কী করার কথা কী করছি:
মোমবাতি, নাকি গাছের চারা?
-----

(সতর্কতা: বাংলাদেশের মোমবাতি প্রতীকের প্রতি গভীর ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা রয়েছে। এ পোস্ট এ বিষয়ক নয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়ে উপমা।)

এই পোস্টটাও বর্তমান ধারাবাহিকতার:

দুপুরে আমার সূফিযাত্রার সবচে ঘনিষ্ট ভাইয়ের সাথে নদীর ধারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্ষোভের কথা বলছিলাম। আজকের সিরিজে যা লিখছি এবং লিখব, তার সবই ওখানে আলোচনা হয়েছিল।

বললাম, শোন্, তোর কাছে পাঁচ টাকাই আছে। এখন কী করবি? মোমবাতি কিনে মাজারে জ্বালিয়ে দিবি, নাকি গাছের চারা লাগাবি?

মাজারে জ্বালিয়ে দে। তোরা সবাই তো ওইটাই করিস। কর। কী হবে? বিশ মিনিট জ্বলবে। ক্ষয় হবে। শেষ হয়ে যাবে।

(আমিও মাজারে মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়ার চরম পক্ষে, যদিও জীবনে নিজে জ্বালিয়েছি কিনা মনে পড়ছে না। নিজের জন্য অর্থহীন মনে হয়। মাজারে আমরা নিজেকে নিয়ে যাই। এটাই ভেট, এটাই উপহার, এটাই নজরানা। কোন মোমবাতি টোমবাতি না।)

সেই পাঁচটা টাকা দিয়ে যদি একটা চারা কিনিস? মাজারে বুনে দে, নাহয় মাদ্রাসায় বুনে দে, নাহয় মসজিদের কাছে, নাহয় রাস্তায়, নাহয় নিজের বাড়িতে। ছাগলে মুড়ালেও তো একটা প্রাণীর উপকার হলো। যদি না মুড়ায়, যদি না মরে, তাহলে কত্ত ফল কত্তজনে কত্তদিন খাবে!

তুই যে বলছিস না, সুন্নিদের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা আছে? ওই টাকা মোমবাত্তি পুড়াইন্না টাকা। এরা মোমবাত্তি পোড়ানোর বাইরে অন্য কোন কাজে ওই টাকা ব্যয় করবে না।

একটা এলাকায় একটা মাহফিল করা হল মোমবাত্তি পোড়ানো। একটু তাপ আসবে। একটু আলো আসবে। একটু সওয়াব হবে। একটু মন পবিত্র হবে। ডেকোরেটর আর ওয়ায়েজ সাহেবের কিছু পয়সা হবে। আজকাল তো মাহফিলে পেটপুরে খেতেও দেয় না, এটা দিলেও নাহয় মানুষের সেবা হতো!
আর ওরশে কত্ত মহিষ খাবি?

আমার প্রশ্ন হইল গিয়া-
আপনাদের যদি টাকার অভাবই নাই, তাইলে আপনাদের মারদাঙা রিসার্চ ফাউন্ডেশন নাই কেন? কখনো আধুনিক সালাফিদের বা কওমিদের প্রকাশনীর একটা বই হাতে নিয়ে দেখেছেন? দেখেন নাই কেন? ঈমান চলে যাবে? হাতে ফোস্কা পড়ে যাবে? ওই কাভার ডিজাইন আপনারা কবে করবেন? ওই অ্যামবোস কবে হবে? ওই স্পট লেমিনেশন কবে হবে? ওই বাঁধাই কবে হবে? আপনারা বাঁধাইয়ের ওই সুঁই, সুতা আর আঠা কবে কিনবেন? ওই বইয়ের ভেতরের কাগজগুলোতে যে রঙের প্রলেপ দেয়া হয়েছে সেই রঙের প্রলেপ দিয়ে কবে বই ছাপবেন? ওই ফন্টসাইজ কবে আপনাদের মাথায় গুঁতা দিবে? ওই ফন্ট সিলেকশন কবে করবেন? ভূমিকায় “চিন্নাস্বামী মুত্তাস্বামী রামগোপাড় আইয়েড়া” লেখা কবে বন্ধ করবেন? দামটা কীভাবে কম রাখবেন এবং কবে কম রাখবেন? সারাদেশে কবে ডিস্ট্রিবিউট করবেন এবং কবে ঠিকই মাঠ থেকে বইয়ের দাম তুলে আনবেন?

