কিতাবঃ বায়াত ও খিলাফতের বিধান (১ম অধ্যায়) 

মূলঃ ইমাম আ'লা হযরত (রহঃ)

Text : ফাতিমাতুজ যুহরা শাকিলা



                    ﷽

            نَحمَدُهُ وَنُصَلِّی وَنُسَلِّمُ عَلَي رَسُولِهِ الکَرِیمِ         


                                [১]

পবিত্র ইসলামী শরীয়তে সব কিছুই বিদ্যমান

     পবিত্র কুরআন ও হাদীসের মধ্যে শরীয়ত, তরীকত ও হাকীকত ইত্যাদি সব কিছুরই বর্ণনা রয়েছে। ওই সবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট ও সহজ হচ্ছে শরীয়তের বিধানাবলী। আর শরীয়তের অবস্থা তাে হচ্ছে এই যে, যদি মুজতাহিদ-ইমামগণ। শরীয়তের ব্যাখ্যা না করতেন, তবে আলিমগণ কিছুই বুঝতেন না । আর সম্মানিত আলিমগণ যদি মুজতাহিদ-ইমামগণের ইজতিহাদের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ না করতেন তবে আমরা সাধারণ আলিমগণ ইমামগণের ইরশাদসমূহ বুঝতেও অক্ষম হতাম । আর যদি সাধারণ আলিমগণ সাধারণ লােকের (عوام) সামনে ইসলামী কিতাবসমূহের ব্যাখ্যা এবং ইমামগণের বিভিন্ন মতানৈক্যের মধ্যে সামাঞ্জস্য বিধান না করতেন তবে সাধারণ লােক কখনাে কিতাবসমূহ থেকে শরীয়তের বিধি-বিধানসমূহ বের করে আমল করতে সক্ষম হতাে না বরং হাজারাে ভুল করে বসতাে এবং একটির স্থলে অন্যটি বুঝে বসতাে।


শরীয়তের অনুসরণে সাধারণ লােকের করণীয়।

     সুতরাং এ পরম্পরা নির্ধারিত হলাে যে, এ যুগের সাধারণ লােক আলিমে দ্বীনের শরণাপন্ন হবেন, আর আলিমগণ দ্বারস্থ হবেন বিজ্ঞ-আলিমগণের গ্রন্থাবলীর উপর আর বিত্ত-গ্রন্থপ্রণেতাগণ মাশায়িখে কিরামগণের ফতওয়ার উপর নির্ভর করবেন, মাশায়িখে কিরাম দ্বারস্থ হবেন হিদায়তের উপর প্রতিষ্ঠিত মুজতাহিদ ইমামগণের ওপর আর মুজতাহিদগণ নির্ভর করবেন কুরআন ও হাদীসের উপর । সুতরাং যে ব্যক্তি এ পরম্পরার যে কোন পর্যায় ভঙ্গ করলাে সে অন্ধ । যে ব্যক্তি তার উর্ধ্বতন কোন হাদী (পথপ্রদর্শক) এর অনুসরণ ছেড়ে দিলাে অতিসত্ত্বর সে কোন গভীর কুপে পতিত হবে ।

    আরিফ বিল্লাহ সায়্যিদ ইমাম আবদুল ওহাব শা’রানী রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলায়হি মিযানু শরীআতিল কুরবা গ্রন্থে বলেন,

لَو قَدَرَ أَنَّ أَهلَ دَورِ تَعدُوا مِن فَوقِهِم إِلَي الدَّورِ الَّذِي قَبلَهُ لاَ انقَطَعَت وَصلَتُهُم بِالشَّرعِ وَلِم یَهتَدُوا لِإِیضَاحِ مُشکِلٍ وَّلاَ تَفصِیلِ مُجَمَلٍ وَّتأَمُّلٍ. یَا أَخِيفرض! لَو لاَ أَنَّ رَسُولَ اللّٰهِ ﷺ فَصَّلَ بِشَرِیعَتِهِ مَا اجمَلَ فِي القُرآنِ لَبَقِيَ عَلَي اجمَالِهِ کَمَا أَنَّ الأٸِمَّةَ المُجتَهِدِینَ لَو لَم یُفَصَّلُوا مَا اجمَلَ فِي السُّنَّةِ ابقَیَةِ السُّنَّةُ عَلَي اجمَالَهَا وَهَکَذَا إلَي عَصرِنَا هَذَا.

