দ্বঈফ হাদীসের উপর আমল করা মুস্তাহাব। দ্বঈফ বা দুর্বল হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযােগ্য তাতে মুহাদ্দিসীনগন ঐকমত্য পােষণ করেছেন । ইলমে হাদিসের এ নীতিমালাটি এখানে এ জন্য উল্লেখ করা হলো কারন আহলে হাদিসগন দ্বঈফ হাদিসের উপর আমল করা বৈধ নয় বলে উল্লেখ করেছে।
দলিল নং ১ঃ
দ্বঈফ হাদিস আমল যোগ্য তাঁর ব্যাপারে হানাফি মাযহাবের অন্যতম ইমাম কামালুদ্দীন ইবলে হুমাম বলেন,
হাকিম  رضي الله عنه স্বীয় কিতাব (মুস্তাদরাক) হুযুর ﷺ থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, “যদি তােমাদের অন্তর চায় যে, তােমাদের নামায কবুল করা হােক, তবে তােমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তিই যেন ইমাম হন"। আলােচ্য হাদিস সহিহ হলে তাে ভাল, অন্যথায় হাদিসটি দ্বঈফ বানােওয়াট নয়, আর দ্বঈফ হাদিস অনুযায়ী আমল করা যাবে, আমল বা ফজিলত প্রমাণের ক্ষেত্রে এমন হাদিস অবশ্যই দলীল।
দলীল নং ২ঃ
ইমাম সৈয়দ আবু তালেব মক্কী  رضي الله عنه  রচিত গ্রন্থ ‘কুউয়াতুল কুলুব’ কিতাবে লিখেন,
"এমন কিছু বিষয়, যেগুলোর কারনে হাদিস বর্ণনাকারীকে দুর্বল এবং তাঁদের বর্ণিত হাদিসমূহকে সহিহ নয় বলে ঘোষনা দেওয়া হয়।সম্মানিত ফিক্বহ বিশারদগন ও ওলামায়ে কেরাম সেগুলোকে দ্বঈফ হাদিস বলার যোগ্য কিংবা ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করেন না।যেমন বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ না থাকা বা অপরিচিত হওয়া।কারন এমন ও হতে পারে যে,বর্ণনাকারী নিজেই তাঁর নাম গোপন করেছেন।নিজেকে প্রকাশ ও প্রচারে উৎসুক না হওয়ার বিষয়ে শরীয়তে প্রামানিক দলিল আছে।অথবা এজন্য তিনি অপরিচিত হয়েছেন যে,তাঁর ছাত্র সংখ্যা কিংবা অনুসারী খুবই নগন্য।ফলে ব্যাপকহারে মানুষ  তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করার সুযোগ পাননি।
দলিল ৩ঃ-
আল্লামা মুফতি আমিমুল ইহসান  رضي الله عنه  বলেন,দূর্বল হাদিস যদি কাল্পনিক না হয় যদিও তা একক রাবী কর্তৃক বর্ণিত হয়ে থাকে, তবু ফযীলতর বেলায় তার উপর আমল করা মুস্তাহাব। তবে শরীয়তের বিধান প্রয়ােগের ক্ষেত্রে এ হাদিস কার্যকর হবে না। হ্যা, তবে সতর্কতার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জোর প্রকাশের জন্য দুর্বল হাদিসকেও দলীল হিসেবে পেশ করা যেতে পারে।”
দলীল নং- ৫-৬ ইমাম আযম আবু হানিফা رضي الله عنه  মত সম্পকে বলা হয়ে থাকে,
“ইমাম আবু হানিফা  رضي الله عنه এ মত দৃঢ়ভাবে পােষণ করেছেন যে, দুর্বল হাদিস কিয়াসী রায় অর্থাৎ নিজস্ব মতামত থেকে অনেক উত্তম।”
দলীল নং- ৭
বিশ্ববিখ্যাত ফতােয়াবিদ এবং মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে আবেদীন শামী  رضي الله عنه ফতােয়ায়ে শামীর ১ম খন্ড  এ লিখেন,“আরিফ কুল সম্রাট ইমাম শা’রানী رضي الله عنه বলেন, নিশ্চয় চার মাযহাবের ইমামগণ বলেছেন সহিহ হাদিস হলাে আমাদের মাযহাব। কিন্তু ফাযায়েল আমলের জন্য দ্বঈফ বা দুর্বল হাদিস আমল করা যায়েজ। যা আমি কিতাবুত ত্বাহারাত অধ্যায়ে বিস্তারিত আলােচনা করেছি।” • দলীল নং- ৮
বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী  رضي الله عنه  উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীর মুকাদ্দামায় দ্বঈফ হাদীসের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ওলামায়ে কেরামের নিকট দ্বঈফ হাদিস ওয়াজ ও কাহিনীর জন্য এবং ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযােগ্য।"
দলীল নং- ৯-১০
 বিশ্ববিখ্যাত মুফাসির, মুহাদ্দিস, ফকিহ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী   رضي الله عنه "তাফসীরে রুহুল বায়ানে” বলেন,
-“তবে মুহাদ্দিসীনে কিরাম এ ব্যাপারে ঐকমত্য পােষণ করেছেন যে, আকর্ষণ সৃষ্টি ও ভীতি সঞ্চারের বেলায় দ্বঈফ হাদিস অনুযায়ী আমল করা জায়েয।” | তিনি কিতাবের অন্যস্থানে বলেন,“এই অধম আরজ করছি যে, ওলামায়ে কেরাম থেকে আমলের ব্যাপারে দ্বঈফ হাদিস গ্রহণযােগ্য। ব্যাপারটি বিশুদ্ব সূত্রে বর্ণিত আছে।”
দলীল- ১১ - আল্লামা ইমাম আবু তালিব মক্কী رضي الله عنه বলেন,
-“ফাযায়েলে আমল এবং সাহাবাদের  رضي الله عنه বা কারও ফযীলত বর্ণনার ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসগণ একমত এই যে, তা যে প্রকারের হােক না কেন সেটা গ্রহণযােগ্য ও গৃহীত। যদিও তা সনদ অসংযুক্ত অথবা মুরসাল হয়, তার বিরােধীতা করা বা খন্ডন করা যাবে না। এমনকি পূর্ব যুগের ইমামগণ এরুপই করেছেন।
দলিল-১২-আল্লামা ইমাম নববী  رضي الله عنه,  বলেন,"ওলামায়ে কেরাম এই বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পােষণ করেছেন দুর্বল হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযােগ্য।"
দলীল নং-১৩ আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি رضي الله عنه  বলেন,
-“মুহাদ্দিস ও অন্যান্য ওলামাদের বক্তব্য হলাে দুর্বল সনদ সম্পর্কে অথবা কিছু ছাড় দেওয়া এভাবে যে মওদু বা বানােয়াট না হয়, তা ফাযায়েল আমল এবং অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আমল করা বৈধ আছে। যদি তা আহকাম ও আকায়েদের সাথে সম্পর্ক
হয়, যে ইমামগণ এ মত পােষণ করেছেন, তাঁদের মধ্যে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল رضي الله عنه, ইমাম ইবনে মাহদী رضي الله عنه, ইমাম ইবনুল মােবারক رضي الله عنه সংযুক্ত আছেন। তারা বলেন যে, আমরা হালাল হারামের মধ্যে হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে কঠিনতা অবলম্বন করেছি এবং ফাযায়েল বর্ণনার ক্ষেত্রে তা অবলম্বন করেছি।"
দলীল নং-১৪ আল্লামা ইমাম নাওয়াবী رضي الله عنه বলেন ,“মুহাদ্দিসীনে কেরাম ও ফুকাহায়ে কেরাম এবং অন্যান্য ওলামায়ে কেরাম বলেছেন ফাযায়েল বা উৎসাহিত করা ও ভয়ভীতি প্রমাণ বা গ্রহণ করা হাদীসে দ্বঈফ দ্বারা জায়েজ আছে যদি তা জাল বর্ণনা বা জাল হাদিস না হয়।'
