দ্বীন ইসলামের সাধারণ বিষয়াদি সম্পর্কিত কতিপয় প্রশ্নোত্তর 


وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْـنًا  (القرآن)

আর আমি তোমাদের জন্যে ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। ➥আল-কুরআন, সূরা মাইদাহ, আয়াতঃ ৩


بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ 

পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহ'র নামে আরম্ভ করছি

اِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ

নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন।➥আল-কুরআন, সূরা আল-ই-ইমরান, আয়াতঃ ১৯


দ্বীন কাকে বলে❓

দ্বীন হলো আল্লাহ্ প্রদত্ত নিয়ম-নীতি ও বিধান যা স্বীয় নবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। যেমন, আল্লাহ্ তাআলার গুণাবলী, নামায ও যাকাতের পরিচিতি।


উমুরুদ্দ্বীন তথা দ্বীনের অস্তিত্বের নিদর্শনসমূহ কি কি❓

উমুরুদ্দ্বীন তথা দ্বীনের অস্তিত্বের নিদর্শনসমূহ চারটি: 

১) বিশুদ্ধ আক্বীদা ২) একনিষ্ঠ নিয়ত ৩) ওয়াদা বা অঙ্গীকার পূরণ করা এবং ৪) নিষেধাজ্ঞা পরিহার করা। 


 مَاهُوَ الدِّيْـنُ ؟

اَلدِّيْنُ هُوَ مَاشَرَعَهٗ اللهُ عَلٰى لِسَانِ نَبِيِّه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْاَحْكَامِ. كَمَعْرِفَةِ صَفَاتِ اللهِ تَعَالٰى وَالصَّلٰوةِ، وَالزَّكَاةِ .


مَــاهِـىَ اُمُوْرُ الـدِّيْنِ اَىْ عَلَامَاتُ وَجُوْدِه؟

اُمُوْرُ الدِّيْنِ اَرْبَـعَةٌ : صِحَّةُ العَقْدِ اَىْ اَلْعَقِيْدَةُ وَصِدْقُ الْـقَـصْدِ وَالْوَفَاءُ بِالْعَهْدِ وَاِجْتِنَابُ الحَـدِّ .


আক্বীদার বিশুদ্ধতা অর্থ কি❓

এর অর্থ, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদাসমূহে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়া।


একনিষ্ঠ নিয়ত অর্থ কি❓

একনিষ্ঠ নিয়তের অর্থ, বিশুদ্ধ নিয়তে ইবাদত করা এবং একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতার সাথে আমল করা।


অঙ্গীকার পূরণ করা অর্থ কি❓

অঙ্গীকার পূরণ করা অর্থ, আল্লাহর আদেশসমূহ পালন করা বা এর প্রতি বশ্যতা ও আনুগত্য প্রকাশ করা।


শাস্তিযোগ্য অপরাধ পরিহার-এর অর্থ কি❓

নিষেধাজ্ঞা অর্জন অর্থ, আল্লাহ্ তাআলা যা নিষেধ করেছেন তা বর্জন বা পরিহার করা।


ইসলাম অর্থ কি❓

আল্লাহর পক্ষ থেকে স্বীয় প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) যা নিয়ে এসেছেন তা প্রকাশ্যভাবে স্বীকৃতি ও সম্মতি প্রদান করাকে ইসলাম বলে।     


   مَا مَعْنٰـى صِحَّةِ الْعَقْدِ ؟

مَعْنَاهُ الْجَـزَمُ بِعَقَائِدِ اَهْلِ السُّنَّةِ.

مَا مَعْنٰـى صِدْقِ الْقَـصْدِ ؟

مَعْنَاهُ اَلْعِبَادَةُ بِالنَّيَّةِ وَالْعَمَلُ بِالْاِخْلَاصِ .


مَا مَعْنٰـى الْوَفَاءِ بِالْعَهِدِ ؟

مَعْـنَاهُ اِمْـتِثَالُ مَا أَمَـرَ اللهُ بِـه .


مَا مَعْنٰـى اِجْتِنَابِ الْحَـدِّ ؟

مَعْنَاهُ تَرْكُ مَا نَهَـىٰ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ.