‘মনে করুন, যদি কোন যুগের মানুষ তার পূর্ববর্তী যুগের মানুষ (আলিম ও মুজতাহিদগণ)-কে অতিক্রম করে যায়, তবে শরীয়ত প্রবর্তক হুযুর আলায়হিস সালাতু ওয়াস সালামের সাথে তাদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তখন তারা সংক্ষিপ্তকে ব্যাখ্যা এবং অস্পষ্টকে স্পষ্ট করার পথ পাবে না। হে ভাই! একটু চিন্তা করুন! যদি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কুরআনের অস্পষ্ট আয়াতের ব্যাখ্যা না করতেন তবে কুরআন আপন অস্পষ্টতায় থেকে যেতাে। তেমনিভাবে মুজতাহিদ-ইমামগণ হুযূর সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের অস্পষ্ট সুন্নাতের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ না করতেন, তবে সুন্নাত স্বীয় অস্পষ্টতার উপর থেকে যেতাে। আর এ ধারাক্রম আমাদের এ যুগ পর্যন্ত (চলে। আসছে)।

     ওই গ্রন্থে আরও উল্লেখ আছে যে,

کَمَا أَنَّ الشَّارعَ بَیَّنَ لَنَا بِسُنَّتِهِ مَا اجمَلَ فِي القُرٱنِ وَکَذَالِكَ الأَٸِمَّةُ المُجتَهِدِینَ بَیَّنُوا لَنَا مَا اجمَلَ فِي احَادِيثِ الشَّرِیعَةِ وَلَولاَ بَیَانُهُم لَنَا ذَالِكَ لَبَقِیَةِ الشَّرِیعَةُ عَلَي اجمَالِهَا وَهَکَذَ القَولُ فِي أَهلِ کُلِّ دَورٍ بِالنِّسبَةِ لِلدَّورِ الذَّینَ قَبلَهُم إِلَي یَومَ القِیَامَةِ فَإَنَّ الإِجمَالَ لَم یَزَل سَارِیَّا فِي کَلاَمِ عُلَمَاءِ الأُمَّةِ إِلَي یَومِ القِیَمَةِ وَلَولاَ ذَالِكَ مَا شَرِحَتِ الکُتُبُ وُلاَ عَمَلَ عَلَي الشُّرُوحِ حَوَاشُ کَمَا مَرَّ.   

“যেমনি শরীয়ত প্রবর্তক হুযূর আলায়হিস সালাতু ওয়াসসালাম স্বীয় সুন্নাত দ্বারা কুরআন মজীদের সংক্ষিপ্ত ভাষ্যের ব্যাখ্যা করেছেন, তেমনি মুজতাহিদ ইমামগণ আমাদের জন্য শরীয়তের বিধান সংবলিত হাদীসমূহের সংক্ষিপ্ত ভাষ্যের ব্যাখ্যা করেছেন। যদি তাঁদের ব্যাখ্যা না হতাে তবে শরীয়ত স্বীয় অস্পষ্টতার উপর থেকে যেতাে। আর এ নিয়ম প্রত্যেক যুগে তার পূর্বকার যুগের লােকের জন্য প্রযােজ্য। এ ধারা কিয়ামত পর্যন্ত চলবে। এ কারণে প্রত্যেক যুগের এই উম্মতের আলিমগণের বাণীতে কোন না কোন অস্পষ্টতা


১. শারানী, আল-মিযান আল-কুবরা, অনুচ্ছেদ : ومما بذالك علي صحة ارتباط جمیع اقوال علماء الشریعة আল-বাৰী, মিসর


থেকেই যায়। যদি এমন পরিস্থিতি না হতাে তবে কিতাবসমূহের ব্যাখ্যা আর ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলাের টীকা-টিপ্পনী রচনা করা হতাে না। এ আলােচনা ইতােপূর্বেও করা হয়েছে।”


    গায়র-ই মুকাল্লিদগণ (ইমাম চতুষ্টয়ের যে কোন একজনের অনুসরণ ত্যাগকারী) এ পরম্পরাকে ত্যাগ করেই পথভ্রষ্ট হয়েছে । তাদের এটা জানা নেই যে,

