একবার মদীনাবাসী ভীষণ অনাবৃষ্টির কবলে পড়েছিল। লোকজন আম্মাজান আয়িশা রাঃ এঁর নিকট অভিযোগ করলে তিনি বলেন, নবী ﷺ এঁর রওজার দিকে দেখ, আর তাতে আসমানের দিকে একটি ফুটো করে দাও, যেন আসমান ও তাঁর মাঝে কোনো আচ্ছাদন না থাকে। তিনি বলেন, তখন তারা তা-ই করলো। ফলে মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হল। সেই বৃষ্টিতে এত বেশি ঘাস জন্মেছিল যে, উট হৃষ্টপুষ্ট হয়ে মনে হয় যেন চর্বিতে ফেটে পড়বে। ফলে সেই বছরের নামকরণ করা হয়েছিল ‘উর্বরতার বছর’।
(সুনান আদ-দারেমী ৯৩, মিশকাত ৫৯৫০)

সনদ: “আবূ নুয়াইম রঃ এই বর্ণনা শুনেছিলেন সাঈদ ইবনে যায়দ রঃ হতে; তিনি আ’মর ইবনে মালেক আল-নুকরী রঃ হতে; তিনি হযরত আবূল জাওযা আউস্ বিন আবদুল্লাহ রঃ হতে, যিনি এটি বর্ণনা করেন।

*ইমাম দারেমী রহঃ এটি বর্ণনা করেছেন, সুনান আদ দারেমীর ভূমিকা অধ্যায়ের "ওফাতের পর নবী ﷺ কে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক সম্মান দেয়া" নামক পরিচ্ছেদে।

* ইবনে আল-জাওযী, আল-ওয়াফা’ বি-আহওয়ালিল্ মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) [২:৮০১]

* ইমাম তাকিউদ্দীন সুবকী রহঃ কৃত ‘শেফাউস্ সেকাম ফী যেয়ারাতে খায়রিল আনাম’ [১২৮ পৃষ্ঠা]

* ইমাম কাসতালানী রহঃ প্রণীত ‘আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ’ [৪:২৭৬]; এবং ইমাম যুরকানী মালেকী রহঃ ‘শরহে মাওয়াহিব’ [১১:১৫০]

*কিন্তু কুখ্যাত আলবানী মিশকাতের তাহক্বীক্বে (কিতাবুল ফাযাইল ওয়াশ শামাইল, বাবুল কারামাত, হাদিস নং ৫৯৫০) বলেন, যয়ীফ। ইবনু তাইমিয়া একে বাতিল বলে তাহক্বীক্ব করেছে।


*অথচ শায়খ মুহাম্মদ ইবনে আলাভী আল মালেকী আল হাসানী রহঃ বলেন, “এই রওয়ায়াতের এসনাদ ভাল; বরঞ্চ, আমার মতে, এটি সহীহ (বিশুদ্ধ)। উলেমাবৃন্দ এর নির্ভরযোগ্যতার বিষয়টি সমর্থন করেছেন এবং প্রায় সমকক্ষ বিশ্বস্ত প্রামাণিক দলিল দ্বারা এর খাঁটি হবার বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করেছেন।” [শেফা’উল ফু’য়াদ বি-যেয়ারতে খায়রিল এ’বাদ, ১৫৩ পৃষ্ঠা]

উল্লেখ্য যে, প্রিয় নবী ﷺ এঁর বংশধর, সৌদি আরবের সম্মানিত স্কলার, শায়খ মুহাম্মদ ইবনে আলাভী আল মালেকী আল মক্কী (রহঃ) দীর্ঘ ৩২ বছর যাবৎ হেরেম শরীফে দরস প্রদান করেন। 



আরো মনে করিয়ে দিতে চায়,

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ তোমাদের কাছে আমি এমন (দুটি) জিনিস রেখে যাচ্ছি যা তোমরা শক্তরূপে আঁকড়ে ধরলে আমার পরে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তার একটি অন্যটির তুলনায় বেশি মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণঃ (একটি হল) আল্লাহ তা'আলার কিতাব যা আকাশ হতে মাটি পর্যন্ত দীর্ঘ এক রশি এবং (অন্যটি) আমার আহলে বাইত। এ দুটি কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না কাউসার নামক ঝর্ণায় আমার সঙ্গে একত্রিত না হওয়া পর্যন্ত। অতএব তোমরা লক্ষ্য রেখ আমার পরে উভয়ের সঙ্গে কিভাবে আচরণ কর।

(সূনান আত তিরমিজী ৩৭৮৮)

হায়!! বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তথাকথিত শায়খুল ইসলাম ঐ হাদিসকে এত সহজে বাতিল করে দিল আর কেউ এত সহজে যয়ীফ বানিয়ে দিল!! পারবে কি বুখারী মুসলিমের এগুলোকে বানোয়াট বলতে???

