ⓞ➤【শামায়েলে তিরমিযি】  
৩৫    রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাসি    
📌পরিচ্ছদঃ
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুচকি হাসি হাসতেন

১৬৮
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ ، قَالَ : أَخْبَرَنَا ابْنُ لَهِيعَةَ ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ الْمُغِيرَةِ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ جَزْءٍ ، أَنَّهُ قَالَ : " مَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَكْثَرَ تَبَسُّمًا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " .

আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর চেয়ে অধিক মুচকি হাস্যকারী ব্যক্তি কাউকে দেখিনি।[১]

[১] মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৭৫০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩৫০; শু’আবুল ঈমান, হা/৭৬৮৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
 
১৬৯
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ خَالِدٍ الْخَلالُ ، قَالَ : حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ إِسْحَاقَ السَّالِحِينِيُّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا لَيْثُ بْنُ سَعْدٍ ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَارِثِ ، قَالَ : " مَا كَانَ ضَحِكُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلا تَبَسُّمًا "

আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সবসময় মুচকী হাসতেন।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
 
📌পরিচ্ছদঃ
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হাসার সময় দাঁত দেখা যেত

১৭০
حَدَّثَنَا أَبُو عَمَّارٍ الْحُسَيْنُ بْنُ حُرَيْثٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا وَكِيعٌ ، قَالَ : حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ ، عَنِ الْمَعْرُورِ بْنِ سُوَيْدٍ ، عَنْ أَبِي ذَرٍّ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنِّي لأَعْلَمُ أَوَّلَ رَجُلٍ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ , وَآخَرَ رَجُلٍ يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ ، يُؤْتَى بِالرَّجُلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ , فَيُقَالُ : اعْرِضُوا عَلَيْهِ صِغَارَ ذُنُوبِهِ وَيُخَبَّأُ عَنْهُ كِبَارُهَا ، فَيُقَالُ لَهُ : عَمِلْتَ يَوْمَ كَذَا وَكَذَا , كَذَا ، وَهُوَ مُقِرٌّ , لا يُنْكِرُ ، وَهُوَ مُشْفِقٌ مِنْ كِبَارِهَا , فَيُقَالُ : أَعْطُوهُ مَكَانَ كُلِّ سَيِّئَةٍ عَمِلَهَا حَسَنَةً ، فَيَقُولُ : إِنَّ لِي ذُنُوبًا مَا أَرَاهَا هَهُنَا " ، قَالَ أَبُو ذَرٍّ : فَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , ضَحِكَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ .

আবু যার (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয় আমি সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তিকে ভালোভাবে জানি। আর যে ব্যক্তি সর্বশেষ জাহান্নাম হতে নাজাত পাবে, তাকেও জানি। কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে (আল্লাহর নিকট উপস্থিত করে) বলা হবে, এর সগীরা গুনাহগুলো উপস্থাপন করো এবং কবীরা গুনাহগুলো গোপন করে রাখো। এরপর তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি অমুক অমুক দিনে এই এই গুনাহ করেছ। তখন সে ব্যক্তি সবগুলো স্বীকার করবে এবং একটিও অস্বীকার করবে না। এরপর সে তাঁর কবীরা গুনাহসমূহ সম্পর্কে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে। তখন ঘোষণা দেয়া হবে যে, তাঁর প্রতিটি মন্দ কাজের বিনিময়ে একটি করে নেকী লিপিবদ্ধ করো। এরপর সে বলবে, নিশ্চয় এখনও আমার অনেক গুনাহ বাকী আছে, যা দেখতে পাচ্ছি না। আবু যর (رضي الله عنه) বলেন, তখন আমি দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুচকি হাসছেন; এমনকি তাঁর সাদা দাতগুলো দেখা যাচ্ছিল।[১]

[১] মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৪৩০; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৯৮৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪৩৬০, সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩০৫২।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
 
১৭১
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ عَمْرٍو ، قَالَ : حَدَّثَنَا زَائِدَةُ ، عَنْ بَيَانٍ ، عَنْ قَيْسِ بْنِ أَبِي حَازِمٍ ، عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ، قَالَ : " مَا حَجَبَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُنْذُ أَسْلَمْتُ , وَلا رَآنِي إِلا ضَحِكَ " .

জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার ইসলাম গ্রহণের পর হতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে (তাঁর কাছে আসতে) বাধা দেননি। আর আমাকে দেখা মাত্রই তিনি হাসতেন।[১]

[১] সহীহ বুখারী, হা/৩০৩৫; সহীহ মুসলিম, হা/৬৫১৮ ইবনে মাজাহ, হা/১৫৯; মুসমাদে আহমাদ, হা/১৯১৯৬; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৭২০০ শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৩৪৯।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
 
১৭২
حَدَّثَنَا حَدَّثَنَا هَنَّادُ بْنُ السَّرِيِّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ ، عَنِ الأَعْمَشِ ، عَنِ إِبْرَاهِيمَ ، عَنْ عَبِيدَةَ السَّلْمَانِيِّ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنِّي لأَعْرفُ آخِرَ أَهْلِ النَّارِ خُرُوجًا ، رَجُلٌ يَخْرُجُ مِنْهَا زَحْفًا ، فَيُقَالُ لَهُ : انْطَلِقْ فَادْخُلِ الْجَنَّةَ " ، قَالَ : " فَيَذْهَبُ لِيَدْخُلَ الْجَنَّةَ ، فَيَجِدُ النَّاسَ قَدْ أَخَذُوا الْمَنَازِلَ ، فَيَرْجِعُ فَيَقُولُ : يَا رَبِّ ، قَدْ أَخَذَ النَّاسُ الْمَنَازِلَ ، فَيُقَالُ لَهُ : أَتَذْكُرُ الزَّمَانَ الَّذِي كُنْتَ فِيهِ ، فَيَقُولُ : نَعَمْ " ، قَالَ : " فَيُقَالُ لَهُ : تَمَنَّ " ، قَالَ : " فَيَتَمَنَّى ، فَيُقَالُ لَهُ : فَإِنَّ لَكَ الَّذِي تَمَنَّيْتَ وَعَشَرَةَ أَضْعَافِ الدُّنْيَا " ، قَالَ : " فَيَقُولُ : تَسْخَرُ بِي وَأَنْتَ الْمَلِكُ ! " قَالَ : فَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , ضَحِكَ , حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ .

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সর্বশেষে জাহান্নাম হতে নাজাত পেয়ে বের হয়ে আসবে, আমি তাঁকে চিনি। সে হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নাম হতে বের হয়ে আসবে। এরপর তাকে বলা হবে, এসো। জান্নাতে প্রবেশ করো। ঘোষণা মুতাবিক সে (জান্নাতের দিকে) যাবে এবং সেখানে প্রবেশ করে দেখতে পাবে কোথাও ঠাঁই নাই। লোকেরা সকল স্থান অধিকার করে আছে। অতঃপর সে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসবে এবং বলবে, হে আমার প্রতিপালক! লোকেরা তো সব স্থানই দখল করে আছে। তখন তাকে বলা হবে, তোমার সে কালের (দুনিয়ার) কথা স্মরণ আছে কি, যেখানে তুমি অবস্থান করেছিলে? সে বলবে, জি-হ্যাঁ। সবই আমার মনে পড়ে।

বর্ণনাকারী বলেন, তখন তাকে বলা হবে, তোমার মনে যা চায়, তা আকাঙ্ক্ষা করো। তিনি বলেন, তখন সে আকাঙ্ক্ষা করবে। এরপর তাকে বলা হবে, তুমি যে ইচ্ছা পোষণ করলে তাই তোমার জন্য মঞ্জুর করা হলো এবং তোমাকে দশ দুনিয়ার সমান দেয়া হবে। তিনি বলেন, তখন সে বলবে, আপনি কি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন অথচ আপনি আমার মালিক সারা জাহানের সম্রাট! তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এমতাবস্থায় আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে মুচকি হাসি দিতে দেখলাম, এমনকি তাঁর দাত দেখা যাচ্ছিল।[১]