ہمہ شیر ان جہاں بستہ ایں سلسلہ اند     روہہ از حیلہ چساں بگسلد ایں سلسلہ را

‘দুনিয়ার সমস্ত নেকড়ে এ শিকলে বন্দী, শৃগাল স্বীয় শঠতা দ্বারা এ শিকলকে নড়বড়ে করবে কেমনে। 


তরীকত অনুশীলনের জন্য পীরের প্রয়ােজনীয়তা

      যখন শরীয়তের আহকাম (বিধি-বিধান)-এর বেলায় এ অবস্থা, তখন একথা সুস্পষ্ট হলাে যে, তরীকতের নিগূঢ় রহস্য ও মারিফাতের প্রকৃত অবস্থা (হাকীকত)-এর ক্ষেত্রে কামিল পীর-মুরশিদের সাহায্য ছাড়া নিজে নিজে কুরআন ও হাদীস থেকে হুকুম বের করা কিরূপ অসাধ্য ব্যাপার। তরীকত ও মারিফতের এ পথ অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং পীর মুরশিদের আলাে ব্যতীত এ পথ অত্যন্ত ঘাের অন্ধকার। এ পথের অনেক বড় বড় অভিযাত্রীকে অভিশপ্ত শয়তান এমনভাবে পথভ্রষ্ট করেছে যে, জমিনের নিম্নস্তরে পৌছিয়ে দিয়েছে। সুতরাং কামিল রাহবার (পথপ্রদর্শন) ছাড়া এ পথে চলা এবং নিরাপদে পথ গমণ করার দাবি কী দুঃসাহস!

    সম্মানিত ইমামগণ বলেছেন, কোন ব্যক্তি যতাে বড় আলিম, যাহিদ ও কামিল হােক না কেন, তার উপর ওয়াজিব হলাে কোন ওলী-ই আরিফকে নিজ মুরশিদ হিসেবে গ্রহণ করা। এ ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।

    মিযানুশ শরীয়ত গ্রন্থে ইরশাদ হয়েছে,

فَعُلِمَ مِن جَمِیعِ مَا قَرَّرنَاهُ وُجُوبَ إِتِّخَاذِ الشَّیخِ لِکُلِّ عَلِمَ طَلَبَ الوُصُولَ إِلَي شُهُودِ عَینِ الشَّرِیعَةِ الکُبرَاي وَلَوِ اجمَعَ جَمِیعُ أَقرَانِهِ عَلَي عِلمِهِ وَعَمَلِهِ وَزُهدِهِ وَوَرعِهِ وَلَقَّبُوهُ بِالقُطُبِیَّةِ الکُبرَي فَإِنَّ لِطَرِیقِ القَومِ شُرُوطً لاَ یَعرِفُوهَا إِلاَّ المُحُقِّقُونَ مِنهُم دُونَ الدَّخِیلِ فِیهِم بِالدَّعَوَی وَالأَوهَامِ وَرُبَمَا کَانَ مَن لَقَّبُوهُ بِالقُطُبِیَّةِ لاَ یَصلِحُ أَن یَکُونَ مُرِیدًا لِقُطُبٍ. 

১. আবদুল ওহাব শা'রানী, আল-মিযান আল-কুবরা, অনুচ্ছেদ : في بیان استحاله خروج شیٸ, ১/৪৬, মোস্তাফা আল-বাবী, মিসর


‘অতএব জানা গেলাে যে, প্রত্যেক আলিম, যে মহান শরীয়তের নিগূঢ় তথ্য অবলােকনের মর্যাদায় পৌঁছতে চান, তার জন্য কোন কামিল শায়খ (পীর মুরশিদ)-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করা ওয়াজিব। যদিও তার যুগের সকল লােক তার ইলম, আমল, যুহদ-পরহেযগারীর উপর ঐক্যমত পােষণ করে এবং এমনকি যদি তাকে কুতুবিয়্যাত-ই কুবরার উপাধিও দেওয়া হয়। কারণ, এ সম্প্রদায় (তাসাউফপন্থি)-এর পথের কিছু শর্তাবলী রয়েছে, যেগুলাে ওই পথের তাত্ত্বিক অনুসন্ধানীগণ ছাড়া জানে না। না ওই সব লােক জানে, যারা শুধু স্বপ্রবৃত্তিতে ওই পথে অনুপ্রবেশ করেছে। অনেক সময় যাকে লােকেরা কুতুব' হওয়ার উপাধি দান করেছে, সে কোন প্রকৃত কুতুব’-এর মুরিদ হওয়ার উপযুক্ত নয়।


