জানাযার বর্ণনা-


❏ প্রশ্ন-১০০ঃ কবরের নিকট দু‘আ করার সময় কবরকে সামনে নিয়ে দু‘আ করা উত্তম, না কিবলামুখী হয়ে?


✍ উত্তরঃ শরহে শর‘আতুল ইসলামে উল্লেখ আছে,


قال فى الاحياء والمستحب فى زيارة القبور ان يقف مستدبر القبلة مستقبلًا بوجه الميت . 


‘কবর যিয়ারতের সময় কিবলাকে পিছ দিয়ে কবরকে সামনে নিয়ে যিয়ারত করা মুস্তাহাব।’

140. খাইরুল ফতওয়া, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা ১৫২; ফতওয়া দারুল উলূম, খন্ড-৫, পৃষ্ঠা ৪৩৪।


বর্ণিত ইবারত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, দু‘আ করার সময় কবরকে সামনে রেখে, কিবলার দিকে পীঠ করে দাঁড়িয়ে যিয়ারতের দু‘আ করা উত্তম। 


❏ প্রশ্ন-১০১ঃ মাইয়্যেত বা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর দাঁড়িয়ে দু‘আ করা উচিত কি না?


✍ উত্তরঃ মারাক্বিউল ফালাহ গ্রন্থের ৩৪১ পৃষ্ঠায় আছে,


والسنة زيارتها قائمًا والدعاء عندها قائمًا كما كان يفعل رسول الله صلّى الله عليه وسلّم فى الخروج الى البقيع . 


‘দাঁড়িয়ে যিয়ারত করা এবং কবরের সামনে দাঁড়িয়ে দু‘আ করা সুন্নাত। যেমন রাসূলে কারীম(ﷺ)    জান্নাতুল বাকীর দিকে বের হয়ে দাঁড়িয়ে দু‘আ করতেন।’


এটা শুধু দু‘আর জন্য। যদি সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করা উদ্দেশ্য হয়, তখন বসেও দু‘আ করতে পারবে। যেমন- হাদীস শরীফ দ্বারা এটি মুস্তাহাব হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।


كما فى الدرالمختار وجلوس ساعة بعد دفنه لدعاء قرأة الخ. وفى سنن ابى داؤد كان النبى صلّى الله عليه وسلّم اذا فرغ من دفن الميت وقف على قبره الخ .


তাহ্তাবী ও ফতোয়ায়ে শামীতে আছে, যদি কবর সামনে হয়, তখন কবরের দিকে মুখ করে দাঁড়ানো উত্তম ও মুস্তাহাব।


❏ প্রশ্ন-১০২ঃ মসজিদে ইতিকাফকারী জানাযার জন্য মসজিদ থেকে বের হতে পারবে কিনা? যদি কোন ইমাম রমযান শরীফে ইতিকাফ থাকেন, জানাযার জন্য তিনি বের হতে পারবেন কিনা? যদি বের হতে না পারেন তবে  কি মসজিদে জানাযা পড়াতে পারবেন?


✍ উত্তরঃ ই‘তিকাফের পূর্বে যদি এ রকম শর্ত করে থাকে যে, জানাযার নামাযের জন্য বের হবে, তখন জানাযার জন্য বাইরে যাওয়া জায়েয হবে। (কারো সাথে কথা-বার্তা বলতে পারবে না এবং ঠিক সময়ে গিয়ে জানাযা শেষে ফিরে আসতে হবে) মসজিদে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ।  

141. খাইরুল ফতওয়া, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা- ৩১৫।


❏ প্রশ্ন-১০৩ঃ দ্বিতীয়বার জানাযার নামায পড়ার বিধান কি?


