পুরুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই জামাতে আদায় করা সুন্নাতে মুআক্কাদা, যা ওয়াজিবের সঙ্গে তুলনীয়। (অর্থাৎ এটি ওয়াজিবের কাছাকাছি)। কোনো রকম ওজর ছাড়া জামাত তরক করা গোনাহের কাজ। জামাতে নামাজ আদায় করার তাগিদ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَارْكَعُواْ مَعَ الرَّاكِعِينَ রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো। (সুরা বাকারা ৪৩)
রাসূলুল্লাহ  বলেছেন,
صَلَاةُ الجَمَاعَةِ تَفْضُلُ صَلَاةَ الفَذِّ بسَبْعٍ وعِشْرِينَ دَرَجَةً
জামাতে নামাজ পড়লে একাকী নামাজের তুলনায় সাতাশগুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। (বুখারী ৬১৯)
জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে গিয়ে সাধারণত যেসব ভুল আমরা করে থাকি, তেমন  ১০ টি বিষয় নিম্নে তুলে ধরা হল–
১. কাতার সোজা না করা
জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের প্রথম ধাপই হলো কাতার সোজা করে দাঁড়ানো। কাতার সোজা করে দাঁড়ানোর বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাদীস শরীফে কাতার সোজা না করার জন্যে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ  বলেছেন,
لَتُسَوُّنَّ صُفُوفَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللَّهُ بَيْنَ وُجُوهِكُمْ
তোমরা অবশ্যই তোমাদের কাতার সোজা করে দাঁড়াবে, অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও মতভিন্নতা সৃষ্টি করে দেবেন। (বুখারী ৭১৭)
উমর রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে যে,
أَنَّهُ كَانَ يُوَكِّلُ رِجَالًا بِإِقَامَةِ الصُّفُوفِ فَلَا يُكَبِّرُ حَتَّى يُخْبَرَ أَنَّ الصُّفُوفَ قَدْ اسْتَوَتْ.
তিনি নামাযেরকাতারগুলো সোজা ও ঠিকঠাক করার জন্য কিছু লোককে দায়িত্ব দিয়ে রাখতেন, যতক্ষণ না তারা কাতার পুরোপুরি সোজা-সঠিক হয়েছে বলে তাকে অবগত করতেন, ততক্ষণ তিনি তাকবীর বলতেন না। (তিরমিযি, পরিচ্ছদ- কাতার সমান্তরাল করা সম্পর্কে)
কাতার সোজা করার সহজ পদ্ধতি হলো—মসজিদে কাতারের জন্যে যে দাগ দেয়া থাকে, তাতে পায়ের গোড়ালি রাখা। সকলের পায়ের পেছনের অংশ যদি এক রেখায় থাকে, তাহলে সহজেই কাতার সোজা হয়ে যাবে। অনেকে দাগে পায়ের আঙ্গুল রেখে কাতার সোজা করতে চায়। এভাবে কাতার সোজা হয় না। কারণ কারও পা লম্বা, কারও খাটো। তাই দাগে পায়ের গোড়ালি রাখাই কাতার সোজা করার সহজ পদ্ধতি।
২. কাতারের মাঝে ফাঁক রেখে দাঁড়ানো