[১] সহীহ মুসলিম, হা/৪৮০: ইবনে হিব্বান, হা/৭৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৫৯৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪৩৫৬।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
 
১৭৩
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِ ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ رَبِيعَةَ ، قَالَ : شَهِدْتُ عَلِيًّا ، أُتِيَ بِدَابَّةٍ لِيَرْكَبَهَا فَلَمَّا وَضَعَ رِجْلَهُ فِي الرِّكَابِ ، قَالَ : بِسْمِ اللَّهِ ، فَلَمَّا اسْتَوَى عَلَى ظَهْرِهَا ، قَالَ : الْحَمْدُ لِلَّهِ ، ثُمَّ قَالَ : سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ { 13 } وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ سورة الزخرف آية 13-14 ، ثُمَّ قَالَ : الْحَمْدُ لِلَّهِ ثَلاثًا ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ ثَلاثًا ، سُبْحَانَكَ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ، فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلا أَنْتَ ، ثُمَّ ضَحِكَ . فَقُلْتُ لَهُ : مِنْ أَيِّ شَيْءٍ ضَحِكْتَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ ؟ قَالَ : رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَنَعَ كَمَا صَنَعْتُ ثُمَّ ضَحِكَ ، فَقُلْتُ : مِنْ أَيِّ شَيْءٍ ضَحِكْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ قَالَ : " إِنَّ رَبَّكَ لَيَعْجَبُ مِنْ عَبْدِهِ , إِذَا قَالَ : رَبِّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي ، إِنَّهُ لا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ غَيْرُكَ " .

আলী ইবনে রবী’আ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি আলী (رضي الله عنه) এর সামনে উপস্থিত হলাম। তখন তাঁর কাছে একটি জানোয়ারকে আরোহণের জন্য আনা হলো। যখন তিনি সে পশুটির পাদানীতে পা রাখলেন এবং বললেন, “বিসমিল্লা-হ”। অতঃপর জানোয়ারের পিঠে যখন সোজা হয়ে বসলেন তখন বললেন, “আলহামদু লিল্লা-হ” (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর) অতঃপর বললেনঃ

سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ

“সুবহা-নাল্লাযী সাখখারা লানা- হা-যা- ওয়ামা- কুন্না- লাহু মুক্বরিনীন, ওয়া ইন্না-ইলা- রব্বিনা-লামুনক্বালিবূন”

অর্থাৎ হে আল্লাহ! মহান সত্তার পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি, যিনি আমাদের জন্য একে বশীভূত করেছেন। আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম নই। বস্তুত আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করছি।[১]

এরপর তিনি ৩ বার “আলহামদু লিল্লাহ” এবং ৩ বার “বিসমিল্লাহ” পাঠ করলেন। এরপর এ দু’আ পড়লেনঃ

سُبْحَانَكَ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ، فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلا أَنْتَ

“সুবহা-নাকা ইন্নী যলামতু নাফসী ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা- ইয়াগফিরুয যুনুবা ইল্লা আনতা”।

অর্থাৎ আল্লাহ পবিত্র! নিশ্চয় আমি আমার নিজের উপর সীমালঙ্ঘন করেছি। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। কারণ, আপনি ছাড়া গুনাহ ক্ষমাকারী আর কেউ নেই।

এরপর তিনি হাসলেন। তখন আমি তাঁকে বললাম, আমীরুল মু’মিনীন! আপনার হাসি পেল? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে এমনভাবে দেখেছি যেভাবে আমি এইমাত্র কথা ও কাজ সম্পন্ন করলাম। এরপর তিনি মুচকি হাসি দিলেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কোন জিনিস আপনাকে হাসাল? তিনি বললেন, তোমার প্রতিপালক তাঁর বান্দার এ কথা খুবই পছন্দ করেন যখন সে বলে, হে আমার প্রতিপালক! আমার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দাও, এ বিশ্বাস রেখে যে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ গুনাহ মাফ করতে পারে না।[2]

[১] সূরা যুখরুফ- ১৪।

[2] মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৫৩; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৩৪; সুনানুল কাবীর লিন নাসাঈ, হা/৮৭৪৮; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৩৪৩; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/২৬৯৮।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
 
Top