سم الله الرحمن الرحيم
لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ وَمَنْ يُعْرِضْ عَنْ ذِكْرِ رَبِّهِ يَسْلُكْهُ عَذَابًا صَعَدًا (১৭) وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا (১৮) وَأَنَّهُ لَمَّا قَامَ عَبْدُ اللَّهِ يَدْعُوهُ كَادُوا يَكُونُونَ عَلَيْهِ لِبَدًا (১৯) قُلْ إِنَّمَا أَدْعُو رَبِّي وَلَا أُشْرِكُ بِهِ أَحَدًا (২০) قُلْ إِنِّي لَا أَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَلَا رَشَدًا (২১) قُلْ إِنِّي لَنْ يُجِيرَنِي مِنَ اللَّهِ أَحَدٌ وَلَنْ أَجِدَ مِنْ دُونِهِ مُلْتَحَدًا (২২) إِلَّا بَلَاغًا مِنَ اللَّهِ وَرِسَالَاتِهِ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ لَهُ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا (২৩)
তরজমা:(মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেছেন) যাতে তাদেরকে আমি (আল্লাহ) এর উপর পরীক্ষা করি, এবং যে ব্যক্তি আপন প্রতিপালকের স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাকে তিনি ক্রমবর্ধমান শাস্তির মধ্যে নিক্ষেপ করবেন এবং এ যে, মসজিদগুলো আল্লাহরই। সুতরাং তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কারো ইবাদত করো না এবং এ যে, যখন আল্লাহর বান্দা তাঁর ইবাদত করার জন্য দণ্ডায়মান হয়েছে, তখন এরই উপক্রম ছিলো যে, ওই সমস্ত জি¦ন তাঁর নিকট প্রচণ্ড ভিড় জমাবে। (ওহে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলুন, আমি তো আপন প্রতিপালকেরই ইবাদত করি এবং কাউকেও তাঁর অংশিদার স্থির করি না। আপনি বলুন, আমি তোমাদের ক্ষতি সাধন করার ও সুপথে আনায়ন করার মালিক নই। আপনি বলুন, অবশ্য আল্লাহ তায়ালার কবল থেকে কেউ আমাকে রক্ষা করবে না, এবং নিশ্চয় তিনি ব্যতীত অন্য কোন আশ্রয়স্থল পাব না। কিন্তু আল্লাহর পয়গাম পৌছানো এবং তাঁর রিসালাতের বাণীসমূহ (প্রচার করাই আমার কাজ) এবং যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে, তবে নিশ্চয় তার জন্য জাহান্নামের আগুন রয়েছে, যাতে সদা-সর্বদা থাকবে।
[১৭-২৩ নম্বর আয়াত, সূরা-জিন]
আনুষঙ্গিক আলোচনা
উদ্ধৃত আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যায় মুফাসসেরীনে কেরাম উল্লেখ করেছেন-مساجد শব্দটি مسجد এর বহুবচন, سجدة ধাতু হতে উৎপন্ন শব্দটির শাব্দিক অর্থ- সিজদার স্থান । এর এক অর্থ ইবাদতের কেন্দ্র- উপাসনালয় হতে পারে। তাই আয়াতের অর্থ এই যে, মসজিদসমূহ কেবল মহান আল্লাহ্ তায়ালার ইবাদতের জন্য নির্মিত হয়েছে। অতএব তোমরা মসজিদে প্রবেশ করে আল্লাহ্ তায়ালা ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত-উপাসনা করো না। যেমন, ইয়াহুদী খ্রিস্টানরা তাদের উপাসনালয়সমূহে এধরনের শেরেকি কাজ করে থাকে। সুতরাং আয়াতের সারমর্ম এই যে, মসজিদ সমূহকে ভ্রান্ত বিশ্বাস  মিথ্যা কর্মকান্ড থেকে পবিত্র রাখতে হবে।
পৃথিবীর বুকে সর্বাধিক পছন্দনীয় উত্তম ও বরকতময় স্থান হলো মসজিদসমূহ যা একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে নির্মিত। তাই এর সর্বোচ্চ আদব-তা‘জিম-পবিত্রতা নিশ্চিত করত: ইবাদতের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখা অপরিহার্য। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে যদি মসজিদে ইবাদতের পরিবেশ বিঘ্নিত  হয় তবে তা হবে মসজিদের উপর জুলুম, বড় ধরনের গুনাহ। (নাউযুবিল্লাহ) যা জাগতিক জীবনে লাঞ্ছনা-অবমাননা এবং পরকালীন জীবনে বড় আযাবের কারণ হবে।

সূরা আল-বাকারার ১১৪ নম্বর আয়াতে এরশাদ হয়েছে-
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ مَنَعَ مَسَاجِدَ اللَّهِ أَنْ يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَى فِي خَرَابِهَا أُولَئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَنْ يَدْخُلُوهَا إِلَّا خَائِفِينَ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ (১১৪)
অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ্র মসজিদসমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চেয়ে বড় জালেম আর কে? (অর্থাৎ আর কেউ নেই) এদের পক্ষে মসজিদসমূহে প্রবেশ করা বিধেয় নয়, অবশ্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় ওদের জন্য ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে বড় শাস্তি রয়েছে। উদ্ধৃত আয়াতে কারীমার মর্মবাণীর আলোকে কতিপয় জরুরী মাসআলা এবং বিধি-বিধান প্রমাণিত হয়।
প্রথমত: আদব-তা‘জিম ও শিষ্ঠতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বিশে^র সকল মসজিদ একই পর্যায়ভুক্ত। দুনিয়ার সকল মসজিদ ইবাদতের কেন্দ্র হিসেবে খানায়ে কা’বা বায়তুল্লাহ্ শরীফের অংশবিশেষ। তাই মসজিদে নববীর অবমাননা বড় যুলুম তেমনি অন্যান্য মসজিদের বেলায় ও তা সমভাবে প্রযোজ্য। তবে এই তিনটি মসজিদের বিশেষ মাহাত্ম্য ও সম্মান স্বতন্ত্রভাবে স্বীকৃত। যেমন মসজিদে হারাম শরীফে এক রাকাআত নামাজের সাওয়াব এক লক্ষ রাকাআত নামাযের সমান। মসজিদে নববী শরীফে এক রাকাআত নামাজের সাওয়াব পঞ্চাশ হাজার রাকআত নামাজের সমান এবং বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফে এক রাকাআত নামাজের সাওয়াব পচিশ হাজার রাকআত নামাজের সমান। এই তিন মসজিদে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে দূর-দূরান্ত হতে সফর করে সেখানে পৌঁছা বিরাট সাওয়াব ও বরকতের বিষয়। কিন্তু অন্য কোন মসজিদে নামাজ পড়া উত্তম মনে করে দূর-দূরান্ত থেকে সফর করে আসতে বারণ করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: মসজিদে আল্লাহ্র জিকির নামাজে বাধা প্রদানের মত যত পন্থা হতে পারে সে সবগুলোই হারাম। তম্মধ্যে একটি প্রকাশ্য পন্থা হলো এই যে, মসজিদে গমন করতে অথবা সেখানে নামাজ ও তেলাওয়াত করতে পরিষ্কার ভাষায় নিষেধ প্রদান করা। দ্বিতীয় পন্থা এই যে, মসজিদে হট্টগোল করে অথবা আশে-পাশে গান-বাজনা করে মুসল্লিদের নামাজ ও জিকিরে বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি করা। এমনিভাবে নামাজের সময় যখন মুসল্লিরা নফল নামাজ, তাসবিহ, তেলাওয়াত ইত্যাদিতে নিয়োজিত থাকে, তখন মসজিদে সরবে তেলাওয়াত ও জিকির করা এবং নামাজিদের নামাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করাও বাধা প্রদানেরই নামান্তর। তিন কারণেই ফিকহ্ শাস্ত্রবিদগণ একে নাজায়েয আখ্যা দিয়েছেন। তবে মসজিদে যখন মুসল্লি না থাকে তখন সরবে জিকির অথবা তেলাওয়াত করায় কোন আপত্তি নেই। এ বিষয় থেকে আরো প্রতীয়মান হয় যে, যখন মুসল্লিরা নামাজ, তাসবিহ ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকে তখন মসজিদে নিজের জন্য অথবা কোন ধর্মীয় কাজের জন্য চাঁদা সংগ্রহ করাও নিষিদ্ধ।
তৃতীয়ত: মসজিদ জনশূন্য করার জন্য যত সম্ভাব্য পন্থা হতে পারে সবই হারাম। খোলাখুলিভাবে মসজিদকে বিধ্বস্ত করা ও জনশূন্য করা যেমনি এর অন্তর্ভুক্ত যার ফলে মসজিদ জনশূন্য হয়ে যায়। মসজিদ জনশূন্য হওয়ার অর্থ এই যে, সেখানে নামাজ পড়ার জন্য কেউ আসে না, কিংবা নামাজির সংখ্যা হ্রাস পায়।
আল্লামা কাজী সানাউল্লাহ পানিপতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-মসজিদের উদ্দেশ্য-বহির্ভূত কার্যকলাপ থেকে মসজিদকে পবিত্র রাখা ও মসজিদ আবাদ করার শামিল। যেমন, মসজিদে ক্রয়-বিক্রয়, দুনিয়াবী কথাবার্তা, হারানো বস্তুর সন্ধান, ভিক্ষাবৃত্তি, বাজে কবিতা পাঠ এবং ঝগড়া-বিবাদ, হৈ-হুল্লোড় প্রভৃতি মসজিরে উদ্দেশ্য বহির্ভূত কাজ।
[তাফসীরে মাজহারী শরীফ] উল্লেখ্য, কোন অমুসলিম যদি সাওয়াব মনে করে মসজিদ নির্মাণ করে দেয় অথবা মসজিদ নির্মাণের জন্য চাঁদা দেয়, তবে কোন প্রকার দ্বীনী ও দুনিয়াবী ক্ষতি সেটার উপর আরোপ করা অথবা খোটা দেওয়ার আশংকা না থাকলে তা গ্রহন করা জায়েয আছে। [ফতওয়ায়ে শামী]
মহান আল্লাহ্ তায়ালার আলিশান দরবারে কায়েমনোবাক্যে ফরিয়াদ জানাই তিনি যেন সকল মু‘মিন নর-নারীকে উপরিউক্ত দরসে কুরআনের উপর আমল করে উভয় জাহানের সফলকাম হওয়ার সৌভাগ্য নসিব করুন। আমিন।
 
Top