ব্যক্তিগত আহবানে "ইয়া রাসুলাল্লাহ ﷺ" বলে সমস্বরে আওয়াজ তোলা অথবা মিছিলে স্লোগান দেয়া- পর্ব-১
--------------------------------------------------------------------
(বিদেশী লেখা থেকে অনূদিত)

অনুবাদঃ সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারী 

এটা জায়েজ নয় কোন ব্যক্তির জন্য যে তার সামনে যখন কেউ আল্লাহ তায়ালার দ্বীনকে বিকৃত করবে আর সে নিরব থাকবে, বিশেষত যখন তার ক্ষমতা আছে রুখে দাঁড়ানোর। মুসলমানদেরকে সঠিক পথ না দেখিয়ে, তাদেরকে দ্বীন বিকৃত করে এরকম মানুষদের থেকে সতর্ক না করে ছেড়ে দেয়া জায়েজ নাই, বিশেষত যখন তার ক্ষমতা আছে।

এটা সেই আবশ্যক উপদেশের ক্যাটাগরিতে পড়বে যার সম্পর্কে হুজুর রাসুলুল্লাহ ﷺ নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। যদি কোন মানুষ সৎকাজের আদেশ দেয়া ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা বন্ধ করে দেয়, যখন তা তার ওপর আবশ্যক, তাহলে সে গোনাহ করল। আহলে সুন্নাতের উলামাগন, সেসব লোকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে গিয়ে অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন, যারা দ্বীনকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে।

এর অনেক প্রতিদান আছে তাদের জন্য। যদি এই আবশ্যক কাজটি কোন এলাকার সকল মানুষ যদি বাদ দিয়ে দিত তবে তারা সকলেই আল্লাহ তায়ালার সাহায্য হারাত।

সতর্ক হোন! যদি কাউকে বলতে শুনেন "ইয়া রাসুলাল্লাহ ﷺ" বলা জায়েজ নাই তবে তার কথাতে কান দিবেন না। জবাব দিন। তাকে অন্ধ সাহাবি আতাবি (রাঃ)র হাদিসখানা শুনান। এটা ধর্মের পক্ষে আপনার একটা সেবা হবে।

আমরা এখন একগুচ্ছ দলিল দেব এটা প্রমাণ করতে যে ইয়া রাসুলাল্লাহ ﷺবলা সাহাবায়ে কেরাম, তাবিইন, মুজতাহিদ ইমামগনের ও আওলিয়াগন রাদিয়াল্লাহু আনহুম এর এবং সুন্নি উলামা ও নেতৃত্বের  সুন্নাত।

 কুরআন মাজিদের আলোকেঃ
-------------------------------------------
হুজুর রাসুলুল্লাহ ﷺ কে তাঁর মনোযোগ আকর্ষনের নিয়তে আহবান করা কুরআন মাজিদে উল্লেখিত ফেরেশতা এবং উম্মাতের রুসুম রেওয়াজ উল্লেখের মাধ্যমে প্রমাণিত।

কুরআন মাজিদ অনেক জায়গায় হুজুর রাসুলুল্লাহ ﷺকে মনোযোগ আকর্ষনের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্যে এবং পরিস্থিতিতে ডেকেছে, যখন কোন বিষয়ে হুজুর রাসুলুল্লাহ ﷺর দৃষ্টি আকর্ষণ জরুরী ছিল কোন সমস্যা সমাধানের জন্য অথবা কিছু বাস্তবায়ন করার প্রয়োজনে। আহবান করার সেই বাক্যগুলো হচ্ছে, ইয়া আইয়্যুহাল মুজ্জাম্মিল, ইয়া আইয়্যুহাল মুদ্দাসসিরু, ইয়া আয়্যিউহান নাবিয়্যু, ইয়া আইয়ুহার রাসুল ইত্যাদি। 

ঠিক একইভাবে অন্যান্য সম্মানিত নবীগন যাদেরকে ইয়া শব্দ দ্বারা আহবান করা হয়েছে তারা হলেন, ইয়া মুসা, ইয়া ইসা, ইয়া ইয়াহিয়া, ইয়া দাউদ, ইয়া নুহু (আলাইহিমুস সালাম) ইত্যাদি।

 হাদিস শরিফ থেকে স্বাক্ষ্যঃ
------------------------------------------
 ১.ইমাম তাবরানী রাহঃ (ওফাত ৩৬০ হিঃ, ৯৭০ খ্রী) তার মু'জামে নিম্নবর্ণিত ঘটনাটি বর্নণা করেনঃ

