আঙ্গুলী চুম্বনের প্রমাণ
____________________
প্রথম অধ্যায়

আঙ্গুলী চুম্বনের প্রমাণ


মুয়াযযিন আযান দেয়ার সময় যখন ‘আশহাদুআন্না মুহাম্মদার রাসুলুল্লাহ’ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ উচ্চারণ করে, তখন নিজের বৃদ্ধাঙ্গলীদ্বয় বা শাহাদাতের আঙ্গুল চুম্বন করে চক্ষুদ্বয়ে লাগানো মুস্তাহাব এবং এতে দীন-দুনিয়া উভয় জাহানের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে অনেক হাদীছ বর্ণিত আছে। সাহাবায়ে কিরাম থেকে এটা প্রমাণিত আছে এবং অধিকাংশ মুসলমান একে মুস্তাহাব মনে করে পালন করেন।


✧ ‘প্রসিদ্ধ সালাতে মাসউদী’ কিতাবের দ্বিতীয় খণ্ড نماز শীর্ষক অধ্যায়ে উল্লে­খিত আছে-

رُوِىَ عَنِ النَّبِىَّ ﷺ اَنَّهُ قَالَ مَنْ سَمِعَ اِسْمِىْ فِىْ الْاَذَانِ وَ وَوَضَعَ اِبْهَامَيْهِ عَلٰى عَيْنَيْهِ فَانَا طَالِبِهُ فِى صُفُوْفِ الْقِيَامَةِ وَ قَائِدُهُ اِلَى الْجَنَّةِ-

‘নবি কারিম (ﷺ) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি আযানে আমার নাম শুনে স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চোখের উপরে রাখবে আমি তাকে কিয়ামতের দিন কাতারসমূহের মধ্যে খোঁজ করবো এবং নিজের পেছন পেছনে টেনে বেহেশতে নিয়ে যাবো।’ ৪৬৮

➥468. সালাতে মাসউদী, ফাতওয়ায়ে শামী, পৃষ্ঠা-৩৫০, নূূরানী কুতুবখানা, পেশওয়ার, পাকিস্তান।


✧ তাফসীরে রুহুল বয়ানে ষষ্ঠ পারার সুরা মায়েদার আয়াত ৪৬৯,

➥469. সূরা মায়েদা, আয়াত নং-৫৮


 وَإِذَا نَادَيْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ  এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উল্লে­খিত আছে-

وَضَعْفَ تَقْبِيْلُ ظفرى ابهاميه مع مسبحتيه والمسح على عينيه عند قوله محمد رسول الله لانه لم يثبت فى الحديث المرفوع لكن المحدثين اتفقوا على ان الحديث الضعيف يجوز العمل به فى الترغيب والترهيب

-মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ বলার সময় নিজের শাহাদতের আঙ্গুল সহ বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখে চুমু দেয়ার বিধানটা জঈফ রেওয়ায়েত সম্মত। কেননা এ বিধানটা মরফু হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। কিন্তু মুহাদ্দিছীনে কিরাম এ ব্যাপারে একমত যে আকর্ষণ সৃষ্টি ও ভীতি সঞ্চারের বেলায় জঈফ হাদীছ অনুযায়ী আমল করা জায়েয। ৪৭০

➥470. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪১০।


✧ ফাতওয়ায়ে শামীর প্রথম খণ্ড الاذان শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-

يُسْتَحَبُّ أَنْ يُقَالَ عِنْدَ سَمَاعِ الْأُولَى مِنْ الشَّهَادَةِ: صَلَّى اللَّهُ عَلَيْك يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَعِنْدَ الثَّانِيَةِ مِنْهَا: قَرَّتْ عَيْنِي بِك يَا رَسُولَ اللَّهِ، ثُمَّ يَقُولُ: اللَّهُمَّ مَتِّعْنِي بِالسَّمْعِ وَالْبَصَرِ بَعْدَ وَضْعِ ظُفْرَيْ الْإِبْهَامَيْنِ عَلَى الْعَيْنَيْنِ فَإِنَّهُ - عَلَيْهِ السَّلَامُ - يَكُونُ قَائِدًا لَهُ إلَى الْجَنَّةِ، كَذَا فِي كَنْزِ الْعِبَادِ. اهـ. قُهُسْتَانِيٌّ، وَنَحْوُهُ فِي الْفَتَاوَى الصُّوفِيَّةِ. وَفِي كِتَابِ الْفِرْدَوْسِ ্রمَنْ قَبَّلَ ظُفْرَيْ إبْهَامِهِ عِنْدَ سَمَاعِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ فِي الْأَذَانِ أَنَا قَائِدُهُ وَمُدْخِلُهُ فِي صُفُوفِ الْجَنَّةِগ্ধ وَتَمَامُهُ فِي حَوَاشِي الْبَحْرِ لِلرَّمْلِيِّ عَنْ الْمَقَاصِدِ الْحَسَنَةِ لِلسَّخَاوِيّ-

‘মুস্তাহাব হলো, আযানের সময় মুয়াজ্জিন প্রথমবার শাহাদাত বলার সময় ‘সাল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ’ বলা। আর দ্বিতীয়বারে শাহাদাত বলার সময় ‘কুররাতু আইনি বিকা ইয়া রাসুলাল্লাহ’ বলে দু বৃদ্ধাঙ্গুলিতে চুম্বন করে চোখদ্বয়ের উপর রেখে দোয়াটি পাঠ করা- ‘আল্লাহুম্মা মাত্তেনি বিস-সাময়ি ওয়াল বাসরি’ আমলটি যে ব্যক্তি করবে হুযুর কারিম (ﷺ) তাকে ধরে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। অনুরূপ বর্ণনা কানযুল ইবাদ, কুহস্তানি ও ফাতওয়ায়ে সুফিয়াতেও রয়েছে। কিতাবুল ফিরদাউসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি আযানে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ শুনে স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয়ের নখে চুম্বন করে, আমি তাকে ধরে আমার পেছন পেছনে বেহেশতে নিয়ে যাবো এবং তাকে জান্নাতিদের কাতারে অন্তভর্‚ক্ত করবো। উক্ত বিষয়ের পরিপূর্ণ আলোচনা বাহারুর রায়েকের টীকাসহ ফতোয়ায়ে রামলিতেও আছে।’ ৪৭১

➥471. ইমাম ইবনে আবেদীন শামি : ফতোয়ায়ে শামি- ১/৩৯৮ পৃষ্ঠা- কিতাবুল আযান অধ্যায়। মুফতী আমিমুল ইহসান মুজাদ্দেদী : কাওয়াইদুল ফিক্হ : ১/২৩৩। ইমাম আহমদ রেযা খাঁন : আহকামে শরিয়ত : ১/১৭২। ইমাম আহমদ রেযা : ফতোয়ায়ে আফ্রিকা : ৭৮। মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জা‘আল হক্ব : ২/২৪৬। আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসিরে রুহুল বায়ান : ৭/২২৯ পৃ:


✧ উপরোক্ত ইবারতে ছয়টি কিতাবের কথা উল্লে­খ করা হয়েছে। যেমন-শামী, কনযুল ইবাদ, ফাতওয়ায়ে সূফিয়া, কিতাবুল ফিরদাউস, কুহস্থানী এবং ‘বাহারুর রায়েক’ এর টীকা। ওই সব কিতাবে একে মুস্তাহাব বলা হয়েছে।

المقاصد الحسنة في بيان كثير من الأحاديث المشتهرة على الألسنة

নামক গ্রন্থে ইমাম সাখাবী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন-

ذَكَرَهُ الدَّيْلَمِيُّ فِي الْفِرْدَوْسِ مِنْ حَدِيثِ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ أَنَّهُ لَمَّا سَمِعَ قول المؤذن أشهد أن محمد رَسُولُ اللَّه قَالَ هَذَا، وَقَبَّلَ بَاطِنَ الأُنْمُلَتَيْنِ السَّبَّابَتَيْنِ وَمَسَحَ عَيْنَيْهِ، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ فَعَلَ مِثْلَ مَا فَعَلَ خَلِيلِي فَقَدْ حَلَّتْ عَلَيْهِ شَفَاعَتِي، ولا يصح.

-ইমাম দায়লমী (رحمة الله) ‘ফিরদাউস’ কিতাবে ‘হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি মুয়ায্যিন যখন ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ বলতে শোনলেন, তখন তিনিও তা বললেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ে চুম্বন করে চোখে মালিশ করলেন। তা দেখে রাসুল (ﷺ) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি আমার বন্ধু (আবু বকর)’র ন্যায় আমল করবে, তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত হয়ে গেলো। এ হাদীছটি অবশ্য বিশুদ্ধ হাদীছের পর্যায়ভুক্ত নয়।’ ৪৭২

➥472. ইমাম আবদুর রহমান সাখাভী: মাকাসিদুল হাসানা- ৩৮৩ হাদিস- ১০২১। আল্লামা আযলুনি: কাশফুল খাফা- ২/২৫৯  হাদিস-  ২২৯৬। আল্লামা মোল্লা আলি ক্বারী: আসরারুল মারফু- ৩১২ পৃষ্ঠা  হাদিস- ৪৫৩। আল্লামা ইমাম তাহতাভী: মারাকিল ফালাহ- ১৬৫। আল্লামা শাওকানি: ফাওয়াহিদুল  মাওদু’আত- ১/৩৯। আল্লামা ইসমাইল হাক্কী: তাফসিরে রুহুল বায়ান- ৭/২২৯। আল্লামা তাহের পাটনী: তাযকিরাতুল মাওদু’আত- ৩৪, আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতি: লা’আলিল মাসনু’আ- ১৬৮-১৭০। আল্লামা আব্দুল হাই লাখনৌভী: আসাররুল মারফু’আ- ১৮২, নাসিরুদ্দিন আলবানি: সিলসিলাতদ দাঈফা- ১/১০২ পৃ: হাদিস/৭৩। এ হাদিসটির গ্রহণযোগ্যতা জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খন্ড (প্রথম প্রকাশ) .....পৃষ্ঠায় দেখুন।


✧ উক্ত ‘আল-মাকাসিদুল হাসানা’ গ্রন্থে আবুল আব্বাসের (رحمة الله) রচিত মুজেযা গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে-

عن الخضر عليه السلام أنه: من قال حين يسمع المؤذن يقول أشهد أن محمد رسول اللَّه: مرحبا بحبيبي وقرة عيني محمد بن عبد اللَّه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثم يقبل إبهاميه ويجعلهما على عينيه لم يرمد أبدا

-‘হযরত খিযির (عليه السلام) থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসুলুল্লাহ শুনে বলবে ‘মারহাবা বি হাবিবি ওয়া কুররাতো আইনি মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ (ﷺ)’ অত:পর স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগাবে, তাহলে ওর চোখ কখনও পীড়িত হবে না।’ ৪৭৩

➥473. আল্লামা ইমাম সাখাভী: মাকাসিদুল হাসানা- ১/৩৮৩ হাদিস- ১০২১। আল্লামা আযলুনি: কাশফুল খাফা- ২/২৭০ হাদিস- ২২৯৬। আল্লামা মোল্লা আলি ক্বারী: মাওদু’আতুল কাবির- ১০৮। আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী- জা’আল হক- ২/২৪৬ পৃ:। এ হাদিসটির গ্রহণযোগ্যতা জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খন্ড (প্রথম প্রকাশ) .....পৃষ্ঠায় দেখুন।


✧ উক্ত গ্রন্থে আরোও বর্ণনা করা হয়েছে-হযরত মুহাম্মদ ইবনে বাবা নিজের একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে এক সময় জোরে বাতাস প্রবাহিত হয়েছিল। তখন তাঁর চোখে একটি পাথরের কণা পড়েছিল যা বের করতে পারে নি এবং খুবই ব্যথা অনুভব হচ্ছিল।

وأنه لما سمع المؤذن يقول أشهد أن محمدا رسول اللَّه قال ذلك، فخرجت الحصاة من فوره

যখন তিনি মুয়াযযিনের কণ্ঠে আশহাদু আন্না মুহাম্মুদার রসুলুল্লাহ শুনলেন, তখন তিনি উপরোক্ত দুআটি পাঠ করলেন এবং অনায়াসে চোখ থেকে পাথর বের হয়ে গেল। ৪৭৪

➥474. ইমাম সামসুদ্দীন সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, পৃষ্ঠা-৬০৫, হাদিস-১০২০, দারুল কিতাব আরাবী, বয়রুত, লেবানন, আজলূূনী, কাশফুল খাফা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৬৯, হাদিস-২২৯৬


✧ একই ‘আল-মাকাসিদুল হাসানা’ গ্রন্থে হযরত শামস মুহাম্মদ ইবনে সালেহ মদনী থেকে বর্ণিত আছে যে তিনি ইমাম আমজাদ (মিসরের অধিবাসী পূর্ববর্তী উলামায়ে কিরামের অর্ন্তভূক্ত)কে বলতে শুনেছেন-যে ব্যক্তি আযানে হুযুর (ﷺ) এর নাম মুবারক শোনে স্বীয় শাহাদাত ও বৃদ্ধাঙ্গুলী একত্রিত করে-