কাতার সোজা করার পর লক্ষ রাখতে হবে, কাতারের মাঝে যেন কোনো ফাঁক না থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, কাতারের মাঝে অনেক ফাঁক থাকে। যেখানে দুইজন দাঁড়ায়, খুব সহজেই একটু চেপে সেখানে তিনজন দাঁড়াতে পারে। অথচ এক্ষেত্রে মাসআলা হল, জামাত শুরু হওয়ার পরও যদি কেউ এসে দেখে, কাতারের মাঝে ফাঁকা জায়গা রয়েছে, আর সেখানে সে দাঁড়াতে পারবে, তাহলে তাকে সে জায়গাটুকু পূর্ণ করে দাঁড়াতে হবে। (ফতোয়ায়ে শামী ২/৩১০)। কেননা, হাদীস শরীফে এরকম ফাঁক রাখতে নিষেধ করা হয়েছে এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাতার সোজা করার প্রতি জোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ  বলেছেন,
أَقِيمُوا الصُّفُوفَ، وَحَاذُوا بَيْنَ الْمنَاكِبِ، وَسُدُّوا الْخلَلَ، وَلِينُوا بِأَيْدِي إِخْوَانِكُمْ، وَلا تَذَرُوا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ، وَمَنْ وَصلَ صَفّاً وَصَلَهُ الله، وَمَنْ قَطَعَ صَفّاً قَطَعَهُ الله
তোমরা কাতারগুলো সোজা-সঠিক করো, পরস্পরের কাঁধ সমান্তরাল রেখো, ফাঁক-ফোঁকর বন্ধ করো, তোমাদের ভাইদের জন্য হাত নরম করো (কেউ যদি কাতারে প্রবেশ করতে চায় তাহলে হাত শক্ত করে রেখোনা যাতে সে ঢুকতে না পারে বরং হাত নরম করে তাকে কাতারের ফাঁকে প্রবেশের সুযোগ দাও) এবং শয়তানের জন্য ছোট ছোট ফাঁকা জায়গা ছেড়ে দিও না। যে ব্যক্তি (নামাযে) কাতার মিলিয়ে রাখে (কাতারের ফাঁকা জায়গায় প্রবেশ করে ফাঁক বন্ধ করে কাতার মিলিয়ে রাখে) আল্লাহ তাকে তাঁর (রহমতের) সাথে মিলিয়ে রাখেন, আর যে ব্যক্তি কাতার বিচ্ছিন্ন করে (কাতারের মধ্যে ফাঁকা জায়গা রেখে দেয়, যদ্দরুন দু’জন মুসল্লী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং তদ্বারা কাতারও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়) আল্লাহ  তাকে তাঁর (রহমত) থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেন। (আবু দাউদ ৬৬৬ নাসায়ী ৮১৯)
৩. সামনের কাতারে জায়গা খালি রেখে পেছনে দাঁড়ানো
সামনের কাতারে জায়গা ফাঁকা রেখে পেছনে দাঁড়ানো ঠিক নয়। বরং নিয়ম হলো, প্রথমে সামনের কাতার পূর্ণ করবে। এরপর পেছনে নতুন কাতার করবে। জাবির ইবনু ছামুরাহ রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ الله ﷺ فَقَالَ : أَلَا تَصُفُّونَ كَمَا تَصُفُّ الْملَائِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا ؟ فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ الله، وَكَيْفَ تَصُفُّ الْمَلَائِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا ؟ قَالَ: يُتِمُّونَ الصُّفُوفَ الْأُوَلَ، ويَتَرَاصّونَ في الصَّفِّ
একদিন রাসূলুল্লাহ  বেরিয়ে এসে আমাদেরকে বললেন, ফেরেশতারা যেভাবে তাদের পালনকর্তার সামনে সারিবদ্ধ হন তোমরা কেন সেভাবে সারিবদ্ধ হও না? আমরা বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! ফেরেশতারা কিভাবে তাদের পালনকর্তার সামনে সারিবদ্ধ হন? রাসূলুল্লাহ  বললেন,  তারা (প্রথমে) সামনের কাতারগুলো পূরণ করেন এবং শীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ফাঁক-ফোঁকর বন্ধ করে কাতারে দাঁড়ান। (মুসলিম ৪৩০)