    সুতরাং তরীকতের অনুশীলনের মাধ্যমে মহান রবের প্রকৃত মারিফাত অর্জন করতে ইচ্ছুক লােকের জন্য পীর-মুরশিদের দীক্ষা গ্রহণ করা ওয়াজিব। অকর্মণ্য লােক যদি তরীকতের পথে চলতে নাও চাই তবুও ওসীলা গ্রহণের জন্য হলেও তার পীর মুরশিদের প্রয়ােজন রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা তাে স্বীয় বান্দাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

                                              أَلَیسَ اُللّٰهُ بِکَافٍ عَبدَه     

‘আল্লাহ কি তার বান্দাদের জন্য যথেষ্ট নয়?


   তারপরও মহান আল্লাহ বলেন,

                                               وَاَبتَغُوا إِلَیهِ الوَسِیلَةَ 

‘আল্লাহর পথে ওসীলা তালাশ কর। 


'ওসীলা' গ্রহণ ব্যতীত আল্লাহ পর্যন্ত পৌছা অসম্ভব

     আল্লাহর দিকে `ওসীলা' হচ্ছেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের দিকে ওসীলা। হচ্ছেন মাশাইখে কিরাম। এ পরম্পরায় আল্লাহ তা'আলা পর্যন্ত ওসীলা ব্যতীত পৌঁছা যেমন অসম্ভব, তেমনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পর্যন্তও ওসীলা


১. আবদুল ওহাব শা'রানী, আল-মিযান আল-কুবরা, অনুচ্ছেদ :ان القاٸل کیف الوصول, ১/২২, মােস্তফা আল-বাবী, মিসর 

২. আল-কুরআন, সুরা আল-যুমার, ৩৯:৩৬ 

৩. আল-কুরআন, সুরা আল-মায়িদা, ৫:৩৫


ছাড়া পৌঁছা অসম্ভব। অসংখ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম শাফা'আতের অধিকারী। আল্লাহ তা'আলার সমীপে তিনি সুপারিশকারী হবেন আর হুযুরের সমীপে আলিম ও ওলীগণ স্ব-স্ব মুরিদ-ভক্তদের জন্য শাফাআত (সুপারিশ) করবেন। শায়খগণ ইহ-পরকালে, মৃত্যুশয্যা, কবর-হাশর ইত্যাদি অবস্থায় স্বীয় মুরিদগণের সাহায্য করে থাকেন।


    মিযানুশ শরীয়ত গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে,

قَد ذَکَرنَا فِي کِتَابِ الأَجوَبَةِ عَن أَٸِمَّةِ الفُقهَاءِ وَالصُّوفِیَّةِ أَنَّ أَٸِمَّةَ الفُقهَاءِ وَالصُّوفِیَّةِ کُلُّهُم یَشفَعُونَ فِي مُقَلِّدِهِم وَیُلاَ حِظُونَ أَحَدَهُم عِندِ ظُلُوعِ رُوحِهِ وَعِندَ سُوَالِ مُنکَرٍ وَنَکِیرٍ لَّهُ وَعِندَ النَّشرِ وَالحَشرِ وَالحِسَابِ وَالمِیزَانِ وَالصِّرَاطِ وَلاَ یَغفِلُونَ عَنهُم فِي مَوقِفٍ مِنَ المَوَاقِفِ.


‘অবশ্যই আমি الاوبة عن اٸمة والفقهاء والصوفیة কিতাবে উল্লেখ করেছি যে, ফকীহ ও সূফীগণ সকলেই স্বীয় অনুসারীদের জন্য শাফাআত করবেন। তাঁরা স্বীয় অনুসারী ও মুরিদগণের মৃত্যুযন্ত্রণাকালে, রূহ বের হওয়া, মুনকার-নকীরের প্রশ্নকাল, হাশর, নশর এবং হিসাব-নিকাশ, মিযানে আমল ওজন করা ও পুলসিরাত অতিক্রম ইত্যাদি অবস্থা অবলােকন করে থাকেন এবং মুরীদের অবস্থানসমূহ থেকে কোন অবস্থান সম্পর্কে গাফিল হন না।”

    সুতরাং ওই মুখাপেক্ষীতা ও অসহায়ত্বের চেয়েও বড় নির্বোধ এবং পরকালীন স্বীয় নিরাপত্তা ও শুভ পরিণামের শত্রু কে হতে পারে, যে ওইসব কঠিন সময়ের জন্য সাহায্যকারী প্রস্তুত রাখবে না?