وقبلهما ومسح بهما عينيه لم يرمد أبدا

উভয় আঙ্গুলকে চুম্বন করে চোখে লাগাবে, কখনও তার চক্ষু পীড়িত হবে না। ৪৭৫

➥475. ইমাম সামসুদ্দীন সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, পৃষ্ঠা-৬০৫, হাদিস-১০২০, দারুল কিতাব আরাবী, বয়রুত, লেবানন, আজলূূনী, কাশফুল খাফা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৬৯, হাদিস-২২৯৬


✧ ইরাক-আযমের কতেক মাশায়েখ বলেছেন যে, যিনি এ আমল করবেন, তাঁর চোখ রোগাক্রান্ত হবে না।

وقال لي كل منهما: منذ فعله لم ترمد عيني

কিতাব রচয়িতা বলেছেন-যখন থেকে আমি এ আমল করেছি আমার চক্ষু পীড়িত হয়নি। ৪৭৬

➥476. ইমাম সামসুদ্দীন সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, পৃষ্ঠা-৬০৫, হাদিস-১০২০, দারুল কিতাব আরাবী, বয়রুত, লেবানন, আজলূূনী, কাশফুল খাফা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৬৯, হাদিস-২২৯৬


✧ কিছু অগ্রসর হয়ে উক্ত মকাসেদে হাসনা গ্রন্থে আরও বর্ণিত হয়েছে-

قال ابن صالح: وأنا وللَّه الحمد والشكر منذ سمعته منهما استعملته فلم ترمد عيني، وأرجو أن عافيتهما تدوم، وأني أسلم من العمى إن شاء اللَّه

হযরত ইবনে সালেহ বলেছেন: যখন আমি এ ব্যাপারে জানলাম, তখন এর উপর আমল করলাম। এরপর থেকে আমার চোখ পীড়িত হয়নি। আমি আশা করি, ইনশা আল্লাহ এ আরাম সব সময় থাকবে এবং অন্ধত্ব থেকে মুক্ত থাকবো।  ৪৭৭

➥477. ইমাম সামসুদ্দীন সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, পৃষ্ঠা-৬০৬, হাদিস-১০২০, দারুল কিতাব আরাবী, বয়রুত, লেবানন।


✧ উক্ত কিতাবে আরও উল্লে­খ করা হয়েছে যে ইমাম হাসন (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি আশহাদতু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ” শোনে যদি বলে:

مرحبا بحبيبي وقرة عيني محمد بن عبد اللَّه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ويقبل إبهاميه ويجعلهما على عينيه لم يعم ولم يرمد

এবং নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলি চুম্বন করে চোখে লাগাবে এবং বলবে لم يعم ولم يرمد তাহলে কখনও সে অন্ধ হবে না। এবং কখনও তার চক্ষু পীড়িত হবে না।  ৪৭৮

➥478. ইমাম সামসুদ্দীন সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, পৃষ্ঠা-৬০৬, হাদিস-১০২০, দারুল কিতাব আরাবী, বয়রুত, লেবানন।


মোট কথা হলো মকাসেদে হাসনা গ্রন্থে অনেক ইমাম থেকে এ আমল প্রমাণিত করা হয়েছে।


✧ শরহে নেকায়ায় বর্ণিত আছে:

وَاَعْلَمْ اَنَّهُ يُسْتَحَبُّ اَنْ يُقَالَ عِنْدَ سَمَاعِ الْاَوْلٰى مِنَ الشَّهَادَة الثَّانِيَّةَ صَلَّى اللهُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ الله وَ عِنْدَ الثَّانِيَّةَ مِنْهَا قُرَّةُ عَيْنِىْ بِكَ يَا رَسُوْلَ اللهَ بَعْدَ وَضَعِ ظُفْرَى اِبْهَامَيْنِ عَلٰى الْعَيْنَيْنِ فَاِنَّهُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ يَكُوْنَ لَهُ قَائِدَا اِلَى الْجَنَّةَ كَذَا فِى كَنْزُ الْعُبَّاد

-‘‘জানা দরকার যে মুস্তাহাব হচ্ছে যিনি দ্বিতীয় শাহাদতের প্রথম শব্দ শোনে বলবেন: صَلَّى اللهُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ الله (সাল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া রাসুলুল্লাহ) এবং দ্বিতীয় শব্দ শোনে বলবেন قُرَّةُ عَيْنِىْ بِكَ يَا رَسُوْلَ اللهَ (কুররাতু আইনী বেকা ইয়া রাসুলাল্লাহ) এবং নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বযের নখ চক্ষুদ্বয় রাখবেন, ওকে হুযুর (ﷺ) নিজের পিছনে পিছনে বেহেশতে নিয়ে যাবেন। অনুরূপ কনযুল ইবাদেও বর্ণিত আছে।’’ ৪৭৯

➥479. ইমাম আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে নেকায়া, জামেউর রমুয, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১২৫।


✧ মাওলানা জামার ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উমর মক্কী (কুঃ) স্বীয় ফাতওয়ার কিতাবে উল্লে­খ করেছেন:

تقبيل الابهامين ووضع هما على العينين عند ذكر اسمه عليه السلام فى الاذان جائز بل مستتحب صرح به مشائخنا

-‘‘আযানে হুযুর (ﷺ) এর পবিত্র নাম শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দেয়া এবং চোখে লাগানো জায়েয বরং মুস্তাহাব। আমাদের মাশায়েখে কিরাম এ ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা করেছেন।’’ ৪৮০

➥480. আলা’ হযরত, ফাতওয়ায়ে রযভিয়্যাহ, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৪৩৬।


✧ আল্লামা মুহাম্মদ তাহির (رضي الله عنه) تكملة مجمع بحار الانوار গ্রন্থে উপরোক্ত হাদীছকে “বিশুদ্ধ নয়” মন্তব্য করে বলেন:

وروى تجربة ذالك عن كثيرين

কিন্তু এ হাদীছ অনুযায়ী আমলের বর্ণনা অনেক পাওয়া যায়।


আরও অনেক ইবারত উদ্ধৃত করা যায়। কিন্তু সংক্ষেপে করার উদ্দেশ্য এটুকুই যথেষ্ট মনে করলাম।


