নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর সর্বোচ্চ ২২৪ কিলোমিটার বেগে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় দেশে আঘাত হেনেছিল। তাতে ১০ থেকে ৩৩ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসও হয়েছিল। এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৫ লাখ মানুষ ও অসংখ্য গবাদিপশুর মৃত্যু হয়।

খুলনা-বরিশাল উপকূলীয় এলাকায় ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ২২৩ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিডর। এতে প্রায় ৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ভেসে গেছে অসংখ্য বাড়িঘর।

এদিকে, শনিবার (১৬ মে) রাতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে রূপ নিয়েছে। তবে নতুন সৃষ্ট এ ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ কত হতে পারে- এ নিয়ে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর এখনও তেমন কিছু না বললেও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আম্ফান সর্বোচ্চ ২০০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে।

অর্থাৎ ১৯৭০ ও ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের কাছাকাছি শক্তি নিয়ে আসছে আম্ফান। ওই দুটি ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে ২৪ ও ২৩ কিলোমিটার কম গতিতে তাণ্ডব চালাবে আম্ফান। তবে গত এই দুটি ঘূর্ণিঝড়ের মতো আম্ফানের প্রকৃতিও এক-অতি প্রবল/ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় (Extreme Severe Cyclone)।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আজ দুপুর পর্যন্ত প্রবল আম্ফান ঘূর্ণিঝড় রূপে ছিল। তখন এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৮৮ কিলোমিটার। তবে বিকেল ৩টার তথ্যের ভিত্তিতে আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি প্রবল রূপ ধারণ করেছে। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ পৌঁছেছে ১৭৭ কিলোমিটারে। অর্থাৎ ঘূর্ণিঝড়টি দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে প্রবল আকার ধারণ করেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, আগামী ১৯ মে দিবাগত রাতে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে।

এদিকে, কখনও কত গতিতে আম্ফান আসছে তার একটি চিত্র তুলে ধরেছে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর। তাতে বলা হয়েছে, ১৭ মে এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে (Severe Cyclone) রূপ নেবে। এ দিন প্রথমে ১০৫, তারপর ১১৫ ও ১২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত এর সর্বোচ্চ গতি হবে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত সর্বোচ্চ গতিতে বইছিল আম্ফান।



১৮ মে’র (সোমবার) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ দিন এটি খুব প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে (Very Cevere Cyclone) পরিণত হবে। আম্ফানের বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪০ কিলোমিটার, তারপর ১৫০ ও ১৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত গিয়ে ঠেকবে।

তারপর দিন ১৯ মে (মঙ্গলবার) এটি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে (Extreme Severe Cyclone) রূপ নেবে। এ দিন বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৯০ কিলোমিটার, তারপর এটি ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে।

২০ মে (বুধবার) পর্যন্ত ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০০ কিলোমিটার গতিবেগ থাকতে পারে। বুধবারই আম্ফানের ধংসাত্মক রূপ কিছুটা কমে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৮০ কিলোমিটারে নামতে পারে বাতাসের গতিবেগ।

২১ মে’তে (বৃহস্পতিবার) আম্ফানের সর্বোচ্চ গতি আরও কমে ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটারে নেমে আসতে পারে। এরপর ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতিবেগ ৬০ কিলোমিটারে নেমে আম্ফান নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে।

বিকাল ৩টার পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর আরও বলছে, এটি আজ বিকাল ৩টায় (১৭ মে) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৩২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে, যাতে অল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

তথ্যসূত্র: জাগো নিউজ।
 
Top