হাদিস পর্যালোচনাঃ হযরত ফাতেমা (عليه السلام) আমার (ﷺ) সত্তার অংশ।


বুখারী বর্ণনা করেছেন : আবুল ওয়ালিদ, ➠ আবু উয়াইনা থেকে ➠ তিনি আমর ইবনে দিনার থেকে ➠ তিনি ইবনে মুলাইকা থেকে ➠ তিনি মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, মহানবী (ﷺ) বলেছেন, 

‘ফাতেমা আমার সত্তার অংশ। যে কেউ তাকে অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত করল,সে আমাকেই অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত করল।’

[সহীহ বুখারী,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ২১০, ‘মানাকিবুল মুহাজিরিন ওয়া ফাযলুহুম’ অধ্যায়, দারুল ফিকর প্রকাশনী, বৈরুত, প্রকাশকাল ১৪০১ হিজরি।]


মুসলিম বর্ণনা করেছেন : আবু মুয়াম্মার ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম আল হাযালি,➠সুফিয়ান থেকে,➠তিনি ইবনে আবি মুলাইকা থেকে ➠ আবি মুলাইকা মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন : ‘ফাতেমা আমার অস্তিত্বের অংশ,যে তাকে কষ্ট দিল সে আমাকেই কষ্ট দিল।’

[সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,পৃ. ১৪১,দারুল ফিকর প্রকাশনা,বৈরুত।]


আহমদ ইবনে শুয়াইব নাসায়ী তাঁর ‘ফাযায়েল’ গ্রন্থে মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে,মহানবী (ﷺ) বলেছেন : 

‘নিশ্চয় ফাতেমা আমার অস্তিত্বের অংশ,যে তাকে ক্রোধান্বিত করল,সে আমাকেই ক্রোধান্বিত করল।

[নাসায়ী, ফাযায়েলুস সাহাবা, পৃ. ৭৮, দারুল কুতুব আল- ইলমিয়া, বৈরুত।]


হাকিম স্বীয় সূত্রে মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (رضي الله عنه) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন : 

‘ফাতেমা আমার অস্তিত্বের অংশ। যা তাকে অসন্তুষ্ট করে আমিও তাতে অসন্তুষ্ট হই এবং যা তাকে আনন্দিত করে আমিও তাতে আনন্দিত হই।’

[মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৫৮,দারুল ফিকর,বৈরুত,১৩৯৮ হিজরি।]


রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন : ‘নিশ্চয় ফাতেমা আমার মাংসপিণ্ড।’

[আবদুর রহমান আস সোহাইলী, আর-রাউজুল আনিফ ফি শারহিস সিরাতিন্নাবাভীয়া লি ইবনে হিশাম,২য় খণ্ড,পৃ. ২৮৮]


হাকেম তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন : আবুল আব্বাস মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকুব,➠হাসান ইবনে আলী ইবনে আফ্ফান আল আমেরী থেকে,➠তিনি কুফার অধিবাসী মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে দুহাইম থেকে,➠তিনি আহমাদ ইবনে হাতিম থেকে,➠তিনি তাঁর পিতার সূত্রে ➠আলী ইবনে হুসাইন থেকে এবং তিনি তাঁর পিতার সূত্রে ➠ আলী ইবনে আবি তালিব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ফাতেমাকে বলেন : 

"নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমার ক্রোধে ক্রোধান্বিত হন এবং তোমার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট হন।"

[হাকেম নিশাবুরী, আল- মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন, ৩য় খণ্ড,পৃ. ১৫৩]


হাকেম এ হাদীসটির টীকায় বলেন : ‘হাদীসটি সহীহ সূত্রে বর্ণিত। 


যাহ্হাক বর্ণনা করেছেন : আবদুল্লাহ্ ইবনে সালিম আল-মাফলুয,➠ যিনি সর্বজন প্রশংসিত ব্যক্তি ছিলেন,➠ তিনি হুসাইন ইবনে যাইদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব থেকে,➠ তিনি উমর ইবনে আলী ইবনে জাফর ইবনে মুহাম্মাদ থেকে,➠ তিনি তাঁর পিতার সূত্রে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, মহানবী (ﷺ) ফাতেমা (رضي الله عنه) কে বলেন : 

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমার ক্রোধে ক্রোধান্বিত এবং তোমার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট হন।’

[আল-আহাদ ওয়াল মাসানী, ৫ম খণ্ড,পৃ. ৩৬৩]