✧ হযরত সদরুল আফাযেল আমার মুর্শিদ ও উস্তাদ আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ নঈম উদ্দীন সাহেব কিবলা মুরাদাবাদী বলেছেন, লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইনজিল গ্রন্থের একটি অনেক পুরানো কপি পাওয়া গেছে, যেটার নাম ইনজিল বারনাবাস। ইদানিং এটা ব্যাপকভাবে প্রকাশিত এবং প্রত্যোক ভাষায় অনুদিত হয়েছে। এর অধিকাংশ বিধানাবলীর সাথে ইসলামের বিধানাবলীর মিল রয়েছে। এ গ্রন্থের এক জায়গায় লিখা হয়েছে যে হযরত আদম (عليه السلام) যখন রুহুল কুদ্দুস (নুরে মুস্তাফা) কে দেখার জন্য আরজু করলেন, তখন সেই নুর তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলের নখে চমকানো হলো। তিনি মহব্বতের জোশে উক্ত নখদ্বয়ে চুমু দিলেন এবং চোখে লাগালেন।৪৮১


➥481. টিকাঃ

☞এ ঘটনাটি খুব সুন্দর করে বিখ্যাত মুফাসসির, ফকিহ, আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তার তাফসিরে এভাবে উল্লেখ করেন-

وفى قصص الأنبياء وغيرها ان آدم عليه السلام اشتاق الى لقاء محمد صلى الله عليه وسلم حين كان فى الجنة فاوحى الله تعالى اليه هو من صلبك ويظهر فى آخر الزمان فسأل لقاء محمد صلى الله عليه وسلم حين كان فى الجنة فاوحى الله تعالى اليه فجعل الله النور المحمدي فى إصبعه المسبحة من يده اليمنى فسبح ذلك النور فلذلك سميت تلك الإصبع مسبحة كما فى الروض الفائق. او اظهر الله تعالى جمال حبيبه فى صفاء ظفرى ابهاميه مثل المرآة فقبل آدم ظفرى ابهاميه ومسح على عينيه فصار أصلا لذريته فلما اخبر جبرائيل النبي صلى الله عليه وسلم بهذه القصة قال عليه السلام (من سمع اسمى فى الاذان فقبل ظفرى ابهاميه ومسح على عينيه لم يعم ابدا

-‘কাসাসুল আম্বিয়া কিতাবে বর্ণিত আছে। হযরত আদম (عليه السلام) জান্নাতে অবস্থানকালে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)‘র সাথে সাক্ষাতের জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করেন। অত:পর আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর নিকট ওহি প্রেরণ করেন যে, হে আদম! তিনি তোমার পৃষ্ট হতে শেষ যামানায় প্রকাশ হবেন। তা শুনার পর তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, বিনিময়ে মহান আল্লাহ তাঁকে জানিয়ে দিলেন, নুরে মুহাম্মদি (ﷺ) তোমার ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুলীর মধ্যে স্থানান্তর করেছি। তখনই সে অঙ্গ হতে তাসবিহ পাঠ আরম্ভ হলো। এজন্যই এই আঙ্গুলকে তাসবিহ পাঠকারী আঙ্গুল বলা হয়। যেমন ‘রওযাতুল ফায়েক’ কিতাবসহ অন্য আরেক বর্ণনায় রয়েছে যে, আল্লাহ তা’য়ালা আপন হাবিবেপাক (ﷺ) এর সৌন্দর্য প্রকাশ করলেন দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীর উপর, সেখানে দেখা যাচ্ছিলো; যেভাবে আয়নাতে দেখা যায়। তখন আদম (عليه السلام) দুই বৃদ্ধাঙ্গুলে চুম্বুন করে স্বীয় চোখের উপর মালিশ করলেন। এই আমল তাঁর সন্তানাদীর জন্য প্রমাণ হিসেবে সাব্যস্ত হলো। অত:পর হযরত জিবরাইল (عليه السلام) ঘটনাটি হুযুর কারিম (ﷺ) কে জানালেন। নবিজি (ﷺ) ইরশাদ করছেন- যে ব্যক্তি আযানের মধ্যে আমার নাম মোবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে মালিশ করবে, সে কখনো অন্ধ হবে না।’’ (আল্লামা ইসমাইল হাক্কী: তাফসিরে রুহুল বয়ান- ৭/২২৯, সুরা মায়িদা- ৫৭ নং আয়াতের তাফসির, আল্লামা আবদুর রহমান সাওপুরী: নুযহাতুল মাযালিস- ২/৭৪পৃ:)


(রুহুল কুদ্দুসের অর্থ নুরে মোস্তফা কেন করা হল; এর ব্যাখ্যা আমার কিতাব শানে হাবিবুর রহমানে দেখুন। ওখানে উল্লে­খ করা হয়েছে যে ঈসা (عليه السلام) এর যুগে রুহুল কুদ্দুস নামেই হুযুর (ﷺ) মশহুর ছিলেন।) হানাফী আলিমগণ ছাড়াও শাফেঈ ও মালেকী মযহাবের আলিমগণও বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয় চুম্বন মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে একমত। যেমনঃ


✧ শাফেঈ মযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব إعانة الطالبين على حل ألفاظ فتح المعين এর ২৪ পৃষ্ঠায় উল্লে­খিত আছে:

ثُمَّ يُقَبِّلَ إِبْهَامَيْهِ وَيَجْعَلُهُمَا عَلٰى عَيْنَيْهِ لَمْ يُعْمِ وَلَمْ يَرْمَدْ أَبَدًا.

-অতঃপর নিজের  বৃদ্ধাঙ্গুলির চুমু দিয়ে চোখে লাগালে, কখনও অন্ধ হবে না এবং কখনও চক্ষু পীড়া হবে না।  ৪৮২

➥482. দিমিয়াতী, এনাতুত-তালেবীন, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৩৩, দারু ইহ্ইয়াউত-তুরাশুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন।


✧ মালেকী মযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব:

        كفاية الطالب الربانى لرسالة ابن ابى زيد القيردانى

এর প্রথম খন্ডের ১৬৯ পৃষ্ঠায় এ প্রসঙ্গে অনেক কিছু বলার পর লিখেছেন:

ثُمَّ يُقَبِّلَ إِبْهَامَيْهِ وَيَجْعَلُهُمَا عَلٰى عَيْنَيْهِ لَمْ يُعْمِ وَلَمْ يَرْمَدْ أَبَدًا.