কখনো দেখা যায়, জামাত শুরু হয়ে যাওয়ার পর কেউ মসজিদে এল এবং তাকবিরে উলা কিংবা রুকু পাওয়ার জন্যে তাড়াহুড়ো করে পেছনে দাঁড়িয়ে গেল। অথচ তখনো সামনের কাতারে দাঁড়ানোর জায়গা ছিল। কেউ কেউ আবার একটু শারীরিক আরামের জন্যে সামনের কাতার ফাঁকা রেখে পেছনে দাঁড়ায়। অথচ রাসূলুল্লাহ  বলেছেন,
أَتِمُّوا الصَّفَّ الْمُقَدَّمَ، ثُمَّ الَّذِي يَلِيهِ، فَمَا كَانَ مِنْ نَقْصٍ فَلْيَكُنْ فِي الصَّفِّ الْمؤَخَّرِ
তোমরা সামনের কাতার আগে সম্পূর্ণরূপে পূরণ করো, তারপর এর পিছনের  কাতার  (এভাবে পর্যায়ক্রমে কাতারগুলো) পূরণ করো। যাতে করে অপূর্ণতা যদি থাকে, সেটা যেন সর্বশেষ কাতারেই থাকে। (আবু দাউদ ৪৭১)
৪. দৌড়ে এসে জামাতে শরিক হওয়া
অনেকে তাকবিরে উলা বা জামাতের সওয়াব অর্জন করতে গিয়ে শরিয়তের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফেলেন। দৌড়ে এসে জামাতে শরিক হয়ে হাদীসের বিপরীত আমল করেন। কেননা, হাদীসের নির্দেশ হলো,
إِذَا سَمِعْتُمُ الإِقَامَةَ فَامْشُوا إِلَى الصَّلاَةِ وَعَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةِ وَالْوَقَارِ وَلاَ تُسْرِعُوا، فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا
নামাজের ইকামত শুনলে তোমরা ধীর ও শান্তভাবে (মসজিদে বা জামাতে) যাও এবং তাড়াহুড়া করো না। অতঃপর ইমামের সঙ্গে নামাযের যতটুকু অংশ পাও ততটুকু পড়ে নাও এবং যেটুকু অংশ ছুটে যায় তা (একাকী) পূর্ণ করে নাও। (বুখারী ৬৩৬ মুসলিম ৬০২)
তাছাড়া স্বাভাবিক কথা হলো, কেউ যখন দৌড়ে এসে নামাজে শরিক হয় তখন হয়তো তাকবিরে উলা বা প্রথম তাকবির পাবে কিংবা এক/দুই রাকাত বেশি পাবে, কিন্তু তখন তো সে স্থিরচিত্তে নামাজ পড়তে পারবে না। বরং পুরো নামাজ জুড়েই তার মধ্যে অস্থিরতা কাজ করবে। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি এতটুকু জোরে হেঁটে আসে, যাতে সে ক্লান্ত ও অস্থিরচিত্ত হয়ে পড়ে না, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।
৫. রুকু না পেলে জামাতে শরিক হওয়ার জন্যে পরবর্তী রাকাতের অপেক্ষা করা
রুকু না পেলে কিছু অনেকে জামাতে শরীক না হয়ে এমনিই দাঁড়িয়ে থাকে। ইমাম যখন চলমান রাকাত শেষ করে পরবর্তী রাকাতের জন্য দাঁড়ান তখন সে নামাযে শরীক হয়। এ পদ্ধতিটিও ঠিক নয়। কেউ কেউ তো নামায শুরু করার পরও যদি ইমাম সাহেবকে রুকুতে না পায়, তাহলে নামায ছেড়ে দেয় এবং পরের রাকাতে সে নামাযে শরিক হয়। এসবই ভুল। কেননা হাদীসের নির্দেশ হলো,
فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا
অর্থাৎ তোমরা ইমামকে যে অবস্থায় পাও নামাযে শরীক হয়ে যাও, আর যতটুকু ছুটে গেছে তা (জামাত শেষে) আদায় কর। (বুখারী ৬৩৬)