أن رجلا كان يختلف إلى عثمان بن عفان رضي الله عنه في حاجة له ، فكان عثمان لا يلتفت إليه ، ولا ينظر في حاجته ، فلقي عثمان بن حنيف ، فشكا ذلك إليه ، فقال له عثمان بن حنيف : ائت الميضأة فتوضأ ، ثم ائت المسجد فصل فيه ركعتين ، ثم قل : اللهم ، إني أسألك وأتوجه إليك بنبينا محمد صلى الله عليه وآله وسلم نبي الرحمة يا محمد إني أتوجه بك إلى ربك عز وجل فيقضي لي حاجتي ، وتذكر حاجتك ، ورح إلي حتى أروح معك ، فانطلق الرجل ، فصنع ما قال له عثمان ، ثم أتى باب عثمان فجاء البواب حتى أخذ بيده ، فأدخله على عثمان بن عفان ، فأجلسه معه على الطنفسة ، وقال : حاجتك ؟ فذكر حاجته ، فقضاها له ، ثم قال له : ما ذكرت حاجتك حتى كانت هذه الساعة ، وقال : ما كانت لك من حاجة ، فأتنا ، ثم إن الرجل خرج من عنده ، فلقي عثمان بن حنيف ، فقال : له جزاك الله خيرا ، ما كان ينظر في حاجتي ، ولا يلتفت إلي حتى كلمته في ، فقال عثمان بن حنيف : والله ، ما كلمته ولكن شهدت رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم وأتاه ضرير ، فشكا عليه ذهاب بصره ، فقال : له النبي صلى الله عليه وآله وسلم : أفتصبر ؟ ، فقال : يا رسول الله ، إنه ليس لي قائد ، وقد شق علي ، فقال له النبي صلى الله عليه وآله وسلم : ائت الميضأة، فتوضأ ، ثم صل ركعتين ، ثم ادع بهذه الدعوات قال عثمان بن حنيف : فوالله ، ما تفرقنا وطال بنا الحديث حتى دخل علينا الرجل كأنه لم يكن به ضرر قط

এক লোক খলিফতুল মুসলিন আমিরুল মুমিনিন হজরত ওসমান ইবনে আফফান রাঃ এঁর দরবারে যেত কোন একটা প্রয়োজনে। কিন্তু ওসমান রাঃ তার দিকে তাকাতেন না। তার প্রয়োজনের দিকেও দৃষ্টি দিতেন না। অতঃপর ঐ ব্যক্তির সাক্ষাৎ হয় অপর সাহাবি হজরত  ওসমান বিন হানিফ রাঃ এঁর সাথে। ঐ ব্যক্তি ওসমান বিন হানিফ রাঃ এঁর কাছে এই বিষয়টি বললেন। অতঃপর ওসমান বিন হানিফ রাঃ ঐ ব্যক্তিকে বললেন, তুমি ওজুখানায় যাও, ওজু কর, অতঃপর মসজিদে যাও, দুই রাকায়াত নামাজ পড়, তারপর বল, "হে আল্লাহ! আমি আপনার দিকে মুখ করছি আমাদের নবী মুহাম্মদ ﷺ  র মাধ্যমে যিনি রহমতের নবী, ইয়া মুহাম্মাদﷺ! আমি আপনার মাধ্যমে আপনার প্রভূ আজ্জা ওয়া জাল্লার দিকে মুখ করছি, অতঃপর প্রয়োজনটি পূরণ করুন।" এখন তুমি তোমার প্রয়োজনটি উল্লেখ কর। অতঃপর তুমি যাও আমিও তোমার সাথে যাব। ঐ লোকটি গেল, ওসমান ইবনে হানিফ রাঃ যা বলেছিলেন তা করল এবং খলিফা ওসমান ইবনে আফফান রাঃ এঁর দরজার কাছে আসল।

দারোয়ান ঐ ব্যক্তিকে হাতে ধরে সরাসরি ওসমান রাঃ এঁর কাছে নিয়ে গেল। তিনি অনেক সম্মান পেলেন, এবং খলিফা ঐ ব্যক্তিকে নিজের পাশে বসালেন, ধৈর্যের সাথে তার কথা শুনলেন এবং তার প্রয়োজন পুরা করলেন এবং বললেন, "তুমি আগে কেন তোমার প্রয়োজনের কথা বলনি? ভবিষ্যতে কিছু প্রয়োজন হলে সরাসরি আমার কাছে চলে আসবে।"

হজরত ওসমান রাঃ এঁর দরবার ত্যাগের পর ঐ ব্যক্তি ওসমান বিন হানিফ রাঃ কে ধন্যবাদ দিলেন, তার ব্যাপারে ওসমান রাঃ এঁর কাছে সুপারিশ করার জন্য। যাউহোক ওসমান বিন হানিফ রাঃ বললেন, আমি আপনার ব্যাপারে ওসমান রাঃ এঁর কাছে কিছুই বলিনি, কোন সুপারিশ করিনি।

ওসমান বিন হানিফ রাঃ বললেন, আল্লাহর কসম! আমি হুজুর রাসুলুল্লাহ ﷺকে এক অন্ধ ব্যক্তিকে(সাহাবি) এই দোয়া শেখাতে দেখেছি। অতঃপর অলৌকিকভাবে অন্ধ ব্যক্তির চোখ ভাল হয়ে গেল। অতঃপর সে আমাদের নিকট আসল এমনকি আমরা আমাদের আলোচনাও শেষ করতে পারলাম না। এমন মনে হলো যেন সে কখনো অন্ধ ছিলই না।

(তথ্যসূত্রঃ
১. তিরমিজি, হাদিস নং, ৩৫৭৮,
২.ইবনু মাজাহ, হাদিস নং-১৩৮৫,
৩.মুসনাদ আহমদ ৪/১৩৮ ,
৪.বোখারি, তারিখুল কাবিরে, ৬/২১০,
৫.সহিহ ইবনে খোজায়মা, হাদিস নং-১২১৯
৬.মুজামুল কাবির, তাবরাবি, খন্ডঃ৭, পৃষ্ঠা ৪১০, হাদিস নং ৮২৩২
৭.মুজামুস সাগির, তাবরাবি, খন্ডঃ২, পৃষ্ঠা ১০৬, হাদিস নং ৫০
৮.মাজমাউজ যাওয়ায়েদ, দারুল কুতুব, খন্ডঃ ২৷ পৃষ্ঠা, ২৭৯)

(চলবে ইন শা আল্লাহ)
 
Top