অতঃপর বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয় চুমু দেবে এবং চোখে লাগাবে, তাহলে কখনও অন্ধ হবে না। এবং কখনও চক্ষু পীড়া হবে না।


✧ এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আল্লামা শেখ আলী সাঈদী عدوى নামক কিতাবের ১৭ পৃষ্ঠায় উল্লে­খ করেছেন:

لم يبين موضع التقبيل من ابهامين الا انه نقل عن الشيخ العالم المفسر نور الدين الخراسانى قال بعضهم لقيته وقت الاذان فلما سمع المؤذن يقول اشهد ان..............قبل ابهامى نفسه ومسح بالظفرين اجفان عينيه من المال الى ناحية الصدع ثم فعل ذالك عند كل تشهد مرة فسالته عن ذالك فقال كنت افعله ثم تركته فمرضت عينى فرءيته ﷺ مناما فقال لما تركت مسح عينيك عند الاذان ان اردت ان تبرأ عينك فعل فى المسح فاستيقظت ومسحت فبرءت ولم يعاودنى فى مرضها الى الان

-গ্রন্থাহার বৃদ্ধাঙ্গুলি চুম্বনের সময়ের কথা উল্লে­খ করেন নি। অবশ্য শেখ আল্লামা মুফাসসির নুরুদ্দীন খুরাসানী থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি কতেক লোককে আযানের সময় লক্ষ্য করেছেন যে যখন তারা মুয়াযযিনের মুখে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ শুনলেন, তখন নিজেদের বৃদ্ধাঙ্গুলে চুমু দিলেন এবং নখদ্বয়কে চোখের পলকে এবং চোখের কোণার লাগালেন এবং কান পর্যন্ত বুলিয়ে নিলেন। প্রত্যেক শাহাদতের সময় এ রকম একবার করলেন। আমি ওদের একজনকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন আমি বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দিতাম কিন্তু মাঝখানে ছেড়ে দিয়েছিলাম। তখন আমার চক্ষু রোগ হয়। এর মধ্যে এক রাত আমি হুযুর (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখলাম। তিনি (ﷺ) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন: আযানের সময় বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয় চোখে লাগানো কেন ছেড়ে দিয়েছ? যদি তুমি চাও, তোমার চোখ পুনরায় ভাল হোক, তাহলে তুমি পুনরায় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চোখে লাগানো আরম্ভ কর। ঘুম ভাঙ্গার পর আমি পুনরায় এ আমল শুরু করে দিলাম এবং আরোগ্য লাভ করলাম। আজ পর্যন্ত সেই রোগে আর আক্রান্ত হইনি।


উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতিভাত হলো যে, আযান ইত্যাদিতে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন ও চোখে লাগানো মুস্তাহাব, হযরত আদম (عليه السلام) সিদ্দীকে আকবর (رضي الله عنه) ও ইমাম হাসান (رضي الله عنه) এর সুন্নাত। ফকীহ, মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরগণ এটা মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে একমত। শাফেঈী ও মালেকী মাযহাবের ইমামগণ এটা মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে রায় দিয়েছেন। প্রত্যেক যুগে এবং প্রত্যেক মুসলমান একে মুস্তাহাব মনে করেছেন এবং করেছেন। এ আমলে নিম্নবর্ণিত ফায়দাগুলো রয়েছে?

        

আমলকারীর চোখ রোগ থেকে মুক্ত থাকবে এবং ইনশাআল্লাহ কখনও অন্ধ হবে না, যে কোন চক্ষু রোগীর জন্য বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বনের আমলটি হচ্ছে উৎকৃষ্ট চিকিৎসা। এটা অনেকবার পরীক্ষিত হয়েছে। এর আমলকারী হুযুর (ﷺ) এর শাফায়াত লাভ করবে এবং ওকে কিয়ামতের কাতার থেকে খুঁজে বের করে তাঁর (ﷺ) পিছনে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন।

        

একে হারাম বলা মুর্খতার পরিচায়ক। যতক্ষণ পযর্ন্ত নিষেধাজ্ঞার সুস্পষ্ট দলীল পাওয়া যাবে না, ততক্ষণ একে নিষেধ করা যাবে না। মুস্তাহাব প্রমাণের জন্য মুসলমানগণ মুস্তাহাব মনে করাটা যথেষ্ট। কিন্তু হারাম বা মাকরূহ প্রমাণের জন্য নির্দিষ্ট দলীলের প্রয়োজন যেমন আমি বিদআতের আলোচনায় উল্লে­খ করেছি।

        

বিঃদ্রঃ- আযান সম্পর্কে তো সুস্পষ্ট এবং বিস্তারিত রিওয়ায়েত ও হাদীছ সমূহ মওজুদ আছে, যা ইতিপূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। তকবীরও আযানের মত। হাদীছসমূহে তকবীরকে আযান বলা হয়েছে-দু’আযানের মাঝখানে নামায আছে অর্থাৎ আযান ও তকবীরের মধ্যবর্তী। সুতরাং তকবীরে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসুলুল্লাহ’ বলার সময়ও বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করা ফলপ্রসূ ও বরকতময়। আযান ও তকবীর ব্যতীতও যদি কেউ হুযুর (ﷺ) এর পবিত্র নাম শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দেয়, তাতে কোন ক্ষতি নেই বরং সদুদ্দেশ্যে হলে তাতে ছওয়াব রয়েছে। বিনা দলীলে কোন কিছু নিষেধ করা যায় না। যেভাবেই হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের তাযীম করা হবে, ছওয়াব রয়েছে। ৪৮৩

➥483. এ বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত “প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন” ১ম খন্ডের ..... পৃষ্ঠায় এবং ফতোয়ায়ে আহলে সুন্নাহ দেখুন।


বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন প্রসঙ্গে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের জব
____________________
দ্বিতীয় অধ্যায়

বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন প্রসঙ্গে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের জবাব


১নং আপত্তিঃ 


বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন সম্পর্কে যে হাদীছসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে, সবই জয়ীফ (দুর্বল) এবং যঈফ হাদীস দ্বারা শরয়ী মাসআলা প্রমাণিত হয় না। দেখুন,


❏ ‘মাকাসিদুল হাসানা’ উল্লে­খিত আছে-

ولا يصح في المرفوع من كل هذا شيء.

