মুমিনের কলবে আল্লাহর অবস্থান হাদিস প্রসঙ্গে আলােকপাত 

🖋গ্রন্থনায়ঃ মুফতি মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর

(প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের স্বরূপ উন্মােচন)


প্রচলিত জাল হাদিস (যা মাওলানা মতিউর রহমান লিখিত) ৮৯ পৃষ্ঠায় এ বিষয়ের একটি -


“আসমান ও যমীন আমাকে সংকুলান করে না, কিন্তু একমাত্র আমার মুমিন বান্দার কলব আমাকে সংকুলান করে।" 


তথ্যসূত্র-

●ইমাম খতিব তিবরিযী : মেশকাত : ১ / ৭০ পৃ . হাদিস ২৭১। 

●ইমাম বুখারী : আস - সহীহ : ১ / ২১৬ পৃ . হাদিস : ১২০। 

●আল্লামা মােল্লা জিওন : তাফসীরে আহমদিয়্যাহ : পৃ - ৩৩১। 


উক্ত হাদিসকে অন্য আরেক হাদিসের বক্তব্যের সাথে মিলিয়ে জাল প্রমাণ করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। আমাদের বক্তব্য হলাে কোন হক্কানী মুহাদ্দিসগণের মতামত দিয়ে প্রমাণ করতে হবে হাদিসটি জাল বা বানােয়াট, তা না হলে তাে কারও মুখের বক্তব্যের দ্বারা বা চাপাবাজির দ্বারা জাল প্রমাণ হবে না। 


হাদীসের নামে জালিয়াতি বইয়ের ২২৩ পৃষ্ঠায়ও উক্ত হাদিসটিকে অন্য দুটি রেওয়ায়েতের সাথে সংযুক্ত করে অন্য হাদীসের ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের মতামতকে এ হাদীসের সাথে মিলিয়ে জাল প্রমাণ করার অপচেষ্টার বা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। বিশ্ববিখ্যাত সূফী সম্রাট হুজ্জাতুল ইসলাম আবু হামেদ গাযযালী (رحمة الله) ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন গ্রন্থের প্রথম খন্ডে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। আর তার সাথে সমর্থন জানিয়েছেন ও স্বীকার করেছেন অনেক ইমামগণ। শুধুমাত্র ওহাবী ও আহলে হাদিসদের ইমাম ইবনে তাইমিয়া উক্ত হাদিস সম্পর্কে বলেন, “ এটি ইসরাঈলী রেওয়াতে হিসেবে উল্লেখ করা হয়, উক্ত হাদিস কোন সনদ রাসূল (ﷺ) পর্যন্ত পৌঁছেছে এ সম্পর্কে আমি পরিচিত নই।" উক্ত রেওয়ায়েতটি শুধু ইমাম গাযযালী (رحمة الله) সনদ বিহীন উল্লেখ করেছেন, কিন্তু ইমাম গাযযালী (رحمة الله) এর নিকট অবশ্যই সনদ জানা রয়েছে। উক্ত রেওয়ায়েতের সমর্থনে তিনটি গ্রহণযােগ্য হাদিস রয়েছে সনদ সহ যা ইমাম সাখাভী তার কিতাবে এবং ইমাম আলুনী (رحمة الله) তার কাশফুল খাফায় বর্ণনা করেছেন। 


দলীল নং - ১ - ১০ 

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) এ সমর্থনে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, - ইমাম আহমদ (رحمة الله) তার যুহদ ' নামক কিতাবে বর্ণনা করেন, হযরত ওহাব ইবনে মুনাব্বাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আসমান সমূহকে খুলে দিলেন হিযকিল নামক ফেরেশতার জন্য। তিনি আরশ পর্যন্ত দেখতে পেলেন এবং বললেন আল্লাহ তুমি পাক পবিত্র, তােমার শান কত মহান। অত:পর আল্লাহ তায়ালা বললেন নিশ্চয় আসমান সমূহ ও আরশ দূর্বলতা প্রকাশ করেছে।  আমাকে স্থান দিতে কিন্তু মুমিনের দিল বা অন্তর তা প্রকাশ করে আমায় করেছে।"


