আমরা সবাই নাম শুনেছি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ইবনে সিনা, আধুনিক রসায়ন বিদ্যার জনক জাবির ইবনে হাইয়ান কিংবা পদার্থ বিজ্ঞানের শূন্যের অবস্থান নির্ণয়কারী আল ফারাবীর। কিন্তু আমরা কি জানি আজ থেকে ১০০ বছর পূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশেই একজন মৌলানা সাহেব ছিলেন। যিনি লিখে গেছেন ধর্মীয় বিষয় ছাড়া শুধু বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় কয়েকশ বই। তিনি হলেন ভারতের বেরেলি শহরের বাসিন্দা আলা হজরত ইমাম আহমদ রেজা খান রহ.। হিজরি চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক। বাংলাদেশের সুফীবাদী মানুষদের কাছে তিনি আলা হজরত নামে অধিক পরিচিত। আজকে আমরা তাঁর জ্যোতির্বিজ্ঞান/জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে আলোচনা করব। 

 Aalahazrat

  মহাকাশ। পৃথিবীর বাইরের সৌরজগত। আছে লক্ষ গ্রহ-উপগ্রহ, কোটি নক্ষত্র। সবই ছুটে চলেছে কিংবা বিস্ফোরণে নিঃশেষ হচ্ছে। প্রভাব রাখছে পৃথিবীর উপর। মহাকাশের এ হিসাব রাখাকে বলে জ্যোতির্বিজ্ঞান বা Astronomy। মৌলানা সাহেবের এ বিদ্যা সম্পর্কে ছিল প্রবল আগ্রহ। লিখেছেন এ বিষয়ে ২৭টি বই। এই মহাকাশ নিয়ে একটি ঘটনাও আছে। 

No photo description available.
ডঃ মুহাম্মদ মালিক রচিত ইমাম আহমদ রেজা খান রহঃ এর বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা সম্পর্কিত বই।

 

ডিসেম্বর ১৭, ১৯১৯। এদিন ছ'টি সবচেয়ে শক্তিশালী মধ্যাকর্ষের গ্রহ বৃহস্পতি, বুধ, শুক্র, মঙ্গল, শনি, নেপচুন-এগুলো এক সারিতে একত্রিত হবে।গ্রহগুলো মধ্যাকর্ষণ বল প্রয়োগ করে সূর্যকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করবে। ফলে মহাকর্ষিক বৈশিষ্ট্য সূর্যকে বিদ্ধ করবে। সূর্যের যেহেতু নিয়মতান্ত্রিক কোনো আকৃতি নেই সেজন্য এটি একটি বড় ছোড়ার মতো আকৃতি নিবে। এবং সূর্যের উপর এমন দাগ দেখা যাবে, যা মানুষ খালি চোখে দেখতে পাবে। 

বহুল আলোচিত প্রফেসর পোর্টার সেই বৈজ্ঞানিক তত্ব।

 

এরকম সব গ্রহগুলো একসঙ্গে আসাটা খুব কমই দেখা যায়। অসংখ্য বছরে একবার। এটি বাতাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। চৌম্বকক্ষেত্র পরিবর্তিত হবে। ভারী পার্টিকেলস পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ঢুকবে। এর ফলে ভয়াবহ ঝড়, প্রচুর বৃষ্টিপাত এমনকি শক্তিশালী ভূমিকম্প হবারও সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দিনে দিনে গ্রহগুলো সরে যেতে শুরু করলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পৃথিবী স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে পাবে।

Revolutionary Author of Modern Era – Part I - Bombay Reads
আলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খাঁন ফাজায়েলে বেরেলভী রহঃ এর দরগাহ।

তখনকার সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অধ্যাপক আলবার্ট এফ পোর্টা এমনই এক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তার এ তত্ত্বকে কেন্দ্র করে তখনকার সময়ে বিশ্বজুড়ে বেশ আলোচনাও হয়েছিল। ভারতও এর বাইরে নয়। বিহার থেকে প্রকাশিত হতো ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা "দ্য এক্সপ্রেস"। ১৯১৯ সালের ১৮ অক্টোবর এ তত্ত্বটি তারা প্রকাশ করে। বিহারে মৌলানা সাহেবের এক ছাত্র থাকতেন। খবরটি দেখে ছুটে আসেন বেরেলি শহরে। এমন উদ্ভট ভবিষ্যদ্বাণী চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কলম তুললেন মৌলানা সাহেব। নিজের পত্রিকা "আর রেজা" এর মাধ্যমে কয়েক ধাপে খন্ডন করলেন। মনগড়া কিছু লিখেননি। শুধু কুরআন-হাদিস লিখেও পাতা ভরাননি। একজন দক্ষ মহাকাশ বিজ্ঞানীর ন্যায় গ্রহ সমূহের বর্তমান অবস্থা জানালেন। ১৭টি দলিল দিয়ে প্রমান করলেন, এমন কিছ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