-‘‘ওই সমস্ত হাদীছসমূহের মধ্যে কোন মারফু-সহীহ হাদীস পাওয়া যায়নি।’’ ৪৮৪

➥484. ইমাম সামসুদ্দীন সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, পৃষ্ঠা-৬০৬, হাদিস-১০২০, দারুল কিতাব আরাবী, বয়রুত, লেবানন।


❏ আল্লামা মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) এর লিখিত ‘মাওদ্বুআতুল কাবীরে’ এ সব হাদীস প্রসঙ্গে বলেছেন-

وَكُلُّ مَا يُرْوَى فِي هَذَا فَلَا يَصِحُّ رَفْعَهُ

-‘‘এ মাসআলার বেলায় যতগুলো হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, ওইগুলোর মধ্যে একটিও সহীহ হাদীছের পর্যায়ভুক্ত নয়।’’  ৪৮৫

➥485. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, আসারুল মারফুআ, ৩১৬ পৃ:, হা/৪৩৫


❏ স্বয়ং আল্লামা শামী (رحمة الله) সেই একই বহসের একই জায়গায় বলেছেন-

لم يصح من الْمَرْفُوعُ من هذا شيئ

-‘‘ওই গুলোর মধ্যে কোন মারফু সহীহ হাদীস নেই।’’


রূহুল বয়ানের রচয়িতাও ওই হাদীছগুলোকে বিশুদ্ধ বলতে অস্বীকার করেছেন। সুতরাং ওই সব হাদীছ উপস্থাপন করাটাই অর্থহীন।


উত্তরঃ এর কয়েকটি উত্তর রয়েছে।


প্রথমতঃ সবাই হাদীছে মরফু হওয়াটা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু হাদীছে মওকুফ সহীহ হওয়াটা বোঝা গেছে। যেমনঃ


❏ আল্লামা মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) মওজুয়াতে কবীরে উপরোক্ত ইবারতের পর বলেছেন-

قُلْتُ وَإِذَا ثَبَتَ رَفْعُهُ عَلَى الصَّدِّيقِ فَيَكْفِي الْعَمَلُ بِهِ لِقَوْلِهِ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسِنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ

-‘‘আমার কথা হলো হাদীছটার সনদ যেহেতু হযরত সিদ্দীক আকবর (رضي الله عنه) পযর্ন্ত প্রসারিত, সেহেতু আমলের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। কেননা, হুযুর (ﷺ) বলেছেন-তোমাদের জন্য আমার সুন্নাত ও আমার খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাত অনুসরণীয়।’’  ৪৮৬

➥486. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, আসারুল মারফুআ, ৩১৬ পৃ:, হা/৪৩৫


বোঝা গেল, হাদীসে মাওকুফ সহীহ ও আমলের জন্য যথেষ্ট।


দ্বিতীয়ত. ওই সমস্ত উলামায়ে কিরাম বলেছেন-

 لَمْ يَصِحُّ

অর্থাৎ এ হাদীসসমূহ মরফু হাদীছের মত বিশুদ্ধ নয় বা সহীহ নয় বলতে যঈফ বোঝায় না। কেননা সহীর পরে হাসন রয়েছে। সুতরাং এ হাদীস ‘হাসান’ হলেও চলে।৪৮৭

➥487. টিকাঃ

☞ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) তার কিতাবে লিখেন-

وَقَول أَحْمد إِنَّه حَدِيث لَا يَصح أَي لذاته فَلَا يَنْفِي كَونه حسنا لغيره وَالْحسن لغيره يحْتَج بِهِ كَمَا بَين فِي علم الحَدِيث -  (الصواعق المحرقة على أهل الرفض والضلال والزندقة:  خاتمة الفصل الاول من الباب: الحادى عشر:২২৮)

-‘‘ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (رحمة الله) বলেন, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله)‘র একটি হাদিস প্রসঙ্গে বক্তব্য হাদিসটি  لا يصحবিশুদ্ধ নয় এর অর্থ হবে সহিহ লিজাতিহী তথা জাতি বা প্রকৃত অর্থে সহিহ নয় উক্ত হাদিসটি (সনদের দিক দিয়ে) হাসান লিজাতিহী বা অন্য সনদে হাসান লিগায়রিহী (জাতিগত সহিহ না হওয়া; সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সহিহ’র কারণে নিজে সহিহ হওয়া।) হওয়াকে মানা (নিষেধ) করে না। আর হাসান লিগায়রিহীও (শরিয়তের) প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যায়। যা ইলমে হাদিস তথা হাদিসশাস্ত্র হতে জানা যায়। (ইবনে হাজার মক্কী : আস-সাওয়ায়েকুল মুহরিকা, ২য় খন্ড, পৃ-৫৩৬, মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন।)


☞আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-

وَقَالَ ابْنُ الْهَمَّامِ: وَقَوْلُ مَنْ يَقُولُ فِي حَدِيثٍ أَنَّهُ لَمْ يَصِحَّ إِنْ سَلِمَ لَمْ يُقْدَحْ ; لِأَنَّ الْحُجَّةَ لَا تَتَوَقَّفُ عَلَى الصِّحَّةِ، بَلِ الْحَسَنُ كَافٍ،– فصل الثانى من باب: ما يجوز من العمل فى الصلاة.

 -‘‘ইমাম কামালুদ্দীন মুহাম্মদ বিন হুমাম (رحمة الله) বলেন : কোন হাদিস সম্পর্কে কোন মুহাদ্দিস যদি বলেন যে এ হাদিসটি সহিহ (বিশুদ্ধ) নয়, তাদের কথা সত্য বলে মান্য করা হলেও কোন অসুবিধা নেই, যেহেতু (শরীয়তের) দলীল বা প্রমাণ হিসেবে সাব্যস্ত হওয়ার জন্য শুধু (হাদিস) সহিহ বা বিশুদ্ধ হওয়া নির্ভরশীল নয়। সনদ বা সূত্রের দিক দিয়ে ‘হাসান’ হলেও (হাদিসটি শরীয়তের দলীল হিসেবে সাব্যস্ত হওয়ার জন্য) যথেষ্ট।’’ (আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাত : ৩/৭৭পৃ, হাদিস : ১০৮, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)


☞আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন,

قَوْلَ السَّخَاوِيِّ لَا يَصِحُّ لَا يُنَافِي الضَّعْفَ وَالْحُسْنَ -

‘‘ইমাম সাখাভী (رحمة الله)‘র বক্তব্য হাদিসটি ‘সহিহ নয়’ নিষেধ দ্বারা হাদিসটি ‘হাসান’ ও দ্বঈফ হওয়াকে নিষেধ করে না।’’ (আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : আসরারূল মারফ‚আ-১/৩৪৯পৃ: হাদিসঃ ৫০২)


☞ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন-

وهذا القِسمُ مِنَ الْحَسَنِ مشاركٌ للصحيح في الاحتجاج به، وإِنْ كان دُونَهُ -  

-‘‘ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله) বলেন, হাদিসে ‘হাসান’ শরিয়তের দলিল রূপে গ্রহণযোগ্য হওয়ার ক্ষেত্রে সহিহ হাদিসের সাদৃশ্য, যদিও মরতবায় (কিছুটা) কম। (ইবনে হাজার আসকালানী : নুযহাতুল নযর ফি তাওদিহে নুখবাতিল ফিকির, প্রথম খন্ড,পৃ ৭৮, মাতবাআতে সাফির বিল রিয়াদ, সৌদি আরব।)


