ‘না’ আল্লাহর শপথ উসমান বিন উমাইরকে ইমাম দারে কুতনী জয়িফ বলেছেন। 

অতঃপর ইমাম যাহাবী হাদিসটির জয়িফ বা দুর্বলতা বর্ণনা করেছেন এবং এর উপর শরয়ি শপথ করেছেন। 

অতএব এ মাসআলায় যখন কিছু জয়িফ হাদিস ব্যতিত অন্য কোন সহিহ হাদিস নাই তখন এর  বিপরীত দিকেই দৃষ্টিপাত করতে হবে।

 
Top