এঁকেছি হৃদয়ে তোমারি নাম…
মূল
মাহবুবুলওলামা হযরত মাওলানা পীর
জুলফিকার আহমদ নকশবন্দী মুজাদ্দেদী
অনুবাদ ও সম্পাদনা
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী


প্রথম অধ্যায়
ইশকে ইলাহী তথা আল্লাহপ্রেমের গুরুত্ব
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি মানুষকে নিজ সৃষ্টির অর্পূবশৈলি দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন,
لَقَدْ خَلَقْنَا الإِنْسَانَ فِىْ أحْسَنِ تَقْوِيْمٍ
আমি তো সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে। (সূরা ত্বীন  ০৪)
জগতের পালনকর্তা আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে সৃষ্টি করার সময় অন্তরে তাঁর প্রতি ভালোবাসার বীজ রেখে দেন। যার কারণে প্রতিটি মানুষের সৃষ্টিগত স্বভাবের ভেতর লুকিয়ে থাকে পবিত্র ইসলাম। হাদিসশরিফে আছে,
كُلُّ مَوْلُوْدٍ يُوْلَدُ عَلَى فِطْرَةِ الإِسْلَامِ
প্রতিটি শিশু জন্মগ্রহণ করে ইসলামপ্রকৃতির ওপর।
এ কারণে কেবল দলিল নয়, বরং সৃষ্টিগত তাড়নার কারণেই প্রতিটি মানুষ আল্লাহর অস্বিত্বকে বিশ্বাস করে। তাঁর ইবাদত করে।
زندگی آمد براۓ بندگی‎
زندگی بے بندگی شرمندگی
জীবনের আগমন বন্দেগীর জন্য,
বন্দেগীহীন জীবন লজ্জাপূর্ণ।
মানবজীবনকে ইশকে ইলাহী তথা আল্লাহর প্রেমের আকর্ষণ থেকে মুক্ত করে দেয়া হলে সেই জীবন হয়ে পড়ে পশুত্বের জীবন। তাছাড়া এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াতে ইশকে ইলাহী ছাড়া কী-ই বা আছে!
در خر من کا‌ئنات کردیم نگاہ
یک دانہ محبت است باقی ہمہ گاہ
‘দেখেছি আমি বিশ্বের সকল শস্যাগার,
আছে শুধু একটি বীজ-ভালোবাসার, বাকি সব শূন্য খামার।’
হৃদয়ে যখন ইশকে ইলাহি দ্বারা সিক্ত থাকে, চোখে থাকে তার নেশা, তখন জীবনের গতি হয় অদ্ভুত, অভনব, সৌন্দর্য-আভিজাত্যে টইটুম্বুর।
ملّت عشق از ہمہ ملّت جدااست
عاشقاں رامذھب وملّت جدااست
‘প্রেমের রাস্তা সকল রাস্তা থেকে আলাদা হয়,
প্রেমিকের অবস্থা ও অবস্থান অদ্ভুত ও অভিনব হয়।’
জীবনের সফলতা এবং ব্যর্থতা ইশকে ইলাহির ভিত্তিতেই সূচিত হয়। এজন্য মানুষকে কখনও وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِىْ آدَمَ ‘আর আমি সম্মানিত করেছি মানব জাতিকে’-এর দ্বারা সম্বোধন করা হয়েছে। কখনও وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيْرٍ. ‘আর আমি অনেকের ওপর তাদেরকে মর্যাদাবান করেছি’-এর মালা দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। এটা মানুষ লাভ করেছে ইশকে ইলাহির কারণে।
ہرکہ عاشق شد جمال ذات را