তৃতীয়ত. উসুলে হাদীস ও উসুলে ফিকহের নীতি অনুসারে যদি কোন জয়ীফ হাদীছ কয়েক সনদ দ্বারা বর্ণিত হয়, সেটা হাসন বলে গণ্য হয়, যেমনঃ


❏ দুর্রুল মুখতারের প্রথম খণ্ড مستحباب الوضوء শীর্ষক অধ্যায়ে ওযুর বিভিন্ন অংশের দুআ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে-

وَقَدْ رَوَاهُ ابْنُ حِبَّانَ وَغَيْرُهُ عَنْهُ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ - مِنْ طُرُقٍ

-এ হাদীছটি ইবনে হাববান প্রমুখের কয়েকটি সনদ দ্বারা বর্ণিত হয়েছে।  ৪৮৮

➥488. হাসকাফী, দুররুল মুখতার, ৯৫ পৃ: ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী,  ১/১২৭ পৃ:


❏ এর প্রেক্ষাপটে শামীতে বলা হয়েছে -

أَيْ يُقَوِّي بَعْضُهَا بَعْضًا فَارْتَقَى إلَى مَرْتَبَةِ الْحَسَنِ

অর্থাৎ কতেক সনদ কতেক সনদকে শক্তি জোগায়। তাই এ হাদীছ হাসনের পর্যায়ে পৌছে গেছে।  ৪৮৯

➥489. ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী,  ১/১২৭ পৃ:


আমি প্রথম অধ্যায়ে উল্লে­খ করেছি যে, এ হাদীছ বিভিন্ন সনদে বর্ণিত আছে। সুতরাং এটা হাসন হিসেবে গণ্য।

চতুর্থত. যদি এটা মেনেও নেয়া হয় যে এ হাদীছটি জয়ীফ, তথাপি ফযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে জয়ীফ হাদীছ গ্রহণীয়। যেমনঃ


❏ আল্লামা শামী দুর্রুল মুখতারের প্রথম খণ্ড আযান অধ্যায়ে আযানের স্থানসমূহের বর্ণনায় উল্লে­খ করেছেন-

عَلَى أَنَّهُ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ يَجُوزُ الْعَمَلُ بِالْحَدِيثِ الضَّعِيفِ كَمَا مَرَّ أَوَّلَ كِتَابِ الطَّهَارَةِ

-‘‘ফাযায়েলে আমালের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীস অনুযায়ী আমল করা জায়েয। যেমনটি আমি কিতাবুত তাহারাতে আলোকপাত করে এসেছি।’’  ৪৯০

➥490. ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী,  ১/৩৮৫ পৃ:


এখানেও ওয়াজিব-হারামের মাসআলা নয়, কেবল আঙ্গুলী চুম্বনের ফযীলতের কথাই বলা হয়েছে। সুতরাং এ ক্ষেত্রেও যঈফ হাদীছ অনুযায়ী আমল করা যায়। অধিকন্তু মুসলমানদের আমল যঈফ হাদীসকে মজবুত করে দেয়। যেমনঃ


❏ ইমাম নববী (رحمة الله) এর কিতাবুল আযকারে তালকীনে মায়্যিত শীর্ষক আলোচনায় বর্ণিত আছে-

وقد روينا فيه حديثاً من حديث أبي أمامة ليس بالقائم إسناده  ، قال الحافظ بعد تخريجه: هذا حديث غريب، وسند الحديث من الطريقين ضعيف جداً ولكن اعتضد بشواهد، وبعمل أهل الشام

-‘‘তলকীনে মায়্যিতের হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه)-এর হাদীস সনদের দিক দিয়ে জোরালো নয়; ......কিন্তু শাম বাসীর আমল এবং অন্যান্য সাক্ষ্য থেকে জোরালো হয়ে গেছে।’’  ৪৯১

➥491. ইমাম নববী, কিতাবুল আযকার, ১৬৩ পৃ:, ক্রমিক/৪৭১ (শায়খ শুয়াইব আরনাউতের তাহকীককৃত)।


❏ বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বনও মইয়তের আমলের মত। তাই এ হাদীসটা জোরালো হয়ে গেছে। এর থেকে আরও ব্যাপক বিশ্লেষণের জন্য নুরুল আনোয়ার, তওজীহ ইত্যাদি গ্রন্থ দ্রষ্টব্য।  ৪৯২

➥492. যঈফ হাদিস যখন ধারাবাহিকভাবে উম্মতের মধ্যে আমল চলে আসবে তখন সেটার উপর আমল করা অপরিহার্য্য হয়ে যায়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত “প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন” দ্বিতীয় খণ্ডের ৬৯৫-৬৯৬ পৃৃষ্ঠায় দেখুন।


পঞ্চমত. যদি এ সম্পর্কে কোন হাদিসও পাওয়া না যেত, তবুও উম্মতে মুস্তাফা কর্তৃক মুস্তাহাব মনে করাটাই যথেষ্ট ছিল।


❏ কেননা হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে-

مَا رَآهُ الْمُسْلِمُونَ حَسَنًا فَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ حَسَنٌ

-‘‘যে কাজটা মুসলমানগণ ভাল মনে করে, তা আল্লাহর কাছেও ভাল বলে বিবেচ্য।’’   ৪৯৩

➥493. ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ৩/৮৩ পৃ: হা/৪৪৬৫, এ হাদিসটির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত “প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন” ১ম খণ্ডের ৩৮৭ পৃৃষ্ঠায় (প্রথম প্রকাশ) দেখুন।


যষ্ঠত. আঙ্গুলী চুম্বন হচ্ছে চক্ষুরোগ থেকে মুক্তি লাভের একটি আমল এবং আমলের বেলায় কেবল সুফিয়ানে কিরামের অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট। যেমনঃ


❏ শাহ ওলী উল্লাহ সাহেব هوا معه গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছেন-

اجتهاد ادر اختراع اعمال تصريفيه راه كشاده است مانند استخراج اطباء نستجا قرابا دين را

অর্থাৎঃ (সুফিয়ানে কিরামের আমলের বেলায় ইজতিহাদের পথ খোলা। যেমন ডাক্তারগণ চিকিৎসার ফর্মূলা আবিষ্কার করে থাকেন।)


শাহ সাহেব স্বয়ং স্বীয় কিতাব القول الجميل এ জ্বীনকে দমন, এবং জ্বীন থেকে হিফাজত থাকার অনেক আমল-তদবীরের কথা বর্ণনা করেছেন। উক্ত কিতাবে গর্ভবতী মহিলা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে অমুক দুআ হরিণের চামড়ায় লিখে গলায় দিলে গর্ভপাত হবে না। পশমের রঙিন ডোরা (সুতা) দিয়ে মহিলার মাপ নিয়ে উক্ত সুতায় সাতটি গিরা দিয়ে মহিলার বাম উরুতে বাঁধলে প্রসব বেদনা লাঘব হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। বলুন, এসব আমলের ব্যাপারে কোন হাদীছটি উপস্থাপন করা যাবে? আল্লামা শামী (رحمة الله) ও যাদু থেকে রক্ষা ও হারানো জিনিসের সন্ধানের জন্য ফাতওয়ায়ে শামীতে অনেক তরীকা বর্ণনা করেছেন। বলুন এসব কোন হাদীছ মতে?


