নির্ভরযোগ্য মত হিসেবে ২৭ শে রজব রাসূল (ﷺ)-এর মি’রাজ




কতিপয় ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)-এর মি’রাজের তারিখ নিয়ে মতভেদের সুযোগে মি’রাজ পালন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ইসলামের অনেক গূরুত্বপূর্ণ বিষয়ের তারিখ নিয়েও মতভেদ করেছেন ঐতিহাসিকগণ। তারপরও আমরা গ্রহণ করি সবচেয়ে মশহুর এবং শক্তিশালী মত। ঐতিহাসিক ইমামগণ যেটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। যেমনঃ


১।❣️ আল্লামা বদরুদ্দীন মাহমুদ আইনী (رحمة الله) বলেনঃ

كان الإسراء ليلة السابع والعشرين من رجب

রাসূল (ﷺ)-এর ইসরা ভ্রমন বা মি’রাজ হয়েছিল রযব মাসের ২৭ তারিখ। (উমদাতুল ক্বারী [বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ], ৪/৩৯পৃ.)


এরপর তিনি আরও লিখেন-

واختاره الحافظ المقدسى

হাফেযুল হাদিস ইমাম যিয়া মুকাদ্দাসী (رحمة الله) এ মতটিকেই পছন্দকৃত বা অধিক গ্রহণযোগ্য বলেছেন। (উমদাতুল ক্বারী, ৪/৩৯ পৃষ্ঠায়)


২।❣️ বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও আহলে হাদিসদের ইমাম এবং সকলের মান্যবড় আল্লামা ইবনে কাসির (رحمة الله) তার একাধিক বিখ্যাত গ্রন্থে উল্লেখ করেনঃ


ان الإسراء كان ليلة السابع العشرين من رجب والله اعلم

অবশ্যই মি’রাজ সংগঠিত হয়েছে রজব মাসের ২৭ তারিখ। মহান রবই এ বিষয়ে ভাল জানেন।”


(ইবনে কাসির, আল-বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৩/১৩৫পৃ.,সিরাতে নববিয়্যাহ, ২/৯৩ পৃ.)


৩।❣️ ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) লিখেন-

كان ليلة السابع والعشرين من رجب

নবীজীর মি’রাজের তারিখটি ছিল ২৭শে রযব। (কাস্তালানী, মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, ১/১৬২ পৃ.)


(কাস্তালানী, মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া, ১/১৬২পৃ.)


৪।❣️ ইমাম জুরকানী (رحمة الله) অনুরূপ মতামত পেশ করেছেন।


"তিনি আরও বলেনঃ قال بعضهم: وهو الأقوى -

‘‘অনেক উলামাগণ বলেছেন যে, এটিই শক্তিশালী অভিমত।’’


(জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া, ২/৭১পৃ.)


৫।❣️ ইমাম ইবনে জাওযী (رحمة الله) (ওফাত. ৫৯৭ হি.) লিখেনঃ


"রাসূল (ﷺ)-এর মি’রাজ ২৭ই রজব হয়েছিল।"


(ইবনে জাওযী,আল-মুনতাযিম ফি তারিখুল উমুম ওয়াল মুলক, ৩/২৬ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)


৬।❣️ শায়খ মুহাম্মদ বিন তৈয়্যব নাজ্জার (رحمة الله) লিখেনঃ


"রাসূল (ﷺ)-এর মি‘রাজ হয়ে ছিল রযব মাসের ২৭ তারিখ, আর এটিই সুপ্রসিদ্ধ অভিমত।"


(কওলুল মুবীন ফি সীরাতে সায়্যিদিল মুরসালীন, ১/১৫৩ পৃ.)


৭।❣️ দেওবন্দী ঐতিহাসিক আবুল হাসান নদভী লিখেনঃ

"প্রসিদ্ধ হচ্ছে নিশ্চয় রাসূল (ﷺ)-এর মি‘রাজ হয়ে ছিল রযব মাসের ২৭ তারিখ, প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা হাফেয ইবনে সুরুর মাকদেসী (رحمة الله) এ মতকে অধিক পছন্দনীয় বা গ্রহণযোগ্য বলেছেন।"


(নদভী, সিরাতে নববিয়্যাহ, ২১৭ পৃ., দারু ইবনে কাসির, দামেস্ক, সিরিয়া, দ্বিতীয় প্রকাশ. ১৪২৫ হি.)


৮।❣️ আল্লামা ইবনে খাল্লেকান (رحمة الله)বলেনঃ


(সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ূবী (رحمة الله)) এর হাতে বাইতুল মোকাদ্দাস সমর্পন করার রাত্রি ছিল ২৭ রজব জুমুআর রাত্রি। এটি ছিল মেরাজের রাত, যার উপর কুরআনের নস বিদ্যমান। [ওয়াফিআতুল আইয়ান, ৭/১৭৯]


৯।❣️ আল্লামা তাহতাভী হানাফী (رحمة الله) বলেনঃ


"শবে মেরাজ বলা হয় রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতকে। এটিই সকল শহরে গৃহীত এবং এর উপর ইমাম নববী (رحمة الله) দৃঢ় মতামত দিয়েছেন।"


[হাশিয়াতুত তাহাভী আলা মারাকিউল ফালাহ, ১/১১৪]


১০।❣️ইমাম ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাফসীরে রুহুল বয়ান ৫ম জিলদ ১০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

وهى ليلة سبع وعشرين من رجب ليلة الاثنين وعليه عمل الناس قالوا انه عليه السلام ولد يوم الاثنين بعث يوم الاثنين واسرى به ليلة الاثنين وخرج من مكة يوم الاثنين ودخل الـمدينة يوم الاثنين ومات يوم الاثنين

অর্থ: “রাতটি ছিলো রজব মাসের ২৭ তারিখ, সোমবার।”


১১।❣️প্রাচ্যের বুখারী খ্যাত, পাক ভারত উপমহাদেশে হাদীছ শরীফ-এর প্রচার-প্রসারকারী হযরত শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী (رحمة الله) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত ‘মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ’ কিতাবের ৭৩ পৃষ্ঠায় লিখেন-

اعلم انه قد اشتهر فيما بين الناس بديار العرب ان معراجه صلى الله عليه وسلم كان لسبع وعشرين من رجب

অর্থ: “জেনে রাখুন! নিশ্চয়ই আরব জাহানের দেশগুলোর লোকদের মধ্যে মাশহূর বা প্রসিদ্ধ ছিলো যে, নিশ্চয়ই হুযূর পাক (ﷺ) এর মি’রাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছিলো রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতেই।” সুবহানাল্লাহ!


১২।❣️অনুরূপভাবে হানাফী মাযহাবের সুপ্রসিদ্ধ ফতওয়ার কিতাব ‘রদ্দুল মুহতার আলা দুররিল মুখতার’ কিতাবুছ ছলাত অধ্যায়ে উল্লেখ রয়েছে-

وجزم الحافظ عبد الغنى الـمقدسى فى سيرته بانه ليلة السابع والعشرين من رجب وعليه عمل اهل الامصار.

অর্থ: হযরত ইমাম হাফিয আব্দুল গণী মাক্বদিসী (رحمة الله) তিনি সীরাতগ্রন্থে চূড়ান্ত মতামত প্রকাশ করেন যে, মি’রাজ শরীফ হয়েছে রজব মাসের ২৭ তারিখ এবং এর উপরই সমগ্র দেশবাসীর আমল।

 
Top