اوست سید جملہ موجودات را
‘যে লোকটি প্রেমিক হয় আল্লাহর সৌন্দর্যের,
সে লোকটি সরদার হয় সকল সৃষ্টি জীবের।’
মানবজীবনের শুরু ও শেষের কেন্দ্রবিন্দুটির নাম ইশকে ইলাহী। ইশকে ইলাহিই তার সব। ইশকে ইলাহিই তার জীবন ও মরণ।
عشق اوّل عشق آخر عشق کل
عشق شاخ عشق نخل و عشق گل
‘ইশকই প্রথম, ইশকই শেষ, ইশকই সব সাধনা,
ইশকই ডালপালা, ইশকই বৃক্ষ, ইশকই পুষ্পমালা।’
যেমনিভাবে ছাঁচ-জমিন বীজ ক্রমবিকাশ করে না; বরং এর কারণে বীজ ধ্বংস হয়। অনুরূপভাবে গুনাহপূর্ণ পরিবেশ ইশকে ইলাহির জযবাকে বাড়ায় না; বরং এর কারণে গাফলতির পর্দা আরো বিস্তৃত হয়। পরিবেশ যদি ঊর্বর থাকে তাহলে ইশকে ইলাহির বীজ কেবল বিকশিতই হয় না বরং নিজের সৌরভ ছড়ানোর পাশাপাশি আশে পাশের পরিবশকেও সে সুরভিত করে। এজন্য প্রতিটি ভালো পরিবেশে আপনি মানবজীবনের মারকায ও মেরুদনড মহান আল্লাহর অস্তিত্ব অবশই অনুভব করেন।
ندانم آں گل خنداں رنگ وبردارد
کہ مرغ ہر چمنے گفتگوۓ اودارد
‘হাসিমাখা পুষ্পের রঙ-সৌরভ জানি না কত সুন্দর,
শুধু যে তারই গুণ গায় প্রতিটি পাখি বাগানের।
چہ شد مجذوب گردیوانہ وست
ہمہ عالم بایں پروانہ اوست
‘কী হয়েছে, হয় যদি মাজযুব তাঁরই পাগল,
দেখ, সারা বিশ্বব্যাপি গাইছে কেবল তাঁরই গজল।’
সত্য কথা হল, এ ধরার বুকে মহান আল্লাহকে যে পরিমাণ কামনা করা হয়েছে, সৃষ্টিকুল তাঁকে যে পরিমাণ ভালোবেসেছে, যে পরিমাণে তাঁকে ডাকা হয়েছে, যে পরিমাণে ইবাদত তাঁর করা হয়েছে, যে পরিমাণ তাঁর প্রতি দেখানো হয়েছে, এ পরিমাণ আবেগ-উচ্ছাস-ভালোবাসা-উৎসাহ-উদ্দীপনা গোটা সৃষ্টিজগতে আর কারো প্রতি দেখানো হয় নি। অসংখ্য অগণিত সৃষ্টি তাঁরই প্রেমসাগরের ডুবুরি হয়েছে।
 ہوۓ‎ہم ہوۓ تم ہوۓ کہ میر
اس کی زلفوں کے سب اسیر ہوۓ‎
میں بھی اس پر مر مٹانا صح تو کیا بے جا کیا
اک مجھے سوداتھا دنیا بھر تو سودائی نہ تھی
‘আমরা তোমরা কিংবা আমির সকলেই বন্দি শেকলে তাঁর,
ভুল করি নি মোটেও আমি লুটে পড়ে চরণে তাঁর।
যদি ভুল হয় পাগলামি আমার,
নেই কোনো পাগলামি পৃথিবীতে কারোর।’
ইশকে ইলাহির কিছু পরিচিতি
এক মানবদেহ কিছু অঙ্গের সমষ্টির নাম। প্রতিটি অঙ্গের রয়েছে নিজস্ব গুণ। যেমন চোখের গুণ হল দেখা। কানের কাজ শোনা। নাকের বৈশিষ্ট্য ঘ্রাণ নেয়া। অনুরূপভাবে মানুষের অন্তরের বৈশিষ্ট্য হল, অন্তর কাউকে না হয় কাউকে ভালোবাসবেই।
پتھر سے ہو خدا سے ہو یا پھر کسی سے ہو
آتا نہیں چین محبت کۓ بغیر
دل بحر محبت ہے محبت ہی کریگا
لاکھ اسکو بچا تو یہ کسی پر تو مریگا
‘পাথর কিংবা খোদা কিংংবা কাউকে না কাউকে,
ভালোবাসা ছাড়া তার স্বস্তি নাই যে!