     হযরত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

إِستَکثَرُوا مِنَ الإِخوَانِ فَإِنَّ لِکُلِّ مُٶمِنٍ شَفَاعَةُ یَومَ القِیَامَةِ.

‘আল্লাহর অগণিত নেক-বান্দাদের সাথে আত্মীয়তা ও ভালােবাসার যােগসূত্র স্থাপন করাে, কারণ কিয়ামত দিবসে প্রত্যেক কামিল মুসলমানকে শাফা'আতের মর্যাদা দান করা হবে।' যেন তার সাথে সম্পর্ক স্থাপনকারীদেরকে সুপারিশ করা হয়।


১. আবদুল ওহাব শা'রানী, আল-মিযান আল-কুবরা, অনুচ্ছেদ: فی بیان جملة من الامثلة المحسوسة, ১/৫৩, মােস্তফা আল-বাবী, মিসর 

২. কানযুল উম্মাল ফী সুনানিল আকওয়াল ওয়া আফ’আল,کتاب الصحبة من قسم الأقوال حرف الصاد, অধ্যায় : ১ম:في الترغیب فیها , হাদীস : ২৪৬২৪২


ধরুন, (আল্লাহর পানাহ্!) যদি তরীকতের দীক্ষা গ্রহণ দ্বারা যদি কোন উপকারই না হয় তবুও কোন তরীকায় দাখিল হওয়ার মাধ্যমে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত যােগসূত্র স্থাপনের বরকত কি সামান্য ব্যাপার? যে বরকত অর্জন করার জন্য এখনাে সম্মানিত আলিমগণ হাদীসের সনদ নিয়ে থাকেন। এমন কি ‘রুতনে হিন্দী' ইত্যাদির মতাে (অপ্রসিদ্ধ) সনদসমূহ দ্বারা বরকত অর্জন করে থাকেন।


| ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী আল-ইসাবাহ ফী তাবীযিস সাহাবায় বলেন,

أُنبِٸتُ عَنِ المُحَدِّثِ الرَّحال جَمَالُ الدِّینِ مُحَمَّدُ بنِ أَحمَدَ بنِ أَمِینِ الأَقشَهرِيِّ نَزِیلُ المَدِینَةِ النَّبَوِّیَّةِ فِي فَوَاٸِدِ رِحلَتِهِ أَخبَرَنَا أَبُو الفَضَلِ وَأَبُو القَاسِمِ بنُ أَبِي عَبدِ اللّٰهِ عَلِيِّبنِ إِبرَاهِیمَ بنِ عَتِیقِ اللِّوَاتِي المَعرُوفِ بِإِبنِ الخَبَّازِ المَهدَوَّيَّ (فَذَکَرَ بِسَنَدِهِ حَدِیثًا مِن خَوَاجَةَ رُتَن) قَالَ: وَذَکَرَ خَوَاجَةَ رَتَنُ بنِ عَبدِ اللّٰهِ أَنَّهُ شَهِدَ مَعَ رَسُولِ اللّٰهِ ﷺ الخَندَقَ وَسَمِعَ مِنهُ هَذَا الحَدِیثَ وَرَجَعَ إِلَي بِلاَدِ الهِندِ وَمَاتَ بهَا وَعَاشَ سَبعَماٸَةِ سَنَةٍ وَمَاتَ سَنَةَ سِتَّ وَتِسعِینَ وَخَمسَمِاٸَةٍ وَقَالَ الأَقشَهرِيُّ وَهَذَا السَّنَدُ یَتَبَرَّكُ بِهِ وَإِن لَّم یُوثِق بِصِحَّتِّهِ.