দলিল নং-১৫ঃ আল্লামা ইমাম বুরহানুদ্দিন ইবরাহীম হালবী (রাহমাতুল্লাহি আলায়হি) বলেন,
-“গােসল বা ওজুর পরে রুমাল দ্বারা শরীর মুছাহ মুস্তাহাব। হযরত আয়েশা رضي الله عنه   বর্ণনা করেন, হুযুর ﷺ এর একটি কাপড়ের টুকরা ছিল যা দ্বারা ওযুর পরে অঙ্গ মােবারক মাসেহ করিতেন। উক্ত হাদিস ইমাম তিরমিযী رضي الله عنه দুর্বল বলেছেন। এরপরেও উহার আমল বিদ্যমান আছে।”
দলীল নং- ১৬ আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী رضي الله عنه বলেন, “দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের মধ্যে আমল করার ব্যাপারে ইমামগণের ঐকমত্য হইয়াছে ।এই জন্য আমাদের ইমামগন বলেছেন গর্দান মাসেহ করা মুস্তাহাব অথবা সুন্নাত প্রমাণিত হয়েছে।”
দলীল নং-১৭ আল্লামা মােল্লা আলী কারী رضي الله عنه অন্যস্থানে বলেন
-“ দ্বঈফ সনদের হাদিস (মওদু বা জাল নয়) ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযােগ্য।”
দলীল নং- ১৮ আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী رضي الله عنه অন্যত্র বলেন,
-“নিশ্চয় জেনে রাখুন! দুর্বল সনদের হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য। গ্রহণযােগ্য।
দলীল নং-১৯ঃ সমস্ত ইমাম মুহাদ্দিস ঐকমত্য পােষণ করেছেন যে, ফাযায়েলে আমলের জন্য উফ বা দুর্বল হাদিস দ্বারা আমল করা বৈধ।” দলীল নং- ২০ আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী رضي الله عنه  আরও বলেন,হাদিসটি দুর্বল, তবে ফাজায়েলের জন্য এবং আমলের জন্য গ্রহণযােগ্য।”
 দলীল নং- ২১ আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী رضي الله عنه বলেন,
-“দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযােগ্য , তা ব্যতিত অন্য বিষয়ের জন্য নয়। এই কথার মর্ম হচ্ছে তার বর্ণনা যদি একক হয়, একাধিক সনদে বর্ণিত যে হাদিস তা হাসানের অন্তর্ভূক্ত, তা তখন দ্বঈফের অন্তর্ভুক্ত নয়।"
দলীল নং- ২২-২৩ আল্লামা মােল্লা আলী কারী رضي الله عنه  বলেন,
-“সমস্ত ওলামায়ে কেরাম ঐকমত্য পােষণ করেছেন যে দ্বঈফ হাদিস ফযিলতপূর্ন আমল এর ক্ষেত্রে গ্রহণযােগ্য। আল্লামা মােল্লা আলী কারী رضي الله عنه  অন্য জায়গায় আরাে বলেন ,
-“দ্বঈফ হাদীসের উপর আমল করা জায়েয বা বৈধ।”
দলীল নং-২৪
১ আল্লামা ড.মাহমুদ আত্- হান বলেন : দুর্বল হাদিসের উপর আমলের ব্যাপারে ইখতিলাফ (মত পার্থক্য) রয়েছে। তবে জমহুর (অধিকাংশ) ইমাম ও ওলামার মতে দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে আমল করা মুস্তাহাব। "
দলীল নং- ২৫ আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী  رضي الله عنه   বলেন,
-“হাদীসের সনদে কোন বর্ণনাকারী অজানা বা অচেনা হওয়া অথবা হাদীসের কোথাও স্পষ্ট না হওয়া দ্বারা হাদিসটি মওদু বা বানােয়াট বিবেচিত হয় না। তবে হ্যা, দ্বঈফ বলা যেতে পারে। অতএব দ্বঈফ হাদিস অনুসারে ফযিলত বর্ণনার ক্ষেত্রে এবং আমল করা যাবে।”