সুতরাং ইমামকে যে অবস্থায়ই পাওয়া যাক নামাযে শরীক হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, ইমামকে রুকু অবস্থায় পাক বা রুকু থেকে দাঁড়ানো অবস্থায়- উভয় ক্ষেত্রে হাত বাঁধতে হবে না। বরং দু’হাত তুলে তাকবীরে তাহরিমা বলে হাত না বেঁধে রুকুর তাকবীর বলে রুকুতে যাবে বা ইমাম দাঁড়িয়ে গেলে হাত না বেঁধে ইমামের সাথে নামাজে শরীক হবে।
আর যদি এমন হয় যে, ইমাম রুকু থেকে উঠে গিয়েছেন আর মুক্তাদী রুকু পায় নি ঠিকই কিন্তু সে রুকুতে চলে গিয়েছে; তাহলে তার করণীয় হল, রুকু থেকে উঠে যাওয়া এবং ইমামের অনুসরণ করা। (ইমাম যে অবস্থায় আছেন সে অবস্থায় ফিরে আসা।) আর যেহেতু সে ইমামকে রুকুতে পায় নি তাই সে রাকাতও পায় নি। কারণ, রাকাত পাওয়ার জন্য ইমামকে রুকুতে পাওয়া শর্ত।
৬. ইমামের পূর্বে রুকু-সেজদা করা
জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার সময় অনেকে ইমামের পূর্বেই রুকু-সেজদায় চলে যান কিংবা ইমামের পূর্বেই রুকু-সেজদা থেকে উঠে পড়েন। ভুলবশত এমনটি করলে নামাজ নষ্ট হবে না ঠিক, কিন্তু ইচ্ছা করে যারা এমন করে, তাদের জন্যে হাদীস শরীফে উচ্চারিত হয়েছে কড়া হুঁশিয়ারি। হযরত আবু হুরায়রা রা. কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ  বলেছেন,
أَما يَخْشَى أحَدُكُمْ – أوْ: لا يَخْشَى أحَدُكُمْ – إذَا رَفَعَرَأْسَهُ قَبْلَ الإمَامِ، أنْ يَجْعَلَ اللَّهُ رَأْسَهُ رَأْسَ حِمَارٍ، أوْ يَجْعَلَ اللَّهُ صُورَتَهُ صُورَةَ حِمَارٍ
তোমাদের কেউ কি এ নিয়ে কোনো ভয় করে না—যখন সে ইমামের পূর্বে তার মাথা উঠিয়ে নেয় তখন আল্লাহ তার মাথাকে গাধার মাথায় কিংবা তার আকৃতিকে গাধার আকৃতিতে পাল্টে দিতে পারেন!(বুখারী ৬৯১)
৭. সেজদায় হাত বাঁকিয়ে অন্যকে কষ্ট দেয়া
সেজদার সময় অনেকে হাত এতটাই বাঁকিয়ে রাখেন, যার ফলে তার পাশে নামাজ আদায়কারীর কষ্ট হয়। এমন করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। স্বাভাবিকভাবে যতটুকু ফাঁক রাখতে হয় ততটুকু রাখুন। অর্থাৎ আপনার বাহু মাটি থেকে, হাঁটু থেকে এবং পার্শ্বদেশ থেকে পৃথক রাখুন। এত ফাঁক করবেন না, যেন অন্যেরা কষ্ট পায়।
৮. ইমাম সাহেবের কোনো ভুল হলে লোকমা না দেয়া
মানুষ হিসেবে ইমাম সাহেবের ভুল হতেই পারে। কিছু ভুলের জন্যে তো সাহু সেজদার বিধানও রয়েছে। আর কিছু ভুল এমন, যেখানে ইমাম সাহেবকে তাৎক্ষণিক সতর্ক করে দিতে হয়। যেমন, জোহর নামাজের তৃতীয় রাকাতেই ইমাম সাহেব শেষ বৈঠকের জন্যে বসে পড়লেন। তখন তাকে লোকমা দিতে হবে। কথা হলো, এ লোকমা কে দেবে? এ লোকমা যে কেউ দিতে পারে। যিনি ভুলটি ধরতে পারবেন, তিনিই লোকমা দিতে পারেন। (ফতোয়ায়ে রহীমিয়া ৬/১৮৮)
অনেক সময় দেখা যায়, এ রকম কোনো ভুলে আমরা লোকমা না দিয়ে অপেক্ষা করি এবং নামাজ শেষে লোকমা না দেয়ার বিষয়টি মুয়াজজিন সাহেবের কাঁধে চাপিয়ে দিই এ বলে—তিনি কেন লোকমা দিলেন না। অথচ মনে রাখা উচিত, ইমাম সাহেব যেমন ভুল করছেন, মুয়াজজিন সাহেবেরও একই ভুল হতে পারে।
