❏ প্রশ্ন-৮৩ঃ রমযান মুবারক ছাড়া বিতির নামায জামাতে পড়ার হুকুম কী?


✍ উত্তরঃ শরহে ইলিয়াস ১ম খন্ডর ২৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,


ان الاقتداء فى الوتربالامام خارج رمضان جائز- 


‘পবিত্র রমযান ছাড়া বিতির নামায ইমামের পিছনে জামাত সহকারে আদায় করা জায়েয।’


قال ابن عابدين ويمكن ان يقال الظاهر ان الجماعة فيه اى الوتر غير مستحبة ثم ان كان ذٰلك احياناكما فعل عمر رضى الله عنه كان مباحًا غير مكروه وان كان على سبيل المواظبة كان بدعة مكروهة لانه خلاف المتوارث . 

ولو صلوٰ الوتر بجماعة فى غير رمضان فهو صحيح مكروه كالتطوع فى غير رمضان بجماعة، وقيّده فى الكافى بان يكون على سبيل التداعى .


অবশ্য রমযান শরীফে বিতির নামায জামাত সহকারে আদায় করা সকল ইমামের ঐকমত্যে সুন্নাত। রমযান মুবারক ব্যতীত বিতির জামাতে আদায় করা মাকরূহ সমেত শুদ্ধ। যেরূপ রমযান এর বাইরে নফল নামায জামাতে পড়া মাকরূহ। অবশ্য যদি ডাকাডাকি ছাড়া হঠাৎ পড়ানো হয় যেমন আমিরুল মু’মিনীন হযরত ওমর  (رضى الله تعالي عنه) পড়িয়েছিলেন, তাহলে মাকরূহ ছাড়া মুবাহ হবে।  

113. ফতওয়া শামী, নফল নামাযে ইকতিদা করা মাকরূহ অধ্যায়, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৮।


হ্যাঁ! কাফি প্রণেতা উল্লেখ করেন যে, নফল নামায যদি এমন হয় যে, কোনো ডাকা-ডাকি ছাড়াই সমবেত হয় (যেমন- শবে বরাত), তবে এমতাবস্থায় জামাতে পড়া জায়েয। ‘শরহে ইলিয়াস’-এর ইবারত দ্বারা জায়েয প্রমাণিত হয় এবং অধিকাংশ ফোকাহা-ই কিরামও মূল নামায জায়েয হওয়ার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। হ্যাঁ! যদি পরস্পর ডাকাডাকি করে সব সময় জামাতে আদায় করে, তাহলে মাকরূহ হবে। 

114. বাহরুল রায়েক, নফল অধ্যায়, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৭০; 

আল জওহিরাতুন নায়্যিরা, কিয়ামে রমযান অধ্যায়, খন্ড-১, পৃষ্ঠা ১২০।


❏ প্রশ্ন-৮৪ঃ পাগড়ি ছাড়া ইমাম শুধু টুপি পরে নামায পড়া এবং পড়ানো কি জায়েয? এতে নামাযের সওয়াবে তারতম্য বা কম-বেশি হবে কিনা?


✍ উত্তরঃ পাগড়ি ছাড়া শুধু টুপি পরিধান করে নামায পড়া এবং পড়ানো জায়েয। এতে কোন ধরনের মাকরূহ হবে না।


قال فى شرح التنوير فى مكروهات الصلواة ، وصلاته حاسرًا اى كاشفًا راسه للتكاسل ولابأس به للتذلل واما للاهانة بها فكفر ولو سقطت قلنسوته فاعادتها أفضل . 


‘উক্ত ইবারত দ্বারা বুঝা গেল যে, অবমাননাকর অবস্থায় না হলে খালি মাথায় নামায পড়লে মাকরূহ হবে না। তাই টুপি পরে নামায পড়াতে মাকরূহ হওয়ার কোন অবকাশ নেই। আর অবমাননার মানসে খালী মাথায় নামায পড়লে কুফরী হবে। তাই টুপি পড়ে গেলে তা উঠিয়ে নেয়া উত্তম।’

এমনকি ولو سقطت قلنسوته ,এর ব্যাপারে ব্যাখ্যাকার (رحمه الله تعالي ) টুপি ছাড়া নামায মাকরূহ হওয়ার হুকুম আরোপ করেননি, যা মাকরূহ না হওয়ারই দলিল। অবশ্য যে ব্যক্তি পাগড়ি ছাড়া মজলিশে আসতে লজ্জাবোধ করে, এমন ব্যক্তির জন্য শুধু টুপি পরে নামায পড়া মাকরূহ হবে।

বিভিন্ন রেওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণিত যে, হযরাত সাহাবা-ই কিরাম (رضى الله تعالي عنه) এবং পূর্ববর্তী ইমামগণ হতে টুপি পরে নামায পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন বুখারী শরীফে উল্লেখ আছে, 


وضع ابو اسحاق قلنسوته فى الصلواة ورفعها . 


