সমস্ত নবীগণ নিষ্পাপ ছিলেন


৭. নবিগণের নিষ্পাপ হওয়া আবশ্যক। নিষ্পাপ হওয়াটা একমাত্র নবি ও ফিরেশতাগণের বৈশিষ্ট্য। নবি ফিরেশতা ব্যতীত কেই নিষ্পাপ নয়। শরীয়তের ইমামদের নবিদের মতো নিষ্পাপ মনে করাটা গোমরাহী ও ধর্মহীনতার পরিচায়ক। ইসমতে আম্বিয়া বা নবিগণ নিষ্পাপ হওয়া মানে আল্লাহ তাঁদেরকে পাপমুক্ত রাখার জন্য ওয়াদাবদ্ধ। কিন্তু ইমাম ও পীর-আওলিয়াদের জন্য এ রকম কোন ওয়াদা নেই। তাই নবিদের থেকে গুনাহ প্রকাশ পাওয়াটা অসম্ভব। (আরবাঈন, ৩২৯পৃ.)


শয়তানের জন্য নির্দিষ্ট কিছু স্পেশাল বান্দা রয়েছেন যাদের শয়তান কখনই মন্দ কাজ তো দূরের কথা তাদের অন্তরে খারাপ ধারণাও সৃষ্টি করতে শয়তান সক্ষম নয়। মহান আল্লাহ তা‘য়ালা তাদেরকে হিফাযত করেন, আর তা ইরশাদ করেন এভাবে-

إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ  

-‘‘ওহে ইবলিশ, আমার বিশিষ্ট বান্দাদের উপর তোমার কোন কর্তৃত্ব নেই।’’ 

➤সুরা হিজর,আয়াত ৪২

 

শয়তান নিজেই স্বীকার করেছিল-

وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ (৩৯) إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ

-‘‘হে মওলা, তোমার বিশিষ্ট বান্দাগণ ব্যতীত বাকী সবাইকে বিপদগামী করবো।’’ 

➤সুরা হিজর,আয়াত ৩৯-৪০

 

হযরত ইউসুফ (عليه السلام) নবীগণের চরিত্র সম্পর্কে বলেছেন-

وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِي إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي إِنَّ رَبِّي

-‘‘আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না। মানুষের মন অবশ্যই মন্দকর্ম প্রবণ। তবে (তারা ছাড়া) যার প্রতি আল্লাহর দয়া রয়েছে।’’  

➤সুরা ইউসুফ,আয়াত ৫৩


আল্লামা মোল্লা জিওন (رحمة الله) সূরা বাক্বারার ১২৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-

انَّهُمْ مَعْصُومونَ عَن الكُفْر قَبْل الوحى وَ بَعَده باجماع

-‘‘নবীগণ ওহী প্রাপ্তির আগে ও পরে কুফুরী থেকে পূতঃপবিত্র থাকেন।’’  

➤মোল্লা জিওন, তাফসীরে আহমদিয়া, ২১২ পৃষ্ঠা,


তিনি এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আরও বলেন-

لاخلاف لاحد فى ان نبينا عليه السلام لم يرتكب صغيرة ولاكبيرة طرفة عين قبل الوحى وبعده كما ذكره ابو حنيفة فى الفقه الاكبر. –

-‘‘এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই যে, আমাদের নবী (ﷺ) নবুয়াতের আগে বা পরে এক মুহূর্তের জন্যও সগীরা বা কবীরা কোন প্রকারের গুনাহে লিপ্ত হননি, যেমন ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) তাঁর ফিকহুল আকবারে উল্লেখ করেছেন।’’  

➤মোল্লা জিওন, তাফসীরে আহমদিয়া, ২১৩পৃ


আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) সুরা শূরা এর ১৫২ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-

يدل عليه انه عليه السلام قيل له هل عبدت وثنا قط قال لاقيل هل شربت خمرا قط قال لافمازلت اعرف ان الذى هم عليه كفر-

-‘‘হুযুর (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আপনি কখনও মূর্তি পূজা করে ছিলেন? তিনি ইরশাদ ফরমান-‘না’। ‘‘আপনি কখনও শরাব পান করেছিলেন?’’ ফরমালেন-‘না, আমি তো সবসময় জানতাম যে, আরববাসীদের এ আচরণ কুফরী।’’  

➤ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রুহূল বায়ান, ৮/৩৪৭ পৃষ্ঠা,দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।


তিনি এ হাদিসটিকে হুবহু হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে মারফু সূত্রে সংকলন করেছেন এভাবে-

قال على رضى الله عنه قيل للنبى عليه السلام هل عبدت وثنا قط قال لا قيل هل شربت خمرا قط قال لا وما زلت اعرف ان الذي هم اى الكفار عليه كفر

-‘‘হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ)‘র কাছে একদা এক ব্যক্তি জানতে চাইলেন.....উপরের হাদিসের মত।’’ 

➤ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রুহূল বায়ান, ৫/৩৫৮ পৃষ্ঠা, ও ৮/৭৫ পৃষ্ঠা,প্রাগুক্ত, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল  উম্মাল, ১২/৪৮৭ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৩৫৫৯৮

 

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী (رحمة الله)‘র ‘জা‘আল হক’ ২য় খন্ডের (বাংলা) ২৮৬-৩১৪ পৃষ্ঠা দেখুন।

 
Top