৯. ইমাম সাহেব এক সালাম ফেরানোর পরই মাসবুক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে যাওয়াযখন ইমাম সাহেব সালাম ফেরাবেন, তখন মাসবুক ব্যক্তি সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে এবং ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো আদায় করবে। অনেককেই দেখা যায়, ইমাম সাহেব এক সালাম ফেরানোর পর যখন দ্বিতীয় সালাম শুরু করেন, তখনই তারা দাঁড়িয়ে যান। অথচ নিয়ম হলো, ইমাম সাহেব ডানে-বামে উভয় দিকে সালাম ফেরানো শেষ করার পরও কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে মাসবুক ব্যক্তি দাঁড়াবে। এর আগে নয়। (ফতোয়ায়ে শামী ২/৩৪৮)
১০. মোনাজাতকে নামাজের অংশ মনে করা
আমাদের সমাজে প্রায় প্রতিটি মসজিদেই ফরজ নামাজের জামাত শেষে সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করা হয়। বিশুদ্ধ মত হিসেবে, এভাবে মোনাজাত করা বৈধ এবং এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে মনে রাখতে হবে, এ মোনাজাত নামাজের কোনো অংশ নয়। ফলে তা জামাতেরও অংশ নয়। সালাম ফেরানোর মধ্য দিয়ে যখন নামাজ শেষ হয়ে যায়, তখন ইমামতিও শেষ হয়ে যায়। নামাজের পর যখন ইমাম সাহেব মোনাজাত করেন তখন কেউ সেই মোনাজাতে শরিক হতেও পারেন, নাও হতে পারেন। মোনাজাতে তিনি নিজের মতো করেও প্রার্থনা করতে পারেন, আবার ইমাম সাহেবের দোয়ায় আমিনও বলতে পারেন।
আরও লক্ষ রাখতে হবে, এ মোনাজাত যেন নামসর্বস্ব এবং রেওয়াজ রক্ষার্থে করা না হয়। হাদীস শরীফে আছে, ফরজ নামাজের পর দোয়া কবুল হয় এবং এ বিষয়টি সামনে রেখেই এসময় দোয়া করা হয়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, দোয়ার জন্যে ইমাম সাহেব হাত তোলেন ঠিকই, কিছু আরবি বাক্যও হয়তো পাঠ করেন, কিন্তু কোনো দোয়া করেন না অর্থাৎ নিজের প্রয়োজনে কিংবা মুসল্লিদের বা আম মুসলমানদের জন্যে আল্লাহ তায়ালার দরবারে কিছুই চান না। অথচ এই সময় আল্লাহর কাছে চাইলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যেমন, কেউ কেউ হাত তুলে ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়ামিনকাস সালাম তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ পড়েন এবং এরপরই দোয়া শেষ করে দেন। অথচ এখানে তো কোনো কিছুই চাওয়া হয় নি। কোরআন মজিদে এবং হাদীস শরীফে অনেক দোয়া আমাদেরকে শেখানো হয়েছে। নামাজের পর সংক্ষিপ্তাকারে হলেও আমরা সেসবের কোনোটা কোনোটা পড়ে নিতে পারি। আর এ মোনাজাতের কারণে যেন মাসবুক মুসল্লিদের নামাজে ব্যাঘাত না ঘটে—এ দিকেও নজর রাখা জরুরি।
হে আল্লাহ, আমাদের সবাইকে এসব ভুলগুলো থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
—মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
 
Top