‘আবু ইসহাক নামাযে তাঁর টুপি মাথায় উঠায়ে নিলেন।’ 

115. সহীহ্ বুখারী, খন্ড-১ম, পৃষ্ঠা-১৫৯।


যদিও এখানে ইমাম বুখারী (رحمه الله تعالي )-এর উদ্দেশ্য ভিন্ন ছিল। কিন্তু এতে এ বিষয়টিও প্রমাণিত হয়ে যায়। বুখারী শরীফের অন্যত্র উল্লেখ আছে,


قال الحسن كان القوم يسجدون على العمامة والقلنسوة . 


‘ইমাম হাসান (رضى الله تعالي عنه) বলেন, লোকেরা পাগড়ি ও টুপি পরিধান করে নামায আদায় করতেন।’ 

116. সহীহ্ বুখারী, খন্ড-১ম, পৃষ্ঠা-৫২।


শরহে বেকায়ার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ওমদাতুর রি‘আয়া গ্রন্থে আছে,


وكلا ذكروا ان المستحب ان يصلى فى قميص وازار وعمامة لايكره والاكتفاء بالقلنسوة ولاعبرة لما اشتهر بين العوام من كراهة ذلك وكذا ما اشتهر ان المؤتم لوكان معتما بعمامة والامام مكتفيا على قلنسوة لايكره . 


যদিও সুন্নাত ও মুস্তাহাব হওয়ার দরুন পাগড়ি পরিধান করে নামায পড়া উত্তম- চাই ইমাম হোক বা মুক্তাদি, নামাযে হোক বা নামাযের বাইরে সব সময় পাগড়ি ব্যবহার করা সুন্নাত, এতদ্সত্ত্বেও পাগড়ি বিহীন শুধু টুপি পরে নামায পড়া এবং ইমামতি করা মাকরূহ ছাড়াই শুদ্ধ।

আর যদি মুকতাদিরা পাগড়ি বাঁধে এবং ইমাম শুধু টুপি পরিধান করে নামায পড়ায়, তাতেও মাকরূহ হবে না। 

117. শরহে বেকায়ার ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুর রেয়ায়াহ, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১৯৮।


যেমন ‘ওমদাতুর রি‘আয়া’ শরহে বেকায়া কিতাবের আনুষাঙ্গিক আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়।


❏ প্রশ্ন-৮৫ঃ হুযূর মোস্তফা(ﷺ)   অসুস্থাবস্থায় হযরত আবু বকর সিদ্দীক (رضى الله تعالي عنه)-এর পিছনে নামায আদায় করেছিলেন। তখন তাঁর মাথায় পবিত্র পাগড়ি ছিল না কি টুপি?


✍ উত্তরঃ সীরাতে মুহাম্মদীয়াতে উল্লেখ আছে যে, তখন হুযূর মোস্তফা(ﷺ)   এর পবিত্র মাথায় পাট্টী বা ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল। 


وروىٰ الطبرانى والبيهقى عن الفضل بن عباس رضى الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلّم شدوا راسى لعلى اخرج الى المسجد فشدوا راسهُ بعصابة ثم خرج .


‘তাবরানী ও বায়হাকী শরীফে হযরত ফযল বিন আব্বাস (رضى الله تعالي عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর (ﷺ) এরশাদ করেন, তোমরা আমার মাথা ব্যান্ডেজ করে দাও যাতে আমি মসজিদে যেতে পারি। তাঁর মাথা শক্তভাবে বেঁধে দেয়া হলো অতঃপর তিনি মসজিদের দিকে বের হলেন।’  

118. খাইরুল ফতওয়া, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৫০।


❏ প্রশ্ন-৮৬ঃ মু’মিনের জন্য নামায মি‘রাজ হওয়া কি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? দলিলসহ বর্ণনা কর।


✍ উত্তরঃ নামায মু’মিনের জন্য মি‘রাজ হওয়া হুযূর মোস্তফা(ﷺ)  -এর স্পষ্ট বাণী দ্বারা প্রমাণিত- একথা আমি (লেখক) অধম নগন্যের নযরে পড়েনি। হ্যাঁ! অবশ্য কতিপয় বিশুদ্ধ রেওয়ায়েত এবং কিছু সুফিয়া-ই কিরামের বর্ণনা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ্ তা‘আলার নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের নাম মি‘রাজ।

এক হাদীসে হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করেন, বান্দার সবচেয়ে অধিক আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয় সিজদারত অবস্থায়। কতেক সুফিয়া-ই কিরাম বলেন, الصلواة معراج المؤمنين অর্থাৎ- ‘নামায মু’মিনের মি‘রাজ’।

 
Top