যেহেতু আমি প্রথম অধ্যায়ে প্রমাণ করেছি যে এ আমলটা চক্ষু পীড়ার জন্য পরীক্ষিত, তাই একে কেন নিষেধ করা হবে?


সপ্তমতঃ আমি প্রথম অধ্যায়ে উল্লে­খ করেছি যে শামী, শরহে নেকায়া, তফসীরে রূহুল বয়ান ইত্যাদি কিতাবে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বনকে মুস্তাহাব বলেছেন। এ মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে কেউ আপত্তি করেন নি, কেবল এ প্রসঙ্গে উত্থাপিত হাদীছ সমূহকে মরফু হাদীছ বলতে অস্বীকার করেছেন। সুতরাং মুস্তাহাবের বিধানটা একেবারে সঠিক। কেননা মুস্তাহাবের বিধান হাদীছের বিশুদ্ধতার উপর নির্ভরশীল নয়। অষ্টমতঃ যদি মেনেও নেয়া হয় যে জয়ীফ হাদীছটা রয়েছে, যেথায় উল্লে­খিত আছে ‘আঙ্গুলী চুম্বন মকরূহ’ বা ‘চুমু দিবে না’ ইত্যাদি ইত্যাদি।

        

ইনশাআল্লাহ মকরূহ প্রমাণের জন্য সহীহ হাদীছতো দূরের কথা জয়ীফ হাদীছটাও পাওয়া যাবে না। তাদের যাবতীয় গবেষণা ও প্রচেষ্টা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের প্রতি শত্রুতা ছাড়া আর কিছু নয়। যাক আপত্তির নিষ্পত্তি হলো এবং হক প্রতিফলিত হলো।


২নং আপত্তিঃ 


হযরত আদম (عليه السلام) যদিও বা বৃদ্ধাঙ্গুলীর নখে নুরে মোস্তাফা (ﷺ) দেখে চুমু দিয়ে ছিলেন, তাহলে আপনারা কোন নুর দেখে চুমু দিচ্ছেন? তখন চুম্বনের কারণ ছিল; এখনতো তা নেই।


উত্তরঃ হযরত হাজেরা (رضي الله عنه) যখন স্বীয় সন্তান হযরত ইসমাঈল (عليه السلام) কে নিয়ে মক্কা শরীফের জঙ্গলে বনবাসে আসলেন, তখন পানির সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে আপনার হজ্বের সময় ওখানে কেন দৌড়াদৌড়ি করেন? আর পানিরও বা কি প্রয়োজন? হযরত ইসমাইল (عليه السلام) কুরবানীর উদ্দেশ্যে যাবার সময় পথে তিন জায়গায় শয়তানকে পাথর ছুঁড়ে মেরেছিলেন। কিন্তু আজকাল আপনারা হজ্বের সময় তথায় পাথর ছুঁড়ে মারেন কেন? কোন শয়তান এখন আপনাদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে? হুযুর (ﷺ) এক বিশেষ প্রয়োজনে মক্কার কাফিরদেরকে দেখানোর জন্য তওয়াফের সময় রমল (বুক ফুলিয়ে হেলে দুলে চলা) করে স্বীয় শক্তি দেখিয়ে ছিলেন। কিন্তু এখন তওয়াফে কুদুমের সময় রমল কেন করেন? এখন কি কাফিরেরা তা দেখে? সাহেব, আম্বিয়ায়ে কিরামের কতেক আমল এমনভাবে কবুল হয়েছে যে এ সবের স্মৃতি অক্ষুন্ন রাখা হয়েছে, যদিও বা এর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। এটাও তদ্রুপ।


৩নং আপত্তিঃ 


হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের নাম নেয়ার সময় বৃদ্ধাঙ্গুলীর নখ চুম্বনের কি কারণ থাকতে পারে? নখের মধ্যে কি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, অন্য কিছু কেন চুম্বন করা হয় না? হাত, পা, কাপড় ইত্যাদিকে ওতো চুমু দেয়া যায়।


উত্তরঃ যেহেতু রেওয়াতের মধ্যে নখের কথা রয়েছে, সেহেতু তা চুমু দেখা দেয়। সুস্পষ্ট দলীলের ক্ষেত্রে কারণ অনুসন্ধান করার প্রয়োজন নেই। তবে এর রহস্য হচ্ছে তাফসীরে খাযেন, রূহুল বয়ান ইত্যাদিতে অষ্টম পারার সূরা আরাফের আয়াত -৪৯৪

بَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا

➥494. সূরা আ’রাফ, আয়াত নং-২২।


এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উল্লে­খিত আছে যে বেহেশতে হযরত আদম (عليه السلام) এর পোশাক ছিল নখ অর্থাৎ সমস্ত শরীরে নখ ছিল, যা খুবই সুন্দর ও মোলায়েম ছিল। খোদা যখন তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হলেন, তখন সেই পোশাক খুলে নেয়া হয়। কিন্তু আঙ্গুলের মাথায় স্মৃতি চিহ্ন স্বরূপ রাখা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, আমাদের নখ হচ্ছে জান্নাতী পোশাক। তাই বেহেশতে যেহেতু হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের ওসীলায় মিলবে, সেহেতু তাঁর পবিত্র নাম নেয়ার সময় বেহেশতী পোশাকেই (নখে) চুমু দেয়া হয়। যেমন কাবা শরীফের হাজর আসওয়াদ হচ্ছে জান্নাতী পাথর। একে চুমু দেয়া হয়। কাবা শরীফের অন্যান্য অংশকে চুমু দেয়া হয় না। কেননা তা হচ্ছে সেই জান্নাতী পাথরের স্মরণ, যা হযরত আদম (عليه السلام) এর জন্য পৃথিবীতে অবতরণ করা হয়েছিল এবং হযরত নুহ (عليه السلام) এর তুফানের সময় উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। এ পাথর তারই স্মৃতিচিহ্ন। অনুরূপ নখও বেহেশতী পোশাকের স্মৃতিচিহ্ন।

 
Top