তথ্যসূত্র-

●আল্লামা ইমাম সাখাভীঃ মাকাসিদুল হাসানা, ৪২৯ পূ, হাদিস : ৯৮৮, 

●আল্লামা আলুনী : কাশফুল খাফা : ২/১৯৫ হাদিস। 

●ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : কিতাবুত যুহদ যুহদে ইউসুফ (عليه السلام) অধ্যায়- ১ / ৬৯ পৃষ্ঠা। 

●আল্লামা আযলূনী : কাশফুল খাফা : ২১৯৫ হাদিস। 

●আল্লামা ইমাম মানাবী : ফয়জুল কাদীর ১ / ২৮২ পৃ . হাদিস ও, 

●আল্লামা তাহের পাটনী : তাযকিরাতুল মওযুআত : ১১৩০। 

●আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষনৌতি : আসারুল মারফু ' আ : ৩১০। 

●কিরমানী, ফাওয়াইদুল মাওআত, ৭৮পৃ . 

●ইবনুল ইরাক, তানযিহুল শরীয়াহ, ১ / ১৪৮। 

●সুয়ূতি, লা-আলিল মাসনু, ২৯৩।


উক্ত হাদিসটি সম্পর্কে সাখাভী, আযলূনী ও আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী প্রমুখ মহা নীরবতা পালন করেছেন দ্বারা সহিহ বলেই গ্রহণ করেছেন বুঝা যায়। 


দলীল নং - ১১

আল্লামা ইমাম শায়খ আব্দুল করীম জালিলী আশ - শাফেয়ী (رحمة الله) তাঁর ইনসানে কামিল গ্রন্থে বলেন, 

“আল্লাহ তায়ালা বলেন, আসমান ও জমিন আমাকে সংকুলান করে না, কিন্তু একমাত্র আমার মুমিন বান্দার কলব আমাকে সংকুলান করে।" 

●মােল্লা আলী কারী, আসারুল মারফুআ, ৩১০।


দলীল নং - ১২ - ১৭ 

মুমিন বান্দার কলবে আল্লাহ থাকেন সে সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (رحمة الله) তার সুবিখ্যাত হাদিসের গ্রন্থে হাদিস উল্লেখ করেন এভাবে, “ হযরত আবি ইনাবাল খােলানী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলে খােদা (ﷺ) বলেন, যমিনবাসী থেকে অবস্থানের পাত্র রয়েছে তােমাদের প্রভুর ঐ পাত্র হল তাহার নেককার বান্দাগণের অন্তর সমূহ। আমাকে ধারণ করেছেন আমার প্রিয় পূণ্যবান। বান্দাদের অন্তর বা কলব আর তার এ ধারণ ক্ষমতাকে এবং সুক্ষ্মতাকে আমি ভালবেসেছি।" 


তথ্যসূত্র-

●আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাহানী, বাওয়াহিরুল বিহার : ১২৮৩ পৃষ্ঠা। 

●আল্লামা ইমাম তাবরানী : মুসনাদে হামীন : ২/১৯ পৃ, হাদিস - ৮৪০। 

●আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি : জামেউস সগীর, ১ / ৩৬৪ পৃ : হাদিস নং - ২৩৭৫ 

●আল্লামা ইমাম আবদুর রহমান সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : পৃষ্ঠা নং ৩৮০, হাদিস : ১১০। 

●আল্লামা আলুনী : কাশফুল খাফা : ১৭৫ পৃষ্ঠা, হাদিস : ২২৫৪। 

●আলবানী সিলসিলাতুল আহাদিসুস সহীহ হাদিসঃ ১৬৯১, সহিহুল জামে, হাদিসঃ ২১৬৩। 


নাসিরুদ্দীন আলবাণী, হাদিসটি বর্ণনা করে বলেন, হাদিস “ হাসান ” পর্যায়ের। উক্ত হাদিসটি সহিহ যদিও আলবানী হাসান বলেছেন উক্ত হাদীসের একজন রাবী যার উপর ভিত্তি করে আলবানী “ হাসান বলেছেন। সে রাবিটি হল বাকীয়্যাতু বিন ওয়ালিদ বিন ছয়ীদ (رحمة الله) উক্ত রাবী সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনুল মােবারক বলেছেন, তিনি সত্যবাদী ছিলেন। 