আপনাদের লক্ষ কোটি টাকা আছে, আপনাদের তরুণ জ্বলজ্বলে সূর্যের মত লেখক কবিরা রাস্তায় ঘোরে কেন? একজনের কথা বলছি মনে করেন না, আমি অন্তত তিনজনকে ঘনিষ্টভাবে চিনি। আপনারা কি তাদের ভাতে মারবেন, পানিতে মারবেন, তারা আপনাদের ভাই, তারা ব্যারাকে ফিরে যাক? এদের নূনতম স্পিডি কম্পিউটার নাই কেন? এদের হাতে স্মার্টফোন নাই কেন? এদের ফোনে ইন্টারনেট কানেকশন নাই কেন? আপনার এই লক্ষ কোটি টাকা দিয়ে হবেটা কী? এদের স্থায়ী থাকার জায়গা নাই কেন? এদের বসার অফিস নাই কেন? এদের চালানোর পত্রিকা নাই কেন? এদের প্রকাশ করার প্রকাশনী নাই কেন? এদের মাসিক বেতন নাই কেন?

কাদের দিয়ে হায়েস্ট মানের ভিডিও এডিট করা শেখাবেন এখনো মনস্থ করেননি, কবে করবেন? কারা আপনাদের অকল্পনীয় পোস্টারগুলো ডিজাইন করবে?

ওই ছেলেটার কী দোষ, যে একই সাথে মাদ্রাসায় প্রথম হয়, আবার চিটাগাং ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে, সেখানেও টপ টেনে থাকে? ওর টাকার জন্য বাসায় চিঠি পাঠাইতে হয় কেন? আপনার মোমবাতি জ্বালানো কবে শেষ হবে? ও আইইএলটিএস করে না কেন? ওর তাকভর্তি বিজ্ঞান আর দর্শনের বই নাই কেন? ওর হাইস্পিড কম্পিউটারে রোজেটা স্টোন নাই কেন? ও কেন এখনো কোয়ান্টাম কোর্স করেনাই? সব কোর্স অনেকবার করেনাই। ও করবে না তো করবেটা কে? ও এখনো আরবিতে নেটিভের চেয়ে দক্ষ না কেন? ইংরেজিতে? বাংলায়? ওর থাকার জন্য আলাদা রুম নাই কেন? ও কি নিজেকে প্রমাণ করতে পারেনাই? কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিবে যে সে আছে?

ওরে সার্কেল বানায় দেননাই এই দোষ কি ওর? ওরে ওহাবির বই পড়তে দেননাই এই দোষ কি ওর? ওরে ইহুদি খ্রিস্টানের বই পড়তে দেননাই এই দোষ কি ওর? ওর মত আর দশজন আড্ডা দিবে না তো দিবেটা কী? জায়গা আছে ওর জন্য? ওরে না বিকশিত করতাসেন, না বিকাশ কইরা চান্দের দেশে পাঠায় দিতাসেন। ওরে স্বপ্ন দেখাইতাসেন, আরেকটা ভৈরবি গিয়াসুদ্দি হ! বহুত ট্যাকা পাবি ওয়াজ কইরা। খাঁকারি দিয়া গলা পরিষ্কার কর। মুখে চমকি মাখ।

আবার কেউ মনে কইরেন না আমি ট্যাকা চাইতাছি। ট্যাকার উপর আমি থুতু মারি। থুতু মাইরাই ট্যাকা কামাই। আরো কামামু, নিজের খোদার উপরও আমার ঈমান আছে, নিজের হাতের উপরও আমার ঈমান আছে। পাক্কা ঈমান।

মিয়া, গাছ লাগাইতে জানেন না, ফল আশা করেন। আকাশ ফেঁড়ে ডাব পড়বেনে আপনার লুঙ্গির উপর।

(ভাল কথা, এটা পড়ে আবার মনে করেন না, টাকার জন্য আটকে আছে। টাকা কিছু না। ওই মানুষগুলো যদি সার্কল ক্রিয়েট করতে পারে, ট্রেনিং দেয়ানেয়া করতে পারে, টাকা লাগবে না। টাকাওয়ালাদের টাকা কোথায় যাওয়া দরকার এইটা হল কথা। টাকা হলেও কাজ হবে, না হলেও কাজ হবে- যদি সে একবার চায়।)
 
Top