পরিভ্রমণকারী মুহাদ্দিস জামাল উদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে আমীন আশাহরী, তিনি যখন মদীনা শরীফে অবস্থান করছিলেন তখন তাঁকে খবর দেওয়া হলাে (যা আমি ফাওয়াইদ-ই রিহলাতে বর্ণনা করেছি। আমাদেরকে আবুল ফযল এবং আবুল কাসিম ইবনে আবু আবদুল্লাহ ইবনে ইবরাহীম ইবনে আতীক আল-লিওয়াতি যিনি ইবনে খাব্বাস মাহদাভী নামে প্রসিদ্ধ। (তিনি হযরত খাজা রতন থেকে স্বীয় সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন,) তিনি বলেন, খাজা রতন ইবনে আবদুল্লাহ বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় তিনি রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের সাথে খন্দক যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি তার থেকে এ হাদীস শ্রবণ করেছেন এবং হিন্দুস্তানে ফিরে যান আর সেখানে ওফাত বরণ করেন। তিনি ৭০০ বছর জীবিত ছিলেন। ৫৯৬ হিজরীত ওফাতবরণ করেন। আকশাহরী বলেন, ওই সনদ দ্বারা বরকত অর্জন করা যায়,


     ইবনুন নিজার স্বীয় তারিখে হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।


যদিও তা সহীহ হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় না।

     অতএব, তরীকতের সিলসিলাহ ও আওলিয়া কিরামগণের সনদসমূহের (বরকত ও মর্যাদা)-এর ব্যাপারে কি বলবাে? বিশেষত হুযুর পুর নূর সায়্যিদুনা গাউসূল আযম কুতুব আলম ইরশাদ করেছেন,

                     وَإِنَّ یَدِي عَلَي مُرِیدِي کَالسَّمَاءِ عَلَي الأَرض

‘আমার মুরিদের উপর আমার হাত তেমনি, যেমন যমীনের উপর আসমান রয়েছে।

     তিনি আরও ইরশাদ করেছেন,

أَنَا لِکُلِّ مَن عَشَرَ بِهِ مَرکَبُهُ مِن أَصحَابَي وَمُرِیدِي وَمُحِبِّي إِلَي یَومِ القِیَامَةِ آخِذُ بِیَدِهِ

‘যদি আমার মুরিদের পা পিছলে যায়, আমি তার হাত ধরে রক্ষা করবাে।”

    

    এজন্য হুযূর গাউসূল আ'যমকে ‘পীর-ই দস্তগীর' (হাত পাকড়াওকারী) বলা হয়।


তিনি আরও বলেন,

لَو انکَشَفَت عَورَةُ لِمُرِیدِي بِالمَغرِبِ وَأَنَا بِالمَشرِقِ لَسَتَرتُهَا. 

‘যদি আমার মুরিদ পৃথিবীর পূর্বপ্রান্তে থাকে আর আমি পশ্চিম প্রান্তে থাকি, ঘুমের ঘােরে তার সতর অনাবৃত হলে আমি তা ডেকে দেবাে।”


তিনি আরও বলেন,

    ‘আমাকে একটি দফতর দেওয়া হয়েছে, যাতে কিয়ামত পর্যন্ত আমার মুরিদের নাম লিপিবদ্ধ ছিলাে। আমাকে বলা হয়েছে, এ সব আমি তােমাকে প্রদান করলাম।

    উপরিউক্ত ইরশাদসমূহ নির্ভরযােগ্য ইমামগণ তাঁর (হযরত গাউসুল আযম) থেকে বর্ণনা করেছেন। আমীন! আল্লাহ্ তা'আলা সর্বজ্ঞ ।


১. আসকলানী, আল-ইসাবাহ ফী তাবীযিস সাহাবা, খণ্ড : ২য়; الراء بعدها الناء, পৃ. ৫৩৬ 

২. শানুফী, বাহজাতুল আসরার,ذکر فضل آصحابه وبشراهم, পৃ. ১০০ 

৩. শানুফী, বাহজাতুল আসরার,ذکر فضل آصحابه وبشراهم, পৃ. ১০২ 

৪. শানুফী, বাহজাতুল আসরার,ذکر فضل آصحابه وبشراهم, পৃ. ৯৯ 

৫. শাতনুফী, বাহজাতুল আসরার,ذکر فضل آصحابه وبشراهم, পৃ. ৯৯

 
Top