 সৌরজগৎ - উইকিপিডিয়া

 ১৬ ডিসেম্বর ১৯১৯। ঘটনার একদিন আগে অধিকাংশ পত্রিকা মৌলানা সাহেবের এ তত্ত্ব নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করল। মৌলানা সাহেবের এ খন্ডনকে বিশ্ব মঞ্চে উপস্থাপন করল- বিজ্ঞানীর সাথে নিছক একজন মৌলনার দ্বন্দ্ব শিরোনামে। যাহোক, তারিখের পাতা উল্টিয়ে ১৭ ডিসেম্বর এলো। সবাই ঘর ছেড়ে রাস্তায় জমা হলো। উদ্দেশ্য খালি চোখে গ্রহে গ্রহে খেলা দেখবে। সূর্য অস্ত যেয়ে চাঁদের আলো ফুটল, হলোনা কিছুই। হতাশ হয়ে ঘরে ফিরল সবাই। ১৮ ডিসেম্বর। ঠাট্টা করে উড়িয়ে দেওয়া সেই পত্রিকা গুলোর পৃষ্ঠা ভরে গেল মৌলানা সাহেবের সুনামে। এসবের প্রমান এখনো গুগলে সার্চ দিলে পাবেন। Prof. Albert f Porta লিখে সার্চ দিলে তার অনেক গুনগান চোখে পড়বে। খুঁজলে বেরেলির মৌলানা সাহেবের কাছে

মার্কিন প্রফেসর আলবার্টের
পরাজয় ঘটনাটি ছোট আকারে হলেও চোখে পড়বে। 

প্রফেসর পোর্টার সেই তত্বের নিউজ আন্তর্জাতিক পত্রিকায়।

 

মৌলানা সাহেবের সেই ঘটনাটি Western Science Defeated by Islam নামে বই আকারেও ছাপা হয়েছে। বিষয়টা আসলে কী ছিল? সোলার ফ্লেয়ার বা সৌরঝড় ও সৌররেখা বেরিয়ে আসা অনেক সময়ই সম্ভব হয়ে থাকে। প্রায়ই সূর্য থেকে আগুনের রেখা অনেকদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এর পিছনে কাজ করে মধ্যাকর্ষণ ও চৌম্বকক্ষেত্র সহ বেশ কিছু বিষয়। এমন সৌরঝড় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বেশ খানিকটা প্রভাবও বিস্তার করে। গ্রহগুলো একটি রেখায় একত্রিত হলে তাদের মাধ্যাকর্ষণ বলও কিছুটা বেড়ে যায়। এর প্রভাবও পৃথিবীর উপর পড়ে অতি সামান্য হারে। কিন্তু এর কারনে যে বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছাস, ভূমিকম্প এসব হয়ে যাবে এমনটা ভাবা নিতান্তই বাড়াবাড়ি। 

ইমাম আহমদ রেজা রহঃ সম্পর্কে প্রফেসর ডঃ মাসুদ আহমেদের গবেষণামুলক থিসিস।


যদি এই গ্রহগুলো পৃথিবীর আরো শত গুন কাছে থাকতো, তাহলে এমনটা হওয়ার খুব বেশি সম্ভাবনা থাকত। কিন্তু এতদূর থেকে এমন ভয়ানক প্রভাব পড়বে এমন তত্ত্ব মার্কিন বিজ্ঞানীর শুধুমাত্র মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ ছাড়া আর কিছুই নয়। এসব ঝাঁজালো সংবাদ পাবলিক খাবে বলে তিনি এমন তত্ত্ব প্রকাশ করেছেন। মৌলানা সাহেব বুঝতে পেরেছিলেন যে মহাকর্ষনের এই প্রভাবটা তিনি শতগুন বাড়িয়ে বলেছেন। তিনি এসব ভেঙে বলেও দিয়েছিলেন। যেখানে

মার্কিন-ইউরোপের বিখ্যাত। বিজ্ঞানীরা কল্পনা করতে ব্যস্ত, সেখানে ইমাম আহমদ রেজা নামে ভারতের এক মৌলানা সাহেব রিজনেবল, ব্যালেন্সড, বাস্তবানুগ। আর পাঁচটা মৌলনার সাথে বেরেলির এই মৌলানা সাহেবের পার্থক্যটা এখানেই।
source: 1. Scientific Work of Imam Ahmed Raza by Dr. Muhammad Maalik, 2. A baseless blam (A critical view of the blam on imam ahmed reza khan of being a pro british) by Prof. Muhammod Masum ahmed. 3. Pothikrit by Mahdi Galib. 4. https://www.bombayreads.com/top-5-revolutionary-authors.../
 
Top