ফাতিহা ও ইছালে সাওয়াবের পদ্ধতি


মৃত আত্মীয়-স্বজনদেরকে স্বপ্নে দেখার উপায়


হযরত আল্লামা আবু আবদুল্লাহ্ মুহাম্মদ বিন আহমদ মালেকী কুরতুবী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বর্ণনা করেন: হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِএর খিদমতে হাজির হয়ে এক মহিলা আবেদন করলো, আমার যুবতী মেয়ে মারা গেছে। এমন কোন আমল আছে কি? যা করলে আমি তাকে স্বপ্নে দেখতে পাব। তিনি رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ মহিলাটিকে ঐ আমল বলে দিলেন। মহিলাটি তার মরহুমা কন্যাটিকে স্বপ্নে তো দেখলেন, কিন্তু এমন অবস্থায় দেখলেন যে, তার সারা শরীরে আলকাতরার পোষাক ছিলো। তার ঘাড়ে শিকল, আর পায়ে লোহার বেড়ি ছিলো। ভয়ানক এই দৃশ্য দেখে মহিলাটি কেঁপে উঠল! পরের দিন সে এসে হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ কে স্বপ্নের কথা বলল। স্বপ্নটি শুনে তিনি رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ  অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে গেলেন। কিছু দিন পর হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এক মেয়েকে স্বপ্নে দেখলেন। মেয়েটি জান্নাতে একটি আসনে মাথায় তাজ পরে বসে আছে। তিনি رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ কে দেখে মেয়েটি বললো:আমি হলাম সেই মহিলাটিরই কন্যা, যিনি আপনাকে আমার অবস্থার কথা বলেছিলেন। তিনি رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বললেন: মহিলাটির কথা মত কন্যা তো আজাবে লিপ্ত ছিলো। তার এত বড় পরিবর্তন কীভাবে হলো? মরহুমা মেয়েটি বললো: কবরস্থানের পাশ দিয়ে একটি লোক যাচ্ছিলেন। লোকটি নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم র উপর দরূদ শরীফ পাঠ করেছিলেন। তাঁর সেই দরূদ শরীফ পাঠের বরকতে আল্লাহ তাআলা ৫৬০ জন কবরবাসীর উপর থেকে আযাব উঠিয়ে নিয়েছেন। (আত-তাযকিরাতু ফি আহওয়ালিল মাওতা ওয়া উমুরিল আখিরাতে, ১ম খন্ড, ৭৪ পৃষ্ঠা) 


তাঁর উপর আল্লাহ্ তাআলার রহমত বর্ষিত হোক এবং তাঁর সদকায় আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা হোক। اٰمِين بِجا هِ النَّبِيِّ الْاَمين  صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم


صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب!                     صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ ঘটনা থেকে জানা গেলো, আগেকার দিনের মুসলমানদের মাঝে বুযুর্গানে দ্বীনদের رَحِمَہُمُ اللہُ المُبِين   প্রতি অত্যন্ত আন্তরিকতা ছিলো। তাঁদের বরকতে লোকজনের সমস্যাগুলোরও সমাধান হয়ে যেত। এটাও জানা গেলো, মৃতদেরকে স্বপ্নে দেখার ইচ্ছা পোষণ করাও এক ধরণের কঠিন পরীক্ষা। কেননা, মৃত ব্যক্তিকে স্বপ্নে আযাবে দেখে নেওয়ার মাধ্যমে দুশ্চিন্তার মুখোমুখিও হতে হয়। এই ঘটনাটি থেকে ইছালে সাওয়াবের এক মহান বরকতও জানা গেলো। এও বুঝা গেলো, কেবল মাত্র এক বার দরূদ শরীফ পাঠ করেও ইছালে সাওয়াব করা যেতে পারে। আল্লাহ তাআলার অসীম রহমতের কথাই বা কী বলব! তিনি যদি কেবল এক বার দরূদ শরীফ পাঠ করাও কবুল করে নেন, কেবল এক বার পড়া দরূদের ইছালে সাওয়াবের বরকতে সম্পূর্ণ কবরস্থানের উপর থেকে চলমান আযাবও উঠিয়ে নিয়ে থাকেন এবং সকলকে বিভিন্ন ধরণের পুরস্কার দিয়ে ধন্য করে দেন।


লাজ রাখ্ লে গুনাহগারোঁ কি,    নাম রাহমান হে তেরা ইয়া রব!

বে সবব বখশ দেয় না পুছ্ আমল, নাম গাফফার হে তেরা ইয়া রব!

তু করীম আওর করীম ভি এয়ছা, কেহ নেহিঁ জিছ্ কা দোছ্রা ইয়া রব!


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনাদের যাদের পিতা-মাতা বা যে কোন একজন ইন্তেকাল হয়ে গেছেন, তাদের উচিত আপন পিতা-মাতার প্রতি উদাসীন না হওয়া। তাঁদের কবরগুলোতে গিয়ে যিয়ারত করতে থাকবেন এবং ইছালে সাওয়াবও করতে থাকবেন।এই ব্যাপারে ৫টি হাদীস শরীফ লক্ষ্য করুন:


 (১) মকবুল হজ্বের সাওয়াব


যে ব্যক্তি সাওয়াবের নিয়্যতে পিতা-মাতা বা তাদের যে কোন একজনের কবর যিয়ারত করবে, সে ব্যক্তি একটি মকবুল হজ্বের সাওয়াব লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি আপন পিতা-মাতার কবর বেশি বেশি  যিয়ারত করে থাকে, সেই ব্যক্তির (অর্থাৎ যখন সে ইন্তিকাল করবে) তার কবর যিয়ারত করার জন্য স্বয়ং ফেরেশতা নাযিল হবে। (নাওয়াদিরুল উছুল লিল হাকীমিত তিরমিযী, ১ম খন্ড, ৭৩ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৯৮) 


 صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب!                     صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد 


 (২) দশটি হজ্বের সাওয়াব


যে আপন পিতা-মাতার পক্ষ থেকে সম্পাদন হজ্ব করবে, তাদের (পিতা-মাতার) পক্ষ থেকে হজ্ব আদায় হয়ে যাবে, সেই ব্যক্তি (অর্থাৎ সম্পাদনকারী) আরো দশটি হজ্বের সাওয়াব লাভ করবে। (দারে কুত্নী, ২য় খন্ড, ৩২৯ পৃষ্ঠা হাদীস: ২৫৮) 


سُبْحٰنَ اللّٰہ عَزَّوَجَلَّ!  আপনি যদি নফল হজ্বের সুযোগ পেয়ে যান, তাহলে আপনার মরহুম পিতা-মাতার পক্ষ থেকে হজ্ব করে নিন। এতে করে তারাও হজ্বের সাওয়াব পাবেন এবং আপনারও হজ্ব হয়ে যাবে। আপনি বরং বাড়তি দশটি হজ্বের সাওয়াব পাবেন। আপনার পিতা-মাতার মধ্য থেকে কেউ যদি এমন অবস্থায় ইন্তেকাল হয়ে যান যে, তাঁর উপর হজ্ব ফরজ হওয়া সত্ত্বেও হজ্ব করতে পারেননি, তাহলে এমতাবস্থায় সন্তানের উচিত, বদলী হজ্বের সৌভাগ্য অর্জন করা। হজ্বে বদল সম্পর্কিত বিস্তারিত জানার জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত “রফিকুল হারামাঈন”নামক কিতাবের ১৫৯ থেকে ১৬৩ পৃষ্ঠা পর্যন্ত অধ্যয়ণ করুন।


 (৩) মাতা-পিতার পক্ষ থেকে দান-খয়রাত


তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি নফল স্বরূপ দান-খয়রাত করে, তাহলে যেন পিতা-মাতার পক্ষ থেকে করে। কেননা, সেই দান-খয়রাতের সাওয়াব তারাও পাবে এবং দানকারীর সাওয়াবেও কোন প্রকার ঘাটতি হবে না। (শুয়াবুল ঈমান, ২য় খন্ড, ২০৫ পৃষ্ঠা, হদীস: ৭৯১১) 


صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب!                     صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد


 (৪) রুজি-রোজগারে বরকত না হওয়ার কারণ


বান্দা যখন নিজের পিতা-মাতার জন্য দোয়া করা বন্ধ করে দেয়, তখন তার রুজি-রোজগারে বরকত কমে যায়। (জামউল জাওয়ামী, ১ম খন্ড, ২৯২ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২১৩৮) 


 (৫) জুমার দিন কবর যিয়ারতের ফযীলত


যে ব্যক্তি জুমার দিন আপন পিতা-মাতার বা তাদের যে কোন একজনের কবর যিয়ারত করবে এবং তাদের কবরের পাশে সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে, তাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (আল কামিল লি ইবনি আদী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৬০ পৃষ্ঠা) 


লাজ রাখ্ লে গুনাহগারোঁ কি, 

নাম রাহমান হে তেরা ইয়া রব!


صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب!                     صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد


কাফন ছিঁড়ে গেছে


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ তাআলার রহমতের কোন সীমা নেই। যেসব মুসলমান দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে যায়, তাদের জন্যও তিনি তাঁর দয়া ও বদান্যতার দরজাসমূহ খুলে রেখেছেন। আল্লাহ্ তাআলার অশেষ রহমত সম্পর্কিত ঈমান তাজাকারী একটি ঘটনা শুনাচ্ছি। পড়ুন এবং আন্দোলিত হোন।যেমন: আল্লাহ তাআলার নবী হযরত সায়্যিদুনা আরমিয়া عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এমন কতগুলো কবরের পাশ দিয়ে গমণ করছিলেন, যেগুলোতে আযাব হচ্ছিল। এক বৎসর পর যখন একই পথ দিয়ে তিনি যাচ্ছিলেন, তখন সেগুলোতে আযাব ছিলো না। আল্লাহ তাআলার দরবারে তিনি عَلَیۡہِ السَّلَام  আরয করলেন: হে আল্লাহ! কী ব্যাপার?প্রথমে এদের উপর আযাব হচ্ছিল, আর এখন দেখছি আযাব আর নেই?আওয়াজ এলো: হে আরমিয়া! তাদের কাফন ছিঁড়ে গেছে। চুল উপড়ে গেছে, আর কবরগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাই আমি তাদের উপর দয়া করেছি, আর এমনসব লোকদের উপর আমি দয়াই করে থাকি। (শরহুস সুদূর লিস সুয়ূতী, ৩১৩ পৃষ্ঠা) 


আল্লাহ কি রহমত ছে তো জান্নাত হি মিলে গি

এ্যায় কাশ! মহল্লে মেঁ জাগা উন্ কে মিলি হো।

 (ওয়াসায়িলে বখশিশ, ১৯৩ পৃষ্ঠ) 


صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب!                     صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد


 
Top