তাবারানী বর্ণনা করেন : মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ্ আল হাদরামী,➠আবদুল্লাহ্ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে সালিম আল-কাবযাজ হতে,➠তিনি হুসাইন ইবনে যাইদ ইবনে আলী হতে,➠তিনি আলী ইবনে উমর ইবনে আলী হতে,➠তিনি জাফর ইবনে মুহাম্মাদ হতে,➠তিনি তাঁর পিতা হতে,➠তিনি আলী ইবনে হুসাইন হতে,➠তিনি হুসাইন ইবনে আলী (رضي الله عنه) হতে, ➠তিনি আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ ফাতেমা (رضي الله عنه) কে বলেন : 

‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমার ক্রোধে ক্রোধান্বিত হন এবং তোমার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট হন।’

[আল-মোজামুল কাবীর,১ম খণ্ড,পৃ. ১০৮]


হাইসামী বলেন : হাদীসটি তাবারানী হাসান সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

[মাজমাউয যাওয়ায়িদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়িদ,৯ম খণ্ড,পৃ. ২০৩]

 

সালিহী আশ-শামীও হাদীসটির সনদকে হাসান বলেছেন। 

[সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফি সিরাতি খাইরিল ইবাদ,১১তম খণ্ড,পৃ. ৪৪]


প্রথমটি হলো ‘ফাতিমা আমার অংশ বা আমার অস্তিত্বের অংশ’। হাদীসটিতে ‘বাদআ’ বা ‘বিদআ’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। ইবনে কাসীর বলেন : ‘বাদআতুন’ অর্থ মাংসের টুকরা বা অংশ। কখনও কখনও এটি ‘বিদআতুন’ও উচ্চারিত হয়ে থাকে। উভয় ক্ষেত্রেই বাক্যটির অর্থ ‘সে আমার অংশ।’ যেহেতু কারো মাংসের টুকরা তার দেহের ও তার সত্তার অংশ বলে গণ্য সেহেতু হাদীসটির ‘বিদআতুন’ শব্দকে অস্তিত্বের অংশ বা সত্তার অংশ অর্থ করা যায়।

[আন-নিহায়া ফি গারীবিল হাদীস,১ম খণ্ড,পৃ. ১৩৩,দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া,বৈরুত,১৪২৩ হিজরি।]


ইবনে মানযুর বলেন : ‘অমুক অমুকের অংশ, এর অর্থ সে তার অনুরূপ।’ অতঃপর তিনি আলোচ্য হাদীসটিকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

[লিসানুল আরাব,‘বাদ’ ধাতুমূল।]


‘ফাতেমা আমার অস্তিত্বের অংশ’ হাদীসটি আমাদেরকে রাসূল (ﷺ)-এর হযরত আলী (عليه السلام) সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে বলা এ হাদীসটির কথা স্মরণ করিয়ে দেয় : 

‘আলী আমার থেকে এবং আমি আলী থেকে।’


[হাদীসটি ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিসদের (হাদীস বিশেষজ্ঞদের) অনেকেই বর্ণনা করেছেন। যেমন তাবারী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ২য় খণ্ড,পৃ. ৫১৪; ইবনে আসীর, আল-কামিল ফিত তারিখ; ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগা,১০ম খণ্ড,পৃ. ১৮২; তারিখে মাদিনাতে দামেস্ক, হযরত আলীর পরিচিতি পর্বে,১ম খণ্ড,পৃ. ১৪৮-১৫০;আল আগানী,১৪তম খণ্ড,পৃ. ১৭। হাদীস গ্রন্থের মধ্যে সহীহ তিরমিযী,৫ম খণ্ড,পৃ. ৬৩৬,হাদীস নং ৩৭১৯;সুনানে ইবনে মাজা,১ম খণ্ড,পৃ. ৪৪,হাদীস নং ১১৯;আল-মুসনাদ,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১৬৪,মুসনাদে আহমাদ, গবেষণা : হামযা আহমাদ আযযাইন,১৬তম খণ্ড,পৃ.৪৯৭,হাদীস নং ২২৯০৮; সুয়ূতী,তারিখুল খুলাফা,পৃ. ১৬৯;তাবারানী,আল মোজামুল কাবীর,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১৬;মাকতাবাতু ইবনে তাইমিয়া প্রকাশনা,কায়রো,দারু ইহয়িয়াউত তুরাসিল আরাবি ছাপাখানা,বৈরুত।]


আহমদ ইবনে শুয়াইব নাসায়ী তাঁর ‘ফাযায়েল’ গ্রন্থে ইমরান ইবনে হুসাইন সূত্রে মহানবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি বলেন : ‘নিশ্চয় আলী আমার থেকে এবং আমি আলীর থেকে এবং সে আমার পর সকল মুমিনের অভিভাবক।’ [ফাযায়িলুস সাহাবা,পৃ. ১৫।]


এ কারণেই তিরমিযী হাদীসটিকে ‘হাসান’,‘গারীব’ ও ‘সহীহ’ বলে অভিহিত করেছেন।

[তিরমিজী,৫ম খণ্ড,পৃ. ৩০০]



 
Top