হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর আরেকখানা হাদীছ


হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, একদা আমরা প্রচ- ক্ষুধায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। রসুলেপাক (ﷺ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু হুরায়রা! তোমার কাছে কি কিছু আছে? আমি বললাম, হাঁ, ইয়া রসুলাল্লহ! থলের মধ্যে কয়েকখানা খেজুর রয়েছে। তিনি বললেন, নিয়ে এসো। অতঃপর রসুলেপাক (ﷺ) স্বীয় হস্ত মোবারক থলের ভিতর প্রবেশ করালেন এবং এক মুষ্টি খেজুর বের করে এনে বরকতের জন্য দোয়া করলেন। অতঃপর একসঙ্গে দশ জন করে খেতে আসতে বললেন, সবাই পেট পুরে খাওয়ার পর রসুলেপাক (ﷺ) আমাকে বললেন, যাও, যা এনেছিলে নিয়ে যাও এবং যতœসহকারে রেখে দিও। প্রয়োজন পড়লে থলের ভিতর হাত দিয়ে বের করে এনো। কখনও গুণো না এবং থলে ঝেড়ো না। যাওয়ার সময় দেখলাম, যা এনেছিলাম তার চেয়ে বেশী নিয়ে যাচ্ছি। 


এরপর রসুলেপাক (ﷺ) এর জীবদ্দশায়, হজরত আবু বকর (رضي الله عنه) ও হজরত ওমর ফারুক (رضي الله عنه) এর জীবদ্দশায় আমি ওই থলে থেকে খেজুর বের করে করে নিজে খেয়েছিলাম এবং অন্যকেও খাইয়ে ছিলাম। হজরত ওছমান (رضي الله عنه) শহীদ হবার পর আমার ঘরবাড়ি লুট হয়ে যায় এবং থলেখানা হারিয়ে যায়। 


অন্য আরেক বর্ণনায় আছে, হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, আমি ওই থলে থেকে যতো খেজুর বের করে আল্লাহ্র রাস্তায় বণ্টন করেছি এবং উট ভর্তি করে দিয়েছি, তার পরিমাণ আমার যতদূর মনে পড়ে এক ওসক এবং ষাট সা ছিলো। এক সা হয় সাড়ে চার সেরে।


উলামা কেরাম বলেন, হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর উক্ত থলেতে দশখানার উপর খেজুর ছিলো না। আবার কেউ বলেন একুশখানার উপর ছিলো না। ওয়াল্লাহু আ’লাম। 


বর্ণিত আছে, একদিন নবী করীম (ﷺ) হজরত ওমর (رضي الله عنه) কে খেজুর দিয়ে উট বোঝাই করার নির্দেশ দিলেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি চারশ’ উট বোঝাই করে ফেললেন। দেখা গেলো যেখান থেকে উট বোঝাই করেছেন সেখানে খেজুরের পরিমাণ এতটুকুও কমেনি। 


খাবার বৃদ্ধি করা সংক্রান্ত বহু মোজেজা নবী করীম (ﷺ) থেকে প্রকাশ পেয়েছে। এ রকম হাদীছ অনেক। তন্মধ্যে তবুক যুদ্ধের দিন সংঘটিত ঘটনাটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। পথ চলার মতো সংগৃহীত সামান্য পণ্যসামগ্রী থেকে খরচের পর বেঁচে যাওয়া যৎসামান্য খাবারের মধ্যে এতো বরকত হয়েছিলো যে, সত্তর হাজার সৈন্য পেট ভরে খেয়েছিলেন, আবার বরতনে ভরে নিয়েও ছিলেন। আল্লাহ্তায়ালা আমাদেরকেও যেনো সরওয়ারে কায়েনাত (ﷺ) এর বরকত থেকে মাহরুম না করেন। এই ফকীর দরবেশদেরকেও যেনো রসুলেপাক (ﷺ) এর জাহেরী ও বাতেনী নেয়ামত দানে ধন্য করেন। আমীন। 


শায়েখ আবদুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী বলেন, এ মুহূর্তে আমার ওই ঘটনাটি মনে পড়ে গেলো— মক্কা মুকাররমার বাজারে এক তরকারী বিক্রেতা তরকারীর মধ্যে পানি ছিটিয়ে দিতে দিতে বলছিলো, হে নবীর বরকত! তুমি নাযিল হও। এসো। অতঃপর যাও। হে আল্লাহ্! নবী (ﷺ) এবং তাঁর বংশধরগণের উপর দরূদ এবং সালাম বর্ষণ করো এবং বরকত প্রদান করো। 


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)] 





© | সেনানী এপ্স |

 
Top