আবদুল্লাহ ইবনু মাওহাব (র.) বলেন, আমাকে আমার পরিবারের লোকেরা এক পেয়ালা পানিসহ উম্মু সালামাহ্‌র কাছে পাঠাল। (উম্মু সালামাহ্‌ রা. কাছে রক্ষিত) একটি পানির পাত্র হতে (আনাসের পুত্র) ইসরাঈল তিনটি আঙ্গুল দিয়ে কিছু পানি তুলে নিল। ঐ পাত্রের মধ্যে নবী ﷺ এঁর কয়েকটি চুল ছিল। কারো চোখ লাগলে কিংবা কোন রোগ দেখা দিলে, উম্মু সালামাহ্‌র নিকট হতে পানি আনার জন্য একটি পাত্র পাঠিয়ে দিত। আমি সে পাত্রের মধ্যে একবার তাকালাম, দেখলাম লাল রং-এর কয়েকটি চুল।

(সহিহ বুখারী ৫৮৯৬)

আসমা (রাঃ) এঁর নিকট রাসুলুল্লাহ ﷺ এঁর ব্যবহৃত জুব্বা ছিল। তিনি বলেন, এটি আয়িশা (রা.) এঁর ওফাতের পূর্ব পর্যন্ত তাঁর কাছেই ছিল। তাঁর ওফাতের পর আমি এটি নিয়েছি। নবী ﷺ এটি পরিধান করতেন। তাই আমরা রোগীদের শেফা হাসিলের জন্য এটি ধৌত করি এবং সে পানি তাদের কে পান করিয়ে থাকি। 
(সহীহ মুসলিম ৫৩০২)

আরোগ্যদাতা, বৃষ্টিদাতা হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা। এগুলো হচ্ছে উসিলা। যেভাবে আল্লাহ তায়ালা ওষুধের মধ্যে আমাদের জন্য শেফা রাখেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

"ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহকে ভয় কর, উসিলা (তাঁর নৈকট্য লাভের উপায়) অন্বেষণ কর এবং তার পথে জিহাদ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। 
(সূরা মায়িদাহঃ ৩৫)

প্রিয় নবী ﷺ এঁর ওফাতের পর সাহাবায়ে কেরাম যে, তাঁর দরবারে গিয়ে আরজি জানাতেন, এ প্রসঙ্গে আরো হাদিস বর্ণনা করেন বুখারীর প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকার ইবনে হাজর আসকালানী রহঃ সহিহ বুখারীর ১০১০ হাদিস (যে হাদিসে হযরত উমার রাঃ নবীজির চাচা হযরত আব্বাস রাঃ এঁর উসিলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন বলে উল্লেখ আছে) এর ব্যাখ্যায়।

মদিনাবাসীগণ একবার হযরত উমার (রা.) এঁর খেলাফতকালে অনাবৃষ্টির কারনে দূর্ভিক্ষে পতিত হন। হযরত বেলাল ইবনে হারেছ (রা.) নামক জনৈক সাহাবী নবী করিম ﷺ-এঁর রওজা মােবারকে গিয়ে আরজ করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ﷺ! আপনার উম্মতেরা ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছে। আপনি তাঁদের জন্য বৃষ্টির দোয়া করুন। অতঃপর রাত্রে স্বপ্নে এসে নবী করিম ﷺ বেলাল (রা.) কে বললেনঃ তুমি উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) এঁর নিকট গিয়ে আমার সালাম জানিয়ে বলো- তাঁরা বৃষ্টি পাবে। স্বপ্ন দেখে বেলাল ইবনে হারেছ (রা.) হযরত উমার (রা.) কে এ শুভ সংবাদ দিলেন। হযরত উমার (রা.) এ সংবাদ শুনে কেঁদে ফেললেন। মদিনাবাসীগণ রহমতের বৃষ্টি লাভ করলেন।”

(মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ হা/৩২৬৬৫/৩২০০২, ইমাম বায়হাক্বীঃ দালায়েলুন নবুয়াত, হা/ ৩০৩০/ ২৯৭৪, ফাতহুল বারী শরহে বুখারী, ১০১০ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে ধোঁকাবাজদের থেকে হেফাজত করুক।

 
Top