ভালোবাসার সমুদ্র এই অন্তর তাই সে ভালোবাসবেই,
লাখোজন তাকে ছাড়াতে যাবে, কিন্তু কারো জন্য সে মরবেই।’
এক. মানুষ যখন কাউকে ভালোবাসে তখন সাধরণত দুই কারণে ভালোবাসে। প্রথমত, তাঁর মত সুন্দর ও গুণের অধিকারী দ্বিতীয়জন নেই। সৌন্দর্য ও বৈশিষ্টের দিক থেকে অন্যদের থেকে তিনি সেরা ও অতুলনীয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা হলে মহান আল্লাহই একমাত্র সত্তা যার মত সুন্দর ও গুণী আর কেউ নেই। তিনি তুলনাহীন সুন্দর। ভাবুন তো যিনি সকল সুন্দর-সৌন্দর্যকে সৃষ্টি করেছেন, না-জানি তিনি কত সুন্দর! সুতরাং এটাই স্বাভাবিক যে, মানুষ তাঁকে ভালোবাসবে। দ্বিতীয়ত,তাঁর ইচ্ছাশক্তি হবে তাঁরই নিয়ন্ত্রণে। অর্থাৎ তিনি হবেন পরিপূর্ণ শক্তিসম্পন্ন। যাতে কাে মানুষের সুখ-দুঃখে তিনি কাজে আসেন। এই দিকটাও যদি বিবেচনা করা হয় তাহলে এটাই স্পষ্ট হয় যে, সুখ-দুঃখে বিশেষত দুঃখের পরিস্থিতিতে একজন সত্তাই কাজে আসেন, যাঁর নাম আল্লাহ। এ কারণেই মানুষ সকল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সময় মনের অজান্তে তাঁকেই ডাকে।
ہر مر حلہ غم پہ ملی تجھ سے تسلّی
ہر موڑپہ گھبراکے ترانام لیا ہے
‘যেথায় পেরেশানি সেথায় শান্তনা তোমারি কাছে পেয়েছি,
প্রতিটি মোড়ে ঘাবড়ে গিয়ে-তোমারি নাম জপেছি।’
দুই. আল্লাহর নামের মধ্যে সীমাহীন মজা ও মিষ্টতা লুকায়িত। তাঁর নাম বার বার জপলে মানুষের দুঃখ সুখে রূপ নেয়।
جو مضطرب ہے اسکو ادھرالتفات ہے
آخر خدا کے نام نیں کوئ توبات ہے
‘পেরেশান হৃদয় ছুটে যায় শুধু তাঁরই পানে,
কিছু তো নিশ্চিত অবশেষে আছে এই নামে।’
তিন. মানুষের উচিতৎ পরিবেশ-পরিস্থিতির চড়াই-উৎরাই দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে বরং সকল পরিস্থিতিতে আল্লারহ নাম স্মরণ করা।
گومیں رہارہیں تیرے ستم ہاۓ روزگار
لیکن تیرے خیال سے غافل نہیں رہا
‘যদিও আমি নিত্যদিন নানা অত্যাচারে বন্দি,
তবুও তোমার স্মরণ থেকে মোটেও গাফেল হয় নি।’
চার. যার অন্তরে ইশকেইলাহির চোট নেই, তাঁর জীবনে মজাও নেই। যেথায় থাকো না কেন; প্রকৃত প্রিয়তম মালিকের চৌকাঠ কখনও ছেড়ে দিও না।
لاگ گردل کو نہیں لطف جینے کا
الجھے سلجھے اسی کا کھل کے گرفتار رہو
‘অন্তরে যদি চোট না লাগে জীবনের নেই মজা কোনো,
সহজ কিংবা জটিল সময়ে সঙ্গে তাঁরই বন্দি থেকো।’
পাঁচ. যে মানুষটিরে হৃদয়ে ইশকেইলাহির মিষ্টতা লাভ করে, তার যাপিতজীবন একনিষ্ঠ ও নিবিড় হয়।
نہ غرض کسی سے نہ واسطہ مجھے کام اپنی ہی کام سے
ترے ذکر سے ترے شکر سے ترے یاد سے ترے نام سے
‘আশা-ভরসা নেই কারো কাছে, পড়ে থাকি কেবল নিজেরই মাঝে;
কেটে যায় সময় তোমার যিকিরে তোমার শোকরে, তোমারি স্মরণে তোমারি নাম জপে।’
ছয়. যার চোখ ইশকে ইলাহির সুরমা ধন্য হয় তার দৃষ্টি সীমায় আরশ থেকে পাতাল পর্যন্ত কোনো প্রকার পর্দা থাকে না। এজন্য সে যখন নিজের দিকে দৃষ্টি দেয় তখন সে নিজের মাথা থেকে পা পর্যন্ত গুনাহ-খাতা ও অপূর্ণাঙ্গতার দাপানি অনুভব করে। পক্ষান্তরে যখন সে প্রেমাষ্পদ তথা প্রাণপ্রিয় আল্লাহর দিকে দৃষ্টি উঠায় তখন দেখতে পায়, সবকিছু তো শুধু তাঁরই অনুগ্রহরাজি! তাই সে তখন আশার জাল বুনতে থাকে এবং তাঁর রহমতের চৌকাঠে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে পড়ে থাকে।
اِلَاهِىْ كَيْفَ اَدْعُوْكَ وَاَنَا عَاصٍ
وَكَيْفَ لاَ اَدْعُوْكَ وَاَنْتَ كَرِيْمُ .
