জাহান্নামের উপর "জাসর" (পুল) স্থাপন করা হবে। শাফাআতেরও অনুমতি দেয়া হবে। মানুষ বলতে থাকবে, হে আল্লাহ! আমাদের নিরাপত্তা দিন, আমাদের নিরাপত্তা দিন।........

জিজ্ঞেস করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! "জাসর" কি? রাসূলুল্লাহ [ﷺ] বললেনঃ এটি এমন স্থান যেখানে পা পিছলে যায়। সেখানে আছে নানা প্রকারের লৌহ শলাকা ও কাটা, দেখতে নাজদের সা'দান বৃক্ষের কাটার ন্যায়। মুমিনগণের কেউ তো এ পথ চোখের পলকের গতিতে, কেউ বিদ্যুৎ গতিতে, কেউ বায়ুর গতিতে, কেউ উত্তম অশ্ব গতিতে, কেউ উষ্ট্রের গতিতে অতিক্রম করবে। কেউ তো অক্ষত অবস্থায় নাজাত পাবে, আর কেউ তো হবে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় নাজাতপ্রাপ্ত। আর কতককে কাটাবিদ্ধ অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অবশেষে মুমিনগণ জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ সে সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, ঐ দিন মু'মিনগণ (আল্লাহ ওয়ালারা) তাদের ঐ সব ভাইদের স্বার্থে আল্লাহর সাথে এত অধিক বিতর্কে লিপ্ত হবে যারা জাহান্নামে রয়ে গেছে যে, তোমাদের পার্থিব অধিকারের ক্ষেত্রেও এমন বিতর্কে লিপ্ত হয় না। তারা বলবে, হে রব! এরা তো আমাদের সাথেই নামাজ, রোজা আদায় করত, হজ্জ করত। তখন তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হবে যে, যাও, তোমাদের পরিচিতদের উদ্ধার করে আন। উল্লেখ্য এরা জাহান্নামে পতিত হলেও মুখমণ্ডল আযাব থেকে রক্ষিত থাকবে। (তাই তাদেরকে চিনতে কোন অসুবিধা হবে না।) মুমিনগণ জাহান্নাম হতে এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে আনবে। এদের অবস্থা এমন হবে যে, কারোর তো পায়ের নলা পর্যন্ত, আবার কারো হাটু পর্যন্ত দেহ আগুন ছাই করে দিবে।

উদ্ধার শেষ করে মুমিনগণ বলবে, হে রব যাদের সম্পর্কে আপনি নির্দেশ প্রদান করেছিলেন, তাদের মাঝে আর কেউ অবশিষ্ট নেই। আল্লাহ বলবেন, পুনরায় যাও, যার অন্তরে এক দীনার পরিমাণও ইমান অবশিষ্ট পাবে তাকেও উদ্ধার করে আন। তখন তারা আরো একদলকে উদ্ধার করে এনে তারা বলবে, হে রব! অনুমতিপ্রাপ্তদের কাউকেও রেখে আসিনি। আল্লাহ বলবেনঃ আবার যাও, যার অন্তরে অর্ধ দীনার পরিমাণও ঈমান অবশিষ্ট পাবে তাকেও বের করে আন। তখন আবার এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে এনে তারা বলবে, হে রব! যাদের আপনি উদ্ধার করতে বলেছিলেন তাদের কাউকে ছেড়ে আসিনি। আল্লাহ বলবেনঃ আবার যাও, যার অন্তরে অণু পরিমাণও ঈমান বিদ্যমান, তাকেও উদ্ধার করে আন। তখন আবারও এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে এনে তারা বলবে, হে রব! যাদের কথা বলেছিলেন তাদের কাউকেও রেখে আসিনি।

সাহাবা আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) বলেন, তোমরা যদি এ হাদীসের ব্যাপারে আমাকে সত্যবাদী মনে না কর তবে এর সমর্থনে নিম্নোক্ত আয়াতটি যদি চাও তবে তিলাওয়াত করতে পারঃ "আল্লাহ অণু পরিমাণও জুলুম করেন না এবং অণু পরিমাণ নেক কাজ হলেও আল্লাহ তা দ্বিগুণ করে দেন এবং তার নিকট হতে মহাপুরস্কার প্রদান করেন।"- (সূরাহ আন নিসা ৪ঃ ৪০)।