২ . ইমাম আদী (رحمة الله) বলেন : শাম দেশের মধ্যে তৎকালীন মুহাদ্দিসদের মধ্যে তাঁর হাদিস বর্ণনা এ অর্থাৎ অত্যন্ত দৃঢ় (শক্তিশালী) ছিল। 

৩ . ইমাম নাসায়ী (رحمة الله) সহ অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ বলেন : তিনি যখন হাদিস বর্ণনা করতেন বিশ্বস্ততা সহকারেই করতেন, তবে তিনি হাদিসে তাদীস করতেন। 

৪ . ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) বলেন, তিনি বিশ্বস্ত ছিলেন তবে তিনি তাদলীস করতেন। 

৫ . আব্দুল্লাহ বিন আহমদ (رحمة الله) বলেন : “ তিনি একজন সৎ ব্যক্তি ছিলেন, শাম দেশে তার সাদৃশ্য কেউ ছিল না, আল্লাহর রহমত তার উপর বর্ষিত হােক। 

৬ . ইমাম আবু ইসহাক জুরজানী বলেন : নিশ্চয় তিনি যখন হাদিস বর্ণনা করতেন এ তথা বিশ্বস্ত সহকারে বর্ণনা করতেন। 

আল্লামা আযলুনী (رحمة الله) ও আল্লামা ইমাম সাখাভী (رحمة الله) বলেন, তিনি তাদলীস করতেন। কিন্তু তার বর্ণনা হাদিস শুদ্ধ। 


তথ্যসূত্র-

●আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতি : জামেউল আহাদিস : ৯ / ১৯৬পৃ. হাদিসঃ৮২৩৩। 

●ইউসূফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ১ / ৩৭৭পূহাদিস, ৪০৯১। 

●নাবিল সাদুদ্দীন সালিম জাররার, ইমাদ ইলা যাওয়াইদ, ৬ / ২১১পৃ . হাদিস, ৫৫০৩। 

●ইরাকী, তাখরীজে ইহইয়া, ১৮৯০পৃ . 

●মানাভী, ফয়যুল কাদীর, ২ / ৬২৯পৃ . 

●ছুয়াইব আব্দুল জাব্বার, আল - জামেউস সহিহ লিল সহিহ লিল সুনান ওয়াল মাসানীদ, ২৭৮৬ - ৩ ৩ / ১৬২পৃ 

●আল্লামা ইমাম যাহাবী : মিযানুল ইতিদাল : ১ / ৩৪২ - ৩৪৩ পৃ, রাবী নং - ১৪৪৩

●ইমাম আদি : কামিল ২৭২ প। 

●আল্লামা আযলুনী : কাশফুল খাফা : ১৭৫ ; হাদিস : ২২৫৪। 


দলীল নং - ১৯

আল্লামা ইমাম আব্দুর রউফ মানাবী (رحمة الله) তাঁর সংকলিত হাদীসে কুদসী এ ৯৯ নং হাদিস হিসেবে একটি হাদিস উল্লেখ করেন এভাবে যে, “ হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আল্লাহ তা' য়ালা বলেন। আকাশ ও জমিন সমূহ আমাকে ধারণ করতে দুর্বলতা প্রকাশ করল। অবশেষে মুমিনের কলবই আমাকে ধারণ করতে সক্ষম হইল উক্ত হাদিসটি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) তার কিতাবুদ - যুহুদ গ্রন্থে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। 


ইমাম গাযযালী (رحمة الله) একটি হাদিস সংকলন করেন, “ হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্নিত তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলেন আল্লাহ কী আসমানে না যমিনে ? তিনি বললেন আল্লাহর মু ' মিন বান্দাদের কলবে। তাই প্রমাণিত হলাে প্রথমে তারা যে হাদিসটি উল্লেখ করে তা জাল বলেছে তাদের সে বক্তব্য সঠিক হলেও আমাদের কোন অসুবিধা নেই, কেননা এ বিষয়ে যেহেতু আরও অনেক সনদ রয়েছে। 

 
Top