দলীল নং- ২৬১
আল্লামা আযলুনী   رضي الله عنه  হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর   رضي الله عنه  এর বর্ণিত ঘাড় মাসেহ এর হাদিস প্রসঙ্গে বলেন
-“উক্ত হাদিসটির সনদ দুর্বল,  তবে হাদিসটি দ্বারা প্রমাণিত হলাে ঘাড় মাসেহ করা মুস্তাহাব অথবা সুন্নাত।”
দলীল নং-২৭ আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী رضي الله عنه বলেন, এ হাদিসের উপর আমল করা বৈধ, কেননা হাদিসের সনদ দুর্বল, মুরসাল, মুনকাতে হলেও আমল করা বৈধ,আর এ ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন,যেমনটি ইমাম নাওয়াবী رضي الله عنه  বলেছেন।”
দলীল নং- ২৮ তিনি এ কিতাবে আরও উল্লেখ করেন
-“এ হাদিসটি শাফেয়ী মাযহাবের অনূকুলে,তবে হাদিসটি দ্বঈফ। তবে তা শুধু ফাযায়েলে আমালের জন্যই গ্রহনযােগ্য।
দলীল নং- ২৯ তিনি আরও বলেন
“নিশ্চয় এ হাদিসটি দ্বঈফ,আর যা ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহনযােগ্য।
দলীল নং- ৩০ঃতিনি তাঁর এ কিতাবে অন্যস্থানে তাকিদ দিয়ে বলেন,
-জেনে রাখুন নিশ্চয় দ্বঈফ সনদের হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহনযােগ্য।
 দলীল নং- ৩১
হুবুহু তিনি এ কিতাবের অন্যস্থানে বলেন এ রুপ বলেছেন।
 দলীল নং- ৩২ঃ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী رضي الله عنه   বলেন, যখন বুঝা গেল হাদিসটি দ্বঈফ,তাই তা শুধু ফাযায়েলে আমলের এ গ্রহনযােগ্য।
দলীল নং- ৩৩ তিনি আরও বলেন,
-“সবাই এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে,দ্বঈফ সনদের হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহনযােগ্য।
দলীল নং- ৩৪ তিনি আরও লিখেন,
-“ইমাম ইবনে হাযার মক্কী  رضي الله عنه  বলেন  "নিশ্চয় দ্বঈফ সনদের হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহনযােগ্য"।
দলীল নং- ৩৫ তিনি এ কিতাবে আরও বলেন,
-“ফাযায়েলে আমালের জন্য দ্বঈফ সনদের হাদিসই যথেষ্ট।
 দলীল নং- ৩৬ তিনি অন্যস্থানে বলেন
-“নিশ্চয় এ সনদটি দুর্বল,তবে এটি ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহনযােগ্য।
 দলীল নং-৩৭ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী رضي الله عنه  বলেন-ঃদ্বঈফ সনদের উপর আমালের ব্যাপারে জমহুর মুহাদ্দিসগন বলেছেন যে,ঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহনযােগ্য।
দলীল নং- ৩৮ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী رضي الله عنه বলেন,
-“নিশ্চয় দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহনযােগ্য। সর্বশেষ বলতে চাই উপরের আলােচনা থেকে বুঝলাম যে সকল ইমাম ও মুহাদ্দিসগন একমত পােষন করেছেন দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহনীয় এবং মুস্তাহাব।










 
Top