مَاهُـوَ الْاِسْـلَامُ ؟

اَلْاِسْلَامُ هُـوَالتَّسْلِيْمُ الظَّاهِرُ بِمَا جَاءَ مِنْ عِنْدِ اللهِ تَعَالٰى عَلٰى لِسَانِ حَبِيْبِه مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ .


ইসলামের শর্তসমূহ কি কি❓

ইসলামের শর্তসমূহ ছয়টি। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া, বোধশক্তি ও ভালমন্দ উপলব্ধি করার জ্ঞান, ইচ্ছের স্বাধীনতা, সক্ষম ব্যক্তি শাহাদাতাইন মৌখিকভাবে পাঠ করা, উপরোক্ত বিষয়াদিতে ধারাবাহিকতা ও অবিচ্ছিন্নতা বজায় রাখা।


ইসলামের মূল ভিত্তিসমূহ কি কি❓

ইসলামের মূল ভিত্তিসমূহ পাঁচটি। একথা সাক্ষ্য দেয়া আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই, নিশ্চয় সাইয়্যেদুনা মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল, নামায কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা, রমযান শরীফের রোযা রাখা ও কাবা শরীফে যাওয়া-আসায় সক্ষম ব্যক্তি হজ্ব করা।


ঈমান কি❓

নবী করীম (ﷺ) যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা বিশ্বাস করার নামই ঈমান। 


 مَاهِـىَ شُـرُوْطُ الْاِسْـلَامِ ؟

شُـرُوْطُ الْاِسْـلَامِ سِتَّةٌ- . اَلْبُلُوْغُ ، وَالْعَقْلُ، وَالْاِخْتِيَارُ، وَالنُّطْقُ بِالشَّهَادَتَيْنِ لِلْقَادِرِ عَلَيْهِمَا ، وَالتَّرْتِيْبُ وَالْمُوَالَاةُ .


مَاهِـىَ قَـوَاعِدُ الْاِسْلَامِ ؟

قَـوَاعِـدُ الْإِسْلَامِ خَمْسٌ : شَهَادَةُ اَنْ لَّا اِلٰــهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ سَيِّدَنَا مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ وَاِقَامُ الصَّلٰوةِ وَإِيْتَاءُ الزَّكوٰةِ، وَصَوْمُ رَمْضَانَ، وَحِـجُّ الْبَيْتِ لِـمَـنِ اسْتَطَاعَ اِلَيْهِ سَبِيْـلَا .


مَا هُـوَ الْاِيْـمَانُ ؟

الْاِيْمَانُ هُـوَ التَّصْدِيْقُ بِمَا جَآءَ بِـه النَّـبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَـلَّـمَ .


ঈমানের মূল ভিত্তিসমূহ কি কি❓

ঈমানের মূল ভিত্তিসমূহ ছয়টি। আল্লাহ্ তাআলা এবং তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর প্রদত্ত কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং পরকাল ও তাক্বদীরের ভাল-মন্দের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

শরীয়তের হুকুম পালনে আনুগত্যকারীদের জন্যে নিম্নে বর্ণিত আবশ্যকীয় আকাইদের বিধানসমূহ সম্পর্কে ওলামায়ে কিরামগণের অভিমত,

১. যে ঈমান ও ইসলাম উভয়ই যথাযথভাবে পালন করে সে পরিপূর্ণ মুমিন এবং যে উভয়ই বর্জন করে সে কাফির।

২. যে শুধু ইসলাম (আহকাম বাস্তবায়নে) বর্জন করে সে অপরিপূর্ণ মুমিন।

৩. যে শুধু ঈমান (আক্বীদা-বিশ্বাস) বর্জন করে সে মুনাফিক।

৪. আল্লাহর ওপর ঈমানের অর্থ হলো, আল্লাহ একক হওয়ার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস রাখা, তাঁর সত্তা, গুণাবলী ও কার্যক্রমের কোন উপমা নেই এবং তাঁর প্রভূত্বে একত্ববাদে কোন শরীক নেই।

৫. ফেরেশতাদের ওপর ঈমানের অর্থ হলো, তাঁরা সকলই সম্মানিত, কোন অবস্থাতে  


مَاهِـىَ قَـوَاعِـدُ الْاِيْـمَانِ ؟

قَوَاعِـدُ الْاِيْمَانِ سِـتَّـةٌ . وَهِـىَ: اَلْاِيْمَـانُ بِاللهِ تَعَالٰي وَمَـلَائِكَتِـه وَكُتُبِـه وَرُسُـلِـه وَالْيَـوْمِ الْآخِـرِ وَالْقَدْرِ خَـيْـرِه وَشَـرِّه . 