‘প্রভু হে! আমি তো গুনাহগার, তোমায় কেমনে ডাকি!
কেন ডাকব না; সব তো শুধু তোমারই দয়ার লাগি।’
সাত. আশেক এক মূহুর্তের জন্যও প্রকৃত মাহবুব (প্রিয়তম) থেকে গাফেল হয় না। তার দৃষ্টি পড়ে থাকে প্রিয়তমের দরজায়। অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে, না-জানি তিনি কখন দরজা খোলেন।
یک چشم زدن غافل از آں شاہ نہ باشی
شاید کہ نگاہے کند آگاہ نہ باشی
‘ক্ষণিকের তরেও বাদশাহ থেকে সরিয়ে ফেলো না দৃষ্টি ;
হতে পারে, তোমাকে পাবেন আনমনা যখন দেখবেন তিনি।’
এজন্যই মাশায়েখগণ বলেছেন,
مَنْ غَمَضَ عَيْنَهُ عَنِ اللهِ تَعَالَى طَرْفَةَ عَيْنٍ لَمْ يَصِلْ إِلَى مَقْصُوْدِهِ .
যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা থেকে ক্ষণিকের জন্যও দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে, সে অভিষ্ট লক্ষে পৌঁছতে পারে নি।’
আট. আশেকের অন্তরে মা’শুক (প্রমাষ্পদ) ছাড়া অন্য কারো জন্য জায়গা থাকে না। যদিও সে চামড়ার চোখ দ্বারা মা’শুককে দেখে না, কিন্তু অন্তরের চোখ দিয়ে দেখে।
حَبِيْبٌ لَيْسَ بَعْدُ لَهُ حَبِيْبُ
وَمَا لَسِوَاهُ فِىْ قَلْبِىْ نَصِيْبُ
حَبِيْبٌ غَائِبٌ عَنْ بَصَرِىْ وَشَخْصِىْ
وَلَكِنْ عَنْ فُؤادِىْ لَا يَغِيْبُ
‘কেউ নেই, তবে আছেন শুধু  প্রিয়তম আমার,
আছেন তিনি হৃদয়ে, নেই কেউ আর হৃদয়ে আমার;
চামড়ার চোখে দেখি না আমি আমার প্রিয়জনকে
আছেন তিনি হৃদয়ে দেখি তাঁকে তাই সেই নয়নে।’
নয়. সত্যিকারের আশেকের একমাত্র তামান্না হয় নিজের প্রিয়তমের দিদার। তাঁর সাক্ষাতলাভের আশায় সে জীবন যাপন করে। অন্যের প্রতি আকষর্ণের ব্যাপারে তাঁর অন্তর অনীহা প্রকাশ করে।
أَنْتَ حُبِّىْ وَ هِمَّتِىْ وَ سُرُوْرِىْ
قَدْ اَنْكَرَ الْقَلْبُ اَنْ يُّحِبَّ سِوَاكَ
يَا عَزِيْزِىْ وَ هِمَّتِىْ و مُرَادِىْ
طَالَ شَوْقِىْ مَتَى يَكُوْنَ لِقَاكَ
لَيْسَ سُؤَالِىْ مِنَ الْجِبَانِ نَعِيْمُ
غَيْرَ اَنَّىْ اُرِيْدُ لِقَاكَ
‘আমার বন্ধু তুমি, আশা তুমি, খুশি তুমি,
হৃদয়গভীরে নেই কেউ, আছো মা’বুদ শুধুই তুমি;
ওগো ভালোবাসা! ওগো সাহস! ওগো ভরসা!