এরপর আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ ফেরেশতারা সুপারিশ করলেন, নবীগণও সুপারিশ করলেন এবং মুমিনরাও সুপারিশ করেছে, কেবলমাত্র আরহামুর রাহিমীন পরম দয়াময়ই রয়ে গেছেন। এরপর তিনি জাহান্নাম থেকে এমন একদল লোকদের মুক্তি দিবেন যারা কখনো কোন সৎকর্ম করেনি এবং আগুনে জ্বলে লাল হয়ে গেছে। পরে তাদেরকে জান্নাতের প্রবেশ মুখের নাহরুল হায়াতে ফেলে দেয়া হবে। তারা এতে এমনভাবে সতেজ হয়ে উঠবে, যেমনভাবে শস্য অঙ্কুর স্রোতবাহিত পানি ভেজা উর্বর জমিতে সতেজ হয়ে উঠে।...

(সহীহ মুসলিম ৩৪৩)

(অনুরূপ প্রসঙ্গে আরো দেখুন, সহিহ বুখারিঃ ৭৪৩৯) 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! এমন ব্যক্তির ব্যাপারে আপনি কী বলেন, যে ব্যক্তি কোন গোষ্ঠীকে ভালবাসে, কিন্তু (‘আমলের ক্ষেত্রে) তাদের সমান হতে পারেনি? তিনি বললেনঃ মানুষ যাকে ভালবাসে সে তারই সাথী হবে। 

(সহীহ বুখারী ৬১৬৯)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে কেউ বিরাট জনগোষ্ঠীর জন্য সুপারিশ করবে, কেউ একটি গোত্রের জন্য, কেউ একটি ছোট দলের জন্য, কেউ একজন লোকের জন্য সুপারিশ করবে এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।

(সূনান আত তিরমিজী; অধ্যায়ঃ ৩৫/ কিয়ামাত ও মর্মস্পর্শী বিষয়, হাদিস নম্বরঃ ২৪৪০)

সকলেই কি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে! নিশ্চয়ই নই শুধুমাত্র ঈমানদাররাই প্রবেশ করবে। আচ্ছা, শুধু কি মুখে ঈমান এনেছি বললে, কালিমা পড়ে নিলেই, বাহ্যিক আমলে নিজেকে সজ্জিত করে নিলেই পরিপূর্ণ ঈমানদার হয়ে যায়! আমার আল্লাহ বলছেন,

"আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি’, অথচ তারা ঈমানদার নয় (মুনাফিক)।" 
(সূরা বাকারাহ, আয়াত ৮)

"এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।" (সূরা মুনাফিকুন, আয়াত ১)

"নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে।" (সূরা নিসা ১৪৫)

"আল্লাহ মুনাফিক নারী-পুরুষদের কাফেরদের সাথে জাহান্নামের আগুনের অঙ্গীকার করেছেন, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটা তাদের জন্য যথেষ্ট, আর আল্লাহ তাদের লা’নত করেছেন এবং তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী আযাব।" [সূরা আত-তাওবাহ ৬৮]

আর এজন্যই আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলছেন,

"ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।" 
(সূরা তাওবাঃ ১১৯)

আল্লাহ তায়ালা বলছেন, 

"ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহকে ভয় কর, উসিলা (তাঁর নৈকট্য লাভের উপায়) অন্বেষণ কর এবং তার পথে জিহাদ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।
(সূরা মায়িদাহঃ ৩৫)

"যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে, তারা নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং নেককার লোকদের সঙ্গী হবে, যাঁদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, তাঁরা কতই না উত্তম সঙ্গী!"  (সূরা নিসাঃ ৬৯)

হে আল্লাহ, 

"আমাদেরকে সোজা পথে পরিচালিত করো! 
তাঁদেরই পথে, যাঁদের উপর তুমি অনুগ্রহ করেছো।"   

(সূরা ফাতিহাঃ ৫, ৬)




 
Top