قَالَ الْعُلَمَاءُ فِيْمَا يَلْزِمُ الْمُكَلَّفُ مِنَ الْاُمُـوْرِ الْاِعْتِقَادِيَّـةِ الْاٰتِيَـةِ :

১. مَنْ اَتَـىٰ بِالْاِيْمَانِ وَالْاِسْلَامِ جَمِيْعًا فَهُوَ مُـؤْمِنٌ كَامِلٌ وَمَنْ تَـرَكَهُمَا جَمِيْعًا فَهُوَ كَافِـرٌ . 

২২২.২ وَمَنْ تَـرَكَ الْاِسْلَامَ وَحَـدَهُ فَـهُوَ مُـؤْمِنٌ نَاقِـصٌ .

৩৩.  وَمَـنْ تَـرَكَ الْاِيْـمَانَ وَحَـدَهُ فَهُوَ مُنَافِـقٌ .

৪৪.  وَمَعَـنٰـى الْاِيْمَانِ بِاللهِ . اِعْتِقَادُ اَنَّـهُ وَاحِـدٌ لَا نَـظِيْـرَلَـهُ فِـىْ ذَاتِـه وَصَـفَاتِـه وَافَـعَالِـه ، وَلَا شَـرِيْكَ لَـه فِـىْ الْأُلُـوْهِـيَّـةِ .

৫১৫.  وَمَـعَـنىٰ الْاِيْمَانِ بِالْـمَلَائِـكَـةِ .


আল্লাহ'র অবাধ্য হয় না, সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ তাআলার হুকুম যথাযথ পালন করেন এবং তাঁর (আল্লাহর) সংবাদ প্রদানে সততা অবলম্বন করেন।

৬. কিতাব সমূহের ওপর ঈমানের অর্থ হলো, ইহা আল্লাহর চিরস্থায়ী বাণী- যা তাঁর সত্তার সাথে বর্ণ ও স্বর বিহীন বিদ্যমান, এতে সকল বিষয়াদি সত্য। আল্লাহ তাআলা তাঁর বিশেষ রাসূলগণের ওপর অস্থায়ী শব্দাবলীর মাধ্যমে অবতীর্ণ করেছেন।

৭. রাসূলগণের ওপর ঈমানের অর্থ হলো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে সৃষ্টি জগতের প্রতি প্রেরণ করেছেন এবং তাঁদেরকে সর্বপ্রকারের দোষ-ত্রুটি থেকে পুতঃপবিত্র করেছেন। অতএব তাঁরা নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বাপর নিষ্পাপ ও নিষ্কলুষ।

৮. পরকালের ওপর ঈমানের অর্থ হলো, মৃত থেকে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত সময়ের অস্তিত্বকে বিশ্বাস করা এবং এতে সংঘটিত বিষয়াদি যেমন মুনকার-নকীর ফেরেশতাদ্বয়ের প্রশ্ন, কবরের নিয়ামত ও আযাব(শাস্তি), পুনরুজ্জীবন, পরিণাম, প্রতিদান, হিসাব-নিকাশ, মিজান, পুলসিরাত, স্বর্গ-নরক সকল বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

৯. কদরের ওপর ঈমান রাখার অর্থ হলো, আদি দিবসে নির্ধারিত বিষয়াদি অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে এবং অনির্ধারিত বিষয়াদি কখনো অস্তিত্ব লাভে সক্ষম নয়। আল্লাহ্ তা‘আলা ভাল-মন্দ উভয়ই জগত সৃষ্টির পূর্বে নির্ধারিত ও সিদ্ধান্ত মোতাবেক সৃষ্টি করেছেন। আর সমগ্র জগত তাঁর (আল্লাহর) নির্ধারিত সিদ্ধান্ত ও ফয়সালা মোতাবেক অবস্থিত।
 
Top