✍ উত্তরঃ মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায একবার পড়া ফরযে কিফায়াহ। অতএব যদি মৃত ব্যক্তির ওলি কিংবা কাজী নিজেই বা তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে জানাযার নামায একবার আদায় করে, তা হলে দ্বিতীয়বার কিংবা কয়েকবার জানাযার নামায আদায় শরীয়ত স্বীকৃত নয়। অবশ্য যদি কোন অপরিচিত ব্যক্তি ওলীর অনুমতি ছাড়া জানাযা পড়ায় ফেলে, তখন ওলী কিংবা কাজীর অধিকার থাকবে পুনরায় জানাযা পড়ার।


 ফতোয়ায়ে আলমগীরিতে আছে,


وان كان غير هولاء له ان يعيد .


‘ওলী ছাড়া অন্য কেউ জানাযা পড়ালে তখন ওলী পুনরায় পড়ার অধিকার রাখে।’  

142.  ফতওয়া হিন্দিয়া, পঞ্চম পরিচ্ছেদ, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১৬৩।


❏ প্রশ্ন-১০৪ঃ নিয়তবিহীন জানাযার নামাযের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। যেমন- দাঁড়ানোর সময় নিয়ত করতে ভুলে গেলে, এরকম জানাযার নামায পড়ার হুকুম কি?


✍ উত্তরঃ অন্যান্য সকল নামাযের ন্যায় জানাযার নামাযেও নিয়ত আবশ্যক। সুতরাং নিয়তবিহীন পঠিত জানাযার নামাযের কোন গুরুত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা নেই।


والنية يعتبر شرطًا لصحتها. 


‘নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য নিয়ত শর্ত।’ 

143. বাদায়েউস সানা‘য়ে, খন্ড-১, পৃষ্ঠা- ৩১৫।


❏ প্রশ্ন-১০৫ঃ সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত এবং দ্বিপ্রহরের সময় জানাযার নামায ও তিলাওয়াতে সিজদা করা জায়েয আছে কিনা?


✍ উত্তরঃ প্রশ্নোলি­খিত মাকরূহ সময়ে যদি জানাযা তৈরী হয়ে যায় কিংবা তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হয়, তাহলে এ সময় জানাযার নামায পড়া এবং তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা মাকরূহবিহীন জায়েয। হ্যাঁ! যদি জানাযা পূর্ব থেকে প্রস্তুত হয় কিংবা তিলাওয়াতে সিজদা উক্ত সময়ের পূর্বে ওয়াজিব হয়ে থাকে, তাহলে উক্ত সময়ে জানাযার নামায এবং তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা মাকরূহে তাহরিমী। 

144. ফতওয়া-ই শামী।


❏ প্রশ্ন-১০৬ঃ জারজ সন্তান বা অবৈধ পন্থায় জন্মগ্রহণ করেছে এমন সন্তান মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযার হুকুম কি?


✍ উত্তরঃ যেনা বা ব্যভিচারের দোষ ও অপরাধ ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিনীর প্রতি সম্বোধিত হবে। সন্তান এ ধরনের অপরাধ থেকে দায়মুক্ত থাকবে। অতএব তার নিষ্পাপের প্রতি লক্ষ্য রেখে মুসলমানদের ওপর আবশ্যক যে, এ ধরনের সন্তান মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযার নামায পড়া। কারণ গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, এ ধরনের শরীয়ত বিরোধী গর্হিত কাজে লিপ্ত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিনীর যদি জানাযার নামায পড়া যায়, সে ক্ষেত্রে নিষ্পাপ সন্তানের জানাযা পড়া উত্তম পন্থায় জায়েয হবে।


ويصلّى على مسلم مات بعد الولادة صغيرًا كان او كبيرًا، ذكرًا كان او انثىٰ . ومثلهُ فى الشامى .


‘মুসলমান সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর মারা গেলে তার ওপর জানাযার নামায পড়া ওয়াজিব- মৃত ব্যক্তি ছোট হোক কিংবা বড়, ছেলে হোক বা মেয়ে।’ 

145. কনযুল উম্মাল, খন্ড-৬, হাদীস নং- ১৪১১৫; ফাতওয়ায়ে শামী, জানায়েয অধ্যায়, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২১।


 
Top