সয় না যে আর দীর্ঘ হল তোমার প্রতীক্ষা;
জান্নাতের নেয়ামত চাই না আমি তোমায় ছাড়া,
আমার চাওয়া কেবল শুধু তোমায় দেখা।’
দশ. আশেক সবসময় মা’শুকের মিলন তামান্না করে। যার কারণে তার মাথায় শুধু এটাই ঘুরপাক খায়।
اےدردل من اصل تمناہمہ تو
اےدرسرمن مایہ سودا ہمہ تو
ہر چند بہ روزگاردرمی نگرم
امر وزہمہ توئ کہ فرداہمہ تو
‘জানো হে! একটাই তামান্না হৃদয়পাতালে করেছি লালন,
ওহে! মাথায় আমার আশে শুধু মাওলা প্রেমের মূলধন;
যামানার প্রতি দেখেছি যখনি, পেয়েছি তখনই,
এখনও আমার সবই তুমি, অতীতেও তুমি এবং তুমিই।’
এগার. আশেক যখন নিজের আশপাশ দেখে তখন উদাসীন দুনিয়ার মানুষগুলোকে লোভলাভঘেরা বেষ্টনিতে পড়ে থাকতে দেখে তখন দুনিয়াটা তার কাছে মনে হয় কয়েদখানা।
من باغ جہاں را قفسے دیدم وبس
مرغش زہواوہو سے دیدم وبس
ازصبح وجودے تاشباں گاہ عدم
چوں چشم کشوزم نفسے دیدم و بس
‘বাগানটা এই পৃথিবীর মনে হয় বন্দিশালা,
এ বাগানের পাখপাখালি নাম তার লোভলালসা,
হাজিরার সকাল কিংবা গরহাজিরার সন্ধাবেলা,
নফসপ্রীতির হাতে আমরা বন্দি সদা।’
বার. যখনি ইশকেইলাহির প্রভাব এতটাই শক্তিমান যে, এটি অন্তর থেকে আল্লাহ ছাড়া সবকিছু বের করে দূরে ফেলে দেয়। এমনকি সত্যিকারের আশেকের অন্তরে অন্যের জন্য মোটেও কোনো জায়গা থাকে না।
الف اللہ دل رتا میرا مینوں”ب” دی خبر نہ کائ
“ب” پڑہیاں کچھ سمجھ نہ آوے مینوں الف دی لذت آئ
“ع” تے “غ” دافرق نہ جاناں ایہہ گل الف نے سکھائ
بلہیا فول الف دے پورے جیہڑے دل دی کردن صفائ
‘আল্লাহর ‘আলিফ’ আমার হৃদয়কে উদ্ভাসিত করেছে, ‘বা’র কোনো খবর নেই। ‘বা’ পড়ে কিছুই বুঝে আসে না। কেননা, আমি আলিফের মজা পেয়ে গেয়েছি। ‘আইন’ ও ‘গইন’ এর মাঝে কোনো পার্থক্য জানা নেই- এটা আলিফের শিক্ষা। হে ভোলা শাহ! আলিফের কথা সত্য হয়। যা অন্তরকে পরিষ্কার করে দেয়।’
তের. আশেকের ঐকান্তিক তামান্না হয় যে, সে নিজের সবকিছু মাহবুবের (প্রেমাষ্পদ) জন্য বিলিয়ে দিবে। সে মাহবুবের দরজায় ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে অপেক্ষা করাকে নিজের জন্য সৌভাগ্যের কারণ মনে করে।
یادمیں تیرے سب کو بھلادو کوئ نہ مجھ کو یادرہے
تجھ پر سب گھربار لٹادوں خانہ دل آباد رہے
سب خوشیوں کو آگ لگادوں ‏‏غم سے ترے دل شادر ہے
سب کی نظر سے اپنی گرادوں تجھ سے فقط فریادرہے
‘তোমারি জন্য ভুলে যাব সবি, রাখব না কিছু মনে,
তোমারি জন্য ঘর করব উজাড়, করব দিল আবাদ তোমারি স্মরণে,
সকল খুশিকে দিব জ্বালিয়ে, খুশি করব তোমায় দুঃখ সয়ে,
হব নালায়েক সকলের তরে, তোমারি তরে ভিক্ষুক সেজে।’
চৌদ্দ. দুনিয়াতে মানুষ কত শত-সহস্র জিনিস পায়, কত শত-সহস্র জিনিস হারায়। বাস্তব কথা হল, হারিয়ে যাওয়া প্রতিটি বস্তুর বিকল্প আছে। কিন্তু আল্লাহর বিকল্প নেই। তিনি দূরে সরে গেলে আর কোনো উপায় নেই।
لكلّ شَيءٍ – إذا فارقتَهُ – عِوَضٌ
وليْسَ للهِ إنْ فارقْتَ من عِوَضِ
‘প্রতিটি বিচ্ছেদের পাবে সমাধান
আল্লাহর বিচ্ছেদের ক্ষতি অফুরাণ।’
আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আরবি ভাষার সবচে উৎকৃষ্ট ছড়া লাবিদের এই ছড়া-
 ألا كُلُّ شيءٍ ما خَلا اللّهُ باطِلُ
وَكُلُّ نَعِيْمٍ لَا مَحَالَةَ زَائِلُ
জেনে রেখো ভাই, ধরাতে সবাই, মূলহীন তবে আল্লাহ ছাড়া,
সকল নেয়ামত হবে নিঃশেষ, মনে রেখো এই বাক্যখানা।’
 
Top